Saturday, 11 June 2011

আকাশ থেকে ফেলছে ছায়া মেঘের ভেসে যাওয়া

একাগ্র চিত্তে তিতলি ডুবে গেলো নিজের মধ্যে। লাষ্ট সেমিষ্টারে নিজের রেজাল্ট দেখে নিজেই অবাক হয়ে গেলো। রেজাল্ট ভালো হওয়াতে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ অনেক বেড়ে গেলো। মন্দ লাগে না পড়াশোনা করতে বরং বেশ ভালো সময় কেটে যায় তার পড়ার মধ্যে ডুবে থেকে। মাঝে মাঝে এক মনে ইজেলে তুলি ঘষতে থাকে। নানা রঙ এক সাথে মিলিয়ে নিজে একটা আলাদা রঙ তৈরি করে। কল্পনা তার সীমাহীন বিস্তৃত। একদিন ভাবল আকাশটাকে লেমন ইয়েলো করে দিলে কেমন হয়? আকাশকে সবসময় আকাশি রঙের হতে হবে কেন? লেমন ইয়েলো আকাশ একে তার নীচে পিঠ ভর্তি খোলা চুলের ম্যাজেন্টা শাড়ি পড়া এক মেয়ে আঁকলো। বড় বড় চোখের কাজল পড়া সেই মেয়ে হাতে হালকা বেগুনী রঙের ছাতা ধরে রেখে ছাই রঙা বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে। নিজের সৃষ্টির প্রতি নিজেই অনেকক্ষণ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো। আর কি করবে? মোবাইল নিয়ে মুখে খই ফুটিয়ে যা মনে আসে তা বকার মতো এখন আর তার কেউ নেইকখন আকাশে মেঘ ভাসে, কখন রিমঝিম রিমঝিম ছন্দ তুলে বৃষ্টি উথলে কেঁদে পড়ে মাটির খরতাপ শুষে নিয়ে যায় তিতলি জানে না আজকাল আর সেসব। জানলেও এক মুহুর্তের জন্য তার উদাস হতেই মনের বলগা সে চেপে ধরে। না কারো কথা ভাববে না, দুর্বল হওয়া চলবে না তার আর। পিছনে আর না তাকাবে সে শুধু নিরন্তর তার আজ সামনে তাকানো।

বন্ধুদের সাথে প্রচুর হই হই করতে লাগলো। সিনেমা, পিজা, লাইব্রেরী, পিকনিক, আড্ডা সবকিছুতেই যায় আজকাল তিতলি। বরং একা হতেই তার ভয় লাগে। প্রথমে অনেকদিনের অনভ্যাসের আড়ষ্টতা থাকলেও একসময় তার এই হৈহুল্লোড় ভালোও লাগতে লাগল। মনে হতে লাগলো জীবনটা কোথাও আটকে গেছিল তার। তারচেয়ে এই বাঁধনহীনতাই ভালো। এক একবার হালকা লাগে নিজেকে। মুক্ত বিহংগ হয়ে আকাশে উড়ে যেতে ইচ্ছে করে। শিকল কেঁটে গেছে সে আনন্দে বিভোর হতে চায়। আত্মবিশ্বাস ফিরে আসছিল ধীরে ধীরে। নিজের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রন বাড়ছিল। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রন ফিরে পেয়ে তিতলির ভাল লাগছিল। কিন্তু ঠিক তার পরের মূহুর্তেই জীবনের সব চাইতে প্রিয় জিনিসটা হারিয়ে ফেলার কষ্টে সে কাতর হয়ে পড়ে। সব কিছু তার শূন্য আর ফাঁকা মনে হতে লাগে। রাতে বিছানায় এপাশ ওপাশ করে, ঘুম আসে না তার চোখে, তখন কেঁদে কেঁদে মনের ভারটা একটু কমিয়ে নেয়। সবকিছু কি আসলেই কখনো হারায়? তাহলে কেন রোজ তিতলি ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে মোবাইলটা চেক করে? জানে কোন ম্যাসেজ কেউ পাঠাবে না তারপরেও অভ্যাসবশত প্রথমেই মোবাইল চেক দিয়ে তার দিন শুরু হয়। শুধু অভ্যাসে করে সেটাও সত্যি নয়। মনে একটা ক্ষীণ আশা উঁকি দিয়ে যায় রোজ ভোরে, হয়তো তার সায়ান তার কাছে ফিরে এসেছে। কিন্তু এসএমএস না দেখে আগের মতো বুক ভাঙ্গা কষ্ট তার আজকাল আর হয় না। রুটিনে ডুবিয়ে দেয় সে নিজেকে। কখনো চোখটা নরম হয়ে এলে হাতের উলটো পিঠে চোখটা মুছে নেয় সে। ভালোবাসা ভুলবে কেনো সে? ভালবাসা ভোলা বা মোছা কোনটাই যায় না। ভুলে গেছি ভাব করা যায়।

মন খারাপ করা বিষন্ন সন্ধ্যায় একা একা ছাঁদে সে হাঁটে। টবে লাগানো দোলনচাঁপা আর বেলির গন্ধে মন আকুল হতে থাকে প্রিয়জনের জন্যে। সায়ানের স্পর্শ পাওয়ার জন্যে কিংবা গলা শোনার জন্য হু হু কাঁদতে কাঁদতে তিতলি ভাবে, কি করে মানুষ বদলে যায়? এই আকাশ, এই মেঘ, এই ফুল, এই বৃষ্টি সবতো একই আছে। এক সময় সায়ানের প্রতিজ্ঞা ছিল, যত যাই হোক, তিতলির গলা চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে অন্তত একবার তাকে শুনতেই হবে। সায়ান তার গলা না শুনে চব্বিশ ঘন্টা পার হতে দিবে না। অভিমান হলে তিতলি যদি তার ম্যাসেঞ্জার কিংবা মোবাইল বন্ধ করে রাখতো তাহলে সায়ান বার বার বাসার ল্যান্ড লাইনে ফোন করতে থাকতো। বাসার সবাই বিরক্ত হতো কে বার বার ফোন করে কিন্তু কথা বলে না। তিতলিকে তখন বাধ্য হয়েই সায়ানের কাছে ফিরতে হতো। কতো সময় হয়তো একঘন্টা কথা বলে ফোন ছেড়েছে তিতলি আবার আধ ঘন্টা পরেই সায়ানের ফোন। মিস করছে থাকতে পারছে না ওর গলা না শুনে। দিনে দশবার ওর গলা শুনতে হতো। এখন কতো চব্বিশ ঘন্টা কেটে যায় সায়ান তার তিতলির সাথে কথা বলে না। কি করে পারে তার গলা না শুনে থাকতে? ক'দিন দেখা নাহলে পাগল হয়ে যেতো দুজনেই। একবার তিতলি ধুম জ্বরে পড়ল। মাথা তুলতে পারে না আর বাইরে যাবে কী। একদিন সন্ধ্যায় বাবার সাথে ডাক্তার দেখিয়ে ফিরে বাড়িতে ঢুকতে যেই যাবে তার অবচেতন মনটা আচমকা কেমন যেনো দুলে উঠল। মাথা তুলে সামনে তাকাতেই দেখতে পেল ল্যাম্পপোষ্টের নীচে কিসের যেন ছায়া নড়ছে। তিতলির মন জেনে গেল কিসের সেই ছায়া। তার হৃদয়ে হাজার তারের বীনার ঝংকার উঠলো। সেই খুশিতে না ওষুধে তার সে রাতেই জ্বর নেমে গেলে, বাড়ির সবার বাঁধা অতিক্রম করে পরদিনই সে জরুরী ক্লাশের বাহানা করে পড়িমড়ি ইউনিতে ছুটে ছিলো। কতোটুকু বদলায় এক জীবনে একজন? তবুও মনকে প্রবোধ দেয় কাটবে যদি দিন এমন করে তবে কাটুক না।

