Thursday, 9 June 2011

মন খারাপ


টিপ টিপ বৃষ্টিতে
শরীর ভালো নেই
যারে যা কেউ
রান্নাঘরে যা নারে
।।
ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যানিতে
মেজাজ ঠিক নেই
মাইর খেতে না চাইলে
সামনের থেকে সরে যা নারে।।

কে জানে কি জন্যে
মেজাজ আমার ঠিক নেই
যারে যা সবাই
ভেগে যা নারে।।
রান্নাবান্না ঘরকন্না
আর ভালো লাগে না
হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে
যেখানে কেউ খুঁজে পাবে না
কোথায় আছে বল সেই ঠিকানা
যারে যা কেউ খুঁজে দে নারে।।
কোন কাজ করতে ইচ্ছে না
করার দারুন আলস্যে
বৃষ্টির কাঁথা গায়ে মুড়ে
শুয়ে থাকার মধুর আবেশে
কোথায় কবে মিলবে সে
অবসর কে জানে
সে আশাতেই দিন গুনছিরে।।
তানবীরা
০৯.০৬.২০১১

Wednesday, 25 May 2011

আমাদের এই ভালবাসা

আমাদের এই ভালবাসা
ছয় লক্ষ আত্মঘাতী ঝগড়া
চারকোটি ভিজে চুমু ঠোঁটে
আবেশে হাতে হাত রাখা
অনুভবে দুজনে ছুঁয়ে থাকা
এলোমেলো চিঠি লেখা
খুচরো খাচরা ফোন করা
টুকরো টাকরা মেঘে ভেজা

আমাদের এই ভালোবাসা
কতো বলা না বলা কথা
অজানা সুখে ডুবে থাকা
কিছু চাওয়া কিছু না পাওয়া
কিছু পেয়ে তা হারিয়ে ফেলা
কিছু স্বপ্ন প্রজাপতির পাখা
কিছু আদর তুলোয় মাখা
চোখে তার নামের কাজল আঁকা

তানবীরা
২৪.০৫.২০১১

উৎসর্গঃ অদেখা কিন্তু অনেক চেনা অনুজা “জেবীন”কে। যে খুব ভালো পায়েস রাঁধে। প্রবল ভালোবাসা নিয়ে মাঝে মাঝেই সে আমার বিষন্ন নিঃসংগ সময়গুলোকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়।

Friday, 20 May 2011

ছুঁয়েছে এ গান আমার কান্নার সাত সুর

If you love something, set it free; if it comes backs it's yours, if it doesn't, it never was. রিচার্ড বাক’এর এই উক্তিটিকে মন্ত্র করে তিতলি সারাক্ষণ মনে মনে আউরাতে থাকে। নিজেকে শক্তি দিতে চেষ্টা করে। দশ বারের মধ্যে আট বার সে হেরে যায় নিজের কাছে আবার দু’বার জিতেও যায়। সে অপেক্ষা করে থাকবে সায়ানের ফিরে আসার। সায়ানতো তার নিজের অংশ, পথ ভুলে যায় না লোকে? সায়ান পথ হারিয়ে ফেলেছে, পথ খুঁজে ফিরে এসে তার সায়ান তাকে খুঁজবে তিতলি জানে। তিতলি তার সমস্ত দরজা, জানালা, ঘুলঘুলি খুলে দিয়ে সায়ানের ফেরার অপেক্ষায় রইলো। কতদিন করবে অপেক্ষা? দশ বছর? বিশ বছর? পুরো জন্ম কিংবা জন্মান্তর? কিন্তু তাকে যে অপেক্ষা করতেই হবে। কোন একদিন সায়ান যখন খুব ক্লান্ত হবে তিতলির কথা তার নিশ্চয়ই মনে পড়বে। তখন তিতলির দরজায় এসে যেনো দরজা বন্ধ না পায় তারজন্যে সব খুলে রাখবে সে। ক্লান্ত সায়ানের মুখ মুছিয়ে দিবে নিজের ওড়না দিয়ে, চুলে হাত বুলিয়ে দিবে। মগ ভর্তি গরম কফি নিয়ে দুজনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে জোস্ন্যা দেখবে আর সায়ানের কানের কাছে মুখ নিয়ে প্রিয় কবিতার প্রিয় লাইনগুলো গুন গুন করবে। হাত নেড়ে নেড়ে অনেক গল্প করবে সেদিন তিতলি সায়ানের সাথে, অর্থহীন সব গল্প, যার আসলে কোন মানেই নেই। সায়ানের ভাল না লাগলেও সেসব শুনতে হবে। ওর কোন চয়েস থাকবে না তখন তিতলির কাছে। এটাই হবে তার শাস্তি। চুপ কর, বক বক শুনে মাথা ব্যাথা করছে বললেও তিতলি থামবে না। কাতুকুতু দিয়ে আরো খোঁচাবে সে সায়ানকে। সে অপেক্ষা করে আর স্বপ্নের জাল বুনে যায়, সায়ানের ফিরে আসা বা না আসা হলো তার নিয়তি। আবার এটাও ভাবে তার কাছেই সায়ানের ফিরে আসাটা বড় কথা নয়। সায়ান যেখানেই থাকুক, যার কাছে থাকুক আনন্দে থাকুক আর ভালো থাকুক সেটা বড় কথা। সে শুধুতো সায়ানের সুখ চায়।

যার জন্যে তিতলি জগত জুড়ে এতো চুরি করেছে, সে যখন চোর বানিয়ে তার হাত ছেড়ে দিল, মানসিকভাবে তিতলি একদম একা হয়ে গেলো। তার দিনরাতের সব কাজের বাইরে বাকি সময়টা জুড়ে শুধু সায়ান ছিল। এখন নিজের মনে সে একলা থাকে, ফাঁকা অবসর। কোথাও আর সেই প্রিয় মুখ সেই হাসি নিয়ে উঁকি দেয় না। সেই মায়াভরা চোখ নিয়ে কেউ তাকানোর নেই। সেই হাত আর তার ঠোঁট ছুঁয়ে দিবে না। কেউ আর তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তার চুলের গন্ধ নিবে না ভাবলেই তার এক এক সময় কষ্টে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। কি করে লোকে সব ভুলে যেতে পারে? কিন্তু তিতলি কিছুতেই হেরে যাবে না, নিজের কাছে সে নিজে এই প্রতিজ্ঞা নিল। এই যুদ্ধে তাকে জয়ী হতেই হবে। যতোই অস্থির লাগুক, নিঃশ্বাস বন্ধ হোক, মন কেমন করে করুক, চোখের পানিতে গাল ভিজেতো ভিজুক সায়ানের কাছে আর নিজেকে সে ছোট করবে না। ভালবাসাতো বেঁধে রাখার জিনিস নয়। হাত ছেড়ে যে চলে গেছে ফিরে তাকেই আসতে হবে। পৃথিবীর কারো কাছেই সে দুর্বল হবে না, ভেঙ্গে পড়বে না। নিজের আগুনে সে নিজে জ্বলবে। এতো জ্বলবে যে চোখের পানিকে সে বাস্প করে আকাশে উড়িয়ে দিবে। যেটা মেঘ হয়ে উড়ে গিয়ে ঝরে পড়বে সায়ানের বুকে। শুধু সায়ান জানতে পারবে না এই উড়ো মেঘের নাম কি ছিল।

