Thursday, 19 October 2017

প্রোভকেশান – ইনভাইটেশান

আমার শেষ লেখাটির কিছু দুর্বল দিক, এক পাক্ষিকতা আমার কোন কোন শুভানুধ্যায়ী আমার কাছে তুলে ধরেছেন আমাকে "র‍্যাশনাল" হওয়ার উপদেশ দিয়েছেন লেখাটি যেহেতু পাবলিক আছে, আলোচনাও পাবলিক থাকা জরুরী


সেই মেয়েরা কেন ফোন নম্বরগুলো ব্লক করে নি? কেন তারা বিভিন্ন নামে সেইভ করেছিলো? একটি নামে সেইভ করলেই তো পারতো কুত্তাশব্দটি খুব যৌনউদ্দীপক কার এত ঠ্যাকা পরেছিলো, দিনের পর দিন সাড়া না পেলেওমিসকলদিয়ে যাওয়ার? নিশ্চয়ই মেয়েগুলো মজা পাচ্ছিলো


আমি নিজেও বিভিন্ন নামে “নম্বর”সেইভ করতাম একটা সুবিধা অনুভব করতাম, কোন কোন মানুষের ঠ্যাকা শেষ, কার কার অত্যাচার এর হাত থেকে মুক্তি পেলাম, জানা সুবিধে হত হ্যাঁ, হয়ত দরকার ছিলো না কিন্তু সুবিধে লাগতো ২০১৪ সালে যখন বাংলাদেশে যাই, তখন অযাচিত ফোনের হাত থেকে বাঁচার জন্যেআইফোনএরকল ব্লকিং এন্ড আইডেনটিফিকেশানঅপশনটা ব্যবহারের চেষ্টা করেছিলাম কাজ করে নি, জানতে পেলাম শুধুগ্রামীন ফোনপ্রোভাইডারের এই সুযোগ আছে, অন্য প্রোভাইডারদের নেই আমিবাংলালিঙ্ক" এর গ্রাহক
এখন আমাকে জানালো হলো, যে কোন প্রোভাইডারকে ফোন দিয়ে বললেই, যে কোন নম্বর ব্লক করা সম্ভব, সামান্য কিছু ফী এর বিনিময়ে আর এটা নাকি দেশ জুড়ে সকলেই জানে আমি জানি না, জানতাম নাঅন্যদের জন্য এই জায়গাটুকু ওপেন রাখলাম

আমি যে পরিবারে বড় হয়েছি, সেখানে গালি দেয়া সম্পূর্ণ নিষেধ ছিলো যত কিছুই হোক, গালি দিলেই চরম শাস্তি এখন মা-বাবার সাথে না থাকার ফায়দা উঠিয়ে, চরম ভাবে গালি দেই, আর সবার আগে, “কুত্তার বাচ্চাদেই এবং কসম কি কসম, কোন রকম উদ্দীপনা থেকে দেই না, চরম তিতি বিরক্তি থেকেই দেই


প্রসংগতঃ  সুইডেনে এক মিলিয়নের বেশি নারী #Metoo ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়েছে। এ নিয়ে সেখানে মিডিয়াতেও ব্যাপক প্রচার হয়েছে। এবার #IHAVE হ্যাশট্যাগ নিয়ে পুরুষরা ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। মেয়েদের প্রতি ন্যুনতম খারাপ আচরণ থেকে শুরু করে সব ধরনের সেক্সুয়াল অসদাচরণ যারা করেছে, তাদের স্বীকারোক্তিমূলক ক্যাম্পেইন এটি। চলেন দেখি, “MeToo” এর পাশে কত গুলো হ্যাশ ট্যাগ জমা হয় নারীদের প্রতি সহিংসতায়চতুর্থ খারাপ নগরী ঢাকা”, এটা বৈশ্বিক রিপোর্ট, উইম্যান্স চ্যাপ্টার বা সুপ্রীতি দি কিংবা আমার মত "ইর‍্যাশনাল" কারো বানানো কিছু নয় এক কোটির বেশি মানুষের বসবাস এমন ১৯টি মহানগরে এক জরিপের মাধ্যমে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন এ তালিকা তৈরি করেছে। ৩৮০ জন বিশেষজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে এ জরিপ করা হয়েছে। তারপরও, কিছু হ্যাশ ট্যাগ তো আশা করা যেতেই পারে


এরপর আসে সেই যুগান্তকারী "র‍্যাশনাল" প্রবাদ, “এক হাতে তালি বাজে নাআচ্ছা তাই কি?


কেন মেয়েরারেপডহয় আর খুন হয় এক তরফা? ছেলেরা কেন হয় না? আজ পযর্ন্ত কোথাও কি কোন ছেলেরেপডহয়েখুনহয়েছে? যদি এক হাতে তালি না বাজবেজোরকরার প্রয়োজন কি? “খুন বা কেন করে? দু বছরের শিশু থেকে আশি বছরের নারী সবার তালি দ্বারাই বেজে যান? আর এই প্রোভোকড ছেলেরা এক তরফা হয় যে জায়গায় মেয়েরা রোজ অযাচিত স্পর্শ, শব্দ, অশ্লীল গান, অঙ্গ ভঙ্গি মধ্যে দিয়ে যায় তারা কিন্তু প্রভোকড হয় না, তারপরেও কি করে বলি আমরা অবলীলায়, এক হাতে তালি বাজে না?


একটা উদাহরণ না টেনেই পারছি না


ধরুন, একটা মেয়ে আর একটা ছেলে দুজনেই কাজের জন্যে বাইরে গেছে ছেলেটি এবং মেয়েটি সমান পোস্টেই কাজ করে রাতে হোটেলের বারে বসেমেইলচেক করছে, অফিসের টুকটাক কাজ সারছে কাল সকালে প্রোডাক্ট লঞ্চ, খুব স্ট্রেসের মধ্যে আছে ড্রিঙ্ক ছেলেটিও করছে, ড্রিঙ্ক মেয়েটিও করছে মানসিক চাপ দুজনের আছে ছেলেটি, মেয়েটির দিকে চেয়ে হাসলো, মেয়েটি হেসে তার প্রতি উত্তর দিলো টুকটাক কথা হতে থাকলো, কাজের কথা দিয়ে শুরু হলেও ব্যক্তিগত  দিকে মোড় নেয়ার চেষ্টা শুরু হলো অবস্থা আঁচ করে মেয়েটি নিজ কামরায় যাওয়ার প্রস্তূতি নিতে শুরু করলে ছেলেটি তাকেড্রিঙ্ককিনে দিতে, তার সাথে সময় কাটাতে নানা ভাবে উদ্বুদ্ধ করতে থাকে যতক্ষণ মেয়েটি কঠিন কন্ঠে ছেলেটিকে না বললো, আই কেইম হিয়ার ফো মাই ওয়ার্ক এন্ড নট স্লাট


একজন আপনার সাথে হেসে কথা বললে কিংবা আপনার কথা’র জবাব দিলেই প্রভোকড বা ইনভাইটেড ফীল করেন ক্যান ভাই? “ফ্র্যাজিল” তো আপনারা অনেক বেশী। ছোটবেলা’র শোনা গানের মত, “কাছে এসে পাশে বসে কথা বলে যে, এ মন সে আমায় ভালবেসেছে”?


