Sunday 17 October 2021

জ্বলো বাংলা জ্বলো

দূর্গাপূজায় আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, খাওয়াদাওয়া বাড়িটা একদম গমগম করতে থাকে। আজ কি হচ্ছে জানতে বাড়িতে ফোন করলো সুইডেন প্রবাসী সুধীর। বরাবরের মত বছরকায় একবার পিসি এসেছে বাপের বাড়ি ছেলেপুলে নিয়ে, কিন্তু বাড়ি বেশ নিঃশব্দ। প্রতিবেশীদের আনাগোনা নেই, নেই ঢাকের শব্দ, হাসির হুল্লোড় কিংবা সন্দেশ-বাতাসা নিয়ে হুটোপুটির আওয়াজ। বরং ফিসফিস কেমন যেনো আতংকে সবাই। পিসিকে জিজ্ঞেস করলো, আদরযত্ন হচ্ছে না পিসিমনি? এত মনমরা কেন? ভাইপো’র আদরের ডাকে পিসি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না, কেঁদেই ফেললো, চারদিকে কি হচ্ছে, শুনছিসতো সুধীর। নিজের জন্যে ভয় পাই না, ভয় পাই ছেলেমেয়েদের নিয়ে। কি হবে আমাদের এই দেশে? সুধীর কি বলে পিসিকে সান্ত্বনা দেবে, কোন আশার বাণী খুঁজে পেলো না। দেশের এই পরিস্থিতি, পুরো পরিবার ওখানে, আতংকে সুধীরের এই প্রবাসের পূজোর মন নষ্ট হয়ে গেলো। পিসির বাড়ির কত স্মৃতি। আদর করে কোলে বসিয়ে কৈ মাছ বেছে বেছে তাকে খাইয়ে দিয়েছে। পিসতুতো ভাই সমীরের সাথে কথা বললো ম্যসেঞ্জারে। কিছু টুকটাক পার্সোন্যাল ইনফরমেশান নিলো। একটা সেমিনারের দাওয়ার পাঠানোর চেষ্টা করবে বললো সুধীর। ছয় মাস পর সমীর সুইডেনের কুপে বাজার করতে যেয়ে দেখে তাদের পাড়ার কাসেম আলীও সেখানে। এই প্রবাসে পরিচিত মুখ দেখে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কুশলাদি বিনিময় করলো। অনেক কথা, শেষই হচ্ছে না। সমীরকে আবার দুপুর তিনটা থেকে রেস্টুরেন্টে যেতে হবে, এ সপ্তাহে তার শিফট শুরু হবে তিনটা থেকে। সমীর বললো, কাসেম ভাই, আপনার বাসার ঠিকানা দেন, ছুটির দিনে আমি চলে আসবো, জমিয়ে আড্ডা দেবো। কাসেম একটু চুপ থেকে বললো, তুমি আমাকে আর কাসেম ভাই বলো না। এখন আমার নাম, কমলেশ সাহা, তুমি এখন থেকে আমাকে কমল দাদা বলে ডাকবা। আর্শ্চয হয়ে সমীর বললো, এটা কি করে সম্ভব? কেন? কি ঘটনা। এদিক ওদিক দেখে নিয়ে কাসেম গলা খুব নামিয়ে বললো, সেই দূর্গাপূজার কথা মনে আছে তোমার? ঐ যে কয়েকজন হিন্দু খুন হলো, মেয়েরা নির্যাতিত হলো, গ্রামের পর গ্রাম লুটপাট করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হলো? ম্লান হেসে সমীর বললো, মনে রেখেই আর কি কাসেম ভাই? কেউ তো আটকাতে এগিয়ে এলো না। কাসেম, আমরা কি করতাম কও? আমাদের কথা কেউ কি শুনতো? যাক, যা বলছিলাম, এরপর কিছু হিন্দু বাংলাদেশ ছেড়ে ইউরোপের নানাদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে চলে গেলো। আমাদেরতো জানোই সংসারের অবস্থা। আব্বায় কইলো, হিন্দু কোটায় তুইও চইলা যা, আল্লাহর যা মর্জি। দালাল ধইরা আমার নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম হিন্দু পরিচয় দিয়া পাসপোর্ট বানাইয়া, আমিও সুইডেনে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলাম, এখন কেইস কোর্টে আছে, দেশের যা পরিস্থিতি আশাকরি শীঘ্রই স্টে অর্ডার পাইয়া যামু। সমীর বললো, তোমরা না সবাই, শুক্রবার শুক্রবার জুম্মায়, হিন্দুদের কাফির বলে গালাগালি করতে, বেদাত বলে গালি দিতে, এখন এসব, হুজুর জানে? কাসেম খিকখিক হেসে বললো, আব্বা হুজুরের সাথে আলাপ করার পরই আমাকে কইলো। আর আসার দিন হুজুরও কইলো, আমার কাগজপত্র সেট হইয়া গেলেই, হুজুরের ছেলের জন্যে চেষ্টা করতে। বিপদে মিথ্যা কথা কওয়া জায়েজ আছে, আল্লাহ মাফ কইরা দেয়। আচ্ছা, আজকে যাই, আমাকেও কাজে যেতে হবে। বাসায় কিন্তু আইসো হতভম্ব হয়ে সমীর কাসেমের চলে যাওয়া দেখতে থাকলো। ১৭/১০/২০২১

No comments:

Post a Comment