একদিন রাতে সে অবাক হয়ে দেখল ম্যাসেঞ্জারে সায়ান সবুজ নক্ষত্র হয়ে জ্বলে আছে। নিজের চোখকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না। চুপচাপ অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলো প্রিয় সে নামটির দিকে। তারপর কোন ক্ষুদ্রতাকে মনে স্থান না দিয়ে সায়ানকে নক করলো সে নিজে থেকেই। কিরে কেমন আছিস? শুরু হলো টুকটুক করে কথা। বেশির ভাগই সায়ানের খোঁজ নিল। কতোদিন বাদে জানতে পারছে কেমন ছিল সায়ান আর কেমন আছে এখন। কে বলবে এর মাঝে পাঁচ মাস কেটে গেছে। মনে হচ্ছিল কোনদিন কোন বিচ্ছেদ বুঝি দুজনের মাঝে ছিল না। সায়ানের দুঃখে তার চোখে পানি এসে গেলো। ফেসবুকে দেখা সেই স্বর্নকেশির সাথে সায়ানের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। স্বর্নকেশি নিজেই সায়ানকে ছেড়ে চলে গেছে। সে সায়ানের মধ্যে নাকি তার স্বপ্নপুরুষকে খুঁজে পায়নি। বলেছে, ইট ইজ গোয়িং বাট নট থ্রিলিং ইনাফ টু লিভ উইথ ইউ। স্বর্নকেশির মতে সায়ান অনেক বেশি গৃহি, ঠিক সেরকম রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষ নয় যাকে সে খুঁজছে। ও আরো বেশি ম্যানলি, এম্ববিশ্যাস আরো দুর্ধষ কাউকে চায়। প্রত্যাখানের কষ্টে সায়ান এখন বেশ মন মরা। মায়া লাগতে লাগলো তিতলির, বুকটা মুচরে উঠলো তার প্রিয় বন্ধুর কষ্টে। সে সায়ানকে চিয়ারআপ করতে চাইলো নানাভাবে। একজন প্রকৃত বন্ধুর মতো হাত ধরে রইল তার। ভালোবাসে সেতো মিথ্যে নয়।

আজকাল প্রায়ই ওদের দুজনের কথা হয়। টুকটুক দুই জানালায় দুজনের ভাবের আদান প্রদান চলতে থাকে। অস্বীকার করবে না তিতলি মনের কোথাও একটা জ্বলুনি আছে তার। প্রত্যাখানের কষ্ট, অবজ্ঞার জ্বালা তাকে পোড়ায়। তার ভালবাসাকে পায়ে মাড়িয়ে চলে গেছিল এই পুরুষ, তার সেই একা থাকার কষ্ট, সেই নিংসংগতা, সেকি ভোলার? কিন্তু তিতলি নিজের কষ্টের ওপর ছাই চাপা দিয়ে রাখলো। কিছুতেই সায়ানের কাছে নিজেকে ছোট করবে না সে। বন্ধুর দায়িত্ব পালনে সে ব্যর্থ হবে না, দুর্দিনেইতো লোকের বন্ধুর দরকার সবচেয়ে বেশি। আজকাল সায়ান আবার আগের মতো তিতলিকে মেইল করতে লাগলো। পরীক্ষার রুটিন, রেজাল্ট, কি রান্না করলো নতুন সব জানাতে লাগলো। মেইল বক্সে সায়ানের নাম দেখলেই চোখ নরম হয়ে যায়। কতো দিন রাত ঘন্টা প্রহর কেটেছে তার এই মেইল বক্সের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে। দুটো লাইনের জন্যে কতো তড়পেছে তার ভিতরটুকু। কতোদিন জ্বরতপ্ত মাথায় পিসি খুলে ঠায় বসে ছিল সে চোখের পলক না ফেলে, আসবে চিঠি আসবে সেই আশায়। অসহ্য যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে পুরনো মেইলগুলো নেড়েচেড়ে দেখে, বুক ভরা কষ্ট নিয়ে আবার বিছানায় শুয়ে পড়েছে সে। জ্বরের ঘোরেও তারই নাম জপেছে। সেসব মুহূর্ত তার কিভাবে কেটেছে, জানে কি সায়ান নাকি চাইবে কোনদিন জানতে? সেইতো এলো চিঠি কিন্তু বড্ড দেরী হলো তার কাছে পৌঁছতে।

সেদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে অবাক তিতলি। সারাদিন যেনো তিতলির ভালো যায় সেই উইশ রেখে এসএমএস করেছে সায়ান তাকে। কতোদিন পর!! চোখ পানিতে এভাবে ভরে গেলো ম্যাসেজটাই ঠিক করে পড়তে পারছিল না সে, ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল বার বার সবকিছু। আজকাল ম্যাসেঞ্জারে কথা হলেও সায়ান অন্যরকম করে কথা বলে। ফোনেও আবেগে ভরা থাকে সায়ানের গলা। কিন্তু আজ যখন তিতলি সায়ান নামক ঘাতক ব্যধির আক্রমন থেকে প্রায় সেরে উঠেছে তখন তার মনের দরজায় আবার কেনো এই কড়া নাড়া? যে যন্ত্রনার মধ্যে দিয়ে একবার গেছে সে, কোন কিছুর বিনিময়েই আর একবার সে কষ্ট পেতে চায় না। তিতলি এখন কি করবে?

তানবীরা
১২.০৬.২০১১

Friday, 10 June 2011

জীবন থেকে নেয়া ------ (ফালতু)

বহুদিন কিছু লেখার সময়, শক্তি, ইচ্ছে, বিষয় কিছুই পাচ্ছি না। আজকে কোন এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু অন্য ঘটনা মনে পড়ে গেল, ভাবলাম তাই ব্লগাই। হল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে কোন ডাইরেক্ট ফ্লাইট নেই। দূরত্বও মন্দ না। আগের মতো এক টিকেটে দুই সীটের ব্যাপারও নাই। তাই পা ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে দশ বারো ঘন্টা বসে দেশে যেতে যেতে দেখা যায় পায়ে পানি এসে পা ফুলে গেছে। কোন এক অজানা কারণে এশিয়ান হিউমিডিটি বা অন্য ব্যাপারে প্লেন থেকে নামার আগেই ফুলে যাই। একবার একটু বেশিই হলো। পা পুরা হাতির পা। কোন স্যান্ডেল পায়ে ঢুকে না। এমনকি আব্বুর জুতাও না। আম্মি অনেক চিন্তিত আমাকে নিয়ে। আমি যতই বলি কিছু না, ততোই তিনি গোস্বান। দেশের ডাক্তারের চেম্বার দেখলে আমার মৃত্যুভয় লাগতে থাকে। আমি এগুলো এড়াতে চাই। কিন্তু আমার মায়ের ধারনা আমি নিজের কোন যত্ন নেই না, বিদেশে পইড়া থাকি আর গাবাই। তাই তিনি আমাকে ধরে বেঁধে তার পোষা বারডেমের ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন। ডাক্তার বেশ চ্যাংড়া এবং স্মার্ট। প্রথমে আমাকে অনেক খাতির করলেন, তুমি তুমি করে বললেন। তারপর তার প্যাড বের করে বয়স জিজ্ঞেস করলেন, আমি বললাম। তিনি গরুর চোখ সরু করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ তারপর গলা কাশি দিয়ে আপনি আপনি উন্নিত হইলেন।

