Monday 30 January 2012

আমার যত সিনেমা - ১

জ্ঞানীগুনী লোকেরা প্রায়ই সিনেমা নিয়ে লিখেন। তাদের লেখা পড়ে আমারো সাধ জাগে সিনেমা নিয়ে লিখতে। মনে মনে লিখি কিন্তু ভয়ে পোষ্ট দেই না। সিনেমা দেখে আমি টেকনিক্যাল সাইড তেমন কিছু বুঝি না। শুধু বুঝি আমার ভালো লেগেছে কি লাগেনি। কিংবা আমি কি কিছু বুঝলাম নাকি বুঝিনি। অনেকদিন কিছু লিখি না। কিছু সিনেমা দেখলাম। মাথায় সিনেমাগুলো ঘুরছে, কাজের ফাঁকে ফাঁকে মনে হয় আচ্ছা নীরা বাবার বাড়ি চলে গেলেই হয়তো পারতো কিংবা মহিলা কি করে সারাক্ষণ এমন চিৎকার করে যান। এটা ওভাবে হলে কি হতো? কেন সেভাবে হলো না? মনে হয় এ চরিত্রগুলো আমার বড্ডো চেনা। আমি আমার অতি সরলীকরণ ভঙ্গীতেই সিনেমা নিয়ে কিছু লিখছি। প্রথমে,

ইতি মৃণালিনীঃ আমাদের আর আমাদের এক বন্ধুর সিনেমা দেখার রুচি মোটামুটি খুব কাছাকাছি। আমরা প্রায়ই একসাথে খেয়ে দেয়ে সিনেমা দেখি। একদিন সে দেখালো ইতি মৃণালিনী। একজন সাফল্যের তুঙ্গে থাকা নিঃসঙ্গ রমনীর ইতিকথা। সাফল্যের জন্য, স্বপ্ন পূরনের জন্য বা জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার জন্যে শুরু থেকে তার সংগ্রাম। প্রায় আর দশটি সাধারণ আলাভালো মেয়ের মতো সেও ট্যালেন্টের পাশে আরো অনেক কিছু বিলিয়ে দিয়েই সংগ্রামে থিতু হয়েছে। অন্যের প্রতারনার শিকার হয়ে মেনে নিয়েছে। যেটা আমার মনকে সবচেয়ে বেশি টেনেছে সেটা হলো মৃণালিনীর মেয়ের আকস্মিক মৃত্যু। তারপর তার একাকী জীবন। আমার খুব একজন আপনজনের জীবনেও ঠিক একই রকম একটা ঘটনা আছে। একাকী ছিলেন তিনি তার ছেলেকে বুকে জড়িয়ে। আকস্মিক ছেলেটি একটি দুর্ঘটনায় মারা যায়। তিনি এখনো একা বেঁচে আছেন। সিনেমার লাষ্ট টার্নিং পয়েন্টটা হলো মৃণালিনী যখন আত্মহত্যার চিন্তা বাদ দিয়ে বেঁচে থাকার জন্যে সকাল দেখতে কিংবা পৃথিবী দেখতে বের হলেন তখন দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। হায়রে নিয়তি। সবচেয়ে ভালো লেগেছে ড্রেসম্যানের কাজ। অনেকদিন এমন রুচিশীল শাড়ি গয়নার সামঞ্জস্য দেখিনি বাংলা সিনেমায়। ম্যাচুরিটি দিনে দিনে কঙ্কনাকে অন্যধরনের সৌর্ন্দয এনে দিচ্ছে। অপর্না সেনের আরো একটি মাষ্টারপিস, যদি দেখতে চান ক্লিক করুন এখানে

এক যে আছে কন্যাঃ আজকের এই অস্থির সমাজ ব্যবস্থায় অতি আধুনিকভাবে বেড়ে ওঠা এক টিন এজ মেয়ের গল্প হলো এই সিনেমাটি। গার্ল নেক্সট ডোর যাকে বলে। বাবা মা ডিভোর্সড, মা কিছুটা মানসিকভাবে অপ্রকৃতস্থ, নানা বাড়ির বেপোরোয়া স্বাধীনতায় বখে যাওয়া সে। সারাদিন রাজ্যের ফ্যান্টাসীতে ভোগে কিন্তু চরম জেদী, অপরাধী মানসিকতার মেয়ে। কিছুটা থ্রিলারের স্বাদ পাওয়া যায় এ সিনেমাটিতে। একবার শুরু করলে শেষ না করে ওঠা মুশকিল। কলেজে পড়া এই মেয়ে মধ্যবয়সী এক ভদ্রলোককে যে তাদের বাড়িতে ভাড়াটে হয়ে এসেছে তার প্রেমে পড়াতে চায় জোর করে। ভদ্রলোকের অন্য একটি মেয়ের সাথে আগে থেকেই সম্পর্ক আছে। এ জানার পর থেকে সে আরো বেপোরোয়া হয়ে ওঠে। ভদ্রলোকের প্রেমিকাকে খুন করার চেষ্টা করতেও সে পিছপা হয় না। এক খুনের পর অন্য খুন। খুন করে অন্যকে ফাঁসিয়ে দেয়া তার কাছে ব্যাপার না, সেদিকে তার মাথা এতোই ঠান্ডা। সব্যসাচী চক্রবর্তী, কঙ্কনা সেনশর্মার অভিনয় অসাধারণ এজ ইউজুয়্যাল। দেবশ্রী গতানুগতিক, স্টিরিও টাইপড। এখানে দেবশ্রীকে না দিয়ে অন্য একটা সাধারণ মেয়েকে দিলেও চলতো। কিছুই করার নেই টাইপ চরিত্র। এই সিনেমার রুপসজ্জাও ছিল বাস্তবধর্মী। প্রতীক চৌধুরীর গলায় একটা অসাধারণ গান আছে যেটা শুনতে পাবেন এখানে

