Tuesday, 7 May 2013

চুপি চুপি কেঁদে রোদ পোহানো দিন


বাবা মা প্রায় চার দশক ধরে তাদের স্বপ্নমমতা আর ভালোবাসা দিয়ে ছোট্ট যে সংসারটি সাজিয়ে রেখেছিলেন তার একটা অধ্যায় শেষ হয়ে গেলো। অনেক ঝগড়া, মান অভিমান, মারামারি, অসুস্থতা, গানবাজনা, নাচানাচি, পরীক্ষা,চাকরির টেনশানের আপাত সমাপ্তি। সবাই যার যার গন্তব্যে ঠিক করে নিয়ে যার যার জীবন খুঁজে বেরিয়ে গেছে, পিছনে রয়ে গেছে শুধু ধূলোমাখা স্মৃতি নাকি হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা। ফিরে ফিরে আসবো এই আঙিনায় শর্তহীন সেই রঙ্গীন দিনের ছোঁয়া পেতে। মাত্র কয়েকদিন আগেই যেটা ছিল আমার ঘর আমার নিজের ঘর, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি অধিকারের জায়গা, নিরাপত্তার জায়গা আজকে ছোট্ট বালিশ নিয়ে, টুকটুকে লালপরী ভাইঝিটা সেই ঘরে ঘুমায়,হ্যা শুধু খাটটা বদলে গেছে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে হালফ্যাশনের বিছানা এসেছে ডোরা সাথে নিয়ে কিন্তু আয়তন বর্গক্ষেত্র কিছুই বদলায়নি। ডাইনীং টেবলের নীচে বসে চেয়ার সব টেনে দিয়ে আমি আর ভাইয়া ঘর ঘর খেলতাম, সেই একই জায়গায় একই ভঙ্গীতে বসে আরভিন তাহিয়া শ্রেয় একই খেলা খেলে যাচ্ছে। মাঝখানে এতোদিন চলে গেছে?! কোথায় গেছে সেই সবদিন? কোন কালের আর্বতে? কোথায় গেলে তাকে আবার ছুঁতে পারা যাবে?

আমি জানি আমরা ভাইবোনেরা যে যেখানেই থাকি,যখনই কোথাও বাচ্চাদের কিংবা কিশোর কিশোরীদেরকে যদি লুডু খেলতে দেখি, এক পলকের জন্যে হলেও দাঁড়িয়ে পড়বো। সেইসব মুষলধারে বৃষ্টিভেজা দিনে, যেদিনগুলোতে আব্বু বাইরে যেতে পারছেন না, বৃষ্টির কারণে সব অচল, রাস্তায় পানি জমে গেছে, রিকশা গাড়িকিছুই চলছে না। আম্মি খিচুড়ি মাংস করছেন, আর আমাদের গল্পের বই পড়া ছাড়া তেমন কিছু করার নেই। আব্বু ডেকে বসাতেন লুডু খেলতে। মানুষ বেশি, সবাই খেলতে চায় আর কি করা,শুরু হতো সাপলুডু। একবার মই দিয়ে সড়াৎ ওপরে চড়া আবার পরক্ষণেই সাপে খেয়ে নিলে লেজে নেমে যাওয়া। যখন মই দিয়ে চড়ছি সবাই এতো জোরে চিৎকার করছি আবার যখন সাপে খেয়ে নীচে নামছি তখনো তাই। পাড়া প্রতিবেশি সবাই ভাবতেন কি হয়েছে এই বাড়িতে এতো চিৎকার কিসের?যে বাড়িতে একটা উলটা শব্দ হয় না সে বাড়িতে এতো শোরগোল, অনেকেই আড়ে ঠাড়ে খোঁজ নিতে চাইতেন, আমরা এতে উৎসাহিত হয়ে, মজা পেয়ে আরো দ্বিগুন উৎসাহে চেঁচামেচি করতাম। ওদেরকে ভয় দেখাতে চাইতাম ভয়ঙ্কর কিছু ঘটেছে এই বাড়িতে, তাই চিৎকার হচ্ছে।

