Tuesday, 17 December 2013

যখন যা মনে হয়


বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম এতো রাজনৈতিক স্ট্যাটাস কেন দেয়? তারা খুব সমাজ সচেতন সেজন্যে? তাই যদি হবে আশেপাশে এতো অপকর্ম ঘটছে কী করে? নাকি ছাত্র – পেশাগত জীবনের ব্যর্থতা, স্বপ্নভঙ্গের গ্লানি, প্রেমিকার উপেক্ষা, ক্ষয়ে চলা জীবনের সব ক্ষোভ এক পাত্রে রেখে ঢেলে দেয়ার এটাই সর্বত্তোম উপায়?  


দাড়ি থাকলেই রবীন্দ্রনাথ হওয়া যায় না। শফি সাহেব রবীন্দ্রনাথ হতে চেষ্টা করে ধরা খেলেন। রবি ঠাকুর মেয়েদের বহু কিছুর সাথে তুলনা করেছেন, সবাই ধন্য ধন্য করেছে আটকে গেছে বেচারা শফী। সরাসরি তেঁতুল না বলে ঘুরাইয়া ঘুরাইয়া কাব্য করে এর থেকে বহু বেশী কিছু হয়তো বলা যায়, কবিরা তাই করেন।

রবি ঠাকুরের জন্যে কিছু লিখতে পারি না। চাকরী বাকরী কিছু করেন নাই, সারাদিন বজরায় বসে লেখালেখি করে অর্ধেক বাংলা সাহিত্য তিনি একাই লিখে ফেলেছেন। ভাগ্যিস তখন ফেবু ছিল না। কী করতেন কে জানে। এক লক্ষ ফলোয়ার পেতেনতো বটেই আর মুহুর্মুহু স্ট্যাটাস আপডেট দিতেন। (ফীলিং রাইটার্স ব্লক)

সকালে যখন কেউ কাউকে “সুপ্রভাত” লিখে শুভেচ্ছা পাঠায়, এটার মানে শুধু শুভ সকাল নয়। “আমার ঘুম ভাঙ্গার পর আমি তোমাকে ভেবেছি” এটাও জানানো হয় তাকে। (ভাষান্তর)

“ফাঁকি” সে যতো ধুরন্ধরই কাউকে দিক, এক সময় না এক সময় সেটা ধরা পড়ে, এটাই ফাঁকির নিয়তি আর প্রকৃতি। যারা ঠকে তারা নিসন্দেহে বোকা কিন্তু যারা ঠকায় তারা মানসিকভাবে অসুস্থ। তাদের চিকিৎসা প্রয়োজন।

প্রেম করতে হলে এমন যুবকই শ্রেয় যে তোমার লিপিষ্টিক নষ্ট করবে, মাসকারা নয় (ভাষান্তর)

প্রেম আর সিগারেটের একই ধর্ম। দুজনেই ঠোঁটে সুখ দেয় কিন্তু বুকে যন্ত্রনা দেয়। (ভাষান্তর)

এ্যালকোহল কেন মহৎ? চোখে রঙ লাগিয়ে দু’গুন করে কিন্তু মনকে একলা করে (ভাষান্তর)

যা চাও তা পাওয়ার জন্যে যদি যুদ্ধ না করো, তা হারিয়ে ফেললে তার জন্যে কান্না করো না (ভাষান্তর)

একটি ভাল সম্পর্ক তোমাকে অনেক প্রেরণা দিতে পারে আর একটি খারাপ সম্পর্ক তোমাকে পরেরটির জন্যে অভিজ্ঞতা আর জ্ঞান দিতে পারে (ভাষান্তর)

শরীরের মধ্যে “ঠোঁট” দুটো হলো সবচেয়ে বেশী ছদ্মবেশী অঙ্গ। ছোট একটা হাসি দিয়ে পৃথিবীর অনেক কঠিন সত্যি লুকিয়ে রেখে বলতে পারে, আমিতো ভাল আছি (ভাষান্তর)

তানবীরা
১৭/১২/২০১৩



ক’দিন ধরেই আমার ময়না পাখি দাঁত ব্যথায় কোঁ কোঁ করে আর আদুরীপনা করে। মাকে জড়িয়ে ধরে দাঁত আর ব্যথা সংক্রান্ত নানা রকম প্রশ্ন করে।

দাঁত কেনো ব্যথা করে মামুই?

পোকা কোথা থেকে আসে?

কেন আসে?

সব প্রশ্নের উত্তরতো আমি জানি না।

আমি বললাম, তুমি খুব ভাল করে পড়াশোনা করো, তাহলে বড় হয়ে দাঁতের ডাক্তার হতে পারবে, দাঁত সম্বন্ধে সব জানতে পারবে।

সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, দাঁতের ডাক্তার হওয়ার জন্যে ভাল পড়াশোনা করতে হয় নাকি? এটা কি কোন ভাল কাজ?

আমি উৎসাহ দেয়ার জন্যে বলতে শুরু করলাম, হয় না মানে? ডাক্তার হতে হলে কতো পড়াশোনা করতে হয় জানো? শুধুমাত্র খুব ভালো ছাত্র ছাত্রীরা দাঁতের ডাক্তার হতে পারে।

সে মুখ কালো করে ঘাড় গুঁজে বললো, আমি দাঁতের ডাক্তার হতে চাই না মামুই। তাহলে সারাদিন আমাকে নাকে মাস্ক গুঁজে মানুষের নোংরা নোংরা দাঁত দেখতে হবে। এটা কিছুই আনন্দের কাজ না, ছিঃ কী বোরিং। 05/10/2014





 ফেব্রুয়ারী মাস মানে শুধু ভ্যালেন্টাইন কিংবা পহেলা ফাল্গুন নয়। বাংলাদেশীদের কাছে এর আরো একটি গুরুত্ব আছে সেটি হলো ভাষার মাস। আরো নির্ধারিত করে বললে, “মাতৃভাষার মাস”। এ বাস্তবতা যারা বাংলাদেশে বসবাস করে তাদের জন্যে।

প্রবাসী বাংলাদেশি বাচ্চাদের জন্যে কী এই হিসেব এতোটাই সরল? বোধ হয় না। অনেক আছে মা হয়তো কোন রকমে ইংরেজি কিংবা ফ্রেঞ্চ, জার্মান ভাষায় গুড মর্ণিং, থ্যাঙ্কু, প্লীজ বলতে পারে আর বাচ্চাও বাংলায় ঠিক একই রকম কুড়িয়ে বাড়িয়ে কেমন আছেন, ভালো, এই টুকুই বাংলা বলতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, ভাষার কারণে বাবা মায়ের সাথে বাচ্চাদের মনের ভাব আদান প্রদানের দূরত্ব এসে যায়।

মাতৃভাষার থেকে বেশি গুরুত্ব রাখে বোধ হয় “স্থানীয় ভাষা”। ইউরোপের বাস্তবতা অন্তত তাই বলে। এখানে মা-বাবা ও সন্তানের ভাষা হর হামেশাই আলাদা হতে পারে। চায়নীজ মায়ের সন্তানের প্রথম ভাষা হতে পারে ইটালীয়ান, টার্কিশ মায়ের সন্তানের প্রথম ভাষা হতে পারে জার্মান ইত্যাদি। অনেক শিশু তার মা-বাবার ভাষা শুদ্ধ উচ্চারনে বলতে পারে না, হোঁচট খায়। সেদিক থেকে বরং ইংলিশ স্পীকিং দেশের বাচ্চারা কিছুটা বাড়তি সুবিধা পায়।

বাংলাদেশের পিতা মাতা ও তাদের সন্তানরা এদিক থেকে সৌভাগ্যবান। ভাষার এতো ঝকমারি তাদের পোহাতে হয় না। জীবনের অঙ্ক অনেকটাই সরল সেখানে।

১০/০২/২০১৫ 



হাউ টু বিকাম আ পপুলার ফেসবুক সেলিব্রেটিঃ অর্ব্যথ ফর্মূলা

আধা লিটার মেয়েদের কাপড় চোপড় আর চাল চলনের সাথে, এক মুঠো ধর্ম আর তার সাথে এক চিমটি মুক্তিযুদ্ধের লবন মিশিয়ে দিবেন ঘুটা আর ঘুটা। সবসময় সতর্কভাবে খেয়াল রাখতে হবে, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সেন্টু কোনদিকে আছে। কোন পালে হাওয়া দিলে খেলবে ভাল। আফটার অল দিনের শেষেতো এগুলো খেলাধূলাই।

যেমনঃ কোন মেয়ে নির্যাতনের শিকার হলে, স্ট্যাটাসটি হবে এরকম, ভদ্র মেয়েদের ঐ সময় ঐ জায়গায় যাওয়ার কথা না। যদিও বা গেলো তার নিজেকে আপাদমস্তক লোহার বর্ম দ্বারা আবৃত করা দরকার ছিলো। এভাবে একা একা গেলে এ রকম ঘটনাতো ঘটে যেতেই পারে। যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে অবশ্যই তার শাস্তি দাবী করি কিন্তু, বাট, লেকিন, মেয়েটা যে উস্কানি দিয়েছে সেটা ভুললে চলবে না। সেজন্যে ধর্মে আছে, মেয়েদের পর্দাপুশিদা করা দরকার। একা একা চলাফেরা মানা। আমরা কী এজন্যেই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলাম, মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত এভাবে বৃথা যেতে পারে না .........

কিংবাঃ স্বাধীন বাংলাদেশে কী আমরা মুক্তমনা লোকজন চেয়েছিলাম? মুক্তিযুদ্ধ কী এজন্যে করেছি? স্বাধীন বাংলাদেশ হবে ধর্মপ্রাণ মানুষের, মুক্তমনাদের কতল হতেই হবে। মুক্তমনারা ছেলে মেয়ে সমান সমান বলে। এটা সরাসরি ধর্মের তৌহিন। মেয়েদের স্থান সবসময় ছেলেদের নীচে। পড়ালেখা করলেই, চাকরি বাকরি করলেই ছেলে মেয়ে সমান সমান হয় না। আসেন সবাই, যারা ধর্মপ্রাণ মানুষের কোমল মনে দুঃখ দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াই, স্বাধীন সোনার বাংলা গড়ে তুলি


গরম গরম ঘটনায় স্ট্যাটাসটি ভেজে ফেলতে পারলে সাড়ে তিন হাজার ফ্রেন্ডস সহ দশ হাজার ফলোয়ার কনফার্ম। স্ট্যাটাসটি শেয়ার করবে তেত্রিশ জন, লাইক দিবে দুই হাজার ছয়শ আশি জন আর একশ উনসত্তরটা কমেন্ট পড়বে, ভাই কী লিখছেন, আহ আমার মনে কথাটা ভাই ............ ০৩/০৩/২০১৫




আপেল যুগ যুগ ধরেই ওপর থেকে নীচে পরে, সবাই দেখেছে, এটাকেই স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছে, কেন ওপর থেকে নীচে পরে সেটা ভেবেছেন একমাত্র নিউটন যার কারণে মধ্যাকর্ষ-অভিকর্ষ এর আবিস্কার

গ্রহ তারা নক্ষত্র নিয়ে কবিতা গান লিখেছেন অনেকে। কিন্তু তাদের অবস্থান, দূরত্ব, গতিপথ নিয়ে হিসেব নিকাশ করেছেন ব্রুনো।

তারপরও চিন্তাশীল, আবিস্কারক, মুক্তমনারা যুগে যুগে অন্ধবিশ্বাসীদের আঘাতের আর প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন

অভিজিৎ রায়ের ইচ্ছে অনুযায়ী তার মরদেহ তার পরিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজকে আজ দান করে দিবেন। তার মরদেহ ছাত্র ছাত্রীরা কাটা ছেড়া করবে, জানবে, দেখবে, শিখবে। তাদের অনেকেই নিশ্চয় প্রচন্ড বিশ্বাসী। সেই জ্ঞান দিয়ে যাদের চিকিৎসা হবে তাদের অনেকেই মুক্তমনাদেরকে হয়তো ঘৃনা করেন। তারপরও মৃত অভিজিৎ যা কিছু ছিলো তার তা সভ্যতার অবদানে নিঃশর্তে দিয়ে গেলেন .........

উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, "ভয় নাই, ওরে ভয় নাই-- নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।'
বিদায় অভিজিৎ ভাই, যেখানেই থাকুন, ভাল থাকুন

 01/03/2015





প্রবাসীরা তাদের পরিবার পরিজনদের নিয়মিত টাকা পাঠাবেন, টেলিফোন করে তাদের খোঁজ খবর জানবেন, সুখে দুঃখে পাশে থাকবেন। কিন্তু সংসারের কোন ব্যাপারে মতামত দিতে গেলে শুনতে হবে, তুমি বিদেশ থাকো, দেশের পরিস্থিতি জানো না। অন্য কথায়, তুমি কী বোঝ, চুপ থাকো।

ফেসবুকে দেশের কিংবা সমাজের কোন বিশেষ ঘটনা বা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে স্ট্যাটাস দিলে কিংবা লিঙ্ক শেয়ার করলে যারা এর সাথে দ্বিমত পোষন করে তারা এসে নিজ দায়িত্বে জানিয়ে যায়, বিদেশ থেকে দেশের জন্যে কী করছো? বড় বড় কথা বলো, পারলে দেশে আসো কিছু কইর‍্যা দেখাও।


সবিনয় নিবেদন এই যে, দেশে থাইক্যা দেশের মানুষজন দেশের জন্যে যা করে, বিদেশীরা বিদেশ থেকে দেশের জন্যে সেইম টু সেইম করে। আপনারা যেমন দেশে থেকে ফেসবুকে বিপ্লবী স্ট্যাটাস দিয়ে দেশ পরিবর্তনের আশা করেন, প্রবাসীরাও তাই করে। প্রবাসীরাতো আপনাদের আক্রমন করে বলে না, আপনারা সবাই মাঠে নামেন না কেন, নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে স্ট্যাটাস দেন, কেনু কেনু কেনু? 



“জীবনটা তো সরল সমান্তরালরেখায় সাজানো নয়। এর অধিকারী আমি সন্দেহ নেই, কিন্তু গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করেন – কি বললেন আল্লাহ, পাগল হয়েছেন! বাঙালি মেয়ের জীবন পরিচালিত হবে আল্লাহর নির্দেশে! তাহলে এদেশের মৌলবী মওলানারা তো বেকার হয়ে থাকবেন, আর রাজনীতিবিদরাই বা চেঁচাবেন কি উপলক্ষ করে? না এসব আমার মতামত, অভিযোগের নিজস্ব বাঁধা আটি নয়।“ ------ আমি বীরাঙ্গনা বলছি ঃ নীলিমা ইব্রাহিম




প্রকৃতি চলে নিজের নিয়মে। নিয়মের আবর্তে নিজেকে একবার বরফে মুড়ে দেয়, আবার বরফ সরিয়ে নানা রঙের ফুল বর্নিল প্রজাপতিতে নিজেকে খুলে দেয়। আসে তাপ, আসে দাহ। বৃষ্টি আসে কদমফুলের স্নিগ্ধতা নিয়ে। শরত আনে সাদা মেঘের ভেলারে ভাই লুকোচুরি খেলা। প্রকৃতির এই বৈচিত্র্যের সাথে খুব ধীরে ধীরে বদলাতে থাকি আমরাও। শিশু থেকে, বালিকা, কিশোরী, তরুনী, বৃদ্ধাপ্রকৃতির নিয়ম রক্ষা করতে যেয়ে ছিপছিপে তরুনী হয় থলথলে বৃদ্ধা, মেঘ কালো কেশরাজি বদলে যায় শনশনে সাদা ফাঁকা মাথায়, যুবকের রাতের ঘুম কেঁড়ে নেয়া কমলার কোয়ার মত দাঁতের হাসি বদলায় ফোঁকলা দাঁতের পান খাওয়া দিদিমাতে। জগতের বদলানোর নিয়মে আমরাও বদলে যাচ্ছি দিন দিন কখনো বা চোখে পড়ার মত  করে, কখনো নয়

আমি চোখ বন্ধ করলে এখনো সদ্য তরুনী একটা মুখ দেখি যার গায়ে স্প্রিঙয়ের মতো কিছু লাগানো আছে আর যে তীরের মতো গেয়ে, নেচে যাচ্ছে

Ek teri suhi suhi sang balliye,
Ek teri suhi suhi sang balliye ni teri sang balliye
Ek teri suhi suhi sang balliye,
Aja nachle, aja nachle
শুভ জন্মদিন, সুস্থ থাকো, আনন্দে থাকো। মেরি উমার ভি তুঝে লাগ জায়ে।

প্রকৃতি আমাদের হাড়গোড় না ভেঙ্গে দেয়া পর্যন্ত আমরা এভাবেই জড়াজড়ি করে নেচে যাবো। ইয়ে ওয়াদা রাহা


27/02/2015



গোটা দিনের আর সংসারের কাজ টাজ শেষ করে মাত্র কম্বলটা গায়ে টেনে সোফায় পা তুলে বসেছি, এখন “মাই টাইম”। মেয়ে সোফায় বসে ল্যাপটপে খেলছিলো। যেনো আমার অপেক্ষাতেই ছিল, বসার সাথে সাথে বলে, আম্মি আমার অনেক পিপাসা পেয়েছে, আমাকে একটু জুস এনে দাও।
আমি ওঠা থেকে বাঁচার জন্যে তাড়াতাড়ি বললাম, মাত্র বসেছি, পারবো না বাবা।
সাথে সাথে মেয়ে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে উঠল, তুমি আমার মা আর আমি তোমার বাচ্চা, বাচ্চার জন্যে মায়ের সবকিছু করতে হয়

10/03/2015

টাইগারদের অভিনন্দন ...............
কোন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় যেমন নিঃশর্ত দুঃখ পেতে পারি না, তাতে কিন্তু, বাট, লেকিন নিয়ে আসি ঠিক তেমনি কোন আনন্দজনক উপলক্ষ্যে নির্ভেজাল আনন্দও নিতে পারি না, বার বার "হ্যাপি"কে নিয়ে আসি
এমন কেন আমরা!

09/03/2015


মোদির অনুরোধে পি।এম বোধহয় মাশরাফিরে ফোন না করে আইসিসিকে ফোন করেছিল, ইন্ডিয়াকে আজকে জিতিয়ে দেয়ার জন্যে

গ্রামের স্কুলে বাচ্চারা পড়াশোনা করে। অবস্থাপন্ন গৃহস্থের ছেলেরা ভাল করবে সেটাই স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়। দরিদ্র কৃষকের ছেলেটিও যখন ধনীদের ছেলেদের সাথে প্রতিযোগিতায় নামে তখন গ্রামের জমিদারেরও কেমন যেন চোখ টাটায়। চেষ্টা থাকে তারও, কুলীনদের কাতারে যেন সে উঠে না আসে।

ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়েছে সে অবস্থা। যতই ভাল খেলো, কুলীনদের কাতারে আসতে দিতে জমিদার সাহেব নারাজ। কিন্তু, কান্ডামী করে কী সেসব অতীতে আটকানো গেছে না ভবিষ্যতে আটকানো যাবে!

পাকিস্তানি হারামজাদা একাত্তরের পরাজয়ের বিষ ঢেলে দিচ্ছে।

বাংলাদেশ টীম, আমরা তোমাদের ভালবাসি, সাথে আছি, পাশে আছি।

বুদ্ধিজীবি হত্যার মধ্যে দিয়ে তোমার জন্ম হয়েছিল স্বদেশ। শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ।
“আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি” তোমার ছায়ায় পালিত ছাগুদেরও ভালবাসি। 19.03.2015



আজ পুরো এক মাস হলো ...............


এফবিআই বাংলাদেশে এসে ভাত আর মুরগীর সালুন খেলো,
এবার দেখা যাক বাংলাদেশ তাদের থেকে কী পেলো  26.03.2015





শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ। জন্মদিনে ভালবাসা জেনো।


যদিও জানি তোমার বুকে কোন ভিন্ন মতালম্বী, মুক্তমনা, নাস্তিক, পাহাড়ি, আদিবাসী, ভিন্ন ধর্মালম্বীদের জায়গা হবে না। এ দেশ হবে পাক মন পেয়ারুদের দেশখুন হয়ে রাস্তায় পরে থাকবে, পুলিশ ধরবে না, এক মাসে কোন ক্লু পাওয়া যাবে না, কোন খুনীর বিচার হবে না, সাজাও না। রাষ্ট্র এমন ভাব করবে “তারা” তাদের নাগরিক না তারপরও তোমায় নিঃশর্ত ভালবাসি, তারপরও সুখে দুঃখে, আনন্দ, বেদনায় “বলবো আমি বাংলাদেশ”



আমরা হয়তো এমন বাকস্বাধীনতাহীন, মেধাহীন বাংলাদেশই চেয়েছিলাম। 

26.03.2015



বিজ্ঞানসম্মত ধর্ম আর ধর্মসম্মত বিজ্ঞান খুঁজে খুঁজে ছাগুময় জীবনের পরিসমাপ্তি 

30/03/2015 



বিজ্ঞানের যেকোন একটি বিষয়ে পড়শোনা করা মানে কি বিজ্ঞানমনস্ক হওয়া?

সাহিত্যের কোন শাখায় পড়া মানে কি সাহিত্যিক হওয়া?

বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ার জন্যে যেমন বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়া জরুরি নয়,
ঠিক তেমনি সাহিত্যিক হওয়ার জন্যেও বোধহয় সাহিত্যের আদ্যোপান্ত জানা জরুরি নয়।

বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ার জন্যে দরকার 'যৌক্তিক চিন্তাভাবনা, অনুসন্ধিৎসু মন, তথ্য নির্ভর সিদ্ধান্তগ্রহণ'
ঠিক যেমন সাহিত্যিক হওয়ার জন্যে দরকার 'কল্পনা বিলাসী মন', 'যা বাস্তবে দেখতে পাওয়া যায় না তাকে কল্পনায় দেখানো', 'মানুষের অনুভূতির কথা বলা'

যারা বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার সুবাদে, 'ধর্মসম্মত বিজ্ঞান' কিংবা 'বিজ্ঞানসম্মত ধর্ম' নিয়ে প্রবন্ধ লিখে লিখে গলদঘর্ম হচ্ছেন তাদের কাছে করজোড়ে প্রার্থনা, ক্ষ্যামা দ্যান। বিশ্বাস আর যুক্তি এক পাত্রে আসে না। বিজ্ঞান পড়েছেন ভাল কথা, করে খান। যুক্তিবাদীদের তাদের মতো থাকতে দেন। সব সাহিত্যের ছাত্রই যেমন শেক্সপিয়ার নয় তেমনি সব বিজ্ঞানের গবেষকই গ্যালিলিও বা হকিং নন। এটা প্রমাণিত সত্য।

৩১/০৩/২০১৫



আমাদের রাজা বেটা তার মায়ের মোবাইল নিয়ে ভাইবারে আমাদের সবার ছবি দেখে দেখে এক একজনকে ফোন দেয়, আমাদের খোঁজ খবর নেয়। দাদুর কথা মনে পড়ে। ভাইয়ার সাথে মারামারি করলে দাদু বলতো, ভাইইতো খোঁজ নিবো, আর কে নিবো? দিন ঘুরেছে আমাদের, এখন ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের ছেলে নেয়।

একদিন এমন খোঁজ খবর নেয়ার সময় পাশ থেকে রাজা বেটার দিদু বললো, মিষ্টি মাকে আসতে বলো। বলো, এসে বেড়িয়ে যাও।
রাজা ঠোঁট উল্টে বললো, মিষ্টিমাতো অল্যান্ডে এ এ এ এ
দিদু বললো, হল্যান্ডে তো কী হয়েছে, বেড়াতে আসতে বলো তুমি
রাজা বললো, মিষ্টি মা তাহলে প্লেনওয়ালাকে কী বলবে, এই প্লেন আমি কলাবাগান যাবো, আমাকে কলাবাগান নিয়ে যাও?
দিদু হাসতে হাসতে বললো, হ্যাঁ তাই বলবে।
রাজাকে যদি বলি, রাজা বেটা আমাকে আই লাভিউ বলো, খুব লজ্জা লজ্জা গলায় আমাকে আলু আর মিসুউউ বলে


শুভ জন্মদিন রাজা বেটা। ভাগ্যিস তুমি আমাদের বাড়ি এসেছিলে, তাইতো বাড়িটি এতো উচ্ছল। দাদা-দিদু সারাদিন সময় কাটানোর জন্যে একটা মনের মত খেলনা পেয়েছে। হাজার বছরের পরমায়ু হোক তোমার। 

০৮/০৪/২০১৫



মায়ের ভাষায় “ছোটবেলা” ছোটবেলার সাথে হারিয়ে যায়। মেয়েদের কাজ হলো, বাপের বাড়িতে এলেই, পুরনো বইয়ের আলমারীতে, বাছাই আর যত্ন করে তুলে রাখা পুতুলের বাক্সে, ছাঁদের ফুলের টবে, বারান্দায় ঝোলানো মানিপ্ল্যান্টের লতায়, মায়ের পুরনো শাড়িতে ছোটবেলা খুঁজে ফেরা। তারপর উদাস গলায় বলেন মা, আমিও কত খুঁজেছি এক সময় ............

এখন আমার মেয়ের জুতোর মাপ প্রায় আমার সমান সমান। আমি হিল খুলে রাখলেই, সে তাড়াতাড়ি তাতে তার ছোট্ট পা দু’খানি গলিয়ে নেয়, মোবাইলটি হাতের কাছে পেলেই গুঁতোগুঁতি, গেইম খেলা, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার চেক করা, লুকিয়ে চোখে মাশকারা লাগায়, মা’কে ফাঁকি দিয়ে কতো দ্রুত কতো বড় হওয়া যায় সেই চেষ্টাতে সে বিভোর। আফটার অল, ক’দিন পর সে হাই স্কুলে যাচ্ছে বলে কথা। আমি দেখি আর হাসি, মাত্র সেদিন এই খেলা আমিও খেলে এসেছি ...... হ্যাঁ মাত্র ক’দিন আগেইতো ...... প্রকৃতি এখন রিভার্স গেইম খেলছে

“ছোটবেলা” হয়তো সবটাই হারিয়ে যায় না। কিছু কিছু সময় চকিতে আবার উঁকি দিয়ে পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে যায়। কখনো মেয়ের ছায়া হয়েতো কখনো মায়ের ছায়া হয়ে ...............

১০/০৪/২০১৫



বাজেরে বাজে ঢোল আর ঢাক
এলোরে এলো পহেলা বৈশাখ

নেট থেকে মারা ছবি দিয়ে নয়, হালাল ভাবে রান্না করে “নতুন বছর” উদযাপন করেছি। নতুন বছরে সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো, আমার হাফ বিদেশিনী মেয়ের ভর্তা বানাতে সাহায্য করা।
তার যুগান্তকারী সংলাপ, মামুই, একদিন আমরা যা যা ভুওয়ারতা হয়, তার সব সব ভুওয়ারতা বানিয়ে ফেলবো।
আমি, তাই?
হু, ভুওয়ারতা এতো মজা।


আদতে যেখানেই থাকুক, বাংলাদেশী বাংলাদেশীই

১৪/০৪/২০১৫ 


যারা বলে, লেখে কেন?লেখার কী দরকার ছিলো? তাদের জন্যে বলছি, আপনার পড়ার কী দরকার ছিলো? কেন যান মুক্তমনা ওয়েবসাইটে? কেন কিনেন যুক্তি? কেউ আপনাদের জোর করেছে? লিখলেই মেরে ফেলতে হবে এটা কোন ধর্মে লিখা আছে?

নিজেকে নিরাপদ ভেবে উৎফুল্ল হয়ে মন্তব্য করার মত পরিবেশ আসলে নেই। যখন চাপাতি দিয়ে কোপাচ্ছিল তখন পাশের লোকেরা জানতো না যে সে অন্তত কিংবা মুক্তমনার এডমিন যেমন আপনাকে কোপানোর সময়ও পাশের জন তামাশা দেখবে, সেও জানবে না আপনি কত পাক মন পেয়ারু ছিলেন। 12.05.2015


প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যৌক্তিক চিন্তা ভাবনার মানদন্ড নির্ধারন করে না। এ কারণেই একজন ডাক্তারী পাশ করেও ছাগু নায়েক হতে পারেন আর একজন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে দার্শনিক মাতুব্বর হতে পারেন। 12.05.2015 


ইতিহাসে লেখা থাকবে ভারত সরকার যখন নিজস্ব প্রযুক্তি, বিজ্ঞানী ব্যবহার করে মহাকাশে নিজস্ব নভোযান পাঠাতে ব্যস্ত ঠিক এই সময় বাংলাদশে গুটি কয়েক যে বিজ্ঞান লেখক ছিলেন তাদের সন্ত্রাসীরা একে একে খুন করেছে, এবং সরকার তাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে হ্যাঁ একই সময় বাংলাদেশ ক্রিকেটে প্রভূত উন্নতি করেছে, বাংলাদেশ সরকার তথা জনগনের কাছে ক্রিকেটই প্রথম আর শেষ কথা ছিলো। 14.05.2015



আমি পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করি, আমার জানার, শেখার, দেখার, জ্ঞানের বাইরে এই মহাবিশ্বে আরো অনেক কিছু আছে। আরো  অনেক কিছু আছে আবিস্কারের অপেক্ষায়, খুঁজে পাওয়ার অপেক্ষায়, জানার অপেক্ষায়। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে, নতুন আলোক রশ্মি মানব জাতি খুঁজে পাবে, অনেক অজানাকে, রহস্যকে জয় করবে। ধ্বংস হয়ে আবার যে মুহূর্তটি থেকে নতুন করে সৃষ্টি শুরু হবে আবার শুরু হবে আবিস্কারের পালা, প্রকৃতিকে, কঠিনকে জয় করার সংগ্রাম ......... ঠিক যেমন আমাদের আদি পুরুষরা করেছিলেন কিংবা আমরা করছি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যে


আমি পরিপূর্ণভাবে সর্বান্তকরনে অবিশ্বাস করি, যা জেনেছি তাই সত্য, শ্বাশত, সম্পূর্ন এবং শেষ, এই বাইরে আর কিছু নেই। 25/05/2015 



গারো মেয়েটাকে নির্যাতন করেছে পাঁচজন। কিন্তু ধরা পড়েছে দু'জন তারা আবার পেশায় দুজনেই ড্রাইভার। বায়িং হাউজ কী দুজন ড্রাইভারের সাথে বিদেশী অতিথিদেরকে যমুনা ফিউচার পার্কে পাঠিয়েছিলো যেখানে মেয়েটির সাথে তাদের পরিচয় হয়? ড্রাইভাররাতো গাড়ির পাশে থাকে, শপিং এ যায় না। এখানে ব্যতিক্রম ঘটার কারণটা কি! টাকার বিনিময়ে ধনীর দুলালদের দোষ মাথায় নিয়ে আর কতোদিন গরীবের ছেলেরা জেল খাটবে? প্রশাসন অনেক উন্নতি করছে বুঝতে পারছি, পকেট তাদের অনেক ভারী।  যারা আপাতত আনন্দিত হচ্ছেন, দোষী কাউকে ধরা হয়েছে বলে, তারা সাদা চোখে দেখে নিন, কাউকে ফাঁসিয়ে দেয়া হচ্ছে ...... সালমানের খানের ড্রাইভার বলেছিল গাড়ি সে চালাচ্ছিল, আদালত মানেনি ............পার্থক্য অনেক।


যারা বলছেন "গারো" না বলে একজন বাঙালি বলা উচিত তাদেরকে বলছি না "গারো"ই বলুন সেটা অনেক সম্মানের। "গারো" সমাজে মাতৃতান্ত্রিক পরিবারে ছোটবেলা থেকে শিশুরা মাকে, মেয়েদেরকে সম্মান দিয়ে অভ্যস্ত। "গারো" পুরুষরা নারী নির্যাতন করে না। দয়া করে তাদেরকে বাঙালি বলে অপমান করবেন না কিংবা অমানুষ বানাবেন না।


স্বাধীন দেশে পাহাড়ি-আদিবাসীদের ওপর বাঙালিদের অত্যাচার পাক হানাদার বাহিনীকে ছাড়িয়ে গেছে।  ২৯/০৫/২০১৫

যারা “বাক স্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা” “ভিন্নমত” বলে বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে, ব্লগে, ফেসবুকে পলিটিক্যালি কারেক্ট থাকে সবসময়, দেখা যায় বাস্তবে নিজেদের “কায়েতি”পনার জন্যে কারো সাথেই মিলে মিশে থাকতে পারে না, কদিন পরে পরেই ঝামেলা করে এই বলে নাক উল্টায়, অন্যেরা তাদের মেশার যোগ্য না।