মুরগী কেঁটে ছেড়ে দিলে যেমন ছটফট করতে করতে একসময় নিথর হয়ে যায়। কাঁটা মুরগীর মতো ছটফট করে করে একদিন সেও নিথর হয়ে যাবে এটুকু তিতলি জেনে গেল। কষ্ট হলে লোকে কষ্ট পায়, কিন্তু মরে যায় না, এটাই নিদারুন সত্যি। যদিও মরে গেলেই হয়তো কষ্টের হাত থেকে বেঁচে যেতো। তারপরও মনে ক্ষীণ আশা খেলা করে তার, কখনও ক্লান্ত মুহূর্তে সায়ান যখন একা থাকে, আনমনে জানালা গলিয়ে তার দৃষ্টি বাইরে দেয়, হয়তো তখন তার মনের নীল আকাশেও ভেসে ওঠে তিতলির মুখ। তিতলির জীবনের কাছে চাওয়ার বেশি কিছু নেই। নিশ্চিন্তে নির্ভয়ে ধরা যায় শুধু এমন দুখানি হাত ছাড়া। আজ মনে হয় আনকন্ডিশনাল আসলে পৃথিবীতে কিছু নেই। আনমনে বকে যাওয়ার মতো বন্ধুও কেউ হয় না এ পৃথিবীতে। এগুলো সব আসলে কথার কথা। শুধু কবিতার জন্যে এগুলো বলা হয়। ইদানীং আনমনে যখন বকতে ইচ্ছে করে, সায়ানের হাত ধরে যখন উড়ে যেতে ইচ্ছে করে, সায়ানের ঘাড়ে নাক ঘষে দিতে ইচ্ছে করে, তিতলি সায়ানের নামের উইন্ডো খুলে সেগুলো টপটপ লিখে ফেলে। কিন্তু সে চিঠি কখনো সে সেন্ড বাটনে চাপ দিয়ে সায়ান পর্যন্ত পাঠায় না। সায়ান কোনদিন জানতেও পারবে না তিতলির এই খেলার কথা।

শেষের দিকে যখন কথা হত, সায়ান তিতলির দোষ ছাড়া আর কিছুই বলতো না। আপন মনেই হাসে তিতলি। তার চারপাশের সবাই তাকে এতদিন ধরে সহ্য করছে,ছোটখাট সমস্যা হলেও সেটা কখনো তার সাথে লোকে থাকতে পারবে না, সে পর্যায়ের নয়। কিন্তু যে তার একান্ত আপন, তার সবচেয়ে ভালোবাসার লোক পৃথিবীতে তার স্বভাব মেনে নিতে পারলো না। হাত ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। কোন এক দুর্বল মুহূর্তে তিতলি সায়ানকে ম্যাসেঞ্জারে গ্রীন দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।
জিজ্ঞেস করে ফেললো, আমাকে কোন দোষে তুই ছেড়ে গেলি যদি একবার বলতি
সায়ান তার স্বভাবসুলভ ইগো নিয়ে বললো, তোর কোন কিছুই আমার মনের মতো নারে। তুই কখনো ইনফ্যাক্ট আমার মনের মতো হতেও পারবি না।
কি লাভ? তাই ............ আসলে কি জানিস তুই কখনো আমার মনের মতো ছিলিও না।
তুই ছিলি আমার মনের এক সময়ের ঘোর লাগা বিভ্রান্তি মাত্র।

আপন মনে হাসে তিতলি, তার মন মজেছে অন্য জায়গায় কিন্তু সে দূরে গেল তিতলির দোষ দেখিয়ে। কেন সায়ান তাকে বলতে পারলো না, তার অন্য কাউকে চাই এখন? এটুকু সৎ সাহস দেখালে সে তিতলির কাছে ছোট হত না। তিতলি কি টের পাচ্ছে না আসলে সায়ানের পৃথিবী কেনো দুলছে? সেদিনও দেখলো ফেসবুকে সায়ান অনেক ছবি আপলোড করেছে তার ডিপার্টমেন্ট এর আউটিং এর। এক ছবিতে মেরুন রঙের টপস পড়া এক স্বর্নকেশির খুব কাছে সায়ান দাঁড়ানো, দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসছে। সায়ানের এ হাসি যে তিতলির চিরচেনা। আগে এ হাসি শুধুমাত্র তার জন্যে হাসতো সায়ান। তিতলি অনুভব করতে পারে, অনেক দূর থেকে এতো কঠিন হওয়া আসলে সোজা। দুজন মানুষ যখন কাছে থাকে, একজনের দৃষ্টি অন্যজনকে ছুঁয়ে যায়, একজনের স্পর্শ আর অন্যজনের হৃদয় ভিজিয়ে দেয়। ঠোঁট ঠোঁটকে আবেশে চেপে ধরে তখন এতো কঠিন হওয়া যায় না একজনের প্রতি। তিতলিকে চাবুক দিয়ে কেউ আঘাত করলেও হয়তো সে এতোটা কষ্ট পেতো না। চোখের জল মুছে সে প্রতিজ্ঞা করলো, কারো মনের মতো হওয়ার চেষ্টা সে করবে না আর, যথেষ্ঠ করেছে। বরং যে তাকে পেতে চাইবে, তাকেই তিতলির মনের মতো হতে হবে। দুঃখকে সে আস্তে আস্তে শক্তিতে বদলে দিবে। একদিন অবাক হয়ে তিতলি লক্ষ্য করলো, সায়ানের ম্যাসেঞ্জার - ফেসবুক যেসব জায়গায় তিতলির অবাধ বিচরণ ছিল, সায়ান তাকে বিতারিত করে দিয়েছে অবলীলায়। সে হতবাক হয়ে গেলো সায়ানের এই ক্ষুদ্রতায়, সে সায়ানের জান হয়তো নয় আর কিন্তু বন্ধুও কি নয়? আর দশটা সাধারণ বন্ধুর মতো সে কি সায়ান কেমন আছে এটুকু জানতে পারে না? সে অধিকারও কেড়ে নিতে হলো তার কাছ থেকে? কিন্তু পরে সে সায়ানকে মনে মনে ধন্যবাদ দিতে লাগলো এজন্যে। অতীতকে মুছে সামনে যাওয়া এখন তিতলির জন্যেও সহজ হবে। যদিও জানে তিতলি তার চুলের গন্ধ পেলে, তার চোখের আয়নায় নিজের মুখ দেখতে পেলে, তার আঙ্গুল সায়ানের ঠোঁট ছুঁয়ে দিলে এতো তাড়াতাড়ি সায়ান তাকে মুছতে পারতো না সবকিছু থেকে। তবুও তিতলি নিজেকে টেনে তুললো হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির ভঙ্গুর স্তুপ থেকে। ফিরে দাড়ালো কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে আজ থেকে গানের সাধনায়, ছবি আঁকায় আর পড়াশোনায় নিজেকে আকন্ঠ ডুবিয়ে দিবে সে। হাঁটবে একা, বাঁচবে একা, হারিয়ে যাবে না কিছুতেই।

তানবীরা
২০.০৫.২০১১

উৎসর্গঃ আমাদের সবার আদরের “ছোটমা’কে”
লুকিয়ে ভালবাসবো তারে জানতে দিব না

Wednesday, 18 May 2011

ছোটমা’র জন্যে একরাশ ভালোবাসা

দেশে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলাম তখন এক আড্ডায় বান্ধবীরা একটু অনুযোগ করলো আমার কাছে, এতো গল্প লিখি কিন্তু স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি লাইফের কোন গল্প মানে বান্ধবীদের নিয়ে গল্প কেনো লিখিনি এখনো। কি দুর্দান্ত দিন ছিলো আমাদের। সবসময় পড়াশোনায় ভালো কিন্তু দুষ্টমীতে ওস্তাদ হিসেবে আমাদের বান্ধবীগ্রুপের নাম ছিল সব ইন্সটিটিউটে। আমিও ভাবলাম তাইতো কেনো লেখা হয়নি সেগুলো এখনো? আমাদেরকে রীতিমতো ভয় খেতো অন্য মেয়েরা। এমন কায়দায় পঁচাতাম অন্যদেরকে কিন্তু এখনো হয়নি লেখা সেই গল্পগুলো এটাই সত্য। আজ কদিন ধরে ভাবছি প্রিয় মানুষরা যারা আমাকে শুধু আমি বলেই ভালোবাসে, আমার কাছে কোন প্রত্যাশা না রেখে তাদের নিয়েও কোনদিন কিছু লিখিনি এমনকি আমার কোন লেখা কোনদিন তাদেরকে উৎসর্গও করিনি। অক্সিজেন সারাবেলা ঘিরে রাখে বলে, তাকে টেকেন ফর গ্রান্টেডে রেখে দিয়েছি, খুলে দেখিনি ঝাঁপি তার। ছোটমাকে দিয়ে আজ শুরু করলাম। আমার সাথে তার বয়সের ব্যবধান এক যুগেরও বেশি। আমার অনেক পরে সে এই পৃথিবীর আলো বাতাস দেখেছে। কিন্তু ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধি, সহ্য, স্যাক্রিফাইস আর সবাইকে দেয়ার ক্ষমতায় সে অনেক অনেক অনেক আগেই আমাকে অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে।

