Wednesday, 22 August 2018

বিরিয়ানি -- যাত্রা থেকে গন্তব্য


https://arts.bdnews24.com/?p=19189

যদিও বিরিয়ানি এখন আমাদের নিজস্ব খাদ্য হিসেবেই পরিচিত কিন্তু তারপরও কি জানতে ইচ্ছে করে না কিভাবে কখন কোথা থেকে এ খাবারটি আমাদের দেশে এসেছে?

বিরিয়ানি' যাত্রা ইরান থেকে শুরু হয়েছে নিয়ে খুব বেশি সন্দেহের অবকাশ নেই, পার্সিয়ান শব্দ "বিরিয়ান" যার আক্ষরিক মানে রান্নার আগে ভেজে নেওয়া আর পার্সি শব্দ ব্রিনিজ মানে হচ্ছে চাল এ শব্দটি যে বিরিয়ানি নামের উৎস সে ব্যাপারে মোটামুটি সবাই নিশ্চিত। পক্ষের দাবি বিরিয়ানিটা পশ্চিম এশিয়া থেকেই যায় ভারতে এসেছে এটি ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের মাধ্যমে উৎপত্তি লাভ করে ইরানে "ডেগ" মানে হাড়ি যাতে মসলা মাখানো মাংস খুব কম জ্বালে বসিয়ে রেখে মাংসের ভেতরের নিজের রসেই এটিকে
সেদ্ধ করা হতো যাকে বলা হতো "দমে" দেয়া আর তার সাথে স্তরে স্তরে দেয়া থাকতো চাল আর সুগন্ধি মশলা বিরিয়ানিতে কমপক্ষে ১৫ ধরনের মসলার ব্যবহার হয় যার মধ্যে কেওড়া পানি, জাফরান, গোলাপ জল কিংবা আতর থাকেই হাড়িতে দেয়ার আগে চাল মৃদ্যু ভাজা হত 

ইতিহাসের পাতায় খাবারের ব্যাপারটা বেশ গুরুত্ব দিয়েই উল্লেখ করা থাকে পনেরশ শতাব্দী থেকে উনিশো শতাব্দী পর্যন্ত মুঘল শাসনামলে ভারতে, পোলাও, কাবাব, বিরিয়ানি ইত্যাদি'র আগমন চর্চা হয় ব্যাপক আকারে নিয়ে একটি গল্পও প্রচলিত আছে, বলা হয় সম্রাট শাহজাহানের বেগম মমতাজ (পনেরশ তিরানব্বই-ষোলশ একত্রিশ) একবার সেনাদের ছাউনি পরিদর্শনে যান এবং সেনাদের দেখে তাঁর মনে হয়েছিলো, সৈন্য'রা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে তিনি তখন সৈন্যদের বাবুর্চিকে তাদের জন্যে পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করতে বলেন, সেই থেকেও হয়ত চাল, মাংস, ঘি তে রান্না এই সুস্বাদু খাবারটি' প্রচলন হয়ে থাকতে পারে মুঘলরা সারা বিশ্বে চরম বিলাসি জীবন যাপনের জন্যে বিখ্যাত এই খাবারটি সাধারণত মুঘলদের বিশেষ অনুষ্ঠানে পরিবেশন হত নিঃসন্দেহে ভারতে এই খাবারটি বিভিন্ন স্বাদে বৈচিত্র্যে  প্রচার প্রসার লাভ করে


তবে বিরিয়ানি মুঘলদের হাত ধরেই ভারতে প্রবেশ করেছিলো কথাও কিন্তু হলফ করে বলা যায় না অনেকের মতে দক্ষিণ ভারতের মালাবার তীরে প্রচুর আরব বনিক'রা আসতেন বানিজ্যের উদ্দেশ্যে সেটা বহু আগের কথা, ২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তামিল সাহিত্যে উল্লেখ আছে, চাল, মাংস, তেজপাতা, ঘি, সুগন্ধি মশলা, ধনেপাতা, মরিচ, হলুদ দিয়ে  " ওন সরু (Oon Soru)" বলা হতো যে খাবারটিকে সেটি' স্বাদও বিরিয়ানি' কাছাকাছি আরব বনিক'রাও তাদের সৈন্য সামন্তদের এই খাবারটি পরিবেশন করতেন মালাবার এবং মোপলা বিরিয়ানি অনেক সময় মাছ বা চিংড়ি দিয়েও তৈরি হত তবে এটি অনেক বেশি মশলাযুক্ত ছিলো  

আর একটি সূত্র মতে, তুর্কি মঙ্গল তৈমুর তেরশ আটানব্বই খ্রীস্টাব্দে যখন ভারত আসেন, তার সৈন্যদের জন্যে খাবারের জন্যে একটি হাড়িতে চাল, ঘি, মশলা এবং যা মাংস থাকতো সব এক সাথে দমে দেয়া হত, সেটিরই আজকের রুপ বিরিয়ানি

যেকোন সূত্রকেই আমরা মানি না কেন, সেসময়ের সৈন্যদের পুষ্টি রক্ষার খাবার ছিলো বিরিয়ানি! যা আমরা আজকাল অনেকেই  স্বাস্থ্য হানিকর বলে অনেক সময়ই এড়িয়ে যেতে চাই


