Thursday, 13 October 2011

মৃত্যুর সাথে বসবাস

রুমকির অফিসে কাজ করতে করতে শরীরের একটু অস্বস্তিকর ম্যাজম্যাজানি অনুভূতির জন্যে ডাক্তারের কাছে যাওয়া হঠাৎ ই, তেমন কোন বিরাট পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া। ডাক্তার সব শুনে কিছু চেকাপ লিখে দিলেন। আবার হসপিটালে যাও, চেকাপ করাও এই বিরক্তি নিয়ে অফিসের মাঝে হাসপাতালে যাওয়া। হাসপাতালে প্রথম চেকাপ হয়ে যাওয়ার পরে বিশেষজ্ঞ ডেকে নিয়ে বললেন, আমি আর একটু নিশ্চিত হতে চাই তাই তুমি আবার আসো, আরো কিছু পরীক্ষা করবো। তারপর আবারো তেমনই মন নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া, ভাবা পাবেনাতো কিছুই, ওষুধও দিবে না, মাঝ থেকে খোঁচাখুচি করা।

কিন্তু না, এবার বিনা মেঘে বজ্রপাত। এবার বলা হলো, তোমাকে শীগগীর ভর্তি করা হবে এবং অপারেশন করা হবে। তোমার শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ন অংগ প্রায় বিকল অবস্থায়। যতোদিন না তোমাকে অপারেশন করা হচ্ছে, তুমি যেকোন ধরনের অস্বস্তিতে এই স্প্রে ব্যবহার করবে দুবার আর অপেক্ষা করবে না, সাথে সাথে এম্বুলেন্স ডাকবে, জরুরি বিভাগে চলে আসবে। কোন ধরনের চান্স নিবে না বুঝলে, কোন ধরনের চান্স নিবে না। বিভিন্নভাবে তাকে বুঝানো হলো কোন ধরনের চান্স নেয়ার সময় তার এখন না। মাথায় পুরো আকাশটাই যেনো ভেঙ্গে পড়লো। কতো স্বপ্নে এখনো রঙ ভরা হয়নি, কতো সুখ কল্পনা রয়ে গেছে এখনো অধরা। এর মধ্যেই কি ঘন্টা বেজে গেলো? ছুটির সেই অমোঘ ঘন্টা যাকে এড়ানোর সাধ্য কোন জীবিত প্রাণীর নেই? এতো ছোট মানুষের জীবন? এতো অসহায় সে নিয়তির কাছে? এতোই ঠুনকো সব? ভাবছি দিনরাত ভর, যখন কাউকে বলে দেয়া হয়, তুমি আর তিন থেকে চার মাস বাঁচবে তার তখন কেমন অনুভূতি হয়? সে মানুষ কি করে তার প্রতিটি প্রহর কাটায়? সিনেমায় দেখেছি অবশ্য বহুবার এধরনের দৃশ্য কিন্তু কখনো সেভাবে অনুধাবন করিনি তখন অভিনেতা অভিনেত্রীর এক্সপ্রেশন কিংবা তার পরের দৃশ্য দেখার জন্যে ব্যাকুল ছিলাম হয়তো। কিন্তু যখন তার আর পর নেই ..................?

ঘুমের মধ্যে একটু শব্দ হলেই চমকে উঠি সব ঠিক আছেতো? স্প্রে এর দরকার নেইতো? একটু হাঁচি এলে কিংবা কাশি হলেও মনে হয়, জরুরী বিভাগের যাবার দরকার নাতো আবার। সব ঠিক আছেতো? কি হবে কিংবা কি হবে না? যখন থাকবো না তখনো ঠিক এভাবেই সূর্য উঠবে, এভাবেই পাখি গাইবে। এভাবেই ফুল তার গন্ধ ছড়াবে, প্রেমিক তৃষার্ত আদ্র চোখ নিয়ে প্রেমিকাকে বলবে, ভালোবাসি তোমায়। কারো থাকা না থাকায় জগতের একটি মুহূর্ত এদিক ওদিক হবে না, সব ঠিক একই নিয়মে চলবে, যেমন সবসময় চলে যায়।

সিড়ি দিয়ে নামতে গেলে সারাক্ষণ মনে হয় পা ঠিক জায়গায় পড়ছে না, আমি হড়কে পরে যাচ্ছি। বার বার মনে হয় গড়িয়ে যাচ্ছি নীচে। এরই নাম কি নার্ভাস ব্রেকডাউন? অনেক শুনেছি এই শব্দটা। এর লক্ষনই কি বা গুনাগুনই কি? সারারাত দুচোখের পাতা এক না হওয়া? চোখের পাতায় সূঁচকুমার রুপকথার গল্পের নায়কের মতো হাজার হাজার সূঁচ বিঁধে থাকে কিন্তু ঘুমের দেশে হারাতে পারি না, মিছেই চোখ বন্ধ করে থাকা। কিছুক্ষণের জন্যে ঘুমালেও সারা ইন্দ্রিয় জেগে থাকে। রাতের নিঃশব্দতা ভেঙ্গে কোথায় কুকুর ডাকলো, কার বাচ্চা ঘুমের মধ্যে অকারণে কেঁদে ওঠলো, কে উল্লাসে নিশি উদযাপন করে সোল্লাসে রাস্তা দিয়ে গান গেয়ে বাড়ি ফিরছে সব কান ভেদ করে মাথায় গিয়ে পৌঁছে। ঘুমের মধ্যে এই ঠান্ডা আবহাওয়াতেও গা ভিজে জবজবে হয়ে যায়। পেট মুঁচড়ে মুঁচড়ে কি যেন একটা গলার কাছে এসে আটকে থাকে। সেটা কি বমি না কান্না, নাকি কোন নাম না জানা ব্যাথা। উগড়ে গেলে আরাম হতো কিন্তু কিছু বের হচ্ছে না। আচ্ছা, কতো সময় লাগবে নার্ভের ওপর, নিজের ওপর আবার নিয়ন্ত্রন ফিরে পেতে, কে জানে?