হরতালে আটকে থাকা দিনগুলো ছিলো আরো আনন্দের।দিনের বেলা মুভি দেখা আর রাতের বেলা কার্ড খেলা। আব্বু আমি ভাইয়া আর সুমি। বাকিরা দর্শক ঘুমিয়ে না পড়া পর্যন্ত। ব্রে খেলতে গিয়ে কি টেনশান। কার ভাগে রানী আসবে আর রানী একা আসা মানেই বারো পয়েন্ট। টেনশান ছিল যেনো এরওপর ভবিষ্যতের কার্ড ক্যারিয়ার নির্ভর করছে। যদি আমি রানী খেয়ে গেছি কি রেগে যেতাম। দুবার পরপর রানী খেলে কার্ড ছিঁড়ে, পয়েন্ট লেখার খাতা ছিঁড়ে, সব ভেঙ্গে কেঁদে কেটে অস্থির করতাম। আব্বু কি বকতো, হার মানতে পারিস না, তুই খেলার অযোগ্য। কেউ না কেউ একজনকেতো রানী খেতেই হবে, তুই খেলেই সবার দোষ। কিন্তু পরদিন আবার বসতাম, আজকে রানী খেলে কাঁদবো না, ভাঙবো না কিছু এই প্রমিজ করে আব্বুর কাছে, কিন্তু দুই – তিনবার পরপর রানী খেলে প্রমিজ আর মনে থাকতো না। কার্ড যে খারাপ খেলতাম তা নয়, সব ভাইবোনকে আব্বু বেশ হাতে ধরে কার্ড হিসেব করে গুনে খেলা শিখিয়ে দিয়েছিলেন কিন্তু মাঝে মাঝে কার্ডই এমন আসতো যে রানী না খেয়ে উপায় ছিল না। চাইলেও আর সেইভাবে কার্ড খেলার দিনে ফিরে যাওয়া সম্ভব না।এখন রানী পরপর পাঁচবার খেলেও মনে কোন অনুভূতি আসবে না, হারজিত আসলে কোন ব্যাপার না, দৃষ্টিভঙ্গীর পার্থক্য শুধু মন এখন সে কথা জেনে গেছে।

আমরা হারমোনিয়ামে আর ভাইয়া তবলায় সে কতো কতোদিন গেছে। নিশিথে যাইও ফুলে বনে ও ভোমরা, কিংবা চৈতালী চাঁদিনী রাতে, মহুয়া বনে দেখেছি তারে এলোচুল ঘুঙুর বাঁধা পায়। রাতভর গানবাজনা রাতভর আড্ডা। মাঝে মাঝে পাশের বাসা থেকে টিটুভাইয়া ভাবী কিংবা হাসি চাচী কবির চাচা জানালা খুলে দিয়ে জোরে ডেকে বলতেন, জোরে জোরে গাও, আমরাও শুনি কিংবা এই গানটা কর কিংবা ঐ গানটা। বিশেষ করে লোডশেডিং এর সন্ধ্যাগুলো। এতো গরমে ফ্যান নেই, টিভি নেই আমাদের গানইতো সবার ভরসা। মেহেদী পরার কতো আয়োজন। সারারাত মেহেদী নিয়ে গুলতানি, পাড়াশুদ্ধ কার প্রেম হলো কার কি হলো তার আলাপ আলোচনা শেষে ভোররাতে যার যার মতো কোন জায়গায় কাত হয়ে ঘুমিয়ে থাকা, আম্মি আব্বু সকালে এসে চাদর টেনে দিয়ে যেতেন গায়ে। পহেলা বৈশাখের সাজগোজ প্ল্যান কতো আয়োজন। রমনা বটমূলে ছয়টায় যাওয়ার প্ল্যান সারাজীবন করেছি কিন্তু কোনদিনও ছয়টায় পৌঁছতে পারিনি। কি ট্র্যাজিডি।

