Thursday 22 July 2021

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – নয় জুলাই টুয়েন্টিটুয়েন্টি ওয়ান

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – নয় জুলাই টুয়েন্টিটুয়েন্টি ওয়ান প্রতিটি দেশে মন্ত্রী হতে হলে চোখের পাতা না ফেলে মিথ্যে বলার কোয়ালিটি থাকতে হয়। ছাব্বিশে জুন নেদারল্যান্ডসে প্রায় সবকিছু খুলে দেয়া হলো। দুই সপ্তাহে ইনফেকশানের হার বেড়ে সাত হাজারে পৌঁছে গেলো। সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করলো প্রধানমন্ত্রীকে, দ্রুত সবকিছু খুলে দেয়া একটি দায়িত্বহীন সিদ্ধান্ত ছিলো কি না? প্রধানমন্ত্রী সাথে সাথে জবাব দিয়েছে, দায়িত্বহীন ছিলো না। যদি তাই হবে তাহলে দু’সপ্তাহের মধ্যে আবার সংবাদ সম্মেলন করে ডিস্কো, নাইট ক্লাব বন্ধ করা হচ্ছে কেন, কড়াকড়ি করা হচ্ছে কেন? প্রিমিয়ে মার্ক রুতেঃ ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে চলেছে। সংক্রমণ ঠেকাতে আজ আমরা কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর এই সিদ্ধান্তগুলো দশই জুলাই সকাল ছয়টা থেকে কার্যকর হবে তেরই আগস্টের রাত পর্যন্ত। তেরই আগস্ট আবার আমরা সামনের করনীয় জানিয়ে দেবো। বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জানা গেছে, বাড়িতে পার্টি করা, ডিস্কোতে ড্যান্স করা, ইত্যাদি থেকে সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে তাই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, ভ্যাক্সিন নেয়া থাকলেও প্রতিটি রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে, বারে, দেড় মিটারের সামাজিক দূরত্ব বাধ্যতামূলক থাকবে এবং প্রত্যেককে তার জন্যে নির্দিষ্ট করে দেয়া জায়গায় বসতে হবে, সেটা ভেতরে হোক কিংবা বাইরে। রাত বারোটা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত সকল রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে বন্ধ থাকবে। লাইভ মিউজিক, টিভিতে খেলা দেখা ইত্যাদি সব বন্ধ থাকবে। নাচের অনুষ্ঠান, কনসার্ট ইত্যাদি আপাতত বন্ধ। যেখানে দুই-তিন ধরে অনুষ্ঠান হচ্ছিলো সেগুলোও আপাতত চৌদ্দই আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। বাকি যে অনুষ্ঠানগুলো চলবে, সেটা হলের ভেতরে হোক কিংবা ওপেন এয়ার, দেড় মিটারের সামাজিক দূরত্ব বাধ্যতামূলক থাকবে। ডিজিটাল করোনা সার্টিফিকেট থাকলেও নির্দিষ্ট বসার জায়গা ছাড়া অনুষ্ঠান সব বাতিল ঘোষণা করা হলো। যেকোন হলেরই শুধু এক তৃতীয়াংশ ব্যবহার করা যাবে। করোনা সার্টিফিকেটের মাধ্যমে, নির্দিষ্ট জায়গায় বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করা যাবে আর সেক্ষেত্রে হলের দুই তৃতীয়াংশ ব্যবহার করা যাবে। সামনের মংগলবার থেকে এন্ট্রি টেস্ট আর চল্লিশ ঘন্টার জন্যে ভ্যালিড হবে না, চব্বিশ ঘন্টার জন্যে ভ্যালিড হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হুগো দ্যা ইয়ংঃ মোট জনসংখ্যার শতকরা আশিভাগ অন্তত ভ্যাক্সিনের একটি ডোজ পেয়েছে। অর্ধেক জনসংখ্যা পুরোপুরি ভ্যাক্সিন পেয়ে গেছে। তাহলে এখন কেন আবার কড়াকড়ি? আবার কেন সর্তকতা? দুই সপ্তাহ আগে আমাদের সব সবুজ ছিলো, সংক্রমণের হার অনেক কম ছিলো। কিন্তু যে গতিতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সমস্ত নেদারল্যান্ডস তথা ইউরোপ জুড়ে ছড়াচ্ছে তাতে একে রোধ করতে আবার সতর্কতার কোন বিকল্প নেই। যত মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়বে ততটাই দ্রুত গতিতে সংক্রমণ বাড়বে। শুধু আজকেই সাত হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। যদিও আঠারো থেকে পঁচিশ বয়সীদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি কিন্তু ভাইরাস এখানেই থেমে থাকবে না। এটি প্রত্যেক বয়সী মানুষের কাছে পৌঁছাবে এবং যেসব মানুষের ভ্যাক্সিন কম কাজ করছে তাদের আক্রান্ত করবে। গরমের ছুটিতে যারা বাইরে যাচ্ছে তাদের খুব সর্তকতার সাথে যাওয়া এবং আসার সময় ওয়েবসাইট চেক করতে হবে। ছুটি থেকে ফেরত এসে সাতাশ বছর পর্যন্ত সবাইকে বাধ্যতামূলক পরীক্ষা করাতে হবে। বাকিরা যাদের সিমটম দেখা যাবে তাদের সবাইকে পরীক্ষা করানোর জন্যে অনুরোধ করা হচ্ছে। সাংবাদিকঃ প্রিমিয়ে রুতে, এই নিয়মগুলোর মধ্যে দিয়ে কি অর্জন করতে চান আপনি? প্রিমিয়ে রুতেঃ সবসময় যা চেয়েছি। দুর্বল স্বাস্থ্যের আর স্বাস্থ্যখাতে কাজ করা মানুষদের রক্ষা করতে। সাংবাদিকঃ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এক নিদারুণ বিশৃঙ্খলা চলছে, আপনি এর দায়িত্বে আছেন, আপনার কি মনে হয় আপনার আর এই দায়িত্বে থাকা উচিৎ? স্বাস্থ্যমন্ত্রী হেসেঃ আমার মনে হয় থাকা উচিৎ, অনেক কাজ জমা হয়ে গেছে, সেগুলোতো করতে হবে। সাংবাদিকঃ এত সব কিছু হওয়ার পর আপনার কেন মনে হয় আপনার এই পদে থাকা উচিৎ? আপনার যুক্তিগুলো শুনি? স্বাস্থ্যমন্ত্রী আবারো হেসেঃ আপনি হয়ত আগের কথা বলছেন, কেন নিয়মগুলো ছাব্বিশ তারিখ থেকে শিথিল করা হলো? আমাদের কাছে সংক্রমণ, টিকা ব্যবস্থা, হাসপাতালের রোগীর ভীড় ইত্যাদি নিয়ে যেই তথ্যগুলো ছিলো তাতে তখন শিথিল না করার কোন কারণ ছিলো না। আর আমরা যেহেতু অনেক বড় ঝুঁকির মধ্যে আর পড়তে চাই না তাই আগে থেকে এখন প্রতিরোধের চেষ্টা করছি। আমরা প্রতিবারই তাৎক্ষনিক পারিপ্বার্শিক অবস্থা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। সাংবাদিকঃ অন্যদের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেদের দায়িত্বহীনতা এড়াতে চাইছেন? প্রিমিয়ে রুতেঃ এখানে দায়িত্বহীনতার কিছু হয়নি, আমরা পরিস্থিতি বিবেচনা করে বারবার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। প্রতি বৃহস্প্রতিবারে ইউরোপের সব দেশের করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রতি দেশের রঙ নির্বাচন করা হয়। প্রিমিয়ে রুতেঃ আপনি তিনবার করে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগের কথা জিজ্ঞেস করলেন সাংবাদিকঃ কিন্তু তিনি একবারও জবাব দিচ্ছেন না, কবে পদত্যাগ করছেন। বারোই জুলাই প্রিমিয়ে রুতে তাঁর ভুল অনুমানের জন্যে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। “ডান্সেন মেত ইয়ানসেন” ক্যাম্পেনের ভুল প্রচার ও অনুমানের জন্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হুগো দ্যা ইয়ং জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করেছেন। এতে করেও শেষ রক্ষা হয়নি, পনেরই জুলাই ইউরোপীয়ান কমিশনের করোনা রিপোর্টে নেদারল্যান্ডস আবারও অরেঞ্জ থেকে রেড কোডে গেছে, পনেরই জুলাই সংক্রমণ দশ হাজারে পৌঁছেছিলো। বাইশে জুলাই ইউরোপীয়ান কমিশন প্রায় পুরো নেদারল্যান্ডসকে গাঢ় লাল রঙের কোড দিয়েছে। যদিও সংক্রমণ কমেছে, প্রতিদিন গড়ে নয় হাজার চারশো ষাট জন। তেইশে জুলাই জার্মানী নেদারল্যান্ডসকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

No comments:

Post a Comment