দূর থেকে দেখে মনে হবে সব চলছে স্বাভাবিক নিয়মে, হয়তো তাই। সবকিছু করে যাচ্ছি যেনো দম দেয়া পুতুল। অথচ আবার কিছুই করছি না যেনো। ছোট একটা বাচ্চা ধাক্কা দিলে মনে হয় উড়ে পড়ে যাচ্ছি, শরীরে কোন শক্তিই অবশিষ্ট নেই আর। সারা শরীরে কেমন যেনো একটা কাঠ কাঠ অনুভূতি হয়ে আছে। কোন কিছুতেই সেইভাবে আর মন লাগাতে পারি না। চিন্তা সারাক্ষণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মনের মধ্যে একটা কিযেনো চলছে সারাক্ষণ। হঠাৎ কখনো হাসলে মনে হয়, “হোটো পে কার্জ রাক্ষা হ্যায়”। একদিন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে জানি। আবার হয়তো কিছুই ঠিক হবে না, এর মধ্যেই অভ্যস্ত হয়ে যাবে রুমকি। এটাই হয়ে যাবে তার স্বাভাবিক জীবন।

তানবীরা
১৩.১০.২০১১

Monday, 29 August 2011

মনের কষ্ট রইবে মনে উড়বে পাখি বনে বনে


What goes around comes around. প্রকৃতি তার কোন হিসাব অপূর্ন রাখে না। ইতিহাস তার সাক্ষী। ভালো সময়ের একটা খারাপ দিক হলো, একসময় সেটা শেষ হয়ে যায় আর খারাপ সময়ের ভালো দিক হলো, একসময় সেটাওশেষ হয়ে যায়। এদিন দিন নয় আরো দিন আছে, সেদিনকে আনতে হবে এদিনের কাছে :D
তানবীরা
২৯.০৮.২০১১

Sunday, 14 August 2011

সুখ তুমি কি বড় জানতে ইচ্ছে করে ..................

অনেকেই আল পটকা আমরা সুখ-দুঃখ, সুখি হওয়া দুঃখি হওয়া ব্যাপারগুলো নিয়ে আলোচনা করি, হাসি, মন্তব্য করি। সুখি হওয়া মানে কি? শরীরে কোন বিশেষ হরমোনের বেড়ে যাওয়া বা দ্রুত প্রবাহ যা নাকি হঠাত আনন্দ এনে দেয়? আর দুঃখি হওয়াটাই বা কি? কোন বিশেষ হরমোনের লেভেল নীচে নেমে যাওয়া? বা তার প্রবাহ, সঞ্চালনে ভাটা পড়া? মানুষের শরীরের রোগ নির্নয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞান যতোটা সাফল্য অর্জন করেছে, মনের রোগ নির্নয়ে ঠিক ততোটা নয়। যদিও গবেষনা করে দেখা গেছে বড় বড় অপরাধ, শারীরিক অসুস্থতা, সামাজিক সমস্যা – অস্থিরতার পিছনে মনের গঠন সঞ্চালন বিরাট ভূমিকা রাখে। কিন্তু আশ্চর্য আর চরম কষ্টের ব্যাপার হলো শরীরের ব্যাধি নিরাময়যোগ্য কিংবা ওষুধের সাহায্যে একে সহনশীল পর্যায়ে রাখা যায় কিন্তু মনের ব্যাধি নিরাময়ের কোন ওষুধ নেই। এই ওষুধ খেলে মন এই পরিমান ভাল হবে কিন্তু মাথা বা মন ঠিকমতো কাজ করবে টাইপ কোন ওষুধ এখনো বাজারে আসেনি। যদিও মনোবিদরা বিভিন্ন উপায় খুঁজছেন আর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একসময়ে মন নিয়ে প্রেমিক যুগল ছাড়া অন্যকেউ মাথা না ঘামালেও আজকাল পৃথিবী জুড়ে মনের সমস্যা অনেকের নজরেই পড়ছে। মন আর অবহেলার কোন বিষয় না, সমাজের সুস্থতা রক্ষায় অনেক গুরুত্বপূর্ন।

সুখ আসে কি থেকে? মানসিক সুখের সাথে শারীরের গ্রন্থির ব্যাপারটা এখনো অনাবিস্কৃত। প্রথম আলো বেশ কিছুদিন আগে বিদেশিদের গবেষনার বরাত দিয়ে প্রবন্ধ ছেপেছিল। মানুষ সুখি হওয়ার জন্যে টাকা পয়সাকে যতোই তুচ্ছ ভাবুক, আসলে টাকা পয়সা ততো তুচ্ছ না। সুখি হওয়াতে টাকা পয়সার অবদান অনেক। একটা দামি রেষ্টুরেন্টে খেয়ে আপনি যে আনন্দ লাভ করেন, সেই সুখতো আপনি টাকা দিয়েই কিনছেন, তাই না? কিংবা কোথাও ছুটিতে গিয়ে আপনি ফাইভ স্টার হোটেলে থাকলেন, তার আনন্দও টাকা দিয়েই পাওয়া যায়। এরকম ভুরি ভুরি উদাহরন প্রথম আলো ছেপেছিল। কিন্তু আমার মনের খটকা এখনো যায় না? সুখ কিসে, অনেক দামি শাড়িতে? ব্র্যান্ডেড গাড়িতে কিংবা বিরাট লন ছাওয়া বাংলো বাড়িতে? তাই যদি হবে, তাহলে এতোসব যাদের আছে তারা কিসের “লাগিয়া” দিনরাত এ প্রান্ত ও প্রান্ত ছুটে মরে? আর কি চাই তাদের? তাহলে কি জাগতিক দ্রব্য মানসিক সুখ আনতে পারে না? তাই কি পুরাকালে মনীষীরা বলে গেছেন, ভোগে নয় ত্যাগেই সুখ? ভোগের তথা চাওয়ার কোন শেষ নেই, পাওয়ার চেষ্টা বৃথা তাই? বেশি পাওয়া কি তাহলে কখনো কখনো মানুষকে বেশি হতাশ করে?