যদিও দেখা যাবে সিরিয়াল দেখার সময় কিংবা খবরের কাগজ পড়ার সময়, এই ভদ্রলোকই মেয়েদের স্বভাব চরিত্র নিয়ে খুব বাজে মন্তব্য করছে কিংবা ওড়না ছাড়া বাইরে যাওয়া সামাজিক অবক্ষয়ের বিপক্ষে ফেসবুকে বিরাট এক প্রবন্ধ লিখে ফেলেছে


মেয়েটি রাগে, ভয়ে, অপমানে কষ্টে কাঁপতে কাঁপতে যদি এই ঘটনা কারো সাথে শেয়ার করে, ছেলে বা মেয়ে নির্বিশেষে, যার সাথেই বলুক না কেন, তাহলে যে মন্তব্যগুলো কানে আসবে তা হলো,
বারে বসাই ঠিক হয় নি, রুমে বসে থাকা দরকার ছিলো
বসলেও ড্রিঙ্ক করা উচিত হয় নি
ড্রিঙ্ক করলেও ছেলেটি সাথে কথা বলা ঠিক হয় নি তার বোঝা উচিৎ ছিলো, ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি
কিন্তু মেয়ে বলে সে তো অফিসে কাজে কোন ছাড় পাবে না তাহলে, মেয়ে বলে তাকেই কেন সব কিছু বুঝে বসে থাকতে হবে? বরং একটি মেয়ের মাথায় তো, অফিসের বোঝা বাইরে সংসার, সন্তান আরও কিছু বোঝা চাপ থাকে একটা ছেলে’র চেয়ে একটা মেয়ে এমনিতেই অনেক বেশি চাপ নেয়।


একই প্রশ্ন যুগ থেকে যুগ অব্ধি ঘুরতে থাকে,
কেন বাসে উঠলো মেয়েটি? ভাল মেয়েরা সন্ধ্যা রাতে একা বাসে ওঠে? শুনেছেন কখনো?
কেন মেলা গেলো মেয়েটি? ভদ্রলোকেরা মেয়েরা কখনো মেলায় যায়? শুনেছে কেউ কখনো?
কেন বাড়ি বাইরে পা দিলোসৃষ্টিকর্তা এ জন্যেই মেয়েদের চলাফেরায় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
কেন আসলে তারা জন্ম নিলো? সৃষ্টিকর্তা মেয়েদের সৃষ্টি না করলেও তো পারতেন।


আর এই কাজ গুলো যারা করছে, সেই ছেলে গুলো কোন পরিবারের সন্তান? তাদের বাসে চড়া, মেলায় যাওয়া, বাইরে যাওয়া কিছুতেই কোন বাঁধা নেই কেন?


আচ্ছা, মেয়েরা চাঁদে গেছে জানেন তো? নাসায় কাজ করে মেয়েরা জানেন সেটা? ক্যান্সারের ওষুধের গবেষনায় মেয়েরা আছে, জানেন? মেয়েরা যে টাকা রোজগার করে তা দিয়ে ছেলেরা যত টুকু জিনিস দোকানে কিনতে পায়, ঠিক ততটুকুই পাওয়া যায়, অবাক কান্ড তাই না?


“এবিউজ” কথাটা’র মানে কি জানি সবাই? “এবিউজ” মানে কিন্তু “ধষর্ন” নয়। অযাচিত প্রতিটি “স্পর্শ” “শব্দ” “দৃষ্টি” ইত্যাদি সবই বাই ল এবিউজের আন্ডারে পরে, ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড। মেয়েরা “ফ্র্যাজিল” বলেই হয়ত এই আইন তৈরী করা হয়েছে। দৃষ্টিতেই যেহেতু ভেঙ্গে পরে, তাই না? তবে, ছেলেরাও এই আইনের আশ্রয় নিতে পারে। “এবিউজ” আপনি ভারবালিও করতে পারেন“ঐ ছেমড়ি তোর ওড়না কই” ভারবালি এবিউজ। এবিউজ কিন্তু মেয়েরাও করে। পাশের বাসা’র ভাবী’র স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আলোচনা কিন্তু ভারবাল এবিউজে’র মধ্যেই পরে।


আলিয়া ভাটের ভিডিওটি এই পোস্টেও যোগ করলাম, যাদের এবিউজ সম্পর্কে ধারনা স্পষ্ট নয় তাদের জন্যে।
ফেসবুকে দারুন দারুন কিছু লেখা পড়তে পাওয়া যায়। যত সম্ভব ২০১৬ সালে ফারজানা নীলা সাদা-সাপ্টা এ ধরনের কিছু লিখেছিল,


কেউ শর্ট জামা পরে মানে এই না যে সে আপনার সাথে শুতে চায়
কারো অনেক ছেলে বন্ধু মানে এই না যে সে সবার সাথে শুয়ে বেড়ায়
কেউ তার প্রেমিকের সাথে থাকে মানেই এই না যে সে সবার সাথে ঘুমায়
কেউ মদ সিগারেট খাওয়া মানেই এই না যে সে খুব সহজ লভ্য
রাত বারোটা পর্যন্ত একটা মেয়ে বাইরে থাকার মানেই এই না যে
সে কারো সাথে থেকে এসেছে
কেউ পেশায় মডেল বা নায়িকা মানে এই না যে সে কলগার্ল
প্রমোশোন পেলেই ধরে নেবেন না বসের সাথে ইটিশ পিটিশ আছে
কলগার্ল হলেও ধরে নেয়া’র কোন কারণ নেই, যে কেউই চাইলে পাবে।

“মেয়ে” নিয়ে যাদের শুধু এই ভাবনা গুলো আসে তাদের উদ্দেশ্যে লেখা ছিল।  
এই লেখায় কি কি “ইর‍্যাশন্যাল” ভুল আছে, জানতে অপেক্ষায় রইলাম। আলোচনায় বাঁধা নেই।