লক্ষ্ণৌ-এর নিজাম প্যালাসেও বিরিয়ানির জনপ্রিয়তা ছিল মারাত্মক নিজাম পরিবার থেকে ও রকমারি বিরিয়ানির আত্মপ্রকাশ ঘটে রকমারি সুস্বাদু বিরিয়ানি রান্না’র জন্যে নিজাম পরিবারের বার্বুচিদের সারা পৃথিবী জুড়ে সুনাম ছড়িয়ে পরে। বিরিয়ানি’র স্বাদ আরও ভালভাবে উপভোগ করার জন্যে তারা সাথে আরও নানা রকম পদের উদ্ভাবন করেন, যেমন, মরিচের তরকারি, ধানশাক, বাহারে বেগুন ইত্যাদি। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম স্বাদের বিরিয়ানির সাথে অন্যান্য পদ জনপ্রিয় হয়। যেমন বাংলাদেশে বিরিয়ানির সাথে বোরহানি একটি আবশ্যকীয় পদ মাংস এবং সব মশলা দুঘন্টার বেশি পানিতে মৃদ্যু জ্বাল দিয়ে আখনিবানানো হয়। সে আখনি সহযোগে বানানো হয় কম মশলার, হালকা স্বাস্থ্যকর আওয়াধি বিরিয়ানি, যেটাকে অনেক  লক্ষ্ণৌ বিরিয়ানিও বলে। লক্ষ্ণৌ ছাড়াও উপমহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়।



আওরংজেব হায়দ্রাবাদের শাসক হিসেবে নিজামে মুলককে নিয়োগ দেয়ার পর থেকে সেখানে হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি’র প্রচলন। আজও হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি ভারত জুড়ে এক নম্বর। মাওয়া, বিভিন্ন রকম বাদাম ভাজার সমাহারে বানানো দুধ বিরিয়ানি সেখানে বিখ্যাত। চিংড়ি, বিভিন্ন রকমের মাছ, কাকড়া, হরিন, কোয়েল ইত্যাদি সহযোগে প্রায় পঞ্চাশ রকমের স্বাদের  বিরিয়ানি বানানো হত তার প্রাসাদে। তবে যত বাহারি রকমেরই হোক না কেন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পায়দম পুখতবিরিয়ানি কাচ্চি বিরিয়ানির ধরনটা এখান থেকেই আসে বলে জানা যায়।



আজমীর শারিফের গরীব নেওয়াজের দরগায় তৈরি রাজস্থানী বিরিয়ানি’র স্বাদের কথা সেখানে মুখে মুখে ফেরে। আঠারশো ছাপ্পান্ন সালে ব্রিটিশরা অযোধ্যা থেকে বের করে দিল নবাব ওয়াজেদ আলী শাহকে। কলকাতায় এলেন তিনি। নিয়ে এলেন পছন্দের খাবার বিরিয়ানি। ক্যালকাটা বিরিয়ানিতে আলু থাকে। আর এ আলুর জন্যই বিরিয়ানির স্বাদ অন্যদের চেয়ে আলাদা। মজার কথা হলো, অর্থনৈতিক মন্দার সময় মাংসের পরিমান কমিয়ে আলু দিয়ে সেটিকে পূরণ করার ধারনা থেকে আলু ব্যবহার করা হলেও, এটি চিরস্থায়ী হয়ে যায়। সিন্ধ-গুজরাট এলাকায় খাওয়া হয় প্রচন্ড ঝাল মশলাযুক্ত সিন্ধি বিরিয়ানি । অন্যান্য বিরিয়ানির তুলনায় এরা খাবারে রঙ ব্যবহার করে খুব পরিমিতি। খাসির মাংস, দই, পেয়াজের বেরেস্তা আর আলু দিয়ে তৈরী হয় মেমোনির সিন্ধি বিরিয়ানি। পেশোয়ারি বিরিয়ানিতে লাল আর সাদা ডাল, কাবুলি চানা, মটরশুটি ইত্যাদি চালের সাথে স্তরে স্তরে দেয়া হয়। সাথে থাকে, জাফরান, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম আর গোলাপ জল।


ঢাকার নবাবদের বিরিয়ানিও কম সুস্বাদু ছিলো না সেটি'র আগমন হেতু অবশ্য মুঘল রাজপুত্র বলে ইতিহাস উল্লেখ করে তবে ঢাকাই বিরিয়ানির নাম উঠলে অবধারিতভাবে যে নামটি চলে আসবে সবার আগে সেটি হল হাজীর বিরিয়ানী। ১৯৩৯ সালে হাজী গোলাম হোসেন সাহেবের হাত ধরে যাত্রা শুরু হওয়া এই বিরিয়ানির রেসিপির কদর আজও ঢাকা শহরে মানুষের মুখে মুখে। তিন প্রজন্ম ধরে সুনামের ব্যবসা করে আসছেন হাজীর বিরিয়ানির স্বত্বাধিকারীরা এবং বলতে গেলে হাজীর বিরিয়ানির সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকার বিরিয়ানি শিল্প। চানখাঁর পুলের হাজী নান্নার বিরিয়ানি, ফখরুদ্দিনের বিরিয়ানি, নারিন্দার ঝুনুর বিরিয়ানিসহ আরও অসংখ্য বিরিয়ানি হাউজ গড়ে উঠেছে নতুন ও পুরান ঢাকার অলিতে গলিতে। শুধু তাই নয় ঢাকাই বিরিয়ানি দেশের সীমা ছাড়িয়ে এখন পেট ও মন ভরাচ্ছে সুদূর প্রবাসে।

