বহু
প্রতীক্ষার পর দেখতে পেলাম মোরশেদুল ইসলামের পরিচালনায় হুমায়ূন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক
উপন্যাসের চিত্রায়ন “অনিল বাগচীর একদিন” (২০১৫)। মোরশেদুল ইসলামের পরিচালনায় এর আগেও
জাফর ইকবালের লেখা “আমার বন্ধু রাশেদ” (২০১১) আর মাহমুদুল হকের লেখা “খেলাঘর” (২০০৬)
যুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসের চলচিত্রায়ন দেখেছিলাম। “খেলাঘর” দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম, অত
কম ভায়োলেন্স দেখিয়ে অত গভীরভাবে যুদ্ধের ক্ষত আর বেদনা খুব কম সিনেমাই তুলে ধরতে পেরেছে।
দুহাজার বারো সালে কলম্বোতে অনুষ্ঠিত সার্ক চলচিত্র উৎসবে এই সিনেমার জন্যে মোরশেদুল
ইসলাম শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার পান। কিন্তু অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার
পাওয়া “অনিল বাগচীর একদিন” আমাকে যারপর নাই হতাশ করেছে।
অত্যন্ত
দুর্বল চিত্রনাট্য। অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার বিজেতা মোরশেদুল ইসলামকে এখানে
খুঁজে পাওয়া ভার। অতো আবেগী আর বোকা বোকা কাজ দিয়ে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা অর্জন করেছে!
একজন আত্মসচেতন নাগরিক হিসেবে একজন বলতেই পারে, আমি মিলিটিরির পাস নিয়ে ঢাকার বাইরে
যাবো না। কিন্তু বাকি যা সব দেখানো হয়েছে, তা নিতান্ত জেনে বুঝে আত্মহত্যার সামিল,
এতে না দেশের প্রতি কোন দায়িত্ব পালনের কিছু দেখানো হয়েছে না পরিবারের প্রতি। যার নিজেকে রক্ষা করার কোন দায় নেই সে অন্যের পাশে কি
দাঁড়াবে? আর আইয়ূব আলী চরিত্রটির মুখ দিয়ে সমানে অতি পরিচিত হুমায়ূনীয় যে সংলাপগুলো
বের হয়েছে তা চলচিত্রটির ভাবগম্ভীরতার গুরুত্ব কমিয়েছে, চলচিত্রটির স্বার্থে সংলাপ
গুলোর সম্পাদনা জরুরী ছিলো।
হ্যাঁ
অনিল বাগচীকে এখানে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেখানো হয় নি, যুদ্ধের সময়ে একজন মানুষের অসহায়ত্ব
তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু একটা তরতাজা যুবক যে যুদ্ধের সময়ও অফিস যাচ্ছে,
কাজ করছে সে কি সত্যিই এতটা অসহায়? বাংলাদেশের সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষের প্রতিনিধিও
সে করে না, কারণ এই সরল কোমলমতি মানুষেরা যথেষ্ঠ অসৎ, মিথ্যেবাদী ও ধান্ধাবাজ তাও সেই
শায়েস্তা খাঁ’র আমল থেকেই। আমার কথা না, ইতিহাস সাক্ষী।
সিনেমায়
বেশ কয়েকটি চরিত্র ছিলো যেগুলোর পর্দা উপস্থিতি ছোট হলেও গুরুত্ব ছিলো অপরিসীম। পরিচালক
তাদের থেকে স্বতস্ফুর্ত অভিনয়
আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে। অত্যন্ত আরোপিত লেগেছে তাদের অভিনয়।
মুক্তিযুদ্ধ
নিয়ে অসংখ্য ভাল সিনেমা ইতিমধ্যে তৈরী হয়েছে বাংলাদেশে, সে তুলনায় এটিকে আমার নিতান্ত
দুর্বল চিত্রনাট্যের একটি ব্যর্থ প্রয়াস বলে মনে হয়। সিনেমাটি দেখার সুযোগ করে দেয়ার
জন্যে হৈ চৈ’কে অসংখ্য ধন্যবাদ।
No comments:
Post a Comment