এক একটা মৌসুম আসতো ছাঁদে ঘুড়ি ওড়ানোর। তখনো এতো হাইরাইজ এপার্টমেন্ট নেই ঢাকাতে। আশে পাশে বেশির ভাগ চারতলা পাঁচতলা বাড়ি, বিকেলে সবাই কম্পিটিশান দিয়ে ঘুড়ি ওড়ানো। আমাদের ঘুড়ি নাটাই লোকবল কিছু নেই। ভাইয়া তখন বড় হয়েছে, আমাদেরকে ফেলে দিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে যায়। আমাদের বিকেলে কিছুই করার থাকে না, মন খারাপ করে ছাঁদের এপাশ থেকে ওপাশে হাটাহাটি করে, আম্মির গাছের লেবু, কাজি পেয়ারা, গোলাপ দেখে নীচে নেমে আসি। একদিন হঠাৎ কারো কাটা ঘুড়ি আমাদের ছাঁদে এসে পড়ে দৈবাৎ। সেটা দিয়ে কি করবো ভাবতে ভাবতে আমাদের বাসায় থাকে যে ছেলেটা বললো দেন আপা, আমি উড়াই। সে কোথা থেকে মাঞ্জা দেয়ার সরঞ্জাম যোগাড় করে ছাঁদে ঘুড়ি ওড়ানো শুরু করলো। আমরাও মজা পেয়ে গেলাম, ঠিক করলাম ঘুড়ি কিনবো না,লোকের ঘুড়ি কেটে কেটে উড়াবো। নিজেরা কিছুই জানি না, বাসায় যারা থাকে  তাদেরকে সব ডেকে বিকেলে ছাঁদে নিয়ে যাই, কি উত্তেজনা। এমন উত্তেজনা যে সারাদিন অপেক্ষা করে থাকি কখন বিকেল হবে, ছাঁদে যাবো। পাড়াময় নাম হয়ে গেলো ঘুড্ডি কাটাখোর হিসেবে। পাড়াভর্তি চাচা সম্পর্কের লোক বিধায় আদরের ধমকধামক দিয়েই ছেড়ে দিতো। কিন্তু চাচাদের বাসার ভাড়াটিয়ারাতো আর সহ্য করবেনা। একদিন বিকেলে তুমুল উত্তেজনা পরপর তিন চার ঘুড়ি কেটে নিয়েছি, যাদের ঘুড়ি কাটা গেছে তারা রাগের মাথায় ছাঁদে উঠে এসেছে। দারোয়ানতো আমাদের সাথে ঘুড়ি কাটায় ব্যস্ত,নীচে কেউ নেই। আমরা হঠাৎ সিড়িতে হৈচৈ শুনে ঘাবড়ে গেছি। আম্মি শুনলে রক্ষা থাকবেনা। কাটা ঘুড়ি, মাঞ্জা, নাটাই সবতো ছাঁদে পানির ট্যাঙ্কির নীচে লুকানো থাকে, আম্মি তার কিছুই জানে না। এই খেলায় আছি আমরা আর আমাদের বাসায় থাকে যারা তারা। প্রথমে ভয় পেলেও পরে সাথে সাথে উলটা পার্ট নিয়ে বললাম, ছাঁদে এসেছেন কাকে জিজ্ঞেস করেছেন? বাড়িওয়ালার পারমিশান নিয়েছেন? মেয়েদেরকে ছাঁদে উঠে বিরক্ত করতে এসেছেন? ঝাড়ির চোটে ব্যাকা করে নীচে নামিয়ে দিলাম। তারপর কেমন যেনো ঘুড়ি ওড়ানো মৌসুম আবার হারিয়ে গেলো।

আমাদের কোন ভাইবোনেরই কেমন যেনো ঝাঁকে ঝাঁকে বন্ধুবান্ধব ছিলো না। প্রত্যকেরই দু’একজন বন্ধু কিন্তু তারা একদম পরিবারের সদস্যদের মতো। আমরাই আমাদের বন্ধু ছিলাম, আছি। আমরা নিজেদেরকে নিজেরা যতো ভাল বুঝি মনে হয় ততো ভাল আমাদেরকে কেউ বুঝে না বুঝতে পারবে না। তাই বন্ধু বানানোর আগ্রহও আমাদের অনেক কম ছিল। কিন্তু এক আশ্চর্য কারণে সবার বন্ধুই সবার বন্ধু হয়ে গিয়েছে। আমার বন্ধু ভাইয়ার বন্ধু আবার ভাইয়ার বন্ধু আমার বন্ধু। ভেদাভেদ নেই। আবার সোয়াপও হয়েছে। দেশান্তরী হওয়ার কারণে সুমির বন্ধু আমার আর আমার বন্ধু সুমির কাছে চলে গেছে। নতুন বারবিকিউ মেশিন কেনার পরের সেই প্রচন্ড গরমের বারবিকিউ সন্ধ্যাগুলো, নাচানাচি, ছাঁদের গানের আসর এগুলো হয়তো আর সেভাবে কখনো ফিরে আসবে না। বাসার সমস্ত বাচ্চাগুলোকে জমিয়ে নিয়ে ছাঁদের সুইমিংপুলে চুবানো, ওয়াটার পিস্তল খেলা কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপা হয়ে আম্মির ভয়ে লুকিয়ে ঘরে ঢুকতে গিয়ে ঘরের কার্পেট ইত্যাদি সব ভিজিয়ে দিয়ে প্রচুর বকাঝাকা খাওয়ার দিন এখন ইতিহাস। অফিসের কাঁচঘেরা ঘর থেকে দুপুরের বৃষ্টি যখন প্রথমে মন আর তারপরে চোখ ভিজিয়ে দিয়ে ভিতর থেকে দীর্ঘশ্বাসনিয়ে আসে, মনে হয় এর কিছুই কি কোনদিন আমার ছিলো না?