তিনি এরপর তার মনের সাধ মিটিয়ে আমাকে এই টেষ্ট সেই টেষ্ট সব করতে দিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম কেইসটা কি? তিনি বললেন, আমার কিডনী কাজ করছে না ঠিকমতো আর ব্লাড সার্কুলেশন সমস্যা তাই পা ফুলে আছে এমন। এরপর দিন ভোরে কমফোর্ট নিয়ে গেল ভাইয়া টেষ্ট করাতে। আলট্রাসোনো করাতে হবে। সে কারণে মা ভোরে ঘুম থেকে টেনে তুলছে। আমি আবার লেট টু বেড এন্ড লেট টু রাইজ থিওরীতে বিশ্বাসী। আর ছুটিতে ভোরে ওঠা!!!! যাহোক দেড় লিটার বিশুদ্ধ পানি খেতে হল, আলট্রাসোনোর জন্যে। কমফোর্টে বসে আছি আর মনে মনে সিরিয়ালের ক্ষ্যাতা পুরছি কিন্তু আমার নাম্বার আর আসে না। ডায়পার পড়ি নাই। কোনসময় কোন দুর্ঘটনা ঘটে সেই টেনশন। আমি খালি মোচরাই। ভাইয়া জানে, আমি রাস্তার খাবারের দারুন ভক্ত। সে আমার মন ডাইভার্ট করার জন্যে খাবারের লোভ দিতে লাগলো। পাশেই জিঞ্জিরা হোটেল। সেইরকম সব ঝোল তেল মাখামাখা ভাজি, ডাল, পুরী পাওয়া যায়। এখানের কাজ শেষ হওয়া মাত্র সেখানে আমাকে নিয়ে ঝাপিয়ে পড়বে সেই আশ্বাস দিতে লাগলো। গোঁদের ওপর বিঁষ ফোড়া এক নতুন মোচ গজানো ছাগল সামনে প্রথম আলো নিয়ে পি।এইচ।ডির ভাব দেখাইতে লাগলো। আবার মোবাইল নিয়ে আমাদের পাশ দিয়ে বারবার হাটে আর কথা কয়, মোবাইল টিপে ফুটানী ঝাড়ে, দুই পয়সার মোবাইল কি খাইবো না মাথায় দিব তাই বুঝতেছে না। আমি সকালে আউলা ঝাউলা অবস্থায় পোলার এই দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা সহ্য করতে পারছিলাম না। ভাইয়ারে বললাম, সমস্যা কি? চড় দেই? ভাইয়া হাসতে হাসতে বললো, দিতে পারলে দিয়া ফেল।

হেতার গালে চড় কষানোর অদমিত ইচ্ছা মনে পুষে রাখলাম। তারপর ফন্দী এটে গেলাম, সিরিয়াল ডাকেন যে, সেই ম্যাডাম আপার কাছে। বললাম, আপা বাসা থেকে সমানে ফোন আসতেছে, আমার গ্যাঁদা বাচ্চা কানতেছে। আমারে যদি একটু দয়া করে কাইন্ডলি আগে দিতেন। ম্যাডাম আপা, ভুরু কুঁচকে আমাকে জরিপ করে বললেন, আপনের বাচ্চা মানে কি? আপনের বিয়া হইছে? আমিও আর তখন মেজাজ সামলাতে পারি নাই। সকালের ঘুম শ্যাষ, বেলা হইতেছে জিঞ্জিরার নাস্তা শ্যাষ, ঐ পুলার ক্যাঁদরানি আর নিম্নচাপতো আছেই। বলছি, জ্বীনা বিয়া হয় নাই তবে বাচ্চা হইছে। বিয়ের আগে বাচ্চাতেতো কোন সমস্যা নাই। না আছে? ম্যাডাম আপা, রাগে চিরবির করে আমারে বললেন, জায়গায় যেয়ে বসে থাকেন, সিরিয়াল আসলে ডাকবো।

বহুদিন হীরার দেশে আছি কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোন হীরার গয়না নেই আমার। একটা সেই ধরনের ফোর সি এর হীরার গয়নার আমার খুব শখ। আমি খালি নেটে দেখি আর পড়াশুনা করি এর ওপর। যতোই পড়ি ততোই বাজেট যায় বেড়ে, এই দুমূল্যের বাজারে। বাসার ওনি খালি মোচরান। পরে বললেন, কোন একটা বিশেষ উপলক্ষ্যে তিনি এই আবেদন বিবেচনা করবেন। গরীবের বাড়িতে উপলক্ষ্য সহসা আসে না। মেয়ে হওয়ার পর তিনি ভাবলেন, এবার কিছু বিবেচনা করা যায়। আমরা এন্টওয়ারপেন গেলাম ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার জন্যে। বিভিন্ন রকমের ছাঁটের পাথর গুতাগুতি করে ফাইন্যালি একটা ফাইন্যাল করলাম। তিনি বেজার মুখের ক্রেডিট কার্ড বের করে পয়সা দিলেন। দোকান মালিক জিউ ভদ্রলোক তখন সত্যি বিশ্বাস করলেন এই বাদামি চামড়ার লোকজন খালি হাতাহাতি করে রেখে চলে যাবে না। তিনি তার মুখের অমূল্য হাসি প্রদান করে আমার দিকে হাত বাড়ালেন, হ্যান্ডশেক করার জন্যে। আমি বুঝি নাই। আমি হাত দিলাম। তিনি ফ্লেমিস, ফ্রেঞ্চ আর ইংরেজি মিশিয়ে বললেন, কনগ্র্যাচুলেশনস ইন এডভান্স। বিয়ের ডেট কবে ঠিক করেছো? একা আংটি কিনতে আসছো যে? ফিয়াঁসেকে কেনো সাথে নিয়ে আসো নাই। খুব মানাবে এই আংটি তোমাকে। পাশের জন মুখ কালো করে দোকানের জানালা দিয়ে বাইরের আকাশ দেখছে। আমি খুঁকখুঁক কেশে বললাম, বহুদিন আগে এই বিল প্রদানকারীর সাথে আমার শুভ পরিনয় সুসম্পন্ন হইয়াছে, এখন কন্যা হইয়াছে। কন্যাকে ডেকেয়ারে রাখিয়া আমরা কেনা কাটায় বেরিয়েছি।

এইবার নন্দনে গেলাম। অনেক গরম দেশে। ঘুরাঘুরি শেষ দিয়ে যেয়ে লম্ফ দিয়ে আমরা পানিতে নামলাম। অনেক ভীড় পানিতে। দুইটা চ্যাংড়া দেখি আমাদের টার্গেট করে পানির মধ্যেই এদিক সেদিক ঘুরে। আমরা আছি আমাদের মতো। আমাদের কাছে পাত্তা না পেয়ে আমার মেয়ের সাথে পুটুর পুটুর গল্প করতেছে। সুইট বেবি, কি নাম তোমার? কি পড়ো? আমার মেয়ে আলহাদে বুঝতেছে না কি করবে। তারপর চ্যাংড়া জিনগায়, তোমার মা কোনটা? আমার মেয়ে আমার কাপড়ের রঙ, চুলের বাহারের বর্ননা দিয়ে দেখাইতেছে তার মা কোনটা এই দলের মধ্যে। আমি আনতে গেছি আমার মেয়েরে, তখন এক চ্যাংড়া থতোমতো খেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে, আপু আপনার বিয়ে হইছে? এইটা আপনার মেয়ে?