আইরনি হলো, এই তারাই অন্যেরা যারা সব মতামতের লোকের সাথে ঝামেলা ছাড়া বসবাস করে যাচ্ছে দিনের পর দিন তাদেরকে জ্ঞান দিতে আসে। এই আঁতেল কায়েৎরা ধরেই নিয়েছে, তারা যা জানে তার বাইরে পৃথিবীতে আর কিছু নেই, তারা সর্বজ্ঞ, সর্বজ্ঞানী, সর্বোত্তম।


কথা হলো তারা যে মিজ/মিস্টার পার্ফেক্ট এই সার্টিফিকেট তাদের কে দিয়েছে? কবি এখানে নিরুত্তর ............... বলো দেখি কোথা যাই ১২-০৬-২০১৫

পন্ডিতের ভাইপো
বানান ভুল করে 
বলে, টাইপো ১২-০৬-২০১৫  


এক আকাশের নীচেই আমরা সবাই আছি
পাশাপাশি হয়তো নয় তবুও কাছাকাছি
দিনরাত তুমি আমাদের বুকে করে রাখো
আমাদেরও হৃদয় জুড়ে সারাবেলা থাকো
বড় হবে, ব্যস্ত হবে আমাদের সোনা মানিক
বন্ধুদের পেয়ে আমাদের ভুলেও যাবে খানিক
 তোমার এই ছেলেবেলা আমরা বুকে করে রাখবো
                তোমায় ভালবাসায় মাখিয়ে সামনে পথ হাঁটবো। 26-06-2015




বিশ্বব্যাংকের ঘোষনা অনুযায়ী বাংলাদেশ দরিদ্র থেকে নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের দেশে প্রবেশ করেছে। অভিনন্দন বাংলাদেশ। এখন থেকে আমরা আর দরিদ্র নই তবে গরীব। হাঁটি হাঁটি পা পা করে হলেও সামনে এগোচ্ছ।

প্রত্যেকটি নতুন অর্জনের সাথে জড়িয়ে থাকে দায়িত্ব। অর্জনটিকে ধরে রাখার দায়িত্ব আর তার সম্মান রাখার দায়িত্ব। আশাকরি সামনেও আমরা আমাদের অগ্রগতি অক্ষুন্ন রাখবো। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে নৈতিকতা, মানবিকতা, সহনশীলতা, ইত্যাদি দিকগুলোতেও সামনের দিকে এগিয়ে যাবো। এমন সব আচরনগুলো বাদ দিবো যেগুলো আর উন্নত জাতিকে মানায় না।


গার্মেন্টস শ্রমিক, প্রবাসী শ্রমিক, কৃষক যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে বাংলাদেশ আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে তাদের অবদান স্বীকার করে তাদের প্রতি নিজেদের আচরনটুকু উন্নত করবো, মানসিকতার পরিবর্তন করবো। গার্মেন্টস শ্রমিকরা যেনো এই গরমে অন্তত একটু ফ্যানের বাতাস পেয়ে রাত্রিতে ঘুমোতে পারে সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে তাদের নূন্যতম মানবিক মজুরীটুকু নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হোক। প্রতিটি দরিদ্র শ্রমিকের প্র্যাপ্য মজুরী মিটিয়ে দিয়ে জানিয়ে দেয়া হোক, আমরা সত্যি কিছুটা ওপরে উঠে গেছি, সার্থক হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা। 07/03/2015 



সেহরী খেয়ে শুলে ঘুম আসে না তাই মা তখন তার প্রবাসী মেয়েদের ফোন করে খোঁজ খবর নেন। কথায় কথায় গল্প গড়ায়।
উদ্বিগ্ন কন্ঠে জানালেন, রোজার দিনে কাঁচামরিচের দাম অনেক বেড়ে যায়
শুনতে শুনতে মায়ের জন্যে আরো একরাশ মায়া ঝরে পড়লো। এতো ব্যস্ত থাকি, মাকে সময়ই দেয়া হয় না। এতো মিস করে মা তাদের সন্তানদেরকে কতো সামান্য টুকিটাকি প্রবাসিনী মেয়েদের সাথে শেয়ার করতে চায়, সন্তানদের কাছে পেতে চায়।

একদিন আমারো মায়ের মত ব্যস্ততা কমে আসবে, যাদের নিয়ে আজ আমি ব্যস্ত তারা আমাকে পিছনে ফেলে সামনে এগোবে। মায়ের মত সব টুকিটাকি গল্প করার জন্যে আমিও কী কাছের কাউকে হাতরে ফিরবো না? ০৭/০৩/২০১৫


আমার মেয়েটার মধ্যে জাদু আছে, এই বলে আমি এখন বড় হয়েছি তার পরের মুহূর্তেই বলে, আমিতো এতো বড় না, আমিতো এখনো বাচ্চা। পুরাই দাবা ঘরের ঘোড়া। যেকোন দিকে সে আড়াই ঘর চলে :D ০৭/০৩/২০১৫




ফেসবুকে অনেকের স্ট্যাটাসেই আলোচনা দেখছি “রাজন” হত্যার শেষ অব্ধি বিচার হবে কী না এই নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। আমাদের দেশে এমনিতেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি তার ওপর আদালতের কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রিতা, দরিদ্র রাজনের পিতাকে পয়সার লোভ দেখিয়ে কিনে নেয়া এ সমস্তই তাদের ব্যাখা বিশ্লেষনে উঠে আসছে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় যেগুলো খুবই যৌক্তিক।

আমরা যদি এবার আমাদের দায়িত্ব ফেসবুকে স্ট্যাটাসাবাজিতে সীমাবদ্ধ না রেখে একটু সামনে আগাই? রাজনের দরিদ্র পিতাকে এই ছবি থেকে সরিয়ে নেয়া হোক। রাষ্ট্র বাদী হয়ে মামলা পরিচালনা করবে। আসামীপক্ষ যদি রাজনের পিতাকে পয়সা দিয়ে সমঝোতা করাতে পারে তাহলে রাষ্ট্র কেনো পারবে না? রাজনের বাবার কাছ থেকে কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে রাষ্ট্র মামলার দায়িত্ব নিক। এমনিতেও দরিদ্র পিতা হয়তো মামলা চালাতে পারবে না।

আমার ফ্রেন্ড লিস্টে বেশ ক’জন জাজ, ল’ইয়ার আছেন, তারা ব্যাপারটা একটু ঘেটে দেখবেন কী? আজকে রাজনের হত্যার বিচার না হলে আগামীর রাজনদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি আগামীর রাজনদের বাঁচাতে পারবে।


আমি ভেবে অবাক হই। এরা হয়তো কোন পেশাদার অপরাধী নয়। হয়তো তেমন কোন অপরাধ সংগঠনের সাথেও জড়িত নয়। নেহাত খেলতে খেলতে হাসতে হাসতে একটা মানুষের প্রাণ নিয়ে নিলো! কী নির্মম এই খেলা।  ১৪/০৭/২০১৫


যখন আরবে রুটির সংকট ছিলো তখন আরবের লোকেরা ধর্ম প্রচার করতে দিকে দিকে বের হয়েছে, রাজ্য দখল করেছে, শাসন করেছে, ইসলাম প্রচারের নাম দিয়ে। তেলের খোঁজ পাওয়ার পর থেকে তাদের ধর্ম প্রচার বন্ধ হয়ে গেছে। এখন তারা আরবের গরমের সময় ইউরোপে চলে আসে দাসী বাঁদি নিয়ে ছুটি কাটাতে। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এই ভেবেই "লালসালু" লিখেছিলেন। ১৪/০৭/২০১৫


জাতীয়তা আর ধর্ম এ দুটোই সম্ভবত পারে সব ভুলিয়ে মানুষের মনে চরম উন্মাদনা সৃষ্টি করতে। ক্রিকেট আর রমজান এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সারা দেশ ক্রিকেট জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কাজ কর্ম চুলোয় দিয়ে সরকারী পর্যায় থেকে সবাই দিন মান মাঠে বসে থাকে। স্বাস্থ্য, শরীর, গরম সব অগ্রাহ্য করে ঘন্টার পর ঘন্টা উপোষ করে মানুষ বসে থাকে। আর কোন কাজে মানুষের এমন একাগ্রতা পাবেন? 12/07/2015


আমরা প্রাচ্যের লোকেরা পাশ্চাত্যের মানুষের পশুপ্রেম বেশীরভাগ সময় নিয়ে বেশ হাসাহাসি করি, অবজ্ঞা করি, কটু কাটব্য ও করি। আমাদের এই হৃদয়হীনতায় প্রায় তারা দুঃখিত হয় কিন্তু আক্রমন করে না আমাদের।


আমরা কী কখনো ভাবি, মানুষ মানুষকে ধোঁকা দেয় কিন্তু পশু দেয় না? বিশ্বাসজনক সঙ্গী হিসেবে আসলে কাকে পাশে রাখা উচিত? কতো ঠেকে এটা তারা শিখেছে? আমরা শিখি নি হয়তো শিখবোও না ৩১-০৮-২০১৫ 



অধার্মিকদের কাছে যেটা অন্যায় কিংবা অপরাধ সেটাকে ধার্মিকরা অনেক সময় বলে থাকেন “গুনাহ”। দুটো জিনিস কি এক? আমার উত্তর হচ্ছে না।

অন্যায় বা অপরাধ করলে শাস্তি হয়, প্রতিকার কিংবা প্রতিবিধান হয়, এর থেকে পালানোর কোন পথ নেই বা প্রতিবিধান নেই।

গুনাহ করলে এর থেকে মুক্তির উপায় আছে। ধর্মে বিধান দেয়া আছে, উপবাস করলে, প্রার্থণা করলে, দান করলে, সৃষ্টিকর্তা ক্ষমা করে দিবেন। তিনি ক্ষমাশীল, ঠিক করে তাকে সন্তুষ্ট করতে পারলে এমন কোন অন্যায় নেই যার ক্ষমা তার কাছে নেই।
আমার ব্যক্তিগত ধারনা শুধু এই কারণে বিশ্বাসী লোকেরা কোন ধরনের অন্যায় করতে পিছপা হন না। তারা অন্যায়ের বদলে যথেষ্ঠ নির্বোধ প্রাণীর প্রাণ নিয়ে, দরিদ্রদের আহার বিহার করিয়ে স্রষ্টাকে খুশি রাজি করিয়ে পরবর্তী জীবনে সুবন্দোবস্ত করে নিবেন এই অগাধ বিশ্বাস তাদের এতো নিষ্ঠুর কঠোর নির্মম অপরাধী বানায়।

১৩-০৯-২০১৫




নির্জনতার একটি নিজস্ব সৌন্দর্য আছে। ভয়ংকর বিষন্নতার আনন্দ আলাদা। প্রিয় কারো জন্যে কিংবা প্রিয় কোন জিনিসের জন্যে কোন প্রতীক্ষা নেই। নেই কোন টেলিফোন, চিঠি বা ডাকের উৎকন্ঠা। কারো যাওয়া নেই, আসাও নেই। কারো কাছে কথা রাখার দায় নেই, সময় মত পৌঁছানোর তাড়া নেই। শুরু শেষের তাড়া নেই, আহ্নিক গতি থেকে বার্ষিক গতিতে পৌঁছানোতেও কোন উচ্ছাস নেই।


নিজের সাথে বোঝাপড়ার জন্যে নির্জনতার কোন বিকল্প নেই। কোলাহলে মানুষ বড্ড নিজেকে হারিয়ে ফেলে। নিজেকে খুঁজে পেতে একাকীত্ব কিংবা বিষন্নতা খুব জরুরী। এতো হাজার কিছুর ভীড়ে নির্জনতা কোথাও পাই তারে, কোথায় পাবো তারে ......