Monday, 16 October 2017

সুপ্রীতিদি

সুপ্রীতিদি’র লেখা “অ্যাবিউজের শিকার হয়েছি আমি” পড়তে পড়তে ফিরে গেছিলাম এক দশক সময়ের আগে। মেঘ কে নিয়ে তখন প্রায় দেশে যাই। বাড়িতে একমাত্র শিশু, সবার আদরের। বাড়ির লোকজনের কোলে পিঠে তো ঘোরেই সাথে আছে বোনাস, ভাইয়ের বন্ধুরা, বোনেদের বান্ধবীরা। মেঘ’কে দেখতে আসা “উপলক্ষ্য” করে প্রায়ই দুপুর বেলা, সদ্য স্কুল পেরোনো ছোট বোনদের বান্ধবীরা আমাদের বাড়ি ভীড় জমাতো। দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে, ঘুম তাড়াতে হাতে গরম চা নিয়ে শুরু হত গল্প, ম্যারাথন গল্প।

তখনও এতো সব এ্যাপ, ফেসবুক এসব হয়ে ওঠেনি তাতে কি, কখনও কি কিছু আটকে থেকেছে? মোবাইলেরমিসড কলএর যুগ তখন গল্পের মাঝে মাঝেই মাঝেই ফোন বেজে ওঠে, স্ক্রীনে ভেসে ওঠে নামঃ  ডিস্টার্ব ১, ডিস্টার্ব ২, কুত্তার বাচ্চা ১, শুয়োরের বাচ্চা, মাঝ রাতের কুত্তার বাচ্চা আমি হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি, এগুলো কি? বললো, নাম্বার গুলো এভাবে সেভ করে রাখলে সুবিধা, জানা যায়, কার ফোন, ধরবে কি, ধরবে না। কোনটা থেকে দুপুরে বিরক্ত করে, কোনটা থেকে রাতে বিরক্ত করে ইত্যাদি ইত্যাদি।

সেসব গল্প থেকে গল্প এগোতে এগোতে এসে থামলো, “এবিউজ” বা “নির্যাতনে”র গল্পে। কে, কিভাবে, কোথায় কেমন করে নির্যাতনের ভুক্তভোগী। বেশী’র ভাগই বাড়িতে হুজুরের দ্বারা, বাকি সব গৃহ শিক্ষক আর নিকট আত্মীয়ের দ্বারা। মায়েদের বললে তারা বুঝতে পারতো না অনেক সময়, বিশ্বাস করে উঠতে পারতো না, মায়ে’রাও তখন অনেক ছোট, অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে মা হয়েছে, সবসময় প্রতিকার করে উঠতে পারতো না। গল্পে গল্পে দুপুর বিকেলে গড়াতো। দুপুরের ঘুম শেষ করে আম্মিও এসে বসতো আমাদের এই আড্ডায়, শুনতে শুনতে নিজেও বলে ফেলতো, তাঁর ছোটবেলার জানা শোনা কিছু অভিজ্ঞতার কথা। কি সব অদ্ভূদ দুপুর, বিকেল কাটতো। মধ্য চল্লিশের মা, তিরিশ ছুঁই ছুঁই আমি আর মেঘের থেকে একটু বড় লাগতো আমার কাছে ওদের, সেই সদ্য কৈশোর পেরোনো সব বালিকা’র দল। সবাই যার যার “লুকিয়ে রাখা কান্না”র ঝাঁপি খুলে বসতো। এমন হয়ে গেলো, বুক খালি করতেই এরপরে সবাই গল্প মিস দিতে চাইতো না। রোজই আসতো সব এমনকি ছুটির দিনেও। বড় আপা, লেখে, তাকে জানানো দরকার সব।

সুপ্রীতিদি’র লেখা’টা পড়তে পড়তে বেশ কয়েকবার ভাবলাম, লিখে কি হবে? সেই শরৎচন্দ্র থেকে আশাপূর্ণা দেবী, সুচিত্রা ভট্রাচার্য থেকে তসলিমা নাসরীন সবাই লিখে যাচ্ছেন। শরৎচন্দ্র তার বহু লেখায় লিখে গেছেন, বিধবা আশ্রিতা যখন গর্ভবতী হতেন, তাকে ওষুধ খাইয়ে মেরে ফেলা হতো কিংবা কাশী নির্বাসনে পাঠানো হত, এরপর তার কি হতো, তা কেউ জানে না, জানার চেষ্টাও করে না। কিন্তু গৃহকর্তা থেকে যেতেন বহাল তবিয়তে, সমাজে প্রতিষ্ঠিত। নারী’রাই অচ্ছুৎ হয় চিরকাল, পুরুষে’রা না। নারী’রা পতিতা হয় – পুরুষেরা???? আজও প্রশ্ন।

কিন্তু না লিখেই কি হবে? ঢাল তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ করলেই কি সমাজ, মানসিকতা কি বদলাবে? নদী’র গতিমুখ পাল্টাতেও দশক পার হয়ে যায়। একটু একটু বদলাতে বদলাতে কখন যে অনেকখানি বদলে গেছে সেটা অনুভব করা যায় এক-দুই দশক পরে। তাই বরং হয়ত লেখাটাই শ্রেয়। দুই দশক আগেও হয়ত সুপ্রীতি’দি এভাবে লেখার কথা ভাবতেন না। আমিও হয়ত আজকে এই লেখা লিখতাম না।

পুরুষের মধ্যে কেউ কেউ ধর্ষণের কাজ করে, সবাই করে না, তবে সব পুরুষই সাম্ভাব্য ধর্ষণকারী।
- হুমায়ুন আজাদ
কিন্তু এরা অনেকেই হয়ত “সুপ্রীতি’দির লেখা পড়ে জিঘাংসিত হয়ে যান। নিজেদের চেহারা এভাবে আয়নায় দেখতে কার’ই বা ভাল লাগে। শুরু হয় নানা রকম ট্রল, তামাশা, কুৎসিত মন্তব্যের ঝাপ্টা।

যে সব মায়েরা এই “কাউকে না বলতে পারা” নিদারুন কষ্টের মধ্যে দিয়ে যান, তারা তাদের মেয়েদের প্রতি কি নিস্করুণ রক্ষনশীল হন, শুধু তারাই জানেন। সাত – আট বছরের বাচ্চা মেয়েটি যখন বেনী দুলিয়ে আবদার করে, মা উঠোন পেরিয়ে দাদুর বাড়ি খেলতে যাই, ঐ মোড়ে যাই, ছাদে যাই, মা বার বার নিষেধ করে মেয়েটি ঠোঁট ফুলিয়ে অভিমানের কান্নায় ভেসে যায়। মা তাকে ভালবাসে না, খেলতে দিতে চায় না ইত্যাদি ইত্যাদি কত চিন্তা তার ভাবনায় আসে।  ঐটুকু বালিকা’কে অব্যক্ত ব্যথা মায়ের পক্ষেও বলে ওঠা সম্ভব হয় না।
অনেক মা হার মেনে বলে, চল তোকে আমি নিয়ে যাই।
অভিমানী গলায় মেয়ের কথা, কেন সব সময় আমি তোমার সাথে যাবো? কেন অন্য কারো সাথে আমি যেতে পারি না।
--- এসব প্রশ্নের উত্তর জানা সত্বেও মা বলে উঠতে পারে না ...............