Seeking Attention Disorder (SAD) রোগটা কি মেয়েদের মধ্যে বেশি পুরুষের তুলনায়? ছোটবেলা থেকে মেয়েরা এই যে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সাজুগুজু করে, সেখান থেকেই এই রোগের উদ্ভব নয়তো? অন্যের চোখে নিজেকে সুন্দর দেখানোর এই মানসিকতাই কি পরে SAD হয়ে দাঁড়ায়? সারাক্ষণ অন্যের কাছে নিজেকে গুরুত্বপূর্ন করে তোলার এই প্রবনতা। আর অসুখি হওয়ার অসুখের শুরু কিন্তু এখানে থেকেই। আমাকে অন্যের চেয়ে বেশি আকর্ষনীয় হতে হবে, বেশি গুরুত্ব নিতে হবে। তার জন্যে ছল বল কৌশল যা লাগে লাগুক। বেশি সাজতে হবে আরো বেশি, সবার মনোযোগের কেন্দ্র হতে হবে আমাকেই। সব হাত তালি আজ আমার জন্যে। http://www.bullyonline.org/workbully/attent.htm

কিন্তু চেষ্টা যদি কেউ করে, খুব চেষ্টা তাহলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া কি একেবারে অসম্ভব? না, তা মনে হয় না আমার। চেষ্টা করলে মানুষ সুখি হলেও হতে পারে। অহংকারকে একটু দমন করলে, জয়ি হওয়ার অদম্য জিঘাংসাটা সব সময় মনের মধ্যে কাজ না করলে, সব শিরোপা নিজের মাথায় না চাইলে, অন্যকেও মানুষ মনে করলে এই অসুখও সারতে পারে কখনো। কেউ কেউ অবশ্য নিরাময় অযোগ্যা তাদের কথা আমি বলছি না ..................তবে হ্যা মানুষ চেষ্টা করলে কি না পারে?

তানবীরা
১০.০৮.২০১১

Tuesday, 9 August 2011

জ্বলো সীতা জ্বলো

প্রায় আমার ফেসবুকে ম্যাসেজ আসে, পরিচিত অপরিচিতজন থেকে। কেউ কেউ তাদের নিজের লেখার লিঙ্ক দিয়ে আমার মতামত জানতে চান, কেউ আমার লেখার আলোচনা সমালোচনা লিখে পাঠান, কিংবা মাঝে মাঝে কেউ লিঙ্ক শেয়ার করেন, ভাবেন আমি পড়লে আমার ভালো লাগবে, বা আমার জানা থাকা উচিত। সেজন্যে আমি সবার প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এতো স্নেহেরযোগ্যা হয়তো আমি নই, তাই চেনা অচেনা সব বন্ধুদেরকে তাদের ভালোবাসার জন্যে জানাই প্রনতি প্রনাম।

সেদিন একজন আমেরিকা প্রবাসী শল্য চিকিৎক আমাকে তার লেখার লিঙ্ক পাঠালেন। তিনি সেসময়ের বাংলাদেশের সবচেয়ে “সেনসেশনাল ইস্যু” রুমানা মাঞ্জুরকে নিয়ে একটি দারুন হিট “সংবেদনশীল” ব্লগ লিখেছেন। লিখেছেন বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতিথযশা ব্লগে যেখানে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ব্লগিং করেন। তিনি তার লিঙ্ক দিয়ে আমার মতামত জানতে চাইলেন তার লেখাটি সম্পর্কে। আমি লিঙ্ক ধরে যেয়ে দেখলাম হাজার জনের ওপরে পড়েছেন সেই ব্লগ ইতিমধ্যে, তিনশ’এর ওপরে ফেসবুকে লাইক এন্ড শেয়ার হয়েছে লেখাটি আর শ’খানেক এর ওপর কমেন্ট। প্রায় সব প্রতিষ্ঠিত বাঘা বাঘা ব্লগাররা নানা দৃষ্টিকোন থেকে ঘটনাটির চুল চিড়ে-ফেড়ে বিশ্লেষন করেছেন। আমার সেখানে বলার আর কিছু ছিল না। বরং বিস্ময় নিয়ে দেখলাম কতো অশিক্ষিত আমি, এ ঘটনার যে এতোরকম বিশ্লেষন হতে পারে তাই আমার জানা ছিল না। আমি অনেক মানসিক ও জাগতিক সমস্যার নাম ও ত্বত্ত্ব জেনে ফেরত আসলাম সে ব্লগ থেকে। আমি মুগ্ধ হয়ে ওনাকে আমার অশেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে চিঠির জবাব দিলাম। মেয়েদের প্রতি ওনার শ্রদ্ধা দেখে আমি বিস্মিত ও বিগলিত হলাম। উনি প্রতি উত্তরে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কেনো আজকাল আমি আর মুক্তমনায় লিখি না?

এর মাঝে বেশ অনেকদিন কেটে গেছে। ওনি কোথাও থেকে আমার ইয়াহু আইডি সংগ্রহ করে আমাকে ইয়াহুতে এ্যাড করেছেন। আমি এসব জানি না, কারণ আমার ব্যাক্তিগত জীবন আমাকে ঠিক এতোটা টাইম পারমিট করে না যে সব ম্যাসেঞ্জার ঘুরে ঘুরে ম্যাসেজ চেক করবো কিংবা আড্ডা দিবো। সেদিন কোন কারণে ইয়াহুতে লগ ইন হতেই ওনার বাসি রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করার মুহূর্তের মধ্যে ওনার ম্যসেজ। আমার সাথে আলোচনা করতে চান কিছু ব্যাপারে, আমার মতামত চান। কিন্তু আলোচনা শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেল। রুমানার কথা তুললেন, তুলে তিনি নিজেই জানালেন, তিনি জানেন, রুমানা দোষ করেছে, সে দোষী। রুমানার স্বামী সত্যি কথা বলেছে।

বিস্ময় গোপন করে আমি বললাম, কি করে জানলেন, প্রমান পেয়েছেন কিছু?

তিনি আমার গাধামিতে বিরক্ত হয়েই হয়তো সদম্ভে ও সগর্বে বললেন, সারকামসটেনশিয়াল এভিডেন্স। তা না হলে কেন শুধু শুধু হাসান তাকে মারবে? আর রুমানাই বা কেন এখন ক্যানাডা চলে গেলেন?

