আমাদের দেশে স্কুলে
ক্লাশে টীচার বলে, “কথা বলবে না, চুপ করে থাকো”
সে কথাটাই এখানের টীচাররা
বলে, “দেখি কে কতক্ষণ ক্লাশে কথা না বলে চুপ থাকতে পারে”? যে সবচেয়ে
বেশি সময় থাকতে পারবে তার জন্যে একটা উপহার আছে কিংবা সারপ্রাইজ আছে।
মেঘ যখন ক্লাশ ওয়ানে,
তখন ওদের স্কুল থেকে শুরু করলো, যে ক্লাশে দুষ্টুমি করবে না, টিচারের কথা শুনবে, লক্ষী
থাকবে, সে সপ্তাহ শেষে, ওদের ক্লাশের সফট টয় “কুলে কিক্কার”কে বাসায় নিয়ে এসে পুরো সপ্তাহান্ত রাখতে পারবে। সবুজ রঙের সে ব্যাঙ আকৃতির “কুলে কিক্কার”
কে ঝুলিয়ে গর্বিত মুখে মেঘ যখন ডে কেয়ার থেকে বের হয়ে আসতো, মেঘের সাথে সাথে আমিও
অনেক গর্বিত ও আনন্দিত হতাম। তবে শর্ত হলো, পুরো সপ্তাহান্ত মেঘ আর “কুলে কিক্কার”
কি করলো সেটা আমাকে কুলে কিক্কারের সাথে পাঠানো ডায়রীতে লিখে পাঠাতে হবে। সোমবারে
সকালে যখন ক্লাশ শুরুর আগে সবাই এক সাথে গোল হয়ে বসে যার
যার সপ্তাহান্তের গল্প বলবে, তখন টিচার ডায়রী দেখে, জোরে জোরে মেঘ
আর কুলে কিক্কারের সপ্তাহান্ত সবাইকে পড়ে শোনাবে। দিস ইজ দ্যা অনার।
প্রথম প্রথম
আমারও ভাল লাগতো, লিখে পাঠাতে। এরপর দেখলাম এটা প্রায় একটা নিয়মিত রুটিনে পরিনত
হয়ে গেছে। প্রায় প্রতি সপ্তাহের শেষ দিনে মেঘ কে ডে কেয়ারে আনতে যেয়ে, যেই বলতাম,
যাও লকার থেকে তোমার জিনিস পত্র আনো, সে তার বানানো নানা খেলনা পাতি, আঁকা ছবির সাথে সেই সবুজ রঙের কুলে কিক্কার কেও
ঝুলিয়ে নিয়ে আসতে লাগলো। আমি বানিয়ে বানিয়ে ডায়রী লিখতে লিখতে ক্লান্ত। রেগে
বলতাম, তুই আবার এটা পেয়েছিস! ক্লাশে সবচেয়ে বোকা হলি তুই। সব বাচ্চা দুষ্টুমী
করতে পারে, তুই পারিস না? তোর সাহস নেই? মেঘ বুঝতে পারতো না, মা কেনো এতো রেগে
যেতো কুলে কিক্কার দেখলে। সে তো গুড করেছে।
আজকে মেঘ
ত্রয়োদশ শেষ করে চর্তুদশে পা দিলো। ছোট স্কুলের সেই লক্ষী কুলে কিক্কার সে এখন আর
নেই। ভাল দুষ্ট হয়েছে। কথায় কথায় তর্ক, বায়না, কান্না বয়সের সব দোষ গুন বর্তমান।
যদিও বাসায় এটা অনেক প্রবল, বাইরে সে অনেকটাই আগের কুলে কিক্কার রয়ে গেছে। দিদু,
খালামনি, বান্ধবী, টিচারদের কাছে বড়ই আদুরে তিনি।
হ্যাপি
বার্থ ডে, আমার কুলে কিক্কার। বাসায় বড় বড় চোখে জল এনে, মাকে যতই বলো, “আমাকে তুমি
ভালবাস না, কিছু তুমি আমাকে আমার ইচ্ছে মত করতে দাও না।“ আমি জানি তুমি জানো, মায়ের জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন
তুমি। চির আয়ুষ্মতী হও। লাভিউ – লাভিউ লট।
No comments:
Post a Comment