18-09-2015 



যদি এমেরিকা কিংবা ইউরোপে পদদলিত হয়ে হাজার জন মানুষ এভাবে মারা যেতো তাহলে “জরুরী অবস্থা সহ জাতীয় শোক দিবস” ঘোষনা করা হত। সংশ্লিষ্ট বিভাগের সব দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ডেকে এনে কোর্ট মার্শাল করা হয়ে যেতো। বিশ্ববাসীর কাছে সে দেশের রাজা-প্রেসিডেন্ট হাত জোড় করে ক্ষমা প্রার্থণা করতেন। উগ্র বর্বর আরবেরা দাম্ভিক ঘোষনা দিয়েছে, “এমন ঘটনা ঘটতেই পারে”। কারণ তারা জানে, যত কিছুই হোক, কিছু লোক সেখানে যাওয়ার লোভ সম্বরণ করতে পারবে না। আরবেরা যেই বর্বর ছিল, সেই বর্বরই আছে, এতো ঐশী গ্রন্থও তাদেরকে “মানুষ” করতে পারেনি। বিন্দুমাত্র অনুতাপ বিশ্ববাসী তাদের চোখে দেখতে পায়নি।

হায়াত মউত যেহেতু আল্লাহর ইচ্ছা, জায়গা – সময়ও নিশ্চয় তিনি নির্ধারন করেন। তাজরীন ফ্যাশন যদি সৌদি আরবে অবস্থিত হত তাহলে সম্ভবত বাংলাদেশের ছাগু সম্প্রদায় কোন গার্মেন্টসকর্মীর মৃত্যুতে দুঃখিত হত না। তাদের সিধা বেহেস্ত নসীব কল্পনা করে আনন্দে শিহরিত হয়ে উঠতো। মাঝখান থেকে তাজরীনের মালিক বেচারা ফেঁসে গেলো আর গার্মেন্টসে পুড়ে ঝলসে মৃত্যু বরন করে গার্মেন্টসকর্মীরা সিধা জান্নাত থেকে বঞ্চিত হলো। কিন্তু কেন? সবইতো তাঁর ইচ্ছা, তিনি কেন তাদের বঞ্চিত করলেন? গার্মেন্টসকর্মী হওয়াতেতো তাদের কোন হাত ছিলো না। তারাওতো সৌদি বাদশাহের পুত্র – কন্যা হতে পারতো?

পুনশ্চঃ ৬৮টি হাজার ছাগু মরলে বাংলাদেশ বাঁচবে।

সংবিদ্ধিবব্ধ সর্তকীকরণঃ এই লেখায় কোন ছাগুর, ছাগ মার্কা মন্তব্য করা নিষেধ করা হলো।



চিরকাল বলে আসলে কি কিছু আছে?

সব কিছুইতো সময়ের সাথে বদলায় ......... পছন্দ, সম্পর্ক, উপলব্ধি, দর্শন


আকড়ে ধরা হয়তো বেশির ভাগ মানুষের সহজাত স্বভাব। নিজেকে সান্ত্বনা দিতেই তবে কি মানুষ চিরকালের মত কিছু ভেবে নিয়ে আনন্দ বা স্বস্ত্বি পেতে চায়?


সব সত্যির বড় সত্যি হয়তো এটাই, চিরকালের অস্ত্বিত্বই আসলে নেই, চিরকাল হয় না, কখনো হয়তো হবে না ...... সবকিছু বদলাতে থাকবে, বদলানোই স্বাভাবিক সেটাই হয়তো চির সত্য। 

২৪-১১-২০১৫


চিরকাল মানুষ অনন্তের সন্ধান করে যাবে কিন্তু কখনো তার দেখা পাবে না –স্টিফেন হকিং ০৮-১২-২০১৫ 



খরগোশরা কচ্ছপদের চির জীবন অবহেলা করে গেছে, করে যায়। অবজ্ঞা করা সহজ কিন্তু অবজ্ঞা সহ্য করা কঠিন। কচ্ছপরা অভ্যাসের কারণে অবজ্ঞা মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়, খরগোশরা ভেঙ্গে পরে, সাহায্য কিংবা করুণা খুঁজে বেড়ায়।


ইতিহাসের ব্যর্থতা এখানেই যে ইতিহাস থেকে কেউ শিখে না, সবাই যার যার ইতিহাস গড়তে চায়। বাস্তবতা হলো, অধ্যবসায়ীরাই টিকে থাকবে, জয় কচ্ছপদের অবশ্যম্ভাবী। খরগোশরা পৃথিবীশুদ্ধ মানুষের সমবেদনা কুড়িয়ে নিয়েও সবসময় পরাজিতের দলেই থেকে যাবে। ০৩-০১-২০১৬ 


বাংলাদেশের অনেক ছেলে ইউরোপে, এ্যামেরিকায় এসে কখনো জীবনের তাগিদে, কখনো প্রেমের টানে আবার কখনো বা নিছক রোমাঞ্চের উদ্দেশ্যে পাশ্চাত্যর মেয়েদেরকে বিয়ে করে কিংবা লিভিং টুগেদারে থাকে। অনেক সময়ই হয়তো সর্ম্পকটি নানা কারণে টিকে না, ছাড়াছাড়ি হয় তারপর তারা দেশ থেকে পারিবারিক পছন্দে আবার বিয়ে করে। অন্যরকম ঘটনাও ঘটে, দেশীয় বউ পছন্দ না হলে, তাকে ত্যাগ করে বিদেশী বউ নিয়ে সুখে শান্তিতে কালাতিপাত করতে থাকে। কিন্তু তার এই ব্যক্তিগত কারণে তাকে কখনো সমাজচ্যুত হওয়ার কথা ভাবতে হয় না। যত ঘটনার জন্মই দিক, তারা নায়ক, তাদের সে ভাবনা নেই কখনো। বাংলাদেশের পুরুষশাসিত সমাজে সব এক্সেপ্টেড, সেটা বিদেশেও।

সেই পুরুষরাই কোন বাংলাদেশী মেয়ে যদি বিদেশে কোন ভিন দেশীকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়, তার সম্বন্ধে নানা কথা রটিয়ে ঘটিয়ে বেড়ায়, আড়ে ঢাড়ে তাকায় তার দিকে। দেশ, সমাজ, ধর্ম রসাতলে গেলো বলে চারদিকে রব তুলে তাকে সমাজচ্যুত করার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পরে। হ্যাঁ, ঠিক পড়ছেন সেই মানুষ গুলোই তারা। সেই মেয়েটিকে কোন সামাজিক বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো তো দূরের কথা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে বাকিদের আরো নির্দেশনা দেয়া হয় তাকে এড়িয়ে চলার জন্যে। শুধু সে “মেয়ে” কিংবা “বাংলাদেশী মেয়ে” বলে তার ওপর চলে এই মানসিক পীড়ন।
“বাংলাদেশ” নামক গুহার মানুষ গুলো বিদেশে এতো মুক্ত আলো হাওয়া খাওয়ার পরও নিজেদের চারপাশে তারা কেন এতো দেয়াল তুলে রাখে! ২০১৬ সালেও যদি এই মানসিকতা লালন পালন করে তবে তাদের পৃথিবী কবে বদলাবে? কবে তারা মূল পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে অনুধাবন করবে, যে যে কারণে একটা ছেলের একটা ভিন দেশী সঙ্গী খুঁজতে হয় সেই একই কারণ গুলো একটা মেয়ের বেলায়ও সমান সত্য হতে পারে। জীবন কাউকে ছাড় দেয় না এ সত্যিটা কবে বুঝবে আর কতোদিন লাগবে তাদের চিন্তাধারা বদলাতে!
আর বছরের পর বছর বিদেশে থেকে বিদেশীদের প্রতি রেসিস্ট মনোভাবের কথা তো বাদই দিলাম। তাদের দেশে বসবাস করে সব সুবিধা নেয়া যায় কিন্তু তাই বলে তাদের সাথে পরিবার গঠন !!! ভাবা যায় না ......... তাই না? ০৯/০১-২০১৬


কোন একটি বিষয় একজন মানুষকে কীভাবে এতোটা প্ররোচিত করতে পারে যে, সে আর একজন হাসতে, বলতে, চলতে থাকা মানুষের জীবন ঘড়ি স্তব্ধ করে দেয়! একজনের ইহকাল ধ্বংস করে দিয়ে অন্যজন পরকালে অনন্ত সুখে থাকবে, এই স্বার্থপরতা কী মানুষের ধর্ম হতে পারে!

সুস্থ-সবল, পড়ালেখা জানা মানুষদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে কেন সব সময় একটা অবলম্বন দরকার হবে? কেন তারা সারাবেলা ভয় পায় আর বলে আমাকে রক্ষা করো! কেন তাদেরকে রক্ষা পেতে হবে, কী থেকে রক্ষা পেতে হবে? তারা কীসের মুখোমুখি হতে ভয় পায়? সভ্যতার আগের আদিম কালের মানুষদের মত অদৃশ্য শক্তি কেন কল্পনা করে? কারণ, অসততা রন্ধ্রে রন্ধ্রে তাই ধর্ম স্কন্ধে স্কন্ধে।

‘The world suffers a lot. Not because of the violence of bad people but because of the silence of good people' -Napoleon Bonaparte   বাংলাদেশের বাস্তবতা তিনি হয়তো আগেই জেনে গিয়েছিলেন।  07-04-2016




যারা যারা নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আদর্শ ও জীবন বিধি নিয়ে লেখালেখি করে তারা যখন একাত্তর ও যুদ্ধাপরাধী, কিংবা বীরঙ্গানাদের নিয়ে মায়া কান্না ভরা স্ট্যাটাস ফাঁদে তখন তাদের দ্বিচারিতায় বিস্ময়ে মুক হতে হয়।

একাত্তরে রাজাকাররা ঠিক ইসলামি আর্দশ মেনেই বাংলাদেশে হত্যা, ধ্বংস, লুটপাট, ধর্ষণ চালিয়েছিলো। তারাও তখন ইসলাম রক্ষা করতেই মাঠে নেমে ছিলো। শত্রু পক্ষের মেয়ে তো গনিমতের মাল, তাদের ওপর অত্যাচার ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে জায়েজ ছিলো বই কী। তারা ধর্ম পথেই ছিলো, আপনি বা আপনারা কোন পথে হাঁটবেন সেটি ঠিক করেন।

বাঙালি জাতিটাই ভন্ডামীতে ভরপুর। তারা কোনটাই বাদ দিবে না, গাছের খেতে খেতে যতটুকু তলার কুড়িয়ে নেয়া যায়
10-05-2016


বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সচিব, প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের গর্ভনর প্রমূখ, তারা তাদের কোন দায়িত্বটি সবচেয়ে নিষ্ঠার সাথে পালন করেন?