বিস্ময়ে আমার বাক্যরহিত হয়ে গেল। জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছিলো, দেশ জুড়ে এইযে এতো মেয়ে স্বামীর হাতে এসিডের স্বীকার হচ্ছে, খুন হচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে তারা সবাই পরকীয়ায় জড়িত? নাকি অপরাধ করছেন প্রভু স্বামীর দ্বারা শাস্তি পেয়ে পাপস্খলন করছেন তারা? নির্দোষ কোন মেয়ে তাহলে নির্যাতিত হচ্ছে না দেশে, সবাই কোন না কোনভাবে দোষী? আর কানাডা সরকার হঠাত করে প্রেম ভালবাসা প্রমোট করতে শুরু করেছেন বলেওতো জানি না। প্রেমের কারণে রুমানাকে অস্থায়ী রেসিডেন্ট পারমিট ইস্যু করেছেন নাকি তারা? এই সুশীল লেখকের কুশিল ম্যাসেজের জবাব দিতে পারলাম না। রুচি চলে গেলো হঠাত করে। তাকে কাটিয়ে আমি বাই বলতে ব্যস্ত ছিলাম। বাক্যালাপ শেষ। তিনি বুদ্ধিমান বটে, আমার মেজাজের আঁচ পেয়ে গেলেন কিন্তু কেন বিরক্ত হয়েছি সেটা তিনি বুঝতে পারেননি আশাকরছি। তিনি আমাকে বললেন, মুক্তমনায় আমার লেখা পড়ে আমাকে সংবেদনশীল, স্বাভাবিক মনে হয়েছিল কিন্তু কথা বলে দেখা গেল আসলে আমি চরম অহংকারী। আরো কিছু বিশেষন বলার আগে আমি ওনাকে ব্লক করে ফেলি। ওনার থেকে আমার চারত্রিক কমপ্লিমেন্ট না নিয়ে সেরিব্র্যাল এ্যাটাকের হাত থেকে বাঁচতে আমি বদ্ধপরিকর ছিলাম।

কিন্তু মনে মনে এটা গড়িয়েই যাচ্ছিল। কি দিয়ে রুমানা প্রমান করবেন তিনি নির্দোষ ছিলেন? স্বামী চোখ তুলে নিয়ে ক্ষান্ত হয়েছেন, আর সমাজ তার চরিত্র তুলে নিয়ে তবেই ছাড়বে। সীতা তুমি কি করবে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে? জ্বলন্ত আগুনে ঝাঁপ দিবে নাকি উত্তাল সমুদ্রে? দুই কাঁধে দুই ফেরেশতা থাকার পরও আরো চারজন পূর্ন বয়স্ক পুরুষ লাগবে তোমাকে নির্দোষ প্রমান করতে। আছেন কি কেউ? সব হারিয়েও শেষ রক্ষা হলো না, তুমি হেরে গেলে সীতা। অন্যান্য ঘটনার মতো রুমানার ঘটনার পরও, ফেসবুকে, ব্লগে হাজার হাজার বিদগ্ধ নোট, ব্লগ লেখা হয়েছে। মনে সংশয় জেগেছে এখন, যারা রুমানার পক্ষে লিখেছেন তারা কি বিশ্বাস করতেন রুমানা’র সাথে অন্যায় হয়েছে? নাকি সস্তা জনপ্রিয়তা, গড্ডালিকা, নিছক মজাদার, মাশালাদার বিষয় হিসবেই নিজের প্রতিভার পরিচয় রাখতে সেসব লেখা হয়েছিল? !!!!

পরিশেষ ধন্যবাদ ডাক্তার সাহেব আপনাকে, আপনি ঠিকই ডিটেক্ট করেছেন, আমি অভদ্রতো বটেই কিন্তু আপনি যথার্থ নিপাট ভদ্রলোক।

তানবীরা
০৯।০৮।২০১১

Friday, 5 August 2011

স্টোরিয়া পোলস্কা (১)

অবশেষে বহুকাঙ্খিত সামার ভ্যাকেশন। ইউরোপের সামার, হায় ভগবান অবস্থা। বৃষ্টিতে বৃষ্টিতে পুরো ইউরোপ জেরবার এবার। সস্তার প্লেনওয়ালারা টারমাক নেন না পয়সা বাঁচান। আগের দিনের মতো সিঁড়ি বেয়ে কাক ভেজা হয়ে উঠলাম প্লেনে। সুনীলের “মানুষ মানুষ” উপন্যাসের আনোয়ারাকে খুঁজতে খুঁজতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টের পাইনি। দুপুরবেলা বহুদিন পর একটা ন্যাপ নেয়া হলো। মেয়ের গুতানিতে উঠলাম, স্যান্ডউইচওয়ালি এসেছে। স্যান্ডউইচ খেতে খেতে আবার ঘুমিয়ে পড়ার দশা আমার। পোল্যান্ডের অর্থনৈতিক অবস্থা হল্যান্ডের তুলনায় বেশ খারাপ। অনেক পোলিশ স্যাঙ্গুইন ভিসার সুবিধার কারণে হল্যান্ডে জব করেন। সপ্তাহান্তে কিংবা মাসে মাসে তারা বাড়ি যান। আমাদের শহর থেকে কাজ করে গ্রামের বাড়িতে পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার মতো। প্লেনে অনেক পোলিশ মেয়ে আছে। ইষ্ট ইউরোপীয়ান মেয়েদের দেখলেই ওয়েষ্ট ইউরোপীয়ান মেয়েদের থেকে আলাদা করে চেনা যায়। এরা অনেক সুন্দর স্কার্ট বা ড্রেস পড়ে, জীন্স টিশার্ট টাইপ না। সাজে, দুল-চুড়ি-কাজল। আমার পাশের জন বারবার বলেই গেলেন, সৌন্দর্য আসলে কমনীয়তায়, নমনীয়তায়, লাবন্যে যা পূর্ব দিকে বিদ্যমান। পশ্চিমের মেয়েরা বড় বেশি রুক্ষ ইত্যাদি। এই আলোচনা শুনতে শুনতে কাহিল হয়ে প্রায় পৌনে দুঘন্টা উড়ে এন্ডহোভেন থেকে ওয়ারসাও পৌঁছলাম। ছোট প্লেনে বড্ড ঝাঁকুনি হয়। গা গুলাতে থাকে আর ইষ্ট নাম জপ করি, হায় ভগবান, সবার সামনে বমিতে ভাসিয়ে দিও না। কি ভাববে লোকে।

