নেপালের
ভূমিকম্প নিয়ে তুখোড় সব মানুষদের তুখোড় সব স্ট্যাটাস পড়লাম ফেসবুকে। পড়ি আর অবাক
হই, মানুষের এতো জ্ঞান আর আমরা কতো মূর্খ।
“স্রষ্টা শাস্তি দিলেন, স্রষ্টা গজব দিলেন”। স্রষ্টা ছোট ছোট বাচ্চাদেরও শাস্তি দিলেন, কেন তারা কী করেছিলো? শাস্তিতো ধর্ম মতে পরকালে হওয়ার কথা তাহলে আগে শাস্তি দেয়ার মানে কী? মানুষ পাপ করাতে কী তাহলে স্রষ্টা রাগ করে মানুষের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছেন! নৌকা ডুবে যাওয়া কিংবা ভূমিকম্প হওয়া কী তাহলে মানুষের ওপর স্রষ্টার প্রতিশোধ! স্রষ্টা ক্ষমাশীল আর দয়ালু, তিনি এতো কঠোর তার সৃষ্টির প্রতি কী করে হতে পারেন! ফেসবুকে নাস্তিকদের গালি দেয়ার জন্যে আগডুম বাগডুম লিখে অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে এতো ব্যস্ত থাকে যে নিজেও জানে না আসলে কী লিখছে।
১৯১২ সনে জার্মান বিজ্ঞানী আলফ্রের্ড ওয়েগনার পৃথিবীর মানচিত্র পর্যবেক্ষণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে এক সময় পৃথিবীর মহাদেশগুলো একত্রে ছিল যা কালক্রমে ধীরেধীরে একে অপরের থেকে দূরে সরে গিয়েছে। ওয়েগনারের এই তত্ত্বকে বলা হয় কন্টিনেন্টাল ড্রিফ্ট। এ তত্ত্ব বলে পৃথিবীর উপরিতল কতগুলো অনমনীয় প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত। এই প্লেটগুলোকে বলা হয় টেকটনিক প্লেট। একেকটি টেকটনিক প্লেট মূলতঃ পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গলিত পদার্থের বাহিরের আবরণ যা একটি পাথরের স্তর। ভূ-স্তরে যা কিছু রয়েছে তা এই প্লেটগুলোর উপরে অবস্থিত। টেকটনিক প্লেটগুলো একে অপরের সাথে পাশাপাশি লেগে রয়েছে। এগুলো প্রায়ই নিজেদের মাঝে ধাক্কায় জড়িয়ে পড়ে। কখনও মৃদু, কখনও সজোরে। যেহেতু প্লেটগুলো শিলা দ্বারা গঠিত, তাই ধাক্কার ফলে তাদের মাঝে ঘর্ষণের সৃষ্টি হয়। এই ঘর্ষণের মাত্রা অধিক হলে এক ধরনের শক্তি নির্গত হয় যা ভূ-স্তরকে প্রকম্পিত করে। যদিও ভূমিকম্পের আরও কারণ রয়েছে (যেমন আগ্নেয়গিরি), তবে এই কারণটিই অধিকাংশ ভূমিকম্পের জন্যে দায়ী।
যারা এই জ্ঞান
গর্ভ স্ট্যাটাসগুলো লিখেছে এবং ভেবেছে তাদের কাছে মিনতি, পাঁচ হাজার মানুষ মারা গেছে নেপালে আর এটা কোন জোক
নয়। এ বিপদ যেকোন দিন যেকোন জায়গায় হতে পারে। টেকটনিক প্লেট কোথায় ধসে যাচ্ছে ঠিক
কোন মুহূর্তে সেটা সবসময় আগে থেকে কেউ জানে না যদিও একদল বিজ্ঞানী কিছুদিন ধরেই
বলেছিল নেপালের এই জায়গাটা ঝুঁকিপূর্ন, সেখানে এ ধরনের বিপদ হতে পারে। ঠিক
কোন মুহূর্তে এ ঘটনা ঘটবে সেটি এখনো বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করে উঠতে পারেননি।
ভবিষ্যতের কথা এখনো বলা যায় না হয়তো ... হয়তো কোন একদিন বিজ্ঞান ভূমিকম্পকেও জয়
করে নেবে।
আর আমার
বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না, সৃষ্টিকর্তা যিনি এতো ভালবেসে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন
তিনি এতোটা নিষ্ঠুর তার সৃষ্টির প্রতি হতে পারেন। ভূমিকম্পের সাথে আস্তিক বা
নাস্তিকের কোন সম্পর্ক নেই। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় আস্তিক হওয়ার জন্যে একটা বই
পড়লেই চলে আর নাস্তিক হওয়ার জন্যে প্রচুর পড়াশোনার প্রয়োজন হয়। তাই বলছি, সমালোচনা
আর গালাগালি একটু সামালকে।
নীচের লিঙ্কটা
খুলে পড়লে কিছুটা সময় নষ্ট হলেও অনেক কথা জানা যাবে,
No comments:
Post a Comment