একটা মজাও ছিলো, আমাদের বাড়ি কেউ বেড়াতে এলে সহজে যেতে চাইতো না। আমাদের কান্ড কারখানা এতো মজা লাগতো, আমাদেরকে দেখতেই দেখা যেতো বেশ কয়েকদিন বেশি থেকে গেছে। এটা আমরাও একটা পর্যায়ে এসে বুঝতে পারতাম। কিংবা সকালে এলে রাত অব্ধি থেকে গেছে। ভাইবোনদের আমাদের সবচেয়ে প্রার্থনীয় জিনিস ছিলো একসাথে ঘুরতে যাওয়া। সে যমুনা রিসোর্ট হোক, কিংবা সিলেট, সেন্ট মার্টিন হোক কিংবা নীলগিরি, নইলে লং ড্রাইভ দাদুর বাড়ি – নানুর বাড়ি। আন্তাক্ষরী খেলতে খেলতে যাওয়া ফিরে আসা তারপর তিনদিন গলা বসা। এখনো এই একটা জিনিস ধরে রাখার জন্যে সবাই আপ্রাণ চেষ্টা করবো ভেবে  রেখেছি। বছরে একবার যেভাবেই হোক সবাই মিলে বেড়াতে যাবো, ছোটবেলা খুঁজে ফিরতে।

ছোটবেলায় ডালিম কুমারের গল্প শুনেছিলাম। পুকুরের মধ্যে কৌটা, কৌটার মধ্যে ভোমরা আর তার মধ্যে দৈত্যের জান। আমাদের সারা বাসার সমস্ত সুর আর সূতো যার কাছে জমা ছিল সেই ভোমরা যার মাঝে আমাদের সবার জান সে এখন দৈত্যপুরবাসিনী। মিষ্টি একটা দৈত্য এসে ভালবেসে নিয়ে গেছে তাকে। এতো দুষ্টামী,এতো শয়তানী, এতো বাদরামি এতো যুগ ধরে সবকিছু যে একজন এতোদিন ধরে রেখেছিলো তার অপরিসীম মায়া আর ভালবাসা দিয়ে সে এখন নতুন জীবনে প্রবেশ করেছে। তার নিজের জগত তৈরী হবে হাজারো ব্যস্ততা দিয়ে। আমার মানিপ্ল্যান্টের ঝুলানো টবে তার ভালবাসার স্পর্শ এখন হয়তো আর আসবে না। আমার কবিতার খাতা, গল্পের বই গুছিয়ে রাখার সময় পাওয়া তার জন্যে এখন অনেক কঠিন হবে। আমার কাপড় সব গুছিয়ে পরের বছরের অপেক্ষা করার দিন এখন আর তার নেই। এখন তার দিন অনেক দ্রুত শেষ হবে তার নিজের স্বপ্নের জাল বুনে। বিছানার চাদরে এখন মেঘলার গন্ধ খোঁজা সে ভুলে যাবে নতুন আনন্দে। এখন পুরনো সুর বদলে যেয়ে নতুন সুরের অপেক্ষা তার ............ যেসব সুখ আনন্দ স্বপ্ন সে দেখেছে আর যেগুলো দেখেনি তার সব যেনো তার ঝুলিতে প্রকৃতি উদার হস্তে ঢেলে দেয় এই মিনতি রইলো প্রকৃতির কাছে আমার -আমাদের। একদিনের জন্যেও যেনো আনন্দ ম্লান না হয় তার দুচোখের স্বপ্ন ফিকে না হয়।

পাঁচই মে চাঁদের পালকি চড়ে এই গোলাপী পরী আমাদের বাড়িতে চলে এসেছিলো অপরিসীম মমতা বুকে নিয়ে। শুভ জন্মদিন পুতুল সোনা। আনন্দময় জীবন হোক আনন্দময় ভুবন হোক।

