Friday 1 February 2013

প্রথম বইয়ের প্রথম প্রকাশ



http://www.amadershomoy2.com/content/2013/02/08/news0246.htm

http://www.ekusheyboimela.com/archives/20821

রাতে বসে বসে স্বামী স্ত্রী রোজকারের খেজুরে আলাপটা সেরে নিচ্ছিলাম। স্বামী টিভি অফ করে প্রায় ওপরে যাচ্ছেন যাচ্ছেন পর্যায়ে আছেন, আর আমাকে তাগাদা দিচ্ছেন যেনো আমিও শুয়ে পড়ি। পতিদেবের ধারনা রোজ কম ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আমার মেজাজটা দিন দিন আরো খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। তিনি নিয়ম করে দিয়েছেন, উইকডেজে রাত এগারোটার পর বাড়িতে কেউ আর জেগে থাকতে পারবে না। আমি ল্যাপি অফ করবো করবো অবস্থায় আছি, এমন সময় শেষবারের মতো ফেবুটা চেক করতে যেয়ে দেখি জাগৃতি প্রকাশনী তাদের এবারের বইমেলার প্রকাশনার এ্যালবাম আপলোড করেছেন।

ত্রিশে জানুয়ারী রাত এগারোটায় চুয়াল্লিশটা ফটো নিয়ে ভেসে এলো জাগৃতি আমার ফেবুর হোমপেজে। আমি লাইক করলাম ভদ্রতা করে আর উলটে উলটে ছবিগুলো সব দেখছিলাম, কারা সে ভাগ্যবান যাদের এবার জাগৃতি ডেকে নিলো। দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে পরিচিত অপরিচিত নামগুলো দেখে যাচ্ছি আর ভাবছি, আমার এবারো হলো না, কেউ বললো না, তানবীরা রেডী? এমন সময় ম্যাসেজ বক্সে একটা লাল টিপ ফুটে উঠল। আমি অত্যন্ত বিরক্তি নিয়ে টিপে ক্লিক করলাম, ঘুমের সময় উতরে যাচ্ছে, কার আবার কি দরকার পড়লো? দেখি জাগৃতি আমাকে বলছে, আমার এই লিষ্টে আপনার একটা ফ্ল্যাপ থাকার কথা ছিলো না এবার? হঠাৎ গোস্বা খাওয়ার প্রবণতা আমার চিরদিনের। ঝাঁঝিয়ে বললাম, হলো আর কই? জাগৃতি একটু অবাক হলেন হয়তো, বললেন, আপনিতো আর কোন যোগাযোগ করলেন না। আমিও সমান তেজেই বললাম, আপনিওতো কোনদিন জিজ্ঞেস করলেন না। তখন অবশ্য ভাবছিলাম এসেছে আমার কাঁটা ঘায়ে নুন ছিঁটাতে। 


বাদানুবাদ বেশি দূর গড়ানোর আগেই জাগৃতি একটা ম্যাসেজ দিলেন, ছয় ঘন্টা সময় দিলাম আপনাকে, আপনার লেখা গল্পগুলো যেখানে যা আছে, সব একসাথে করে আমাকে মেইল করেন ওয়ার্ড ফাইলে। আমি অবাক বলে কি? এসময়ে? কোন ধরনের কোন প্রিপারেশন ছাড়া? সারাজীবনের সংশয়বাদী মানুষ আমি আমার সংশয় প্রকাশ করলাম, পিছলাতে চাইলাম, ভাবলাম বলবে ফলবে কিন্তু করবে না। আমার মনোভাব বুঝতে পেরেই হয়তো জাগৃতি জানালেন, কোন নেগেটিভ চিন্তা মনে ঠাঁই না দিয়ে কাজ করুন। সময় ছয় ঘন্টা, শুরু হলো এখন। তবুও নাছোড়বান্দা আমি বললাম, সারারাত জাগিয়ে কাজ করিয়ে, পরে সর‍্যি বলে দিয়ে ধোকা দিবেন নাতো, আবার? এবার ওনার পালা ছিলো, জানালেন, দিতেই পারি। দেশে আসলেন, একটা ফোন নেই, কোন যোগাযোগ নেইযদিও দেশে যাওয়ার আগে আমি ফেবুতে ডিসক্লেমার দিয়েই গেছিলাম, যার যার ইচ্ছে ফোন করতে, আমি কাউকে করলে আর কাউকে করতে না পারলে ঝামেলা বেশি হয়, থাক তাই কাউকেই করবো না নীতি পালন করেছি। ফোন জাগৃতি করেন নাই কিন্তু সেটাতো আর মুখের ওপর বলা যায় না, মানী প্রকাশক তথা প্রকাশনা বলে কথা। 


 গতোবারো বইমেলায় বই বের হয় হয় করে দুয়ার থেকে ফিরে এসেছে। তাই এবার পণ করেছিলাম কাউকে বলবো না। কাউকে মানে কাউকে না। স্বামী কন্যা কাউকে না। যদিও কথাটা পেটে খুঁচখুঁচ করছিলো। মেইলের পর মেইল আসছে। ফ্ল্যাপ দেখছি, লেখক পরিচিত, বই সম্বন্ধে দুটো কথা কতো কি। প্রথম বই বের হচ্ছে, ফ্ল্যাপে কি যাবে কারো সাথে আলাপ না করেই লিখছি। অন্যের ফ্ল্যাপ পড়া আর নিজের ফ্ল্যাপ লেখা কি এক বস্তু? বরং লোকেরটা লিখে ফেলা সহজ। নিজেরটা না। বিণয় আছেতো, আত্মপ্রচার নেইতো সব ভাবতে হয়। বেশিরভাগ দিনের অফিসের প্রথম বেলাটা যায়, ভাইবোনদের সাথে মেইলে আড্ডা দিয়ে। ছুটিতে দেশে যাবো সামনে। অনলাইনে কেনাকাটা, বাজার পছন্দ চলছে। বেশিরভাগ দিন আমি থাকি বেশি এক্টিভ। আর তখন বলে যাচ্ছি আমি ব্যস্ত, তোরা পছন্দ কর, আমি অর্ডার দিয়ে দিচ্ছি। 

