Friday 1 July 2022

সোনার হরিণ

সাধারণতঃ বছরে দু’বার গ্রামে বেড়াতে যেতাম। সকালে গিয়ে বিকেলে আসা হলো নানুর বাড়ি। আর দাদুর বাড়ি মানে দু/তিন দিন থাকা। দাদুর বাড়ি বেড়ানোর মধ্যে একটা পার্ট থাকতো, দাদুর হাত ধরে আশে পাশের দাদুদের সাথে দেখা করতে যাওয়া। তখন সব গ্রাম জুড়ে এত পাকা বাড়ি ছিলো না। বেশির ভাগই টিনের বড় বড় ঘর। ঘরের সামনের অংশে থাকতো মেহমানদের বসার জায়গা। ঘরের ওয়াল জুড়ে নানারকম সূচিকর্ম। অনেক বাড়িতেই সোনালি জড়ির সূতা দিয়ে দুটো হরিণ আঁকা থাকতো, সাথে লেখা, “সোনার হরিণ, কোন বনেতে থাকো”? গ্রাম্য জিনিস ভেবে হয়ত অনেকে তাচ্ছিল্য করি। সূচি কর্মের নিপুনতার বাইরে এই বাক্যটির আর কোন উদ্দেশ্য বা গভীরতা আছে কিনা খোঁজার চেষ্টাও হয়ত করিনি বা করি না। আজকাল খুব মনে হয়, সেই লাজুক, নিরুপায় মেয়েগুলো হয়ত তাদের গোপন বেদনা, অশ্রু এই সুঁই -সূতার মাধ্যমে নিবেদন করে গেছে। কে কবে কার সোনার হরিণের খোঁজ পেয়েছে? তখনতো ব্লগ, ফেসবুক ছিলো না, যার যার মাধ্যমে সে তার নিজের বেদনা আকুলতা রেখে গেছে। হয়ত, এই দু’লাইনের মাঝেই লেখা আছে, খুব চেয়ে না পাওয়া সেই পাথর বসানো ঝুমকার দুঃখ, ঈদে বা পূজায় বাপের বাড়ি নাইওর যেতে না পারার কষ্ট কিংবা অকাল প্রয়াত সন্তানের প্রতি মমতা। ঘুরেফিরে তো একই উপসংহার, যা পাই তা চাই না, আর যা আজীবন চেয়ে বেড়াই তা কোথাও নেই। যারা পেয়েছি বলে ভড়ং দেখায়, তারা হয় নিজের কাছেই মিথ্যেবাদী নয় প্রবঞ্চক।

No comments:

Post a Comment