Tuesday 1 June 2021

করোনায় নেদারল্যান্ডসের শিক্ষা

https://bn.bdeduarticle.com/%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a1%e0%a6%b8%e0%a7%87%e0%a6%b0/?fbclid=IwAR2eMlNUSbamuGBcaHtxwQF9jwJQYO332A_H3q7dI8IqQ9b5b2KVb3wfXkM করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সুইডেনের পরে ইউরোপে সবচেয়ে বাজে অবস্থানে আছে নেদারল্যান্ডস। সংক্রমণের উচ্চহার, মৃত্যু, ভ্যাক্সিনের অপ্রতুল সরবরাহ সব মিলিয়ে নেদারল্যান্ডস যারপর নাই নাজেহাল। নেদারল্যান্ডসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে ধরা হয় “শিক্ষা”কে। প্রাইম মিনিস্টার মার্ক রুতে তার করোনা ভাষণে বারবার শিক্ষাকে এক নম্বরে রেখে কথা বলেছেন। “অনলাইন ক্লাশ” শিক্ষার্থীদের জন্যে যথেষ্ঠ নয় তাই নানারকম কৌশলের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু রাখার চেষ্টা করেছেন। বাচ্চাদের যন্ত্রের চেয়ে মানুষের সংস্পর্শ বেশি প্রয়োজন আর সে লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্যে প্রথমে নিয়ম ছিলো, আজ এই ক্লাশের শিক্ষার্থীরা আসবে তো কাল অন্য ক্লাশের। পরেরদিকে সবাইকেই আসতে দেয়া হলো। মাধ্যমিকে ক্লাশ ভাগ করলেন। একদিন ক্লাশের পঞ্চাশ ভাগ স্কুলে এসে ক্লাশ করবে বাকি পঞ্চাশ ভাগ অনলাইনে সেই ক্লাশ ফলো করবে, আগেরদিন যারা অনলাইনে ক্লাশ করেছে পরেরদিন তারা স্কুলে আসবে বাকিরা সেই ক্লাশ অনলাইনে ফলো করবে। প্রথমবার লকডাউনে সব স্কুল অনলাইন থাকলেও দ্বিতীয়বার লকডাউন ও কার্ফিউ যখন চলছিলো তখন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল খোলা ছিলো আর সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাশ চলছিলো। মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে দেড় মিটারের সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা এবং ক্লাশ চলাকালেও মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক। সামাজিক দূরত্ব মেনে স্কুলের পাঠাগার এবং শরীরচর্চা কেন্দ্র খোলা তবে স্কুলের ক্যান্টিন বন্ধ। সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, নাটক, নাচ –গানের অনুষ্ঠান, ডিস্কো, ফান নাইট ইত্যাদিও সব বন্ধ। বাচ্চারা দেশের ভেতরে যেসব এসকারশান, দেশের বাইরে যেসব এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে যায় কিংবা ভিন্ন দেশ থেকে নেদারল্যান্ডসে বাচ্চারা আসে, সেসবও পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। কোন বাচ্চার করোনার কোন রকম লক্ষণ থাকলে তার স্কুলে আসা নিষেধ এবং তাকে অনলাইনে ক্লাশ করতে বলা হয়েছে। যদি কোন বাচ্চা বা শিক্ষক করোনা পজিটিভ হতো সাথে সাথে তা স্কুলে জানানোর নিয়ম ছিলো এবং তার আশেপাশে যারা ছিলো তাদের সবাইকে বাধ্যতামূলক করোনা পরীক্ষা করতে হতো। কোন বাসায় কেউ করোনা পজিটিভ থাকলে বাসার সবাইকে কেয়ারন্টিনে থাকতে হতো, সেক্ষেত্রে সেই শিক্ষার্থীও স্কুলে আসতে পারতো না, অনলাইন ক্লাশ করতে