এক হরতাল মুখর ভোরে তার জন্ম। পুরো নার্সিং হোমে খবর হয়েছিল ফুটফুটে এতো সুন্দর একটা বাচ্চা মেয়ে জন্মেছে। আমাদের কোলে আর কেউ দেয় না। অন্য রোগীদের আত্মীয় স্বজনের কোলে কোলে সে ঘুরছে। আমি আর ভাইয়া নিরুপায় এক কোনায় দাঁড়িয়ে। তখন আব্বু নার্সকে অনুরোধ করলেন আমাদেরকে যেনো দেয় দেখতে। নার্স এসে বিশাল হাসি দিয়ে ভাইয়ার কোলে তুলে দিলেন। বললেন, চারবোনের এক ভাই তুমি, তোমার বিশাল দায়িত্ব। এতো সুন্দর বোন সহসা হয় না কারো, দেখে রেখো। ভাইয়া নার্সের কথার মর্যাদা রেখেছেন। আমাদের সবাইকে ভাইয়া ভালোবাসেন কিন্তু ভাইয়ার নিঃশ্বাসের এক পাশে লেখা আছে ছোটমার নাম। আর এ নাম আমি নির্দ্বিধায় বলবো, শুধুমাত্র সৌর্ন্দয দিয়ে ছোটমা পাননি। অনেক ত্যাগ দিয়ে পেয়েছেন, ওয়েল ডিজার্ভাড। কিন্তু ছোটমার আগমনে আমি মোটেও হ্যাপি ছিলাম না তখন। আগে আমি আর ভাইয়া, দুই ভাইবোন, দাদু আর বাবা মা, এই ছিল আমাদের সংসার। তখনো ঢাকার জমি এতো দামি ছিল না। আমাদের বাড়ির ঘাড়ে লাগিয়ে লাগিয়ে অন্যেরা বাড়ি তুলেননি। চার বেডরুমের সেই বাড়িতে আমরা অনেক আনন্দে ছিলাম। কিন্তু লিটিস পিটিস ভাইবোন আসাতে, রুম দখল হতে লাগল, সাথে টিভি, সাথে মা। আগে মধ্যবিত্ত বাড়িতে সাধারণত একটা টিভি থাকতো। মা আমাকে আর আগের মতো সময় দিতেন না, দিতে লাগলেন ওদের। সেই রাগে আমি ছোট দুটোকে ছুঁতেও চাইতাম না। এখনো আমি বলি, তোকে আমি কোলে নিতাম না জানিস, ছোটমা হাসতে হাসতে আমার গায়ে গড়িয়ে পরে আর বলে এখনতো নাও।

আমি আর ছোটমা কন্সট্যান্ট ঝগড়া করতাম। মা বলতেন এটা কি করে সম্ভব? এতো গ্যাপের দুজনের মধ্যে এতো ঝগড়া। আবার আমিই দুবেলা মুখে তুলে খাইয়ে দিতাম। বিকেলে সাজিয়ে ঘুরতে পাঠাতাম। বেড়াতে গেলে সাজিয়ে নিয়ে যেতাম সাথে করে। তার চুল কেঁটে আমি পার্লার পার্লার প্র্যাক্টিস করতাম। তিলের খাজা ছিল তখন তার প্রিয় খাদ্য। টিভিতে নাটকের সিরিয়ালের সবাই ছিল তার আত্মীয়। বহুব্রীহি নাটকের মিলি ছিল, মিলি আন্টি, সোবহান সাহেব দাদা। তিনি তার কমন সেন্স খাটিয়ে পোষাক আর বয়স দেখে তাদের সাথে তার সম্পর্ক ঠিক করে নিতেন। যেমন চাঁদনী ফিল্মের ঋষি কাপুর ছিলেন তার রোহিত আঙ্কেল আর শ্রীদেবী ছিলেন চাঁদনী আন্টি। আমাকে ছাড়া আর সবার সাথে তার ভাব ছিল। আব্বু বাড়ি এলে আমার নামে নালিশ দিতো। আব্বু হাসতো আর বলতো, তোর সাথে ঝগড়া করে, দাড়া ওকে বিয়ে দিয়ে বিদেশ পাঠিয়ে দিবো। তখন ওনিও নেচে নেচে আমাকে বলতেন, বিদেশে পাঠাবো বিয়ে দিয়ে, এই হবে আমার সাথে ঝগড়া করার তোমার উচিৎ শাস্তি। সুখের দিন ঝগড়াঝাটি আর মারামারিতে অনেক দ্রুত ফুরিয়ে গেলো। তখন বুঝিনি যে সেগুলো সুখের দিন ছিল। উচিৎ শাস্তি পেয়ে আমি আজ অনেক দূরে। আমার বিয়েতে সবাই এতো উত্তেজিত ছিল যে আমি, আব্বু আর ছোটমা ছাড়া কেউ আমার বিদায় বেলায় কাঁদেনি। কিন্তু সেই থেকে আমার প্রত্যেক বিদায়ে ছোটমা অশ্রুসজল হয়েছে। আমি প্লেনে ওঠার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত যে আমার গায়ের ঘ্রানের জন্যে আকঁড়ে থাকে সে ছোটমা।

এক সময়ের সবার আলহাদের ছোটমা কখন যে সবার আশ্রয় হয়ে গেলো তা আমরা সজ্ঞানে টেরই পাইনি। আব্বুর হার্ট এ্যাটার্ক হলো, বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার আলোচনা থাক এখানে। তিনবার ঢাকার নামী হাসপাতালে ওপেন হার্ট করে শেষ পর্যন্ত ভারতের দ্বারস্থ হতেই হলো। তিনবার এই অপারেশনের মাঝের যে সময়টা প্রায় দেড় বছর, আব্বু রাতে ঘুমাতে পারে না। সারা রাত ব্যথায় কাতরায়। আমি মেয়ে নিয়ে জেরবার, ঘুম কাতুরে, জাগতে পারি না। ছোটমা কিচ্ছু করতে পারে না কিন্তু আব্বু কাতরালে সে কি করে ঘুমায়? সারারাত আব্বু সোফার পাশে বসে থাকতো সে আব্বুকে ধরে চুপ করে, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। যখনও সে শুতে আসতো, তখন হয়তো মেঘ জেগে গেলো ঘুম থেকে। এসব মিলিয়ে তার রেজাল্টকে কম্প্রোমাইজ করতে সে বাধ্য হল। ঢাকা ভার্সিটিতে তার মনমতো সাবজেক্ট সে পেলো না। অথচ তার মেধার কোন কমতি ছিল না আমরা সবাই জানি। তার শিক্ষরাও অবাক হলেন কি করে সে জিপিএ ফাইভ পেলো না। আমরা জানি কি করে পেলো না। কিন্তু আমরা কি করবো? আমাদের সবার তখন চাকরী আছে, সংসার আছে শুধু ছোটমা ছাড়া তাই সব স্যাক্রিফাইস তাকেই করতে হবে যে। তাই সে সাধের ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ার আশা বাদ দিয়ে বিদেশী ইউনিতে ভর্তি হলো।

