Sunday 22 August 2021

Skater Girl

ছবিটির ট্রেলার প্রকাশ হওয়ার পর, উল্রিক রাইনহার্ড এবং ভারতের শীর্ষ স্কেটবোর্ডার আশা গন্ডের উত্থানের গল্পের সাথে নেটিজেনরা ছবিটির মিল খুঁজে পান। জার্মান নাগরিক উল্রিক রাইনহার্ড নিজেও বলেছেন এই সিনেমা তার জীবনকে ভিত্তি করে বানানো হয়েছে এবং স্কাইপ কলে এবং সামনাসামনি মাকিজানি বোনদের সাথে তার আলোচনাও হয়েছে। তাদের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের অঙ্গীকারও হয়েছিলো। মধ্য প্রদেশের জানবার প্রদেশের আশা গন্ড বলছেন এই ছবি বানানোর জন্যে তার কোন অনুমতি নেয়া হয়নি যদিও তারা তার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। পরিচালক মাকিজানি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, "চলচ্চিত্রটি কারো বায়োপিক বা প্রামাণ্যচিত্র নয়। এটি গন্ড বা রাইনহার্ডের গল্প নয়, এটি আমাদের গবেষণার সময় ভারত জুড়ে শত শত মেয়ে এবং স্কেটারের গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে। স্কেটবোর্ডারদের সাথে প্রযোজকদের এই নিয়ে এখনো বিতর্ক চলছে। দুই হাজার বিশ সালের প্রথমদিকে শুটিং শেষ হলেও মানজারি মাকিজানির পরিচালনায় এগারোই জুন দুই হাজার একুশে মুক্তি পেয়েছে “Skater Girl”, এর চিত্রনাট্য লিখেছেন ভিনাতি আর মানজারি মাকিজানি দুইবোন। সারা ভারতে স্কেটবোর্ডিংয়ের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির গল্পটি তারা সামনে আনতে চেয়েছেন এবং তার সাথে খেলাধুলায় অংশগ্রহণকারী মেয়েদেরকে পারিবারিকভাবে প্রতিরোধের বিষয়টি, সংস্কৃতির সংঘাত ইত্যাদি খুব নির্দিষ্ট বিষয়গুলিও স্পর্শ করেছেন। প্রতিরোধ, পরিবর্তন এবং সম্ভাবনা, তিনটি বিষয়ই সিনেমাটি উঠে আসলেও মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, মেয়েদের ওপর সামাজিক চাপটিকে, বিশেষ করে সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র প্রেরনার মতো দরিদ্র মেয়েদের পরিস্থিতিকে। সিনেমায় দেখা স্কেটপার্কটি "স্কেটার গার্ল" সিনেমার জন্য নির্মিত হয়েছে। প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়ে পাঁচ মাসে চৌদ্দ হাজার পাঁচশো স্কয়ার ফুটের এই পার্কটি নির্মাণ করা হয় এবং এটি এখনও আছে, এটি ভারতের অন্যতম বড় স্কেট পার্ক, ক্ষেমপুর, রাজস্থানের প্রথম স্কেটপার্ক। এলাকার শিশুরা, পেশাদার স্কেটাররা অনুশীলন এবং প্রতিযোগিতার জন্য এটি ব্যবহার করে। "স্কেটার গার্ল" শুধু স্কেটবোর্ডিংয়ের জন্য একটি আবেগীয় গল্প নয়, স্কেটবোর্ডিংকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাস্তবেও এটি সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেছে। দেশ, কাল, স্থান, পাত্র ভেদ করলেও কিভাবে যেনো মায়েদের যুদ্ধগুলো খানিকটা একই হয়। কোন কোন সৌভাগ্যবতী মা সেই যুদ্ধে জয়ী হয় আর বাকিরা জীবনভর যুদ্ধ করেই চলে। মেয়ে স্কেটিং করলে পরিবারের অসম্মান হবে তাই বাবা স্কুলে পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেবে। পড়াশোনার দরকার নেই, মেয়ের চাওয়া-পাওয়ার কোন মূল্য নেই, যারা একবেলা খেতে দেবে না, সেই মানুষদের কাছে তার ঠুনকো পাগড়ীর মূল্য মেয়ের আনন্দের চেয়ে বেশী। মেয়ের চাওয়ার কাছে মা হার মানেন, বারবার। সিনেমা দেখতে দেখতে বারবার ভাবছিলাম, তালিবান কি শুধু আফগানিস্তানেই থাকে? মুখে দাঁড়ি আর মাথায় পাগড়ি থাকলেই কি তালিবান? এই সমাজে হাজার হাজার তালিবান আছে যারা ভাবে, মেয়েরা বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে যাওয়া মানে উচ্ছৃঙ্খলতা, স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্বাবলম্বী মেয়ের তার স্বোপার্জিত আয় খরচ করা অনুচিৎ। স্বামী বেকার হোক কিংবা জুয়ারী, সংসারের সমস্ত অশান্তিতে স্ত্রীকেই স্বামীর মন বুঝে চলতে হয়। স্ত্রী-সন্তানের ওপর স্বামী যত অত্যাচারই করুক, তারপরও পরিবারই বলবে, একহাতে তালি বাজে না। সিনেমায় দেখতে পাই, “মেয়ের সাফল্যে আনন্দে হাততালি দিতে গিয়ে মা, বাবার দিকে চোখ পড়তেই থেমে যায়”। আসলে তালিবান ভারতবর্ষের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে আছে, চিন্তায়, চেতনায় আর মননে। চলচ্চিত্র নির্মাতারা গবেষণা, লেখালেখি এবং রাজস্থানের কিশোর -কিশোরীদের সাক্ষাৎ করে প্রেরণা এবং অঙ্কুশের চরিত্রগুলি যথাসম্ভব বাস্তবভাবে লেখার জন্য এক বছরেরও বেশি সময় ব্যয় করেছেন। ক্ষেমপুরের চৌত্রিশজন স্কেটারসহ পুরো ভারতের পঞ্চান্নজন স্কেটার এই চলচিত্রটিতে অভিনয় করেছেন যদিও তিন হাজারের বেশি বাচ্চার অডিশন নেয়া হয়েছিলো। স্কেট পার্কটি নির্মাণের সময় উৎসুক স্থানীয় বাচ্চারা ভীড় জমাতো সেটি দেখতে তাদেরকে তখনই স্কেটবোর্ডের ট্রেনিং দেয়া শুরু হয় এবং পরবর্তীতে অভিনয়েরও সুযোগ দেয়া হয়। র‍্যাচেল সঞ্চিতা গুপ্ত প্রেরণার চরিত্রে আর সাফিন প্যাটেল অঙ্কুশের চরিত্রে অভিনয় করেছে, পনের বছর বয়সী র‍্যাচেল এর আগে আঘাতিত নামে একটি শর্ট ফিল্মে অভিনয় করেছে কিন্তু সাফিনের এটিই প্রথম ছবি। রজার এবার্ট, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ফার্স্ট পোস্ট, মেটাক্রিটিক, গার্ডিয়ানসহ বহু নামী মিডিয়া এই সিনেমার পজিটিভ রিভিউ প্রকাশ করেছে। অর্ধেক পৃথিবী জুড়ে গরমের ছুটি চলছে, খুব আহামরি না হলেও সুন্দর, পরিচ্ছন্ন, টাইম আউট মুভি হিসেবে এটি দেখে নেয়া যেতেই পারে। সময় নষ্ট মনে হবে না তার নিশ্চয়তা দিতেই পারি। তানবীরা হোসেন ২২/০৮/২০২১

No comments:

Post a Comment