পোলাও ও বিরিয়ানি দুটো খাবারই সুগন্ধি চাল ও গোশত দিয়ে রান্না করা হয়। তারপরও এদের মাঝে রয়েছে বিস্তর ফারাক। আমাদের দেশে যেটা আমরা পোলাও হিসেবে চিনি সেটাতে গোশত দেওয়া বা না দেওয়া ঐচ্ছিক। তবে পোলাও এর উৎপত্তি সেন্ট্রাল এশিয়ায়। সেখানে পোলাও গোস্তের সাথেই রান্না করা হয়। এমনকি ভারত এবং পাকিস্তানেও অনেকটা এভাবেই পোলাও রান্না করা হয়। মুঘলরা ছিলেন সেন্ট্রাল এশিয়ার মানুষ।


পোলাও এর সংস্কৃতি তারা নিয়ে এসেছিলেন মাতৃভূমি থেকে। তবে পোলাও বিরিয়ানির মূল পার্থক্য যতটা না রান্নার প্রণালীতে তার চেয়েও অনেক বেশি মশলার ব্যবহারে। বিরিয়ানির মশলায় উপাদানের বৈচিত্র্য অনেক বেশি, মশলাও ব্যবহার করা হয় তুলনামূলক বেশি পরিমাণে। এখনও সেন্ট্রাল এশিয়ার উজবেকিস্তান বা তুর্কমেনিস্তানে গেলে দেখা মেলে এখনকার পোলাও এবং বিরিয়ানির আদিরূপের। তবে মজার ব্যাপার হল আমরা ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ এত বেশি মশলার ব্যবহারে অভ্যস্ত যে সমরখন্দ বা বুখারার সেই আদিম পোলাও আমাদের কাছে বেশ পানসে ও জৌলুসহীন মনে হয়। অন্তত বাস্তবে যারা দুটোই চেখেছেন তাদের প্রায় সবাই একই কথাই বলেছেন। তবে পোলাও এবং বিরিয়ানির আরেকটি বড় পার্থক্য লুকিয়ে আছে তাদের মৌলিক রন্ধন প্রণালীতে। পোলাও রান্নার আগে চাল ধুয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখা হয় ও পরে পানিতে ফুটিয়ে সেদ্ধ করা হয়। কিন্তু বিরিয়ানিতে চালের সুঘ্রাণ অবিকৃত রাখতে চাল বেশি ধোয়া হয় না



তেহারিকে বিরিয়ানির একটি বিশেষ পরিমার্জিত ধরণ বলা চলে। তেহারীতে গোশতের পরিমাণ থাকে কম। আলু ও হাড় থাকে বেশি। বেশির ভাগ জায়গাতেই ঘি এর পরিবর্তে তেল দিয়ে তেহারী রান্না হয় মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চড়া দামের কারণে খরচ বাঁচাতে এই বৈচিত্র্য আনা হয়েছিল। তবে প্রেক্ষাপট বদলে গেলেও এখনও আবেদন বদলে যায়নি তেহারীর। কাশ্মীরে তেহারী একটি অতি জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড।

বিরিয়ানি মূলত দুই ভাবে রান্না করা হয়। পাক্কি বিরিয়ানি, মাংস আর চাল আলাদা করে রান্না করা হয় তারপর তাদের স্তরে স্তরে মিশিয়ে দমে দেয়া হয়। কাচ্চি বিরিয়ানি, বেশির ভাগই খাসি বা ভেড়ার মাংস দিয়ে রান্না করা হয়, যেখানে মাংস দই আর মশলা দিয়ে মাখিয়ে হাড়ির নীচে রাখা হয়। তারওপর আলু আর চাল দিয়ে মুখটা খুব ভাল করে কাপড় আর আটা মেখে বন্ধ করে দিয়ে কয়লার আঁচে বসানো হয়। ভাপে মাংস, আলু, চাল সব এক সাথে রান্না হয়। 


