Tuesday 7 February 2023

প্রথমে পুরুষবাদ শেষে নারীবাদ

প্রথমে ব্লগে তারপর ফেসবুক আমলে জনপ্রিয় হওয়ার জন্যে প্রধান অস্ত্র থুক্কু বিষয় ছিলো "মুক্তিযুদ্ধ"। সেটা কচলাইয়া কচলাইয়া ঘি বের হওয়ার পর আসলো 'নাস্তিকতা, সেক্যুলারিজম' আর হালে জনপ্রিয় হলো 'নারীবাদ' সম্ভবত বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে যত্রতত্র মানে ট্রেনে, বাসে, লঞ্চে, রাস্তাঘাটে চুলকানি, ঘা, দাদের মলম মিলে তারপরও এ রোগের উপশম দেখি না এক কালে খুব জনপ্রিয় বক্তব্য ছিলো, তসলিমা নাসরিন ধর্ম নিয়ে কিছুই জানেন না। কোরানের ঐ সূরার ততো নম্বর আয়াতের ব্যখ্যা জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, তিনি মুখস্থ বলতে পারেন নাই, তিনি ডাহা ফেইল। মজার ব্যাপার হলো, ধার্মিক হতে হলে কিছু জানতে হয় না, আয়াতে, সূরায় কি আছে না জেনে হুজুর বা দাদি কি কইছে সেইটা জানলেই চলে। কিন্তু নাস্তিক হতে হলে আপনাকে পল কার্জ, রিচার্ড ডকিন্স, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, আর্থার মিলার থেকে শুরু করে স্টিফেন হকিং সব মুখস্ত রাখতে হবে। আর সেইম গো'জ ফো হিয়ার। পুরুষবাদ হইলো, যেকোন নারী, বয়সে, টাকায়, পজিশন, পারিবারিক অবস্থায়, শিক্ষায় আপনার থেকে জ্ঞানী বা ভাল হোক না কেন তাকে দুইটা কষাইয়া গালি দিতে পারলেই হইলো। রাত দুপুরে গলায় দু পেগ ঢেলেও সেটা করা যায়, বিষয় না। কিন্তু নারীবাদী হইতে হইলে আপনাকে সিমোন দ্যা বিভোয়ার, বেল হুক্স, এঞ্জেলা ডেভিস, মালালা ইউসুফজাই, মিশেল ওবামা সব মুখস্থ রাখতে হবে। নইলে, ইসলামের অসংগতি ধরালেই যেমন সুবিধাবাধীরা বলে, ঐটা "সাহি" ইসলাম না তেমনি পড়া না পারলেই বলবে আপনি সাহি নারীবাদী না। "নেদারল্যান্ডস" পৃথিবীর মানচিত্রে যাকে খুঁজে পাওয়া ভার, অথচ পৃথিবীর প্রথম পাঁচটা দেশের মধ্যে যার প্রায় সবসময়ই অবস্থান। গত নির্বাচনে নেদারল্যান্ডসের রাজনৈতিক দল ডি সিক্সটি সিক্স এর নেত্রী সিগ্রিড কাখ প্রাইম মিনিস্টার রুতেকে প্রায়ই হারিয়ে দিচ্ছিলো, নেদারল্যান্ডসের সমাজে নারীরা কিরকম বৈষম্যের স্বীকার হয় তার পরিসংখ্যান দিয়ে। এই নেদারল্যান্ডসেই একই কোম্পানীতে, এই কোয়ালিফিকেশান নিয়ে একই পজিশনে কাজ করে মেয়েরা পুরুষদের থেকে কম বেতন পায় শুধুই মেয়ে হওয়ার কারণে। করোনা কাল থেকে "ডমেস্টিক ভায়োলেন্স" এর দিক থেকে ইউরোপের প্রথম পাঁচ দেশের মধ্যে নেদারল্যান্ডস আছে। বৈষম্যের স্বীকার হও ঠিকাছে, এক বালতি সমবেদনা কিন্তু মুখ খুললেই "নারীবাদী" গালি খাও। পুরো পৃথিবী