উত্তর হলো, উদ্বোধন করা

ব্রীজ, মার্কেট কমপ্লেক্স, এটিএম বুথ, নতুন মডেলের ল্যপটপ, বইমেলা, বানিজ্যমেলাবিমানবন্দর, নৌবন্দর, কীসের উদ্বোধন দেশে তারা না করেন

ফ্রান্সের কান, এমেরিকার অস্কারে তাদের দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী না গেলেও, বাংলাদেশের জায়গায় জায়গায় তাদের পদধূলি পরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার, পয়সার, সময়ের কী অপব্যবহার

শুধু সেলফি তুললেই ডিজিটাল হওয়া যায় না প্রথমে ক্ষ্যাতের থেকে স্মার্ট হতে হবে তারপর ডিজিটাল হওয়ার প্রশ্ন

03/06/2016

সবাই তার প্রিয়তম প্রাণকে প্রভুর সন্তুষ্টি লাভের জন্যে উৎসর্গ করেছে। প্রতি বছরই এত প্রিয়তম জিনিস মানুষের ভান্ডারে জমা হয়!

যাক, এ বছর সিটি কর্পোরেশানের তরফ থেকে বিপুল প্রচারণা আর উদ্যেগ দেখেছি, নির্দিষ্ট জায়গায় কোরবানী দিয়ে পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করার উদ্দেশ্যে। টিভিতে তারা বিজ্ঞাপন, নাটক কোন কিছুরই কমতি রাখেন নি দেশবাসীকে লাইনে আনতে।

যদিও কাজের কাজ কিছুই হয় নি। সেই পুরোনো রীতিমত পুরো দেশ রক্ত গঙ্গায় ভাসছে। সনাতন মতালম্বী মানুষেরা পরিবর্তনে বিশ্বাসী নয়। তারা তাদের ইগো, মর্যাদা, সুবিধা কিছুই ত্যাগ করবে না।

এই যে দেশ জুড়ে কোপাকুপির মচ্ছব চলছে, শিশুদের মানসিকতার ওপর যে প্রভাব পরে সেটুকুও তারা এড়িয়ে যেতে চায়। সবাই ভাবে, অন্যের ঘাড়েই কোপ পরবে তার নিজের ঘাড়টি পরিবার সমেত থাকবে অক্ষুন্ন।

অথচ, যার সাথেই কথা হবে, সেই বলবে, তারা পরিবর্তন চায়, উন্নতি চায়, সমাজের, পরিস্থিতির, দেশের। নিজেরা যদি এক চুলও পরিবর্তিত না হয় তাহলে পরিবর্তন আসবে কোথা থেকে? কে আনবে পরিবর্তন, শেখ হাসিনা, বারাক ওবামা না দেশের সরকারী কর্মচারীরা?

পরিবেশ, পরিচ্ছন্নতা, শিশুদের সুকুমার মানসিকতার চর্চা, আটিজান সবই ব্যর্থ এদেশের মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে।

 13/09/2016



স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি বাংলাদেশে যতটা সংগঠিত, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন তার সামান্য যদি আমাদের ক্ষমতাসীন দল, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী কিংবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর থাকতো

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সবচেয়ে সোচ্চার ছিলো,“ব্লগার”রা। শাহবাগ আন্দোলনের হোতাও তারা। স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি’র প্রথম নির্মম নিশানা ও হন তারা ই, “থাবা বাবা মানে রাজীব”কে দিয়ে শুরু। শত্রু পক্ষ অন্তত জানতো, কোথায় মারলে মেরুদন্ড ভাঙবে, তারা সফল হবে, যেমন জানতো একাত্তরে বুদ্ধিজীবি হত্যার পরিকল্পনার সময়, সাথে রটনা তোলেন, নাস্তিক ব্লগারদের, মুক্তচিন্তার মানুষদের খুন করা জায়েজ। মরতে মরতেও ব্লগার’রা বার বার সতর্ক করে গেছে, এ রক্ত গঙ্গা এখানেই থামবে না, আজকে আমি শিকার হলে কাল আপনিও হতে পারেন।

ব্লগারদের লেখা যাচাই করা হয়েছে, খুন’কে বৈধতা দানের চেষ্টা করা হয়েছে দেশের সর্বোচ্চ মহল থেকে দেয়া হয়েছে অনুভূতির দোহাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবাই ঝাপিয়ে পরেছিলো, লেখো কেন? কেন লেখো? সাতান্ন ধারা আনা হয়েছে মুক্তি চিন্তা রোধ করার জন্যে। প্রতিরোধের চেষ্টা করেন নি, এমন কি বুঝতেও চেষ্টা করেন নি এই আক্রমন এখানেই থেমে থাকবে না জনপদ বিপন্ন হবে, বিপদগ্রস্ত হবেন তারা ও সত্যকে বার বার অস্বীকার করেছেন, সমস্যা কে পালন করেছেন, সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ভোটের হিসেব কষে গেছেন, গেছেন মৌলবাদীদের তোষন করে ছোট চারাকে আলো, জল, সার দিয়ে বটগাছ বানিয়ে ফ্রাঙ্কেস্টাইন এর কবলে পরেছেন তাদের পরিকল্পনা – ফাঁদ কে যদি বুঝতে পারতেন তাহলে হয়ত প্রতিকারের কথা ভাবতেন, কিন্তু নয় দেশের প্রধান থেকে জনগন সবাই এই ফাঁদে পা দিয়েছে।

আতিয়া মহল, আটিজান তুমি কোন অনুভূতির নাম? লেখায় যাদের অনুভূতি এত আহত হয়, রক্তে তাদের কোন ভ্রূক্ষেপ নেই কেন? রক্ত দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে আজ এ দেশের মানুষ তাই অনুভূতি কাজ করে না, না? কিছুতেই আর কারো কিছু আসে যায় না। সেখানে নিরীহ যে মানুষ গুলো প্রাণ দিলেন তাদের কি কি খতিয়ে দেখা যায় মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী?

বলি ও অনুভূতি আর ক’জন মানুষ গেলো হারিয়ে
জনগন আর মন্ত্রীরা দেখলো সব দাঁড়িয়ে


২৮/০৩/২০১৭



নেদারল্যান্ডসে থাকি শুনলে আগে লোকে জিজ্ঞেস করত, ওখানে নাকি লোকে রাস্তা ঘাটে গাঁজা খায়। সব রাস্তায় নাকি রেড লাইট এরিয়া। বিনয়ের সাথে বলতে হতো, আমি দেখিনি কখনো। আমি জানি না। নেদারল্যান্ডস বসবাসের প্রায় বছর আটেক পর জেনেছি, ক্যাফে মানে গাঁজার আড্ডা। নির্দিষ্ট এলাকায় থাকে আর নির্দিষ্ট বয়সের পর থেকে সেখানে মানুষ প্রবেশ করতে পারে। এমন কি এখানে সুপারমার্কেটেও অল্প বয়সীদের কাছে সিগ্রেট-ওয়াইন বিক্রি করা হয় না।

অবস্থা এখন পরিবর্তন হয়েছে। আজকাল অনেকেই জিজ্ঞেস করে, ওখানে নাকি অপরাধীর অভাবে জেলখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছেকথা সত্যি, বেশ কয়েকটা জেলখানা বন্ধ হয়ে গেছে, সামনে আরো যাবে। এভাবেই সবাইকে টাইট দিয়ে সোজা করে রেখেছে সরকার। তার ও মজা, ডান আর বাম মিলেও কোয়ালিয়েশান করে মাঝে মাঝে সরকার বানাতে হয়। প্রায় কোন সরকারই পাঁচ বছরের টার্ম পূর্ণ করতে পারে না, কোয়ালিয়েশান ভেঙ্গে সরকার ভেঙ্গে যায়। বিনা সরকারে দেশ চলে আবার কয়েক মাস।


নেদারল্যান্ডস ইউরোপের মোটামুটি নামকরা নাস্তিক দেশ। চার্চকে সিনেমার শুটিং এর জন্যে ভাড়া দেয়া হয়, স্কুল, লাইব্রেরীর কাজে লাগানো হয় এমন কী অস্থায়ী বাস স্থান করেও মানুষদের থাকতে দেয়া হয়। অথচ কোমল প্রাণ ধর্মপ্রাণ দেশের হিসেব পুরোই আলাদা। সেখানে আইন করে পর্ণ দেখা বন্ধ করতে হয়। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়, বাচ্চা বয়সী ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়ার জন্যে আইন করতে হয়। অনেক কিছুই করতে হয় “ধর্মে”র আড়াল নিয়ে। সেই “ধর্ম” নিয়ে কথা বলতে গেলেই আবার বিরাট অংশের লোকজন তেড়েফুঁড়ে এসে ধরবে, “ধর্ম” ঠিকই আছে, এর অপব্যখা আর অপব্যবহার হচ্ছে। যে জিনিসের এতো যথেচ্ছ অপব্যবহার আর এতো সহজে অপব্যাখা হয়, সেই “জিনিসটা” ঠিক হয় কি করে, সেটা কেউ তলাতে চায় না। অপরাধেঅমানবিকতায় পুরো জাতিটা নিমজ্জিত কিন্তু তারকারণখোঁজা বারণ

জঙ্গীদের কোন ধর্ম নেই – জঙ্গীরা নাস্তিক? তাহলে তাদের ধরে ফাঁসি দেয়ার আন্দোলন হচ্ছে না  কেন? বাংলার মাটিতে নাস্তিকদের জায়গা নেই কিন্তু জঙ্গীদের তো বেশ আছে দেখা যাচ্ছে।

বোনাসঃ আরভিন বাবা সেদিন ফোনে একটা জোক্স শোনালোঃ
সোলজার দৌড়ে এসে বলছে, ক্যাপ্টেন, সর্বনাশ হয়ে গেছে ভাল মানুষ আর খারাপ মানুষ সব এক সাথে মিশে গেছে আমি কীভাবে এখন খারাপদের আলাদা করে করে মারবো?
ক্যাপ্টেন ঠান্ডা গলায়  জবাব দিলো, শ্যুট দেম অলগড উইল শর্ট দেম আউট


৩১/০৩/২০১৭


রাত তিনটে অব্ধি দুই বোন বন্ধু গুটুর মুটুর গল্প, খিক খিক হাসি চালিয়েই যাচ্ছে। সারা পৃথিবী’র কথা তাদের শেষই হয় না।
গল্প করতে করতে এক প্রসঙ্গে একজন বললো, আচ্ছা, বয়স হলে মানুষ এরকম বিচিত্র আচরন করে কেন?
আর একজন খুবই আত্মবিশ্বাসের গলায় বললো, ভীমরতি, আপু ভীমরতি।  
অন্যজন খুবই দুঃখিত গলায় বললো, আমাদেরও তো বয়স হচ্ছে, আমাদেরও কি তবে ভীমরতি হবে? আমরাও কি এমন উলটোপালটা করবো।
সে দৃঢ় গলায় বললো, না আপু, কখনোই না।
অন্যজন আশ্বান্বিত কন্ঠে বললো, তাই? কিভাবে এতো নিশ্চিত হলে?

