Wednesday 5 January 2011

এলোমেলো প্রেমের গল্প



 http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=01e7ce791d50156967113e7790a4e069

তখন থেকে টেবিলের ওপর মোবাইলটা নেচে যাচ্ছে। হ্যা বেজে যাচ্ছে না নেচে যাচ্ছে। তিতলি বই খুলে বসে আছে বটে টেবিলে কিন্তু সেকি পড়ছে নাকি মোবাইলকে দেখছে বোঝা যাচ্ছে না। আনমনা প্রচন্ড শুধু সেইটুকুই বোঝা যাচ্ছে। তিতলি ভীষন রেগে আছে সায়ানের ওপর। সায়ান বিকেল থেকে সামান্য বিরতি দিয়ে দিয়ে ফোন করেই যাচ্ছে করেই যাচ্ছে, কিন্তু তিতলি কিছুতেই ফোন ধরছে না। বাসায় যেনো কারো কানে না যায়, মোবাইলটাকে ভ্রাইব্রেশনে দিয়ে রেখেছে তিতলি। বিকেল থেকে কতো এসএমএস, কতো কাঁকুতি মিনতি সায়ানের, ফোনটা একবার তোল জান। না তিতলি তুলবেই না, গতো দুই দিন ধরে কি কম কষ্ট পেয়েছে সে যে এখুনি সায়ানের ফোন ধরতে হবে? সায়ানের সব সময় কাজের দোহাই, সে খুব ব্যস্ত। আর তিতলি? তিতলির কি সায়ানের ফোনের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন কাজ নেই। গতো দুদিন সারাক্ষণ মোবাইল চেক করেছে, নাই কোন ম্যাসেজ, নাই কোন মিসড কল। কাজ থাকলে কি তিতলিকে ভুলে যেতে হবে?
আজ তার সময় হয়েছে বলে কি আজই তিতলিকে ফোন তুলতে হবে। এ্যাহ কি আমার চাকুরীরে, ওনার ট্যুর পরেছে বসের সাথে। যেনো আর কেউ সরকারী চাকুরী করে না আর তাদের বসের সাথে ট্যুর পরে না। তাই বলে কি দু’মিনিটের জন্য কোন ফোন করা যায় না? অথচ সেদিন রাতে খালাতো বোনের বিয়েতে গেছে তিতলি। সারাক্ষণ ম্যাসেজ পাঠিয়ে যাচ্ছে, কখন ফিরবে বাড়িতে, অন লাইনে আসবে না আজ সে? মায়ের চোখ বাঁচিয়ে লেডিস রুমে যেয়ে তিতলিকে রিপ্লাই করতে হলো, আজ দেরি হবে ফিরতে, তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। তখন কি আলহাদ সায়ানের, তুমি আমার দুচোখে ওড়ে এসে না বসলে আমার ঘুম আসে না জান। তার দুদিন পরেই এমন আচরন!! সায়ানকে ভীষন একটা শাস্তি দিতে ইচছে করছে তিতলির, ভীষন। কিন্তু তিতলির পৃথিবীতে এমন কোন শাস্তিই নেই যা তিতলিকে না আঘাত করে সায়ানকে করে। এই যে ফোন তুলছে না সায়ানের, তিতলির কি কম কষ্ট হচ্ছে, কম কষ্ট? দুদিন পরেই টিউটোরিয়াল, পনের নাম্বার তাতে, সামনে থার্ড ইয়ার ফাইন্যাল। তাতে যোগ হবে এই নম্বর কিন্তু আজ তিনদিন হতে চললো সে পড়ায় মনই দিতে পারছে না।
ক্লাশে বসে থাকে ঠিকই, লেকচার ঢুকে না কিছুই তার কান দিয়ে। সবার চোখ বাঁচিয়ে মাঝে মাঝেই সেল চেক করে, ম্যাসেজ এসেছে কিনা। সায়ানের সাথে ঝগড়া হলে সে ঠিকমতো খেতে পর্যন্ত পারে না। মা বারবার জিজ্ঞেস করলেন আজ, ঐটুকু খেয়ে ওঠে গেলি? সামনে পরীক্ষা তাই বাঁচোয়া, নইলে বাসার সবাই ভাবতো কি হয়েছে তিতলির? কিন্তু তাতে সায়ানের কি? তারতো তিতলির মতো মনের ছাপ মুখে পড়ে না। সে মহানন্দে অফিস করে যায়। ভীষন কষ্ট হচ্ছে, কান্না পাচ্ছে এখন, তিতলী নিজেকে সামলানোর জন্য পিসিটা অন করলো। ভাবলো কিছুক্ষণ গেম খেললে হয়তো মনটা একটু হাল্কা হবে। তারপর ঠিক করে মন দিয়ে পড়তে বসবে। করবে না করবে না ভেবেও কখন যেনো মেসেঞ্জারে লগ ইন করে ফেললো। আর যায় কোথা, সায়ান ওকে ধরে ফেললো। এই এক সমস্যা তিতলির, সায়ান পাশে থাকলে তার মাথা আর হৃদয় আলাদা ভাবে কাজ করে না। সায়ান তার মাথার বারোটা বাজিয়ে ফেলে। মাথা অফ হয়ে শুধু মন কাজ করতে থাকে তার। যেভাবেই হোক, যতো কান্ডই ঘটুক সায়ান তাকে ঠিক বুঝিয়ে ফেলবে। সে কিছুতেই আর রাগ করে থাকতে পারবে না।