১৬-১০-১৭

https://www.youtube.com/watch?v=JBQ7NMm2faA

https://www.youtube.com/watch?v=mIiGry20tiI

সরকারী উপঢৌকন /// এবিউসিভ সম্পর্ক

ইন্টার্ণি শেষে “ফিলিপ্স” এ চাকুরী হলো। ছুটিতে দেশে গেলাম। সব সহকর্মীদের জন্যে দেশীয় রেওয়াজ মেনে “উপহার” আনলাম। সবাই বেশ খুশী খুশী মনে গ্রহণ করলো। আদতে কি করেছে জানি না, কিন্তু সামনে সবাই বিগলিত মুখ করলো। যেমন করে ইউরোপীয়ানরা, মার্জিত ব্যবহার, সবার সাথে, কম বেশী সব পরিস্থিতিতে। যখন “ম্যানেজার”কে উপহারটা দিতে গেলাম, তিনি সবিনয়ে প্রত্যাখান করলেন। অথচ তার জন্যেই সবচেয়ে দামী উপহারটা আনা। আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরা অবস্থা প্রায়। আমার “নিরাশ” মুখ দেখে তিনি ড্রয়ার থেকে “CAO (Collective Labour Agreement)” বইটি বের করলেন। তারপর নির্দিষ্ট পৃষ্ঠা খুলে দেখালেন, সহকর্মী’রা চাইলে হয়ত “উপহার” আদান প্রদান করতে পারে কিন্তু ম্যানেজার – ডিরেক্টরা চাইলে উপহার গ্রহন করতে পারে না, আইন করে নিষেধ করে দেয়া আছে। আগে তো Collective Labour Agreement বইয়ে থাকতো, এখন ডিজিটালি থাকে, বিশ্বাস হয় না, কোম্পানী’র ওয়েবসাইট গুলো চেক করে দেখুন। আজকাল তথ্য আর গোপন ব্যাপার নয়। বোতাম চাপলেই আপনার দোড় গোড়ায় হাজির।


এসব নিয়ম শুধু ফিলিপ্সের একান্ত ভাবনা নয়। বড় বড় সব কোম্পানীই মোটামুটি এই নিয়মগুলো পালন করে চলে। রাষ্ট্রীয় যন্ত্র তো আরো সতর্ক। আর এসব “নীতি” ইউরোপকে স্বচ্ছ ইউরোপ বানিয়েছে আর “নীতিহীন” এশিয়া – আফ্রিকাকে বানিয়েছে দুর্নীতি তে চ্যাম্পিয়ন। ছোট থেকে বড়, দেশে কিংবা বিদেশে সবর্ত্রই একই হাল।


উপহার গ্রহন আইন করে কেন নিষেধ করা হয়েছে তা বোধহয় আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি, নয় কি? প্রধান বিচারপতি কে নিয়ে নাটক শেষ হতে না হতেই চার জন উপাচার্যের নাটকীয় বলিদান। ক্ষমতার অপব্যবহার, লোভ, দুর্নীতি আর পদ লেহন রাষ্ট্রের কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা আজ বিশ্ববাসী’র কাছে এক নির্লজ্জ উদাহরন হয়ে রইল। তাও এই ডিজিটাল যুগে। আমলাতন্ত্র দাঁড়িয়েই আছে দেয়া আর নেয়া’র ওপরে। ব্রিটিশ’রা ভারতবর্ষ ত্যাগ করেছে প্রায় আশি বছর হতে চললো কিন্তু ভারতবর্ষের আমলারা এখনো ব্রিটিশ সিস্টেম ত্যাগ করতে পারে নি। তারা পা চাটাচাটি আর ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে আজও তুমুল ব্যস্ত।

12-10-17



কোন মানুষ যখন কোন “এবিউসিভ” সম্পর্কে দিনের পর দিন জড়িয়ে থাকে, একটা সময়ের পর তার স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার মস্তিক যদি তাকে সংকেত পাঠায়ও কিন্তু তার মন থাকে স্থবির। কষ্ট পায়, মানতে পারে না আবার শেকল ভেঙে বের হতেও পারে না। কি করবে আর কি করবে না, ভেবেই সারা। যারা শেকল ভাঙতে পারে তারা নিসন্দেহে সাহসী। যারা আপোষ করে তারা সুখী। যারা দুয়ের মাঝে আটকে থাকে, তারা দীন। জাগতিক যত প্রাচুর্য্যই থাকুক, তাদের জীবন আটকেই থাকে – আটকেই থাকে – আটকেই থাকে, করুণা তাদের জন্যে। এক বুক, এক গলা, এক আকাশ, এক ভরা পূর্নিমা, এক সমুদ্র করুণা।

সাহসীরা আটকে থাকে না, তারা পেছনে তাকায় না, সামনে আগায়। যে আটকায়, সে সারা জীবনের জন্যেই আটকে থাকে।  “সিক্রেট সুপারস্টার” সিনেমায় মা’টি যেমন, জানছে – বুঝছে কিন্তু আটকে আছে।  কোথায় – কিসে আটকে আছে – কে জানে তার উত্তর? এই মহাবিশ্ব, ঐ অন্ততকাল নাকি সৌরজগত। জবাব দাও – কেউ কি জানো?

প্রকৃতি করুণাময়প্রকৃতি অনেক সময় নিজে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে কিছু সমস্যার নিজের মত সমাধান করে দেয়সে সমাধান রুঢ় হতে পারে, মায়াময়ও হতে পারে কিন্তু তখন আর মানুষের হাতে কিছু থাকে না।

১৫/১১/২০১৭


Thursday, 21 September 2017

লিখেছি কাজল চোখে – দুই

নীল খামে উড়ে আসা চিঠি, কিছু হারানো দিনের কথা, মিষ্টি কিছু সুবাস নিয়ে আসা সেই চিঠি’র কথা বলছি। আমাদের বাচ্চা’রা জানে না, জানবেও না “চিঠি” বলতে আসলে কিছু ছিলো, তাই না? যেমন জানে না, এই কুড়ি বছর আগেই “মোবাইল” ছাড়াও একটা পৃথিবী ছিলো। পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ এখনো আছে, যারা “হোয়াটএ্যাপ” “স্ন্যাপচ্যাট” এর নাম জানে না। ওদের পৃথিবী বড্ড যান্ত্রিক, বাস্তবমুখী।

চিঠি পড়তে যত’টা ভাল লাগে, লিখতে ঠিক ততোটাই কুঁড়েমি। আর না লিখতে লিখতে অভ্যাসও চলে গেছে। বিনি সূতো’য় গাঁথা কথা’র যে মালা, শব্দের পর শব্দের সে গাঁথুনি দিয়ে। আচ্ছা, কখনো কি খেয়াল করেছো, চিঠি লিখতে গেলে আমরা অনেক বেশি “কাব্যিক” শব্দ খুঁজে নেই যেটা কথা বলার সময় করি না। কেন বলো তো? অসেচতন ভাবে করি কি, নাকি স্কুলে শেখানো হয়েছে বলে না ধরেই নিয়েছি এটা প্রচলিত রীতি। অনেক তো জানো তুমি, ভেবে বলতো, কেন করি আমরা এটা?