তানবীরা
১১.০৬.২০১১

Thursday, 9 June 2011

মন খারাপ


টিপ টিপ বৃষ্টিতে
শরীর ভালো নেই
যারে যা কেউ
রান্নাঘরে যা নারে
।।
ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যানিতে
মেজাজ ঠিক নেই
মাইর খেতে না চাইলে
সামনের থেকে সরে যা নারে।।

কে জানে কি জন্যে
মেজাজ আমার ঠিক নেই
যারে যা সবাই
ভেগে যা নারে।।
রান্নাবান্না ঘরকন্না
আর ভালো লাগে না
হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে
যেখানে কেউ খুঁজে পাবে না
কোথায় আছে বল সেই ঠিকানা
যারে যা কেউ খুঁজে দে নারে।।
কোন কাজ করতে ইচ্ছে না
করার দারুন আলস্যে
বৃষ্টির কাঁথা গায়ে মুড়ে
শুয়ে থাকার মধুর আবেশে
কোথায় কবে মিলবে সে
অবসর কে জানে
সে আশাতেই দিন গুনছিরে।।
তানবীরা
০৯.০৬.২০১১

Wednesday, 25 May 2011

আমাদের এই ভালবাসা

আমাদের এই ভালবাসা
ছয় লক্ষ আত্মঘাতী ঝগড়া
চারকোটি ভিজে চুমু ঠোঁটে
আবেশে হাতে হাত রাখা
অনুভবে দুজনে ছুঁয়ে থাকা
এলোমেলো চিঠি লেখা
খুচরো খাচরা ফোন করা
টুকরো টাকরা মেঘে ভেজা

আমাদের এই ভালোবাসা
কতো বলা না বলা কথা
অজানা সুখে ডুবে থাকা
কিছু চাওয়া কিছু না পাওয়া
কিছু পেয়ে তা হারিয়ে ফেলা
কিছু স্বপ্ন প্রজাপতির পাখা
কিছু আদর তুলোয় মাখা
চোখে তার নামের কাজল আঁকা

তানবীরা
২৪.০৫.২০১১

উৎসর্গঃ অদেখা কিন্তু অনেক চেনা অনুজা “জেবীন”কে। যে খুব ভালো পায়েস রাঁধে। প্রবল ভালোবাসা নিয়ে মাঝে মাঝেই সে আমার বিষন্ন নিঃসংগ সময়গুলোকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়।

Friday, 20 May 2011

ছুঁয়েছে এ গান আমার কান্নার সাত সুর

If you love something, set it free; if it comes backs it's yours, if it doesn't, it never was. রিচার্ড বাক’এর এই উক্তিটিকে মন্ত্র করে তিতলি সারাক্ষণ মনে মনে আউরাতে থাকে। নিজেকে শক্তি দিতে চেষ্টা করে। দশ বারের মধ্যে আট বার সে হেরে যায় নিজের কাছে আবার দু’বার জিতেও যায়। সে অপেক্ষা করে থাকবে সায়ানের ফিরে আসার। সায়ানতো তার নিজের অংশ, পথ ভুলে যায় না লোকে? সায়ান পথ হারিয়ে ফেলেছে, পথ খুঁজে ফিরে এসে তার সায়ান তাকে খুঁজবে তিতলি জানে। তিতলি তার সমস্ত দরজা, জানালা, ঘুলঘুলি খুলে দিয়ে সায়ানের ফেরার অপেক্ষায় রইলো। কতদিন করবে অপেক্ষা? দশ বছর? বিশ বছর? পুরো জন্ম কিংবা জন্মান্তর? কিন্তু তাকে যে অপেক্ষা করতেই হবে। কোন একদিন সায়ান যখন খুব ক্লান্ত হবে তিতলির কথা তার নিশ্চয়ই মনে পড়বে। তখন তিতলির দরজায় এসে যেনো দরজা বন্ধ না পায় তারজন্যে সব খুলে রাখবে সে। ক্লান্ত সায়ানের মুখ মুছিয়ে দিবে নিজের ওড়না দিয়ে, চুলে হাত বুলিয়ে দিবে। মগ ভর্তি গরম কফি নিয়ে দুজনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে জোস্ন্যা দেখবে আর সায়ানের কানের কাছে মুখ নিয়ে প্রিয় কবিতার প্রিয় লাইনগুলো গুন গুন করবে। হাত নেড়ে নেড়ে অনেক গল্প করবে সেদিন তিতলি সায়ানের সাথে, অর্থহীন সব গল্প, যার আসলে কোন মানেই নেই। সায়ানের ভাল না লাগলেও সেসব শুনতে হবে। ওর কোন চয়েস থাকবে না তখন তিতলির কাছে। এটাই হবে তার শাস্তি। চুপ কর, বক বক শুনে মাথা ব্যাথা করছে বললেও তিতলি থামবে না। কাতুকুতু দিয়ে আরো খোঁচাবে সে সায়ানকে। সে অপেক্ষা করে আর স্বপ্নের জাল বুনে যায়, সায়ানের ফিরে আসা বা না আসা হলো তার নিয়তি। আবার এটাও ভাবে তার কাছেই সায়ানের ফিরে আসাটা বড় কথা নয়। সায়ান যেখানেই থাকুক, যার কাছে থাকুক আনন্দে থাকুক আর ভালো থাকুক সেটা বড় কথা। সে শুধুতো সায়ানের সুখ চায়।

যার জন্যে তিতলি জগত জুড়ে এতো চুরি করেছে, সে যখন চোর বানিয়ে তার হাত ছেড়ে দিল, মানসিকভাবে তিতলি একদম একা হয়ে গেলো। তার দিনরাতের সব কাজের বাইরে বাকি সময়টা জুড়ে শুধু সায়ান ছিল। এখন নিজের মনে সে একলা থাকে, ফাঁকা অবসর। কোথাও আর সেই প্রিয় মুখ সেই হাসি নিয়ে উঁকি দেয় না। সেই মায়াভরা চোখ নিয়ে কেউ তাকানোর নেই। সেই হাত আর তার ঠোঁট ছুঁয়ে দিবে না। কেউ আর তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তার চুলের গন্ধ নিবে না ভাবলেই তার এক এক সময় কষ্টে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। কি করে লোকে সব ভুলে যেতে পারে? কিন্তু তিতলি কিছুতেই হেরে যাবে না, নিজের কাছে সে নিজে এই প্রতিজ্ঞা নিল। এই যুদ্ধে তাকে জয়ী হতেই হবে। যতোই অস্থির লাগুক, নিঃশ্বাস বন্ধ হোক, মন কেমন করে করুক, চোখের পানিতে গাল ভিজেতো ভিজুক সায়ানের কাছে আর নিজেকে সে ছোট করবে না। ভালবাসাতো বেঁধে রাখার জিনিস নয়। হাত ছেড়ে যে চলে গেছে ফিরে তাকেই আসতে হবে। পৃথিবীর কারো কাছেই সে দুর্বল হবে না, ভেঙ্গে পড়বে না। নিজের আগুনে সে নিজে জ্বলবে। এতো জ্বলবে যে চোখের পানিকে সে বাস্প করে আকাশে উড়িয়ে দিবে। যেটা মেঘ হয়ে উড়ে গিয়ে ঝরে পড়বে সায়ানের বুকে। শুধু সায়ান জানতে পারবে না এই উড়ো মেঘের নাম কি ছিল।

মুরগী কেঁটে ছেড়ে দিলে যেমন ছটফট করতে করতে একসময় নিথর হয়ে যায়। কাঁটা মুরগীর মতো ছটফট করে করে একদিন সেও নিথর হয়ে যাবে এটুকু তিতলি জেনে গেল। কষ্ট হলে লোকে কষ্ট পায়, কিন্তু মরে যায় না, এটাই নিদারুন সত্যি। যদিও মরে গেলেই হয়তো কষ্টের হাত থেকে বেঁচে যেতো। তারপরও মনে ক্ষীণ আশা খেলা করে তার, কখনও ক্লান্ত মুহূর্তে সায়ান যখন একা থাকে, আনমনে জানালা গলিয়ে তার দৃষ্টি বাইরে দেয়, হয়তো তখন তার মনের নীল আকাশেও ভেসে ওঠে তিতলির মুখ। তিতলির জীবনের কাছে চাওয়ার বেশি কিছু নেই। নিশ্চিন্তে নির্ভয়ে ধরা যায় শুধু এমন দুখানি হাত ছাড়া। আজ মনে হয় আনকন্ডিশনাল আসলে পৃথিবীতে কিছু নেই। আনমনে বকে যাওয়ার মতো বন্ধুও কেউ হয় না এ পৃথিবীতে। এগুলো সব আসলে কথার কথা। শুধু কবিতার জন্যে এগুলো বলা হয়। ইদানীং আনমনে যখন বকতে ইচ্ছে করে, সায়ানের হাত ধরে যখন উড়ে যেতে ইচ্ছে করে, সায়ানের ঘাড়ে নাক ঘষে দিতে ইচ্ছে করে, তিতলি সায়ানের নামের উইন্ডো খুলে সেগুলো টপটপ লিখে ফেলে। কিন্তু সে চিঠি কখনো সে সেন্ড বাটনে চাপ দিয়ে সায়ান পর্যন্ত পাঠায় না। সায়ান কোনদিন জানতেও পারবে না তিতলির এই খেলার কথা।