মেঘকে কেউ জিজ্ঞেস যদি করে, কে তোমার মা? সে চোখ বন্ধ করে জবাব দেয় ছোটমা। প্রথমে ভাবা হয়েছিল ছোটমার পরে বাড়িতে মেঘ প্রথম। তাই বুঝি দুজনের এতো টান। কিন্তু না, আমাদের তিন বোনের তিন বাচ্চারই মা হলো ছোটমা। আর এখনতো ভাইয়ের মেয়েটা স্কুল থেকে এসে প্রজাপতির মতো ওর গায়ে ঝাপিয়ে পড়ে। সব বাচ্চাদের আবদার কে মিটাবে, ছোটমা। স্বর্নের এতো দাম। কিন্তু ছোটমা সব ছেলেমেয়েদেরকে সোনার লকেট, দুল, আংটি গিফট দেন তাদের জন্মদিনে। অথচ আমরা এখনও নিজেকে বাদ দিয়ে অন্যের কথা ভাবতে পারি না। কিন্তু ছোটমা নিজের টাকাটা পুরোটাই সন্তানদের দিয়ে দেন। এতো ব্যস্ততার মাঝেও টিউশিনি করে। চাকরীও করতো, অফিসে এসি নেই, এই কষ্টে চাকরী ছেড়ে দিয়েছে। যদিও বস এসি লাগিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তার বন্ধু বান্ধব প্রায় নেই বললেই চলে। বানিজ্য মেলায়, ক্রিকেট খেলায় যায় ভাইয়ার সাথে। কে।এফ।সি খায় বাচ্চাদের নিয়ে। মাদার্স ডেতে সিনেমা দেখতে যায় মাকে নিয়ে। মার্কেটে ঘুরে বোনকে নিয়ে। ফ্রেন্ডরা অনেক উলটা পালটা মজা করে যা ওর ভালো লাগে না তাই ফেসবুকের মধ্যেই ফ্রেন্ডশীপ সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে। মাঝে মাঝে হারমোনিয়ামের ধূলো ঝেড়ে কিন্নরী কন্ঠে যখন গায়,

চৈতালী চাঁদিনী রাতে, নব মালতীর কুঁড়ি

মুকুলও নয়ন মেলি সাথী জাগে আমারি সাথে

তখন গান বাজনা নিয়ে নাঁক সিটকানো লোকও তার পাশে বসতে বাধ্য হয়।

রাতে আমি, ছোটমা আর মেঘ একসাথে ঘুমাই বেশিরভাগ দিন। আসলে ঘুমাই না ছোটমা আর আমি রাত জেগে প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় কূটনামি, গালগল্প করি আর হি হি হি করি। অনেক সময় হিহিহি করতে করতে গড়াতে গড়াতে বিছানা থেকে নীচে পড়ে যাই। তখন ভয় লাগে নীচ তলার ভাড়াটে না কাল সকালে আব্বুকে কিংবা ভাইয়াকে নালিশ করে। রাত তিনটায় পঞ্চাশ কেজি ওজনের কি পড়ে তাদের মাথায়। আমাদের সে গালগল্পে পাশের বাসার নতুন ভাড়াটে ছেলে, যে নিজেকে আজকাল বেশ হিরো ভাবছে তার থেকে শুরু করে রোজ বাসায় যে মাছ দেয় সেও বিষয় হতে পারে। দেশে এলে জীহবা সামলাতে পারি না। রাস্তায় মাস্তায় যা দেখি খেয়ে ফেলি লোভে পড়ে। স্টমাক আপসেট কিংবা ফুড পয়জনিং টাইপ কিছু হবেই হবে দু একবার। ছোটমা হয়তো সারাদিন বোনের সাথে মার্কেট ঘুরে, বোনের বাচ্চাদের গোসল দিয়ে খাইয়ে, নিদারুন ক্লান্ত হয়ে একটু চোখ বুঝেছে। রাত তিনটায় আমি ওয়াক করা মাত্র সে, সেই গভীর রাত্রিতে সে ছুটবে বালতি আনতে, পানি আনতে। তাকে ঘুম থেকে ডাকতে হবে না, বলতে হবে না কিছু আর সময় লাগবে মাত্র এক সেকেন্ড। বমির তোড়ে যখন মনে হবে বেসিন ভেঙ্গে নিয়ে পড়ছি তখন এমন করে জড়িয়ে থাকবে যে পৃথিবী যাহয় হোক, সে আমাকে ছাড়বে না।

মা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর সবার আশ্রয় এখন সেই ছোটমা। আমাদেরকে দেখে, মেঘের কি সালোয়ার কামিজ লাগবে, আমি কি বই খুঁজতে বললাম, ব্যাঙ্কের হিসাব সব ছোটমা। মা বাবাকে দেখে, তাদের ঔষধ, প্রেশার, ডাক্তার সব ছোটমা। আমাদের ছেলে মেয়েদেরকে দেখে, তাদের স্কুলে থেকে আনতে হবে, রাখতে হবে, সিনেমায় নিতে হবে কে ছোটমা। ভাড়াটিয়ারা কমপ্লেইন করবে কার কাছে, তো তার কাছেইতো। কাজের লোকের ঝামেলা, তাও ছোটমা। সংসারে ছোট হয়ে জন্মেছেন তিনি, কিন্তু সব দায়িত্ব হাসিমুখে মেনে নিয়ে শুধু দুহাত উজাড় করে দিয়েই যাচ্ছেন। নিচ্ছেন না কিছুই।

ছোটমা আমরা অনেক স্বার্থপর বটে কিন্তু তোমায় নিঃস্বার্থ ভালোবাসি জেনে রেখো।

তানবীরা

১৯.০৫.২০১১

Friday, 29 April 2011

ট্যুর দ্যা বার্সেলোনা

দেশ থেকে ফিরে এসে অবধি কোথাও যাই নাই। চাকরী বাকরী নাই কই যাবো। পয়সা নাই মানে স্বপ্ন পরিকল্পনা কিছুই নাই। রোজ রাঁধি, খাই, ব্লগাই, ফেসবুকাই। আমার মতো পাড়াবেড়ানি মানুষের জন্যে চরম কষ্টের দিনরাত পার করা। কিছুদিন আগে একটা অনুষ্ঠানে পুরনো বন্ধু শ্যামার সাথে দেখা হলো। প্রবাসী থাকতে সপ্তাহে সপ্তাহে দেখা হতো, প্রবাসী ভেঙ্গে এখন হয়েছে সীমানা পেরিয়ে সাথে বন্ধু বান্ধবের মুখও বদলে গেছে। সপ্তাহে সপ্তাহে এখন অন্য মুখ। গান –বাজনা, খাওয়া – দাওয়া, আড্ডা সব প্রায় একই আছে শুধু মুখগুলো বদলে গেছে। শ্যামা এখন বার্সেলোনা আছে, রয়টার্সে চাকরী নিয়ে, খুব ধরলো একবার যেতে।

অনেকদিন ধরে বার্সেলোনা যাবো যাবো করেও যাওয়া হয়নি। নাচুনী বুড়িকে শ্যামা ঢোলের বাড়ি দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। আমিও রাত জাগা পাখি, শ্যামাও তাই। প্রায় অনেক রাতে ফেসবুকে কথা হলেই শ্যামা তাগাদা দিতো, বার্সেলোনা আসার পরিকল্পনার কি হলো। তারপর ইষ্টার ভ্যাকেশনের জন্য কপাল ঠুকে টিকেট কিনেই ফেললাম এবার। সস্তা মাগনার চার্ট এয়ারের কল্যানে এদিক ওদিক বেড়াতে যাই আমরা গরীবরা। মুড়ির টিন বাসের সিষ্টেম এগুলোর। আগে ইউনিভার্সিটি পড়ার সময় ভার্সিটি বাসে বাড়ি ফিরতাম, রিকশা ভাড়াটা বাঁচাতাম তেহারী আর কোক খাওয়ার জন্য। প্রায় সেই বাসের কথা মনে পড়ে এই প্লেনে উঠলে। সবচেয়ে ভালো লাগে আমার মেয়ের অবস্থা দেখতে। এসব প্লেনে টিভি নেই, খেলনা নেই এমনকি খাবারও নেই কিছু। মাঝে সাঝেই আমি আর আমার মেয়ে সস্তার টিকেটে ইউরোপের ভিতরে এদিক ওদিক যাই। খুব মন খারাপ করেন তিনি এই মুড়ির টিন প্লেনের চেহারা দেখলে।