মুঘল সম্রাট হুমায়ুন যখন রাজ্য হারিয়ে ইরানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তখন তাকে পারস্য সম্রাট লালগালিচার উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। খাবার পরিবেশনে দরবারি রীতিগুলোতে রূপালি পাত্রের খাবারগুলোর জন্য লাল কাপড় আর ধাতব ও চিনামাটির জন্য সাদা কাপড় দিয়ে ডেকে নিয়ে আসা হতো, যা মুঘলরাও তাদের দরবারে চালু করেন। শুধু তাই নয়, সম্মানিত ব্যক্তি বা আধ্যাত্মিক সাধকদের জন্য ছিল লাল পাগড়ির ব্যবস্থা। মুঘল আমলের রীতি অনুযায়ী খাবার পরিবেশনে লাল কাপড় ব্যবহারের কারণে এখনো বিরিয়ানির হাঁড়িতে লাল কাপড় ব্যবহার করা হচ্ছে। সুতরাং বলা যায় আভিজাত্য বা ঐতিহ্য রক্ষার জন্যই বিরিয়ানির হাড়িতে লাল কাপড় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মাজার, উরস শরিফে বাঁশের মাথায় লালসালুর পতাকা ঝোলে। হালিমের হাঁড়িতে  লাল কাপড়, পান ও পনিরওয়ালারাও লালসালু ব্যবহার করেন।


বহু শতাব্দী ধরে বিভিন্ন রীতি গোষ্ঠীর মানুষের গবেষনা আর মশলার বিভিন্নতায় বিরিয়ানি আজকের এই অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। সাধারণ সৈন্যদের খাবার থেকে রাজ দরবারে। চাল ভেজে তাতে মাংস, মাছ, সব্জি মিশিয়ে খাওয়ার এই পদ্ধতিটি পুরো এশিয়াতেই খুব জনপ্রিয় ও বহুল প্রচলিত যেটা আজকে পুরো পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পরেছে। বিভিন্ন দেশের আছে তাদের নিজস্ব পদ্ধতির ফ্রাইড রাইস, নাসি ইত্যাদির ঐতিহ্য। তবে বিরিয়ানির স্বাদের কাছে পৌঁছতে পেরেছে খুব কম কুজিন।


তানবীরা তালুকদার


Saturday, 18 August 2018

আমার গল্প

ফরিদ ভাই সব সময় বিনয় করে বলেনতিনি গদ্য লিখতে পারেন না, তার বিচরণ শুধুই কবিতা’য়আমার গল্পলেখার পর আর এই কথা বাজারে কাটবে না সুন্দর সাবলীল গল্পটি শুধু লেখেনই নি, বাবার কথা দিয়ে গল্পটি শুরু করে আবার বাবার কথা দিয়েই গল্পটি শেষ করেছেন বাংলাদেশের হাজার হাজার আরও পরিবারের মত বির্বণ বিষন্নতায় মাখা তার গল্পটিও। কোমলমতি, ধর্মপ্রাণ মানুষরা অর্থের লোভে নিজের ভাইকে খুন করে ভাইয়ের এতিম বাচ্চাদের বাড়ি ছাড়া করিয়ে দিয়েছে। জমিজমার লোভে আপন রক্তকে আহত করার কত ইতিহাস যে লুকিয়ে আছে এই বাংলার পাতায় পাতায়। ইতিহাস সাক্ষী মুঘল সাম্রাজ্য থেকে শুরু করে অজ পাড়া গা, লুকিয়ে আছে অসংখ্য রক্তাক্ত প্রান্তর। না, সিনেমার নায়কদের মত গান গেয়ে, কিংবা হাতের আংটি দেখে সাদুল্লাহ তার পরিবারকে খুঁজে পাননি, কিংবা কোন বড়লোকের কন্যার সাথে বিয়ে করে রাতারাতি ধনীও হয়ে যান নি। অসম্ভব বাস্তবতায় কায় ক্লেশে, দুঃখে সন্তানদের নিয়ে কেটেছে তার গোটা জীবন।

আমার গল্প ছবি বাদ দিয়ে চারশো চৌদ্দ পাতার বই হলেও আমার মনে অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। এর কি দ্বিতীয় পর্ব আসবে? খানিকটা অসম্পূর্ণ নয় এই বইটি? ছোট চাচার খোঁজ কি পরে কখনও পেয়েছিলেন কি না সেটা অজানা রয়ে গেলো। ছোট ভাইয়ের কথা কয়েকবার বইটিতে এলেও, বোন একদম অনুপস্থিত। শৈশব, কৈশোর, যৌবন কোথাও বোনের কোন উপস্থিতি নেই। নিজের প্রেম, লেখালেখি, অসচ্ছলতা, পরিবার নিয়ে এভাবে খাপছাড়া খোলাখুলি লিখতে হয়ত খুব কম জনই পারে। পরিবারের কেউ বইটি পড়ে থাকলে হয়ত মনোমালিন্যের কারণ হতে পারে। আত্মজীবনী লেখার এই একদিক, নিজের কথা বলতে গেলে সাথে আরও অনেকের কথা বলতে হয়।


