Sunday, 29 July 2018

সাসকিয়া নোর্ট

https://arts.bdnews24.com/?p=18946


সাসকিয়া নোর্টঃ আমার ধর্ষক যদি এখনও বেঁচে থাকতো তাহলে এই বইটি আমি লিখতাম না।

সাসকিয়া নোর্ট এর প্রথম উপন্যাস স্ট্রমবলি এক জোড়া সফল লেখক দম্পত্তি তাদের বিয়েকে কিভাবে ধ্বংসের রাস্তায় নিয়ে যায় সেই অভিজ্ঞতা বর্ননা করেছে। লেখক দম্পত্তি এইভা হুকে আর মারসেল ভান রোজমারেন তার সাথে কথা বলেছে তার সাফল্য, নেদারল্যান্ডসের মেরুকরন, মি টু, তার উপন্যাসের বিষয়বস্তু আর যৌন সহিংসতা নিয়ে।
ভাবা হচ্ছিলো কোন এক লেখক দম্পত্তি যেন সর্ব বিক্রিত উপন্যাসের লেখকের সাক্ষাতকার নেয় কারণ উপন্যাসটিও আবর্তিত হয়েছে একটি লেখক দম্পত্তিকে কেন্দ্র করে। উপন্যাসের কারেল ভান বোহেমেন আর সারা যোমার এর অকপট সংলাপে, তাদের সংসার, তাদের ঝগড়া, বিদ্বেষ, হিংস্রতা, বিরক্তি আসলে ছদ্মরুপে সাসকিয়ারই নিজের জীবন কথা।

তখন ফোল্কস ক্রান্ত আমাদের কথা ভাবলো।

সাসকিয়া’র সাথে আমাদের সম্পর্ক কেমন ছিলো?

বেশ কয়েক বছর আগে একদম শেষ মুহূর্তে আমরা ভান দ্যা ডাইকের “ওভার হার” কনসার্টের টিকেট কিনি। সেই টিকেট আনতে আমাদেরকে যেতে হয়েছিলে লাইস্টারপ্লাইনের ক্যাফে ওয়েবারে যেখানে সাসকিয়া তার পরিবারের সাথে বিয়ার পান করত। ওর ভাইয়ের ছেলে ইয়ান রুফ ও সেখানে ছিল। কথাবার্তা শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমাদের মধ্যে ঝগড়া হল কারণ একজন অপরজনকে দোষ দিচ্ছিলো যে আমরা একে অপরের প্রতি যথেষ্ঠ ভদ্র ছিলাম না।

যখন আমরা প্রথম বারের মত এক সাথে ছুটি কাটাতে গেলাম, সমুদ্রতটে বসে এইভা প্রথমবারের মত সাসকিয়া নোর্ট এর “Koorts” বইটা পড়লো। তারপরেই হোটেলের সুইমিংপুলের কাছে রাখা বইয়ের তাক থেকে নিয়ে সে “De verbouwing en De eetclubবইটাও পড়লো।

  মারসেলের পড়া প্রথম বই অবশ্য  Stromboliযেসব দিনগুলোতে বাচ্চাদের দেখাশোনার করার  দায়িত্ব মারসেলের থাকতো তখন অবশ্য সে নেটফ্লিক্সে পুরো তিন সীজন ধরে “Nieuwe ­Buren” ধারাবাহিকটি টিভিতে দেখেছে।

সাসকিয়া নোর্ট ভোন্ডার পার্কে থাকে, বাচ্চারা বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার পর সে ওয়ার্দানের বড় বাড়িটি ছেড়ে চলে এসেছে। তার ভাষায়, “এলাকাটা খুব নিরিবিলি”। একজন প্রাক্তন মন্ত্রী তার প্রতিবেশি, যে মাঝে মধ্যে বাগানে বসে বিয়ার খায়।  ঘরে ঢুকতেই সাসকিয়া এইভাকে চুমু খেলো আর মারসেলের সাথে করমর্দন করলো।

সাসকিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী একজন শ্বেতাঙ্গিনী বাড়ি ঝলমলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল।

সাসকিয়াঃ বের্খেন থেকে নিয়ে এসেছি।

নইলে আমি ভাবতেই পারি না কি করে একা সব সামলাবো।

ব্যক্তিগত সহকারীঃ তোমাদের কেক তৈরী।

সাসকিয়াঃ দেখেছো তো, এটাই বলছিলাম।

পুরো আড্ডাটার সময় সাসকিয়া দু বার ধূমপান করলো।

সাসকিয়া নোর্টঃ জন্ম উনিশো সাতষটি। নিউ পত্রিকার ভিভা এন আওডার্স পাতার সম্পাদক হিসেবে কাজ করতেন। তারপর নিজেই ভিটি ওনেন, প্লেবয়। লিন্ডা পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবে লেখালেখি শুরু করেন, তার রোমাঞ্চকর গল্প গুলো শুরু থেকেই ভীষন ভাবে পাঠকের মনোযোগ কাড়তে সক্ষম হয়, যেমন, দুই হাজার তিন সালে লেখা তার কুস্ট গল্পটি। দুই হাজার আট সালে বিচ্ছেদ হওয়ার আগে পর্যন্ত স্বামী ও সন্তাদের নিয়ে বের্খেনে থাকতেন। তার নতুন উপন্যাস স্ট্রমবলি এক জোড়া লেখক দম্পত্তিকে নিয়ে। একজন মাদক ও ধূমপান আসক্ত স্বামীর কথা লেখা আছে যে স্ত্রী তার চেয়েও বেশি বিখ্যাত সেটা মেনে নিতে পারে না। দুজনে মিলে একটি প্রভাত পত্রিকায় খুব জনপ্রিয় একটি কলাম লিখতেন। যতদিন তাদের বিচ্ছেদ না হয়েছে।

সাসকিয়া মারসেল কে জিজ্ঞেস করলো, একজন পুরুষ হিসেবে একজন মেয়ে লেখকের বই পড়ে তোমার কি রকম অনুভূতি হয়েছিল?

এইভাঃ এটা কি মেয়েদের বই? এ কথাটা আমি খ্রিট অপ দ্যা বেইককে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম আর সে আমাকে বলেছিল, এটা একটা অর্থহীন কথা।

সাসকিয়াঃ এটা বাস্তবতা। ছেলেরা হেরমান ব্রুসেলসম্যান এর লেখা বই অনেক বেশি পড়ে তো? যেমন খাইপ।  মেয়েদের লেখা মানেই সাথে সাথে অনেকে ধরে নেন তেমন মানসম্পন্ন নয়, এটা খুব অদ্ভূত, ভেবে নেয় লেখা  ভাসা ভাসা হবে কিংবা খুব আবেগের ছড়াছড়ি থাকবে। আচ্ছা থাক, তুমি বলো কেমন লাগলো আমার লেখা? 

মারসেলঃ সত্যিই বলছি, প্রথমে ভাবি নি এই বই পড়ে আমি শেষ করতে পারবো কিন্তু পরে কি হলো তুমি বরং সেটাই শোন। কাউনসেলিং এর সেশানটা পড়ার সময় আমার মনে হয়েছিলো, আমাকে কি এসবও জানতে হবে? আর এই কথাটা আমার প্রচন্ড স্পষ্ট ভাবে লেখা শারীরিক মিলনের ঘটনাগুলো পড়ার সময়ও মনে হয়েছিলো। 

এইভাঃ তুমি তো বেশি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওপর বই পড়ো, তোমার জন্যে এই বিষয়টা ততো আরামদায়ক ছিল না।
মারসেলঃ খুব বেশি পুরুষ লেখক পাওয়া যাবে না যারা “ইবিজায় নি:সঙ্গতা” নিয়ে বই লিখেছেন।

সাসকিয়াঃ হেঙ্ক ভান স্ট্রাটেন তো স্বামী-স্ত্রী’র বিচ্ছেদ নিয়ে বই লিখেছেন।

এইভাঃ স্ট্রমবলি উপন্যাসের প্রধান নারী চরিত্রটি একাকী অনেক ঘটনা প্রবাহকে ক্রমানুসারে সাজাতে যায়। তুমি  কি সচেতনভাবে তোমার নিজের জীবন থেকে আহরিত অভিজ্ঞতা, যৌন সহিংসতা, চৌদ্দ বছর বয়সে তোমার নিজের ধর্ষিতা হবার ঘটনা মানুষের জীবনে কি প্রভাব ফেলে তা তোমার পাঠকদের স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে জানাতে চেয়েছো?

সাসকিয়াঃ কিছুটা তো বটেই। আমি জেনে বুঝেই স্ট্রমবলিতে লিখেছে, অনেক মিষ্টিভাবে লিখেছি যদিও সবই সত্যি। একটু দম ফেলার অবসর নিয়েছি তারপর আবার মজাদার দুপুরের খাবারের মত লিখেছি।  নিশ্চয় আমি জানতাম, ছাপার অক্ষরে এ ধরনের বাস্তবতা মেনে নেয়া অনেক কঠিন। কিন্তু তোমার তো একটা কারন লাগবে কাউকে সেখানে ভাসিয়ে নিয়ে আসতে এবং সেখানে নোঙর বাঁধাতে। দেখা গেলো সেটা ছিলো আমার ধর্ষনের ঘটনাটি। মি টু উদ্যেগের কারণে দেখা গেলো আমি আবার লিখতে শুরু করলাম, কারণ সেসব ব্যাপার গুলো কল্পনায় সামনে আসাতে আমি আবার উত্যক্ত বোধ করতে থাকলাম। অনেক মানুষ ভাবে কোন ফ্ল্যার্ট না করলে বা অপ্রাকৃতিক কোন ঘটনা না ঘটলে এমন কিছু ঘটে না, আর তখনই আমি ভাবলাম, এখনই সময় মানুষকে সত্য জানানোর। 

মারসেলঃ আর ঠিক এই মাসেই লিন্ডা’র টকশোতে আমি কাচিয়া স্কিউরমান আর সোপি হিলবার্ডের মত তারকাদের কাছ থেকে শুনলাম, তারা তাদের জীবনে এ ধরনের কোন পরিস্থিতির সামনে পরে নি। তারচেয়েও বড় কথা, কাচিয়া সবশেষে বললো যে তার কখনো মনেই হয় নি এমন কিছু হয় অথচ তার কিছু দিন আগেই জব গসকাল্কের নামে সে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে অপবাদ দিয়েছিলো। এটা তো তোমার জন্যে ভীষণ একটা পীড়াদায়ক অবস্থা, তাই না?  