তারচেয়েও ইস্পাত কঠিন গলায় সে নিশ্চিত করলো, আমাদের ভীমরতি হয়েই আছে, এরচেয়ে বেশি ভীমরতি হওয়ার আর কোন সুযোগ নেই।

১১/১১/২০১৭ 


দুই বাংলা’র প্রাত্যহিক জীবনে ভাষা রীতি (প্রমিত নাকি কথ্য), খাদ্য রীতি (পোস্ত আর কালো জিরার বাড়াবাড়ি না পেয়াজ-রসুনের কড়াকড়ি), মেট্রো-ট্যাক্সি-টানা রিকশা না সি,এন,জি, সাইকেল রিক্সা আর সীটিং বাস সার্ভিস এ রকমের বহু জিনিসে বহু পার্থক্য থাকলেও সংস্কৃতি, কৃষ্টি, রীতি রেওয়াজ, ঐতিহ্য এবং ধর্ম রক্ষার মৌলবাদি মানসিকতার সাদৃশ্য কিন্তু লক্ষ্যনীয়।
কখনো কোন মেয়েকে কোন বখাটে যুবক উত্ত্যক্ত করার অপরাধে শুনেছেন কোন মুরুব্বী রাস্তায় বা বাসে এগিয়ে এসেছে? কোন মেয়েকে নির্যাতন করার সময় তারা কি আদৌ বাড়ি থাকে? কোন মেয়ে ধর্ষিতা হলে তাদের পাওয়া যায় ত্রিসীমানায়? ভীড়ে’র মাঝে যখন মেয়েদের গায়ে হাত পরে তখন চাচামিয়া বা কাকাবাবু’রা কোথায় থাকে?
উল্টো মেয়েদেরই ধরে তারা চার কথা শুনিয়ে দেবেন। সন্ধ্যেবেলা কেন বাড়ি থেকে বেড়িয়েছো? একা বের হও কেন? জীন্স কি মেয়েদের পোশাক? ওড়না কোথায়! সামলে চলতে পারো না।
প্রকাশ্যে দুটো ছেলে-মেয়ে হাত ধরে চলা তাদের চোখে অশালীন, চুমু খাওয়া অপরাধ। এমন কি পার্কে বসে গল্প করলেও তাদের কে পুলিশ ধরতে আসে। ধর্ম, সংস্কৃতি, শালীনতা, সমাজের “নৌকাডুবি” একেবারে যাকে বলে ভরা ডুবি হয় তার। অথচ যত্রতত্র থু থু ফেলা, মলমুত্র ত্যাগ করা, ঘুষ খাওয়া... অপরাধ নয়, চুমু খাওয়া অপরাধ! বিচিত্র সভ্যতাবোধ।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই কথাই বার বার বলতে হয় সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি।
.
ভাবছেন ছন্নছাড়া কি বকে যাচ্ছি! ঐ যে বলছিলুম, পাশের বাড়ি’র ঐ কাকাবাবু’র কথা আর কি। প্রাসংগিক বাকি কথা আছে মন্তব্যের ঘরে।

01/05/2018

Thursday, 5 December 2013

আমার আমি


আমার পরিচিত কাছের মানুষেরা অভিযোগ করেন আমার কাছে, আমি বড় হই না, বাচ্চাদের মতো করি, বয়সটা আমার কোথাও একুশে আটকে আছে। হয়তো পিছনে পিছনে বলেন, আমি যা করি তা হয়তো আমাকে মানায় না। যিনি আমার এই ছেলেমানুষীর সবচেয়ে বেশী ভুক্তভোগী তিনি বলেন, শরীরটা শুধু ডেভেলাপ করেছে, ব্রেইনটা ডেভেলাপ করেনি। তবে তিনিও এটা বলতে বলতে এখন ক্লান্ত হয়ে ক্ষ্যান্ত দিয়েছেন শুধু আমি যেমন ছিলাম তেমনই রয়ে গেছি। সবার অনুযোগের পরেও আজও নিজেকে সামলে সবার আকাঙ্খা অনুযায়ী নিজেকে বড় করে তুলতে পারিনি।

বদলে যাওয়া বড় হওয়া সব কী নিজের হাতে থাকে? সবাই কী চাইলেই নিজেকে ইচ্ছেমতো বদলে ফেলতে পারে? বড় হয়ে যেতে পারে?

অনেকেই বলেন ছোটবেলায় এই লেখকের বই আমার ভীষন প্রিয় ছিল, ঐ গায়ক বা নায়ককে আমার ভীষন ভাল লাগতো। ঐ খাবারটা খুব মজা লাগতো। আমার কোন অতীত নেই, নেই কোন পাষ্ট টেন্স। আমার তখনো যা প্রিয় তা এখনো প্রিয়, তখনো যা আমার ছিল এখনো তা আমারই আছে। আমি কোন কিছুর দাবী ছেড়ে দিতে শিখি না, যা আমার তা একান্ত আমার। আজো রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফুচকা চটপটি আমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষের অনুভূতি দেয়, বসুন্ধরা ফুডকোর্টের দই ফুচকা আমার সে অনুভূতি একটুও কেড়ে নিতে পারেনি। ছোটবেলায় জিতু আঙ্কেলের বা মিঠুন আঙ্কেলের নাচ যে আনন্দ নিয়ে দেখতাম এখনো সেই আনন্দ নিয়েই দেখি, অক্ষয় কুমার কিংবা হৃত্তিক রোশান তার জায়গা ছিনিয়ে নিতে পারেনি। টিনটিন কিংবা ডলুমাসী, টম এন্ড জেরী আজো সেরকমই হাসায় কাঁদায়। যা যা কিংবা যাকে যাকে যতোটুকু ভালবাসতাম তা তা কিংবা তাকে তাকে আরো বেশী ভালবাসি আজো। বেলী কিংবা কাঁঠালিচাঁপার গন্ধ দেহ মনে সেই সময় যে শিরশিরানি আনতো আজো তেমনই আকুল করে। চওড়া পাড় দেয়া ভাজ ভাঙ্গা বাসন্তী রঙের নতুন তাতের শাড়ি, হাতে রঙ বেরঙের লাল হলুদ সবুজ রেশমী চুড়ি, কপাল জুড়ে বড় চাঁদের মতো কালচে লাল টিপ আর ঘাড় গলা খোঁপা জুড়ে জড়িয়ে থাকবে অজগরসম কাঁঠালিচাঁপার মালা। তখনো প্রিয় এখনো প্রিয়।

দাদুর সাথে কতো দিন দেখা হয় না। কবে আবার কোন পৃথিবীতে দেখা হবে, আদৌ দেখা হবে কীনা জানি না। যদিও মনে প্রাণে বিশ্বাস করি শক্তির ধ্বংস নেই আবার হয়তো কোথাও না কোথাও দেখা হয়ে যেতে পারে কোন না কোন রুপে, হয়তো দাদু নাতনী হয়ে নই তবুও তবুও। যাকে মন দিয়ে খুঁজে লোকে তা নাকি পেয়েও যায়। আমি কী দাদুকে ভুলে গেছি? কম ভালবাসি? বড় হওয়া মানে কী ছোটবেলা ভুলে যাওয়া? দাদুর জন্যে মন কেমন করলে কান্না না করা? কতো শীতের রাত লেপের নীচে দাদুর গায়ের ওম নিয়ে কেটেছে সেকি চাইলেই ভুলে যেয়ে বড় হওয়া যায়? নাকি শীতবেলায় সেই স্মৃতি মনে পড়লে দু ফোটা গড়িয়ে পড়া অশ্রুকে বড় হয়ে যাওয়ার অনুশাসনের মাঝে আটকে দেয়া যায়?

আজো শেষ বিকেলের গোধূলির সূর্যের লাল আভায় মন জানি কেমন কেমন করে ওঠে, কার জন্যে কীসের জন্যে জানি না। আজো কোকড়ানো চুলের উস্কো খুস্কো বাদামী তরুন দেখলে মনে রিনিক ঝিনিক সুরের দোলা নাচে, এক পলকের জন্যে হলেও আবার ফিরে তাকাই। এখনো শিমূল মুস্তফার কন্ঠে জয় গোস্বামীর “পাগলী তোমার সঙ্গে” কবিতার আবৃত্তি শুনলে নাম না জানা কারো পাগলী হয়ে যেতে ইচ্ছে করে। আজো সমুদ্রের উষ্ণ নোনা জলে পা ভেজালে ভাষায় বর্ননা করা যায় না এমন অনুভূতি গা ছুঁয়ে মন ছুঁয়ে যায়। কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় এখনো মনে হয় হাত বাড়ালেই আকাশটাকে ছোঁয়া যায়। এখনো মায়ের চুলের তেলের গন্ধ সর্বাপেক্ষা প্রিয়, মন মাতায়। এখনো মিতালী মূর্খাজীর ‘আকাশটাতো নীল চিঠি নয়, জানলা খুলে আমার লেখা পড়বে, মনটা কী আর ময়না পাখি? মনটা কী আর ময়না পাখি সোনার শিকল দিলেই বাঁধা পড়বে” শুনলে মনে হয়, এতো আমার কথা, এতো শুধুই আমার কথা, মিতালী কী আমার কথাই গাইছে?

