Thursday 26 March 2020

“তবুও বৃষ্টি নামে”

নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ,
অন্তরে অতৃপ্তি রবে, সাঙ্গ করি মনে হবে- শেষ হইয়াও হইলো না শেষ..."
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
“তবুও বৃষ্টি নামে” নূরুন নাহার জুঁই যাকে আমরা ছোট করে ডাকি জুঁই, এর লেখা ছোট গল্প সংকলন। ওপরে উল্লেখ করা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার সার্থক রুপায়ন। ছোট জুঁইয়ের লেখা বইটির কলেবরও ছোট, প্রচ্ছদ, সূচী, উৎসর্গ সব মিলিয়ে মাত্র সাইত্রিশ পৃষ্ঠা। গল্প আছে মোট সাতটি। কেউ যদি ভাবেন, এক ঘন্টা কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করবেন, এক কাপ ধূমায়িত গরম পানীয় নিয়ে বসে যান, “বিফলে মূল্য ফেরত” গ্যারান্টি।
প্রতিটি গল্পেই টুইস্ট আছে। ঝরঝরে বর্ননা, গল্পের নির্মান, পড়তে কোথাও থামতে হবে না, ধাক্কা খেতে হবে না। ধাক্কা থাকবে প্রতিটি গল্পের শেষ লাইনটিতে। যেমন, বইয়ের দ্বিতীয় গল্পটি “পরিপ্রেক্ষিত” তাতে বাসে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুই পুরনো বন্ধুর দেখা হয়, যারা এখন সম্পর্কে “দেবর-ভাবি”। ক্লান্তি কাটিয়ে দুই বন্ধু জমে ওঠে ফেলে আসা দিনের গল্পে। এ পর্যন্ত পড়লে মনে হবে একটা জাস্ট গল্প পড়ছি, তারপর জুঁইয়ের ভাষায় লেখা শেষ বাক্যটি, “বাসায় ফিরে যখন ফাল্গুনী বরকে শোনাচ্ছিল দেবরের সাথে দেখা হবার গল্প, কিংবা রুদ্র ফোনে মার সাথে বলছিল ভাবীর সাথে দেখা হবার কথা, তখন দুজনের কেউ কি জানতো, ঠিক ঠিক বারো বছর আগে দুজনের কেউ একজন আর অল্প একটু সাহসী হলে আজকের গল্পটা হয়ত অন্যরকম হতো?” তখন আবার অন্য ভাবনা কি মাথায় আসে না? কল্পনা অনেকদূর ডানা মেলে দেয় না?
পাঠকের পছন্দের বিচারে আমার কাছে সবচেয়ে মিষ্টি লেগেছে সবচেয়ে কলেবরে ছোট গল্পটা “কথার গান”। আবারও সেই শেষ বাক্যটিই, “মানুষ যা চায়, তার সব কিছু যে এক জীবনে পাওয়া হয় না!”
অনেক অনেক ধন্যবাদ জুঁই, বইটি আমাকে উপহার পাঠানোর জন্যে। পড়ে ফেলেছি অনেক আগেই প্রায় এক নিঃশ্বাসে কিন্তু রিভিউ লিখতে দেরী হলো, চিরাচরিত সেই আলসেমী। রেগে যাবে না, সেই আশা ছিলো। ভালবাসা অফুরান তোমার জন্যে, তোমার উত্তরাত্তর সাফল্য কামনা করছি। আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশী পরিবারে তুমি নতুন সদস্য, নেদারল্যান্ডস বসবাস আনন্দদায়ক হোক।


No comments:

Post a Comment