শেষের দিকে যখন কথা হত, সায়ান তিতলির দোষ ছাড়া আর কিছুই বলতো না। আপন মনেই হাসে তিতলি। তার চারপাশের সবাই তাকে এতদিন ধরে সহ্য করছে,ছোটখাট সমস্যা হলেও সেটা কখনো তার সাথে লোকে থাকতে পারবে না, সে পর্যায়ের নয়। কিন্তু যে তার একান্ত আপন, তার সবচেয়ে ভালোবাসার লোক পৃথিবীতে তার স্বভাব মেনে নিতে পারলো না। হাত ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। কোন এক দুর্বল মুহূর্তে তিতলি সায়ানকে ম্যাসেঞ্জারে গ্রীন দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।
জিজ্ঞেস করে ফেললো, আমাকে কোন দোষে তুই ছেড়ে গেলি যদি একবার বলতি
সায়ান তার স্বভাবসুলভ ইগো নিয়ে বললো, তোর কোন কিছুই আমার মনের মতো নারে। তুই কখনো ইনফ্যাক্ট আমার মনের মতো হতেও পারবি না।
কি লাভ? তাই ............ আসলে কি জানিস তুই কখনো আমার মনের মতো ছিলিও না।
তুই ছিলি আমার মনের এক সময়ের ঘোর লাগা বিভ্রান্তি মাত্র।

আপন মনে হাসে তিতলি, তার মন মজেছে অন্য জায়গায় কিন্তু সে দূরে গেল তিতলির দোষ দেখিয়ে। কেন সায়ান তাকে বলতে পারলো না, তার অন্য কাউকে চাই এখন? এটুকু সৎ সাহস দেখালে সে তিতলির কাছে ছোট হত না। তিতলি কি টের পাচ্ছে না আসলে সায়ানের পৃথিবী কেনো দুলছে? সেদিনও দেখলো ফেসবুকে সায়ান অনেক ছবি আপলোড করেছে তার ডিপার্টমেন্ট এর আউটিং এর। এক ছবিতে মেরুন রঙের টপস পড়া এক স্বর্নকেশির খুব কাছে সায়ান দাঁড়ানো, দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসছে। সায়ানের এ হাসি যে তিতলির চিরচেনা। আগে এ হাসি শুধুমাত্র তার জন্যে হাসতো সায়ান। তিতলি অনুভব করতে পারে, অনেক দূর থেকে এতো কঠিন হওয়া আসলে সোজা। দুজন মানুষ যখন কাছে থাকে, একজনের দৃষ্টি অন্যজনকে ছুঁয়ে যায়, একজনের স্পর্শ আর অন্যজনের হৃদয় ভিজিয়ে দেয়। ঠোঁট ঠোঁটকে আবেশে চেপে ধরে তখন এতো কঠিন হওয়া যায় না একজনের প্রতি। তিতলিকে চাবুক দিয়ে কেউ আঘাত করলেও হয়তো সে এতোটা কষ্ট পেতো না। চোখের জল মুছে সে প্রতিজ্ঞা করলো, কারো মনের মতো হওয়ার চেষ্টা সে করবে না আর, যথেষ্ঠ করেছে। বরং যে তাকে পেতে চাইবে, তাকেই তিতলির মনের মতো হতে হবে। দুঃখকে সে আস্তে আস্তে শক্তিতে বদলে দিবে। একদিন অবাক হয়ে তিতলি লক্ষ্য করলো, সায়ানের ম্যাসেঞ্জার - ফেসবুক যেসব জায়গায় তিতলির অবাধ বিচরণ ছিল, সায়ান তাকে বিতারিত করে দিয়েছে অবলীলায়। সে হতবাক হয়ে গেলো সায়ানের এই ক্ষুদ্রতায়, সে সায়ানের জান হয়তো নয় আর কিন্তু বন্ধুও কি নয়? আর দশটা সাধারণ বন্ধুর মতো সে কি সায়ান কেমন আছে এটুকু জানতে পারে না? সে অধিকারও কেড়ে নিতে হলো তার কাছ থেকে? কিন্তু পরে সে সায়ানকে মনে মনে ধন্যবাদ দিতে লাগলো এজন্যে। অতীতকে মুছে সামনে যাওয়া এখন তিতলির জন্যেও সহজ হবে। যদিও জানে তিতলি তার চুলের গন্ধ পেলে, তার চোখের আয়নায় নিজের মুখ দেখতে পেলে, তার আঙ্গুল সায়ানের ঠোঁট ছুঁয়ে দিলে এতো তাড়াতাড়ি সায়ান তাকে মুছতে পারতো না সবকিছু থেকে। তবুও তিতলি নিজেকে টেনে তুললো হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির ভঙ্গুর স্তুপ থেকে। ফিরে দাড়ালো কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে আজ থেকে গানের সাধনায়, ছবি আঁকায় আর পড়াশোনায় নিজেকে আকন্ঠ ডুবিয়ে দিবে সে। হাঁটবে একা, বাঁচবে একা, হারিয়ে যাবে না কিছুতেই।

তানবীরা
২০.০৫.২০১১

উৎসর্গঃ আমাদের সবার আদরের “ছোটমা’কে”
লুকিয়ে ভালবাসবো তারে জানতে দিব না

Wednesday, 18 May 2011

ছোটমা’র জন্যে একরাশ ভালোবাসা

দেশে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলাম তখন এক আড্ডায় বান্ধবীরা একটু অনুযোগ করলো আমার কাছে, এতো গল্প লিখি কিন্তু স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি লাইফের কোন গল্প মানে বান্ধবীদের নিয়ে গল্প কেনো লিখিনি এখনো। কি দুর্দান্ত দিন ছিলো আমাদের। সবসময় পড়াশোনায় ভালো কিন্তু দুষ্টমীতে ওস্তাদ হিসেবে আমাদের বান্ধবীগ্রুপের নাম ছিল সব ইন্সটিটিউটে। আমিও ভাবলাম তাইতো কেনো লেখা হয়নি সেগুলো এখনো? আমাদেরকে রীতিমতো ভয় খেতো অন্য মেয়েরা। এমন কায়দায় পঁচাতাম অন্যদেরকে কিন্তু এখনো হয়নি লেখা সেই গল্পগুলো এটাই সত্য। আজ কদিন ধরে ভাবছি প্রিয় মানুষরা যারা আমাকে শুধু আমি বলেই ভালোবাসে, আমার কাছে কোন প্রত্যাশা না রেখে তাদের নিয়েও কোনদিন কিছু লিখিনি এমনকি আমার কোন লেখা কোনদিন তাদেরকে উৎসর্গও করিনি। অক্সিজেন সারাবেলা ঘিরে রাখে বলে, তাকে টেকেন ফর গ্রান্টেডে রেখে দিয়েছি, খুলে দেখিনি ঝাঁপি তার। ছোটমাকে দিয়ে আজ শুরু করলাম। আমার সাথে তার বয়সের ব্যবধান এক যুগেরও বেশি। আমার অনেক পরে সে এই পৃথিবীর আলো বাতাস দেখেছে। কিন্তু ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধি, সহ্য, স্যাক্রিফাইস আর সবাইকে দেয়ার ক্ষমতায় সে অনেক অনেক অনেক আগেই আমাকে অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে।

