Friday 10 June 2011

জীবন থেকে নেয়া ------ (ফালতু)

বহুদিন কিছু লেখার সময়, শক্তি, ইচ্ছে, বিষয় কিছুই পাচ্ছি না। আজকে কোন এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু অন্য ঘটনা মনে পড়ে গেল, ভাবলাম তাই ব্লগাই। হল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে কোন ডাইরেক্ট ফ্লাইট নেই। দূরত্বও মন্দ না। আগের মতো এক টিকেটে দুই সীটের ব্যাপারও নাই। তাই পা ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে দশ বারো ঘন্টা বসে দেশে যেতে যেতে দেখা যায় পায়ে পানি এসে পা ফুলে গেছে। কোন এক অজানা কারণে এশিয়ান হিউমিডিটি বা অন্য ব্যাপারে প্লেন থেকে নামার আগেই ফুলে যাই। একবার একটু বেশিই হলো। পা পুরা হাতির পা। কোন স্যান্ডেল পায়ে ঢুকে না। এমনকি আব্বুর জুতাও না। আম্মি অনেক চিন্তিত আমাকে নিয়ে। আমি যতই বলি কিছু না, ততোই তিনি গোস্বান। দেশের ডাক্তারের চেম্বার দেখলে আমার মৃত্যুভয় লাগতে থাকে। আমি এগুলো এড়াতে চাই। কিন্তু আমার মায়ের ধারনা আমি নিজের কোন যত্ন নেই না, বিদেশে পইড়া থাকি আর গাবাই। তাই তিনি আমাকে ধরে বেঁধে তার পোষা বারডেমের ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন। ডাক্তার বেশ চ্যাংড়া এবং স্মার্ট। প্রথমে আমাকে অনেক খাতির করলেন, তুমি তুমি করে বললেন। তারপর তার প্যাড বের করে বয়স জিজ্ঞেস করলেন, আমি বললাম। তিনি গরুর চোখ সরু করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ তারপর গলা কাশি দিয়ে আপনি আপনি উন্নিত হইলেন।

তিনি এরপর তার মনের সাধ মিটিয়ে আমাকে এই টেষ্ট সেই টেষ্ট সব করতে দিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম কেইসটা কি? তিনি বললেন, আমার কিডনী কাজ করছে না ঠিকমতো আর ব্লাড সার্কুলেশন সমস্যা তাই পা ফুলে আছে এমন। এরপর দিন ভোরে কমফোর্ট নিয়ে গেল ভাইয়া টেষ্ট করাতে। আলট্রাসোনো করাতে হবে। সে কারণে মা ভোরে ঘুম থেকে টেনে তুলছে। আমি আবার লেট টু বেড এন্ড লেট টু রাইজ থিওরীতে বিশ্বাসী। আর ছুটিতে ভোরে ওঠা!!!! যাহোক দেড় লিটার বিশুদ্ধ পানি খেতে হল, আলট্রাসোনোর জন্যে। কমফোর্টে বসে আছি আর মনে মনে সিরিয়ালের ক্ষ্যাতা পুরছি কিন্তু আমার নাম্বার আর আসে না। ডায়পার পড়ি নাই। কোনসময় কোন দুর্ঘটনা ঘটে সেই টেনশন। আমি খালি মোচরাই। ভাইয়া জানে, আমি রাস্তার খাবারের দারুন ভক্ত। সে আমার মন ডাইভার্ট করার জন্যে খাবারের লোভ দিতে লাগলো। পাশেই জিঞ্জিরা হোটেল। সেইরকম সব ঝোল তেল মাখামাখা ভাজি, ডাল, পুরী পাওয়া যায়। এখানের কাজ শেষ হওয়া মাত্র সেখানে আমাকে নিয়ে ঝাপিয়ে পড়বে সেই আশ্বাস দিতে লাগলো। গোঁদের ওপর বিঁষ ফোড়া এক নতুন মোচ গজানো ছাগল সামনে প্রথম আলো নিয়ে পি।এইচ।ডির ভাব দেখাইতে লাগলো। আবার মোবাইল নিয়ে আমাদের পাশ দিয়ে বারবার হাটে আর কথা কয়, মোবাইল টিপে ফুটানী ঝাড়ে, দুই পয়সার মোবাইল কি খাইবো না মাথায় দিব তাই বুঝতেছে না। আমি সকালে আউলা ঝাউলা অবস্থায় পোলার এই দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা সহ্য করতে পারছিলাম না। ভাইয়ারে বললাম, সমস্যা কি? চড় দেই? ভাইয়া হাসতে হাসতে বললো, দিতে পারলে দিয়া ফেল।