হতো। করোনার প্রথম বছরে সারা বছরের স্কুলের ফলাফল আর এসাইন্টমেন্টের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ণ করা হলেও দ্বিতীয় বছরে অর্থ্যাৎ এ বছরে পরীক্ষার জন্যে ব্যাপক প্রস্তূতি বছরের শুরু থেকেই নেয়া হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব মেইনটেইন করে পরীক্ষার হল তৈরী করা হয়েছে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে যেনো যথেষ্ঠ দূরত্ব থাকে সেদিকে নজর দেয়া হয়েছে। পরীক্ষার সময়টাকেও দুভাগে ভাগ করা হয়েছে, যারা পরীক্ষার সময় করোনায় আক্রান্ত থাকবে, তাদের জন্যে আবার দ্বিতীয় বার পরীক্ষার রুটিন রাখা হয়েছে। দুই পরীক্ষায় দুই প্রশ্নপত্র দেয়া হবে। মধ্যে মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও অনলাইনের পাশাপাশি ক্লাশরুমে ক্লাশ শুরু হয়েছে। ভ্যাক্সিন কার্যক্রম এগিয়ে গেলে পুরোপুরি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে বলে সরকার জানিয়েছে। নেদারল্যান্ডসের শিক্ষা ব্যবস্থায় পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। সরকারী ভাষ্যমতে, করোনাক্রান্ত রোগীদের পরে চিকিৎসকদের কাছে দ্বিতীয় স্থানে ছিলো মানসিকভাবে পীড়িত মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রদের ভীড়। অনেককেই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। বন্ধুহীন একাকীত্ব, অনলাইন ক্লাশ, আত্মীয় স্বজনের সাহচর্যহীনতার মানসিক চাপ অনেক বাচ্চাই নিতে পারেনি, প্যানিক এটাক, বিষন্নতায় আক্রান্ত বারো থেকে আঠারো বছরের অনেক বাচ্চাকেই ডাক্তার ও ওষুধের শরণাপন্ন হতে হয়েছে। মানুষের জীবনে মানুষের সাহচর্য কত গুরুত্বপূর্ণ এটি আবারও প্রমাণ হলো। বিষন্নতা আর একাকীত্বের সাহায্য দেয়ার জন্যে আলাদা হেল্প লাইন খোলা হয়েছে। প্রাইম মিনিস্টারের ভাষায় করোনা ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে অত্যন্ত দুঃখজনক অংশ এটি। আজ স্কুল খোলা, কাল লকডাউন, পরশু অনলাইন ক্লাশ ইত্যাদি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত পরিস্থিতির ভুক্তভোগী বাচ্চারা। অনলাইন ক্লাশে অনেক বাচ্চাদের মনো সংযোগের বিরাট ব্যাঘাত ঘটে। বলা বাহুল্য, মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের অনেকেই আশানুরূপ ফলাফল পায়নি। এখানে যেহেতু অটোপাশ বা গ্রেস পদ্ধতি নেই, দূর্ভাগ্যজনকভাবে অনেককেই হয়ত আবার এই ক্লাশটি-বছরটি পুনরায় পড়তে হবে। নেদারল্যান্ডসে এখন সপ্তাহে এক মিলিয়ন মানুষকে ভ্যাক্সিন দেয়ার পরিকল্পনা চলছে। আশা করা হচ্ছে, জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যেকে অন্তত টিকার প্রথম ডোজটি পেয়ে যাবে আর তাতে সংক্রমণ কমে আসবে। পরিকল্পনামত কাজ হলে, প্রথম যেই সেক্টরটিকে পুরোপুরিভাবে চালু করা হবে সেটি হলো শিক্ষা ক্ষেত্র। প্রচুর ক্ষতি ইতিমধ্যে হয়েছে, সেটিকে পুনরুদ্ধার করার সর্বত চেষ্টা করা হবে। তানবীরা হোসেন ২৪/০৫/২০২১

No comments:

Post a Comment