জানো, বড় কিছু পড়তেও আজকাল রাজ্যের আলসেমী ভর করে। লেখা তো দূর কি বাত। বার বার মনে হয়, কি হবে এত কথা জেনে বা জানিয়ে। কার কি এসে গেলো। ফেসবুকে ছোট ছোট স্ট্যাটাস পড়তে পড়তে অভ্যস্ত হয়ে গেছে এই মন। মানুষ এক অদ্ভূদ সৃষ্টি, কত দ্রুত পরিস্থতির সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে ফেলে। নিজেও হয়ত অনুভব করে না, বদলে যাচ্ছে। আসলে টিকে থাকাই তো জীবন। নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারলো না বলেই তো, অতিকায় “ডাইনোসার” বিলুপ্ত হয়ে গেলো কিন্তু টিকে গেলো “তেলাপোকা”। হ্যাঁ, বলতে পারো, আজও মানুষ ডাইনোসারের ফসিল খুঁজে বেড়ায়, তাদের নিয়ে সিনেমা হয়, ফিকশান-নন ফিকশান বই লেখা হয়, তাদের সম্বন্ধে জানতে মানুষের আজও আগ্রহের কোন কমতি নেই। তেলাপোকা কি সেই তূল্য? আমি বলি, যার যার দৃষ্টিভঙ্গী’র পার্থক্য। এই বংশ বিস্তার করে টিকে থেকে “তেলাপোকা” কি নিজেকে কম গৌরবান্বিত ভাবছে?

প্রকৃতি হলো নিষ্ঠুরতার অপর নাম কারো থাকা না থাকায় এই মহাবিশ্বের কোথাও কিছু পরিবর্তন হয় না তারপরও আমরা নিজেদের উপস্থিতি জাহির করতে কত ভাবে ব্যস্ত থাকি নিজেকে এই প্রকৃতির অপরিহার্য অংশ বলে ভাবি ধরে নেই, কাল যদি না জাগি, তাহলে? নদী তার গতি পথ বদলাবে না, সূর্য আবহাওয়া দপ্তরের সময় মিলিয়ে জাগবে আবার অস্তও যাবে, কা কা করে কাক তার উপস্থিতি জানান দেবে। আকাশ কিংবা নক্ষত্র বীথিকা হয়ত জানেই না কে ছিলো কিংবা কে হারিয়ে গেলো।  তারপর ও সারাবেলা কি প্রাণান্ত চেষ্টা থাকে, আরো ভাল থাকবার।


চাঁদের আলো ছোঁয় কি তারে  
 খুঁজে বেড়াই যেই অজানারে

প্রকৃতির এই অমোঘ নিয়তি মেনে নিয়েই, পুরনো’রা ঝরে পরে, নতুনেরা জায়গা করে নেয়। আচ্ছা, সব নতুন কি পারে সব পুরনো জিনিস মুছে দিতে? হারিয়ে যাওয়ার সুর কি আসলেই কোথাও বাজে না? মহাকালের এই খাতায় কোন হিসেব থাকে কি? আর আমি এত প্রকৃতি বিরুদ্ধ একটা মানুষ জানো, একটা কানের দুল, ওড়না কিংবা টপস জাতীয় সামান্য কিছু হারিয়ে গেলেও, বছর ধরে আমার মন খারাপ থাকে। নতুন জিনিস পেয়েও হারানো জিনিসের শোক ভুলতে পারি না। অশ্রুজলে কিংবা কান্না গাঁথায় থেকে যায় মনের কোন কোণে। বলবে, অদ্ভূত আমি, হুম, জানি তো।  

এই যা, গল্পে গল্পে বেলা গড়িয়ে গেলো। নির্ঘ্যাত সব কিছুতে আজ আমার দেরী হবে, ছুটছি – আবার কথা হবে, ভাল থেকো।

21-09-2017




Wednesday, 6 September 2017

পুড়বে নারী উড়বে ছাই – তবেই নারীর গুন গাই

আজ চব্বিশ বছর বিদেশ আছি। বাসা থেকে কাজে আসি আর কাজ থেকে বাসায় যাই। তার বাইরে কোন দিন এক পা’ও দেই নাই। কাঁচাবাজার যা লাগে বাবু’র আব্বা নিয়ে আসে। জামা কাপড় ওই ভাল চিনে, ওর পছন্দ ভাল। বাজারে গেলেও বাবু’র আব্বু’র সাথেই যাই।  

আজকে বিশ বছর চাকুরী করি। বেতনে’র টাকা সবটা বাবু’র আব্বুকে দিয়ে দেই। ওই সব কিছু দেখাশোনা করে তো। কোনদিন বেতনের টাকা থেকে একটা বার্গার কিনেও খাই নাই।

বাবু’র আব্বু অন্য জামা কাপড় পরা পছন্দ করে না। ঠান্ডা হলেও তাই শাড়ি’ই পরি। ওর শাড়ি’ই পছন্দ।

বিয়ের আগে অনেক সাজতাম, অনেক ফ্যাশন করতাম, হাত ভর্তি নানা রঙের কাঁচের চুড়ি, ম্যাচিং বড় টিপ ছাড়া তো শাড়িই পরতাম না। বাবু’র আব্বুর আবার এসব পছন্দ না। তাছাড়া বয়স ও হয়ে গেছে, আর কত, হিজাব করি।

বাবার অনেক ইচ্ছে ছিলো আমি সরকারী অফিসার হবো। ছোটবেলা থেকেই আমাকে বার বার বলেছে। বিসিএস দিলাম, তখন বিয়ে হয়ে গেলো। বিয়ের পরে দেখলাম, বিসিএসে টিকেছি। শাশুড়ি’র আবার চাকুরী করা বউ পছন্দ না। বাবু’র আব্বু আবার তার মাকে খুব ভালবাসে, দুঃখ দিতে পারে না। তাই আর চাকুরী করা হয় নি। দেশেও যখন করি নি তখন বিদেশেও আর ভাবি নি। আর বাবু’র আব্বুর টাকায় তো আমাদের চলেই যায়।