০৩/০৫/২০১৩

লেখাটি লিখতে লিখতে অসংখ্য বার চোখ ভিজে গেছে। মানুষের সবচেয়ে ডিফেকটিভ অংশের নাম হলো “মন”। সবচেয়ে বেশি খারাপ হয়। অলস দুপুর, বিষন্ন বিকেল কিংবা বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যা ......... সবই মন খারাপের নাম

তার পছন্দের আর আমার পছন্দের একটা গান এই লেখায় জুড়ে থাকুক


মেলেছো চোখ উড়েছে ধূলো
দুরের পালক তোমাকে ছুলো
তবু আজি আমি রাজি
চাঁপা ঠোঁটে কথা ফোটে
শোনো আমাকে রাখো চোখের কিনারে গোপন মিনারে

ঘুম ভেঙ্গে কিছু মেঘলা দিন হোক

ওড়নার পাশে সেফটিপিন হোক
বিকেলের নাম আলপাচিনো হোক
খেয়ালী ছাতে

কফি কাপে একা ঠোঁট ছোয়ানো দিন

চুপি চুপি কেঁদে রোদ পোহানো দিন
ভালো হয় যদি সঙ্গে আনো দিন
যেকোন রাতে

জানি দেখা হবে ঠোঁটের ভেতরে ঘুমের আদরে

চকমকি মনে মন জ্বালাতে চাই
দিনে ব্যালকনি রাতে বৃষ্টি চাই
পিছুডাকে ঘুম সাজাতে চাই
বিছানা ঘিরে

ছোট ল্যাম্পশেড অল্প আলো তার

চুল খুলে কে রুপ বাড়ালো তার
তুমি বোঝ নাকি মন্দ ভালো তার
যেও না ফিরে
জানি দেখা হবে রাতের সোহাগে তোমার পরাগে

Tuesday, 30 April 2013

রানী যায় রাজা আসে




আজকে ৩০শে এপ্রিল ২০১৩তে সরকারীভাবে নেদারল্যান্ডসের রানীর রাজত্ব শেষ হয়ে আবার রাজার রাজত্ব শুরু হলো। ৩০শে এপ্রিল “কুইন্সডে” হলেও এটা রানী বিয়াট্রিক্সের জন্মদিন ছিল না। তাঁর জন্মদিন ছিল ৩১শে জানুয়ারী। ৩০শে এপ্রিল ছিল তার মা রানী জুলিয়ানার জন্মদিন। কিন্তু ৩১শে জানুয়ারী যেহেতু আবহাওয়া খারাপ থাকে, জনগন আনন্দ উৎসব করতে পারে না আর ৩০শে এপ্রিল সাধারণত একটু আবহাওয়া ভাল থাকে, চারদিকে ফুল আর পাখির গান তাই সর্বসম্মতিক্রমে বিয়াট্রিক্সের মায়ের জন্মদিনই এতোদিন কুইন্সডে হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। তবে নতুন রাজা উইলাম আলেকজান্ডার এর জন্মদিন ২৭শে এপ্রিল, তাই আশাকরি কিংসডে পালন করতে বেশি অসুবিধা হবে না। রানী বিয়াট্রিক্স অনেক জনপ্রিয় ছিলেন কারণ তিনি বেশি রয়ালিটি মানতেন না। তাকে প্রায় এদিকে ওদিকে জীন্স পরা অবস্থায় সাইকেল চালাতে দেখতে পাওয়া যেতো। খুব বেশি বডিগার্ড সিকিওরিটি এগুলোর ধার ধারতেন না।

