Sunday 2 January 2011

হ্যালো ২০১১

সারা বছর দেশের জন্যে মন খারাপ থাকে। ঘোলা আকাশ, শীত, ঠান্ডা, মন খারাপ করা অন্ধকার বরফে দেশের জন্য আরো অস্থির লাগে। এই অন্ধকারকে কিছুটা মৃদ্যু করতেই বুঝিবা ক্রীসমাসে সব শপিং মল, বাড়ি, রেষ্টুরেন্টে, রাস্তায় প্রচুর টুনি বাল্ব ব্যবহার করা হয়। ক্রীসমাস এখানে পারিবারিক উৎসব। সবাই বাড়ি ফেরেন, মা – বাবা, নানী – দাদীদের সাথে দেখা করেন। খুব নিরিবিলি চুপচাপ। রাস্তায় ধরতে গেলে কোন লোক দেখা যায় না ক্রীসমাস ইভ থেকে সেকেন্ড ক্রীসমাস ডে পর্যন্ত। সবাই জেগে ওঠে আবার থার্টি ফাষ্ট ইভে। ক্রীসমাসের থেকে অনেক বেশি আনন্দ, উৎসব এবং খরচ হয় এইদিনে। বারবার একটি লাইন মাথায় ঘুরে, আজ থার্টি ফাষ্ট, আজ পশ্চিমের ঘরে ঘরে আনন্দ। সন্ধ্যে থেকে চারধারে ঠুস ঠাস, ফুশ শব্দ সাথে আলোর ঝলকানি। প্রতিটি দিন যেমনই লাগুক, এই একটি দিন নেদারল্যান্ডসে আমার খুবই আনন্দের দিন। মনে হয় না খুব খারাপ নেই, বরং ভাবি ঠিকাছে। বারোটা এক মিনিটে কানে তালা লাগানো শব্দ করে চারপাশ থেকে আতশ বাজি পুরো আকাশটাকে ঢেকে দেয়। যতোদূর দৃষ্টি যায় সারা আকাশ কখনো লাল, কখনো সোনালী, কখনো সবুজ, কখনো বড় ফুল, কখনো কল্কা বা অন্যকিছু আকৃতি।

31st_2010 193

আগে খুব মন খারাপ হতো। এরা সারা দেশে যে পরিমান বাজি পোড়ায় আর শ্যাম্পেন ঢালে তাতে বাংলাদেশের মতো একটি দেশের সারা বৎসরের হয়তো বাজেট হয়। আতশবাজি এখানে অনেক দাম। আসে চীন, তাইওয়ান থেকে। কিন্তু এখন আর এতো তীব্রভাবে মন খারাপ হয় না। আমাদের কপাল আমাদের কপাল। আমরা গার্মেন্টসে আগুন লেগে মারা পরবো, বিল্ডিং হেলে মরে যাবো, বাসে পুড়ে মরবো এই আমাদের ভাগ্য। ওরা নিরাপদে বাড়ি ফিরবে, সবাই মিলে কিছু শ্যাম্পেন এর ওর গায়ে ছিটাবে, কিছুটা খাবে, সারা আকাশ আলো করে পুরো পরিবার পাশের বাড়ি মায় পাড়ার সাথে প্রতিযোগিতা করবে বাজি পুড়াবে এটা তাদের ভাগ্য। যার যার ভাগ্য। তাই পুরো মন দিয়ে থার্টি ফাষ্ট নাইট উদযাপন করি। পুরো এলাকা ঘুরে ঘুরে প্রথমে কিছুটা সময় ফায়ার ওয়ার্কস দেখি আর বাকি সময় জানালার পর্দা সরিয়ে বসে থাকি, আকাশের রঙ বদলানোর খেলা দেখতে বড়ো ভালো লাগে। এক মূহুর্তের মধ্যে একটি বড় সংখ্যার পরিবর্তন মনের মধ্যে বিশেষ আর কোন অনুভূতি আনে না। তবে অকারন একটা ভয় থাকে, কেমন যাবে এই সংখ্যাটি? জীবন ধারাপাতে অনেক সংখ্যা অনেক সুখ দুঃখের দাগতো রেখেই যায়। তখন সামান্য সংখ্যাটি স্মৃতিময় বিশেষ সংখ্যায় রুপান্তর হয়ে যায়।