সাসকিয়াঃ হ্যাঁ, সেটা নিয়েও আমি আর একটা গল্প লিখেছি যেটাতে পরের দিকে লিন্ডার টক শোও আছে

মারসেলঃ কিন্তু, তোমার ঐ জায়গাতেই কষ্ট লাগে নি? তুমি ওদের সাথে একই স্টুডিওতে ছিলে, তোমার মনে হয় নি ওরা তোমার লেখা গল্পটাকে নিয়ে এসব কি করছে?

সাসকিয়াঃ হ্যাঁ কিন্তু

মারসেলঃ সাতজন মেয়ে এক জায়গায় বসে কোন একটা বিষয়ে একমত হওয়া খুব কঠিন ব্যাপার তাই না?
সাসকিয়াঃ কিন্তু এখন এই নিয়ে লিন্ডাকে আক্রমণ করতে আমার আর ইচ্ছে করছে না। কিন্তু হ্যাঁ, টক শো গুলোতে এ ধরনের ঘটনা হরদমই ঘটে যাচ্ছে, মাঝে মাঝে তো টক শো তে এ ধরনের লোকের সাথেও তোমাকে বসতে হয় যাদের সম্পর্কে তোমার তেমন ভাল ধারনা নেই, তাই না? এ ধরনের একটা ধাক্কা’র কিছু বিপরীত প্রতিক্রিয়া তো থাকবেই, কিছু কিছু মানুষ থাকবেই যারা তাদের জন্যে বরাদ্দ করা পাঁচ মিনিটে কিছু না কিছু এরকম বলবেই। এটা দুঃখজনক যে আমরা পরস্পরের মধ্যে এ ধরনের আলোচনা চালিয়ে যেতে পারি না। এমনকি সেখানে এমন আলোচনাও হয়েছে যে আমাকে আমার মন্তব্যের খানিকটা প্রত্যাহার করে নেয়া উচিত। 

এইভাঃ দুঃখজনক যে এত দুঃখ বুকে চেপে যদি কেউ এতদিন পর ফিরে মুখ হলে তাকে বৈধভাবে সমাজের কাছ থেকে এসব প্রশ্নই শুনতে হবে, নিজেকে অবলা সাজিয়ো না, এসব কি আসলেই সত্যিই, ইত্যাদি ইত্যাদি।  
সাসকিয়া, ঠিক বলেছো, কিন্তু যদি মেয়েরা আমার বই থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে নিজেরা নিজেদের মুখ খুলে, তাহলেই আমি সার্থক, বাকি কিছু নিয়ে আমি ভাবি না

এইভা হুকে, জন্ম উনিশো উনআশিসাল, গ্লসি ইয়াকি পত্রিকা’র প্রধান সম্পাদক জ্যাজ পিয়ানিস্ট রব হুকের মেয়ে। গ্লসি ইয়াকির পর হ্যাত প্যারোল পত্রিকার জন্যে লেখালেখি করতেন। আর দুই হাজার পনের থেকে আছেন ফোল্কস ক্র্যান্তের ম্যাগাজিনের সাথে। দুই বাচ্চা আর তার বন্ধু সাংবাদিক মার্সেল ভান রোসমালেন প্রায়ই তার কলাম লেখালেখির মূল উপজীব্য হয়।  তারপর সেগুলো এক সাথে করে বই হয়। দ্যা ক্রুগ এন্ড দ্যা মান (২০১৪) এবং আলস হেত মার নিত অপ ওনস লাইক (২০১৭) তার রচিত বই সমূহ যা এই সাংবাদিক দম্পত্তি থেকে বাচ্চারা পেয়েছে। 

মার্সেলঃ আরটিএল বুলেভার্ডে টিভিতে ওলকে গুলসেন বলেছে, তোমার বই পড়া অনেকটা সোডা পান করার মত, এক চুমুকেই শেষ।  এটা কিন্তু প্রশংসা করে বলেছে। তারপর তারা কিছুক্ষণ তোমার ধর্ষণ নিয়ে আর কিছুক্ষণ তোমার প্রেম-প্রণয় নিয়ে আলোচনা করেছে। এটা আমার কাছে খুব অদ্ভূদ লেগেছে, তুমি শুরু করলে কিছু একটা দিয়ে তারপর তুমি অন্য কথায় চলে যেয়ে জিজ্ঞেস করছো, তোমার যৌন জীবন সম্বন্ধে!

সাসকিয়াঃ সেটা আমিও ভেবেছি। আমি অবশ্য সমস্ত প্রচারেই খুশি, কিন্তু আমিতো বই বিক্রি’র চেষ্টাতে বাধা দিতে যাবো না। বাস্তবতা হলো, এখন আমার বই কোনায় কোনায় বিক্রি হচ্ছে, সুতরাং চলুক।

মার্সেলঃ এ ধরনের প্রচারে তুমি বিব্রত বোধ করো না?

সাসকিয়াঃ আর না। আমি আমার জীবনে অনেকবার অনেক জিনিসের বিরোধিতা করেছি আর ভেবেছি – মানে বলতে চাইছি, আলোচনা হোক অসুবিধা নেই কিন্তু কিছু কিছু সময় সেটা মানুষের ওপর খুব আক্রমনাত্বক হয়ে যায়।  

মার্সেলঃ সেটা খুবই বিরক্তিকর লর্ড যীশু, লেখি তো আমিও কিন্তু তোমার বই বিক্রি হয় লক্ষ লক্ষ পিস

সাসকিয়াঃ নেদারল্যান্ডসে লেখালেখিকে দুই দ্বীপে বিচার করা হয়, হয় তুমি পেশাদার লেখক নয়  তা নয় যেকোন বইকেও সেভাবেই বিভক্ত করা হয়, হয় তুমি ভিপিআরও (ক্রিয়েটিভ, গভীর) নয় সে এসবিএস (চটুল)

মার্সেলঃ অবশেষে কিন্তু সব এসবিএস লেখকই ভিপিআরও লেখক হতে চায় তাতে বই বিক্রির সংখ্যার ওপর দারুন প্রভাব ফেলে

সাসকিয়াঃ কিন্তু তারা আরটিএল বুলেভার্ড টিভিতে আসতে চায় না

মার্সেলঃ তুমি কেন কখনও "দ্যা ওয়ার্ল্ড ড্রাইত ডোর" টক শো তে আসো না?

সাসকিয়াঃ আমার ব্যক্তিগত সহকারীকে ওরা জানিয়েছে, ওরা বই নিয়ে আর কোন শো করে না বাজে কথা অবশ্যই পরে অবশ্য তারা সত্যি কথা বলেছে, তাদের একটি পরিবার আছে, আর সেই পরিবারের লোকজনই শো তে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলতে আসে এই ব্যাখাটার অবশ্য আমি প্রশংসা করি, প্রত্যেকের নির্দিষ্ট  শ্রেণীর একটি দর্শক ও শ্রোতা দল থাকে

মার্সেলঃ কি বলে তারা? তোমাকে সেখানে মানায় না?

সাসকিয়াঃ নেদারল্যান্ডস এখন প্রচুর দূষিত, হয়ত আগের চেয়ে অনেক বেশি তুমি যদি বাইরের দেশের দিকে তাকাও, সেখানে খুব অন্যরকম যেমন, জেকে রোলিং এর কথাই ধরো, সে বাচ্চাদের বই লেখে, তারপর মানুষের প্লাস্টিক সার্জারী করে আবার রাতের বেলায় খুব গম্ভীর টক শোতে চলে যায় এটা এখানে চিন্তাই করা যায় না অথচ আমি বিভিন্ন রকম মানুষের সাথে মিশতে ভালবাসি, ডানপন্থী, বামপন্থী, জনপ্রিয়, অজনপ্রিয় সবার সাথে  আমার বন্ধুরাও সব তেমনি, জর্দান বারে যখন বসি প্রচন্ড বামপন্থী থেকে কঠোর ধূমায়িত ডানপন্থী সবাই আছে সে দলে আমরা যখন সবাই এক সাথে বসি তখন নিয়মিত আমাদের মধ্যে তর্ক আর বচসা হয়, কিন্তু সেটাইতো দরকার নেদারল্যান্ডসে এমন একটা ব্যাপার যে তোমাকে একটা কিছুর ভাবমূর্তি ধরে থাকতে হবে, আর একবার সেটা তৈরী হয়ে গেলে তুমি সেটা আর ভাঙতে পারবে না, শ্বাসরোধকারী পরিস্থিতি 

এইভাঃ তুমি তোমার বইয়ে কনি পালমানের কথা লিখেছো, যে তোমাকে আর ক্লুন কে বইমেলাতে বলেছে, কিছুই যারা করো নি, তারা বেরিয়ে যাও, এসব মনে পড়লে তোমার রাগ লাগে না?