শুটকি মাছ আমার খুব পছন্দ। আমার বাবা মায়ের ও খুব পছন্দ, ছোটবেলা অনেক খেয়েছি, খুব হত আমাদের বাড়িতে। বাবু’র আব্বু শুটকি’র গন্ধ নিতে পারে না তাই আর রান্না করি না। বাইম মাছ আমি খেতে পারি না, কেমন সাপ সাপ দেখতে। বাবু’র আব্বুর আবার ভীষণ পছন্দ তো, ওকে করে দেই। আমার শাশুড়ি’র কাছ থেকে ভাল করে শিখে নিয়েছি। এখন ঠিক ওনা’র মত পারি।


সুখী সুখী গলায় অহংকারের সাথে এই কথা গুলো যারা বলেন, তাদের মধ্যে প্রফেশনাল মেয়ে থেকে আমার মত আকাট মূর্খ মেয়ে ও আছে।

০৬/০৯/২০১৭ 

জার্নাল জুলাই - আগষ্ট

সেই অনেক অনেক কাল আগে বাড়ি’র কাছে আরশী নগর “প্যারিস” বেড়াতে আসতাম। নেদারল্যান্ডস থেকে বের হওয়ার তখন দুটোই সুলভ জায়গা, জার্মানী কিংবা ফ্রান্স। জার্মানী গেলে অনুধাবন করা কষ্ট হত যে নেদারল্যান্ডসের বাইরে এসেছি, ফ্রান্স তথা প্যারিসই ছিলো তখন আমাদের একমাত্র বিদেশ। “দ্যা সিটি অলোয়েজ লিভ”দিনে সুন্দর আর রাতে যাকে বলে তিলোত্তমা। আইফেল টাওয়ার এর পাদদেশে, সিনাইনদীর তীরে বসে, নদীর ওপরের সমস্ত কারুকাজ করা ব্রীজ গুলোতে তখন আলো জ্বলে উঠেছে, আইফেল টাওয়ারকে ঘিরেও রয়েছে হাজার আলোর মালা, সুখ সুখ অসহ্য একটা কষ্টে মনে হত – এ সময় এখানেই শেষ হয়ে যাক। মরন এলেও এখানেই, এই মুহূর্তটাই সত্যি হোক।

হেলেন কেলার’র কে বার বার মনে পড়তো, The best and most beautiful things in the world cannot be seen or even touched. They must be felt with the heart.

নেদারল্যান্ডস থেকে গাড়িতে প্যারিস আসার সময়, ফ্রান্সের জাতীয় বিমান বন্দর “Charles de Gaulle Airport” এর পাশ দিয়ে আসতে হতো। হাইওয়ের ওপর ছিলো রানওয়ে। আমাদের মাথার ওপরে প্লেন নামছে, উড়ছে। মুগ্ধ হয়ে দেখতাম, যদিও গাড়িটা হাইওয়ে তথা রানওয়েটা ক্রস করার সময় মাথাটা একটু শিরশির করত, এই বুঝি পরলো মাথায় একটা অনুভূতি হত বৈকি। যত কটা রানওয়ে, যতক্ষণ দেখা যেতো চেয়ে থাকতাম আদেখেলা মত ভাবতাম যদি এখান থেকে একবার উড়তে পেতাম

কালের বির্বতনে সিনাই, মাস, রাইন, মুজেল সব নদীতে অনেক পানি বয়ে গেছে জায়গার অভাবে নেদারল্যান্ডসের “স্কিপল” বিমানবন্দরও হাইওয়ে’তে রানওয়ে তৈরী করেছে। মাথার ওপর প্লেনের ওড়াওড়ি দেখতে আর প্যারিস না গেলেও চলে। যদিও এখনও একই ভাবে গ্রাম্য লোকের শহর দেখার মতই মুগ্ধ হই মাথাও ওপরে প্লেন ওড়া দেখে।  আজ এতো এতো দিন পর অবশেষে ফ্রান্সের “Charles de Gaulle Airport” থেকে জন এফ কেনেডী’তে উড়ছি .................. কারণ অবশ্য – ডেল্টা এখান থেকেই সবচেয়ে সস্তার ডীলটা দিচ্ছিলো, আর কিছু না J

যদি সুস্থ ভাবে পৌঁছে যাই তবে আবার ফেসবুকে সবার সাথে দেখা হবে ...............

*****




কাছের মানুষ যারা আছে তারা জানেজন্মদিন নিয়ে আমার আদিখ্যেতার শেষ নেই প্রিয়জনদের জন্মদিন নিয়ে আহ্লাদপনা করতে আবার নিজের জন্মদিনে প্রিয়জনদের দ্বারা আহ্লাদিত হতে দুটোতেই আমার আগ্রহের সীমা নেই। অফিসেও সবাইকে পাগল বানিয়ে দেই, ওরা অবাক হয়ে বলেই ফেলে, এই নিয়ে এতো আনন্দের কি আছে? হয়ত মনে মনে বলে, তাও এই বয়সে J
আমি দ্বিগুন উৎসাহে বলি, আরে এটা বছরে একবার ই আসে।
প্রতিদিন কত ঘটনায় – অঘটনায় কতজন আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এই যে রোজ দিন সুস্থ ভাবে বেঁচে আছি, আনন্দ করছি – এসবই তো প্রকৃতির উপহার। দুহাত উজার করে দিয়ে যাচ্ছে। আই কল ইট “সেলিব্রেটিং লাইফ”।

যারা যারা নিজেদের ব্যস্ত রুটিন থেকে সময় বের করে আমাকে বিভিন্ন ভাবে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন – অসীম কৃতজ্ঞতা জানবেন, যারা জানাতে চেয়েছিলেন কিন্তু জানাননি তারাও জানবেন J

আর যারা কষ্ট করে বাড়ি বয়ে এসেছেন, নানা রকম মন ভোলানো উপহার নিয়ে তাদের – লাভিউ – লাভিউ – লাভিউ – সামনের বছর এর চেয়েও আরও ভাল চাই :P আর যারা যারা এখনো পাঠাননি তারা বাল্যকালে “সময়ের মর্যাদা” রচনাটি পড়েননি – কি আর করা

গত পাঁচ বছর  ধরে জুলাই মাস আসলেই, ইনবক্সে একটা ম্যসেজ আসে, আপুজন্মদিন তো এসে গেলো --- আমার মনে আসার আগেই, তার মোবাইলের এলার্মের কোথাও ঘন্টা বাজে তারপর চৌদ্দ দিনে চৌদ্দ বার রিমাইন্ড দেয় J অন লাইন জগত নিয়ে অনেকের অভিযোগ আছে, ফেইক মানুষ, এই কিংবা ঐ। আমি আমার জীবনে সমমনা, সবচেয়ে কেয়ারিং ভাল বন্ধুদের দেখাও অনলাইনেই পেয়েছি।