এক হরতাল মুখর ভোরে তার জন্ম। পুরো নার্সিং হোমে খবর হয়েছিল ফুটফুটে এতো সুন্দর একটা বাচ্চা মেয়ে জন্মেছে। আমাদের কোলে আর কেউ দেয় না। অন্য রোগীদের আত্মীয় স্বজনের কোলে কোলে সে ঘুরছে। আমি আর ভাইয়া নিরুপায় এক কোনায় দাঁড়িয়ে। তখন আব্বু নার্সকে অনুরোধ করলেন আমাদেরকে যেনো দেয় দেখতে। নার্স এসে বিশাল হাসি দিয়ে ভাইয়ার কোলে তুলে দিলেন। বললেন, চারবোনের এক ভাই তুমি, তোমার বিশাল দায়িত্ব। এতো সুন্দর বোন সহসা হয় না কারো, দেখে রেখো। ভাইয়া নার্সের কথার মর্যাদা রেখেছেন। আমাদের সবাইকে ভাইয়া ভালোবাসেন কিন্তু ভাইয়ার নিঃশ্বাসের এক পাশে লেখা আছে ছোটমার নাম। আর এ নাম আমি নির্দ্বিধায় বলবো, শুধুমাত্র সৌর্ন্দয দিয়ে ছোটমা পাননি। অনেক ত্যাগ দিয়ে পেয়েছেন, ওয়েল ডিজার্ভাড। কিন্তু ছোটমার আগমনে আমি মোটেও হ্যাপি ছিলাম না তখন। আগে আমি আর ভাইয়া, দুই ভাইবোন, দাদু আর বাবা মা, এই ছিল আমাদের সংসার। তখনো ঢাকার জমি এতো দামি ছিল না। আমাদের বাড়ির ঘাড়ে লাগিয়ে লাগিয়ে অন্যেরা বাড়ি তুলেননি। চার বেডরুমের সেই বাড়িতে আমরা অনেক আনন্দে ছিলাম। কিন্তু লিটিস পিটিস ভাইবোন আসাতে, রুম দখল হতে লাগল, সাথে টিভি, সাথে মা। আগে মধ্যবিত্ত বাড়িতে সাধারণত একটা টিভি থাকতো। মা আমাকে আর আগের মতো সময় দিতেন না, দিতে লাগলেন ওদের। সেই রাগে আমি ছোট দুটোকে ছুঁতেও চাইতাম না। এখনো আমি বলি, তোকে আমি কোলে নিতাম না জানিস, ছোটমা হাসতে হাসতে আমার গায়ে গড়িয়ে পরে আর বলে এখনতো নাও।

আমি আর ছোটমা কন্সট্যান্ট ঝগড়া করতাম। মা বলতেন এটা কি করে সম্ভব? এতো গ্যাপের দুজনের মধ্যে এতো ঝগড়া। আবার আমিই দুবেলা মুখে তুলে খাইয়ে দিতাম। বিকেলে সাজিয়ে ঘুরতে পাঠাতাম। বেড়াতে গেলে সাজিয়ে নিয়ে যেতাম সাথে করে। তার চুল কেঁটে আমি পার্লার পার্লার প্র্যাক্টিস করতাম। তিলের খাজা ছিল তখন তার প্রিয় খাদ্য। টিভিতে নাটকের সিরিয়ালের সবাই ছিল তার আত্মীয়। বহুব্রীহি নাটকের মিলি ছিল, মিলি আন্টি, সোবহান সাহেব দাদা। তিনি তার কমন সেন্স খাটিয়ে পোষাক আর বয়স দেখে তাদের সাথে তার সম্পর্ক ঠিক করে নিতেন। যেমন চাঁদনী ফিল্মের ঋষি কাপুর ছিলেন তার রোহিত আঙ্কেল আর শ্রীদেবী ছিলেন চাঁদনী আন্টি। আমাকে ছাড়া আর সবার সাথে তার ভাব ছিল। আব্বু বাড়ি এলে আমার নামে নালিশ দিতো। আব্বু হাসতো আর বলতো, তোর সাথে ঝগড়া করে, দাড়া ওকে বিয়ে দিয়ে বিদেশ পাঠিয়ে দিবো। তখন ওনিও নেচে নেচে আমাকে বলতেন, বিদেশে পাঠাবো বিয়ে দিয়ে, এই হবে আমার সাথে ঝগড়া করার তোমার উচিৎ শাস্তি। সুখের দিন ঝগড়াঝাটি আর মারামারিতে অনেক দ্রুত ফুরিয়ে গেলো। তখন বুঝিনি যে সেগুলো সুখের দিন ছিল। উচিৎ শাস্তি পেয়ে আমি আজ অনেক দূরে। আমার বিয়েতে সবাই এতো উত্তেজিত ছিল যে আমি, আব্বু আর ছোটমা ছাড়া কেউ আমার বিদায় বেলায় কাঁদেনি। কিন্তু সেই থেকে আমার প্রত্যেক বিদায়ে ছোটমা অশ্রুসজল হয়েছে। আমি প্লেনে ওঠার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত যে আমার গায়ের ঘ্রানের জন্যে আকঁড়ে থাকে সে ছোটমা।

এক সময়ের সবার আলহাদের ছোটমা কখন যে সবার আশ্রয় হয়ে গেলো তা আমরা সজ্ঞানে টেরই পাইনি। আব্বুর হার্ট এ্যাটার্ক হলো, বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার আলোচনা থাক এখানে। তিনবার ঢাকার নামী হাসপাতালে ওপেন হার্ট করে শেষ পর্যন্ত ভারতের দ্বারস্থ হতেই হলো। তিনবার এই অপারেশনের মাঝের যে সময়টা প্রায় দেড় বছর, আব্বু রাতে ঘুমাতে পারে না। সারা রাত ব্যথায় কাতরায়। আমি মেয়ে নিয়ে জেরবার, ঘুম কাতুরে, জাগতে পারি না। ছোটমা কিচ্ছু করতে পারে না কিন্তু আব্বু কাতরালে সে কি করে ঘুমায়? সারারাত আব্বু সোফার পাশে বসে থাকতো সে আব্বুকে ধরে চুপ করে, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। যখনও সে শুতে আসতো, তখন হয়তো মেঘ জেগে গেলো ঘুম থেকে। এসব মিলিয়ে তার রেজাল্টকে কম্প্রোমাইজ করতে সে বাধ্য হল। ঢাকা ভার্সিটিতে তার মনমতো সাবজেক্ট সে পেলো না। অথচ তার মেধার কোন কমতি ছিল না আমরা সবাই জানি। তার শিক্ষরাও অবাক হলেন কি করে সে জিপিএ ফাইভ পেলো না। আমরা জানি কি করে পেলো না। কিন্তু আমরা কি করবো? আমাদের সবার তখন চাকরী আছে, সংসার আছে শুধু ছোটমা ছাড়া তাই সব স্যাক্রিফাইস তাকেই করতে হবে যে। তাই সে সাধের ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ার আশা বাদ দিয়ে বিদেশী ইউনিতে ভর্তি হলো।

মেঘকে কেউ জিজ্ঞেস যদি করে, কে তোমার মা? সে চোখ বন্ধ করে জবাব দেয় ছোটমা। প্রথমে ভাবা হয়েছিল ছোটমার পরে বাড়িতে মেঘ প্রথম। তাই বুঝি দুজনের এতো টান। কিন্তু না, আমাদের তিন বোনের তিন বাচ্চারই মা হলো ছোটমা। আর এখনতো ভাইয়ের মেয়েটা স্কুল থেকে এসে প্রজাপতির মতো ওর গায়ে ঝাপিয়ে পড়ে। সব বাচ্চাদের আবদার কে মিটাবে, ছোটমা। স্বর্নের এতো দাম। কিন্তু ছোটমা সব ছেলেমেয়েদেরকে সোনার লকেট, দুল, আংটি গিফট দেন তাদের জন্মদিনে। অথচ আমরা এখনও নিজেকে বাদ দিয়ে অন্যের কথা ভাবতে পারি না। কিন্তু ছোটমা নিজের টাকাটা পুরোটাই সন্তানদের দিয়ে দেন। এতো ব্যস্ততার মাঝেও টিউশিনি করে। চাকরীও করতো, অফিসে এসি নেই, এই কষ্টে চাকরী ছেড়ে দিয়েছে। যদিও বস এসি লাগিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তার বন্ধু বান্ধব প্রায় নেই বললেই চলে। বানিজ্য মেলায়, ক্রিকেট খেলায় যায় ভাইয়ার সাথে। কে।এফ।সি খায় বাচ্চাদের নিয়ে। মাদার্স ডেতে সিনেমা দেখতে যায় মাকে নিয়ে। মার্কেটে ঘুরে বোনকে নিয়ে। ফ্রেন্ডরা অনেক উলটা পালটা মজা করে যা ওর ভালো লাগে না তাই ফেসবুকের মধ্যেই ফ্রেন্ডশীপ সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে। মাঝে মাঝে হারমোনিয়ামের ধূলো ঝেড়ে কিন্নরী কন্ঠে যখন গায়,

