Tuesday 5 May 2020

দর্শকের চোখে ‘একজন ঋষি কাপুর’

“ঋষি রাজ কাপুর” যিনি “ঋষি কাপুর” নামেই পরিচিত, নামটি শুনলেই প্রথমে যে সিনেমাটি চোখে ভাসে সেটি “চাঁদনী” (১৯৮৯)। তার কারণ সম্ভবতঃ দুটো, আমার বয়স আর শ্রীদেবী। তখন আমি কিশোরী, রোমান্টিক মুভির প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ আর শ্রীদেবী আমার যারপর নাই পছন্দের নায়িকা।  যতদিন গেছে, বড় হয়েছি, চিন্তা-ভাবনা পরিবর্তন হয়েছে, অনেক পছন্দ-অপছন্দও পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু কেমন করে যেনো ছোটবেলার ভালোলাগা গুলো চিরস্থায়ী রয়ে গেছে, বদলায়নি।
সিনেমা হিসেবে “চাঁদনী” কেমন তার চেয়ে অনেক বেশি টেনেছে সুইজারল্যান্ডে ঋষি আর শ্রীদেবীর শ্যুট করা গান, “তেরে মেরে হোটো পে”। 
যখন সিনেমা বলতে জানি নাচ, গান, মারামারি, চকচকে ঝকঝকে পোষাক, তখন ভিসিআরে আসতো, জিতেন্দ্র-শ্রীদেবী (আশা-কিশোর) তাদের “পম পম মামা মিয়া” (জাস্টিস চৌধুরি), কিংবা (কিশোরের গলায়) “রামা রামা রামা রে” (মাওয়ালি) নিয়ে, আর (সাব্বির কুমার আর শৈলেন্দ্র সিং) অভিতাভ-ঋষি কাপুর, লাম্বুজি লাম্বুজি, বলো টিংগুজি (কুলি ১৯৮৩) নিয়ে। হিন্দি ভাষা তখন ঠিক করে না বুঝলেও সিনেমা দেখে, লাম্বুজি আর টিংগুজি শিখছি। তখন চলছিলো এরকম জুটি বেঁধে সিনেমা করার ফ্রেমড গল্প, নাসীব, কুলি, অমর আকবর এন্থনি ইত্যাদি ইত্যাদি। আশির দশক মানেই, ঋষি, অভিতাভ, বিনোদ আর তাদের পর্দা কাঁপানো মারামারি, ছদ্মবেশ দিয়ে শত্রুকে ঠকানো আর নায়িকাদের সাথে গানে গানে রোমান্স। অমর আকবর এন্থনি ছবিতে নিতু সিং এর সাথে অভিনয় করা কাওয়ালি, পর্দা হি পর্দা এখনো সকলের মুখে মুখে ফেরে। তিনি আর নিতু সিং সম্ভবত একমাত্র সফল দম্পত্তি যারা একটার পর একটা জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন। “স্বামী-স্ত্রী” নায়ক-নায়িকা হলে সেই সিনেমায় দর্শকদের আগ্রহ নেই বা কম এই বাক্যটি তাদের বেলায় অন্তত ভুল প্রমাণ হয়েছে। তাদের একসঙ্গে বারোটি পর্দা সফল সিনেমা আছে। 
দুনিয়া (১৯৮৪) সিনেমাতে ঋষি কাপুরের “তু চান্দ নাগার কি শেহজাদি” হাম কিসিসে কাম নেহি (১৯৭৭) ক্যায় হুয়া তেরা ওয়াদা, কাভি কাভি (১৯৭৬) সিনেমায়, তেরা ফুলো জ্যায়সা রাঙ, এক ম্যায় আওর এক তু ছিলো খেল খেল ম্যায় (১৯৭৫) সিনেমা থেকে। আশির দশকে ডিস্কো ড্যান্সার (১৯৮২) সিনেমা দিয়ে মিঠুন চক্রবর্তী নায়কদের এক্টিভ ডান্স নিয়ে আসেন পর্দায়। সেই ধারাবাহিকতায় ঋষিও নাচেন কিশোর কুমারের প্লে ব্যাকে, বাঁচনা ইয়ে হাসিনো, হাম কিসি সে কাম নেহি সিনেমায় এবং গান, নাচ ও ঋষি সবই ছিলো ব্লক বাস্টার হিট।