শান্ত কি আমার বন্ধু? শান্ত আমার বোনদেরও বন্ধু। আব্বু’র সাথেও রাজনীতি নিয়ে আলাপ করে। ভাইয়া’রও ফেসবুক ফ্রেন্ড। কিন্তু জন্মদিনের শুভেচ্ছা সব সময়ই আমি পাই। শান্ত’র লেখা দিয়ে শুরু হয় আমার জন্মতিথি’র পুনরাবর্তন। ড্যাম প্রিভিলেইজড মি – এখন তো রীতিমত অপেক্ষা করি – পরীক্ষার রেজাল্ট পাবার মত - এই বছরের কি রিভিউ আসে দেখি টাইপ অবস্থা আমার............... ধন্যবাদ দিলে শান্ত খুব বিরক্ত হয় তাই ---- টেকিং ইট ফো গ্র্যান্টেড – এজ বিফোর – ইট মিন্স আ লট টু মি শান্ত – শুভেচ্ছা অফুরন্ত  … আপাতত দু হাত পেতে নিয়েই যাচ্ছি ……… সামনেও কোনদিন শোধ দেবো সেই সম্ভাবনা ক্ষীণজানি না ………

বার্থ ডে গার্লের পক্ষ থেকে আবারওকৃতজ্ঞতা সবাইকে

*****

আরভিন আর মেঘলা বহুদিন পর এক সাথে হয়েছে। দু’জনের জন্মের পর এই প্রথম এত দিন পর দেখা। টডলার থেকে টীনে --- দু ভাইবোনের গল্পের, হাসির কোন সীমা পরিসীমা নেই। কতক্ষণ ট্যাব তো কতক্ষণ ফোন, তারপর ধাক্কাধাক্কি আবার খিকখিক ... চলছে তো চলছেই --- স্কুলের গল্প, জোক্স, বন্ধুদের গল্প ...

এর মাঝে আছে সুখ – দুঃখের গল্প। মেঘ খুবই দুঃখী গলায় তার ভাইকে জানাচ্ছে, মামি’র যা পছন্দ তাই কেনে আর কিনছে কিন্তু সে কিছু চাইলেই না করে দেয়। সব টাকা একা খরচ করে, নিজে’রটা বাবা’রটা। আরভিন আরও দুঃখী গলায় জানালো, বেঙ্গলী মম’স আর সো মীন, দুষ্টুমি করলে পিট্টিও দেয় যেটা এমেরিকান ল’তে নিষেধ।

শুধু তারা তখনও জানে না, এই ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমী’র গল্প দুই মা ঠিক শুনে যাবে আর তাদের আরো “খিচাই” হবে। মীন কাহাকে বলে, কত প্রকার আর কি কি, প্রত্যেক প্রকার উদাহরণ সহ জানা যাবে। ছোট খালাম্মা এলে যেমন হত বাসায় সে’রকম একটা অবস্থা, বাসায় এখন দুই পার্টি – দুই বোন ভার্সেস দুই ভাই বোন। ফিসফিস করলেই বলি, বল, কি বললি আমাদের নামে, বল বলছি --- দুটোই কাঁদো কাঁদো বলে, আমরা সারাক্ষণ তোমাদের নামে বলি না, আমাদের কি নিজেদের গল্প নেই ...............।।

প্রতিবার বাড়ি এলেই ক’দিন পরেই মনে হয়, এই হুটোপুটি, মারামারি, খিকখিক, লেগ পুলিং এগুলো ছেড়ে, এই মানুষ গুলোকে ছেড়ে আমি এতো দূরে আসলে বাঁচি কিভাবে?  এই ঝগড়া, এই বকা, এই দুষ্টুমি, সব তো ফুড ফর লাইফ – এই আলো হাওয়া জল ছাড়া এই গাছটা কি আসলে বেঁচে থাকে! যে আমি রোজ দিন বাঁচি বলে ভাবি একা একা – সেই আমি আসলে আমি না – সেটা পুরো অন্য কেউ – বাড়িতে যে আমিটা থাকি, সবার সাথে, সবার মাঝে – সেটাই আসলে আমার আমি।  31-07-2017


*****


একটা কিছু কিনতে হবে নিশুর জন্যে। মহিলা জ্ঞানীদের জন্যে উপহার কেনা সহজ। গিফটের পেছনে একটা গল্প বানিয়ে বলতে হবে। মহিলা জ্ঞানীরা যাবতীয় গল্পগাথা বিশ্বাস করে। মতিন যদি রেললাইন থেকে একটা পাথর কুড়িয়ে নিয়ে বলে পাল আমলের পাথর। পালবংশের রাজা দেবপাল-এর পুত্র শূরপাল মন্দির বানানোর জন্যে পাথর সংগ্রহ করেছিলেন। পাথরগুলিকে শুদ্ধ করার জন্যে তিনি দুধ দিয়ে ধোয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমার হাতের পাথরটা তারই একটা।

এই কথা শুনে নিশু চোখ বড় বড় করে বলবে, বলো কী? পেয়েছ কোথায়?

প্রয়াত ডঃ হুমায়ূন আহমেদের লেখা “কে কথা কয়” উপন্যাসের থেকে উদ্ধৃত করা হলো ওপরের অংশটি।
তিনি আয়েশা ফয়েজের বড় পুত্র।
গুলতেকিন খান এর সাবেক স্বামী।
মেহের আফরোজ শাওন এর স্বামী।
নোভা, শীলা, বিপাশা এর পিতা।

২০০৬ এর বইমেলা এই বইটি’ত প্রথম থেকে তৃতীয় প্রকাশ কাল। আমার জানা মতে, বইটি কিংবা বইয়ের এই অংশটি নিয়ে কোথাও কোন আলোচনা হয় নি।

যাহোক, বইটিতে তাঁর লেখা একটি সুন্দর কবিতাও আছে,

জলে কার ছায়া পড়ে
কার ছায়া জলে
সেই ছায়া ঘুরে ফিরে
কার কথা বলে?
কে ছিল সেই শিশু
কী তাহার নাম?
কেন সে ছায়ারে তার
করিছে প্রণাম।



*****


১৭ কোটি মানুষের ছোট্ট এই ভূখণ্ডবাংলাদেশদুর্ণীতি আর অপরাধের বিভিন্ন র‍্যাঙ্কিয়ে প্রায়শঃই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পরিমাপে শীর্ষে অবস্থান করে। কিন্তু সে সব অপরাধের কারণে আজ পর্যন্ত দেশ থেকে কাউকে নির্বাসনে পাঠানো হয় নি। যুগে যুগে নির্বাসিত হয়েছে “ভিন্ন মতে” চিন্তা করা, লেখালেখি করা লোকেরা। জঘন্য সব অপরাধের ঘৃণ্য অপরাধীদের দেশের মাটিতে জায়গা হয়, রাজনীতি শুধু নয় মন্ত্রী সভায় স্থান হয়, জায়গা পায় না “ভিন্ন মতালম্বীরা”।

