Thursday 23 April 2020

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – ৪ (এপ্রিল)


ষোলই মার্চের পর একুশে এপ্রিল প্রিমিয়ে রুতে আবার টিভিতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষন দিলেন। বেশির ভাগ মানুষ যদিও অন্য কথা শুনতে চাইছিলো, কিন্তু তিনি সবার আশায় বাসন মাজা পানি ঢেলে দিয়ে গেলেন। সবাইকে তিনি আবারও এনশিওর করলেন, ভাইরাস সবাইকে আঘাত করবে, কেউ রক্ষা পাবে না। কিন্তু সময় নিতে ও দিতে হবে। হসপিটালগুলো মাত্র রোগী, সরঞ্জাম আর কর্মীদের সামঞ্জস্য ফিরে পেতে শুরু করেছে, কারণ আমরা সবাই বাড়ি আছি। যদি বাড়ি না থাকি তাহলে সামঞ্জস্য নষ্ট হবে, আবার চাপ পরবে যার ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে আর সেটা হবে বোকামি। আমাদের এমন কোন পদক্ষেপ নেয়া ঠিক হবে না যার জন্যে পরে আমরা সবাই আফশোস করি। একজন করোনা রোগী যতটুকু গুরুত্বপূর্ণ, একজন ক্যান্সার পেশেন্টও সমান গুরুত্বপূর্ণ, সবার চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগটুকু রাখতে হবে। করোনার কারণে অন্য অপারেশান, অন্য জরুরী চিকিৎসা যেমন হার্ট, লাংগস এগুলো তো দিনের পর দিন বন্ধ রাখা যাবে না। তাই সবার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে বাড়ি থাকার বিকল্প এ মুহুর্তে নেই।

প্রিমিয়ে রুতে আর তার বিশেষজ্ঞরা এই ক্রাইসিস পিরিওডকে পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করেছে। যার প্রথম ভাগ হলো শিক্ষা। মে ভ্যাকেশান শেষ হলে, এগারোই মে থেকে প্রাইমারি স্কুল শুরু হবে। বিগত মাসের অবজার্ভেশানে দেখা গেছে, বারো বছর পর্যন্ত বাচ্চারা এই ভাইরাসে তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় নি। তাদের সোশ্যাল ডিসটেন্স ততোটা না মানলেও চলবে। প্রাইমারি স্কুলের সাথে ডে কেয়ারও খুলে যাবে। তবে নিয়ম হবে, একদিন অর্ধেক বাচ্চা স্কুলে আসবে তারপর দিন বাকি অর্ধেক। যেকোন ধরনের হাঁচি, কাশি, সর্দি, জ্বরে পরিবারের সবাইকে বাড়ি থাকতে হবে। স্কুলের টিচার, ডে-কেয়ারের কর্মীরা সবাই করোনা টেষ্টের ক্ষেত্রে মেডিক্যাল কর্মীদের মতো অগ্রাধিকার পাবে এবং তাদেরকে প্রায়ই টেষ্ট করানো হবে। আর প্রাইমারি স্কুল যেহেতু বাড়ির পাশেই থাকে, বাচ্চারা হেঁটেই যায় সেক্ষেত্রে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের ওপরও কোন চাপ থাকবে না। যেসব বাবা-মায়েরা বাড়িতে থেকে কাজ করছে, ছোট বাচ্চার কারণে কাজে সমস্যা হচ্ছে তাদের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত। স্কুল খোলার রেটের সাথে ডে কেয়ার তার রুটিন ও ক্যাপাসিটি এডজাস্ট করবে। হাইস্কুল বন্ধ থাকবে পহেলা জুন পর্যন্ত। তাদের দেড় মিটার সোশ্যাল ডিসটেন্স মেনে চলার বাধ্যবাধকতা থাকবে, স্কুলকে সে হিসেবে সব এরেঞ্জ/রিএরেঞ্জ করতে হবে।