হেতার গালে চড় কষানোর অদমিত ইচ্ছা মনে পুষে রাখলাম। তারপর ফন্দী এটে গেলাম, সিরিয়াল ডাকেন যে, সেই ম্যাডাম আপার কাছে। বললাম, আপা বাসা থেকে সমানে ফোন আসতেছে, আমার গ্যাঁদা বাচ্চা কানতেছে। আমারে যদি একটু দয়া করে কাইন্ডলি আগে দিতেন। ম্যাডাম আপা, ভুরু কুঁচকে আমাকে জরিপ করে বললেন, আপনের বাচ্চা মানে কি? আপনের বিয়া হইছে? আমিও আর তখন মেজাজ সামলাতে পারি নাই। সকালের ঘুম শ্যাষ, বেলা হইতেছে জিঞ্জিরার নাস্তা শ্যাষ, ঐ পুলার ক্যাঁদরানি আর নিম্নচাপতো আছেই। বলছি, জ্বীনা বিয়া হয় নাই তবে বাচ্চা হইছে। বিয়ের আগে বাচ্চাতেতো কোন সমস্যা নাই। না আছে? ম্যাডাম আপা, রাগে চিরবির করে আমারে বললেন, জায়গায় যেয়ে বসে থাকেন, সিরিয়াল আসলে ডাকবো।

বহুদিন হীরার দেশে আছি কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোন হীরার গয়না নেই আমার। একটা সেই ধরনের ফোর সি এর হীরার গয়নার আমার খুব শখ। আমি খালি নেটে দেখি আর পড়াশুনা করি এর ওপর। যতোই পড়ি ততোই বাজেট যায় বেড়ে, এই দুমূল্যের বাজারে। বাসার ওনি খালি মোচরান। পরে বললেন, কোন একটা বিশেষ উপলক্ষ্যে তিনি এই আবেদন বিবেচনা করবেন। গরীবের বাড়িতে উপলক্ষ্য সহসা আসে না। মেয়ে হওয়ার পর তিনি ভাবলেন, এবার কিছু বিবেচনা করা যায়। আমরা এন্টওয়ারপেন গেলাম ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার জন্যে। বিভিন্ন রকমের ছাঁটের পাথর গুতাগুতি করে ফাইন্যালি একটা ফাইন্যাল করলাম। তিনি বেজার মুখের ক্রেডিট কার্ড বের করে পয়সা দিলেন। দোকান মালিক জিউ ভদ্রলোক তখন সত্যি বিশ্বাস করলেন এই বাদামি চামড়ার লোকজন খালি হাতাহাতি করে রেখে চলে যাবে না। তিনি তার মুখের অমূল্য হাসি প্রদান করে আমার দিকে হাত বাড়ালেন, হ্যান্ডশেক করার জন্যে। আমি বুঝি নাই। আমি হাত দিলাম। তিনি ফ্লেমিস, ফ্রেঞ্চ আর ইংরেজি মিশিয়ে বললেন, কনগ্র্যাচুলেশনস ইন এডভান্স। বিয়ের ডেট কবে ঠিক করেছো? একা আংটি কিনতে আসছো যে? ফিয়াঁসেকে কেনো সাথে নিয়ে আসো নাই। খুব মানাবে এই আংটি তোমাকে। পাশের জন মুখ কালো করে দোকানের জানালা দিয়ে বাইরের আকাশ দেখছে। আমি খুঁকখুঁক কেশে বললাম, বহুদিন আগে এই বিল প্রদানকারীর সাথে আমার শুভ পরিনয় সুসম্পন্ন হইয়াছে, এখন কন্যা হইয়াছে। কন্যাকে ডেকেয়ারে রাখিয়া আমরা কেনা কাটায় বেরিয়েছি।

এইবার নন্দনে গেলাম। অনেক গরম দেশে। ঘুরাঘুরি শেষ দিয়ে যেয়ে লম্ফ দিয়ে আমরা পানিতে নামলাম। অনেক ভীড় পানিতে। দুইটা চ্যাংড়া দেখি আমাদের টার্গেট করে পানির মধ্যেই এদিক সেদিক ঘুরে। আমরা আছি আমাদের মতো। আমাদের কাছে পাত্তা না পেয়ে আমার মেয়ের সাথে পুটুর পুটুর গল্প করতেছে। সুইট বেবি, কি নাম তোমার? কি পড়ো? আমার মেয়ে আলহাদে বুঝতেছে না কি করবে। তারপর চ্যাংড়া জিনগায়, তোমার মা কোনটা? আমার মেয়ে আমার কাপড়ের রঙ, চুলের বাহারের বর্ননা দিয়ে দেখাইতেছে তার মা কোনটা এই দলের মধ্যে। আমি আনতে গেছি আমার মেয়েরে, তখন এক চ্যাংড়া থতোমতো খেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে, আপু আপনার বিয়ে হইছে? এইটা আপনার মেয়ে?

তানবীরা
১১.০৬.২০১১

No comments:

Post a Comment