Sunday 18 October 2009

বৃত্তের বাইরে

বৃত্তের বাইরে

জন্মের পর থেকেই কি মানুষের জীবন একটা বৃত্তের মধ্যে আবর্তিত হয়? জন্ম হওয়া মাত্র মানুষের গায়ে একটা ট্যাগ লাগে, “ছেলে না কি মেয়ে”? “শিশু” কিংবা মানুষের পরিবর্তে ছেলেতে - মেয়েতে বিভক্ত হই আমরা। জীবনের পরবর্তী সকল কার্যক্রম যেমন, নামকরণ, আচার, বিধি সবই ঐ ট্যাগকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে।

কালো, বাদামী না ফর্সা? সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষেরা এই বর্ণের দ্বারা শাসক কিংবা শোষিতের দলে বিভক্ত হন। কোন কোন বর্ণের লোকেরা অল্প পরিশ্রমে অধিক সুখের অধিকারী হন। আবার কোন কোন বর্ণের লোকেরা, শুধুমাত্র এই কারনেই প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। বর্ণের বিদ্বেষ যে শুধু ভিন্ন বর্ণের লোকদের মধ্যেই থাকে তা কিন্তু নয়। একজন বাদামী বর্ণীয় লোক অতি সহজেই তার থেকে একটু বেশি বাদামী বর্ণের লোকটিকে কি অবহেলার চোখে দেখে থাকেন না?

তারপর থাকে ধর্মের বিভাজন। যারা ধর্ম পালন করেন তারা “আস্তিক” আর যারা পালন করেন না তারা “নাস্তিক” নামে অভিহিত হন। যদিও আমার কাছে এই শব্দদুটো আলাদা কোন বিশেষ গুরুত্ব বহন করে না। “Ball” এর নাম যদি “Pen” হতো তাহলে আমরা “Pen” নামেই হয়তো “Ball”কে অভিহিত করতাম। এই আমি যদি “তানবীরা” নাম না নিয়ে “তনুশ্রী” কিংবা “তামারা” নামের হতাম, আমার স্বভাব, চেহারা, নাক চোখের কি কিছু পরিবর্তন থাকতো তাতে? একজন আস্তিক আর নাস্তিকের প্রতিদিনের “প্রার্থনা”র দশমিনিটটুকু বাদ দিলে তাদের প্রাত্যহিক কাজের মাঝে আর কি পার্থক্য থাকে?

আজকাল মাথায় “হিজাব” এর ব্যবহার বেড়ে গেছে পৃথিবী জুড়ে। বেড়ে গেছে দাড়ি আর দাড়িতে মেহেন্দী। ছোটবেলার সেই বিদায় সম্ভাষন “খোদা হাফেজ” আজ বদলে গেছে “আল্লা হাফেজে”। তরুন প্রজন্ম আজ “হালাল” মাংসের পিছনে দৌড়ায়। এনিয়ে কথা বললে পাপিষ্ঠা “নাস্তিক”। আবারো বৃত্তে ফেলে দেয়া।

মানুষে মানুষে দাগ টেনে দিয়ে তাকে উঁচু - নীচু, আমিষী - নিরামিষীর ছকে ফেলে দেয়া। অন্য বর্ণের কেউ পূজা ঘরে ঢুকলে পরে সব গোবর ছুঁইয়ে দিয়ে শুদ্ধ করা। জ্যান্ত মানুষের চেয়ে একটি অবোধ প্রানীর বজ্য পদার্থকে অনেক বেশি পবিত্র মনে করা। চিরকাল ধরে চলে আসা এই অমানবিক কাজের বিরুদ্ধে কেউ কটুক্তি করলে, তাকে আনন্দের সাথে সাম্প্রদায়িকতার লেবাসে মুড়ে দেয়া।

নিরাপত্তা কোথায় আছে? ঝড় ঝঞ্ঝা ভূমিকম্পের বাইরে এই পৃথিবীর কোন খন্ডটি মুক্ত? কোথায় মানুষ মানুষকে হত্যা করে না? যে নিরাপত্তার নাম করে আমরা দেশ ত্যাগ করি, ভিন্নদেশে যাই, কতোটুকু স্বাগতম আমরা সেখানে?

এই “ট্যাগিং” কি এক ধরনের মৌলবাদ কিংবা “সাম্প্রদায়িকতা” নয়? তাই আজ একটা পরিচয় চাইছি, বৃত্তের বাইরের একটা পরিচয়। লিঙ্গের কারনে “নারী” পরিচয় চাই না। মেয়েদের ওপরে হওয়া অসামঞ্জস্যের প্রতিবাদ করলে “নারীবাদী” উপাধি চাই না। “হালাল” এর নামে ভেদাভেদ চাই না, চাই না “নাস্তিক” উপাধি। জাতপাতের বিরুদ্ধে কথা বললে “সাম্প্রদায়িকতার” অভিযুক্তিও চাই না। মুক্তভাবে নিজের মত প্রকাশের স্থান চাই। করজোড় প্রার্থনা রাখি সবার কাছে আজ থেকে বৃত্তের বাইরে একটি পরিচয়ের সূচনা হোক। আমাকে দিয়েই নাহয় হোক।

তানবীরা
১৮.১০.২০০৯

No comments:

Post a Comment