সাসকিয়াঃ একদম না, ভাল লাগে এসব লিখে রাখতে আর কনি’র সাথে আমাকে যে কোন মূল্যে বন্ধুত্ব রাখতেই হবে এমন কোন ব্যাপার তো নেই।

এইভাঃ যারা তোমাকে কখনও কষ্ট দিয়েছে তাদেরকে তো তুমি আর কখনো পুরোপুরি ক্ষমা করতে পারবে না, তাই না?

সাসকিয়াঃ তা নয় কিন্তু মজার ব্যপার কি জানো যখন থেকে এসব নিয়ে আমি কম ভাবি, আমার নিন্দুকের সংখ্যাও কমে গেছে আর আমি নিজেও অনেক ভাল প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি।

এইভাঃ তারপরও you cry all the way to the bank, না?

সাসকিয়াঃ না, একদমই না। সব লেখকদের যা স্বপ্ন থাকে অবশ্যই আমি সে সবই অর্জন করেছি কিন্তু যখন তুমি তোমার খুব ব্যক্তিগত কথাগুলো লেখো তারপর নিশ্চয় তুমি হাফ মিলিয়ন ইউরো নিয়ে ইবিজা দ্বীপে ছুটিতে চলে যাবে না। তুমি তো চাইবে যতদূর সম্ভব বেশি লোকের কাছে পৌঁছতে। 

মার্সেলঃ এ জায়গাটায় অবশ্য অন্য সব লেখকদের সাথে তোমারও মিল আছে

মার্সেল ভান রোসমালেন উনিশো আটষট্টি সালে জন্মেছেন। এনআরসি, নেক্সট, দ্যা ভারা’তে কলাম লেখে, এইভা হুকের সঙ্গী। আর্নেমের ভিটেসে ক্লাবকে নিয়ে অনেক ধরনের বই লিখেছেন, প্রথম বইটি হলো “ইয়ে হেবট হ্যাত নিত ভান মাই (দুই হাজার ছয়)”, নিকো স্কেইপমাকার-বেকারের সাথে সম্মানিত করা হয়। এইচপি-দ্যা টাইড ম্যাগাজিনের মধ্যে দিয়ে তার সাংবাদিক জীবন শুরু হয়, যেখানে সে পিম ফোর টাওনের জন্যে প্রচারণা চালান (ওপ পাড মেত পিম, দুই হাজার দুই সালে)। দুই হাজার ছয় সালে তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশ হয়। আমরা ঠিক জানি কে কতদূর যেতে পারে। তার মৃত বাবাকে নিয়ে লেখা উপন্যাস পরের বছর প্রকাশ হবে। খেলডারলান বিভাগের সরকারী কর্মকর্তা। যিনি পর্দার আড়ালেই ছিলেন।

মার্সেলঃ তুমি নিজে কি বই পড়ো?

সাসকিয়াঃ আমি মাত্র এলকে গিইউর্টস পড়ে শেষ করলাম, আমিও তোমার মত, একদম অবিকল মনে করি। সুন্দর করে লিখেছেনও। পড়ার তালিকায় আরও আছে টেস গেরিটসেন, খুব দ্রুতই সেটা পড়ে ফেলার ইচ্ছে, টমি ভিরনিগাস এর লেখা, দ্যা হাইলিগে রিতা ও আমার খুব ভাল লেগেছে পড়তে। এছাড়া আমার সত্যি ঘটনার ওপর ভিত্তি করে লেখা বই, যৌনতা নিয়ে লেখা মনোবিজ্ঞানের বই ইত্যাদি পড়তে ভাল লাভে। এক সাথে গবেষনাও হয়ে যায়। লেখার সময় আমি কোন উপন্যাস পড়ি না, কারণ তাহলে হয়ত অবচেতন মনেই আমি তা অনুসরণ করে ফেলতে পারি।

 এইভাঃ তুমি কি নিজের যৌনতার কথা অনেকটা বাদ দিয়েছো এই বইতে? হয়ত ভেবেছো, আমার বাচ্চারা পরে এই বইটি পড়তে পারে।  

সাসকিয়াঃ সেটা আসলে আমি পরে ভেবেছি আমার মতে, লেখার সময় তো তুমি তোমার জীবনের যৌনতার অংশ বাদ দিতে পারো না যাদের কথা আমি লেখি তাদেরকে আমি আগের থেকেই বলে দেই।

এইভাঃ আর তারা তখন নিষেধ করে নি?

সাসকিয়াঃ না, আমি শুধু চেয়েছি তারা যেনো চমকে না যায়, অথবা আমি তাদের নাম অপব্যবহার করেছি এমন যেনো না ভাবে। দিনের শেষে এটিতো আমারই গল্প।

এইভাঃ কিন্তু তোমার গল্পের মধ্যে সব সময়ই অন্যদের গল্প এসে যায়। উদাহরণস্বরূপ তোমার ধর্ষকের কথাটাই ধরি, ও তোমার প্রতিবেশী ছিলো, তাই না? তুমি কি কখনো ভেবেছিলে, ওর কেমন লাগতে পারে?

সাসকিয়াঃ না ভাবিনি, কারণ ও মারা গেছে।

এইভাঃ তুমি কেমন করে জানলে?

সাসকিয়াঃ আমি বের্খেনে, আমার জন্মস্থানে একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম, সেখানে শুনে এসেছি। সাথে সাথে আমি ভেবেছি, ঠিক আছে, কর্মফল। কারণ সে বেশ অল্প বয়সে মারা গেছে, মধ্য ত্রিশের ছিলো বোধ হয়। ক্যান্সার হয়েছিলো। আমার কোন দুঃখও হয় নি।

মার্সেলঃ মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত ওর সাথে কি কোথাও দেখা হতো?

সাসকিয়াঃ হ্যাঁ, ও আমার প্রতিবেশি'র ছেলে ছিলো, কোথাও না কোথাও তো দেখা হয়ে যেতো। ওকে দেখলে আমি উপেক্ষা করতাম, কিন্তু তবুও। যখন আমি শুনলাম ও মারা গেছে, আমি যেনো কিছু একটা থেকে মুক্তি পেলাম। সামান্য সময়ের জন্যে আমার মনে হয়েছিল, কোথাও তবু হয়ত সৃষ্টিকর্তা আছে। আমি সাথে সাথেই এই নিয়ে কথা বলতে শুরু করি নি, কিন্তু আমি  যা বলতে চাই তা বলার জন্যে নিজেকে মুক্ত অনুভব করছিলাম। সে বেঁচে থাকলে আমি আমার বইটাও লিখতাম না।

এইভাঃ বিশ্বাস করতে অদ্ভূত লাগে যে, তুমি তোমার ধর্ষককেও রক্ষা করেছো।

সাসকিয়াঃ হ্যাঁ, খুবই অদ্ভূদ। আরও কিছু ব্যাপার এর সাথে জড়িয়ে আছে, যখন আমার সাথে একটা ঘটলো, এরকম ঘটনা আরও হয়েছে আমাদের গ্রাম বের্খেনে। গ্রামে এরকম কোন ঘটনা ঘটলে, সেটা নিয়ে সারাদিন মানুষ কথা বলতো। সবাই তার মতামত দিতে থাকতো, ছেলেটা করেছে, ছেলেটা  করে নি, মেয়েটাই বেশ্যা, মেয়েটা বেশ্যা না ইত্যাদি ইত্যাদি। আর আমি কিছুতেই এই আলোচনার মধ্য মনি হতে চাই নি। আমি শুধু ভেবেছি, আমার বাবা পিটিয়ে ঐ ছেলেকে তক্তা করে ফেলবে আর আমার প্রতিবেশী ভাববে আমি একটা বেশ্যা, যার কোনটাই আমি চাচ্ছিলাম না, তাই আমি আমার মুখ বন্ধ রেখেছিলাম। ততদিন যতদিন ও বেঁচে ছিল, দেখা গেলো। যখন আমি মুখ খুললাম, আমার গ্রামের আরও মানুষ তাদের ঘটনা নিয়ে আমার কাছে উপস্থিত হতে শুরু করলো। দেখা গেলো, আমি শুদু একাই নির্যাতনের শিকার হই নি।

এইভাঃ এমন মানুষ ছিলো কি যারা তোমাকে দেখে বলেছে, ঐ যে ধর্ষিতা যায়?

সাসকিয়াঃ অবশ্যই ছিলো। এমন কি আমার পরিবার আর বন্ধুদের মধ্যে থেকেও কেউ কেউ বলেছে। যদিও সেটা খুবই হাস্যকর, ধরো আমার যদি একটা পা থাকতো, তাহলে নিশ্চয় মানুষ আমার মুখের ওপর বলতো না, আমরা এক পা ওয়ালা সাসকিয়াকে চিনি। আমি ঠিক এই ভাবে আমার মাকে এই কথাটা বলেছি

এইভাঃ তোমার নিজের মা যদি তোমাকে এভাবে কথা বলে, তুমি তবে কোথায় যাবে?