জুড়েই মেয়েরা রাঁধে, ঘর সামলায়, বাচ্চা সামলায়। প্রায় সমস্ত জাতির পুরুষদেরই মেয়েদের কাছে এই প্রত্যাশা। বাচ্চারা এটা দেখেই বড় হয়। তারওপর চোখের সামনে মায়ের নিগ্রহ, বোনের নিগ্রহ, ফুপু-খালার নিগ্রহ, নিজের জীবনের বিভীষিকা দেখে বড় হওয়া ছেলেমেয়েদের নারীবাদী হয়ে বেড়ে ওঠা কি আস্বাভাবিক? তার জন্যে তাকে আলাদা বই মুখস্থ করতে লাগবে? আর ভাববেন না, কাশেম বিন আবু বকরই পদ্দা করা গৃহকর্মা নিপুণা নারী পছন্দ করে। সেকুলার, নাস্তিক, মুক্তমনা সব লেখকরই পছন্দ এক। অ-নারীবাদী মেয়েরা হবে এই ইট্টু লাজুক লাজুক, কথায় কথায় অভিমান করবে, গাল ফোলাবে, রাতে চড় মারলে সকালে সেই ফোলা গাল আর লাল চোখে এক হাতে আটা মাখবে, রুটি বানাবে, আরেক হাতে আলু কেটে ভাজি। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, গাল ফোলা কেন,কি হয়েছে? লজ্জায় দ্বিধায় মাটির সাথে মিশে যেয়ে বলবে, মাথা ব্যথা করছিলো, রাতে ঠিক করে ঘুম হয়নি তো তাই আমার চোখ আর সাথে গালও ফোলা। স্বামী চড় মেরেছে এই লজ্জা তার, বেদনার তো স্থানই নেই। নারীবাদীদের আবার কোন ইমোশন থাকা জায়েজ না। তারা সব সময় আর্মির পোশাক গায়ে দিয়ে ঘুরবে, লোহার ব্রেকফাস্ট খাবে, স্টিলের লাঞ্চ। ফাল্গুনে খোঁপায় ফুল, কিংবা বৈশাখে হরেক রকম ভর্তায় টেবল সাজানো, নবৈচ নবৈচ। তাই কি তাদের মানায়? তাহলে তারা পুতুপুতু নারীবাদী, কোন কম্মের নয়। বলাবাহুল্য, এসব ফরম্যাটই আবার ঠিক করে দিয়েছে, মোটামুটি জিরো লাইফস্কিল থাকা "পুরুষবাদী ঠাকুরেরা"। এর মধ্যে সাউথ এশিয়ার পুরুষেরা সব থেকে অকর্মণ্য পুরুষ, কোনো কাজই পারে না। নিজের আন্ডার গার্মেন্টস ধুতেও এদের হয় মা নয় বউ লাগে। এরা বাচ্চাকাল থেকে কোনো স্কিল শেখা ছাড়াই বড় হয় এই প্রাইড নিয়ে, যেহেতু তার একটা দন্ড আছে, তাই তার সাথে সম্পর্কিত নারীজাতীর সব সদস্য তার অধীন, তার খেদমতে নিয়োজিত থাকবে। নিজের স্ত্রী তো সেইমতে সবচেয়ে বড় ক্রীতদাসী। সুতরাং বউ কতোটা পড়বে, কতোক্ষণ- কোথায় জব করবে, কী পোষাক কতোটা টাইট-লুজ-খোলা পরবে, ফেসবুকে কি ছবি দিবে, ব্লগে কি বিষয়ে লিখবে, কার সাথে কতোটা হেসে কথা বলবে সেইটা সে ঠিক করে দিবে। সে কই জুয়া খেলে সেইটা ব্যাপার না। ইস্যু হইলো “নারী” কারণ তার এবং তার পরিবারের মান-সম্মান সব বউয়ের চাল-চলন আর পদ্দা পুশিদার ওপর নির্ভরশীল। কথা হইলো, এই ভূখন্ডের পুরুষেরা ভৌগলিক অবস্থান বদলাতে পারে কিন্তু চিন্তা, চেতনা আর স্বভাব? তো, নারীবাদীদের গালি খাওয়া ঠেকায় কে!

No comments:

Post a Comment