আমারে উড়াইয়া দিও , পালের
বাতাসে,
আমারে ভাসতে দিও , একলা
আকাশে।
রাইখো বন্ধু আমায় , তোমার
বুকেরও পাশে,
সুখের আগুন নিভা গেলে , দুঃখের
হুতাশে।
মেয়ে বড় হয়ে গেছে, অখন্ড অবসর আমার। “রয়্যাল
ডিষ্টিক নোয়াখালী” নাটকের বড় জামাইর মত সিনেমা দেখায় গিনিস বুকে নাম তুলবো বলে পণ
করেছি। বহুদিন ধরেই “স্বপ্নজাল” নিয়ে
মিডিয়াতে আলোচনা পড়ে যাচ্ছিলাম। প্রবাসী হওয়ার নানাবিধ অসুবিধার মধ্যে এটি একটি
অন্যতম অসুবিধা যে সিনেমা মুক্তি পেলে সাথে সাথে দেখে ফেলার সুযোগ খুব সীমাবদ্ধ।
হিন্দী সিনেমার বেলায় এই অসাধ্য সাধন হয়ে যায়, শুক্রবার সকালে মুক্তি পেতেই ইউরোপে
রাত হতে হতে মোবাইল ক্যামেরায় তুলে সিনেমা সাইটে আপ্লোড হয়ে যায়, অন্য ভাষার
সিনেমাতেই এই ব্যাপারটা অসাধ্য, সিনেমা চুরিটি ঠিক করে রপ্ত হয় নি তাদের। গিয়াসউদ্দিন
সেলিমের লেখা ও পরিচালনায় দ্বিতীয় ছবি “স্বপ্নজাল”। প্রায় সবাই লিখছিলেন “মনপুরা”
থেকে ভাল হয়েছে। “মনপুরা” আমার কাছে ঠিক ক্লাসিক কিছু মনে হয় নি, তবে ভাল লেগেছিল,
গতানুগতিক ধারার বাইরে ছিলো আর হ্যাঁ গান গুলো তো সবই অসাধারণ। নয় বছর সময় নিয়ে “স্বপ্নজাল”
তৈরী করছেন তিনি।
অপু কোলকাতা যেয়ে শুভ্রার সাথে দেখা করা
পর্যন্ত গল্পটা প্রচণ্ডভাবে মাটিতে ছিলো। সিনেমা মনে হয় নি। মনে হচ্ছিলো যেনো কোন
ডকুমেন্টরী দেখছি। প্রভাবশালী মুসলমানদের হাতে, ধনী হিন্দু ব্যবসায়ী হীরন সাহা’র অপহরণ
তারপর খুন যেনো পত্রিকায় পড়া সেসব না দেখা লোমহর্ষক ঘটনার জলজ্যান্ত প্রতিনিধিত্ব
করছে। তারপর তার পরিবারকে কোলকাতায় পাঠানো, সম্পত্তি দখল যেমন হরহামেশা বাংলাদেশে
হয়েই থাকে, শুধু সমতলে নয় পাহাড়েও ঘটছে। সিনেমার
দ্বিতীয় বা শেষ পর্ব থেকে শুরু হয় গল্পের গরুর গাছে ওঠা।
চাঁদপুরে জন্ম হওয়া, বড় হওয়া মেয়ে, সে যতই গান,
নাচ শিখুক না কেন কোলকাতায় যেয়ে একটি চালু থিয়েটারে “রক্তকরবী” নাটকে “নন্দিনী”র
চরিত্রে নির্বাচিত হওয়া! আঞ্চলিকতা, স্মার্টনেস এগুলো সব বাদ? কোলকাতা থেকে ফিরে
এসে প্রতিবেশী একটি বাচ্চা ছেলের সহায়তায় হীরন সাহার বিধবা স্ত্রী, নাবালক ছেলে আর
অনুঢ়া সুন্দরী কন্যা তাদের সব সম্পত্তি উদ্ধার করে ফেললো? বাংলাদেশের ইতিহাসে এরকম
ঘটেছে বলে জানি না। যা যায় তা যায় বলেই জানি, আদালতের রায় নিয়েও তো সম্পত্তি
উদ্ধার করতে পারে না। তাছাড়া, হীরন সাহাকে খুন করার আত্মগ্লানি থেকে আয়নাল গাজী
অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে গেলো এটাও রূপকথার মতই লেগেছে খানিকটা। বাংলাদেশে যে
হারে খুনোখুনি হয় তার প্রেক্ষাপট ধরলে এই ব্যাপারটা খানিকটা হাস্যকরও বটে। আমার
ধারনা এই ব্যাপার গুলোতে আর একটু যত্নবান হলে, “মেঘের অনেক রঙ” কিংবা “সীমানা
পেরিয়ে” এর মত ক্ল্যাসিকে “স্বপ্নজাল” এর নাম যোগ হতে পারতো।
শেষ পরিনতির দিকে যাওয়ার তাড়াহুড়ো থেকে এই
জিনিসগুলো এসেছে বলে ধারনা করি। আমার দৃষ্টিতে শুভ্রাকে কোলকাতায় রেখেও অপুকে
চাঁদপুরের পদ্মায় ফেলে মারা যেতো। ঘটনা সেদিকেই যাচ্ছিলো আর সেটাই হয়ত বাস্তবসম্মত
হতো। গিয়াসউদ্দিন সেলিমের আগের সিনেমায় ও বিয়োগান্তক সমাপ্তি ছিলো, এটাতেও তাই।
তাহলে কি ধরে নিতে হবে, তার সিনেমা মানেই মারাত্বক সুন্দর একটা গল্প থাকবে যার
পরিনতি বিয়োগান্তক হবে, সেলিম সিগনেচার মার্ক? বুদ্ধদেব গুহের উপন্যাসের মত, কখনোই
মিলন নেই? সেট নির্বাচন, জামাকাপড়, দৃশ্য গ্রহন এক কথায়, অপূর্ব। সিনেমাটোগ্রাফার কামরুল হাসান খসরু ‘ভিউ কার্ড’ এর মতো একটি একটি করে ছবি দেখিয়ে যাচ্ছেন।
এটাও তার সিগনেচার মার্ক হতে পারে, মনপুরার ও প্রাকৃতিক দৃশ্য সব অসাধারণ ছিলো। একটা
চরম বাস্তব হলো, অতো অল্পবয়সেই প্রেমের কারণে ছেলেমেয়েরা এভাবে প্রাণ দিতে পারে, বড়
হয়ে গেলে, প্রেম হয় হিসাব-নিকাশ।
ফজলুর
রহমান বাবু জাত অভিনেতা কিন্তু স্বপ্নজালে তিনি যা অভিনয় করেছেন তা তাকে চিরস্মরনীয়
করে রাখবে। নিসন্দেহে তার জীবনের অন্যতম মাস্টারপিস এটি। পরীমনি নামটি অনেক শুনেছিলাম
কিন্তু কোন সিনেমা দেখা হয়ে ওঠে নি এর আগে। তিনি তার নাম সার্থক করার মতই সুন্দরী,
অভিনয়ও দূর্দান্ত করেছেন। নায়ক হিসেবে যশ/ইয়াশ রোহান ঠিকঠাক ছিলেন। অভিনয় স্বতঃর্স্ফূত
ছিলো। তবে এত সুন্দরী নায়িকার জন্যে আর একটু হ্যান্ডশাম ছেলে খোঁজাই যেতো। বাস্তব তো
না সিনেমাই তো, সুন্দর নায়িকারা সুন্দর নায়ক পেতেই পারেন। মেসো-মাসী, বিসম্বর বাবু
সবাই ঠিকঠাক ছিলেন, অভিনয়ও সাবলীল ছিলো সবার।
পরিবারের
সবার দেখার মত পরিচ্ছন্ন কিন্তু প্রেমের ছবি। নির্দ্বিধায় বলা যায়, “মনপুরা” থেকে অনেক
গুন এগিয়ে “স্বপ্নজাল”।
গানগুলো
অসাধারণ। ক’দিন ধরে দুই বাংলার বেশ কয়েকটা মুভি দেখলাম, গান গুলো খুব যত্ন নিয়ে করছে
আজকাল। সিনেমা শেষ হয়ে যায় কিন্তু মনে গানের রেশ রয়ে যায়, দিনভর মাথায় ঘুরতে থাকে।
ধন্যবাদ
তানবীরা
০৩/১০/২০১৯
No comments:
Post a Comment