সাসকিয়াঃ সেটাই, কিন্তু আমিও বুঝতে পারি, মানুষ এসবের প্রতীক্ষায় থাকে। আমিও অনেক সময় অন্য মানুষদের ঘটনা নিয়ে ভাবি, শুরু হলো আবার।   

মার্সেলঃ আর তোমার প্রাক্তন স্বামী কি বললো এই নিয়ে? তোমার বইয়ের কারেল সে নয় কিন্তু তবুও সে ও তো তোমার বইয়ে আছে। পাঠকরা তো ভাবছে, কি একটা অমানুষ সে।

সাসকিয়াঃ এই সপ্তাহে সে আমাকে ফোন করেছিলো, তখন এই নিয়ে কথা বলার সময় বললো, সে এই বইটা পড়বে না, হাহাহাহা

মার্সেলঃ কিন্তু এসবে তার অনুভূতি কি? সেই তো প্রথম ব্যক্তি যে নিজের টাকা খরচা করে তোমার বই বের করেছিলো
সাসকিয়াঃ নিজের টাকা খরচা করে মানে?

মার্সেলঃ বইটা লেখার জন্যে তুমি কাজ থেকে এক বছরের ছুটি নিয়েছিলে। সে পাশে না থাকলে তো আর এটা সম্ভব হতো না।

সাসকিয়াঃ সেটা সত্যি।

মার্সেলঃ কিন্তু সে তো এখন তোমার বইয়ে কোন ভাল চরিত্রে নেই। এ সম্বন্ধে তার অনুভূতি কি?

সাসকিয়াঃ হ্যাঁ কিন্তু কারেল চরিত্রটি আমার প্রাক্তন স্বামী নয় কারেল একটি কল্পিত চরিত্র, অনেক পুরুষদের স্বভাবের মিশ্রণে এই চরিত্রটি এসেছে।  মানুষ যদি ধরে নেয় সেটা ও, তাহলে আমি তো সবাইকে নিবৃত্ত করতে পারবো না, কিন্তু সেটা সে নয়। স্ট্রমবলি একটি উপন্যাস, আত্মজীবনী নয়। আমি আমার প্রাক্তন স্বামীকে এ ব্যাপারে খুবই সম্মান করি, সে এটা খুব ভাল অনুভব করে আর আমাকে কোন ব্যাপারেই তাই সে আটকায় না। অথচ এই বইটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকে সে যুদ্ধের মধ্যে আছে এবং এখনও সে আগেই গ্রামেই বসবাস করছে।   

যখন থেকে আমি পরিচিত হতে থাকলাম, তখন সে প্রায়ই বলতো, আমি যেনো “তোন ফান রোয়েন” না হয়ে যাই। সে একজন চিত্রশিল্পী, সুতরাং কিছুটা পার্থক্য আছে, সে বুঝতে পারে লেখালেখি আমার বিষয়। আমার মেয়ে গায়িকা, মাঝে মাঝে আমি মেয়ের গানের কথা শুনে ভাবি, কি গাইছে এসব। কিন্তু হ্যাঁ, এটাই শিল্প আর শিল্পীকে তার জায়গায় স্বাধীন থাকতে হবে। তুমি আ। এম। হোলমান্সের নাম শুনেছো? সে ও একটি খুব ভাল বই লিখেছে, এইন ব্র্যান্ডবারে হিউলিক, সেখানে সে নির্দয় ভাবে নিজের বিয়ের গোপনতম দুঃখ সুখ সব লিখেছে। কিন্তু সেটা তে কাজ হয়, তুমি তোমার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারো। সাধারণভাবে ছেলেদেরকে মেয়েদের থেকে কম আক্রমণ করা হয়ে থাকে।   

এইভাঃ সেটা খুব সত্যি। মার্সেলের ওপর কখনও কেউ রাগ করে না কিন্তু আমার ওপর করে। তোমার কাছে এটার কি ব্যাখা আছে?

মার্সেলঃ তার কারণ, তুমি আমার চেয়ে ভদ্র। আমার ব্যাপারে ভাবে, ও তো এমনিতেই অভদ্র, থাক ছেড়ে দাও।

সাসকিয়াঃ একজন মেয়ে হিসেবে তুমি সমাজে অনেক কিছু সংযোজনের মাধ্যম, তাই তুমি শান্তভাবেও যদি কিছু লেখো হঠাত করে হয়ে যাও রাজদ্রোহিনী।

এইভাঃ গত বছর গুলোতে তুমি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের বিভিন্ন বির্তক গুলোতে একটি বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর হয়ে উঠেছো, বিশেষ করে টুইটারে তোমার একচ্ছত্র প্রভাব। এটা কি মিটু’র প্রভাব?

সাসকিয়াঃ অনেক বিষয়েই আমি ভাবিঃ একটু অপেক্ষা করি, আর একটু দেখি, কারণ আধ ঘন্টা পরেই দেখা যায় লোকের মতামত বদলে গেছে। আর এত মানুষ তীক্ষ্ণ ভাবে কর্কশ শব্দ করতে থাকে। কিন্তু এই বিষয়টি আমার অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি ঘটনা আর একবার যখন তুমি সাহস করে জনসম্মুখে প্রকাশ করতে পেরেছো, তুমি আবারও পারবে। ইতিমধ্যে আমার ছেলে আমাকে একজন হিস্টিরিয়াগ্রস্ত নারীবাদী ভাবে আর ইচ্ছে করে আমাকে সারাক্ষণ সেক্সিট মন্তব্য করে অপদস্থ করতে থাকে। তার নারীবাদী বোন আর তাদের বান্ধবীদের সাথে বেশ্যাদের নিয়ে একবার আমরা খুব উত্তেজিত তর্কাতর্কি’র মধ্যে দিয়েও গেছি। হ্যাঁ, তোমার বিশ্বাস না হলেও এই শব্দটা এখনও এই পৃথিবীতে আছে। 

এইভাঃ জনসমুখেও তোমার ভাবমূর্তি সবসময় পুরোপুরি বির্তকিত। তোমার ভাইয়ের ছেলে ইয়ান রোজের সাথেও অবিরত তোমার বির্তক হচ্ছে, তুমি পুরোপুরি বামপন্থী আর সে ডানপন্থী।

সাসকিয়াঃ হ্যাঁ, সেটা ঠিক কিন্তু আমি পুরোপুরি বামপন্থী নই। এটা নিয়ে আমি এখানে অনেক বেশি কথা বলতে চাই না, টুইটারে আমরা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করছিলাম যারা আমাদের টাকায় নিজেদের দাঁত পরিস্কার করতে চায়। আমি বোকা বোকা জিনিস সহ্য করতে পারি না, কিন্তু যেসব ঘটনা সত্য নয় আর সেটা আমি বলেও ফেলি, প্রয়োজন হলে প্রথমে ঘটনাটা যাচাই করো। আর এটা শুনেই যদি সে চিৎকার করতে থাকে যে আমি অজাচারী মারা যাওয়া এক মহিলা, তখন আমি ভাবি আমাদের যে বিষয়ে কথা হচ্ছে সেখানেই থাকা দরকার।
এইভাঃ অথচ তোমাদের পারিবারিক সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ, প্রত্যেক জন্মদিনে তোমরা এক সাথে টেবিলে বসে হাতে হাত ধরে সবাই গান করো, কোন একটা সাক্ষাতকারে তুমিই বলেছিলে সে কথা।

সাসকিয়াঃ সেই সাথে সমস্ত কিছু নিয়ে খুব ঝগড়াঝাটিও হয়। আমি ভাবি এটা সব জায়গায় যা হয় তারই চিহ্ন। মানুষ সব কিছু মেরুকরন করে তার বুদবুদে বসবাস করে, ডানপন্থীরা বামপন্থীদের থেকে অনেক বেশী করে।  

মার্সেলঃ সাক্ষাতকারের প্রথমেই আমি বলেছিলাম তুমি বিভিন্ন মতবাদের মানুষের সাথে ওঠাবসা করতে পছন্দ করো।

সাসকিয়াঃ হ্যাঁ তা করি কিন্তু সম্মানের সাথে মানুষকে অসম্মান করে নয়।

মার্সেলঃ সে তো সব সময়ই এটা করে যায়।

সাসকিয়াঃ আমার সাথে না।

এইভাঃ তুমি ওকে ফোন করেছো? বলেছো, এসব আমরা কি করছি?

সাসকিয়াঃ না, আমি কেন এটা করতে যাবো? কারণ আমি তো অপমানিতের দলে

এইভাঃ খুবই দুঃখজনক ঘটনা, বিশেষ করে জন্মদিনের উৎসব গুলোতে।

সাসকিয়াঃ এর বাইরেও আছে, মালিকপক্ষ ফোন করে জিজ্ঞেস করে ইয়ান রোজে আমার সম্পর্কে ঠিক কি হয়?

মার্সেলঃ সেটা তো তবে মালিক পক্ষের ভুল? আমার কাছে এটা প্রচন্ড বাড়াবাড়ি মনে হয়, তুমি তো সাসকিয়া নোর্ট? তুমি তো নিজেই ঠিক করবে কার সাথে কতটুকু সম্পর্ক রাখবে কি না রাখবে?