তিতলি কেঁদে কেটে তারপর এক সময় আবার সব ভুলে যাবে। হাঁদা সায়ানটা এসে লাইব্রেরীর সামনে দাঁড়ালে তিতলি ওর সাথে না যেয়ে কিছুতেই পারে না। কতো ভাবে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করে, কোন দিকে তাকাবেই না সোজা লাইব্রেরীতে ঢুকবে আর বেড়োবে কিন্তু লাইব্রেরীর কাছাকাছি আসতেই তার অবাধ্য চোখ দূর থেকে কাকে যেনো খুঁজতে থাকে। সায়ান পাশে এসে খুব নরম গলায় যখন ডাকবে “জান, কেমন আছো” তখন তিতলি আর এড়াতে পারে না। সব ভুলে সায়ানের হাত ধরে সে ওড়তে থাকে। আর ভিতরে ভিতরে তিতলি জানে, সায়ানও জানে তার এই দুর্বলতার কথা। যখন অভিমানের তীব্রতা কমে যায় তিতলি অনেক সময় নিজেও খুঁজে পায় না কি নিয়ে সে এতো রেগে গেছিলো। হ্যা, তিতলি স্বীকার করে তার রাগের কারন গুলো হয়তো খুবই সামান্য কিন্তু এই পৃথিবীর সবার কাছ থেকে পাওয়া সব আঘাত সইতে পারলেও সায়ানের কাছ থেকে সামান্যের থেকে সামান্য অবহেলাটুকুও সে সইতে পারে না। এই পৃথিবীর কারো কাছে সে হয়তো কিছুই না কিন্তু কোথাও একজন আছে যার তিতলির গলা না শুনলে ভোর হয় না, তি্তলির ম্যাসেজ না পেলে যে ঘুমাতে পারে না, মন দিয়ে অফিস করতে পারে না। তিতলিকে ঘিরে কারো দিন ও রাত আবর্তিত হয়, এই অনুভূতিটা কি কম? শুধু এই অনুভূতিটাই তিতলিকে দিন রাত হাওয়ায় ভাসিয়ে নিয়ে চলে।
মেসেঞ্জারে টুকটুক করে সায়ানের সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে রাত তিনটা বেজে গেলো টেরই পেলো না তিতলি। সায়ান তাগাদা করলো ঘুমকাতুরে তিতলিকে শুয়ে পড়তে। সকালেই ক্লাশ আছে। ঠিক করে না ঘুমালে মন দিয়ে লেকচার শুনতে পারবে না। তিতলির পড়াশোনার ব্যাপারে খুবই সজাগ দৃষ্টি তার। তার জন্যে যাতে তিতলির পড়া নষ্ট না হয় সেদিকে খুব খেয়াল রাখে সায়ান। কথা শেষ করে শুতে যাচ্ছে, মশারি গুঁজছে এমন সময় মোবাইলটা আবার নড়ে ওঠলো, সায়ান আবার। কৃত্রিম রাগ গলায় এনে তিতলি আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করলো, আবার কি? নরম গলায় হাসতে হাসতে সায়ান বললো, ম্যাসেঞ্জারে কথা বলে কি মন ভরে? আজ তিন দিন হলো তোমার গলা শুনি না জান। তোমার গলা না শুনতে পেলে আমার কি রকম অস্থির লাগতে থাকে জানো না তুমি? এখন আমার সুন্দর ঘুম হবে, মিষ্টি একটা স্বপ্ন দেখবো তোমাকে নিয়ে। তিতলির গলা আবার ভরে এলো অভিমান, গতো দুদিন কি সেটা তোমার মনে ছিলো না? সায়ানের মতো অতো সুন্দর করে গুছিয়ে না বলতে পারলেও তিতলিরতো তাই হয়, সেটা কি সে বুঝতে পারে না? ভালোবাসা আর অভিমানের দোলাচলে এক মিষ্টি মিশ্র অনুভূতি নিয়ে ঘুমাতে গেলো তিতলি।
তানবীরা
০৫.০১.২০১১

No comments:

Post a Comment