Barcelona City from plane

Barcelona City from plane

প্লেন থেকে বার্সেলোনা

তবে এবার মেয়ের কপাল ভালো। মেয়ের বাবাও সাথে ছিলেন। মেয়েকে স্যান্ডউইচ কিনে দিলেন প্লেনে। দুইটাকার স্যান্ডউইচ পাঁচ টাকা দিয়ে আমি জীবনেও কিনবো না। মেয়ে বাংলাদেশে তার খালাদের নালিশও দিয়ে এসেছে, মা কিছুই দেয় না, সব ফালতু খরচা বলে। তবে মেয়ের বাবা সজ্জন ব্যাক্তি মেয়ের সাথে আমাকেও স্যান্ডউইচ কিনে দিয়ে কোকও কিনে দিলেন। এসব প্লেনে কেউ কিছু কিনে না প্রায়ই এয়ারহোষ্টেস কালা কতগুলো বেক্কল পেয়ে বিগলিত হয়ে গেলেন। একটু পর পর এসে মেয়ের বাবাকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো, আর কিছু চাই, চা – কফি? মেয়ের বার নিরুপায় গলায় আমাকে বার দুই জিজ্ঞেস করতেই আমি কঠিন লুক দিলাম, বুঝালাম আবার যদি আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছো।

এমনিতেই তিনি আমার কানের কাছে মাছির ভন ভন দিয়ে রেখেছেন। অনেকেই আমাকে “তিনার” গান শুনে বিগলিত হাসি দিয়ে বলেন, আপনি কতো লাকি, সবসময় বাড়িতে ওনার গান শুনেন। আমি এর উত্তর দেয়ার প্রয়োজন বোধ করি না। গান প্র্যাক্টিস শুনতে কার কেমন লাগে সেটা “কি যাতনা বিঁষে, বুঝিবে সে কিসে” এর স্কেলের ব্যাপার। যাক, মেয়ের বাবা তার প্রিয় নজরুল গীতির ট্র্যাকের সাথে গান প্র্যাক্টিস করতে করতে, মেয়ে নিন্টেন্ডোতে গেম খেলতে খেলতে আর আমি সুচিত্রা ভট্টাচার্যের “রুপকথা নয়” এর চিকুরের মধ্যে ডুবে দু ঘন্টায় এন্ডহোভেন থেকে বার্সেলোনা পৌঁছে গেলাম। ঠিক দশ বছর আগে স্পেনের “বেনিড্রোমে” বেড়াতে গিয়েছিলাম দশ দিনের জন্যে, সেটা সমুদ্র পাড়ে। সে ছুটিটাও জীবনের একটা স্মরনীয় আনন্দময় ছুটি ছিল এটাও ঠিক তাই হলো। আবার যাওয়ার ইচ্ছে আছে গ্রানাডা’র পাশে। হয়তো আবার দশ বছর বাদে হবে, কে জানে কিংবা হবে না। তবে স্পেনের সাথে আমার কিছু আছে, সবসময়ের ভালোবাসা আমাদের।

Casa Batllo @ Gaudis work

কাসা বাটলো @ আন্টনিও ঘাওডি’র মাষ্টার পিস

Casa Fuster @ Gaudis work

কাসা ফুস্টার @ আন্টনিও ঘাওডি’র মাষ্টার পিস

by tanbira, on Flickr">Sea Food

মেডেটেরিয়ান সী ফুড

Barcelona city from Tibidabo Hill

বার্সেলোনা সিটি @ টিবিডাবো পাহাড়চূড়ো থেকে

FC Barcelona Club

FC Barcelona Club

ফুটবল ফ্যানদের জন্যে “এফসি বার্সেলোনা ক্লাব”

Barcelona City

বার্সেলোনা সিটি @ এ জায়গাটা বোধহয় অনেকেরই বহুবার টিভিতে দেখা

Arena Barcelona @ before Bull fight Stadium

এখন বার্সেলোনা আরেনা @ আগে এখানে বুল ফাইট হতো

Barcelona City

Barcelona City

বার্সেলোনা সিটি @ জায়গাটা বোধহয় অনেকেরই বহুবার টিভিতে দেখাআমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে এ জায়গাটা

Barcelona Stadium

বার্সেলোনা স্টেডিয়াম @ সবার পরিচিত

Barri Gotic - Old Barcelona City

বাড়ি গোটিক @ পুরনো বার্সেলোনা সিটি সেন্টার

Barcelona City

প্লাসা লা কাটালুনিয়া @ ইন দি ইভিনিং

Barcelona city from Tibidabo Hill

বার্সেলোনা সিটি @ টিবিডাবো পাহাড়চূড়ো থেকে

by tanbira, on Flickr">Sea Food Paella

বিখ্যাত স্প্যানিশ সীফুড পায়েলা

Park Guell @ Gaudis work

পার্ক গুয়েল @ ঘাওডির ডিজাইন

The Famous Spanish Coffee

নানা স্বাদের কফির জন্যে স্পেন বিখ্যাত

La Barceloneta - Sea Beach

হাটি হাটি পা পা করে একদিন এই মেয়েটা বড় হয়ে যাবে। চলে যাবে আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে। শুধু সে জানে না, আমি ঠিক এভাবে ছায়া হয়ে তাকে অনুসরন করবো। বেঁচে থাকি আর মরে যাই, তার ছায়া হয়ে রইবো।

La Barceloneta - Sea Beach

কার ছায়া পড়েছে ...............জলেরও আয়নাতে

La Barceloneta - Sea Beach

লা বার্সেলোনেতা – সী বীচ

Barcelona City

বার্সেলোনা সিটি

La Barceloneta - Sea Beach

লা বার্সেলোনেতা – সী বীচ এর পাশের রাস্তাটি

by tanbira, on Flickr">The Famous Spanish Drink Sangria

স্প্যানিশ ড্রিঙ্ক সাংগরিয়া – কে না জানে তার নাম

Mercat de la Boqueria

কাঁচাবাজারে এধরনের শৈল্পিক ভাবনা আবারো প্রমান করে শিল্প ধনীদের সম্পত্তি নয়

Mercat de la Boqueria

নারকেলের দুধের সাথে যেকোন ধরনের ফলের রস পাবেন এখানে। ককটেল

Mediterranean Sea Fish

মেডেটেরিয়ান সী ফিশ

Mercat de la Boqueria

মের্কাট ডে লা বুকেরিয়া @ এ কাঁচাবাজার বার্সেলোনাতে রোজ বসে

La Sagrada Familia

সর্বশেষ কিন্তু সবচেয়ে দামি, লা সাগরাডা ফামিলিয়া। আন্টনিও ঘাওডির সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ। যার জন্যে তিনি পৃথিবী জুড়ে আদৃত – সমাদৃত। সত্তর বছর বয়সে ট্রাম চাপা পড়ে তিনি মারা গেলে, দুদিন পর তাকে এর মধ্যেই সমাহিত করা হয়।

সু সন্তান একটা হলেই যথেষ্ঠ। এক আন্টনিও ঘাওডি যা দিয়ে গেছেন স্পেনকে তাই দিয়েই তারা শত বছর ধরে করে খাচ্ছে আরো অনেক দিন করে খাবে। স্পেনের প্রধান আয় হয় পর্যটন তারপর কৃষিকাজ। পর্যটনকে কেন্দ্র করে স্প্যানিশরাতো বটেই সুদূর বাংলাদেশিরাও করে খাচ্ছে। বিখ্যাত ফ্লেমিংগো নাচের ড্রেস, জুতো সব নাকি আজকাল বাংলাদেশ থেকে তৈরী হয়ে স্পেনে যায় শুনতে পেলাম। অনেক ভারতীয় রেষ্টুরেন্ট হয়েছে যার মালিক বাংলাদেশী। ট্যাক্সি চালক, ওয়েটার, স্যুভেনীয়র শপের অনেক অনেক মালিক পাকিস্তানী, ভারতীয় ও বাংলাদেশী। আন্টনিও ঘাওডি শুধু স্পেনকে নয় আমাদেরকেও অনেক দিয়ে গেছেন বটে। নমস্য এমন মানুষরা যেনো কালে কালে জন্মান। যারা স্থপতি আন্টনিও ঘাওডি সম্পর্কে জানেন না তাদের জন্যে

http://www.google.com/search?q=antonio+gaudi&hl=en&prmd=ivnso&tbm=isch&tbo=u&source=univ&sa=X&ei=RCC7TaT6MIKeOvex8PkF&ved=0CDQQsAQ&biw=1366&bih=599

