Friday 25 September 2020

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – ১৮ (সেপ্টেম্বর)

আঠারোই সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় প্রেসিডেন্ট মিনিস্টার রুতে তার করোনা ভাষণ দেয়ার কারণ হিসেবে বললেন, উইকএন্ড মুড যাতে বেশি দূর না যায় তাই তিনি এটা করেছেন কারণ করোনা ভাইরাস খুব জোরেশোরে আবার ফেরত আসছে।দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা টীম দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন। সামাজিক জীবন আর অর্থনীতিকে যত দূর সম্ভব রক্ষা করতে আঞ্চলিক ও স্থানীয়ভাবে করোনা মোকাবেলা করার কথা ভাবা হয়েছে। কেন আবার কঠোর বিধি -নিষেধের দিকে যাওয়া হচ্ছে? গরমের ছুটির সময় থেকেই দেখা যাচ্ছে, অনেকের কাছে করোনা ভাইরাস শুধু একটি শব্দ হয়ে গেছে। সোশ্যাল ডিসটেন্স, হাত ধোয়া কিংবা সর্দি কাশিতে বাড়ি থাকা কোন কিছুকেই তারা আর গুরুত্ব দিচ্ছে না। বার বার বলা হচ্ছে, ওয়ার্ক ফ্রম হোম, এটি এমনি এমনি বলা হচ্ছে না, কেইস স্টাডি থেকে দেখা যাচ্ছে, শতকরা দশ ভাগ সংক্রমণ কাজের জায়গা থেকে আসছে আর দশ ভাগ কোন ছোট সংখ্যা নয়। মধ্য এপ্রিলে যখন করোনার প্রার্দুভাব সবচেয়ে বেশি ছিলো তখন গড় সংক্রমণ সংখ্যা ছিলো চারশো আর যেটা এখন হাজারের ওপরে। ছাত্রদের জন্যে এটি একটি চরম বাজে সময় যাচ্ছে। হাজার সীমাবদ্ধতার মধ্যেই তারপরও ক্লাশ চলছে, এজন্যে সবাই অভিনন্দন পেতে পারে। যদিও ছাত্রাবাসগুলোতে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। আগে নেদারল্যান্ডস যে সাফল্যের সাথে করোনা মোকাবেলা করেছিলো তার কারণ মোটেও ইন্টিলিজেন্ট লকডাউন ছিলো না, ছিলো সতের মিলিয়ন মানুষের ঐক্যবদ্ধ চেষ্টা আর বিপদকে কাটিয়ে ওঠার অনুভূতি যেটা আবার আমাদের ফেরৎ আনতে হবে। হাসপাতাল কিংবা আইসিইউতে কম ভীড় মানে করোনা কম বিপদজনক তা নয়, ডাক্তাররা এখন করোনার চিকিৎসা সম্বন্ধে ভাল জানেন, কিভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তা বুঝতে পারেন। কিন্তু চারপাশের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। করোনা রোগীদের এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে, কারণ আগে থেকে যাদের গুরুত্বপূর্ন অন্য অপারেশন, চিকিৎসা যেগুলোর পরিকল্পনা করা আছে, সেগুলো যেনো ঠিকমত চলতে পারে। হৃদরোগী, ক্যান্সারের রোগীদের চিকিৎসা ফেলে রাখা যায় না। আমস্টার্ডামে এবং রোটারডামে তাই আলাদা করোনা ডিপার্টমেন্ট চালু করা হয়েছে। যেসকল হোমে খুব সেন্সিটিভ রোগী আছে সেখানে করোনার আক্রমণ বেশি হচ্ছে। একজন মানুষ এক দশমিক চারজন মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে। আর একবার হাসপাতালের কর্মী সংকট, আর একবার মৃত্যুর মিছিল, আর একবার চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রমের মধ্যে দিয়ে আমরা হাঁটতে চাই না। ক্যাফে-রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি সব বন্ধ করে দিলে তার থেকে যাদের কর্ম সংস্থান হয় তাদের কথাও মাথায় রাখা দরকার। যেখানে অনেক বেশি ছাত্র ও তরুণদের বসবাস, দেশের পশ্চিমভাগে, রান্ডস্টাডে ছয়টি কঠোর নিয়মের কথা ভাবা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানালেন আমরা এখন সেকেন্ড ওয়েভে আছি, তবে করোনা সম্বন্ধে আমরা আগের চেয়ে ভাল জানি বলে চিকিৎসাক্ষেত্রে ভাল আছি। ঝুঁকির ভিত্তিতে পুরো দেশকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এক নম্বরঃ যেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে, সেখানে বেসিক নিয়ম থাকবে, দুই নম্বরঃ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, সেখানে আলাদা ব্যবস্থা নিতে হবে, তিন নম্বরঃ সংক্রমনের হার বিপদজনক, যেখানে দুর্বল মানুষরা ঝুঁকিতে আছে তাদের রক্ষা করতে অন্যরকম পদক্ষেপ নিতে হবে। এ সময়ে তরুণদের মধ্যে সংক্রমনের হার অনেক বেশি, আর যারা ভাবছেন, তরুণদের জন্যে করোনা তত ঝুঁকিপূর্ন নয় তাদেরকে বলছি, অনেক তরুনই গুরুতর অসুস্থ হতে পারে। নেদারল্যান্ডসের ছয়টি শহর এখন দুই নম্বর ঝুঁকিতে আছে, আমস্টার্ডামের আমস্টার্লান্ড, রাইমন্ড ইন রটারডাম, হাগেল্যান্ড, উটরেক্ট্র, ক্যানেবারল্যান্ড ও হল্যান্ডসমিডে। হাজার চেষ্টার পরও যেহেতু ক্যাফেগুলো থেকে সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না তাই ঝুঁকি পূর্ণ শহরগুলোর ক্ষেত্রে কিছু আলাদা নিয়ম দেয়া হলো, রাত বারোটার পর কাউকে আর ক্যাফেতে ঢুকতে দেয়া হবে না, বারোটায় মিউজিক অফ করে দেয়া হবে আর একটার মধ্যে অবশ্যই সবাইকে বের হয়ে যেতে হবে। ভেতরে আর বাইরে যেখানেই হোক পঞ্চাশ জনের কোন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হলে আলাদাভাবে সব ব্যবস্থাপত্র খতিয়ে দেখতে হবে। আর পঞ্চাশজনের বেশি মানুষের কোন অনুষ্ঠান আপাতত এরেঞ্জ করা যাবে না। স্কুল, মৃত্যু যাত্রা, ডেমনস্ট্রেশান আর ধর্মীয় অনুষ্ঠান এই নিয়মের আওতায় পরবে না। রোববার মধ্যরাত থেকে এই নিয়মগুলো ওপরের ছয়টি শহরের জন্যে কার্যকর হবে আর পরিস্থিতি বাধ্য করলে অন্য শহরের জন্যেও প্রযোজ্য হতে পারে। এর বাইরেও যারা নিয়ম ভেঙে পার্টির আয়োজন করবে, একসাথে জমায়েত করবে সেসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ল্যাব গুলোতে প্রচন্ড ভীড় তাই টেষ্ট করতে ও রেজাল্ট দিতে দেরী হচ্ছে, নতুন মেশিন কেনা হয়েছে, নতুন ল্যাব বানানো হচ্ছে, দ্রুত পরীক্ষা করার নতুন পদ্ধতি পাওয়া গেছে কিন্তু সেসব কার্যকর হতে আরও কয়েক সপ্তাহ লেগে যাবে। এসব নিয়ে যত অসন্তোষই থাকুক স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে তা নিয়ে দুর্ব্যবহার করা যাবে না। বারো বছরের নীচে বাচ্চাদের দ্বারা সংক্রমনের ঝুঁকি কম তাই তাদের পরীক্ষা করানোর দরকার নেই। তারা সর্দি কাশি নিয়েও স্কুলে যেতে পারবে আর সাত বছরের নীচের বাচ্চারা স্কুল আর ডে কেয়ার সবকিছুতেই যেতে পারবে। আবারও বলছি, নিয়মনীতি দিয়ে সেকেন্ড ওয়েভ অতিক্রম করা যাবে না, আমাদের সদিচ্ছা আর আমাদের চেষ্টাই এই তরঙ্গ পার করবে। মিনিস্টার প্রেসিডেন্ট রুতে বলেছেন, নেদারল্যান্ডসের মানুষরা দায়িত্বশীল তিনি জনেন এবং সেটা আবারও প্রমাণ করতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডি ইয়ঙ্গের ভাষায় পরিস্থিতি ভালো নয়, সংক্রমনের হার উদ্বেগজনক, আমাদের সবাইকে মিলে এটি প্রতিরোধ করতে হবে। প্রতি আড়াইশো জন মানুষের মধ্যে একজন বা তার বেশি সংক্রমিত যাদের সাথে আমাদের পথে ঘাটে দেখা হয়ে যেতে পারে আর তাই নিয়ম নীতি বড় কথা নয়, নিজেদের আচার আচরণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কাজের কারণে দেশের বাইরে যেতে হলে, বিদেশের ওয়েবসাইটগুলো চেক করে খুব সর্তকতার সাথে পরিকল্পনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

No comments:

Post a Comment