পাঁচ মিলিয়ন ট্যাক্সের টাকা খরচ করে উইলাম আলেকজান্ডার রাজা হলেন। জনগনের ট্যাক্সের টাকায় অথচ শোনা যায় তারা নাকি পৃথিবীর ছয় নম্বর ধনী পরিবার। আর আমরা একটা কাঠি লজেন্সও পেলাম না। অফিস থেকে দুটো কমলা টমপুজ খাওয়ার বন দিলো। ২০০২ সালের ০২ ফেব্রুয়ারী যখন উইলিয়াম বিয়ে করলো তখনও শনিবারে বিয়ের তারিখ ফেলা হলো যাতে সরকারী ছুটি ঘোষনা না করতে হয় আর বিয়ের খরচ কম লাগে। আরে আমাদের দেশের চেয়ারম্যান মেম্বারের ছেলের বিয়েতেও স্কুল কলেজ ছুটি দেয়া হয়, সারা গ্রামের লোককে ভোজ খাওয়ানো হয়। এখানে রাজার বিয়ে উপলক্ষ্যে জনগন একটা বাতাসাও পেলো না। তাও আর্জেন্টিয়ান মেয়ের বাপকে বিয়ের সরকারী অনুষ্ঠানে আসতে দিবেন না কারণ তিনি আর্জেন্টিনার সামরিকজান্তার কৃষিমন্ত্রী ছিলেন কিন্তু বাকি সব পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন। রাজার অভিষেক অনুষ্ঠানও এতো সাদামাটা হলো, আমাদের দেশের চেয়ারম্যানদের শপথ অনুষ্ঠানও এর থেকে জমকালো হয়। পাঁচ মিলিয়ন ইউরো কোথায় খরচ করলো কে জানে? নিজেদের আলখাল্লা সাইজ জামা বানাতে নাকি? চার্চের মধ্যে যেয়ে শপথ নিয়েছে। এই নাকি রাজকীয়তা? বংগভবনের প্রেসিডেন্টের শপথগ্রহন দেখা দরকার ছিলো এদের। রাজকীয়তা কাহাকে বলে, কতো প্রকার আর কি কি জানতো। কতো লোক আসলো সেখানে আর এখানে পরিবার পরিজন নিয়ে শপথ নিয়ে ফেললো তারপর বাইরে এসে সবাইকে হাত নেড়ে অভিবাদন জানিয়ে শেষ। রানী বৃদ্ধা হয়েছেন, অসুস্থ ছোট পুত্রের সেবা করবেন তাই বড় ছেলেকে রাজত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন।



বর্তমান রাজার তিন মেয়ে, বিবাহিত আকর্ষনীয় কিছু না। ১২৩ বছর পর আপাতত রানীর রাজ্য শেষ হলেও ঘুরে ফিরে আবার রানীর রাজ্যেই ফিরে আসবে নেদারল্যান্ডস। সেদিন হয়তো আমরা থাকবো না অভিষেক অনুষ্ঠান দেখার জন্যে।


শীতনিদ্রা থেকে ফিরে আসার চেষ্টায় বহুদিন পর লেখালেখির খাতায় আঁকিবুঁকি কাটা
০১/০৫/২০১৩

Thursday, 28 March 2013

এলোমেলো কাব্যকথন




যতোটা তোমাকে নিজের করে চাই সেই তুলনায় দূরত্ব অনেক বেশি
তুমি হাত না বাড়ালে এ পথ শেষ হবে না
যতোটা তোমাকে কাছে পাই সেই তুলনায় আকাঙ্খা অনেক বেশি
তুমি জল না হলে এ তৃষ্ণা মিটবে না

২৮.০৩.২০১৩ 



তোর চোখে দেখেছি জল জোছনার কাব্য

আজ রাতে আমি শুধু তোর কথাই ভাববো

২৭.০৫.২০১৩


অনেক দূর বসে কবি চাঁদকে নিয়ে কবিতা লেখে             
ধীরে ধীরে চাঁদে আর কবিতে দারুন সখ্য
খুনসুটি আর ভাল বাসাবাসি
দুজনে খুব কাছাকাছি মুখোমুখি
কবি অবাক এখানে মসৃন আলো কোথায়
চাঁদ ভর্তিতো গর্ত আর খাড়া পাহাড়
খানাখন্দ আরো শত অপরিপূর্নতা
কবিতা হারিয়ে যায় সাথে হারান কবি
অনাবৃত রহস্যময়তা লেখায় কবিতা
আলো আঁধার মাখা চাঁদ আনে ভালবাসা
২৮।০৮।২০১৩ 
 
শীতবেলার আনন্দ রোদ আর তাপ
অকৃপন সূর্য মেলেছে আজ ঝাঁপ
মেঘ এসে মেলে দেয় ডানা
আলো ছায়ার খেলা চেনা অচেনা
26.09.2013


স্বাতী, সূর্যপত্নী তুই, জ্যোতিষীর চোখে 
পঞ্চদশ নক্ষত্র যে-তুই, দেহে আগুনের 
আঁচ নিয়ে নেমে এলি চেরাগী পাহাড়ে। 
পবনদেবতা আমি, তোমার আজন্ম সখা
বিলিয়ন-বর্ষ ধরে মনে রাখো নাই যারে!  (Pranto, 14.11.2013)