এতো কঠোর গোপনতার কারণ হলো আমার কন্যা। স্বামী এসব ব্যাপারে বেশি রিয়াক্ট করেন না। বলেছিলাম না সারা দুনিয়া হলো ধোকা, ঠিক হলোতো আবার আমার কথা, এ ভঙ্গীতে তাকানোই হবে তার প্রথম এবং শেষ প্রতিক্রিয়া। কিন্তু মেয়ে অনেক দুঃখ পায়। ফিলিপ্স থেকে একটা মডেলিং লটারীর মতো করলো, ওয়েক আপ এ্যালার্ম লাইট দিবে বলে জানিয়েছিলো। পরে কিছুই আর জানায়নি। মেয়ে খুব দুঃখ পেলো। রোজ মায়ের ফেসবুক খুলে লাইক গুনেছে, তারপর তার প্রশ্ন, তুমি কি “এনাফ” গুড করোনি? কতো পেয়েছো? কেনো তাহলে তুমি লাইট পেলে না? একটা কালচারাল অগার্নাইজেশনে অনেককেই তাদের অবদানের জন্যে পুরস্কার দেয়া হচ্ছিল, আমরা বসে দেখছি। তারা অনেকদিনের মেম্বার আর আমরা নতুন যুক্ত হয়েছি বলা চলে, স্বাভাবিকভাবে আমরা কিছুই পাইনি। সে ছলছল চোখে আমায় জিজ্ঞেস করে, কেনো তোমাকে কিছু দেয়নি মা? তুমি কি কিছুই গুড করো নাই? রিসেশানে চাকরি গেলো তাও তার কথা, মা কেনো, কি করেছিলে? কেনো ওরা তোমাকে আর চায় না? মেয়ের সামনে হিরোগিরি ছেড়ে দেয়া বড়ো কষ্ট। মেয়ে মাকে বড়ো একজন আইডল ভাবে। আমি যা বলি সেও তা আমাকে ফিরিয়ে বলে। আমি তোমাকে নিয়ে অনেক প্রাউড হতে চাই মা। 

শুধু তোর জন্যেরে মা অনেক কিছু ভাল করে করতে ইচ্ছে করে। বাবা মায়ের জন্যে যা করিনি কিংবা করতে পারিনি কিংবা হয়তো করতে চাইনি সেইসব তোর জন্যে করতে ইচ্ছে করে ময়না মা আমার। বই প্রকাশনা নিয়ে অনেক গল্প উপন্যাস পড়েছি, অনেকের কাছে অনেক গল্প শুনেছি। ভীষন ঝক্কির ব্যাপার স্যাপার। এতো ঝক্কি যে অনেক গ্রুপ বছরে একবার একখানা বই প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু বইযে কারো কারো এতো সহজে এতো দ্রুত প্রকাশ হয়ে যায় জানতাম না। অশেষ কৃতজ্ঞতা জানবেন ফায়সাল আরেফীন দীপন, বছরের শুরুতে এতোবড় একটা ধাক্কা দিয়ে বছরটাকে সারাজীবনের মাইলষ্টোন বানিয়ে দেয়ার জন্যে।  জাগৃতি নিজেও আমার মান্ধাতার আমলের লেখা যার ড্রাফট পর্যন্ত আর খুঁজে পাইনি তার পিডিএফ ভেঙ্গে, সাইজে এনেছেন বইয়ের জন্যে।  ত্রিশে জানুয়ারী ২০১৩, সারাজীবনের একটা মাইলষ্টোন থাকবে স্মৃতির মনিকোঠায়। মা হওয়ার আনন্দের মতো অনুভূতি হচ্ছে। 


সবিণয় নিবেদনঃ এতোক্ষণ যে কারণে এই প্যাঁচাল লেখা হলো, আমার বইটা যদি বইমেলায় উপস্থিত বন্ধুরা জাগৃতির স্টলে যেয়ে একটু নেড়েচেড়ে দেখেন আমি ধণ্য হবো। আর কেউ কেউ যদি চটপটি – ঝালমুড়ি – গুড় দেয়া চা ইত্যাদি একদিন স্যাক্রিফাইস করে আমার বইখানা কিনেন তাহলে এই গরীব লেখিকার একটা ভবিষ্যত হয়, বাধিত হন তিনি। আট তারিখে বইমেলায় জাগৃতি এর স্টলে।

প্রচ্ছদ তৌহিন হাসান, ১৬০ পৃষ্ঠা, মূল্য ২৭৫ টাকা।


2 comments:

  1. Baire thakle kemon kore pete pari apnar boi ,

    ReplyDelete
  2. এখান থেকে সংগ্রহ করতে পারেন http://www.rokomari.com/book/8233

    কিংবা জাগৃতির শোরুম থেকে সংগ্রহ করতে পারেন,

    42/A, Aziz Super Market (1st Flr)
    Shahbag, Dhaka - 1000
    Bangladesh
    Phone: 8623230, 8624218

    ReplyDelete