সাসকিয়াঃ আমার নিজেরও খুব খারাপ লাগে কিন্তু এভাবেই সব চলে।

এইভাঃ তুমি কি এর ওপরও একটা বই লিখবে? আমি অনুভব করতে পারছি, তুমি এটা নিয়ে বেশ কষ্ট পাচ্ছো।

সাসকিয়াঃ এটা আমার মাথায় আছে, এটা খুবই সত্যি। অন্যদিকে এটা তোমার পরিবার, তুমি একে যেকোন ভাবেই রক্ষা করতে চাও।

মার্সেলঃ উপসংহারঃ আজকে বুধবার দুপুরবেলা, এই সেই মুহূর্ত যখন বইয়ের দোকান গুলো সর্বোচ্চ বিক্রিত ষাটটি বইয়ের নাম ঘোষনা করবে। তুমি নিশ্চয় খুব উত্তেজনা অনুভব করছো।

সাসকিয়াঃ অবশ্যই, সে জন্যেই তো এত খাটাখাটুনি করা।

মার্সেলঃ বইমেলাতে আমিও অর্থ বিনিয়োগ করেছি। আমি দেখলাম তোমার বইয়ের মলাটের মত সবাই হলুদ হয়ে গেছে। আর তোমার বাবাকে দেখা যাচ্ছে ইয়ান সিবেলিঙ্কের মত।

সাসকিয়াঃ সেটা সত্যি, সত্তর বছর বয়সের পুরুষ মানুষ এখনও সৎ উদ্দেশ্যে নিয়ে চলাফেরা করছেন। এটা আসলেই মজার, আমার আগের বই হাউডপাইনের মলাটটা ছিলো পুরো গোলাপী। আমি আমার প্রকাশককে বলেছিলাম তখন, আমি এখন ইবিজা যেয়ে দেখতে চাই, সমস্ত সমুদ্রতট কেমন গোলাপী হয়েছে। আর এ বছর পুরো হলুদ হয়ে থাকতে দেখবো।


তিন দিন পর স্ট্রমবলি তিন নম্বর হয়ে বাজারে এসেছে আর তারপরের সপ্তাহেই এক নম্বরে। 

জন্মদিনে আমি ২০১৮

সূর্যের নরম মিঠি মিঠি আলো আলতো করে কচি সবুজ ঘাসকে জড়িয়ে থাকে, নাম জানা কিংবা না জানা সব রঙ বেরঙের ফুল কোন কার্পণ্য না রেখে চারধার সুবাসিত করে সাথে সব পাখিদের উদার উদাম অর্কেস্ট্রা ----- এমনি করেই দিন আসে দিন যায়, দিন ঘুরে মাস, মাস ঘুরে বছর। আহা, জাগতিক পাওয়া না পাওয়া ভুলে তারপরও জীবন, তোমায় কত ভালবাসি।


আরও একটি আলোকবর্ষ, এই অনন্ত যৌবনা পৃথিবীর মায়াকারা রূপ, মাতাল গন্ধ, শান্ত জল, আলো-ছায়া, চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যকিরণ, প্রেমিক জোছনা, অভিমানী অমবস্যা, দুরন্ত হাওয়াতে সন্তরণ করার সুযোগ দেয়ার জন্যে এই প্রকৃতিকে, এই মহাবিশ্বকে, অসীম নক্ষত্রবীথিকাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভুলে ভরা এ জীবন, প্রতিদিন ভুল করি, করেই জানি ভুল হয়েছে কিন্তু তারপরও ভুল করেই চলি। যাদের কাছে অনেক ভুল ত্রুটি জমা রেখেছি তাদের কাছে জোর হাত করে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, কে জানে - কাল হো না হো


আর ভালবাসা আমার একান্ত কাছের সেই মানুষ গুলো’র জন্যে যারা আমাকে “জাজ” না করে আমাকে জড়িয়ে থাকে, ভালবাসে, চিরজীবন এমন জড়িয়ে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়। প্রিয় মানুষেরা আছে বলেই জীবন সুন্দর, তোমরা আছ বলেই আমার অস্তিত্ব আছে।


এই অপার রহস্যে ঘেরা মহাবিশ্ব, প্রকৃতি, পরিবার, বন্ধু,
তোমাদের সবার কাছে বৃষ্টি দিন
শোধ না হওয়া আমার অনেক অনেক ঋন
টাপুর টুপুর বাদলা দুপুর আকাশ কুসুম অনতহীন।


খুব কাছের মানুষেরা জানে, “আই লাভ টু সেলিব্রেট লাইফ”, সেটাকে মনে রেখে অনেক দূর থেকেও যারা আমাকে বিভিন্ন ভাবে ভালবাসা’র চমক পাঠিয়েছো, তাতে আমি সকাল থেকে বার বার কেঁদেছি। আমি যেখানেই থাকি, কিংবা হয়ত থাকি না থাকি, পৃথিবীর একটি বাসায়, আজ আমি জন্মেছিলাম বলে কিছু না কিছু উদযাপন হবেই, এই বিশাল আদর নিয়েই হয়ত পৃথিবী থেকে আমি যাবো।


যারা যারা লিখেছো, এঞ্জয় ইউ ডে, তাদের জন্যে বলছি, আজ আমার জন্মদিন উপলক্ষ্যে সমস্ত ইউরোপ-এমেরিকায় দু’দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে। আমি না হয় শুধু ডে এঞ্জয় করবো, তোমরা পুরো উইকএন্ড এঞ্জয় করো, আমার তরফ থেকে তোমাদেরকে উপহার।


লাস্ট বাট নট দ্যা লিস্ট, নেদারল্যান্ডসের মাঠে আজকে ফাইন্যাল খেলবে আমাদের বাঘিনী’রা আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। আমি জানি জয় আমাদের হবেই। আজকে’র দিনে বাঘিনী’রা বিফল হতে পারে না। অগ্রীম অভিনন্দন আর শুভকামনা।

১৪/০৭/২০১৮

গরমের ছুটি

বছরের সবচেয়ে সুন্দর সময় এটা। চার ধারে ছুটি ছুটি আমেজ। রাস্তায় গাড়ি নেই বললেই চলে। পাড়াটাও নিঃশব্দ, প্রায় অনেকেই চলে গেছে তাদের ক্যারাভান নিয়ে, কেউ জঙ্গলে, কেউ সমুদ্র তটে। ছয় সপ্তাহ পরে ফিরবে, আবার নিত্য নৈমিত্তিক দিন যাপনে কিন্তু এখন অবকাশ যাপন। অফিসের পাশের মাঠে এক পাল ভেড়া আসে প্রায়ই, তাদের গরমের দিনের বিশেষ পান ভোজন সারতে।


দূরের আশপাশের বাসা থেকে খুটখাট শব্দ ভেসে আসে, অনেকেই বাড়িতে কাজ করাচ্ছেন। নির্মান শ্রমিকদের এখন আকাশ ছোঁয়া চাহিদা। সন্ধ্যে লাগা নরম কমলা বিকেল মেখে থাকে বার্বিকিউ এর ঘ্রাণ। ভোর তিনটে না পেরোতেই চারধার আলো আর সাথে নাম না জানা হরেক রকম পাখিদের কলকাকলি জাগিয়ে দেয়, জানিয়ে দেয়, আলসী মেয়ে ঘুমিয়ে কেন আছো? কটা দিন রোদ উঠেছে, প্রাণ ভরে বাঁচো।


গরমের সময় গোটা ইউরোপের চেহারাটাই বদলে যায়। স্থানীয় অধিবাসীরা সবাই অন্য কোন নির্জনতায়। এরা নির্জনতা খুব উপভোগ করে। আর দর্শনীয় সব স্থান বহিরাগত দিয়ে পূর্ণ। অনেকেরই সাধ থাকে জীবনে অন্তত একবার একটা ইউরোপ ট্যুর, লাইফ টাইম অপুরট্যুনিটি।


ছুটির গন্তব্য ঠিক হয়ে গেলে আমারও খুব ভাল লাগে। দৈনন্দিন ক্লিশে জীবন পেছনে ফেলে কোথাও অবশেষে যাচ্ছি যাচ্ছি ভাবনাটা মনটাকে খানিকটা সতেজ রাখে। গরমের ছুটির দিকে তাকিয়েই তো আদতে পুরোটা বছর কাটে। কোথায় কোথায় যাবো, কি কি করবো, কি খাবো ভাবতে ভাবতে কখন যেনো শিশু হয়ে যাই।


আস্তে আস্তে ফেসবুকের হোম ফীড ভরে যাবে রঙ বেরঙের ছুটির আনন্দের ছবিতে। ভরা থাক স্মৃতি সুধায়, সবার সাথে আনন্দ ভাগ করে নেয়ার এই মাধ্যমটি খুবই অনন্য। কাছের দূরের সব বন্ধুদের গরমের ছুটির শুভেচ্ছা। আনন্দ করে ছুটি কাটাও। দেখা হবে আবার ছয় সপ্তাহ পরে, যার যার আপন ঘরে। নিরাপদে সবার প্রত্যাগমন কামনা করছি।

১১/০৭/২০১৮

সাঞ্জু

সঞ্জয় দত্ত আপনি কখনও আমার পছন্দের নায়ক ছিলেন না। আপনার পর্দা উপস্থিতি আমাকে কখনও মুগ্ধ করে নি, কিছু একটা ছিল, আপনার দাঁড়ানো বা হাঁটা'র ধরনটাই আমার আপনাকে উদ্ধত মনে হত, ব্রো' জেনারেশান বা এটিটুড ইজ নট মাই কাপ অফ টি।


কিন্তু আপনার বায়োপিক দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। আমার ভাল লেগেছে। যদিও আপনার ছেলেবেলাটা পুরোটাই বাদ দিয়ে দিয়েছেন, যেটা হয়ত ঠিক হয় নি। শুরুই করেছেন আপনার সমস্যা কাল থেকে কিন্তু সেটার শুরুটা ঠিক কোথায়, সেটা আমরা জানতে পারলাম না। আপনার স্কুল আর স্কুল জীবনের বন্ধুদের কোন উপস্থিতিই নেই পর্দায়। সব কৃতকর্মের যে ব্যখা বা সাফাই দেয়ার চেষ্টা করেছেন তাতে পৃথিবীর সব আইন আদালত উঠিয়ে দিতে হবে, সব কাজেরই কারণ থাকে, কারণ থাকলেই কি সব স্বতঃসিদ্ধ হয়ে যায়? পৃথিবীতে কোন মানুষটা নেই যে দুঃখ-কষ্ট বা চড়াই উতরাই পার হয় না, সবাই কি তাই বলে বখে যায়? না সবার বাবা সুনীল দত্তের পজিশান রাখে সমাজে?


