Saturday 1 June 2013

জীবন থেকে নেয়া (টুকরা টাকরা গল্প)



আজকাল সাংবাদিকরা সবাই একযোগে এক কাজ করেন। বিশেষ করে কোন একটা কিছু হিট হয়ে গেলেতো কথাই নাই। সবাই তার পিছনেই ছুটবেন। ফেব্রুয়ারীতে বাংলা একাডেমীর বইমেলায় যেয়ে বাচ্চা আর বাচ্চার মায়েদের প্রশ্ন করা কেনো এই বইমেলা, একুশে ফেব্রুয়ারী মানে কি জানেন কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। বেশির ভাগ সময়ই যেসব মায়েরা বা তাদের বাচ্চারা সঠিক উত্তর দিতে পারে না, তাদের সাক্ষাতকার চ্যানেলে প্রচার করা, সব চ্যানেলেই মোটামুটি এই কাজটা গেলো দু/তিন বছর ধরে যত্নের সাথে করে যাচ্ছে। এই কাজটা করা তাদের নৈতিক সাংবাদিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে গেছে। মেয়ের বাবা বাংলাদেশের মানুষের ইতিহাসের জ্ঞানের এই বহর দেখে, এই পরিনতি নিয়ে যারপর নাই হতাশ। বিদেশে বসে নৈতিক হতাশা জ্ঞাপন করেন আর দেশের কি হবে ভেবে নিয়মিত আফসোসায়িত হন। আমি একদিন বল্লাম, চ্যারিটি বিগিনস এট হোম, তোমার মেয়েকেতো এতো একুশের প্রোগ্রামে নিয়ে গেছো, একুশে নিয়ে জ্ঞান দিয়েছো, কাঠ বিড়ালী কাঠ বিড়ালী আবৃত্তি করিয়েছো সাড়ে তিন বছর বয়েসে, তখনো বাংলা অক্ষর জ্ঞান নেই, কিন্তু ছড়া মুখস্থ করিয়েছি, জিজ্ঞেস করোতো ডেকে একুশে ফেব্রুয়ারী কি ব্যাপার? মেয়ের বাবা মেয়েকে ডাকলেন। মেয়ে নিনটেনডোতে গেম খেলতে খেলতে নিতান্ত অনইচ্ছুক গলায় বললো, জানিতো, পাকিস্তানিদের সাথে যুদ্ধ হয়েছিল। ব্যাস, শুধু মাথায় এটাই আছে যে পাকিস্তানিরা খুব খারাপ, বাংলাদেশীদের সাথে যুদ্ধ করেছে তাই যেকোন প্রশ্নে এই কুমীর ছানা প্রদর্শন হয়ে যায়। মেয়ের বাবা যখন বলতে গেলেন আবার একুশের ফেব্রুয়ারী আসলে কি ব্যাপার তখন আবার আরো ব্যস্ত গলায় জানিয়ে দিলো কন্যা, আমিতো জানি জানি।

কিন্তু হরতাল কি সেটা জানে বিদেশে বসে। নিজ দায়িত্বেই জানে। মিছিল দেখে, ধাওয়া পালটা ধাওয়া দেখে, বানান করে ব্যানার পড়ে আর জিজ্ঞেস করে এরা কি হরতালের পক্ষে বলছে না বিপক্ষে বলছে? কেনো একজন বাংলাদেশী আর একজন বাংলাদেশীকে মারছে? বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের সালাম – নমস্কার। প্রবাসে থাকা বাচ্চারাও জানে বাংলাদেশে কিছু একটা হয় যার নাম “হরতাল”। এখানে বসে বাচ্চাদেরকে “হরতাল” কি বস্তুর নাম তা ব্যাখা করা মুশকিল। আসলে তারচেয়েও বড় কথা হরতাল কি তাতো নিজেও জানি না। এটার উদ্দেশ্য বিধেয়ওতো জানি না। জানি কথায় কথা না মিললে মারামারি করার উছিলার নাম হলো হরতাল। হরতাল মানে ছোটবেলা থেকে দেখেছি, টায়ার পোড়ানো, কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়া, দু চারজন টোকাই আর ছাত্র মারা যাওয়া, তা নিয়ে আবার মিছিল, বাসে আগুন, হল খালি, পরীক্ষা পিছানো, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, যার সাথে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী কিংবা গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষদের আসলে কোন যোগাযোগ নেই। প্রতিবাদ এখানেও হয় তবে তার গড়ন ধরন এতো অন্য যে বাচ্চাকে কিছু বুঝাবো তো কি বুঝাবো? এপার থেকে ওপারের ঘটনা দেখলে অনেক সময় ছোটবেলায় দেখা টারজান সিনেমার কথা মনে পড়ে যায়। নেংটি পড়া জংলীরা যে তীর ধনুক নিয়ে মারামারি করতো, এখানে নেংটির বদলে আলখাল্লা পড়া থাকে এই যা পার্থক্য।

আমাদের ছয় বছরের আরভিন তার মায়ের সাথে শান্তিনিকেতন বেড়াতে গেছে। আমাদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া ছেলে তার মাকে জিজ্ঞেস করেছে, এতো বড় বাড়ি কার? কে এই ভদ্রলোক? তার মা তাকে ব্যাখা করেছে পড়ে সে অবাক হয়ে বলেছে, শুধু স্টোরি লিখে এতো বড় বাড়ি পাওয়া যায়? স্টোরিতো আমিও কতো লিখি!!! আমারতো কিছুই নাই। মা বলেছেন, লিখতে থাকো বাবা, দেখো একদিন তুমিও.........

এবার বইমেলায় আমার প্রথম বই প্রকাশ হলো। আমি বাসায় ফোন করেছি, আমাকে আরভিন বলেছে, তোমাকে কনগ্রেচুলেশন্স। আমি বললাম কেনো বাবা? সে বললো, এবারের বুক ফেয়ারে তুমি একটা বুক পেয়েছো, তাই। আমি হেসে বললাম, কে বলেছে তোমাকে? আরভিনের নিরুত্তাপ জবাব, আম্মু।
এর ওপরে আর কি কথা থাকতে পারে?

এ পোষ্টটা আমাদের ছোট ভাই আরাফাত শান্তকে উৎসর্গ করা হলো। উৎসর্গের বিবিধ কারণ আছে

০১/০৬/২০১৩


No comments:

Post a Comment