এখন পালটে হবে,
খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো পুলিশ এলো পাশে”
আমার ব্যক্তিগত খেরোখাতা
অনেকেই বিদেশ নিয়ে অনেক কিছু কল্পনা করেন। এটা ভাবেন ওটা ভাবেন। আপনারা জানতে চান বৈদেশ কেমন? ঠিকাছে, তাহলে বলি, এখন আমি ডানদিকে কাত হয়ে শুয়ে শুয়ে বলছি, বিদেশে তাপমাত্রা সবসময় পঁচিশ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেট। বাগানের ঘাস সবসময় তিন সেঃমিঃ উঁচু থাকে। ঘাস বাড়ে না, বাগানের ঘাস কাঁটতে হয় না। বাড়িঘরের রঙ পোঁচ দিতে হয় না, ধূলোবালি ঝাড়তে পরিস্কার করতে হয় না। সবসময় পরিস্কার। বাড়িঘর ঝাট দিতে হয় না, বাগানে পাতা পড়ে না। ড্রাইভওয়েতে ধোয়া পরিস্কার গাড়ি। আপেল গাছে আপেল, আঙুর গাছে আঙুর । গাছে গাছে রঙীন ফুল, তারপরে প্রজাপতি উড়ছে। ঠিক যেনো ক্যালেন্ডারের পাতা। সেই গাছ বাগানের মাটি খুঁড়ে লাগাতে হয় না। পছন্দসই গাছকে নিশানা করবেন, চোখ দিয়ে ইশারা করবেন, গাছ আপনাতেই বাগানে, আপনার পছন্দের জায়গায় পোঁতা হয়ে যাবে। অসুখ হয় না কারো। বাচ্চা কাঁদে না। ন্যাপি বদলাতে হয় না। বিদ্যুৎ পানি সবসময় অফুরন্ত। মানুষ মারা যায় না। পরীক্ষা পাশের টেনশান নেই। কারো সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন নেই, সে নিয়ে মনে কষ্ট নেই।
শুনতে বোর লাগছে। ঠিকাছে বামকাত হয়ে শুয়ে বাকি গল্প করি। বরফে চার পাশ সাদা। মাইনাস বিশ। আহ শুনতেই কি রোমান্টিক লাগছে। তারমধ্যে লম্বা ওভারকোট পরে, মুখে চুরুট জ্বালিয়ে একদিক থেকে অন্যদিকে হেটে যাবো, পায়ে উইন্টার বুট, আহা রাজকাপুর, জুতা হ্যায় জাপানী। সেই বরফে কেউ পড়ে না, পড়ে পা হাত ভাঙ্গে না। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে না। বরফ গলে প্যাঁচপ্যাঁচে কোন কাঁদা নেই। ঝড় নেই, বৃষ্টি নেই, বন্যা নেই। বাড়িঘর নোংরা হয় না। অন্ধকার সকালে উঠে স্নো কেটে তার তলা থেকে গাড়ি বের করতে হয় না। শুধু ভদকার গ্লাস নিয়ে ফায়ার প্লেসের সামনে বসে বসে সময় কাটানো। আহা কি রোমান্টিক। বিদেশে জুস, খাবারে কোন ভেজাল নেই, অসুখ নেই। ম্যাডকাউ ডিজিজ নেই। হাইব্রিড খাবারে কোন সমস্যা নেই। নেই মৃত্যু জরা। নেই কোন দুঃখ অপমান, আলু আর মাংস সব এক সমান। এহেন আনন্দের বৈদেশের প্রথম শ্রেণীর দেশের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকদের না দেশের ব্যাপারে কোন মতামত দেয়ার অধিকার থাকে না বৈদেশের ব্যাপারের। যেখানেই কথা বলবেন, সেখানেই বলবে তুমি কে? তুমি চুপ থাকো।
তানবীরা
০৯/০৪/২০১২
আর সব লেখাপড়া জানা মানুষদের মতো (লেখাপড়া জানা মানে বলতে চাইছি যারা লিখতে ও পড়তে জানেন, শিক্ষিত নয়। লেখাপড়া জানা আর শিক্ষিত দুটো আলাদা ব্যাপার। ) সকালে ঘুম থেকে উঠেই পত্রিকার লিঙ্কে ক্লিক করার একটা অভ্যাস জন্মে গেছে। অভ্যাসে রোজ শিরোনামগুলোতে চোখ বুলাই আর বিরক্তি নিয়ে পড়া শেষ করি। সংবাদতো বটেই শিরোনামগুলোও এক, কোন পরিবর্তন নেই, শেষ নেই এর কোথাও। লঞ্চডুবিতে নিহত একশ বারো জন, স্বজনহারাদের আর্তনাদে আকাশ ভারি, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রীর গভীর শোক প্রকাশ। সংসদে শোক প্রস্তাব পাস। সংসদের শোক প্রস্তাব নিহত কিংবা নিহতদের পরিবারের কি কাজে লাগে কে জানে? ভাবি তাই, কতো কম জানি .........।