রানবীর হ্যাজ ডান জাস্টিস টু ইয়ো'র ক্যারেক্টার, জানি না এর চেয়ে ভাল আর কেউ করতে পারতো কী না, হয়ত আপনি নিজেও না। আপনার চেষ্টা আর সাহসে আমি মুগ্ধ হয়েছি। আপনার ভাবনাটা সঠিক, আপনার জীবনী আর কত জন পড়েছে বা পড়বে, হয়ত এখন সিনেমার কারণে কিছু পাঠক পাবে। তবে সিনেমার মাধ্যমে দেশবাসীকে আপনি আপনার বক্তব্য পৌঁছে দেয়ার, আপনার কৃতকর্মের ব্যাখা দেয়ার যে চেষ্টাটা নিয়েছেন সেটা অভিনব ও সাহসী। একশ জন দেখলে বিশ জন অন্তত আপনার সম্পর্কে তাদের মত পরিবর্তন করবে।


বায়োপিক হিসেবে "সাঞ্জু" সাহসী, ওয়ার্থ অফ ওয়াচিং।

০১/০৭/২০১৮



Sunday, 24 June 2018

গুন্ডা কিংবা গুন্ডে


জ্যাকি স্রফের “হিরো” সিনেমা থেকে নাকি মিঠুন চক্রবর্তী’র কোন সিনেমা থেকে আদব-কায়দা সম্পন্ন, দয়ালু, মানবিক ও মানবতায় ভরপুর, দারুন রোমান্টিক গুন্ডার আবির্ভাব দেশে সেটা গবেষনা সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু আমরা “রাম-লক্ষন”, “ওয়ান-টু-কা-ফোর-ফোর-টু-কা-ওয়ান, তেজাব, সাড়াক ইত্যাদি সিনেমায় দেখতে পাই এরা গুন্ডা হলেও আসলে মহামানব, পঁচা বড়লোকের টাকা ছিনতাই, নেকলেস ছিনতাই, ব্যাঙ্ক ডাকাতি ইত্যাদি করে সেগুলো নিয়ে যেয়ে বস্তির গরীব বাচ্চাদের মধ্যে কোকোলা চকলেট কিনে বিলিয়ে দিয়ে মহান মানবতার সেবা করেআর ভাববেন না, এরা নিজেরা ইচ্ছে করে, শখ করে গুন্ডা হয়েছে, স্কুলের “এইম ইন লাইফ” রচনায় এদেরও কারো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট ইত্যাদি হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু জীবনের নির্মমতায় এরা গুন্ডে হয়ে গিয়েছে। বাস্তবে যদিও আপনি বাড়িতে শুনে বড় হয়েছেন, আপনার বাবা, চাচা, মামা পয়সার অভাবে, কলেজের অভাবে কিংবা অন্য কোন কারণে মার্স্টাস শেষ করতে পারেনি তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বদলে মফস্বলের কলেজের শিক্ষক হয়েছে। কিংবা কবিতায় পড়েছেন, অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারে নি , অন্ধকার ছাপা খানায় কাজ করে কিন্তু এদের কথা আলাদা। এদেরকে আপনি তাদের সাথে মেলাতে যাবেন না, প্লিজ। তবে দিনের শেষে এরা লাইনে চলে আসে। এ ধারায় বাংলাদেশে কিংবদন্তী ছিলেন জনাব বাকের ভাই।


ইয়ে বলতে দ্বিধা নেই, সেই স্কুল-কলেজের লাইফে যখন মাত্র বোধ হয় হয়েছে,  অনুভব করতে পারলাম, ফুচকা খেতে যতই ভাল লাগুক, ফুচকাওয়ালাকে বিয়ে করে ফেলাটা ঠিক হবে না তখন কিন্তু মনে মনে এরকম হ্যান্ডশাম, নাচ গান জানা, পরোপকারী গুন্ডার কথা ভাবতাম  আমাদের সময় ট্রেন্ড ছিলো ভিসিআরে সিনেমা দেখা, গ্রাম থেকে কেউ এলেই বায়না ধরতো, মুভি দেখবে আর আমরাও তাদের পটিয়ে পটিয়ে আমাদের পছন্দের সিনেমা আনাতাম তখনও মানবতা-মানবধিকার ইত্যাদি শব্দগুলোর সাথে পরিচিতি হই নি তাই জিতু আঙ্কেলকে খুব ভাল লাগতো বারবার, প্রতিবার কাউকে পেলেই মাওয়ালী, জাস্টিস চৌধুরী ইত্যাদি সিনেমা দেখতাম


এছাড়া আছে শক্তি কাপুর, ডিপজল, আমজাদ খান, অমরেশপুরী, মিশা সওদাগর টাইপের গুন্ডে। এরা মন্দ গুন্ডে, জন্ম থেকেই গুন্ডে, হাজার হাজার সুযোগ সুবিধা থাকা’র পরেও এরা মানুষজনকে ক্যালাতে, ফেলাতে, ট্যালাতে ভালবাসে। দেখতে হয় বদখত, শাবাব চৌধুরী টাইপের হ্যান্ডশাম হয় না, তবে এরাও টাকা দিয়ে মানুষের জীবনের দাম পরিশোধ করে ফেলতে চায় এরা সাধারণতঃ যে কোন আবহাওয়াতে স্যুট-টাই কিংবা সুপারম্যান টাইপের অদ্ভূদ জামা কাপড় পরে কোন একটা বিটকেল চেম্বারে টেলিফোন নিয়ে বসে থাকে।  আর সারাবেলা সারা পৃথিবীকে তছনছ করে দেয়ার স্বপ্ন লালন করে, অধুনা – এভেঞ্জার্স – দ্যা ইনফিনিটি ওয়ারকেও উদাহরণ হিসেবে নিতে পারেন। তবে এরা শেষ পর্যন্ত জেতে না, মার খায় ও একদম মরে যায়, বেঁচে উঠে আবার কি করবে এর রিস্ক কেউ শেষ পর্যন্ত নেয় না তাই এদের মেরে দেয়া হয়। এরশাদ শিকদার এর একটি উদাহরণ। তবে কেউ কেউ পালিয়ে হজ্ব করতে সৌদি চলে যায়, যেমন ইয়াবা বদি আবার সব ম্যানেজ হয়ে গেলে ফিরে আসে  

আর এক শ্রেণী’র গুন্ডাকে ফিসফাস করে বলা হয়, সরকারী গুন্ডা।  কেউ গাড়ি চাপা পরলে সেই দৃশ্য কেউ মোবাইল ফোনে তুলে রেখে সেই ভিডিও থানায় যেয়ে দেখালেও তারা আসামী চেনে না। একজন সচেতেন নাগরিক নিজের জীবনের মায়া তুচ্ছ করে এতদূর আগায়। তারপরও এদের ইয়াদদাশ হামেশাই খোয়ী র‍্যাহতে হ্যায়। জনগনের করের টাকায় বেতন নেয়, ঘুষ নেয় কিন্তু তারপরও তাদেরকে কি সেবা দেয় সেটা উচ্চারণ করে বলা যাবে না, বললে গর্দান থাকবে না। তবে সিনেমায় এদের কোন রোল থাকে না, শুধু শেষ দৃশ্যে এদের উপস্থিতি মোটামুটি অবশ্যম্ভাবী, তারা এসে ব্রিটিশ আমলের পিস্তল উঁচিয়ে ধরে বলে, “আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না”, কারণ আইন তাদের মামা বাড়ির কাঁঠাল, আইন তাদের পকেটে থাকে, তাদের একান্ত নিজস্ব সম্পত্তি। যখন ইচ্ছে তারা আইন তুলবে, ক্রসফায়ার করবে, পা কেটে দেবে, কাউকে বাড়ি থেকে তুলে নেবে, অপরাধী কাউকে চিনবে না, কাউকে খুঁজে পাবে না তাদের এই রানীর রাজত্ব্যে। এরা স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ফসল, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এরা একই থাকে, কখনো পরিবর্তন হয় না কারণ রাষ্ট্র তাদের পরিবর্তন হওয়ার কোন সুযোগ দেয় না।  

আর এক শ্রেণীর গুন্ডে অক্সিজেনের মত বিরাজ করে এরা সবসময় পর্দার অন্তরালে থাকে, জন সম্মুখে এদের কখনও দেখতে পাওয়া যায় না। এদেরকে ডন বা ভাই বলা হয় এদের জীবন নিয়ে বই লেখা হয়, সিনেমা বানানো হয় তবে মাঝে মাঝে বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতা, খেলোয়ার, অভিনেতা এদের সাথে তাদের ছবি দেখতে পাওয়া যায় এরা নিজেরা কখনো বাইরে আসে না, বরং এসব বড় মানুষরাই আমন্ত্রিত হয়ে তাদের কাছে যায়  

২১/০৬/২০১৮

Friday, 22 June 2018

দ্যা সিক্রেট বাঙ্কার



http://www.banglatribune.com/lifestyle/news/335481/%E0%A6%AF%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B2%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%A5%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%9A%E0%A6%AE%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%93%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A6%AC-%E0%A6%B8%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF



শীত কেটে গিয়ে সূর্য উঠলে শুরু হয় ইউরোপে বসন্ত। আমরাও শীতনিদ্রা থেকে বের হয়ে শুরু করি ইতি উতি ঘোরাঘুরি। বন্ধুদের আমন্ত্রণে গিয়েছিলাম পাশের দেশ জার্মানীর সবচেয়ে গোপনতম বাঙ্কারটি দেখতে যার অফিসিয়াল নাম  "Dokumentationsstätte Regierungsbunker"  জার্মানী'র বন শহর থেকে মাত্র পঁচিশ কিলোমিটার দক্ষিনে আহর (AHR) পাহাড়ের উপত্যাকায় Ahrweiler এবং Dernau এই দুই শহরের মাঝখানে এর অবস্থান। "কোল্ড ওয়ার" এর সময় এটি নির্মিত হয়, জার্মান সরকার, সংসদ সদস্য, উচ্চ পদস্থা সরকারী কর্মকর্তা'রা যেন জরুরী অবস্থায় কাজ চালিয়ে যেতে পারে সে উদ্দেশ্যে জার্মানীর সর্বকালের গোপনতম এই বাঙ্কারটি তৈরী। গোটা পৃথিবীর কাছে জার্মানী’র লুকিয়ে রাখা একটি গোপনতম সত্যি ছিলো এটি।

ন্যাটো এবং ওয়ার্শাও প্যাক এর বিরোধিতায় আনবিক যুদ্ধ যখন আসন্ন, রাজধানী বন হতে পারে আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যস্থল তখন আনবিক বোমার ভয়ে জার্মান'রা পরিকল্পনা করলো আনবিক বোমা থেকে বাঁচার জন্যে আশ্রয়স্থল  নির্মান করবে। সেখান থেকে বাকি রাষ্ট্রীয় কাজ পরিচালনা করবে। উনিশো পঞ্চাশ সালের দিকে বাঙ্কারটি তৈরীর পরিকল্পনা শুরু হয়। সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী কর্নাড আডেনাওয়ার আর জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এই পরিকল্পনা করেছিল। বছর ধরে একটা ভাল আর উপযুক্ত জায়গা খোঁজাখুঁজি করার পর বনের খুব কাছেই কিন্তু আবার শহর নয়, উপশহরও ঠিক নয় Bad Neuenahr এর কাছে Ahrweiler এই  Ahrtal এই জায়গাটি তাদের পছন্দ হয়। তারা ভাবলো শত্রুরা কখনো এত পল্লী জায়গায় বোমা ফেলার কথা ভাববে না। কখনো কাজ শেষ না হওয়া দুটো রেললাইন ছিলো এই বাঙ্কারটি তৈরীর প্রাথমিক উপাদান। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না বলে রেললাইনটি কখনো চালু করা হয় নি। প্রথমে এতে মাশরুম চাষ হয়েছিল পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে কিছু অস্ত্র তৈরীর কারখানা এই টানেলটি দখল করে তারও পরে Lager Rebstock (Camp Vine) এই কোড নাম দিয়ে রাজনৈতিক বন্দীদের দিয়ে জোর করে এর রক্ষনাবেক্ষণের কাজ করানো হত।  

রেললাইন থেকে শুরু করে একশ দশ মিটার মাটির নীচে আসে বাঙ্কারটি'র প্রবেশ পথ। উনিশো বাষট্টি সালে কাজ শুরু হয়ে, টানা নয় বছর চলে রিগিয়ারুংস বাঙ্কারটি'র কাজ, উনিশো একাত্তর সালে এটি সম্পূর্ণ হয়। সতের দশমিক তিন কিলোমিটার দৈঘ্য'র এই বাঙ্কারটিতে স্বাভাবিকভাবে নয়শ ছত্রিশ জনের ঘুমের ব্যবস্থা আর আটশো সাতানব্বইটি অফিস রুম আছে, দরজা’র সংখ্যা পঁচিশ হাজার। জরুরী অবস্থায় বাইরের পৃথিবী’র সাহায্য ছাড়া তিন হাজার মানুষ যেনো অন্তত ত্রিশ দিন বেঁচে থাকতে পারে সেরকম ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভারী স্টিলের পাত দিয়ে বানানো দরজাগুলো মুহূর্তের মধ্যে বন্ধ হয়ে যেনো পৃথিবী থেকে বাঙ্কারটিকে আলাদা করে ফেলতে পারে সেভাবেই এটি তৈরী। তাজা বাতাস, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা সহ এই বাঙ্কারটি তৈরীর ব্যয় ধরা হয়েছিল তিন বিলিয়ন ডয়েচ মার্ক যদিও শেষ পর্যন্ত কত খরচ হয়েছিলো প্রচন্ড গোপনীয়তার কারণে কেউ তা আজও জানতে পারে নি   
মানুষজন যেনো মাটির নীচে নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে কাজকর্ম করতে পারে ও বসবাস করতে পারে তার জন্যে যত ধরনের সুযোগ সুবিধা দরকার তার সব কিছু'র ব্যবস্থাই এখানে আছে। ডাক্তার চেম্বার ও রোগী দেখার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, দাঁতের ডাক্তার, চুল কাটার সেলুন, বিয়ার খাওয়ার ব্যবস্থা ইত্যাদি ইত্যাদি। বিরাট এই স্থাপনা হেঁটে হেঁটে ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে আমরা বেশ ক্লান্ত হলাম বাইরে তাপমাত্রা বিশের ঘরে থাকলেও বাঙ্কারটি'র তাপমাত্রা সবসময় বারো ডিগ্রী সেলসিয়াসে রাখা হয়, হালকা জ্যাকেট গায়ে রেখেও বেশ শীত শীত লাগছিলো।

শীতল যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার অনেক দিন পর পর্যন্তও এই বাঙ্কারটির কথা জনগনকে জানানো হয় নি। তিন শিফটে পালা করে একশ আশি জন কর্মী বাঙ্কারটি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করত। হিরোশিমা’র সমপরিমান মানে বিশ কিলোটন বোম ব্যবহার করলে এটি ধ্বংস করা যেতো। এটি জানা সত্বেও রাজনৈতিক কারণে এটিকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যখন জার্মানরা মোটামুটি যুদ্ধের আর প্রয়োজন হবে না বলে নিশ্চিত হলো তখন তারা জনসম্মুখে বাঙ্কারটি'র কথা প্রকাশ করলো। দুই হাজার এক সাল থেকে দুই হাজার ছয় পর্যন্ত আস্তে আস্তে বাঙ্কারটি ধ্বংস করতে শুরু করলো তারা। তাদের যুদ্ধ দিনের আশ্রয়স্থলের একটি অংশকে তারা যাদুঘরে রুপান্তর করেছে, যার নাম Dokumentationsstätte Regierungsbunker এক পাশের খুব সামান্য অংশই খোলা হয়েছে জনগনের জন্যে বাকি কিছুটা পরিত্যক্ত আর অনেকটাই সীল মোহর করে দেয়া হয়েছে। তাই চাইলেও পুরো সত্য জানার উপায়  কারো নেই।

দুই হাজার আট সালে রিগিয়ারুংস বাঙ্কারটি জনসাধারণের দেখার জন্যে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। জার্মানীর ইতিহাসের সবচেয়ে গোপনতম বাঙ্কারটি হয়ে উঠলো দর্শনার্থীদের ঐতিহাসিক দর্শন স্থান। জার্মানীতে এটি বেশ  চিত্তাকষর্ক দর্শনীয় স্থান। একটি বিপুলাকৃতির স্থাপনা, যার অসংখ্য প্রবেশদ্বার, অসংখ্য যন্ত্রপাতি, নানা ধরনের বৈদ্যুতিক কার্য কলাপ, বের হবার দরজা কি নেই সেখানে। সব কিছু দেখতে পাওয়া যাবে এক জায়গাতেই। অবাক বিস্ময়ে দেখতে হয় আনবিক যুদ্ধের সময় নিজেদেরকে বাঁচাবার র যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জার্মান সরকারের কি বিশাল প্রস্তূতি ছিলো।

গাইডের মুখে শুনতে পেলাম, বার্থ ডে পার্টি, পিজামা পার্টি, অফিসিয়াল ডিনার, কনফারেন্স এর কাজে এখন বাঙ্কারটিকে ভাড়া দেয়া হয়।

বাঙ্কারের পাশেই দর্শনার্থীদের জন্যে চা,কফি, বিয়ার কিংবা ছোটখাট স্ন্যাক্স খাওয়ার জন্যে ফ্রাইস, হট ডগ ইত্যাদির ব্যবস্থা আছে। ঠান্ডা থেকে বের হয়েই সাথে সাথে গরম গরম জার্মান ফ্রাইস আর কফি খেলাম তার সাথে বন্ধুরা মিলে আড্ডা তো আছেই।

বাঙ্কারটি দেখা শেষ কিন্তু ফিরে আসবো? কিছুতেই নয়। ভ্যালিটি অত্যন্ত মনোরম, হেঁটে চলার পথের সাথে আছে গাড়ি চলার পথও। বেশির ভাগ পর্যটকই অবশ্য হেঁটে চলার পথটি দিয়ে আঙ্গুর বাগান, আপেল বাগানের মাঝ দিয়ে একদম চূড়োতে চলে যান, সাথে আছে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য, চোখ ফেরানো দায়। আমরাও হেঁটে হেঁটে ঘুরে বেড়ালাম। অনেক ওয়াইন কোম্পানী তাদের লোগো বসিয়ে রেখেছে আঙুর বাগানে আবার অনেক  আপেল কোম্পানী তাদের প্যাকেট সাজিয়ে রেখেছে তাদের আপেল বাগানে, হাঁটতেই হাঁটতেই দেখতে পেলাম যে কোম্পানীর জুস খাই তার আপেল কোথা থেকে আসে।

