Thursday 25 January 2024

অপরাধবোধ আর লজ্জিত হওয়া

অপরাধবোধ আর লজ্জিত হওয়া রোজকার এই আলো -আঁধারিতে অসংখ্য ভুল-ত্রুটির মধ্যে দিয়ে যেতে হয় আমাদের, তা সে স্বেচ্ছায়ই হোক বা অনিচ্ছায়। মাঝে মাঝে আয়নার সামনে দাঁড়াতে হয়, আয়নায় নিজের মুখ দেখতে হয়, প্রশ্ন রাখতে হয় এই নিজেরই কাছে। “একা ঘরে নিজেকে প্রশ্ন করা” ব্যাপারটা শুনতে যত সহজ মনে হয়, আসলে ততো সহজও নয়। শোরগোলের এই পৃথিবীকে মোকাবেলা করার মধ্যে অনেক ছলকপট থাকে আর নিজের মুখোমুখি দাঁড়াতে সত্যিই অনেক সাহসী হতে হয়। “অপরাধবোধ এবং লজ্জা” এমন এক আবেগ যা নিজে তখনই উপলব্ধি করা যায় যখন "জীবন ধারনের জন্যে কিংবা সমাজে বসবাসের জন্যে বেঁধে দেয়া সাধারণ নিয়মগুলি" পালন করা হয়নি। কিংবা যদি আপনার নিজের বিবেকবোধ থাকে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি এমন কিছু করে থাকেন যা প্রচলিত নিয়ম এবং সামাজিক মূল্যবোধের সাথে খাপ খায় না। অথবা আপনি এমন কিছু করেছেন যা অন্যকে আশাহত করে বা আঘাত করে। অপরাধবোধ এবং লজ্জার অনুভূতি প্রায়শই একসাথে ঘটে, তবে মূলত জিনিসটি আলাদা। তাহলে পার্থক্য কি? “অপরাধবোধ” হল "আপনি কি করেছেন" সম্পর্কে একটি অসন্তোষজনক অনুভূতি। ধরুন, আপনি দোষী বোধ করছেন কারণ আপনি আপনার সন্তানের ফুটবল খেলা মিস করেছেন, অথবা আপনি একজন পরিচিতের কাছ থেকে একটি দামী ফুলদানি এনে ভেঙে ফেলেছেন। অপরাধবোধ প্রায়ই আপনাকে অন্যের দ্বারস্থ করে। উদাহরণস্বরূপ, দুঃখিত বলার জন্যে বা ক্ষতি পূরণ করার জন্যে আপনি তার কাছে ফিরে যান। “লজ্জা” হল "নিজের" সম্পর্কে একটি অপ্রীতিকর অনুভূতি। এমন হতে পারে, আপনি লজ্জিত কারণ আপনি মনে করেন যে আপনি একজন খারাপ মা, অথবা আপনি অনেক কাজে খুব আনাড়ি। কোন প্রিয়জনের অপ্রিয় কাজেও সামাজিক দায়বদ্ধতা ও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা থেকে লজ্জিত বোধ করতে পারেন। লজ্জা আপনাকে পেছাতে বাধ্য করে। আপনি অন্য কারো কাছে সেটি আর প্রকাশ করতে চান না কিংবা অন্য কারো সাথে এ ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করতে চান না। এজন্য আপনি নিজেকে যতটা সম্ভব ছোট বা অদৃশ্য করে ফেলেন। আর সমস্ত আবেগের মতো, অপরাধবোধ এবং লজ্জাবোধও কখনও কখনও দরকারী। অপরাধবোধ আর লজ্জিত হওয়া দিয়ে কি লাভ হয়? • অপরাধবোধ এবং লজ্জাবোধ আপনাকে "সমাজের সাধারণ নিয়মগুলো" মেনে চলতে সাহায্য করে। o আপনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে অন্য মানুষের ক্ষতি করবেন না। o আপনি সুইমিং কস্টিউমে অফিসে যাবেন না। অপরাধবোধ এবং লজ্জাবোধ আপনাকে আপনার "ভুলত্রুটি" শুধরে নিতে সাহায্য করে। • আপনি যদি ভুলবশত কারো কোনো গোপন কথা অন্যকে বলে থাকেন তাহলে আপনি দুঃখিত হবেন। • আপনার অতিমাত্রার কেতাদুরস্ততা কিংবা আঁতেলপনা যদি অন্যের ক্ষতির কারণ হয় তাহলে কিছুক্ষণের জন্য হলেও আপনি নিজেকে সংযত করবেন। সেটা কিভাবে করবেন? অন্যের চোখে চোখ রেখে, তার ব্যথা তার অপারগতার প্রতি সহানুভূতি, সহমর্মিতা প্রকাশ করে। অন্যের প্রতি যত সহনশীল হবেন ততোই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন। একা ঘরে আয়নায় চোখ রাখতে আর ঘাবড়ে যাবেন না, প্রাণ খুলে হাসতে ভয় পাবেন না। মূলঃ মনোরোগ বিভাগ, নেদারল্যান্ডস ভাবান্তর ও ভাষান্তর তানবীরা হোসেন

No comments:

Post a Comment