মেঘ যথারীতি ত্যান্ডাই ম্যান্ডাই শুরু করলো, আমি কোথাও যেতে চাই, আমি বন্ধুদের সাথে কোথাও যেতে চাই।
আমি বললাম, চলো সাইকেল চালিয়ে আসি, প্রিমিয়ে তো বলেছে, সাইকেল চালাতে বাঁধা নেই।
মেঘ, তোমাকে আমি রোজ দেখছি, তোমার সাথে যাবো না।
আমি বললাম, বাহ! আর আমি যে রোজ তোমাকে রেঁধে খাওয়াচ্ছি তার বেলায়!
জানি তবুও, আমি অন্যদের সাথে কিছু করতে চাই।
তখন বললাম, আমরা যারা বাসায় থেকে “ভাল লাগে না” বলে কমপ্লেইন করি, তাদের আসলে ভাইরাসে না, লজ্জায় মারা যারা উচিত। হসপিটালে কিংবা মেডিক্যাল সেক্টরে যারা দিনরাত কাজ করে কুলাতে পারছে না, তাদের কথা ভাবার কি এখনও আমাদের সময় আসে নি? তাদের ভ্যাকেশান কোথায়? তাদের পরিবার, ছেলেমেয়ে?
প্রিমিয়ে তো বলেছে, সবাই একবার করোনা পাবে, না মানে বেশিও পেতে পারে, তাহলে বাইরে গেলে প্রব্লেম কি?
বললাম, যা, বাইরে যা, যেয়ে ফাইন খেয়ে আয়।

প্রায় বারোশো লোককে নিয়ম ভাঙার দায়ে জরিমানাও করা হয়েছে।

স্কুল মেইল করেছে, পহেলা জুন স্কুল শুরু হলেই সবাইকে স্কুলে যেতে হবে না। যারা পড়াশোনায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল, যাদের দরকার বেশি, শুধু তারাই স্কুলে যাবে, বাকিরা অনলাইনে লেসন ফলো করবে। কেউ যদি স্কুলে আসতেই চায় সেটা আলাদা কথা। পনেরই জুন থেকে ফাইন্যাল
এক্সাম হবে, এবার দু’সপ্তাহ ধরে এক্সাম হবে, দেড় মিটার সোস্যাল ডিসট্যান্স মেইনটেইন করে। মানুষ দ্রুত দৌড়াতে চাইলেই হবে না, ন্যাচার হ্যাজ স্লো ডাউন দ্যা প্রসেস।

দুই নম্বরে আছে, স্বাস্থ্য। এখন যেহেতু সবাই বাড়ি আছি, স্বাস্থ্য সচেতন থাকা সবার জন্যেই খুব জরুরী। সবাইকে হাঁটতে, দৌড়াতে, সাইকেল চালাতে বলা হয়েছে, যার যেটা ইচ্ছে তবে একা একা। কারো সাথে নয়। বারো বছর পর্যন্ত বাচ্চারা এক সাথে খেলতে পারবে, টীম করে তাদের খেলা অনুশীলন করতে পারবে তবে কোন টুর্নামেন্ট এরেঞ্জ করা যাবে না শুধুই অনুশীলন। বারো থেকে আঠারো বছর পর্যন্ত বাচ্চারা দেড় মিটারের দূরত্ব বজায় রেখে টীমে খেলা অনুশীলন করতে পারবে কিন্তু পহেলা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন টুর্নামেন্ট হবে না।

তৃতীয়তে রেখেছে অনুষ্ঠান, পহেলা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আপাতত সব অনুষ্ঠান বন্ধ। পরবর্তী সময়ে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু ভ্যাকেশান নিয়ে কিছুই বললেন না। সন্ধ্যা সাতটায় প্রিমিয়ে রুতে ভাষণ দেবেন, টিভি ছেড়ে বসে আছি, নানারকম ভ্যাকেশানের এড দেখাচ্ছে, আমি তো ভাবলাম, হয়ত সুদিন সামনে আসছে, নইলে এই দুর্দিনে পয়সা খরচা করে কেন ওরা টিভিতে বিজ্ঞাপন দেবে। কিসের কি, স্পিকটি নট এবাউট ভ্যাকেশান। পুরা ডাচ ইউনিক কায়দা। খারাপ খবর যত দেরীতে দেয়া যায়, হাউকাউ তত কম হবে। ধরেই নেয়া যায়, ইউরোপ তার বর্ডার বা রিক্রেয়াশান পার্ক ইত্যাদি কিছুই খুলবে না, সো নো “সামার ভ্যাকেশান”। প্রিপেয়ার ইয়োসেলফ ফো “স্টেকেশান”। উইন্টারে কোথাও যাই নি, স্প্রিঙ্গে আর সামারে যাবো বলে, এই শিক্ষা হলো, আর কিছু ফেলে রাখবো না। যখনের ভ্যাকেশান তখনই করে ফেলবো। প্রিমিয়ে আবার বিশে মে টিভিতে আসবে, আগেও হতে পারে যদি উল্লেখযোগ্য কিছু থাকে, পরবর্তী করনীয় জানাতে। মনে হচ্ছে, প্রতি মাসেই একবার আসবে আপডেট নিয়ে।

