Wednesday 18 December 2019


“মেঘমালা” যখন পড়াশোনা করে তখন বাসায় “কথা বলা” মোটামুটি নিষিদ্ধ। তিনি স্কুল থেকে ফিরে যতক্ষণ বাবা-মা না ফিরেছে টিভি, ল্যাপি, মোবাইলে ধর্ণা দিয়ে থাকেন। আমরা ফিরলে তবে শুরু হয়। আমি হাইপিচে কথা বলি, আগে ছিলো, কেন এত জোরে কথা বলছো? আর এখন, কেন কথা বলছো, কথা বলবে না। এই কথা বলছো'র ভেতর গান শোনা, টিভি দেখা, ফোন করা সব অন্তর্ভুক্ত। কোন শব্দ করা চলবে না। ফোন নিয়ে আমাকে সারাক্ষণ একতলা-দোতলা করতে হয় কিন্তু তাও চলবে না, আবার মা’কে পাশে বসে থাকতে হবে নইলে ওনার ঠান্ডা লাগে, একলা লাগে, হাত টিপে দাও, পা টিপে দাও সেসব তো আছেই।

বান্ধবীর সাথে ফোনে কথা হচ্ছিলো, দাদু, মা, নিজেরা আর ছেলেমেয়ে এ নশ্বর জীবনের সব বিষয় নিয়েই আলোচনা করতে করতে প্রথমে নিজেরা অনুতাপ করলাম, মায়েদের সাথে আরও ধৈর্য্য রাখা দরকার, এই যে খ্যাক করি, এটা ঠিক না। নিজেরাও তো আস্তে আস্তে মায়েদের দিকেই আগাচ্ছি। তারপর নিজেদের ছেলেমেয়ে যে খ্যাক খ্যাক করে আমাদের সাথে সেই আলোচনায় এসে সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম, “হোয়াট গোজ এরাউন্ড কামস এরাউন্ড”। আমি কইলাম, দোস্ত, আমি ক্যামনে এই ফমূর্লায় আছি! আমি কি সেই বয়সে মায়ের সাথে খ্যাক করার সাহস রাখছি!

লোড শেডিং এর দুপুর গুলোতে যখন বিছানায় গা ঠ্যাকানোর উপায় নেই, এক ফোটা বাতাস কোথাও নেই, তখন ঢাকার মধ্যবিত্ত পরিবারে আইপিএসজেনারেটর কিছু ছিলো না। আমি বারান্দায় হাঁটতাম আর কবিতা পড়তাম, ছোট দুই বোন এতই ছোট, কবিতা কিসের সেটা না বুঝলেও, আমার বিড়বিড়ানি থেকে তাদেরও আমার সাথে সাথে সেই কবিতা মুখস্থ। “অতন্দ্রিলা ঘুমোও নি জানি তাই চুপিচুপি গাঢ় রাত্রে শুয়ে বলি শোনো”। আম্মি এই গরমে কেমনে ঘুমাইতো কে জানে। বারান্দায় হাঁটতাম বটে কিন্তু নিঃশব্দে, একটা ফুলের টব নড়ার শব্দে ভদ্রমহিলার ঘুম ভাংগলে কবিতা দিয়ে শরবত বানিয়ে খাইয়ে দেবে। পুরা এ পাশের শব্দ ঐপাশে ক্যামনে যাইতো তাও আজও এক রহস্য। যাহোক, বান্ধবীরা আসতো, দুপুরে খেয়ে দেয়ে রুমে দরজা বন্ধ করে সেই নিঃশ্বাস বন্ধ করে ফিচফিচি হাসি, শব্দ হলে, ঘুম ভাঙলে এসে শুরু হবে, স্কুল কি আড্ডা মারার জন্যে বন্ধ হইছে, বাসায় কাজ নেই, পড়া নেই, আমার সাথে বান্ধবীদেরও খবর হয়ে যেতো। এর সবই আজন্মের বন্ধুর জানা।

দোস্ত হাসতে হাসতে কয়, তোর সবই কামস এরাউন্ড, তোর গোজ এরাউন্ড নাই। ফোন ছেড়ে ভাবছি, জীবন যদি ঠেলে সেই পর্যন্ত নেয়, (কিছুতেই চাই না) নাতি-নাতনীর বেবি সিটিং করতে হয়, তাহলে ঐখানেও আমার একই হাসর হবে। ঐগুলাও টের পেয়ে যাবে, এইটা লুজ, এটারে টাইট দেয়া যায়,  দেখা যাবে, ঐগুলাও খ্যাক খ্যাক করবে আমার সাথে।

সবশেষে জাতিকে সৃজিত-মিথিলার বিয়ের শুভেচ্ছা। সম্ভবত, চিরাচরিত সূত্র মতে, সৃজিতের বয়স বেশি বলে এখানে মিডিয়া বয়সের ব্যাপারটা নিয়ে টানাটানি করে নাই। বাকি রইলো এখন ফেসবুকে জাতির বিবেকদের প্রতিক্রিয়া দেখার ইস্যুটি


#আজাইরা_পোস্ট

No comments:

Post a Comment