ফেসবুকে এলোমেলো একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, যেমন অহরহ দেই। ভাস্করদার সাথে আলাপ করতে করতে মনে হলো, কথাটাকে কোথাও ধরে রাখি। সেই হাসিনা – সেই খালেদা – সেই সাহারা – সেই মতিয়া – সেই এরশাদ। কোন অদল বদল নেই আজ একচল্লিশ বছর ধরে। সেই শাড়ি, সেই সাজ, সেই কাজ (নেই কোন লাজ)। সেই গালি সেই বুলি। সেই পোড়া রাজনীতি। এখন প্রশ্ন উঠবে এদের লালন করে কারা? অবশ্যই আমরা। আমরা সুশীলরা যাদের মুখে মানবতার বাণী, অন্তরে সীমাহীন লোভ। আমাদের লোভকে পুঁজি করে খেলেন রাজনীতিবিদরা। নতুন নতুন মুখ, কঁচি কঁচি লোভ, তার মাঝে ফেলে যান, রাজনীতির টোপ। মুখে যতই নীতি বাক্য ছাড়ুক না কেন সুযোগের অভাবে সৎ থাকা এই সুশীলেরা, তেল আর ঘুষে (উপহারে) ভিজে না এমন উদাহরণ বিরল। উদাহরণ নেই বলছি না বলছি বিরল।
রাজনীতি আর দেশপ্রেম দুটো দুই জিনিস। যারা রাজনীতি করেন তারা কি কোথাও বলেছেন যে তারা দেশপ্রেমিক? আমরা ধরে নেই তারা দেশপ্রেমিক। এটা আমাদের মূর্খতা। সেধে সেধে ধোকা খেলে কি রাজনীতিবিদদের দোষ? রাজনীতি হলো পেশা আর দেশপ্রেম হলো ধর্ম। সত্যের লড়াই বলো, ন্যায়ের লড়াই বলো আর অস্তিত্বের লড়াই বলো, লড়তে হয় একা। কেউ পাশে থাকে না, ইতিহাসের শিক্ষা। সুশীলতার ধর্ম হলো অন্যের ঝামেলায় না জড়ানো, পাশ কাটিয়ে যাওয়া। তবে লড়াইতে জিতে গেলে তখন হয়তো কেউ কেউ পাশে থাকবে। রাজনীতিবিদেরা কেন যেনো কোথায় থামতে হবে জানেন না। কিন্তু তাদেরকে থামানো দরকার। বেড়ালের গলায় ঘন্টাটা বাঁধবে কে? নাকি আমরা অসহায় হয়ে হাতে হাত রেখে রোজ ফেসবুক আর পত্রিকায় এ খেলার দর্শক আর সাক্ষী হয়ে থাকবো?
অর্থ দেখলেই সুশীলদের চোখ চকচক করে। মানুষের সামাজিক মর্যাদা নির্ধারিত হয় অর্থের দ্বারা। কিন্তু এই অর্থের উৎস কোথায়, কে তা ভাবতে চায়? দুজন সমপেশার লোকের যখন একের অন্যের তুলনায় অর্থের ছড়াছড়ি দেখা যায়, তখন একটা সিগন্যাল বাজার কথা মনে। বাজে কি মনে? না থাক বেশি ভাবার দরকার নেই, ব্রেইনে চাপ পড়বে। উৎস যাই হোক, আমি প্রসাদ পেলেই হলো। তারচেয়ে চলেন ফার্মভিল খেলি। চোরতো হবে আর রবে গরীবরাই, তাদের যে পেটের দায়। বড়লোকরাতো এগুলো এমনে এমনেই করে ............
তানবীরা
১৫/০৩/২০১২
1. ছোটবেলা থেকেই আমি বুদ্ধু। কেউ আমার মাথায় হাত রাখলে, আমাকে দুটো মিষ্টি কথা বললে আমি মোম হয়ে গলে গলে পড়তাম। অনেক সময় নিজে টিফিন না খেয়ে পুরোটাই প্রশংসাকারীকে খাইয়ে দিতাম। নিজে সারাদিনের উপোস থাকতাম। মানুষ আমার বোকামীর সুযোগ নিত ও তার সদ্বব্যবহার করতো। আমার বাবা আমার এই স্বভাব নিয়ে খুব ভাবতেন। আমাকে অনেক বোঝাতেন, ভুল বন্ধু বান্ধব আমাকে অনেক বিপদে ফেলতে পারে। কিন্তু আমি বেপরোয়া, নিজের ওপর অগাধ আস্থা আমার। অনেকবার বিপদে পড়েছি। দেখেছি চেনামুখ কি অচেনা আচরণ করে।
তাতে কি আমার শিক্ষা হয়েছে? না হয় নি। এই একই কথা আমার স্বামীও আমাকে অসংখ্য বার পই পই বলেছেন, বুঝিয়েছেন। আমি ভেবেছি, আমিতো কোন অন্যায় করছি না, আমার কেন বিপদ হবে? শুধু একটু বন্ধুত্ব বই কিছুতো না। আমার কাছে আসলে, আমাকে ডাকলে প্রয়োজনে, আমি না করি কিভাবে?
আজ জানি – মানি, নিজে অন্যায় না করলেও শুধুমাত্র ভুল মানুষের সংস্পর্শ একজনকে অর্থনৈতিক, মানসিক, সামাজিক, পারিবারিক সবভাবেই ধ্বংস করতে পারে। কিংবা অপূরণীয় ক্ষতি করে দিতে পারে। যে দাগ জীবনে কখনো মুছবে না।
তাতে কি আমার শিক্ষা হয়েছে? ভবিষ্যত বলে দিবে শিক্ষা হয়েছে কি হয় নাই।
তানবীরা
১৪/০৩/২০১২