Monday 28 October 2013

জীবন থেকে নেয়া (চোর নিয়ে মেঘাডেট)

আজকে “আমরাবন্ধু”র জন্মদিন। বিগত যৌবনা এই ব্লগটাতে পারতে কেউ আজকাল আর উঁকি দেয় না। শুধু যারা মায়া কাটাতে পারে নাই তারা মাটি কামড়ে পড়ে আছে। হ্যাপি বার্থডে এবি, অনেক অনেক হাসি খেলার – আলোর বেলা কেটেছে এখানে। ভাল না থাকো, টিকে অন্তত থাকো।
প্রথমে সেদিন চোর এলো আমাদের বাড়িতে তারপর পুলিশ। ঘটনাটা এরকম, বুধবারে বাবা মেয়ে বাড়ি ফিরেছে এবং যথারীতি একজন টিভি আর একজন ল্যাপটপের মধ্যে ঢুকে গেছে। আমি বাড়ি ফিরে খুব তাড়াহুড়া সব গোছাচ্ছি আবার বেরোতে হবে, আমাদের খুব কাছের বন্ধু একবছর আগে মারা গিয়েছেন, তার সেদিন মৃত্যুবার্ষিকী। মেঘকে ওপরে পাঠিয়েছি রেডী হতে। বাগানের দরজার নবটা দেখি অর্ধচন্দ্র। মুচড়ে আছে ঠিক অর্ধেক মাপে।
মেয়ের বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি বাইরে গিয়েছিলে, বললো না।
আমি বললাম তাহলে এমন হলো কি করে লক?
তিনি বললেন, মেঘ হয়তো বাইরে গিয়েছিলো।
মেঘ নীচে আসতে আমি জিজ্ঞেস করলাম, সে বললো, নাতো মা, আমি যাইনি।
আমি বললাম তাহলে কি চোর এলো নাকি।
বললেও ভাবার সময় নেই এখন প্রায় সাতটা বাজে, বেরোতে হবে। কেউ গা করলো না।
বেরোতে যাবো সেই মুখে প্রতিবেশী এলেন। তার আগের দিন খুব বৃষ্টি হয়েছিল। ময়লা যাওয়ার পাইপ নাকি ভরে আছে, পরিস্কার করার লোক ডাকবে। দুই বাড়ির যেহেতু লাইন একটাই তাই পয়সা ভাগাভাগি করতে হবে সমান সমান। আমরা বললাম করবো, তুমি ডাকো লোক। সে তবুও পিছনে যেতে চাইলো, অগত্যা বাগানের দিকের দরজা খোলা হলো। দরজা খুলতে পারছে না কারণ লকের অবস্থা বারোটা। কোনরকমে খুলে দেখা গেলো, সাইকেল গ্যারেজ, বাগানের দিক থেকে বাইরে যাওয়ার দরজা, এবং মেইন দরজার পিছন দিকে ভেঙ্গেচুরে চুরমার করে রেখে গেছে। আমাদেরতো খবরই নেই।
মেঘ যারপর নাই আনন্দিত। নিরিবিলি জীবনে একটি এ্যাকশানধর্মী ব্যাতিক্রমী ঘটনা। আনন্দে দৌড়ে একবার বাবার কাছে যায়তো আমার কাছে আসে। আমিতো ধরি নাই, আমিতো জানি কিভাবে লক খুলতে হয়, আমিতো করি নাই, ওটা চোর করেছে। আমি তোমাকে সত্যি বলছি।
ওর বাকবাকুমের জ্বালায় আমি আর ওর বাবা কথা বলতে পারছি না। পুলিশ, ইন্স্যুরেন্স সব ফোন করতে হবে। আবার ঐদিকে যাওয়াও জরুরী, কারো জন্মদিন না যে, না করে দিবো। আমি যখন ধৈর্য্যহারা পয়েন্টে পৌঁছেছি আবার মুখ খুললে চড় দিবো, তখন আসল কথা পেট থেকে বের হলো।
মা, আমি ওখানে সবাইকে আর কাল স্কুলে সবাইকে বলতে পারি, আমাদের বাড়ি যে চোর এসেছিল। প্লীজ মা প্লীজ, প্লীজ।