হঠাৎ নীরার জন্যঃ সুনীল গাঙ্গুলীর লেখা ছোট গল্প “রানি ও অবিনাশ” নিয়ে একটি অসাধারণ সিনেমা। নীরা তার পুরনো প্রেমকে অতি কষ্টে চাপা দিয়ে স্বামী ছেলেকে নিয়ে মোটামুটি ভালোভাবেই নিজেকে গুছিয়ে সংসার করে যাচ্ছিল। হঠাৎ আবার পুরনো প্রেম সামনে এসে দাঁড়ালো কিছু অন্যায্য দাবী নিয়ে। নীরা জানে এ দাবি অন্যায্য, এ হয় না। সে নিজেকে অনেকভাবে সামলানোর চেষ্টা করে। কিন্তু আগুনের স্পর্শে এক সময় মোম হয়ে সে গলতে বাধ্য হয়। অবাক ঘটনা এ নিয়ে নীরার সংসারে অশান্তি শুরু হলেও নীরা আর অবিনাশকে যোগাযোগ করতে পারছে না। দাবি পূরন হয়ে যাওয়া মাত্র অবিনাশ তার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে, নীরা রয়ে যায় পিছনে। এক সময় নীরা আবার নিজেকে সামলাতে ব্যস্ত হয়। সিনেমায় দারুন গান আছে দুটো। একটি গান সুনীলের বিখ্যাত কবিতাকে সুরে বসানো হয়েছে, “এ হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ, আমি কি এ হাতে কোন পাপ করতে পারি”? ড্রেসাপের কাজ এখানেও ভালো ছিল। যারা সিনেমাটি দেখতে চান ক্লিক করুন এখানে

নাগরদোলাঃ রুপা গাঙ্গুলীর অসাধারণ অভিনয়ে একটি সিনেমা। আমাদের দেশের কিছু টিপ্যিকাল চরিত্রকে তিনি উপস্থাপন করেছেন। যাদের নিজেদের শেখার জানার বাইরে আর কোন জগত নেই। আর বাইরের জগতকে শিক্ষা দিতে তিনি এতোই ব্যস্ত যে ঘরে কি হয়ে যাচ্ছে তার কোন হুঁশ নেই। সিনেমার প্রথম অংশটুকু যতোটা ভালো লেগেছিল, শেষেরটুকু ঠিক ততোটা ভালো লাগেনি। শেষেরটুকু এসে গতানুগতিক সিনেমাধারায় মিলে গেছে। তবুও প্রথমটুকু দেখলেও শেষের ক্ষতি পুষিয়ে যাবে। এ সিনেমার গেটাপ ভালো ছিল। দেখতে চাইলে ক্লিক করুন এখানে

শেষের কবিতাঃ ঋতুপর্না সেনগুপ্তের অভিনয়ে শেষের কবিতা mon amour. এটিও অসমাপ্ত প্রেমের গল্প। তুচ্ছ কারণে ঝগড়া থেকে বিচ্ছেদে হারিয়ে ফেলে ভালোবাসার দুজন দুজনকে। তারপর সাত বছর পর দেখা। প্রেমিকাকে যেভাবে সুখী কল্পনা করেছিল তা হোচট খায়। প্রেমিককে প্রতারক ভেবেছিল সে ধারনাও ভাঙ্গে। কিন্তু নিঠুর নিয়তি, সব সত্য জেনেও আজকের বাস্তবতাকে বদলাতে পারে না কেউ। ছোট একটি রাজকুমারী মা-বাবার জন্যে প্রতীক্ষা করে বসে আছে। এ ছবির গেটাপ অত্যন্ত বাজে লেগেছে আমার কাছে। ছবির মাননুযায়ী প্রচন্ড সস্তা। পুরো ছবিতে চারটি ড্রেস ছিল নায়িকার। নায়িকাকে যৌন আবেদনময়ী দেখানোর জন্যে স্থুল টেকনিকে বার বার পায়ের কাছে ক্যমেরা ঘুরিয়ে নিচ্ছিলেন যা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। জামা কাপড়ের হালতো বলা বাদ। শাড়ির সাথে যেভাবে মা কালী কায়দায় মাথায় সিঁদুর লেপ্টানো হয়েছে তাও অতি আধুনিকা চরিত্রের বৃষ্টিকে, বাসনা মাজা ঝিয়েরাও আজকাল সেভাবে সিঁদুর পড়েন না। নায়িকাকে বন্ধুর বাড়ির ডিভানে শুয়ে পড়ার এই চিন্তাও অবাস্তব লেগেছে আমার কাছে। রবীন্দ্রনাথের গানগুলোকে খুব সুন্দরভাবে ব্যবহার করেছে সিনেমাতে। এতোবার শোনা গানগুলো যেন আবার মনে দোলা দিল। কিন্তু সব মিলিয়ে সিনেমাটা দারুন।

তানবীরা
৩১/০১/২০১২

No comments:

Post a Comment