আসেন এবার গান শুনি

http://www.youtube.com/watch?v=ujTCZgPr5MA

http://www.youtube.com/watch?v=MXXRHpVed3M

ফটোগ্রাফীঃ পারিবারিক

তানবীরা
২৯
.০৪.২০১১

Tuesday, 15 March 2011

আমার কানে কিছু বলতে এলো সে, হাতছানি তার অজানায় বহুদূর

প্রবাস জীবনের ব্যস্ততায় আর তিতলির অবুঝপনায় ক্লান্ত হয়ে সায়ান আস্তে আস্তে তিতলির সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিল। মেইল, ফোন সবকিছু সে নিজে কমিয়ে দিল, তিতলির ডাকে সাড়া দেয়াও কমিয়ে দিল। ওদের মধ্যে একটা অলিখিত নিয়ম ছিল, প্রতি ভোরে দুজন দুজনকে সুন্দর একটা দিনের শুভকামনা জানিয়ে উইশ করা, সেটা সায়ান বন্ধ করে দিল। শুধু যে তিতলির অবুঝপনা আর ঝগড়া এটার কারণ ঠিক তাও নয়। আজকাল সায়ান ভবিষ্যৎ এর কথাও ভাবছিল। সামনের সুন্দর উজ্জল ক্যারিয়ার আর ভবিষ্যৎ ফেলে সে সহসা দেশে ফিরতে চায় না। আর তিতলিও তার পরিবারের খুব ন্যাওটা। তাদের ছেড়ে সে এই দূরদেশে আসার কথা ভাবতে পারে না। তাহলে এ লং ডিসট্যান্স রিলেশনশিপের ভবিষ্যৎ কি? কি দরকার এ মূল্যবান সময় আর শক্তি বৃথা নষ্ট করে তার রাত জাগার? তারচেয়ে আশেপাশের স্বর্ণকেশীদের দিকে মন দিলে কেমন হয়, সে ভাবনাও তার মনে ভাসে। তাহলে কি, আউট অফ সাইট – আউট অফ মাইন্ড, ব্যাপারটাই আবারো সত্যি হতে যাচ্ছে? না, তাইবা কেন হবে? দেশে থাকতে কি সে অন্য মেয়েদের দিকে কখনো তাকাতো না কিংবা সুযোগে অন্য মেয়েদের সাথে ফ্ল্যার্ট করতো না?

সায়ানের কোর্সমেট আছে একটি স্প্যানিশ বংশোদ্ভুত মেয়ে, মাঝারী গড়নের, বাদামী চুল আর চোখ, অসাধারণ দেখতে। মেয়েটি কখনো সখনো তার পাশে বসলে তার আজকাল অন্যরকম লাগতে থাকে। মন দিয়ে ক্লাশে লেকচার পর্যন্ত ফলো করতে পারে না। স্বর্ণকেশী কি টের পায় তার হৃদয়ের এই উত্তাপ? ক্লাশের বাইরেও আজকাল তার সাথে দেখা হয়, কথা হয়, ক্যাফেতে একসাথে কফি খেতে যায় ওরা। পরিচয়টা ঘনিষ্ঠতায় বদলাতে থাকে দ্রুত, দুজনেই অনেকটা সময় একসাথে কাটায়। মেয়েটির বাংলাদেশী সংস্কৃতি নিয়ে বেশ আগ্রহ। আর অনেকটা আগ্রহ যে তাকে নিয়েও সায়ান তা বুঝতে পারে। এ আগ্রহ আজকাল তার মনেও রঙ ছড়াচ্ছে, সে সেটাকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছে। মনে মনে কিছু নির্দয় পরিকল্পনা করছে সে এই স্বর্ণকেশী ঘিরে। এমনিতে তিতলির মায়া কাটানো তার পক্ষে অসম্ভব ছিল। দিনরাত সে তিতলিতে অভ্যস্ত। মেইলে তিতলি, মোবাইলে তিতলি, ফোনে তিতলি। তিতলির মায়া তার চিরচেনা। তিতলির চুলের গন্ধ, ঠোঁটের স্বাদ, গলার ঘামের লবনাক্ততা তার অতি পরিচিত। কিন্তু এই স্বর্ণকেশীর মায়া দিয়ে তিতলির মায়াকে রিপ্লেস করতে সে বদ্ধপরিকর হয়ে উঠছে দিন দিন। দরকার কি তিতলির এতো ন্যাগ সহ্য করার। বাঙ্গালী মেয়েগুলোতে যেমন মেয়েলিপনা ভর্তি তেমনি ন্যাগিং। তার এতো সময় নেই, জীবনে অনেক দূরে যেতে হবে।

মাঝখানে কিসের যেনো বন্ধ ছিল, সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে লং উইকএন্ডে সে আর স্বর্ণকেশী পাশের শহর থেকে ঘুরে এলো। একসাথে মাছ ধরলো লেকের পাড়ে বসে, সে মাছ ক্লীন করে সস দিয়ে মেরিনেটেড করে রেখে বারবিকিউ করে খেলো দুজনে। স্প্যানিশদের সাথে বাঙ্গালীদের অনেক মিল। এরাও বেশ ভাত খায়, দুবেলা খায় আর সমুদ্রের পারের মানুষ বলে মাছ ওরাও খুব ভালোবাসে। যতোই দিন যাচ্ছে সায়ানকে ততোই স্বর্ণকেশীর সাথে তার জীবনযাত্রার মিল আবিস্কারের নেশায় পেয়ে বসেছে। সায়ান নিজেও আজকাল অবাক হচ্ছে নিজের কর্মকাণ্ডে, নিজের আত্মবিশ্বাস তাকেই মুগ্ধ করে দিচ্ছে। যতোটা কষ্ট হবে ভেবেছিল তিতলি আসক্তি কাটাতে তার কিছুমাত্রই হয়নি। বরং দিনরাত যেন তার উড়ে চলছে। স্বর্ণকেশী তাকে অন্য জগতে নিয়ে ছুড়ে ছুড়ে ফেলছে। আর এই ছুড়ে ফেলাতে সায়ান আনন্দের সাথে নিজেকে সমর্পন করছে। শেষ বিকেলে নরম হয়ে আসা কমলা আলোর আভায় সে যখন বারবিকিউড ফিশ আর রেড ওয়াইন নিয়ে লেকের পাড়ে বসে পানির ওপর নাম জানা সুন্দর সমস্ত পাখির উড়াউড়ি দেখছিলো তখন তার সেলে তিতলির ফোন এলো। ইশারায় স্বর্ণকেশীকে সে বললো, “হোম”। হ্যালো বলতেই ঐপার থেকে তিতলির গলা। কি বিষন্নতা মাখানো ছিল তিতলির গলাটায়। আগেরদিন হলে সায়ান ভেঙ্গে যেতো সমুদ্রের ঢেউ হয়ে তিতলির তটে। সেদিন গলা শুনে এক মুহূর্তের জন্যে কেঁপে উঠলেও পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়েছিলো সে।

সায়ানের এই এড়িয়ে যাওয়া তিতলি আজকাল বেশ টের পায়। সেই আকুলতা আর নেই, খুব দায়সারা ভাবে সারাদিন পর হয়তো তার অনেক কয়টা ম্যাসেজের জবাবে এক লাইন লিখবে, তুই খেয়েছিস কিংবা ব্যস্ত আছি, তুই কেমন আছিস টাইপ কিছু। সারাদিন ধরে ম্যাসেজ চেক করে করে সে যখন ক্লান্ত হয়ে যাবে তখন এমন দায়সারা কিছু তার অভিমানকে আরো উস্কে দেয়। কিন্তু কার কাছে কাঁদবে। সবচেয়ে আপনজন যখন অচেনা আচরন করে তখন কার কাছে নালিশ করতে হয় তিতলিরতো তা জানা নেই। তার সমস্ত অনুযোগ আর অভিযোগের ঠিকানাইতো ছিল সায়ান। তিতলি কোথায় যেনো পড়েছিল, ছেলেরা প্লেটোনিক লাভ ধরে রাখতে পারে না, তাদের জন্য চাই রক্ত মাংসের কিছু। সায়ানের এই অবহেলা তীব্র হয়ে তাকে বিঁধে। নিরুপায় হয়ে নিজেকে সে শাস্তি দেয়। খায় না ঠিক করে, পড়াশোনায় মনোযোগ নেই, অকারণে বন্ধুদের সাথে কিংবা কখনো মায়ের সাথে ঝগড়া করে কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে থাকে। বই ছিড়ে ফেলে, প্রিয় গানের সিডি ভেঙ্গে ফেলে কিংবা বারান্দার টবে তার নিজের হাতে লাগানো প্রিয় জুঁই – বেলিকে ছিঁড়ে তার রাগ কমায়। তার এই কষ্ট এই যন্ত্রনা কিছুই কি সাগরকে পার করে ঐপারে পৌঁছায় না? না জানে না তিতলি পৌঁছায় কি না। মনে হয় পৌঁছে না, তাহলে কি কেউ এতো নির্দয় হতে পারতো তার প্রতি?

