মাঝখানে প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক চিত্র পরিচালকের
সিনেমার কারণে শাওন আর হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আর এক দফা হয়ে গেলো। ফেসবুক তো সব সময়
ইস্যু খুঁজে আর এগুলো হলো হিট ইস্যু, লিখলেই হিট। তখন
থেকেই কিছু কথা মাথায় ঘুরে যাচ্ছিলো, লিখবো কি লিখবো না
সেই দ্বন্দ্বে ভুগছিলাম, আগুনে ধোঁয়া দিতে
ইচ্ছে করে না, এখন তো পরিস্থিতি কিছুটা
ঠান্ডা, তাই লিখছি।
শাওন নিজে একজন স্থপতি, ভাল গান জানে, নাচ জানে, তার বাবা বাংলাদেশের নামকরা একজন শিল্পপতি এবং মা রাজনীতিতে
সক্রিয়, বর্তমানে ক্ষমতাশীল রাজনৈতিক
দলের এম।পি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শাওনের অবস্থান থেকে হুমায়ূন আহমেদের মত কোন
একজন বর পাওয়া কি খুব কঠিন ব্যাপার ছিলো?
শাওন
চাইলে কিন্তু শুধু জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক অংশটুকু বাদ দিয়ে বাকি এ সকল গুন সম্পন্ন, কিংবা দু একটা গুন আরো বেশি আছে এমন একটি পাত্র পেতে পারতো।
হুমায়ূন আহমেদ বিবাহিত ছিলো, তাঁর স্ত্রী ছিলো,
চার
সন্তান ছিলো। এসবের দায়িত্ব ছিলো তাঁর, শাওনের তো নয়। সংসার ভাঙলে হুমায়ূন আহমদে ভেঙেছে, শাওন তো ভাঙেনি। শাওনের ওপরে সবার এত রাগের কারণ কি তবে? শাওনের কারণে তো কিছু ভাঙে নি, ভেঙেছে হুমায়ূন আহমেদের প্রেমের কারণে আর এটাই যেহেতু
বাস্তবতা তাহলে তো এটা যে কারো কারনেই কি ভাঙতে পারত না? প্রেম তো একজনে আটকে থাকতো না যেমন গুলতেকিনে থাকে নি, শাওন সাড়া না দিলে অন্য কেউ দিতো, অন্য কোথাও গড়াত এই প্রেম।
হুমায়ূন আহমেদের সাথে শাওন সম্পর্ক করে অনেক
ফায়দা নিয়েছে বলে তার সমালোচনাকারীরা প্রায় সবসময়ই বলে থাকে। শাওন নিজেও প্রচন্ড
মেধাবী, এখন হুমায়ূন আহমেদ নেই, সিনেমা পরিচালনা,
ব্যবসা, সংসার সব সামলে সে নিজের দক্ষতা ও মেধার প্রমান দিচ্ছে। লাইম লাইটে শাওন আসতে চাইলে কি হুমায়ূন
আহমেদই একমাত্র রাস্তা ছিলো? এত এত মেধাবী ছেলে
মেয়ে গান গাইছে, নাটক করছে, সিনেমা করছে সবাই হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরেই এসেছে? তার হাত ধরেই সবাই সাফল্য পেয়েছে? আমার মতে এই সম্পর্কে শাওন বরং অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, পুরো দেশের রক্ষনশীল মানসিকতায় ধাক্কা দিয়েছে যার জন্যে দেশ
শুদ্ধ সবাই তার শক্র হয়েছে রয়েছে। এত তরুণ বয়েসে তিনি এখন একা, দুটো বাচ্চার দায়িত্ব তার ওপর। আর সব মেয়ের মত তারও একা
লাগা স্বাভাবিক। কাউকে চাই পাশে, এটা আমি বুঝতে পারলে
তিনি কি বোঝে না? কিন্তু তিনি চাইলেও
সহসা হয়ত কাউকে সঙ্গী করতে পারবেন না,
পুরো
দেশের কওমী জনগন আবার তেড়ে উঠবে, পাবলিক সেন্টিমেন্ট
বুঝে আবার হয়ত তাকে চরম খলনায়িকা দেখিয়ে –
ডুবের
সিক্যুয়াল তৈরী হয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে প্রায়ই আমার তসলিমা নাসরিন এর লেখাটা
মনে পরে, সকল গৃহ হারালো যার--
“আমার লেখার কারণে
শাস্তি এক আমাকেই পেতে হয়, অন্য কাউকে নয়৷ আগুন
আমার ঘরেই লাগে৷ সকল গৃহ হারাতে হয় এই আমাকেই৷”
প্রেমের কারণে শাস্তি শাওনই পাচ্ছে তবু লোকে সকাল
বিকাল তাকেই দোষে। একজন শিক্ষিতা, সুন্দরী, অসংখ্য গুনের অধিকারী,
আত্মনির্ভরশীল
মেয়েকে সমাজ কোন পর্যায়ে নিগ্রীহিত করতে পারে, শাওন তার এক উজ্জল উদাহরণ। তার নিজের কর্মের, জীবনের দায়িত্ব তিনিই নিয়েছেন কিন্তু নিস্তার নেই তার। সে তুলনায় বয়সে বড়
হুমায়ূন ধোয়া তুলসী পাতা। পুরুষ মানুষ করতেই পারে কিন্তু মেয়েরা! মেয়েরা করবে কেন?
২৭/১১/২০১৭
হুমায়ূন আহমেদ আর শাওনের সম্পর্ক সমর্থন করতে পারি না কারণ এগুলো সমাজে’র ভারসাম্য নষ্ট করে।
রিয়েলি!!!!
সৃষ্টির আদিকাল থেকে দাদার বয়সী বুড়ো’রা নাতনী’র বয়সী মেয়ে বিয়ে করে গেছে এবং আজও যাচ্ছে তার বেলায়? মুহাম্মদ (সাঃ) নিজে পঁচিশ বছরের যুবক থাকা অবস্থায় চল্লিশ বছরের খাদিজা কে বিয়ে করেছেন আর পঞ্চাশোর্ধ অবস্থায় ছয় বছরের বালিকা আয়েশা’কে বিয়ে করেছেন, সেগুলো? রাধা – কৃষ্ণ বয়সে বড় – ছোট আর সম্পর্কে মামী – ভাগ্নে, তারা পূজনীয়?
দক্ষিন ভারতে আপন ভাগ্নীকে বিয়ে করা রেওয়াজ। মুসলমানদের মধ্যেও নিকট আত্মীয় বিয়ে করা রেওয়াজ। আর রোজ দিন মামা-কাকা-দাদা দ্বারা তো শিশু নির্যাতন হয়েই চলছে, তার কি ব্যাখা আছে আপনার কাছে? এ সমস্তই নিশ্চয়ই শাওন আর হুমায়ূন আহমেদ কারণ নয়?
তবে আপনার নিজের রক্ষণশীল এই মানসিকতাও এ সমাজেরই দান।