P1050100

হোটেল থেকে শহরের ভিউ

P1050406

ছবিতে ইষ্ট ইউরোপীয়ান ললনারা

ট্যাক্সি করে হোটেলে পৌঁছে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার চাঁদর টেনে বিছানায়। বাইরে টিপ টিপ ঝরেই যাচ্ছে। অনেকদিন পর এবার খাবো, ঘুমাবো এই প্ল্যানিং এ ছুটিতে গেছি। পৃথিবী ভর্তি দেখার জিনিসের যেহেতু শেষ নাই, দেখার চেষ্টা বৃথা তাই, ভেবে ঠিক করেছি এবার ছুটি মানে ছুটি। ল্যাপটপ ফেলে গেছি। সবকিছু প্রতিদিন টাইমলি, পার্ফেক্টলি করতে করতে বড্ড ক্লান্ত শরীর মন, কোনটাই আর চলছে না। এবার ব্রেক সব রুটিন থেকে। বই নিয়ে বিছানায় শুয়ে মনটা বিরক্তিতে ভরে গেল। যতো বয়স হচ্ছে, মুগ্ধতা কমছে সবকিছু থেকে। আগে সুনীল – সমরেশ – শংকর যতোটা মুগ্ধ করতেন, এখন আর করেন না। যদিও এই বইটি বেশ ইন্টারেষ্টিং, সুনীলের ডেইলি লাইফ থেকে লেখা। সুনীলের বউয়ের নাম স্বাতী জানলাম। অনেকটা বই জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশে সুনীলের বন্ধু অর্থ্যাৎ লেখক কবিদের কথা। কিন্তু নামের বানান এতো ভুল যে বিরক্তি হজম করা দায়। পশ্চিম বাংলার লোকেরা এটাযে ইচ্ছাকৃত করেন সে ব্যাপারে আমি প্রায় নিশ্চিত। বন্ধুদের সাথে চিঠি চালাচালি হয়, মেইল হয় আর নিলুফার না নিলোফার তা তারা জানেন না, আবার পাঁচশো পাতার উপন্যাস ফাঁদেন!

বেশিক্ষণ শুয়ে শুয়ে বইপড়া গেল না। বৃষ্টিতেই আশপাশ ঘুরে ডিনার সেরে তাড়াতাড়ি ফিরে আসার প্ল্যান হলো। হোটেল থেকে ম্যাপ আর কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিয়ে ভিজতে ভিজতে বের হলাম। মেঘলা আকাশ বিকেলকে সন্ধ্যার রূপ দিয়ে দিয়েছে। আশপাশে হাটতে হাটতে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম। এতোবড় একটা হোটেল যদি আমাদের দেশে কোন আবাসিক এলাকায় হতো তাহলে ট্যাক্সি ড্রাইভার, গাড়ি, হকার এটা ওটার ভিড়ে মানুষের সেই এলাকায় বাস করা দায় হতো। আর এখানে না আছে কোন মানুষ না আছে শব্দ। ট্যাক্সি দরকার হলে হোটেল থেকে ফোন করলে ট্যাক্সি আসবে, দশ মিনিট হলো স্ট্যান্ডার্ড টাইম ট্যাক্সি পৌঁছনোর। বাকিটা ট্র্যাফিক আর পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। হেঁটে খুঁজে যেয়ে ডে টিকেট কিনলাম তার পরের দিনের জন্য। এরপর ডিনার, পোলিশ কুজিন। কোথাও যাওয়ার আগে নেট ঘেটে সে দেশের ফুড, ট্যুরিষ্ট এ্যাট্রাকশন, কফি, শপিং, স্যুভেনীয়র ইত্যাদি সম্বন্ধে একটা ধারনা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। এখানেও নোট করে নিয়ে গেছিলাম কিছু খাবারের নাম। তা থেকে ডামপ্লিং, ওসিপেক, ডাকরোষ্ট, চিকেন ইত্যাদি অর্ডার করা হলো। খেয়ে বেড়িয়ে দেখলাম বৃষ্টি থেমেছে আপাতত। পরিকল্পনা আবার বদলালাম। বের হলাম এবার “ওয়ারশাও ইন নাইট” দেখতে।

P1050115

ওসিপেক

P1050122

রোস্টেড ডাক ইন সুইট ক্যাবেজ সস

P1050124

চিকেন ইন আনানাস সস

যেকোন জায়গায় গেলে এটা আমার প্রিয় একটা জিনিস। শিখেছি প্যারিস গিয়ে। প্রতিটি শহরেই দিনের আর রাতের রুপ একেবারে আলাদা হয়। দিনের ব্যস্ত শহরকে রাতে প্রায় চেনাই যায়না বললে চলে। সারাদিন রোম ঘুরে সন্ধ্যায় হোটেলে ফেরার পথে আলোকজ্জল প্যান্থন Pantheon দেখে অবাক হয়ে আমি আমার হাতের লিষ্ট চেক করছিলাম, এটা কি করে বাদ পড়ল, এটাতো দেখিনি। মেয়ের বাবা হেসে আমাদের হাতের লিষ্ট, গাইড আর আমার চোখ এক করে দিয়ে বললেন, এই তোমার প্যান্থন, কলোসিয়াম যা সারাদিন ঘুরে দেখলে। অথচ রাতের নিকষ কালো ব্যাকগ্রাউন্ডে স্থাপনার আলোকসজ্জা, একদম অন্যরকম করে ফেলে। সেই রাতেই ট্যাক্সি করে আবার বের হলাম রাতের রোম দেখতে। দেখতে দেখতে ছোটবেলায় পোষ্টারে পড়া লাইনদুটো মনে পড়ল আবার হেলেন কেলার বলেছিলন “The best and most beautiful things in the world cannot be seen or even touched. They must be felt with the heart.” রোমের সে রাত আমার মনে দাগ কেঁটে গেলো। ঘুরতে ঘুরতে আমার হদয় ভাষা হারিয়ে পরিপূর্ন হয়ে এলো। এরপর থেকে রাতের শহর আমার ভ্রমন তালিকার মাস্ট আইটেম। তবে সব শহরই যে সমানভাবে মুগ্ধ করে তা নয়। কিছু শহরের ওপর ডিপেন্ড করে কিছু আবার মুডের ওপর ডিপেন্ড করে।