ছোটবেলায় অবুঝ হয়ে সে যে নির্দোষ দুষ্টুমি করেছে তার শাস্তি কি তাকে এখন ভগবান দিচ্ছেন? খেলতে যেয়ে পিঁপড়ের ডিম ভেঙ্গেছে, কিংবা পাখির বাসা নষ্ট করেছে তার প্রতিশোধ নিচ্ছে কি খোদা? সায়ানকেও কেন যেন আজকাল তার গডের সমার্থক মনে হয়। তার নির্ভেজাল অভিমান কিংবা অর্থহীন দুষ্টুমী ক'রে বলে কথাগুলোকে সে ইলাষ্টিকের মতো টেনে টেনে তা থেকে নানা রূপ বের করে যেভাবে তাকে বকে কিংবা ঝগড়া শুরু করে আর দিনের পর দিন তার সাথে কথা না বলে, তার চিঠির জবাব না দিয়ে তাকে শাস্তি দেয় তাতে অনেক কষ্টের সাথে হাসিও পায় তিতলির। সায়ানও খোদা হয়ে গেছে, সমস্ত ভুল আর অন্যায়ের জন্য শাস্তি দিতে ভালোবাসে সে তিতলিকে। অথচ দুজনেরই প্রেম দেয়ার কথা, ভালোবাসা দেয়ার কথা। অনেক কিছুতেই সে টের পায় সায়ান দ্রুত তার সাথে অধৈর্য্য হয়ে উঠেছে, তার দোষ ত্রুটিগুলো বড্ড বেশি চোখে পড়ছে সায়ানের। এতে সে আজকাল কুঁকড়ে যায়, আগের মতো তেড়ে উঠতে পারে না কেনো যেনো। তার সমস্ত অবুঝপনা নাক কামড়ে আদর করে দিয়ে ইগনোর কিংবা এঞ্জয় করে যাওয়া সায়ান কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। সায়ান আর তিতলির অভিমান ভাঙ্গানোর খেলায় মাতে না।

আস্তে আস্তে তিতলি চিঠি লেখা কমানোর চেষ্টা করছে। ঐপার থেকে কোন জবাব না পেয়ে হতাশায় তার দিনরাত ডুবে যাচ্ছে। অথচ সারা দিনরাত কতো কথাই না জানাতে ইচ্ছে করে। সেদিন নীলক্ষেতে বই কিনতে গিয়ে একা একা বৃষ্টিতে ভিজে সে চুপসে গেলো, বৃষ্টি থামছে না তাকে দাঁড়াতেই হলো এক দোকানের সামনে। পাশ থেকে দুটো ছেলে কি লোভী চোখেই না তার ভেজা শরীরের দিকে তাকাচ্ছিলো। সে সময় সে সায়ানের তার পাশে না থাকাটা কতো মিস করছিলো সে, সেটা জানাতে ইচ্ছে করে। নতুন আমড়া উঠেছে বাজারে, লবন মরিচ দিয়ে আমড়া খাওয়ার সময়, দুজনের ভাগাভাগি করে একটা আমড়া খাওয়ার সেদিনগুলোর জন্য তার চোখে পানি আসে সেটা জানাতে ইচ্ছে করে। মাকে রান্নাঘরে সাহায্য করতে গেলো, ছুরিতে পেঁয়াজ কাঁটতে গিয়ে বুড়ো আঙ্গুলটা এই এতোখানি কেটে গেল সেদিন। কি রক্তটাই না পড়লো। কিছুতেই রক্ত বন্ধ হচ্ছিলো না, চোখে অন্ধকার দেখছিলো সে, কিন্তু সে অন্ধকারের মধ্যেও তার অবাধ্য দুচোখ সায়ানকে খুঁজছিলো সেটা জানাতে ইচ্ছে করে। মহাদেব সাহা আর হেলাল হাফিজের কবিতার বইদুটো নতুন কিনেছে সে, রেখে দিয়েছে একসাথে পড়বে বলে, সেটা আজ আর তিতলি কেমন করে সায়ানকে জানাবে? দোষ তিতলিরও অনেক সেটা নিজেও জানে। এমনিতে ফটফট আগডুম বাগডুম অনেক কথা বললেও, লজ্জা ভেঙ্গে যে কথাটা সে সায়ানকে জানাতে চায়, তার মনের কথাটা সে কখনোই মুখে আনতে পারে না। বরং উল্টোটাই বলে সবসময়। এতোদিন আশা ছিল, সায়ান বুঝে নিবে তার না বলা কথাগুলো কিন্তু আজ জানে বুঝে নেয়ার সময় কারো আর নেই।

তিতলি আজকাল চিঠি লিখে বটে কিন্তু পাঠায় সে নিজেকে। এটাও একটা খেলা, সায়ানতো আসলে তার নিজেরই একটা অংশ, সে মানুক আর না মানুক তার মন জানে। তাই “টু”তে তিতলি নিজের এ্যাড্রেস দেয়। তবে কি সে একটু একটু পাগল হয়ে যাচ্ছে? তাই বা হবে কি করে? এ পৃথিবীতে আসলে কেউতো কিছু অন্যের জন্যে করে না। সবাই সব করে নিজের জন্যে। এই যে তিতলি ভাবে সে সায়ানকে ভালোবাসে, আসলে সে নিজেকে ভালোবাসে। সায়ানকে না পেলে তিতলির কষ্ট হয় তাইতো সে বার বার সায়ানের কাছে ফিরে ফিরে যায়। নিজের কষ্টে আকুল হয়ে কাঁদে। সায়ানের জন্য যে তা না সেটা বোকা তিতলিও জানে। সে ফিরে ফিরে সায়ানকে খোঁজে তার নিজের জন্যে। তিতলি সায়ানকে ছাড়া বেঁচে থাকা জানে না, সায়ানের ওপর তার বড্ডো মায়া পড়ে গেছে। আদতে যদি পুরো ব্যাপারটা তিতলি ভালো করে ভাবে, তাতে “সায়ান” কোথাও নেই। পুরোটাই তিতলির ভালো লাগা, তার বেঁচে থাকা, তার কষ্ট, তার যন্ত্রনা, নিজেকে রক্ষা করা। নিজেকে ভালো রাখবার প্রেষণাই তিতলিকে সায়ানের কাছে তাড়িয়ে নিয়ে যায়। তবে সায়ানের দেয়া কষ্ট থেকে তিতলি একটা জিনিষ শিখে নিয়েছে, কষ্ট হলে লোকে কষ্ট পায় কিন্তু মরে যায় না। আগে তিতলি ভাবতো সায়ান পাশে না থাকলে সে মরে যাবে কিন্তু আজকাল দিব্যি দেখলো, সে এক রকম বেঁচেই আছে যদিও মরে যাওয়াটাই হয়তো বেটার সল্যুশন ছিল।

তানবীরা
১৪.০৩.২০১১

সায়ান
তিতলি

জীবন থেকে নেয়া (মরে গেলেও)