এক মাত্র “ছাগু সম্প্রদায়” ছাড়া কখনোই দু’জন স্বতন্ত্র ব্যক্তি সব বিষয়ে একমত হতে পারে না। যুক্তিশীল – চিন্তাশীল মানুষ’রা একই বিষয়ে ভিন্ন মত রাখতে পারেন। নানা বিষয়ে ঘরের মানুষ – বন্ধুদের সাথে মত পার্থক্য থাকেই। তাই বলে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো’র মত সাধারণ একটা সৌজন্যে বোধে মানুষের এতো কার্পণ্য এতো রাজনীতি!

নির্দ্বিধায় বলছি, লেখক তসলিমা নাসরীনের জন্মদিনে একরাশ শুভেচ্ছা। চিরআয়ুষ্মতী হোন, সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন। যে কথা গুলো কেউ কখনো বলতে সাহস করেনি সেগুলো বলার চেষ্টা করার জন্যে আপনি চির স্মরণীয়।

যারা যারা লেখক তসলিমা নাসরীন আর বেগম রোকেয়ার তুলনা করে প্যাঁচ কষাচ্ছেন, বুকে সুখ সুখ বাতাস অনুভব করছেন তাদের বিনীত কন্ঠে জানাচ্ছি, কষ্ট করে ইতিহাসটা একবার ভাল করে পড়ে নেবেন।  যখন বেগম রোকেয়া বেঁচে ছিলেন, তিনি কি “নন্দিত” ছিলেন? আমাদের পূর্ব পুরুষরা কি এতোটাই দূরদর্শী আর প্রগতিশীল ছিলেন? না, ছিলেন না। তাহলে কি ঠাকুরবাড়ির মত কিছু মুসলিম বাড়িও থাকত না? ধনী মুসলমান তো অনেক ছিলেন, কারো নাম করতে পারেন যে রোকেয়া’র সমর্থনে পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন? হ্যাঁ, চিরকালই মুসলমান’রা গোঁড়া, নতুনকে গ্রহন করতে ভয় পায়, প্রথা ভাঙার বিপক্ষে। বেগম রোকেয়া তার বিরুদ্ধে’র আন্দোলন কে থামাতে, মোল্লাদের সাথে আপস করতে “সুলতানার স্বপ্ন“ ও “মতিচূরের” মত বই লিখেছিলেন। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তিনি “মতিচূর” বইয়ের বিভিন্ন প্রবন্ধ বিভিন্নভাবে পরিবর্তন ও অর্ন্তভুক্ত ও বাদ ও দিয়েছেন। আপোষ রফা করার পর ও তার মৃত্যুর পর হুজুররা তাঁর নামাজে জানাজায় অংশ গ্রহণ করেনি।

বেগম রোকেয়া জন্মেছিলেন ১৮৮০ সালে। তাকে “বেগম রোকেয়া” হিসেবে স্বীকৃতি পেতে কম পক্ষে একশ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল।  তসলিমাকে হয়ত তার চেয়ে অনেক বেশী সময়ই অপেক্ষা করতে হবে।  আমরা ফেসবুক ব্যবহার করে ডিজিটাল হলেও চিন্তা ভাবনায় আমাদের পূর্ব পুরুষদের থেকে বহু গুনে পিছিয়ে গেছি। সামনে আগাই নি মোটেও।

তবুও এই আশা বুকে রাখি, সূর্য একদিন উঠবেই – ভোর হবেই। ততদিন তসলিমা বরং পাখি হয়েই ব্রক্ষ্মপুত্রের পাড়ে পাড়ে নিজের শৈশবের গন্ধ খুঁজে ফিরুক


*****


“অপরাধী”দের পরিবার’রা ভীষণ অবাক হয়েছে, এত বড় “অপরাধের” পর “অপরাধী”রা বাড়ি ফিরে তাদের পরিজনদের সাথে খুব স্বাভাবিক আচরন করেছে।
এটা জেনে আপনি অবাক হয়েছেন? “অবাক” কান্ড কেনো? রোজ যে বাসে, রাস্তায়, অফিসে, ক্যাফে’তে মেয়েরা হেনস্থা হয়, সেই মানুষ গুলো কারা থাকে? তারা কি আমাদের এই সমাজের কিংবা পরিবারর অংশ নয়? মেয়েদের নিয়ে খিস্তি করা পুরুষ গুলো কি আমাদের খুব অপরিচিত! তারা বাড়ি ফিরে তো খুব স্বাভাবিক আচরন করে! সব্জি-ফলে’র মত ভাল মেয়ে-মন্দ মেয়ে, পাকা মেয়ে-কচি মেয়ে, কালো মেয়ে – সাদা মেয়ে এ ধরনের জাজমেন্টাল মনোবৃত্তি রাখা, কথায় কথায় মেয়েদের “স্লাট” বলা পুরুষ কি আমাদের খুব অপরিচিত নাকি তাদের আমরা আমাদের আশে পাশে “স্বাভাবিক”! ঘুরতে দেখি না!


ক্রিকেট বিজয়ের উৎসব, গাওছিয়া, বইমেলা, বৈশাখী মেলা কিংবা কনসার্ট গুলোতে যে মেয়েরা লাঞ্ছিত হয়, সেসব ঘটনায় আকাশ থেকে কোন এলিয়েন নামে না। এই আমার আপনার পাশে থাকা দারুন সব সুস্থ স্বাভাবিক”! মানুষ’রাই তো এই ঘটনা গুলো ঘটা

বাংলাদেশে বড় হয়েছে এমন কোন মেয়ে আছে যে বাসে, ভীড়ে, হুজুর, মাস্টার, নিকট আত্মীয়, বন্ধু, কারো দ্বারা কখনো নির্যাতিত হয় নি! আর যারা এই নির্যাতন করেছে তারা কি আমাদের চিরচেনা সেই স্বাভাবিক মানুষ গুলো নয়! তাদের তো স্ত্রী, মা, বোন, কন্যা সবই আছে!

যাহোক, “রূপা” গেছে তার পরিবার বুঝবে। রামপুরা’র “বউ” ট্রমা সেন্টারে আছে, তার পরিবার ভুগবে। আমাদের কি? ক্রিকেট আনন্দ তো হলো, এবার ঈদ করি তারপর আবার অন্য কিছু খুঁজে নেবো।