প্রেম প্রণয় অংশে কবিতার সংজ্ঞাটা আমার অসাধারণ লেগেছে। কবিতা আসলে কী?
বিশাখার ভাষায়ঃ “যা কখনো কবিতায় বলা হয় না। কিন্তু যেখানে তার সকল আয়োজন থাকে।“
ফরিদ কবিরের দৃষ্টিতেঃ “আমরা যা বলি? নাকি যা কখনো বলি না? কিংবা যা কখনো বলা হয় না। অথচ যেখানে না বলা কথার সব আয়োজন থাকে।
কবিতাও আসলে প্রেমেরই মতো। কিংবা প্রেমও অনেকটা কবিতারই মতো।“
কবিতা যেমন ভর করতে হয়, প্রেমও তাই, হতে হয়। চেষ্টা করে যেমন কবিতা লেখা যায় না, জোর করে কারো সাথে প্রেম করা যায় না। দুটোই হৃদয় থেকে আসতে হয়। 
পুরো বইটিতেই বাস্তবতা আর সংগ্রামের নিদারুন বর্ণনা। দুঃসময়ে এই পৃথিবীতে কেউ পাশে থাকে না সেটা কে আর না জানে। দুঃসময় কেটে গেলে তাদেরকে ক্ষমা করে দিতে হয়, ভুলে গেছি, ভুলে গেছি অভিনয় করতে হয়।
বারবার বইটিতে লেখা আছে, অনেকের কাছ থেকেই টাকা নিয়ে আর কখন ও ফেরত দিতে পারেন নি কিন্তু আবার এও লিখেছেন সে সময়ে ঢাকায় খুব কম রেস্টুরেন্ট আছে যেখানে খেতে যান নি। (বটে, খাওয়া গলা দিয়ে নামলো কিভাবে :D) চাকুরী ও টাকা পয়সার অসচ্ছলতা থাকা সত্বেও বেশ ডেয়ারিং জীবন যাপন করেছেন বলা চলে। শ্রীলঙ্কা ভ্রমনের অভিজ্ঞতাকে অনেকটা বিভূতিভূষনের “চাঁদের পাহাড়” এর সাথেই তুলনা করা চলে।

বইয়ের কিছু কিছু শব্দ, যেমন বুক ধড়পড়, এগুলো উচ্চারণ গত ত্রুটি না মুদ্রণ প্রমাদ ধরতে পারি নি।


গরমের ছুটিতে বইটি পড়ে শেষ করলাম, অসাধারণ অনুভূতি হয়েছিলো। ইতিহাস, আত্মজীবনী, সত্য ঘটনার ওপর আধারকৃত লেখা আমাকে সব সময় অনেক বেশি আর্কষণ করে। 

১২/০৮/২০১৮ 

Sunday, 12 August 2018

তুমি এখন বড় হচ্ছো


মনোবিজ্ঞানী ও কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক রচিততুমি এখন বড় হচ্ছো” পড়লাম। তিনি বাংলাদেশর প্রয়াত বিখ্যাত কবি লেখক সৈয়দ শামসুল হকের সহধর্মিনী। আনোয়ারা সৈয়দ হক নিজের লেখালেখির জন্যে বাংলা ভাষায় অনেকের শ্রদ্ধাভাজন ও নমস্য চিকিৎসক হিসেবে ব্যস্ত দিন কাটানোর পরও সাহিত্যের প্রতি তাঁর এই অকৃত্রিম টান, নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য  উঠতি বয়সের বাচ্চাদের মানসিক জগত, তাদের দ্বিধা দ্বন্দ্ব, জানা না জানা প্রশ্ন উত্তর নিয়ে লেখা এই বইখানা। বইটি পড়তে পড়তে কিছু কিছু জায়গায় এতটাই খটকা লাগলো যে না উল্লেখ করা সম্ভব হচ্ছে না। একজন কথাসাহিত্যিক এরকম একটা জটিল ব্যাপার নিয়ে এ ধরনের ভাষা ব্যবহার করে বই লিখেছেন যেটি সামাজিক ভাবে জনপ্রিয়ও হয়েছে, সেটা আমাকে রীতিমত পীড়া দিচ্ছে। তার মত বিখ্যাত অবস্থানের উঁচুতলার কারো সমালোচনা করা আমার মত কারো জন্যে ধৃষ্টতা তো বটেই কিন্তু মনের খরখর যায় না কিছুতেই।

বইটির চার নম্বর অধ্যায় “তোমার শরীরের সৌন্দর্য” পৃষ্ঠা নম্বর আটাশ, --- সেখানের একটি অংশে লেখা আছে “প্রতিটি বংশের নিজস্ব কিছু শারীরিক বৈশিষ্ট্য আছে থাকে, যা অন্য কারো থাকে না। তোমার গায়ের রঙ সাহেবদের মতো হবে,  নাকি আবলুস কাঠকেও লজ্জা দেবে, এসবই কিছুটা ভাগ্যের খেলা আর বেশির ভাগই বংশগতির খেলা, সুতরাং এর কোনটার ওপরে তোমার হাত নেই।“

ছয় নম্বর অধ্যায়ের নাম “টানাপোড়েন আর টানাপোড়েন” পৃষ্ঠা নম্বর সাইত্রিশ, --- “যদি কুৎসিত কোন মানুষ সত্যি সত্যিই জানতো সে দেখতে কুৎসিত, তাহলে অবশ্যই ভালো জামাকাপড় পরা বা প্রসাধন করা ছেড়ে দিতো, চারখানা গামছাই হতো তার দিন-রাতের পরিধানের সম্বল, মুখের দাঁড়ি-গোঁফ কামাবার প্রয়োজনই মনে করতো না। খামোকা পয়সা খরচ করবে কেন। এমনকি যে মানুষের মাথায় চুল নেই, যার দাঁত নড়বড়ে বা যার রঙ আবলুস কাঠের মতো কালো বা যার মাজা তিন মাইল চওড়া, সে পর্যন্ত নিজেকে আয়নায় সুন্দর দেখে।“ 