কথায় কথায় মরে গেলেও এটা আমি করবো না, খাবো না, এভাবে কথা বলা আমার স্বভাব। এভাবে কথা ছোটরা বলে বড়’রা না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমি বুড়ি হয়ে যাচ্ছি কিন্তু বড় আর হচ্ছি না। সবাই এটা নিয়ে অনেক বকে বকে এখন ক্ষ্যান্ত দিয়েছেন। তোর মানসিক বয়স কোথাও আটকে আছে, তোর মানসিক ডেভেলাপমেন্ট হচ্ছে না, বলতে বলতে সবাই ক্লান্ত। আমিও মেনে নিয়েছি একরকম যে বড় হওয়া হয়তো আর হবে না এ জীবনে। সবচেয়ে বেশি বলেছেন এক ভদ্রলোক। যার সাথে ঝগড়া করতে করতে এতো বছর পার হয়ে গেছে টের পাইনি। তারপরও এখনো কিছু না হতেই ঘাড় বেঁকিয়ে ঐটাই বলি, মরে গেলেও তোমার সাথে থাকবো না। তিনি আজকাল বলেন, মরারতো আর দেরী নাই, এতোদিন যখন থাকলা কষ্ট করে, বাকি কয়টা দিনও থাকো। এতোদিন যে যেভাবেই বলেছে, সেগুলো শুনতে একরকম লাগতো। কিন্তু এজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন মানুষটা, “তোমার জন্য মরতে পারি, ও সুন্দরী তুমি গলার মালা” যখন বলেন সেটা, তখন অন্যরকম লাগে।

স্কুলে টিফিন না খাওয়ার একটা বড় প্রবনতা মেয়ের মধ্যে আছে। একদিন রাগ করে কিছু দেখিয়ে বললাম, ভেবেছিলাম তোকে এটা দিব, কিন্তু এখন আর দিব না। আমার জানের জান বলে ওঠলো, মরে গেলেও দিবে না? আমি চমকে তাকালাম। আমার মুদ্রা দোষের বীজ কি চারা হয়ে গজিয়েছে দেখার জন্যে। স্বভাবসুলভ মোষ গলায় বললাম, না মরে গেলেও দিব না। তিনিও আজকাল আর বাচ্চা নেই। তলে তলে বহুত পাকতেছে। কোনটা মাকে বলতে হয় আর বলতে হয় না সে ট্রেনিং তিনি স্কুলের বন্ধুদের থেকে ভালোই পান। কিছু জিজ্ঞেস করলে জবাব না দিয়ে মোচরান। স্কুলে কে কার সাথে প্রেম করছে জিজ্ঞেস করলেই লজ্জা লজ্জা হাসি দিয়ে মাথা নাড়তে থাকেন, আমি জানি না, সত্যি জানি না। এরমানে হলো জানি কিন্তু তোমায় বলবো না। কার্টুন ফ্লিমে ছেলে মেয়েকে চুমু দিলে ওনি লজ্জা পেয়ে টিভির চ্যানেল বদলে দেন। তো সেই তিনি কি আর সেখানে থামবেন। তিনি বললেন, কিন্তু তুমি মরে গেলে আমি নিয়ে নিব। আমি অবাক তার উত্তরে, আমি মরে গেলে সে আমার জিনিসপত্র নিয়া টানবে? তাই বলে কি আমিই কি থামবো? আমিও বললাম, পারবি না, মরার আগে ওটা আমি কাউকে দিয়ে যাবো। তিনি বললেন, জানিতো কাকে দিয়ে যাবে। আমি বিস্ময় গোপন করার বৃথা চেষ্ট করে বললাম, কাকে? কাকে আবার ছোটমাকে।

হাসি গোপন করে বললাম, কিভাবে জানলে? তিনি আমার নির্বুদ্ধিতায় অবাক। কিভাবে আবার? আমার পর তুমি ছোটমাকে বেশি ভালোবাসো, তবে অসুবিধা নাই। ছোটমা মরার সময় আমি ছোটমার কাছে থেকে নিয়ে নিবো। মোট কথা নিয়েই ছাড়বেন। তবে আমার মেয়ের চিন্তাধারা মহৎ। তিনি সিরিয়ালি আমাকে বললেন, এরপর আমি মরার সময় তাহিয়াকে দিয়ে দিব আর তাহিয়া মরার সময় পারিসাকে। আমার পঞ্চাশ ইউরো দামের ঘড়ি যেটা স্টক ক্লিয়ারেন্স সেলে পঁচিশ ইউরোতে কিনেছি, এর বংশ পরম্পরার রোলিং দেখে আমি মুগ্ধ। আজকাল শরীর জানান দিচ্ছে, মানসিক বয়স না পাকলেও কলকব্জায় জং ধরছে। কোন কিছু নিয়ে খুব মন খারাপ হলে বুকে একটা চাপ অনুভব করি। অনেক সময় সে চাপ শ্বাসকষ্টে রুপ নেয়। একদিন দুপুরবেলা তেমন শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। মেয়ে খুব ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলো, তুমি কি এখন মরে যাচ্ছো, মা? বললাম বুঝতে পারছি না। সে কেঁদে ওঠলো, মা প্লীজ তুমি এখন মরো না, বাসায় কেউ নেই, আমার একা ভয় লাগবে। আমি হাসলাম বললাম ঠিক আছে, তুমি বলো কখন মরলে তোমার সুবিধা হবে।

তিনি আমাকে বিকেলে জানালেন, এখন আমি মরতে পারি। আমি মরলে তিনি গায়ত্রীর বাড়ি চলে যাবেন। আমি অবাক বল্লাম, সেখানে কেন? তিনি জ্ঞান জ্ঞান বানী দিলেন, বন্দনা আন্টি ওনাকে আর গায়ত্রীকে একসাথে স্কুলে নিয়ে যাবেন, ওদের দুটো কার সীট আছে, অসুবিধা হবে না। রুটি ভাত খেতে দিবেন কোন সমস্যা নাই। আমি একটু না নাড়িয়ে থাকতে পারলাম না। বললাম, আমি আর বন্দনা আন্টিতো একই বয়েসী, আমরা যদি একসাথে মরে যাই? তাহলেও সমস্যা নাই, আমি আর গায়ত্রী একসাথে থাকবো। একসাথে হেঁটে হেঁটে স্কুলে যাবো। আমি হাসি চেপে বললাম খাবে কি, রান্না করবে কে? ওনি বললেন রাঁধতে হবে না, পিজা খাবো। পিজা কে কিনে দিবে, পয়সা? তিনিও অবলীলায় উত্তর দিচ্ছেন পয়সা পাপা দিবে। আমি দেখলাম দুনিয়াতে কারো ছাড়া কারো চলবে না এচিন্তা কতো ঠুনকো। যার জন্যে জীবনের এমন কিছু নাই ত্যাগ করতে পারি না, সে আমাকে ছেড়ে তার জীবন কতো ইজি রাখা যায় সে পরিকল্পনা এক ঘন্টায় করে ফেলেছে। এভরি থিং ইজ এ্যারেঞ্জড শুধু আমার মরার অপেক্ষা। তো বাবার কাছে থাকবে না কেনো, জানতে চাইলাম। দেখলাম বাবার কাছেও যে থাকা যায় এ অপশনটা ওনার মাথায় আসে নাই। বাবা ওনার কোন কাজে হাত না দিতে দিতে যে ওনার জীবনে অপ্রয়োজনীয় একটা টাকা দেয়ার মেশিন হয়ে গেছেন, সেটা বাবা বোধহয় নিজেও জানেন না। তবে আমার কন্যা ভদ্র। বললো তুমি এখন মরো না মা, তাহলে তোমাকে আমি খুউউউউব মিস করবো, মাঝে মাঝে আমার কান্না পাবে তোমার জন্যে। বুড়ি হয়ে তারপর মরো, যখন তোমার হেয়ার গ্রে হবে।

এই হাফ বিদেশিনী যখন আমাকে মাঝে মাঝে বলেন, এখন তুমি আমার মুখে মুখে কথা বলছো মা, কিযে ভালো লাগে শুনতে সে শাসন। জীবন যদি পারমিট করে মা, তাহলে তোর সুবিধামতোই মরবো, কথা দিলাম তোকে। আমার মা তার মাকে ছেড়ে এক শহর থেকে অন্য শহরে এসেছেন। আমি আমার মাকে ছেড়ে অন্য মহাদেশে থাকি, তুই তোর মাকে ছেড়ে কোন গ্রহে থাকবি কে জানে।

একটা গান কদিন থেকে প্রচন্ড পাগলের মতো মাথায় বাজছে।

যে জানার সে জানে