সুরক্ষিত কোন উপায় পাওয়া না পর্যন্ত সব ধরনের বিউটি, চুল, নখের সেলুন আপাতত বন্ধ। সুরক্ষিত উপায় খুঁজে পাওয়ার জন্যে চেষ্টা করা হচ্ছে। পাওয়া গেলেই পরবর্তী নির্দেশনা আসবে বলেছে চার নম্বর পয়েন্ট। রেস্টুরেন্ট, বার, থিয়েটার যথারীতি বন্ধ আছে এবং থাকবে। যাদের কালো ইনকাম ছিলো তাদের এখন লাগগায়ি ওয়াট। যতটুকু সরকারকে দিয়েছে ততটুকুই ক্ষতিপূরণ দাবী করতে পারবে, যা কোনদিন দেয় নি তার কোন দাবীও নেই। দাঁতের ডাক্তার বন্ধু বললো, তারা তাদের প্র্যাক্টিস শুরু করবে, নিয়ম এসেছে সরকারের কাছ থেকে, বারবার সবাইকে এপ্রণ এবং আদার এক্সেসারিজ পরিবর্তন করতে হবে, একজন পেসেন্ট এর ট্রিটমেন্ট এর পর পয়তাল্লিশ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে, তারপর সারা রুম পরিস্কার করে, মেঝে অব্ধি পরিস্কার করে পরবর্তী পেসেন্টকে ডাকা যাবে, গড সেইভ দ্যা কিং।

আর পাঁচ নম্বরে আবারও বলা হলো, স্টে এট হোম, ওয়ার্ক ফ্রম হোম, একা বাজারে যাও, একা হাঁটতে বের হও, নিজে সুরক্ষিত থাকো, অন্যকে সুরক্ষিত রাখো। সতের মিলিয়ন মানুষকে একসাথে কাজ করতে হবে, সরকারের পক্ষে একা সম্ভব না। সবাই সহযোগিতা করছে বলেই স্থিতি এসেছে, এখন স্থিতি ধরে রাখা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রোজ গড়ে একশো জনের ওপর মারা যাচ্ছে, কোথায় স্থিতি এসেছে বলে বারবার বললো কে জানে।
ওয়ার্ক ফ্রম হোম শুনে আমি পার্সোনালি রিলিভড ফীল করেছি। ঘুম থেকে উঠে নীচে এসে ল্যাপি অন করে চা বানাই, ফোন টিপি, নিউজ দেখি, তারপর নাস্তা বানাই, দাঁত ব্রাশ করি, বিছানা গুছাই কি আরামের দিন যাপন। মাঝখানে দু’দিন সকালে অফিস যেতে হলো, ঘুম থেকে উঠেই ব্রাশ করো, জামা কাপড় বদলাও, রেডি হও, সাইকেল বের করো, দরজা লক করো আর করো তাড়াহুড়া দৌড়াদৌড়ি। মানুষ সবকিছুতেই অভ্যস্ত হয়ে যায়, এই বাড়ি থাকা, রান্নাবান্না, মুভি দেখা এতেও অভ্যস্ত হয়ে গেছি বেশ। নাকি মেয়েরা অনেক বেশি মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা নিয়ে জন্মায় কে জানে। প্রথম প্রথম সপ্তাহান্তের আড্ডা মিস করা বাদ দিলে, আমি স্টে এট হোম মোটামুটি এঞ্জয় করেছি বা করছি বলা চলে, যদিও এঞ্জয় করছি বলা হয়ত এ সময়ে সুন্দর নয়।

সুখ নাই হতভাগা দিল ম্যায় - সুখ থাকে সব রঙিন ফ্লিমে

অনলাইন অর্ডারে উন্নতি হয়েছে, এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যেই ডেলিভারী দিচ্ছে। ডাচ আর চায়নীজ সুপার মার্কেট পরিস্কার ট্রলি দিলেও, টার্কিশ, এরাবিয়ান, ইন্ডিয়ান সুপার মার্কেটে এসবের কোন বালাই নেই। অনেকেই ফেবুতে লিখছে, করোনা শেষ হলে প্রথমে কি করবে? আমি জানি প্রথমে কি করবো, হেড না টেল টস করবো, ঢাকা না নিউইয়র্ক? মন আর প্রাণ দুটোই ছুটে গেছে। পরিবারের বাইরে থাকার জন্যে এক বছর অনেক লম্বা সময়।এরপর পরিবারের সান্নিধ্যে মাস্ট।


(ক্রমশ)

No comments:

Post a Comment