সমান্তরাল পথ মিশবে না কোন প্রান্তে
তারপরও পথিক পৌঁছায় কোন সীমান্তে
অনেক বলা না বলা কথার ভীড়ে
কিছু পালক ফেলে যায় অনুভবে (14.11.2013)


একটি প্রভাত
একমগ সবুজ চা
হাতে একটি বই
সিড়িতে বসে একা
সূর্যালোক সবার্ঙ্গে জড়িয়ে
হালকা বাতাস চুল ছুঁয়ে
পৃথিবীর সমস্ত সুখ
যা আমায় ছুঁয়ে যা (04.12.2013)





তুমি আমার একী সর্বনাশ করলে শুভঙ্কর
তোমার সাথে একটিবেলা কথা না হলে
 এতো অস্থির কেন লাগে আমার
কোন কাজ হাতে ওঠে না
কোন খাবার মুখে রুচে না
কোন গানে সুর আসে না
কোন কবিতায় মন লাগে না
তুমিতো নিজেকে শান্ত করো ঐ সিগ্রেটের
টুকরো পুড়িয়ে ছাই করে
আমি নিজেকে ছাড়া আর কি পোড়াবো
বলতে পারো শুভঙ্কর

03/02/2014




রোদ কিংবা বৃষ্টি
তাতেই বা কী
অমাবস্যা আর জ্যোস্নায়
কীইবা আসে যায় 


একদিন কাশফুলে থৈ থৈ আশ্বিনের সুরেলা দুপুরে
তুমি এসে বলেছিলে, যাবে?
সম্মোহিত সেই থেকে গ্রাম গঞ্জ শহরের সব পথ ঘুরে
চলে যাই, শুধু যাই, আর ফেরা হয় না স্বভাবে।
কী করে ফেরালে মুখ অরুন্ধতী.......

আবু হেনা মোস্তফা কামাল



বন পাহাড়ী ঝর্ণা বৃষ্টি ফেলে

আমায় ভালবাসে সেই ছেলে 


. মন খারাপ?
হয়তো, জানি না
কেন?
খেয়াল করিনি
কী হয়েছে, এইইই?
ভেবে দেখিনি, কী হবে ভেবে দেখে
আমার জন্যে কোথাও কোন কারণ তো পাল্টাবে না   
সবকিছু তার নিয়মে চলবে
আমারই কী দায় তবে কারণ ভেবে দেখার
মন খারাপ লাগে তো লাগুক
চোখে জল আসে তো আসুক
সবাই থাকুক যার যার মত
আমিও এই বেশ আছি

 এই আমারই মতো। 10.02.2015


লিখুক কবিতা যার ইচ্ছে যাকে নিয়ে
কী আসে যায় তাতে
আমি ঘুরছি আমার বাঁধানো কক্ষপথে 
আমার নীল রঙা পৃথিবীতে
10.02.2015 



কাল যখন ইন্ডিয়া হেরে যাবে
তোমাকে এক হাজার চুমু খাবো
 ছিপছিপে কোঁকড়া চুলের কালো ছেলে
আর্দ্র ঠোঁটে ভিজিয়ে দিবো তোমার
শার্টের বুক, গলা আর ঠোঁট
সঘন উত্তপ্ত নিঃশ্বাসে পাগল হয়ে
যদি আরো বেশী কিছু চাও
উদার হয়ে দিতে পারি তাও
সামান্য অপেক্ষা শুধু কাল ভোরের

একটি উজ্জল মনোরোম, ভালবাসার সূযোর্দয়ের
25/03/2015 



কোপানোই যখন সংস্কৃতি
 চাইনা তবে নিষ্কৃতি
মার্কা হোক চাপাতি
থামলো কলম, নিয়তি
ভিন্নমতের এই পরিণতি

মুমিনগণ, শান্তি ওম শান্তি!
30/03/2015 



বর্ণমালারা যখন আকাশে লুকিয়ে যায়
শব্দগুলো তখন অথৈতে দিক হারায়
বাক্য বিলীন হয় তারায় তারায়
ব্যকরণ ঘর ছেড়ে ছুটে পালায়
মৌণতাই তখন ভাষা হয়ে কাঁদায়

বর্ণমালারা নিশ্চুপ হয়ে গেলে শব্দরা হারিয়ে যায়
বাক্য আর ব্যকরণ বিলীন হয় অসীম ধরায়