চৈতালী চাঁদিনী রাতে, নব মালতীর কুঁড়ি

মুকুলও নয়ন মেলি সাথী জাগে আমারি সাথে

তখন গান বাজনা নিয়ে নাঁক সিটকানো লোকও তার পাশে বসতে বাধ্য হয়।

রাতে আমি, ছোটমা আর মেঘ একসাথে ঘুমাই বেশিরভাগ দিন। আসলে ঘুমাই না ছোটমা আর আমি রাত জেগে প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় কূটনামি, গালগল্প করি আর হি হি হি করি। অনেক সময় হিহিহি করতে করতে গড়াতে গড়াতে বিছানা থেকে নীচে পড়ে যাই। তখন ভয় লাগে নীচ তলার ভাড়াটে না কাল সকালে আব্বুকে কিংবা ভাইয়াকে নালিশ করে। রাত তিনটায় পঞ্চাশ কেজি ওজনের কি পড়ে তাদের মাথায়। আমাদের সে গালগল্পে পাশের বাসার নতুন ভাড়াটে ছেলে, যে নিজেকে আজকাল বেশ হিরো ভাবছে তার থেকে শুরু করে রোজ বাসায় যে মাছ দেয় সেও বিষয় হতে পারে। দেশে এলে জীহবা সামলাতে পারি না। রাস্তায় মাস্তায় যা দেখি খেয়ে ফেলি লোভে পড়ে। স্টমাক আপসেট কিংবা ফুড পয়জনিং টাইপ কিছু হবেই হবে দু একবার। ছোটমা হয়তো সারাদিন বোনের সাথে মার্কেট ঘুরে, বোনের বাচ্চাদের গোসল দিয়ে খাইয়ে, নিদারুন ক্লান্ত হয়ে একটু চোখ বুঝেছে। রাত তিনটায় আমি ওয়াক করা মাত্র সে, সেই গভীর রাত্রিতে সে ছুটবে বালতি আনতে, পানি আনতে। তাকে ঘুম থেকে ডাকতে হবে না, বলতে হবে না কিছু আর সময় লাগবে মাত্র এক সেকেন্ড। বমির তোড়ে যখন মনে হবে বেসিন ভেঙ্গে নিয়ে পড়ছি তখন এমন করে জড়িয়ে থাকবে যে পৃথিবী যাহয় হোক, সে আমাকে ছাড়বে না।

মা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর সবার আশ্রয় এখন সেই ছোটমা। আমাদেরকে দেখে, মেঘের কি সালোয়ার কামিজ লাগবে, আমি কি বই খুঁজতে বললাম, ব্যাঙ্কের হিসাব সব ছোটমা। মা বাবাকে দেখে, তাদের ঔষধ, প্রেশার, ডাক্তার সব ছোটমা। আমাদের ছেলে মেয়েদেরকে দেখে, তাদের স্কুলে থেকে আনতে হবে, রাখতে হবে, সিনেমায় নিতে হবে কে ছোটমা। ভাড়াটিয়ারা কমপ্লেইন করবে কার কাছে, তো তার কাছেইতো। কাজের লোকের ঝামেলা, তাও ছোটমা। সংসারে ছোট হয়ে জন্মেছেন তিনি, কিন্তু সব দায়িত্ব হাসিমুখে মেনে নিয়ে শুধু দুহাত উজাড় করে দিয়েই যাচ্ছেন। নিচ্ছেন না কিছুই।

ছোটমা আমরা অনেক স্বার্থপর বটে কিন্তু তোমায় নিঃস্বার্থ ভালোবাসি জেনে রেখো।

তানবীরা

১৯.০৫.২০১১

Friday, 29 April 2011

ট্যুর দ্যা বার্সেলোনা

দেশ থেকে ফিরে এসে অবধি কোথাও যাই নাই। চাকরী বাকরী নাই কই যাবো। পয়সা নাই মানে স্বপ্ন পরিকল্পনা কিছুই নাই। রোজ রাঁধি, খাই, ব্লগাই, ফেসবুকাই। আমার মতো পাড়াবেড়ানি মানুষের জন্যে চরম কষ্টের দিনরাত পার করা। কিছুদিন আগে একটা অনুষ্ঠানে পুরনো বন্ধু শ্যামার সাথে দেখা হলো। প্রবাসী থাকতে সপ্তাহে সপ্তাহে দেখা হতো, প্রবাসী ভেঙ্গে এখন হয়েছে সীমানা পেরিয়ে সাথে বন্ধু বান্ধবের মুখও বদলে গেছে। সপ্তাহে সপ্তাহে এখন অন্য মুখ। গান –বাজনা, খাওয়া – দাওয়া, আড্ডা সব প্রায় একই আছে শুধু মুখগুলো বদলে গেছে। শ্যামা এখন বার্সেলোনা আছে, রয়টার্সে চাকরী নিয়ে, খুব ধরলো একবার যেতে।

অনেকদিন ধরে বার্সেলোনা যাবো যাবো করেও যাওয়া হয়নি। নাচুনী বুড়িকে শ্যামা ঢোলের বাড়ি দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। আমিও রাত জাগা পাখি, শ্যামাও তাই। প্রায় অনেক রাতে ফেসবুকে কথা হলেই শ্যামা তাগাদা দিতো, বার্সেলোনা আসার পরিকল্পনার কি হলো। তারপর ইষ্টার ভ্যাকেশনের জন্য কপাল ঠুকে টিকেট কিনেই ফেললাম এবার। সস্তা মাগনার চার্ট এয়ারের কল্যানে এদিক ওদিক বেড়াতে যাই আমরা গরীবরা। মুড়ির টিন বাসের সিষ্টেম এগুলোর। আগে ইউনিভার্সিটি পড়ার সময় ভার্সিটি বাসে বাড়ি ফিরতাম, রিকশা ভাড়াটা বাঁচাতাম তেহারী আর কোক খাওয়ার জন্য। প্রায় সেই বাসের কথা মনে পড়ে এই প্লেনে উঠলে। সবচেয়ে ভালো লাগে আমার মেয়ের অবস্থা দেখতে। এসব প্লেনে টিভি নেই, খেলনা নেই এমনকি খাবারও নেই কিছু। মাঝে সাঝেই আমি আর আমার মেয়ে সস্তার টিকেটে ইউরোপের ভিতরে এদিক ওদিক যাই। খুব মন খারাপ করেন তিনি এই মুড়ির টিন প্লেনের চেহারা দেখলে।

Barcelona City from plane

Barcelona City from plane

প্লেন থেকে বার্সেলোনা

তবে এবার মেয়ের কপাল ভালো। মেয়ের বাবাও সাথে ছিলেন। মেয়েকে স্যান্ডউইচ কিনে দিলেন প্লেনে। দুইটাকার স্যান্ডউইচ পাঁচ টাকা দিয়ে আমি জীবনেও কিনবো না। মেয়ে বাংলাদেশে তার খালাদের নালিশও দিয়ে এসেছে, মা কিছুই দেয় না, সব ফালতু খরচা বলে। তবে মেয়ের বাবা সজ্জন ব্যাক্তি মেয়ের সাথে আমাকেও স্যান্ডউইচ কিনে দিয়ে কোকও কিনে দিলেন। এসব প্লেনে কেউ কিছু কিনে না প্রায়ই এয়ারহোষ্টেস কালা কতগুলো বেক্কল পেয়ে বিগলিত হয়ে গেলেন। একটু পর পর এসে মেয়ের বাবাকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো, আর কিছু চাই, চা – কফি? মেয়ের বার নিরুপায় গলায় আমাকে বার দুই জিজ্ঞেস করতেই আমি কঠিন লুক দিলাম, বুঝালাম আবার যদি আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছো।

