Wednesday 17 June 2020

আমার মন কেমন করে---


কারণে এবং অকারণে যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি বিকল হয় তার নাম “মন”। আচ্ছা, “মন” কি কোন জিনিস? ধরা যায়? ছোঁয়া যায়? এম-আর-আই কিংবা সিটি স্ক্যান বা এক্সরে তে কখনও ধরা পড়ে? এর অস্ত্বিত্ব কোথায়? এটি শরীরের ঠিক কোন অংশে থাকে? এই ধরা যায় না, ছোঁয়া না জিনিসের প্রভাব জীবনে অপরিসীম। মন কেমন করা, মন খারাপ করা, এক এক সময় ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। একলা লাগতে পারে, খাওয়ার রুচি কমে যায়, ঘুম আসে না, লোকজনের সঙ্গ ভাল লাগে না, বই-সিনেমাতে মন বসে না, মেজাজ ক্ষিপ্ত থাকে, ইত্যাদি আরো অনেক উপসর্গ, তখন এটাকে “বিষন্নতা” বলে। এটি একটি “রোগ”, জ্বর, ঠান্ডা, সর্দি-কাশি কিংবা কোভিড নাইন্টিন এর মত এটি একটি অসুস্থতা, এতে লজ্জা বা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এর চিকিৎসা আছে। মানুষ আপনাকে মানসিকভাবে দুর্বল ভাবতে পারে, পাগল ভাবতে পারে ইত্যাদি ভেবে নিজেকে কষ্ট দেবেন না। ক্যান্সার হলে কি কে কি ভাবছে ভেবে চিকিৎসায় পিছিয়ে যেতেন? ক্যান্সারে যেমন আপনাকে মারে, বিষন্নতাও আপনাকে ঠিক মৃত্যু মুখেই ঠেলে দিচ্ছে। এক্টিভ কিংবা প্যাসিভ ভাবে।

মানুষের দুটো স্বাস্থ্য থাকে, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য। “মানসিক স্বাস্থ্য” শারীরিক স্বাস্থ্যের মতই ঠিক গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। অন্যান্য রোগের মত এরও প্রকার ভেদ আছে, প্রধানতঃ নয়টি ভাগে একে ভাগ করা হয়েছে, Major Depression, persistent depressive disorder, bipolar disorder, Seasonal Affective Disorder (SAD), Psychotic Depression, Peripartum (Postpartum) Depression, Premenstrual Dysphoric Disorder (PMDD), Situational Depression, Atypical Depression। যে জিনিসটি মানুষকে মৃত্যুর দরজায় নিয়ে যায় সেটি ফেলনা কিছুতেই হতে পারে না, তাই এই নিয়ে প্রচুর গবেষনা হয়েছে, হচ্ছে, এর মেডিকেশান আছে, কাউনসিলিং আছে।

কে আপনাকে “বিষন্নতা বিলাস” বলে ফোঁড়ন কাটলো সেটা আমলে না নিয়ে নিজের প্রতি মনোযোগী হন। সাধারণতঃ ডাক্তাররা বলেন, শারীরিক পরিশ্রম কিংবা ব্যায়াম, যোগ ব্যায়াম, মেডিটেশান ইত্যাদি বিষন্নতা “নিয়ন্ত্রণে” সাহায্য করে। তবে সেটা নিয়মিত হতে হবে, ইচ্ছে হলে করলাম নইলে না, সেটাতে কিন্তু হবে না। আর “নিয়ন্ত্রণে” সাহায্য করে মানে কিন্তু নিরাময় করে না তার জন্যে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হন। আর ফেসবুকে বন্ধু খুঁজে এই সমস্যার সমাধান হবে না। এপেন্ডিসাইটিস হলে কি ফেসবুকে বন্ধু খুঁজতেন? এই যে লোকজন বলছে, আমার সাথে কথা বলুন, মোটেও সেই ফাঁদে পড়বেন না। নম্বর এক, সে কি জানে? আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে হবে, আপনার কি প্রয়োজন? কথা বললেই রোগ ভাল হয়ে যায়! তাহলে প্রফেশন্যালদের দরকার ছিলো? নম্বর দুই, আপনার কথা সবাইকে বলে বেড়িয়ে, স্ক্রিনশট দিয়ে বাকি বেঁচে থাকাটাও হারাম করে দেবে না যে সেটার কি গ্যারান্টি? তবে মোহিত কামাল বা সৈয়দা আনোয়ারা হক মার্কা নয়, আন্তরিক ও জ্ঞানী কাউকে পাশে চাই। রোগকে স্বীকৃতি দিন, সিরিয়াসলি নিন, চিকিৎসার সুযোগও তৈরী হবে।সাদামাটা চোখে মানসিক অবসাদ দেখা না গেলেও অনেক মৃত্যুরই এটি কারণ। নিজের যত্ন নিন।

বিষন্নতার কাছে আত্মসমর্পণ হলো, আত্মহত্যা।

তানবীরা
১৭/০৬/২০২০

No comments:

Post a Comment