P1050342

রাতের পোল্যান্ড

P1050257

P1050255

P1050140

পোলিশ ট্রাম বাসের রঙ দেখে ছোটবেলায় দেখা গায়ে হলুদের শাড়ির কথা মনে পড়ে গেলো

তানবীরা
০৬.০৮.২০১১

Wednesday, 20 July 2011

সাবধানতাঃ সন্তানের জন্যে

আকিদার অঞ্জলি পেতেছি, জল দাও লেখাটা রোজ প্রায় একবার খুলি। কিছুদূর পড়ি কিন্তু পুরোটা পড়তে পারি না, মনটা অন্যকোথাও ঘুরতে থাকে। অনেককিছু অনেকভাবে মনে পড়ে একসাথে। নিজের কথা, মায়ের কথা, বন্ধুর কথা। প্রায় প্রতিদিন ভেবে চলেছি কিছু একটা লিখি, কিন্তু আমি এতো আবেগপ্রবণ যে কি লিখবো সেটাই গোছাতে পারছি না। লিখতে চাই অনেক কিছুই কিন্তু কোথা থেকে যে শুরু করি। আবেগটাকে সরিয়ে কিছু বাস্তব সমস্যার ওপর আলোকপাত করার চেষ্টা করবো আজকে। নিজের সম্বন্ধে সর্তক থাকা কিংবা সচেতন হওয়া একটা খুব জরুরী বিষয় জীবনে। অনেক খেয়ে খেয়ে হার্ট নষ্ট করে কিংবা ডায়বেটিস বানিয়ে তারপর সর্তক হলে, নিয়ম মেনে চললে কি হবে? আগেই সর্তক হই। তাহলে হয়তো ক্ষতি কম বা ক্ষতি নাও হতে পারে। সর্তকতা অনেক বিপদ এড়াতে সাহায্য করে। সেই দৃষ্টিকোন থেকে এ লেখাটির প্রয়াস। বাবা মা হিসেবে নিজের সন্তানকে রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। আসুন সন্তানের সাথে বন্ধুত্ব করি। তার সমস্যা তার জীবনটা বোঝার চেষ্টা করি। তার সুবিধা অসুবিধার মূল্য দেই।

সে কাকে বন্ধু হিসেবে চায়, কাকে চায় না সেখানে নিজের মতামত না দিয়ে তার কাছ থেকেই কারণটা বুঝতে চেষ্টা করি। কেনো সে কোন নির্দিষ্ট বন্ধুর সাথে খেলতে চায় না? সেকি খেলতে গিয়ে আমার সন্তানকে শারীরিকভাবে (Bully) আঘাত করে কিংবা এমনকিছু করে যাতে আমার বাচ্চাটি তাতে অস্বস্ত্বি বোধ করে? হয়তো একই বয়সি বাচ্চা কিন্তু অন্য বাচ্চার বিশেষ স্থানে হাত দেয় যেটা অন্যের অস্বস্ত্বির কারণ হয়? সে হয়তো ক্লাশের কিংবা স্কুলের সেরা কিন্তু আমার সন্তানকে কি সবার সামনে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে? কোন নির্দিষ্ট শিক্ষক কিংবা শিক্ষিকার সাথে কি আমার সন্তান অস্বস্ত্বিতে থাকে? তাকে ভয় পায়, পেলে কেন? আগের দিনে শিক্ষককে ভয় পাওয়া একটা স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল কিন্তু আজ নয়। আজ শিক্ষকের সাথেও বন্ধুত্ব নাহোক একটা কমফোর্ট লেভেল থাকাটা শিক্ষার জন্য একান্ত জরুরী বলে মনে করা হয়। ভালো শিক্ষকটি আসলে মানুষ হিসেবেও ভালো কীনা, সন্তান তার কাছে নিরাপদ কীনা সেটাও দেখার বিষয়। সন্তানটি কিসের মধ্যে দিয়ে সারাটিদিন যায় সেটা জানাও আমাদের কর্তব্য। তার মানসিক গতি প্রকৃতি কোন ধারায় বইছে বাবা মা যদি সেটি না জানবেন, তার মূল্য না দিবেনতো কে দিবে আর? গতি প্রকৃতি সঠিক পথে পরিচালনা করার জন্যেই সন্তানের স্কুলের সাথে যোগাযোগ রাখা, সন্তানের বন্ধুদের সাথে মেশা, সন্তানের সাথে সময় কাটানো একান্ত জরুরি। সন্তানের বন্ধুদের বাবামায়ের সাথেও সামাজিক মেলামেশা সন্তানকে সঠিক পথে রাখতে সহায়তা করে। এক বন্ধু যদি সমস্যায় পরে, অন্য বন্ধু সাহায্য করতে যাবে সেটাই স্বাভাবিক। তাই বন্ধুটি কি করছে, তার পরিবারের ভিতরটা কতোটা সুস্থির সেটাও সন্তান মানুষ করতে অপরিসীম ভূমিকা রাখে।

আমাদের দেশে এখন কোএডে পড়াশুনা করা, ছেলেমেয়েরা একসাথে চাকরি করা স্বাভাবিক ব্যাপার। এর বাইরেও আড্ডা, ব্লগ, ফেসবুকিং কাধে কাধ মিলিয়ে করছে সবাই। মেয়েরা জীন্সটিশার্ট পরে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে, যেমন ছেলেরাও কানে দুল, হাতে ব্রেসলেট পরছে। এগুলোকে আজকাল আর কেউই অন্যায়ের দৃষ্টিতে দেখছে না। সময়ের সাথে সাথে আমাদের মানসিকতায় সামান্য পরিবর্তন এসেছে। ছেলেমেয়েদের দ্রুত কাছে আসার সুযোগ অনেক ভালোর সূচনার সাথে কিছু ঝামেলাও বয়ে আনছে বইকি। তাই প্রয়োজন সচেতনতার। আত্মসচেতনতা একটা ভীষন জরুরি ব্যাপার। আগে মায়েরা তার নিজের কন্যার পিরিয়ড হলে সেটা নিয়ে মেয়ের সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে লজ্জা পেতেন কিন্তু আজকের দিনে তা বদলেছে। আধুনিক মায়েরা মেয়েদের এই সময়ের করনীয়, সাবধানতা অনেকভাবে গুছিয়ে বুঝিয়ে দেন। পিরিয়ড নিয়ে আজো দেশে অনেক লুকোচুরি করা হয়। লুকিয়ে রাখতে হবে যেন বাড়ির পুরুষরা কেউ না জানে, কারণ এটা খুবই একটা লজ্জার ব্যাপার। আসলে কি এটা একটা লজ্জার ব্যাপার? এটা একটা মেয়ের জীবনে চরম স্বাভাবিক প্রকৃতি প্রদত্ত ব্যাপার। বরং না হওয়াটাই অস্বাবাভিক। তাহলে কেনো এতো ঢাক ঢাক গুড় গুড়? এই ঢাক ঢাক গুড় গুড়ের ফলশ্রুতিতেই একটা মেয়ে তার চরম বিপদের মুহূর্তে মায়ের কাছে দৌড়ে যেতে পারে না। সেজন্যেই মা-বাবা আর সন্তানের আরো অনেক কিছু নিয়ে আজ খোলামেলা আলোচনা সময়ের দাবী, একান্ত প্রয়োজন।