বেশীর ভাগ মানুষই লেখালেখি করেন নিভৃতে, একান্তে। নিজের অজান্তেই সেখানে ভেতরের ভাবনা গুলো বেরিয়ে আসে, শালীনতা, ভদ্রতা বা সুশীলতা দিয়ে তা সব সময় চেপে রাখা যায় না। বইটি লেখা হয়েছে এগারো থেকে পনের বছরের বাচ্চাদের জন্যে যারা বয়ঃসন্ধি’র সমস্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে। দুই হাজার বারো সাল অব্ধি এটি’র ষষ্ঠ মুদ্রণ হয়েছে। ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো বাচ্চারা যদি গায়ের রঙ নিয়ে আগে চিন্তা না ও করতো এই বই পড়লে তারা চিন্তিত হয়ে যাবে।  গায়ের রঙ মানেই “সাহেব আর আবলুস” এর বাইরে বা মাঝামাঝি কিছু নেই? একজন কথা সাহিত্যিক ও মনোবিজ্ঞানী যদি এ ধরনের বর্ণ বিদ্বেষ লালন করেন তাহলে বাকীদের কথা বলা বাহুল্য মাত্র গৌড় বর্ণ মানেই সাহেব? উঁচু কিছু? আবলুস মানেই খারাপ? কালোদের মাঝে সৌন্দর্য নেই? সাঁওতাল কিংবা কঙ্গোর মানুষদের দেখেছেন কখনো চোখ মেলে?

 হুমায়ূন আহমেদ তার কোন এক বইয়ে লিখেছিলেন, কিংবা এলেবেলে সিরিজে, বাঙালি ছাপার অক্ষরে যা পড়ে তাই বিশ্বাস করে ফেলে। সে দিক ভাবলে এই বইয়ের প্রভাব মারাত্বক হতে পারে। এমনিতেই বাংলা সাহিত্য জুড়ে শুধুই সৌন্দর্যের বর্ণনা, শ্যামকালিয়া "কৃষ্ণ"কে বাদ দিলে বাংলা সাহিত্যে কোন কালো বর্নের কোন প্রখ্যাত নায়ক নায়িকাই নেই। আশুতোষ মুখোপাধ্যায় অবশ্য কালো বর্ণের নায়িকা নিয়ে কিছু উপন্যাস লিখেছিলেন। 

রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, “তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ- চোখ, কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি।“ যদিও তাঁর নিজের উপন্যাসের নায়িকারা সৌন্দর্যের দিক থেকে অপ্সরীর কাছাকাছিই থাকতো।   

কিশোরী বয়সে পড়েছিলাম বুদ্ধদেব গুহের “বাবলী”, মোটাসোটা শ্যামলা তরুণী’র সাথে প্রেম হয়েছে এক চৌকষ আইএস অফিসারের। বাবলি নিজেও মেধাবী, ভাল টেনিস খেলে, সে ও ভাল চাকরি পেয়েছে। কিন্তু প্রেম হয়ে যাওয়ার পর সে বাংলার লেখকদের কল্পনার চিরাচরিত নারী হয়ে গেলো, নিজেকে সুন্দরী করে প্রেমিকের সামনে উপস্থাপনে ডায়েট আর ব্যায়ামে লেগে গেলো, ঐদিকে পুলা কিন্তু আছে ঠিকঠাক নিশ্চিন্তে। যে বই পড়ে কিশোরি বয়সে মুগ্ধ হয়েছি সে বই পড়েই আবার পরে বিরক্ত হয়েছি। এমন ছাগল কেমনে ছিলাম, সব কিছুতেই মুগ্ধ কেমনে হইতাম তা নিয়ে নিজের ওপরই বিরক্ত হয়েছি।  

তোমার অস্তিত্ববোধঅধ্যায়ের সাতান্ন পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন, “এতোদিন তুমি ছোট্ট ছিলে, পরিবার বা পরিবেশ সম্পর্কে অতো বেশি সচেতন ছিলে না, থাকার দরকারও ছিলো না, কিন্তু এখন তুমি বড় হচ্ছো, এখন তোমার সচেতন হবার সময় এসেছে আগে হয়তো খালি গায়ে, খালি পায়ে রাস্তায় নেমে বস্তির ছেলেমেয়েদের সাথে ডাংগুলি খেলতে, এখন আর ইচ্ছে হলেও তা করতে পারছো না তোমাকে ভাবতে হচ্ছে নিজের সম্পর্কে তুমি আর আগের মতো মিশতেও পারছো না যারতার সঙ্গে

