সেদিন এক
ডাচ বন্ধুর বাড়ি নিমন্ত্রন ছিলো। অনেক রকম মাছ খাইয়েছে, বিভিন্ন পন্থায় রেঁধে, বেকড, গ্রিলড, কুকড, স্মোকড। যেমন মাছের
স্বাদ, তেমন সস আর পরিবেশন। সবাই খুব আনন্দ করে খেয়েছি। বিশেষ
করে মেঘের উচ্ছাস ছিলো দেখার মত। প্রায় প্রতি সপ্তাহান্তে এদিক ওদিক নিমন্ত্রনে
ভাল মন্দ খেয়ে খেয়ে এতোটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে সে, এগুলো যে
বিশেষ কিছু তা আর সেভাবে অনুভবই করতে পারে না।
সেই অভ্যস্ত
গলি থেকে বের হয়ে, কয়েকবার বললো,
ওরা অনেক খেটেছে, হ্যাঁ না মা? কি ভাল রান্না আর কি সুন্দর পরিবেশন। আমাদের বাড়িতে যখন ওদের ডাকবে আমিও
তোমাকে সাহায্য করবো, অনেক সুন্দর করে সব সাজাবো, ওকে মা?
পরদিন আমি ঘরে
রান্না করার জন্যে প্লাইস মাছ বের করে তাতে লবন হলুদ মাখাচ্ছি।
মেঘ কি
জন্যে জানি রান্নাঘরে এসেছিলো, দেখেই বললো,
সব মাছ তুমি বাঙলা রাঁধো কেন মা?
আমি বললাম, সব মাছের আমি অন্য রান্না জানি না তাই।
মেঘ বললো, জানো না তো কি হয়েছে? ইউটিউব করে,
গুগল করে শিখতে পারো না? এগুলো কি বাংলা মাছ
যে বাংলা রাঁধো? বাংলা রাঁধলে আমাকে মাছ খাও, মাছ খাও বলবে না। তুমি জানো বাংলা মাছ আমার ভাল লাগে না।
আমি বললাম, তুমি তো শিখছো বাংলা মাছ খাওয়া।
মেঘ বললো, চিংড়ি, রুপচাঁদা, স্যামন,
টুনা, শারদিল, পাঙ্গাশ ফিলেট, পোলাক, পালিং, হারিং আর ইলিশ ছাড়া অন্য বাংলা মাছ
মজা নয় কিছু।
এর একটু
পরেই কানাডা থেকে মণিকা আন্টি আর তারেক আঙ্কেল ফোন করেছিলো আমাদের। মণিকা যখন এই
ঘটনা শুনলো, দারুন একটা যুক্তি দিলো। বললো,
মাছ মানেই বাংলা। আমরা মাছে ভাতে বাঙালি, তাই
সব মাছই বাংলা খাওয়া যায়। মণিকা তাৎক্ষনিক ভাবে দারুন যুক্তি দিয়ে কথা বলতে পারে। মেঘ
অবশ্য চুপচাপ শুনে গেলো, কিছু জবাব না দিয়ে।
খাওয়া দাওয়া
হয়ে গেলে পর যথারীতি একটু পড়াশোনা দেখাচ্ছি মেয়েকে। কথায় কথায় চাকরীর কথা আসলো।
আমি বললাম, আমাকে তোর কাছে রেখে দিস,
তুই সারাদিন অফিস করে ফিরে এলে, তোকে রাঁধতে
হবে না, আমি রেঁধে তোদের খাওয়াবো। তোর আর তোর বাচ্চাদের
জন্যে, রুই মাছ, কেঁচকী মাছ, পাবদা মাছ রাঁধবো।
মেঘের আর্ত
চিৎকার, না, কিছুতেই না।
আমি হাসতে
হাসতে শেষ গজালটা দিলাম, কিছুতেই না মানে কি?
তুই বাংলা হলে তোর বাচ্চারা বাংলা হবে না?
আর আমার
বাচ্চা যদি, কেঁচকি, রুই,
পাবদা খেতে পারে, দেখিস, তোর বাচ্চাও পারবে। ম্যা হু না :D
22-12-2016
No comments:
Post a Comment