এমনিতেই তিনি আমার কানের কাছে মাছির ভন ভন দিয়ে রেখেছেন। অনেকেই আমাকে “তিনার” গান শুনে বিগলিত হাসি দিয়ে বলেন, আপনি কতো লাকি, সবসময় বাড়িতে ওনার গান শুনেন। আমি এর উত্তর দেয়ার প্রয়োজন বোধ করি না। গান প্র্যাক্টিস শুনতে কার কেমন লাগে সেটা “কি যাতনা বিঁষে, বুঝিবে সে কিসে” এর স্কেলের ব্যাপার। যাক, মেয়ের বাবা তার প্রিয় নজরুল গীতির ট্র্যাকের সাথে গান প্র্যাক্টিস করতে করতে, মেয়ে নিন্টেন্ডোতে গেম খেলতে খেলতে আর আমি সুচিত্রা ভট্টাচার্যের “রুপকথা নয়” এর চিকুরের মধ্যে ডুবে দু ঘন্টায় এন্ডহোভেন থেকে বার্সেলোনা পৌঁছে গেলাম। ঠিক দশ বছর আগে স্পেনের “বেনিড্রোমে” বেড়াতে গিয়েছিলাম দশ দিনের জন্যে, সেটা সমুদ্র পাড়ে। সে ছুটিটাও জীবনের একটা স্মরনীয় আনন্দময় ছুটি ছিল এটাও ঠিক তাই হলো। আবার যাওয়ার ইচ্ছে আছে গ্রানাডা’র পাশে। হয়তো আবার দশ বছর বাদে হবে, কে জানে কিংবা হবে না। তবে স্পেনের সাথে আমার কিছু আছে, সবসময়ের ভালোবাসা আমাদের।

Casa Batllo @ Gaudis work

কাসা বাটলো @ আন্টনিও ঘাওডি’র মাষ্টার পিস

Casa Fuster @ Gaudis work

কাসা ফুস্টার @ আন্টনিও ঘাওডি’র মাষ্টার পিস

by tanbira, on Flickr">Sea Food

মেডেটেরিয়ান সী ফুড

Barcelona city from Tibidabo Hill

বার্সেলোনা সিটি @ টিবিডাবো পাহাড়চূড়ো থেকে

FC Barcelona Club

FC Barcelona Club

ফুটবল ফ্যানদের জন্যে “এফসি বার্সেলোনা ক্লাব”

Barcelona City

বার্সেলোনা সিটি @ এ জায়গাটা বোধহয় অনেকেরই বহুবার টিভিতে দেখা

Arena Barcelona @ before Bull fight Stadium

এখন বার্সেলোনা আরেনা @ আগে এখানে বুল ফাইট হতো

Barcelona City

Barcelona City

বার্সেলোনা সিটি @ জায়গাটা বোধহয় অনেকেরই বহুবার টিভিতে দেখাআমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে এ জায়গাটা

Barcelona Stadium

বার্সেলোনা স্টেডিয়াম @ সবার পরিচিত

Barri Gotic - Old Barcelona City

বাড়ি গোটিক @ পুরনো বার্সেলোনা সিটি সেন্টার

Barcelona City

প্লাসা লা কাটালুনিয়া @ ইন দি ইভিনিং

Barcelona city from Tibidabo Hill

বার্সেলোনা সিটি @ টিবিডাবো পাহাড়চূড়ো থেকে

by tanbira, on Flickr">Sea Food Paella

বিখ্যাত স্প্যানিশ সীফুড পায়েলা

Park Guell @ Gaudis work

পার্ক গুয়েল @ ঘাওডির ডিজাইন

The Famous Spanish Coffee

নানা স্বাদের কফির জন্যে স্পেন বিখ্যাত

La Barceloneta - Sea Beach

হাটি হাটি পা পা করে একদিন এই মেয়েটা বড় হয়ে যাবে। চলে যাবে আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে। শুধু সে জানে না, আমি ঠিক এভাবে ছায়া হয়ে তাকে অনুসরন করবো। বেঁচে থাকি আর মরে যাই, তার ছায়া হয়ে রইবো।

La Barceloneta - Sea Beach

কার ছায়া পড়েছে ...............জলেরও আয়নাতে

La Barceloneta - Sea Beach

লা বার্সেলোনেতা – সী বীচ

Barcelona City

বার্সেলোনা সিটি

La Barceloneta - Sea Beach

লা বার্সেলোনেতা – সী বীচ এর পাশের রাস্তাটি

by tanbira, on Flickr">The Famous Spanish Drink Sangria

স্প্যানিশ ড্রিঙ্ক সাংগরিয়া – কে না জানে তার নাম

Mercat de la Boqueria

কাঁচাবাজারে এধরনের শৈল্পিক ভাবনা আবারো প্রমান করে শিল্প ধনীদের সম্পত্তি নয়

Mercat de la Boqueria

নারকেলের দুধের সাথে যেকোন ধরনের ফলের রস পাবেন এখানে। ককটেল

Mediterranean Sea Fish

মেডেটেরিয়ান সী ফিশ

Mercat de la Boqueria

মের্কাট ডে লা বুকেরিয়া @ এ কাঁচাবাজার বার্সেলোনাতে রোজ বসে

La Sagrada Familia

সর্বশেষ কিন্তু সবচেয়ে দামি, লা সাগরাডা ফামিলিয়া। আন্টনিও ঘাওডির সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ। যার জন্যে তিনি পৃথিবী জুড়ে আদৃত – সমাদৃত। সত্তর বছর বয়সে ট্রাম চাপা পড়ে তিনি মারা গেলে, দুদিন পর তাকে এর মধ্যেই সমাহিত করা হয়।

সু সন্তান একটা হলেই যথেষ্ঠ। এক আন্টনিও ঘাওডি যা দিয়ে গেছেন স্পেনকে তাই দিয়েই তারা শত বছর ধরে করে খাচ্ছে আরো অনেক দিন করে খাবে। স্পেনের প্রধান আয় হয় পর্যটন তারপর কৃষিকাজ। পর্যটনকে কেন্দ্র করে স্প্যানিশরাতো বটেই সুদূর বাংলাদেশিরাও করে খাচ্ছে। বিখ্যাত ফ্লেমিংগো নাচের ড্রেস, জুতো সব নাকি আজকাল বাংলাদেশ থেকে তৈরী হয়ে স্পেনে যায় শুনতে পেলাম। অনেক ভারতীয় রেষ্টুরেন্ট হয়েছে যার মালিক বাংলাদেশী। ট্যাক্সি চালক, ওয়েটার, স্যুভেনীয়র শপের অনেক অনেক মালিক পাকিস্তানী, ভারতীয় ও বাংলাদেশী। আন্টনিও ঘাওডি শুধু স্পেনকে নয় আমাদেরকেও অনেক দিয়ে গেছেন বটে। নমস্য এমন মানুষরা যেনো কালে কালে জন্মান। যারা স্থপতি আন্টনিও ঘাওডি সম্পর্কে জানেন না তাদের জন্যে

http://www.google.com/search?q=antonio+gaudi&hl=en&prmd=ivnso&tbm=isch&tbo=u&source=univ&sa=X&ei=RCC7TaT6MIKeOvex8PkF&ved=0CDQQsAQ&biw=1366&bih=599

আসেন এবার গান শুনি

http://www.youtube.com/watch?v=ujTCZgPr5MA

http://www.youtube.com/watch?v=MXXRHpVed3M

ফটোগ্রাফীঃ পারিবারিক

তানবীরা
২৯
.০৪.২০১১