পরিমলের ঘটনাটা বিচার করলে একটা প্রশ্ন আমার প্রথম মনে আসে, সেটা হলো, মেয়েটা ঘটনাটা প্রথমবার চেপে যায় পুরোপরি!!! কি করে সম্ভব এটা? এতোবড় দুর্ঘটনা, তাও এ বয়সে!!! পনর বছরের মেয়ে একদম শিশুতো আর না যে কি হয়েছে সে বুঝতে পারছে না। দ্বিতীয়তঃ সে প্রথম এটা তার মায়ের সাথে আলাপ না করে, করেছে বন্ধুদের সাথে!!! সেকি তার মায়ের ওপর আস্থা রাখতে পারেনি? তার কি তাহলে মনে হয়েছে তার কষ্ট বন্ধুরা বুঝবে, মা বুঝবে না? কতোবড় শাস্তি একটা মেয়ের জন্যে এটা? তাই পশ্চিমের মতো আমাদের দেশেও আজকাল মায়েদের তার সন্তানের সাথে সেক্স নিয়ে প্রাইভেসী নিয়ে কথা বলা অনেক জরুরী। বাবারও এ ব্যাপারে অনেক উদার ভূমিকা থাকা প্রয়োজন কিন্তু আমাদের সমাজব্যবস্থা আর সংস্কৃতিতে, মেয়েদের সাথে মায়েদেরই এই আলাপগুলো কিছুটা হয়ে থাকে, বাবারা সাধারণত অনেক দূর থেকে এড়িয়ে যান বিষয়গুলো। অনেক ছোট বয়স থেকেই ছেলেমেয়েকে গোসলে নিয়ে যখন সারা গায়েতে সাবান মাখা হয় তখন খেলার ছলেই ছেলেমেয়েকে বলে দেয়া যায়, কি কি তার শরীরের প্রাইভেট পার্ট, এবং সেখানে কারো ছোয়া নিষেধ। কেউ ছুয়ে দিলে, ব্যাথা দিলে সবার আগে সে যেন তার মায়ের কাছেই দৌড়ে আসে। ছুয়ে দিলে কি কি হতে পারে তাও সিন্ডারেলার গল্পের মতো শুনিয়ে শুনিয়ে তার মাথায় গেঁথে দিতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে এবং এওয়ার করতে হবে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এশিক্ষা এড়িয়ে গেলে মা বাবা এবং সন্তান সবাইকেই দুঃখ পেতে হবে। সন্তানকে জানাতে এবং বুঝাতে হবে সেক্সুয়াল সমস্যা বা ঘটনা কোন লজ্জার বা লুকানোর বিষয় নয়। লুকোচুরি বাদ দিয়ে জীবনের স্বাভাবিক ঘটনাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে হবে।

পশ্চিমা সংস্কৃতিতে সেক্স থেকে কি ধরনের ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে তার কিছুটা শিক্ষা দেয়া হয় বারোর দিকে। এরা অনেক ঠেকে এটা শিখেছে। বিপদ এড়ানো না গেলেও কমানো জরুরী। শুধু যে দুর্ঘটনারোধের জন্য এ শিক্ষা তা নয়। ঘটনারোধের জন্যেও এ শিক্ষা অতীব জরুরী। বার বয়সের একটা মেয়ে জীবন সম্পর্কে অজ্ঞ। কিন্তু প্রকৃতির কাছে মেয়েরা অসহায়। প্রকৃতি মেয়েদেরকে দুর্বল করে দিয়েছে এই জায়গায়। সেই বারো বছরের শিশু মেয়েটিকে রক্ষা করার জন্যে এনিয়ে মায়েদের মেয়েদের সাথে আলোচনা করা আবশ্যক। আনসেফ সেক্সের কি পরিনতি হতে পারে, এইডস এর ঝুকি, সন্তানসম্ভবনা কোনটাই একটি বার বছরের মেয়ের আশা, প্রাপ্য কিংবা কাম্য হতে পারে না। তার হাত ধরতে তখন বাবা মাকেই আগাতে হবে, ক্ষণিকের আনন্দ বা উত্তেজনা যাতে তার বুকের ধনকে কোন সমস্যায় ফেলে না দেয় সেজন্যইতো মাকে বেশি চাই সন্তানের। এই আলোচনার অভাবে আমাদের দেশে অনভিপ্রেত গর্ভপাতের অসংখ্য ঘটনা ঘটে। শিশু বয়সের মেয়েগুলোকে জীবনের চরম এক ধাক্কা জীবন সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব এনে দেয়। এ সমস্ত আলোচনা শিক্ষা কি সম্পূর্ন বিপদমুক্ত সমাজ গড়ে দিবে? না, কখনোই না। কিন্তু অবশ্যই সচেতনতা তৈরী করবে যা বিপদ কমাতে সাহায্য করবে, দুর্ঘটনা এড়ানোর হার অনেক বাড়াবে।

