Monday 7 March 2022

বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেন সেই মোতালেব

https://www.prothomalo.com/life/durporobash/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%9C-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%95%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%AA%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%87-%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%AC?fbclid=IwAR2h97ls-CSDV_djALetA-ZdGO5z95Fai2RbFCdhb1tSgotVwwxjMLce__8 যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে শুধু খিদের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন মোতালেব। সাত বছরের শিশু রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিল; সেখান থেকে একটি এতিমখানায় আশ্রয় হয় তার। অন্যদিকে নেদারল্যান্ডসের ওয়াইটার্স দম্পতি একটি শিশু দত্তক নেওয়ার জন্য ব্যাকুল ছিলেন। তাঁরা দত্তক নেন মোতালেবকে। সেই মোতালেব ওয়াইটার্সকে প্রিয়জনেরা এখন ‘মো’ বলেই ডাকেন। অতীতের দিকে তাকিয়ে মোতালেব বলেন, ‘নেদারল্যান্ডস আমার জন্য স্বর্গ ছিল।’ দ্রুতই তিনি ডাচ্‌ জীবনের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। নেদারল্যান্ডসকেই নিজের দেশ ভাবতে থাকেন, স্কুলে যেতেন, সমবয়সীদের সঙ্গে ফুটবল খেলতেন, অন্য সবার মতো কাজ করতেন। পড়াশোনার পর ২০ বছর বয়সে তিনি একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি আমার শিকড়ের সন্ধান করা প্রয়োজন মনে করি এবং ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসি। বাংলাদেশে এসে আমি আমার রক্তের বন্ধনকে খুঁজে পেয়েছি—চরম দারিদ্র্যের মধ্যে। বাংলাদেশের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান “ইত্যাদি” ও হানিফ সংকেত এ ব্যাপারে আমাকে দারুণ সমর্থন জোগান।’ পরিবারকে খুঁজে পাওয়া, তাদের অসহায়ত্ব আর দারিদ্র্য দেখে মো বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্তে নেন। একসময়ের পথশিশুটিই এখন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি অনেক মেয়ের জীবন বদলে দিয়েছেন। বাংলাদেশের নারীদের উন্নতির জন্য তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর এর জন্য আনুষ্ঠানিক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছেন মোতালেব। মোতালেব বলেন, ‘১৯৯৫ সালে আমরা বাংলাদেশের পটুয়াখালীতে প্রচুর টিউবওয়েল ও শৌচাগার স্থাপন করেছি এবং স্বাস্থ্যসংক্রান্ত শিক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। বরগুনা ও দশমিনাতেও আমরা এসব প্রকল্প সম্প্রসারণ করেছি। এর মধ্যে ২০০০ সালে বাউফলে একটি এতিমখানা স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে এখন ৪০টির মতো শিশু আছে। ২০০১ সালে বাউফলে একটি মা-শিশু ক্লিনিক এবং ২০১৩ সালে একটি জরায়ু ক্যানসার পরীক্ষার ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি মৃত স্ত্রীর স্মরণে ইনখ্রিড মেমোরিয়াল হসপিটাল নামে একটি হাসপাতাল তৈরি করেছি, সেখানে মেয়েদের প্রসবের সুব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার আছে। সেখানে ছোট–বড় সব ধরনের অপারেশন করা হয়। দরকার হলে শহর থেকে সার্জন নিয়ে আসা হয়। আমরা ইতিমধ্যে কয়েক হাজার নারীকে জরায়ুর ক্যানসার থেকে বাঁচিয়েছি। কেননা, মা ছাড়া বাচ্চাদের তো কোনো সুন্দর ভবিষ্যৎ হতে পারে না।’ মোতালেব আরও বলেন, ‘২০০৪ সালে শাকসবজি, মাছ ও মুরগির খামার শুরু করেছি। অল্প জায়গায় কোন পদ্ধতিতে কাজ করলে বেশি সুফল পাওয়া যায়, সাধারণত সেই কৌশলগুলো আমরা গ্রামবাসীকে শেখাই। ধরুন, একটি পুকুরের চারপাশে নানা ধরনের ফলের গাছ কিংবা সবজির গাছ লাগাতে পারেন, পুকুরে মাছের চাষ করতে পারেন আর পুকুরের ওপরেই মাচা বানিয়ে ঘর তুলে সেখানে মুরগি পালন করতে পারেন। মুরগির বর্জ্যই হবে মাছের খাবার। তিন হাজার পরিবার আমাদের এ প্রকল্পে এখন কাজ করছে। এ ছাড়া বাউফল, দশমিনা, বাকেরগঞ্জ, বরগুনাতে ছয় হাজার পরিবারকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হয়েছে।’ নারীদের অবস্থান ও কল্যাণে মোতালেবের প্রচেষ্টার জন্য গত ২২ নভেম্বর নেদারল্যান্ডসের উডেনের রোটারি ক্লাব মোতালেবকে সম্মানিত করে। এ সময় রোটারি ক্লাব উডেনের গভর্নর লেনি খুইয়ার ইয়ানসেন, মেয়র হেলেগারস এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ ও তাঁর স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। মোতালেব বলেন, ‘অবশ্যই স্বীকৃতিটি অসাধারণ। সংস্থাটি আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বব্যাপী সমস্ত রোটারি ক্লাবের কাছে একটি প্রকল্প জমা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে আর সেই হাজার হাজার প্রার্থীর মধ্য থেকে নির্বাচিত ছয়জনের মধ্যে আমি একজন।’ এ জন্য মোতালেব চলতি বছরেই যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে আনুষ্ঠানিক পুরস্কারও পাবেন। মোতালেবের স্ত্রী ইনখ্রিড ওয়াইটার্স ২০১৩ সালে স্তন ক্যানসারে মারা যান। তিনটি বাচ্চাকে লালনপালন করছেন তিনি। দুই মেয়ের বয়স যথাক্রমে ২০ ও ১৮, আর ছোট ছেলেটি ১৩ বছর বয়সের। নেদারল্যান্ডসের উডেন শহরে বসবাসরত মোতালেব পরিষ্কার বাংলায় কথা বলেন। বাচ্চাদের নিয়ে তিনি প্রায়ই দেশে আসেন। ঝাল কম দিয়ে প্রায়ই দেশি খাবার রান্না করেন। চীন থেকে নেদারল্যান্ডসে মোজাইক পণ্য আমদানির ব্যবসাসহ তিনটি ম্যাসাজ সেলুনের মালিক মোতালেব।

No comments:

Post a Comment