এমন বিদ্বেষমূলক শিক্ষনীয় বই বাংলাদেশে চলাই সম্ভব বস্তির ছেলেমেয়ে, যারতার এর মতো শ্রেণীবৈষম্যমূলক কথাবার্তা বইতে লিখে কিশোর কিশোরীদের হাতে যিনি তুলে দিচ্ছেন তিনি একজন অনুশীলনরত মনোবিজ্ঞানী। তারপরও আমরা একটি সংবেদনশীল, মানবিক গুনাবলী সম্পন্ন ভবিষ্যত প্রজন্ম আশা করে যাবো। সেটি আমাদের নিজেদেরকে তৈরী করত হবে না, সেটি আকাশ থেকে এমনি টুপ করে পরে যাবে আশা করছি।

“তোমার যৌন কাতরতা” অধ্যায়ের তিরাশি পৃষ্ঠায় তিনি কিশোরীদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন, “মানুষের শরীর হচ্ছে পবিত্র এক মন্দিরের মত। এ শরীরও পূতপবিত্র মনে আরতি করতে হয় অর্থ্যাৎ শ্রদ্ধা জানাতে হয়, সে শ্রদ্ধা জানাবে তুমি। শারীরিক সম্পর্ক সামান্য একটু এগোলেই শেষ হয়ে যায়, কিন্তু শুরু হবার সময় মনে হয় যেন কি-না-কি হয়ে যাবে, বুঝি পৃথিবীটাই হয়ে যাবে ওলোটপালট। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার, মানুষের শরীর এক বদ্ধ জলাশয়, একটুতেই এর জল ঘোলা হয়ে ওঠে। যদি না প্রতিদিন তুমি এর তলা থেকে কাঁদা – পাঁক তুলে ফেলে দাও। পবিত্র শরীর হচ্ছে তোমার এ্যাসেট বা সম্পদ।“ এরকম আরও বহু কিছু লিখেছেন, আমি সামান্য একটু উল্লেখ করলাম মাত্র।

এই বয়সে কিশোরীরা প্রাকৃতিকভাবেই শরীর নিয়ে শুচিবায়ুগ্রস্ত থাকে। নানা ছোট ছোট কারণে এরা নিজেদেরকে বড় বড় আঘাত করে, নিজেদের ক্ষতি করে, অনেক সময় আত্মহননের মত সিদ্ধান্ত নেয়সামাজিক কারণে অভিভাবকরাও পরিস্থিতির শিকার হয়ে পরে। সে জায়গায় একজন লেখিকা ও মনোবিজ্ঞানী যদি তাদেরকে আশা’র কথা শুনিয়ে তাদের ভেতরের শঙ্কা বা হতাশা দূর না করে উলটো মধ্যযুগীয় আবেগীয় কথাবার্তা দিয়ে তাদের আবেগ উস্কে দেয় তাহলে অঘটন বন্ধ করে আশার কথা শোনাবে কে?  জীবন চলে জীবনের মত, ছোঁয়াছুয়িতে জীবন শেষ হয়ে যায় বুঝি? সেটা তবে বিশ্বব্যাপী না হয়ে শুধু ভারতবর্ষেই হতে হবে কেন? কিংবা মুসলিম বিশ্বে? এসব কিন্তু এক অর্থে “হনার কিলিং” এর প্ররোচনা। লেখিকা প্রায় আট বছর বিলেত বাস করেছেন কিন্তু তার লেখায় বৈশ্বিক ব্যাপারটা প্রায় অনুপস্থিত। হয়ত তিনি বইটির অর্থনৈতিক সাফল্যের ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে যেসব মধ্যবিত্তীয় মানসিকতার কথাবার্তা লিখলে অভিভাবকরা খুশী হয়ে বইটি বাচ্চাদের পড়তে দেবেন, সেই সব কিছুই লিখে গেছেন।

প্রাসঙ্গিক ভাবে নীলিমা ইব্রাহিমের লেখা আমি বীরাঙ্গনা বলছিবইটির কথা মনে পড়লো। বইটিতে কয়েকবার একটি লাইন ঘুরেফিরে এসেছে, “পাকিস্তানি সেনারা যখন আমাদের পেয়েছে তখন আমরা রাজাকারদের উচ্ছিষ্ট” --- পুরো বইটির মধ্যে এই লাইনটি আমার কাছে যথেষ্ঠ পীড়াদায়ক মনে হয়েছে। লেখিকা কেন এই ধরনের শব্দ চয়ন করেছেন, তিনি জানেন। একজন জীবন্ত মানুষ কী করে উচ্ছিষ্ট হতে পারে? যতো শারীরিক লাঞ্ছনাই তিনি ভোগ করে থাকুন। একজন প্রগতিশীল ও মুক্তমনা লেখিকা যিনি হৃদয় দিয়ে বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসনের জন্যে দিন রাত এক করে খেঁটে গেছেন তিনি কী অন্য কোন শব্দ চয়ন করে এই পারিপার্শ্বিকতার ছবিটা আঁকতে পারতেন না? কোন মানুষ সর্ম্পকে এ ধরনের কথা ভাবতে আমার হৃদয় মানে না। মানুষের দেহ কি খাদ্য বস্তু? শারীরিক কারণে কেউ কী উচ্ছিষ্ট কেউ হতে পারে? পারে ক্ষতিকর স্বভাব চরিত্রের কারণে যেমন রাজাকাররা।