আর এসমস্ত শিক্ষার ভার কি শুধু মেয়ের মাকেই বহন করতে হবে? না, ছেলের মায়েরও অনেক কিছু করনীয় আছে। তার জাদুমানিক কি পড়ছে, কি কার্টুন দেখছে, কি গেম খেলছে কম্পিউটারে তা লক্ষ্য রাখা একান্ত জরুরী। অনেক সময় দেখা যায় আট নয় বছরের ছেলেরাও সেক্সুয়াল ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছে, চুমু খাওয়ার অনুশীলন করছে পাশের শিশু মেয়েটির সাথে। মা-বাবার প্রাইভেট লাইফের প্রাইভেসি সন্তানের সামনে বজায় রাখা একান্ত উচিত। ছেলের মধ্যে এধরনের প্রবণতা দেখা গেলে তানিয়ে তার সাথে আলোচনা করা, প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া দরকার। এধরনের ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া কিংবা লুকিয়ে রাখা শুধু সন্তানের ভবিষ্যতকেই অন্ধকার করবে। সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্যে পড়াশোনার পাশাপাশি এ ব্যাপারগুলোও বাবা মায়ের মনোযোগ আকর্ষনের দাবী রাখে প্রবলভাবে। নইলে পরে তার সন্তানকে নানা ধরনের কুপথে চালনা করবে। মেয়েদেরকে যৌন হয়রানি করা বা নেশায় ডুবে থাকার কারণ হিসেবে অনেক সময় মনোবিজ্ঞানীরা ছেলেদের অল্প বয়সের যৌন হতাশাকে উল্লেখ করেছেন।

অতীতে যা হারিয়েছি তা আমরা ফিরাতে পারবো না। কিন্তু যা রক্ষা করতে পারি তার জন্যে চলুন নিজে সচেতন হই, পাশের জনকে সচেতন করার চেষ্টা করি। অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত ঘটনার সংখ্যা কমিয়ে আনি। লুকোচুরি কোন সমাধান নয়। স্বাভাবিক চিন্তাই পারে সুস্থ সমাজের জন্ম দিতে।

তানবীরা
২০.০৭.২০১১

Tuesday, 5 July 2011

আমার মালতীলতা কি আবেশে দোলে ............

এক বছর হয়ে গেছে প্রায় বাড়ি যাইনি। আমার বাড়ি, নিজের বাড়ি। যেখানে নিজের সবাই আছে, নিজস্বতা আছে, আর আছি আমার আমি। পা থেকে চটিটা খুলে ছুঁড়ে ফেলে দেয়ার স্বাধীনতা আছে, চিৎকার করে কাঁদার সুযোগ আছে, হা হা করে হাসার উপলক্ষ্য আছে। কারণে এবং অকারণে বোনদের জড়িয়ে ধরে সারা বিছানায় গড়াগড়ি খাওয়ার আনন্দ আছে। ভাইয়ের ওপর বিনা কারণে চেঁচানোর ফান্ডা আছে। আমার লাগানো মানিপ্ন্যান্টের লতা আছে, মায়ের হাতের বোগেনভিলিয়ার ঝাড় আছে। সারা ঘর জুড়ে মায়ের হাতের স্পর্শ আছে, ডাইনীং টেবলের ওপর রোজ ছাঁদ থেকে তুলে আনা পুঁদিনার ভর্তা আছে। তেমন কিছু হয়তো নেই উল্লেখ করার মতো আবার সব আছে।

ভাইয়ের ছেলেটা জন্মে বড় হয়ে যাচ্ছে মাসে মাসে, তাকে এখনো ছুঁয়ে দেখা হলো না। বোনের মেয়েটা ফোনে আই-ডাই শব্দ করে তাকে ঠোঁট দিয়ে চেটে দেখা হলো না। মায়ের চুলের তেলের গন্ধ পাইনা আজ কতোদিন। আমার নিজের মেয়েটা রোজ কতো স্বপ্ন বুনে তার তুতো ভাইবোনদের নিয়ে সেগুলোতে রঙ মাখানো হলো না। ঠিক সন্ধ্যে নামার মুখে রবীন্দ্র সরোবরে এলোমেলো হাঁটা আর বটি কাবাব মিস করি। ধানমন্ডি পাঁচ নম্বরের মহুয়া চটপটি মিস করি, আট নম্বরের কোনের ঝালমুড়ি মিস করি, মুড়ি খেয়ে ঝালে পাগল হয়ে মেমোরীতে ঢুকে কোক খাওয়া মিস করি। কোক খেতে খেতে আবার বীফরোল কিংবা চিকেন প্যাটিস সাথে চকলেট পেস্ট্রি মিস করি। এই গরমে স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যে বাবার কড়া উপদেশ মাখা ঠান্ডা বেলের শরবত মিস করি। মায়ের আদর মাখা ঠান্ডা ডাবের পানি মিস করি।

একটানা বর্ষনের সাথে যুদ্ধ করে যে ক্লান্ত কাকটা নিরিবিলি জানালার সানশেডে আশ্রয় নিয়ে তার ডানা দিয়ে গা চুলকায় তাকে মিস করি। স্যাঁতস্যাঁতে ঢাকা মিস করি, ঘেমো ঢাকা মিস করি, হাস্নাহেনার গন্ধ মিস করি। ভয়াবহ জ্যামটার জন্যও আজকাল খারাপ লাগে। বসুন্ধরার এক টিকেটে দুজনের সিনেমা দেখা মিস করি। খোঁজ দ্যা সার্চ এর অনন্তকে মিস করি। আশে পাশের বাড়ির নাম না জানা সব ছেলেগুলোকে মিস করি। যাদের ফ্যাশন – ফ্যুশন নিয়ে, চুল-দাড়ি নিয়ে হাসাহাসি করে আমরা লোডশেডিং এর অসহ্য সময়গুলো সহজেই পার করে দিতে পারি। গোধূলি বেলায় ছাঁদের ওপর দাঁড়িয়ে বিদায় নিতে থাকা গোমড়া মুখো সূর্যটাকে মিস করি আর তার সাথে মিস করি নীড়ে ফেরার আনন্দে হুটোপুটি করতে থাকা আনন্দিত সেই পাখির ঝাঁকটাকে। শেষ পূর্নিমার মলিন কিন্তু বড় আপন চাঁদটাকে মিস করি। লোডশেডিং এর অন্ধকার সন্ধ্যায় অন্তাক্ষরী খেলা মিস করি, মশার কামড় মিস করি। ফেরা হবে না হয়তো আরো একটি বছর এই প্রিয় জিনিসগুলোর কাছে।

তানবীরা
০৫.০৭.২০১১