যখন ঋষি কাপুর এসব ফ্রেমড সিনেমায় অভিনয় করছিলেন, তখনই তার বাবা রাজ কাপুরের পরিচালনায় অভিনয় করেন, “প্রেমরোগ” (১৯৮২) সিনেমায়, নায়িকা পদ্মিনী কোলাপুরে। কসমোপোলিটান ম্যাগাজিনের টপ টেন “মোস্ট রোমান্টিক ফিল্মস এভার” এ “প্রেমরোগ” এনলিস্টেড। অনেকের মতে সামাজিক বিষয় নিয়ে রাজ কাপুরের প্রত্যাবর্তন ও ছিলো এই সিনেমাটি। উঁচু ঘরের বিধবা মনোরোমার সাথে গরীব অনাথ দেবধরের প্রেম নিয়ে এই সিনেমা। রাজ কাপুর (শ্রেষ্ঠ পরিচালক)  ঋষি কাপুর (শ্রেষ্ঠ অভিনেতা) আর পদ্মিনী কোলাপুরে সতের বছর বয়সে (শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী) হিসেবে সে বছরের ফিল্ম ফেয়ার এওয়ার্ড জিতেছিলেন।।
ফ্রেমড সিনেমার বাইরে ছিলো “সারগাম” (১৯৭৯) জয়াপ্রদার দক্ষিনী সিনেমা “শ্রী শ্রী মুভা”র হিন্দী ভার্সন। এই সিনেমার গানগুলো সুপার-ডুপার হিট ছিলো এবং আছে। “ডাফলিওয়ালে ডাফলি বাজা” কাশ্মীরে শ্যুটিং করা হয়, গোদাভারী নদীর কাছে “কোয়েল বলি দুনিয়া দোলি” শুট হয়। লোকেশান, কাহিনী, নায়ক-নায়িকা সবাই মিলে উপহার দেয় আরও একটি স্মরণীয় সিনেমা।
আশির দশকের হার্ট থ্রব এই নায়ক, যেমন রোমান্টিক চরিত্র, তেমনি কমেডি কিংবা এংরি ইয়াং ম্যানের চরিত্রেও মানিয়ে যেতেন। দো দোনি চার, ইনা মিনা ডিকা আর হালের কমেডি ছিলো অমিতাভ বচ্চনের সাথে একশো দুই নট আউট। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এরকম ভালমানুষী চেহারার নায়ক, খল চরিত্রে অভিনয় করে পুরস্কার জিতেছেন। আগ্নিপথ (২০১২) সিনেমায় আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন রউফ লালা’র চরিত্রে অভিনয় করে ঋষি কাপুর আইফা এওয়ার্ড জেতেন। তিনি তার প্রথম সিনেমা (মেরা নাম জোকার) (১৯৭০) এ শিশু শিল্পী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। প্রথম নায়কের চরিত্র করেন, ডিম্পল কাপাডিয়ার সাথে “ববি” (১৯৭৩) সিনেমায়, এর জন্যে জেতেন ফিল্ম ফেয়ার এওয়ার্ড। এই সিনেমাটি এতই জনপ্রিয় হয় যে এর ধারায় রামেশ সিপ্পি বানান ত্রিভুজ প্রেমের গল্প “সাগর” (১৯৮৫)। কমল হাসান, ডিম্পল কাপাডিয়া আর ঋষি কাপুর। “ববি” সিনেমার গানগুলোর মত “সাগর” সিনেমার গানগুলো ও খুব জনপ্রিয় হয়, আজও অনেক এওয়ার্ড অনুষ্ঠান আর গানের অনুষ্ঠানে গানগুলো গাওয়া হয়।
২০০০ সাল অব্ধি শুধু নায়কের চরিত্রেই অভিনয় করতেন, এরপর থেকে চরিত্রাভিনয় শুরু করেন।
বহু মাত্রিক অভিনয়ের সার্থক নাম ঋষি কাপুর। ১৯৫২ সালের ৪ মে তারিখে জন্ম নেওয়া বলিউডের এই রাজকুমার মৃত্যু বরণ করেন ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল।

No comments:

Post a Comment