অনেকসময় আমি বলি, এটা আমাদের প্রাইভেট ব্যাপার স্কুলে বা কারো সাথে গল্প করবে না তাই আগে থেকে সাবধানতাঃ।
আমি বললাম, ঠিকাছে।
আহা কি আনন্দ তার ঝরে গলে পড়ছে। এতো বড় রোমাঞ্চকর ঘটনা তাদের বাড়িতে।
বাড়ি ফিরে এসে পুলিশকে ফোন করেছি, তারা আসছেন। ফিল্মীধারা বজায় রেখে প্রথমে চোর তারপর পুলিশ।
মেঘ উত্তেজনায় ওপরে যেতে পারছে না, রাত বাজে দশটা। আমি বললাম, আসুক পুলিশ, দেখুক, কোন বাচ্চা হল্যান্ডে এতোক্ষণ জেগে থাকে। আমি কিচেনে পরদিনের লাঞ্চ বানাচ্ছি, এমন সময় কলিং বেল বাজলো, দেখলাম চারশো মিটার স্পীডে কি জানি নীচের থেকে সিড়িতে ওপরে গেলো। পুলিশ এসেছে আর বান্দা ওপর থেকে নীচে নামে না। অন্যদিন কাপড় বদলে ব্রাশ করে শুতে কমসে কম ত্রিশ মিনিট সময় লাগে আর সেদিন পাঁচ মিনিটে ওপরের লাইট অফ!!!।
পুলিশ এমন বস্তুর নাম।
চোর অবশ্য আমার মনোজগতেও অনেক ওলট পালট ঘটিয়ে দিয়ে গেছেন। চোরের কারণে আমার সারাক্ষণ চোর সংক্রান্ত গান কবিতা মাথায় আসতে লাগলো। এই চোর যায় চলে, এই মন চুরি করে ......... কিংবা চুরি করেছো আমার মনটা এই টাইপ। তারচেয়ে ভয়াবহ যাতে চোর নেই তাও চোরা চোরা রুপে ধরা দিতে লাগলো। বাসায় মেইল করেছি, ঘরেতে চোর এলো গুনগুনিয়ে .........
বন্ধু ধ্রুব আগে বলতো, মাথায় কিরা ঢুকছে, আসলে মাথায় কিছু গেঁথে গেলে, কিরা ঢুকার মতোই
চোর একবারই এসেছিল নীরবে
আমারই দুয়ারও প্রান্তে
সেতো হায় মৃদু পায়
এসেছিল পেরেছিতো জানতে
সে যে এসেছিল বাতাসতো বলেনি
হায় সেইক্ষণে এ্যার্লাম মোর চলেনি
তারে সে আলোতে চিনতে যে পারিনি
আমি পারিনি কিলায়ে তারে মারতে
পৃথিবীর সকল চোরকে আমার ওপরের চোরাসাহিত্য খানা উপহার দিলাম।
মেঘ অনেক দুঃখী মুখ করে আমাকে শুক্রবারে বলল, আম্মি পরীক্ষা কেন হয়?
আমি বললাম, ঠিক করে পড়েছো কীনা সেটা জানতে হবে না?
আমরাতো ক্লাশে পড়ি, টীচারতো দেখে, ওকি আমাদেরকে তাহলে বিশ্বাস করে না?
পড়লে পরীক্ষা দিতে সমস্যা কি?
আমার ভাল লাগে না
তুমিতো ঠিক করে পড়ো না তাই ভাল লাগে না, যারা ঠিক করে পড়ে তাদের নিশ্চয় ভাল লাগে না।
কারো ভাল লাগে না আম্মি, কারো ভাল লাগে না। আমি একদম সত্যি বলছি
তাই নাকি? কেন ভাল লাগে না?
আমাদের স্ট্রেস হয় আর স্ট্রেস শরীরের জন্যে ঠিক না।
মেঘের বাবা যেদিন দেরী করে অফিস থেকে ফিরেন, মেঘ অনেক গোপন সুখ দুঃখ মায়ের সাথে ভাগাভাগি করেন।
রোজ ভোরে উঠতে অনেক কষ্ট হয়, তাই না আম্মি।
হুম
বড় হওয়া অনেক কষ্ট। এরপর রোজ ভোরে উঠে চাকুরীতেও যেতে হবে। জীবনে আসলে আনন্দ কিছু নেই।

No comments:

Post a Comment