31st_2010 110

31st_2010 103

তবে থার্টি ফাষ্টের দুশমন সব দেশের পুলিশ। এবারো মাত্র তিনদিন আগে সরকার বাহাদুর আতশবাজি বিক্রি করার অনুমতি দিয়েছেন। যদিও অনেকেই পাশের দেশ থেকে চোরাই আতশবাজি নিয়ে এসেছিলেন আগেই কিন্তু সাহস করে পোড়াতে পারেননি। উঠতি বয়সের যুবা শ্রেণীকে এদেশের পুলিশও চোখে চোখে রাখে এদিন। এরা মাত্রা ছাড়িয়ে পান করেন এবং অনেক জায়গায় হল্লাগুল্লা করার চেষ্টা চালান। যদিও পুলিশের গাড়ি পাড়ায় পাড়ায় টহলে থাকে তারপরো খাপ ছাড়া কিছু মারামারি ঘটে যায়। সাধারনতঃ বার আর ডিস্কোতে মারামারির স্বাধীনতা মিলে কিছুটা সময়ের জন্যে। আতশবাজি পোড়ানোর সময় চূড়ান্ত সাবধানতা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ঘোষনা দেয়া হয় বার বার টিভি রেডিওতে। তাসত্বেও কিছু কিছু দুর্ঘটনা ঘটে যায়। হাসপাতালে সেদিন ইমার্জেন্সী বিভাগ সচল থাকে অনেক। বেশির ভাগ প্রাথমিক চিকিৎসায় ছাড়া পেলেও অনেকেই সারা জীবনের জন্য ক্ষতির সম্মুখীন হন। অনেকেরই অংগহানি ঘটে। একটা জিনিসই শুধু ঘটে না। মেয়েদের ধরে টানাটানি করার সংস্কৃতিটা এখানে নেই। হয়তো ছোটবেলা থেকে একসাথে কো এডে পড়ে বলেই মেয়েদের প্রতি অশ্লীল আগ্রহ কম। মেয়েদের মধ্যে অবশ্য মেয়ে মেয়ে ভাবও কম। কিংবা এখানে একসাথে সবাই কুংফু, ক্যারাটে, জুডো শিখে বলে জানে ধরলে উলটো খেতে হবে। তাই প্রানের মায়ায় কেউ ট্র্যাসপাচ করেন না হয়তো।

31st_2010 235

31st_2010 086

এদিনে শপিং মলগুলোতে উপচে পরা ভীড় থাকে। স্টক ক্লিয়ার সেল শুরু হয়ে যায়। কেনাকাটার ধুম চলে। পে করার লাইন লম্বা হয়ে এক কাউন্টার থেকে অন্য কাউন্টারে চলে আসে। অনেক দেশে আবার বক্সিং ডেও থাকে। যদিও অর্থনীতিবিদদের মতে ২০১১ সাল ২০১০ সাল থেকেও কঠিন যাবে। কানাডা, এ্যমেরিকায় নাগরিকরা অধের্য্য হয়ে ওঠছেন আস্তে আস্তে। তারা এ অবস্থা থেকে পরিত্রান চান। অবস্থার পরিবর্তন না হলে সরকার বিরোধী আন্দোলন কিংবা জ্বালাও পোড়াও শুরু হতে পারে। পশ্চিমের সরকাররা অনেকটা হুমকিতে আছেন। আমি ভাবছি যুদ্ধ যখন হবেই তাহলে লেটস ফাইট ডিসুম ঢুসুম। ইয়েস, ওয়েলকাম ২০১১ এন্ড ফাইট টু সারভাইভ।

তানবীরা
০২.০১.২০১১

ফটো কার্টসিঃ তানভীর হোসেন বন্ধুবরেষু

No comments:

Post a Comment