মৌনতায় হয় তখন পৃথিবীর একমাত্র ভাষা

০৭/০৯/২০১৫ 



ইচ্ছে সব বুকে নিয়ে যাবো নীরবে
আকাশ সেদিন হালকা হালকা নীল হবে
সূর্য ওম দিয়ে পৃথিবীকে বুকে জড়াবে
আবেশে ফিসফিসিয়ে বলবে কানে  
বেঁধে আছি ভয় পেয়ো নাকো

উড়বে পাখিরা আকাশের নীল ছুঁয়ে
নামবে শিল কুড়োনো বৃষ্টি রুক্ষতা ধুয়ে
প্রেমিক প্রেমিকা মিলবে একে দুয়ে  
কোথাও কোন ছন্দপতন হবে নাতো

শুধু ... শুধু সেই মেয়েটি থাকবে নাকো। 
১৩-০৯-২০১৫


মা রেগে মারলো তাকে
সে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে
জল ভরা চোখ নিয়ে
এদিক ওদিক দাপিয়ে হাঁটে।
মন খারাপ নিয়ে মা
ব্যস্ত ঘরের নানান কাজে।

চুপচাপ কিছুটা সময় কাটে
অভিমান ভুলে সে জড়িয়ে ধরে
বলে মা, ব্যথা পেয়েছো হাতে?
ভুল হয়েছে মা আমার
দুঃখ তোমাকে দেবো না আর
ক্ষমা করো তুমি আমাকে।

অবাক হয়ে মা তাকে দেখে
কী করে এতো জোস্ন্যা মেখে
এলো এই রাজকন্যা তার ঘরে
এতো মায়া জড়িয়ে পৃথিবীর পরে
চাঁদের আলো সারা ঘর ছেয়ে

মায়ের আঁচল জুড়ে এই মেয়ে।
১৫-০৯-২০১৫  




হাতে হাত রেখে হাঁটতে হাঁটতে
এক সমুদ্র পথ পেরিয়ে এসেছি
নিজের কাছে ফিরতে যেয়ে দেখি
ফিরে আসার চির চেনা
সেই পথটা হারিয়ে ফেলেছি
তোমাকে ফেলে, নিজের কাছে
তাই ফেরা হলো না আমার।  

১৩/১০/২০১৫





স্বপ্ন কি ছোঁয়া যায়
সেতো এক রঙীন ফাঁদ
ঘুম ভাঙ্গা চোখে লেগে
থাকে মিষ্টি এক দাগ।

গড়িয়ে যায় মুঠোর বালি
সোনার হরিণ ছোঁয়ার জন্য
বেলা শেষে একা জানালায়
জড়িয়ে থাকে একাকীত্ব শূণ্য।

15/10/2015 



পাশাপাশি কথার সূতো বুনতে বুনতে
নক্সীকাঁথার মাঠ হয়
অবহেলায় সূতো খুলে যেতে যেতে 

তেপান্তরের শূন্যতা, নয়? 
১৪/০১/২০১৬ 



হঠাৎ একদিন মলে দেখা হয়ে গেলে 
শুভঙ্কর বললো, এসো নীরা একটু বসি
ধোঁয়া ওঠা কফির কাপ মুখোমুখি দুজন
শুভঙ্কর বলে, বড্ড মনে করি তোমাকে
আমার সারাদিনের অনেক মুহূর্তে
 মিশে আছো তুমি, নীরা 
আলতো হাসির ছোঁয়া নীরার চোখে
মিথ্যে শুনতে সত্যির চেয়ে মিষ্টি, নয় কী
কোনদিন না হয় একবার জানতে চাইতে
নীরা, কেমন আছো তুমি?

15.01.2016 



আমি জানি নীরা, কোন এক যুবক তোমার প্রতীক্ষায় আছে 
একটি বৃষ্টি ভেজা দিন কিংবা তুষার ঝরা ভোরে
তোমার কোমল হাতটি তার সবল হাতে স্পর্শ করবে বলে
আছে সে যুবক আজো তোমার প্রতীক্ষায় আছে 

১৯-০১-২০১৬



শুভ হোক নববর্ষ
মনে থাকুক হর্ষ
দুঃখ হোক ভস্ম
আনন্দের থাকুক স্পর্শ।

খাও চর্ব্য চোষ্য
সুন্দরীদের রুপ রহস্য
মাঠে সোনার শস্য
জীবনে  এক নবাদর্শ।


 ঘুচুক মন বিমর্ষ
 শুভ হোক নববর্ষ
০৪-১৪-২০১৬