Tuesday 5 October 2021

22nd July

বাইশে জুলাই, দুই হাজার এগারো, নরওয়েতে সন্ত্রাসী হামলায় উনসত্তর জন বাচ্চা আর আটজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ নিহত হয় আর আহত হয় দুশোর ওপরে। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে জরুরী মীটিং ডাকেন তৎকালীন প্রাইম মিনিস্টার ইয়েন্স স্টুলতেনবার্গ, তাদের জিজ্ঞেস করেন, এটা কি করে হতে পারে?! আগে থেকে কেউ কিছু জানতে পারেনি? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জবাব দিয়েছে, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি কিন্তু সব ঠেকানো হয়ত সম্ভব নয়। প্রাইম মিনিস্টার ইয়েন্স স্টুলতেনবার্গঃ কেন ঠেকানো সম্ভব হলো না সেটার ওপর আমি পরিপূর্ণ তদন্ত এবং তার রিপোর্ট চাই। মনক্ষুন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রাইম মিনিস্টার ইয়েন্স স্টুলতেনবার্গঃ শুধুমাত্র এর মাধ্যমেই আমরা পরের বারের বিপদগুলো অতিক্রম করতে পারবো। গতবার নরওয়ে ঘুরে এত ভাল লেগেছিলো, এ বছরের গরমের ছুটিতেও দশ দিন নরওয়ে ছিলাম বন্ধুর বাড়ি। প্রচুর পাব্লিক ট্রান্সপোর্টে ঘুরেছি। বারবার আমি আর মেঘ বলেছি, বাস ড্রাইভাররা কি আন্তরিক আর ভদ্র। ইউরোপ যদি ভদ্র হয় তাহলে নর্ডিক হলো সভ্য, ওয়ান স্টেপ এহেড। সাতাত্তর জন মানুষ তাও এলিট ক্লাশের, যাদেরকে দিন দুপুরে ঠান্ডা মাথায় খুন করে দিয়েছে, সেই খুনীর মানবাধিকার রক্ষায় প্রশাসন থেকে আদালত যে পরিমান তৎপর, তখন বলতে ইচ্ছে হয়, ইটস কিলিং। হ্যাভ মার্সি অন দিজ সেভেনটি সেভেন ফ্যামিলিজ। জনগনকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রাইম মিনিস্টার ইয়েন্স স্টুলতেনবার্গকে ট্রায়ালের সম্মুখীন হতে হয়। এত গোলা বারুদ দেশের ভেতরে আসলো, তিনি কি করে জানলেন না ইত্যাদি নিয়ে তাকেও জবাবদিহি করতে হয়েছে। প্রাইম মিনিস্টার ইয়েন্স স্টুলতেনবার্গ যখন নিহতদের পরিবারদেরকে ডেকে তাদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থণা করছিলেন, তখন কান্না থামানো দুঃস্কর ছিলো। “আমি পারিনি, ব্যর্থ হয়েছি” বলা খুব সহজ ব্যাপার নয়। নওরোজিয়ান সাংবাদিক ও লেখক Åsne Seierstad এর লেখা বই, “One of Us: The Story of a Massacre in Norway — and Its Aftermath” এর ওপর ভিত্তি করে পল গ্রীনগ্রাস চিত্রনাট্য তৈরী এবং সিনেমাটি পরিচালনা করেন। সিনেমাটিকে খুব কমই সিনেমা মনে হয়েছে। ক্যাপ্টেন ফিলিপ্স, ব্লাডি সানডে, ওমেঘ যারা দেখেছেন তারা জানেন পল গ্রীনগ্রাস কি করে বাস্তবতাকে তার সিনেমায় ফুটিয়ে তুলতে পারেন। এন্ডার্স ড্যানিয়েলসন ব্রেইভিকের চরিত্রে অনন্য অভিনয় করেছেন। সিনেমার সবচেয়ে বলিষ্ঠ চরিত্র ছিলো, গেইর লিপেস্টাড। একজন কর্তব্যনিষ্ঠ ইউরোপীয়ানের ভূমিকাটি তিনি সততার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন। ভেতরে প্রচুর ঘৃণা, সন্ত্রাসবাদের বিপক্ষে তার অবস্থান, তা সত্বেও পেশাগত দায়িত্ব তিনি নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন, ব্যক্তিগত অনুভূতিকে সেখানে প্রশয় দেননি। যদিও এই কারণে তার সন্তানকে স্কুল থেকে রেস্ট্রিকটেড করে দেয়া হয়েছে যেটা মেনে নিয়েই তিনি তার দায়িত্বটুকু শেষ অব্ধি পালন করেছেন। দায়িত্ব পালনের শেষে তিনি তার ক্লায়েন্টের সাথে হাত মেলাতে পর্যন্ত অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। উতোয়া সামার ক্যাম্পিং এ যেয়ে হাইস্কুলের উনসত্তরটা বাচ্চার মৃত্যু, মেনে নেয়া অসম্ভব, নরওয়েবাসী কোন প্রাণে সহ্য করেছে কে জানে। সন্ত্রাসীরা চায় ভিন্ন মতালম্বীদের মৃত্যু, তারা শুধু মতবাদ দেখে, জলজ্যান্ত মানুষ দেখে না। সন্ত্রাস নিপাত যাক মানবতা মুক্তি পাক দুই হাজার আঠারতে রিলিজড এই সিনেমাটি আগ্রহীরা নেটফ্লিক্সে দেখে নিতে পারেন।
তানবীরা হোসেন ০৪/১০/২০২১

No comments:

Post a Comment