ভ্যালি'র ওপর থেকেই দেখতে পাওয়া যায় সুন্দরতম Ahrweiler শহর,  Ahr নদী'র কিছু অংশ আর অপরূপ কারুকাজ করা Ahrweiler এর টাউন হল, চার্চ ইত্যাদি। না দেখে ফিরে আসা মহা অপরাধ সমতূল্য। পুরো একটি দিন ঘোরাঘুরি করে ফিরে এলাম বন্ধুদের নতুন কেনা ডেরায়। সারা সন্ধ্যে তুমুল আড্ডা আর গান-কবিতার আসরের মাঝেও বার বার মনে উঁকি দিয়ে গেলো “দ্যা সিক্রেট বাঙ্কার”

তথ্যসূত্রঃ অন্তর্জাল



Saturday, 16 June 2018

আব্বু দ্যা বস (কার্ড)




কার্ড খেলা শিখেছিলাম আব্বুর কাছে বেশ ছোট বয়সে তবে প্রথমে আব্বুকে “প্রমিজ” করতে হয়েছিলো, কখনো কোথাও টাকা দিয়ে কার্ড খেলবো না। আমাদের স্কুল-কলেজ তথা পুরো ছাত্র জীবনই কেটেছে, হরতাল-অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও এর মাঝে। শহুরে মধ্যবিত্তের মাথায় তখনও এপার্টম্যান্ট ব্যাপারটি সেভাবে গেঁথে যায় নি, তাই এই শহরে তখনও ইট কাঠের দালান ভেদ করে ঐ আকাশ দেখা যেতো ঢাকা’র সেন্টার পয়েন্টে বাড়ি বলে ছাদে উঠলেই ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, নিউ মডেল ডিগ্রী কলেজের ছাত্রদের রাস্তায় টায়ার পোড়ানো, পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, টিয়ার শেল মারা, কি তুমুল উত্তেজনা, সবই শুধু চোখে দেখা যেতো। একমাত্র বিনোদন ছিলো বোকা সরকারী টিভিতে ফিল্টার করা খবর, ভিসিআর আর পরে এসে ডিশ যোগ হলো আর এর বাইরে ছিলো বইরাস্তার পরিস্থিতি সব সময় বাসা থেকে লুকিয়ে বের হয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া’র অনুকূলে থাকতো না বলে কার্ড খেলা শিখিয়ে দিয়ে আব্বু’র তেমন কিছু লস হয় নি। আব্বুরও সময় আমাদের সাথে ভালই কাটতো

আমাদের সময় গড়পড়তা মধ্যবিত্ত জীবনে “মেয়ে মাইনষের কার্ড” খেলাকে যারপর নাই ঘৃণা’র এবং তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখা হত। একদল কাজিন খেলতো আর একদল কঠোর “গুনাহ” এর দৃষ্টিতে দেখতো। আমাদেরকেও ঠারে ঠুরে কথা শুনতে হয়েছে, কি জানি (একটা লম্বা নিশ্বাসের পজ হবে) তারপর এখনই কেয়ামত হয়ে মাথায় আকশ ভেঙে পরবে এই রকম উদাসি সুরে টেনে টেনে খানিকটা নাকে আর খানিকটা গলা দিয়ে বলা হতো, “কিয়ের জানি কি দিনকাল পরছে, কি জমানা আইছে গো, মাইয়ারা বলে টাসটুস খেলে”। এই কথাগুলো শুনেছি আমরা পরিবারের একান্ত আপনজনদের কাছ থেকে, এক হাত দূরত্বের মাঝে থেকে শুধুমাত্র স্বয়ং আব্বু আর ভাইয়া এতে সরাসরি জড়িত ছিলো বলে আমাকে বা আমাদেরকে “ক্রসফায়ার”এ দেয়া হয় নি। আমি আজও ভেবে পাই না, আমাদের সংস্কৃতিতে মেয়েদের যেহেতু বাসা থেকে বেরোনো’র সমস্যা, কার্ডের মত একটা বুদ্ধির খেলায় তাদের এত নেতিবাচক মনোভাব কেন? এরমধ্যে পাপপুণ্য কোথায় জড়িত? অল্প টাকায় আর অল্প জায়গায় যে কোন জায়গায় লুডু’র মত এটিও খেলা যায়। তবে অনুমান করতে পারি, ক্লাব ব্যাপারটা আমাদের দেশে খুব নেতিবাচক ভাবে উপস্থাপণ হয় নাটক, সিনেমা কিংবা মিডিয়াতে, ক্লাব মানেই এলকোহল আর কার্ড, সুতরাং এ জিনিস মানষের চেতনায় খারাপ ভাবে আঁকা হতে বাধ্য। বাজে দিকও অবশ্য আছে, যখন প্রথম দিকে খেলার খুব নেশা, বান্ধবীরা মিলে ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে খেলতাম, প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডামের কাছে ধরাও খেয়েছি, সেসব কত কথা

বাসায় সবাই মিলে যখন খেলতে বসতাম, মানে, আমি, আব্বু, ভাইয়া আর সুমি তখন দুটো খেলা বেশি খেলতাম, স্প্রেডসট্রাম বা কল ব্রীজ আর ব্রে কল ব্রীজে চ্যালেঞ্জ কম, ক্রিকেটের মত, ভাল কার্ড হাতে এলে ছক্কা মারা যায় আর মন্দ কার্ড হাতে এলে পিটিয়ে খেলে এক দুই রান যা তোলা যায় আর কি। ব্রে হলো একটু চ্যালেঞ্জিং, ফুটবলের মত, গোল খেলেই হারলে, যত গোল খেলাম মানে পয়েন্ট পেলাম ততই ব্রে হলাম পয়েন্ট পাওয়া মানেই বোকা। হাতের কার্ড যত ফেলে দেয়া যায় মানে যত অন্যকে গছিয়ে দেয়া যায় সেটা হলো এই খেলার মুন্সীয়ানা কার্ড খেলা মোটামুটি আয়ত্বে এসে গেছে, কি করে কার্ড গুনতে হয়, কার হাতে কি কার্ড আছে কি করে ধারনা করা যায়, কে কিভাবে সাজাচ্ছে অনুমান করতে শিখে গেছি,  দেখা যেতো অনেক সময় ভাগ্যই অনুকূল থাকতো না। এমন সব কার্ডই হাতে এমন আসতো যে সব বুঝেও হার মেনে নেয়া ছাড়া কিংবা খেলার দিক পরিবর্তন করার কোন সুযোগই আসতো না। বাস্তব জীবনে বহু পরিস্থিতি, আমাকে এই কার্ড খেলা বার বার মনে করিয়ে দিয়েছে, পরিবেশের কাছে মাঝে মাঝে আমরা কতটা অসহায়। সব জেনে বুঝেও ধৈর্য্য ধরে খেলাটা খেলে যেতে হয়, সময়ের অপেক্ষায়। আবার এমনও হয়েছে উচ্চাভিলাষী হয়ে কিংবা আনমনে দুটো দান ভুল খেলেছি, সেই যে গেইমটা হাত থেকে চলে গেলো, আর কিছুতেই রিকভার করতে বা সামাল দিতে পারলাম না। যা হারালো তা হারালোই, ফিরে পাওয়া গেলো না।

এরকম সময়ে খুব সর্তক হয়ে যেতাম, বার বার ভাবতাম, কার্ড দিতে খুব হিসেব করতাম, সময় নিতাম। আব্বু মজা করে বলতো, এত দেরী কর কেন, খেলো খেলো, খেললেই পাবে, চাললেই পাবে। খুব রাগ হত, অনেক রেগে যেতাম, আমি হেরে যাচ্ছি আর আব্বু মজা পাচ্ছে। এখনও সে আগেরই মত জীবন ভর নানা খেলায় শুধু আমি হেরেই যাচ্ছি, কত ভুল হয়ত বুঝতে পারি কিন্তু সংশোধনের সুযোগ জীবন আর দেয় না। তবুও টিকে থাকার লড়াইয়ে খেলে যেতে হয়, হরদম খেলে যেতে হয়। আব্বু’র মজা করে, হেসে, দুষ্টুমি করে বলা কথা গুলোও এখন কত গভীর অর্থ নিয়ে ধরা দেয়।  

তবে, আব্বুর একটি কথা আজও রেখেছি, পয়সা দিয়ে কখনো কারো সাথে কার্ড খেলিনি। বড় কারণ অবশ্য কেউ কখনো অফারই করেনি, তাই নিজেকে পরীক্ষা করাই হয়ে ওঠেনি।

বাবা দিবসের অনেক অনেক শুভেচ্ছা আব্বু, লাভিউ আব্বু (সামনাসামনি তো কখনো বলে উঠতে পারি না, লেখা পড়েই আপনি জেনে নিন)  

পৃথিবীর সব ভাল বাবা, দুষ্ট বাবা, মিষ্টি বাবা, পঁচা বাবাদেরকও বাবা দিবসের অনেক অনেক অভিনন্দন। আর যে সকল মায়েরা বাবা এবং মায়ের দুটো দায়িত্ব বিপুল বিক্রমে পালন করছো সে সব কমরেডদের লাল স্যালুট।

০৬/০৬/২০১৮