“তোমার লেখাপড়া” অধ্যায়টি আমার ভাল লেগেছে। “তুমি এখন বড় হচ্ছো, তুমি স্কুলে যাও নিয়মিত, তোমার ওপরে লেখাপড়ার চাপ পড়েছে বেশি, ক্লাসের পড়া ছাড়াও তোমাকে স্কুল শেষে আলাদা কোচিং নিতে হয় পরীক্ষায় ভালো করার জন্যে, রেজাল্ট ভালো হলে ভর্তি হবে তুমি বিজ্ঞান শাখায়, আর খারাপ হলে মানবিক-এ। তুমি পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ করলে তোমার অভিভাবকরাও মাথা থাবড়ে বেড়াবেন দুঃখে, কারণ তাদের ধারণা কেবল বুদ্ধিমান ছেলেরাই বিজ্ঞান পড়ে আর গবেটগুলো পড়ে মানবিক-এ। নিজের কথা ভুলে, অভিভাবকদের কথা চিন্তা করেই তুমি নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছো পড়াশোনা করার অতিরিক্ত বোঝা, যা তোমার ছোট্ট কাঁধটাকে মাঝে মাঝেই বাঁকিয়ে নিচু করে ফেলে।“

এখানে লেখিকা বাচ্চাদের কে নিজেদের পছন্দের বিষয় নির্বাচন করতে, সর্তক হতে, কঠোর পরিশ্রম করে পড়াশোনা করতে, ভবিষ্যত গড়ে তুলতে বেশ কিছু বাস্তবধর্মী উপদেশ দিয়েছেন। শুধু বাবা-মায়ের নয় নিজের ভাল লাগা, মন্দ লাগা নিয়েও ভাবতে বলেছেন। পড়াশোনায় যারা মাঝারি তারা তাত্বিক পড়াশোনার বাইরে, ব্যবহারিক বিষয়গুলো’র প্রতি মনোযোগ দিতে পারে, সেসব নিয়েও বেশ আকর্ষনীয় ভাবে লিখেছেন।

আঠারোটি অধ্যায়ে ভাগ করে চুরানব্বই পৃষ্ঠার সুধীজন প্রশংসিত, কিশোর কিশোরীদের জন্যে লিখিত মনোবিজ্ঞানের বইটি পড়ে কিছুটা হতাশ  হয়েছি তো বটেই। 

তারপরেও বলবো, বাংলাদেশের সামাজিক ট্যাবুতে এখনও অনেক পরিবারে মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে আছে যারা জীবনের এই কঠিন সময়টা নিয়ে নিজেরা আলোচনা করতে বা কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। জীবনের অনেক সহজাত ও স্বাভাবিক জিনিস এড়িয়ে যায়। বাংলা ভাষায় এই নিয়ে লেখাও হয়েছে খুব সামান্য। সেদিকটা বিবেচনা করলে যাদের বাড়িতে এগারো থেকে পনের বছর বয়সী বাচ্চা আছে, তাদের পরিবারের বাবা-মা এবং বাচ্চাদের সবারই এই বইটা পড়ে নেয়া ভাল। ইউরোপের স্কুল গুলো এ ব্যাপারে প্রচুর সাহায্য করে, সে প্রত্যাশা তো দেশে নেই তাই কিছু না থাকার মধ্যে এটিই থাকা।

১০/০৮/২০১৮




কুমীর ছানা আর শেয়ালের গল্পটি

কুমীর ছানা আর শেয়ালের গল্পটি মনে আছে তো? নেই? আসুন তাহলে মনে পড়িয়ে দেই
*** আওয়ামী লীগের সময় প্রচুর মুক্তচিন্তার মানুষ খুন হয়েছে
---আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে
*** আওয়ামী লীগ কোটা আন্দোলনকারীদের অন্যায়ভাবে দমন নিপীড়ন করেছে
--- আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে
*** আওয়ামী লীগ পাহাড়ে প্রচন্ড দমন নিপীড়ন চালিয়েছে, চাকমা রানী ইয়ান ইয়ান জীবন রক্ষার্থে পালিয়ে বেঁচেছে
--- আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে
*** আওয়ামী লীগ প্রচুর বিচার বহির্ভূত খুন (ক্রসফায়ার) করেছে
--- আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে
*** আওয়ামী লীগ শেয়ার বাজার লুট করেছে, ব্যাঙ্ক লুট করেছে, মানুষ স্বর্বস্ব হারিয়ে আত্মহত্যা করতে পর্যন্ত বাধ্য হয়েছে
--- আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে
*** আওয়ামী লীগ শীর্ষ চার সন্ত্রাসী ভাইদেরকে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে পাঁচ নম্বর ভাইকে দেশের সেনাপ্রধান করেছে।
--- আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে
*** আওয়ামী লীগ মত প্রকাশের স্বাধীনতায় চরম ভাবে বাঁধা দিয়েছে, সংবাদপত্র ও মিডিয়ার ওপর রাজনৈতিক ও প্রাশাসনিক ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করেছে। ৫৭ ধারা নামে কালো আইন প্রয়োগ করেছে।
--- আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে
ভিক্ষার কাম নাই - কুত্তা সামলান মা