Thursday 21 September 2017

লিখেছি কাজল চোখে – দুই

নীল খামে উড়ে আসা চিঠি, কিছু হারানো দিনের কথা, মিষ্টি কিছু সুবাস নিয়ে আসা সেই চিঠি’র কথা বলছি। আমাদের বাচ্চা’রা জানে না, জানবেও না “চিঠি” বলতে আসলে কিছু ছিলো, তাই না? যেমন জানে না, এই কুড়ি বছর আগেই “মোবাইল” ছাড়াও একটা পৃথিবী ছিলো। পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ এখনো আছে, যারা “হোয়াটএ্যাপ” “স্ন্যাপচ্যাট” এর নাম জানে না। ওদের পৃথিবী বড্ড যান্ত্রিক, বাস্তবমুখী।

চিঠি পড়তে যত’টা ভাল লাগে, লিখতে ঠিক ততোটাই কুঁড়েমি। আর না লিখতে লিখতে অভ্যাসও চলে গেছে। বিনি সূতো’য় গাঁথা কথা’র যে মালা, শব্দের পর শব্দের সে গাঁথুনি দিয়ে। আচ্ছা, কখনো কি খেয়াল করেছো, চিঠি লিখতে গেলে আমরা অনেক বেশি “কাব্যিক” শব্দ খুঁজে নেই যেটা কথা বলার সময় করি না। কেন বলো তো? অসেচতন ভাবে করি কি, নাকি স্কুলে শেখানো হয়েছে বলে না ধরেই নিয়েছি এটা প্রচলিত রীতি। অনেক তো জানো তুমি, ভেবে বলতো, কেন করি আমরা এটা?

জানো, বড় কিছু পড়তেও আজকাল রাজ্যের আলসেমী ভর করে। লেখা তো দূর কি বাত। বার বার মনে হয়, কি হবে এত কথা জেনে বা জানিয়ে। কার কি এসে গেলো। ফেসবুকে ছোট ছোট স্ট্যাটাস পড়তে পড়তে অভ্যস্ত হয়ে গেছে এই মন। মানুষ এক অদ্ভূদ সৃষ্টি, কত দ্রুত পরিস্থতির সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে ফেলে। নিজেও হয়ত অনুভব করে না, বদলে যাচ্ছে। আসলে টিকে থাকাই তো জীবন। নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারলো না বলেই তো, অতিকায় “ডাইনোসার” বিলুপ্ত হয়ে গেলো কিন্তু টিকে গেলো “তেলাপোকা”। হ্যাঁ, বলতে পারো, আজও মানুষ ডাইনোসারের ফসিল খুঁজে বেড়ায়, তাদের নিয়ে সিনেমা হয়, ফিকশান-নন ফিকশান বই লেখা হয়, তাদের সম্বন্ধে জানতে মানুষের আজও আগ্রহের কোন কমতি নেই। তেলাপোকা কি সেই তূল্য? আমি বলি, যার যার দৃষ্টিভঙ্গী’র পার্থক্য। এই বংশ বিস্তার করে টিকে থেকে “তেলাপোকা” কি নিজেকে কম গৌরবান্বিত ভাবছে?

প্রকৃতি হলো নিষ্ঠুরতার অপর নাম কারো থাকা না থাকায় এই মহাবিশ্বের কোথাও কিছু পরিবর্তন হয় না তারপরও আমরা নিজেদের উপস্থিতি জাহির করতে কত ভাবে ব্যস্ত থাকি নিজেকে এই প্রকৃতির অপরিহার্য অংশ বলে ভাবি ধরে নেই, কাল যদি না জাগি, তাহলে? নদী তার গতি পথ বদলাবে না, সূর্য আবহাওয়া দপ্তরের সময় মিলিয়ে জাগবে আবার অস্তও যাবে, কা কা করে কাক তার উপস্থিতি জানান দেবে। আকাশ কিংবা নক্ষত্র বীথিকা হয়ত জানেই না কে ছিলো কিংবা কে হারিয়ে গেলো।  তারপর ও সারাবেলা কি প্রাণান্ত চেষ্টা থাকে, আরো ভাল থাকবার।


চাঁদের আলো ছোঁয় কি তারে  
 খুঁজে বেড়াই যেই অজানারে

প্রকৃতির এই অমোঘ নিয়তি মেনে নিয়েই, পুরনো’রা ঝরে পরে, নতুনেরা জায়গা করে নেয়। আচ্ছা, সব নতুন কি পারে সব পুরনো জিনিস মুছে দিতে? হারিয়ে যাওয়ার সুর কি আসলেই কোথাও বাজে না? মহাকালের এই খাতায় কোন হিসেব থাকে কি? আর আমি এত প্রকৃতি বিরুদ্ধ একটা মানুষ জানো, একটা কানের দুল, ওড়না কিংবা টপস জাতীয় সামান্য কিছু হারিয়ে গেলেও, বছর ধরে আমার মন খারাপ থাকে। নতুন জিনিস পেয়েও হারানো জিনিসের শোক ভুলতে পারি না। অশ্রুজলে কিংবা কান্না গাঁথায় থেকে যায় মনের কোন কোণে। বলবে, অদ্ভূত আমি, হুম, জানি তো।  

এই যা, গল্পে গল্পে বেলা গড়িয়ে গেলো। নির্ঘ্যাত সব কিছুতে আজ আমার দেরী হবে, ছুটছি – আবার কথা হবে, ভাল থেকো।

21-09-2017




No comments:

Post a Comment