প্রিয় যা ছিল প্রিয় তাই আছে। কিছুই হারায়নি হয়তো হারাবেও না। সেই জ্বলে ওঠা নিভে যাওয়া জোনাকী পোকা, আমসত্ত্ব, চালতার আঁচার, সারা গায়ে সুর মেখে বৃষ্টিতে ভেজা। না গান না কবিতা না সেই কাউকে নাম না বলা হৃদয় গহীনে লুকিয়ে থাকা মানুষটা, চোখের কাজল কিংবা খোঁপার কাঁটা, তেতুল বনে জ্যোস্না দেখা কিংবা কপালে কারো নামের টিপ আঁকা। প্রিয় থেকে প্রিয়তর হয়েছে সমস্ত কিছু, তালিকাটা দীর্ঘ হচ্ছে দিন দিন এই যা। বড় হওয়া হবে না আমার, হলো না আমার আর

কিন্তু তারপরও কী কিছুই বদলায়নি? সবার চাহিদামতো বড় হয়তো আমি হয়ে উঠতে পারিনি কিন্তু খানিকটা বদলে আমি নিশ্চয় গেছি। কারো নজরে সেটা না পড়লেও মাঝে সাঝে যখন অনেক ব্যস্ততার ফাঁকে একটু অবসরে নিজের দিকে ফিরে তাকাই, খুলে দেখি নিজেকে, কোথায় সেই পুরনো আমি? কিছুটা রুক্ষ আর অনেকটাইতো বদলে যাওয়া আমি।

তানবীরা

০৫/১২/২০১৩

Monday, 28 October 2013

জীবন থেকে নেয়া (চোর নিয়ে মেঘাডেট)

আজকে “আমরাবন্ধু”র জন্মদিন। বিগত যৌবনা এই ব্লগটাতে পারতে কেউ আজকাল আর উঁকি দেয় না। শুধু যারা মায়া কাটাতে পারে নাই তারা মাটি কামড়ে পড়ে আছে। হ্যাপি বার্থডে এবি, অনেক অনেক হাসি খেলার – আলোর বেলা কেটেছে এখানে। ভাল না থাকো, টিকে অন্তত থাকো।
প্রথমে সেদিন চোর এলো আমাদের বাড়িতে তারপর পুলিশ। ঘটনাটা এরকম, বুধবারে বাবা মেয়ে বাড়ি ফিরেছে এবং যথারীতি একজন টিভি আর একজন ল্যাপটপের মধ্যে ঢুকে গেছে। আমি বাড়ি ফিরে খুব তাড়াহুড়া সব গোছাচ্ছি আবার বেরোতে হবে, আমাদের খুব কাছের বন্ধু একবছর আগে মারা গিয়েছেন, তার সেদিন মৃত্যুবার্ষিকী। মেঘকে ওপরে পাঠিয়েছি রেডী হতে। বাগানের দরজার নবটা দেখি অর্ধচন্দ্র। মুচড়ে আছে ঠিক অর্ধেক মাপে।
মেয়ের বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি বাইরে গিয়েছিলে, বললো না।
আমি বললাম তাহলে এমন হলো কি করে লক?
তিনি বললেন, মেঘ হয়তো বাইরে গিয়েছিলো।
মেঘ নীচে আসতে আমি জিজ্ঞেস করলাম, সে বললো, নাতো মা, আমি যাইনি।
আমি বললাম তাহলে কি চোর এলো নাকি।
বললেও ভাবার সময় নেই এখন প্রায় সাতটা বাজে, বেরোতে হবে। কেউ গা করলো না।
বেরোতে যাবো সেই মুখে প্রতিবেশী এলেন। তার আগের দিন খুব বৃষ্টি হয়েছিল। ময়লা যাওয়ার পাইপ নাকি ভরে আছে, পরিস্কার করার লোক ডাকবে। দুই বাড়ির যেহেতু লাইন একটাই তাই পয়সা ভাগাভাগি করতে হবে সমান সমান। আমরা বললাম করবো, তুমি ডাকো লোক। সে তবুও পিছনে যেতে চাইলো, অগত্যা বাগানের দিকের দরজা খোলা হলো। দরজা খুলতে পারছে না কারণ লকের অবস্থা বারোটা। কোনরকমে খুলে দেখা গেলো, সাইকেল গ্যারেজ, বাগানের দিক থেকে বাইরে যাওয়ার দরজা, এবং মেইন দরজার পিছন দিকে ভেঙ্গেচুরে চুরমার করে রেখে গেছে। আমাদেরতো খবরই নেই।
মেঘ যারপর নাই আনন্দিত। নিরিবিলি জীবনে একটি এ্যাকশানধর্মী ব্যাতিক্রমী ঘটনা। আনন্দে দৌড়ে একবার বাবার কাছে যায়তো আমার কাছে আসে। আমিতো ধরি নাই, আমিতো জানি কিভাবে লক খুলতে হয়, আমিতো করি নাই, ওটা চোর করেছে। আমি তোমাকে সত্যি বলছি।
ওর বাকবাকুমের জ্বালায় আমি আর ওর বাবা কথা বলতে পারছি না। পুলিশ, ইন্স্যুরেন্স সব ফোন করতে হবে। আবার ঐদিকে যাওয়াও জরুরী, কারো জন্মদিন না যে, না করে দিবো। আমি যখন ধৈর্য্যহারা পয়েন্টে পৌঁছেছি আবার মুখ খুললে চড় দিবো, তখন আসল কথা পেট থেকে বের হলো।
মা, আমি ওখানে সবাইকে আর কাল স্কুলে সবাইকে বলতে পারি, আমাদের বাড়ি যে চোর এসেছিল। প্লীজ মা প্লীজ, প্লীজ।
অনেকসময় আমি বলি, এটা আমাদের প্রাইভেট ব্যাপার স্কুলে বা কারো সাথে গল্প করবে না তাই আগে থেকে সাবধানতাঃ।
আমি বললাম, ঠিকাছে।
আহা কি আনন্দ তার ঝরে গলে পড়ছে। এতো বড় রোমাঞ্চকর ঘটনা তাদের বাড়িতে।
বাড়ি ফিরে এসে পুলিশকে ফোন করেছি, তারা আসছেন। ফিল্মীধারা বজায় রেখে প্রথমে চোর তারপর পুলিশ।
মেঘ উত্তেজনায় ওপরে যেতে পারছে না, রাত বাজে দশটা। আমি বললাম, আসুক পুলিশ, দেখুক, কোন বাচ্চা হল্যান্ডে এতোক্ষণ জেগে থাকে। আমি কিচেনে পরদিনের লাঞ্চ বানাচ্ছি, এমন সময় কলিং বেল বাজলো, দেখলাম চারশো মিটার স্পীডে কি জানি নীচের থেকে সিড়িতে ওপরে গেলো। পুলিশ এসেছে আর বান্দা ওপর থেকে নীচে নামে না। অন্যদিন কাপড় বদলে ব্রাশ করে শুতে কমসে কম ত্রিশ মিনিট সময় লাগে আর সেদিন পাঁচ মিনিটে ওপরের লাইট অফ!!!।
পুলিশ এমন বস্তুর নাম।
চোর অবশ্য আমার মনোজগতেও অনেক ওলট পালট ঘটিয়ে দিয়ে গেছেন। চোরের কারণে আমার সারাক্ষণ চোর সংক্রান্ত গান কবিতা মাথায় আসতে লাগলো। এই চোর যায় চলে, এই মন চুরি করে ......... কিংবা চুরি করেছো আমার মনটা এই টাইপ। তারচেয়ে ভয়াবহ যাতে চোর নেই তাও চোরা চোরা রুপে ধরা দিতে লাগলো। বাসায় মেইল করেছি, ঘরেতে চোর এলো গুনগুনিয়ে .........
বন্ধু ধ্রুব আগে বলতো, মাথায় কিরা ঢুকছে, আসলে মাথায় কিছু গেঁথে গেলে, কিরা ঢুকার মতোই
চোর একবারই এসেছিল নীরবে
আমারই দুয়ারও প্রান্তে
সেতো হায় মৃদু পায়
এসেছিল পেরেছিতো জানতে
সে যে এসেছিল বাতাসতো বলেনি
হায় সেইক্ষণে এ্যার্লাম মোর চলেনি
তারে সে আলোতে চিনতে যে পারিনি
আমি পারিনি কিলায়ে তারে মারতে
পৃথিবীর সকল চোরকে আমার ওপরের চোরাসাহিত্য খানা উপহার দিলাম।
মেঘ অনেক দুঃখী মুখ করে আমাকে শুক্রবারে বলল, আম্মি পরীক্ষা কেন হয়?
আমি বললাম, ঠিক করে পড়েছো কীনা সেটা জানতে হবে না?
আমরাতো ক্লাশে পড়ি, টীচারতো দেখে, ওকি আমাদেরকে তাহলে বিশ্বাস করে না?
পড়লে পরীক্ষা দিতে সমস্যা কি?
আমার ভাল লাগে না
তুমিতো ঠিক করে পড়ো না তাই ভাল লাগে না, যারা ঠিক করে পড়ে তাদের নিশ্চয় ভাল লাগে না।
কারো ভাল লাগে না আম্মি, কারো ভাল লাগে না। আমি একদম সত্যি বলছি
তাই নাকি? কেন ভাল লাগে না?
আমাদের স্ট্রেস হয় আর স্ট্রেস শরীরের জন্যে ঠিক না।
মেঘের বাবা যেদিন দেরী করে অফিস থেকে ফিরেন, মেঘ অনেক গোপন সুখ দুঃখ মায়ের সাথে ভাগাভাগি করেন।
রোজ ভোরে উঠতে অনেক কষ্ট হয়, তাই না আম্মি।
হুম
বড় হওয়া অনেক কষ্ট। এরপর রোজ ভোরে উঠে চাকুরীতেও যেতে হবে। জীবনে আসলে আনন্দ কিছু নেই।

যুদ্ধ কান্না শিশু আর আমাদের রাজনীতি

মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটি থেকে অনেক শিশুকে ইউরোপে দত্তক পাঠানো হয়েছিল। ডেনমার্ক, নরওয়ে, ফ্রান্স, সুইটজারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক “যুদ্ধ শিশু” বা “ওয়ার চাইল্ড” দত্তক এসেছে। তাদের বেশীর ভাগের বয়স এখন চল্লিশের কিছু ওপরে কিংবা কিছু নীচে। অনেকেই পড়াশোনা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পর থেকে ধরা যাক ত্রিশ কিংবা মধ্য ত্রিশ থেকে নিজের শিকড় খুঁজে ফিরছেন। কেউ কেউ কাউকে খুঁজে পান, কেউ কেউ বিফল হন। কারো বায়োলজিক্যাল বাবা মা বেঁচে আছেন কিংবা দুজনের একজন আছেন কারো কারো কিছু নেই।

খুঁজে পাওয়ার পর? বায়োলজিক্যাল বাবা মা নিতান্ত গরীব। রিকশা চালক, চায়ের দোকানে কাজ করেন ইত্যাদি। এপারে ছেলেমেয়ে বেশীর ভাগই উচ্চশিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত। তারা বাংলা বলতে পারেন না। বাবা মা ইংরেজী বলতে পারেন না। তখন কাউকে চাই যে দুজনের মাঝে সেতু গড়বে। মাঝে মাঝে আমি তাদের সেতু হই। বেশীর ভাগ বাবা মা, ভাইবোন কথা বলতে পারেন না, কাঁদেন বেশী আর ছেলেমেয়েরা পাথর মুখ করে তাকে নিয়ে বাবা মা, ভাইবোনদের সুখ কিংবা দুঃখ স্মৃতি শুনতে চান। ডাচ প্রকৃতির কারণে এরা কাঁদেন কম কিংবা শিশুকাল থেকে কেঁদে কেঁদে পাথর এখন। এতো আবেগী ঘটনায় জড়িয়ে কি খুব নির্লিপ্তভাবে কাজ করা যায়? একজন একপাশে ফোনে কাঁদেন আর একজন অন্যপাশে স্কাইপে উৎসুক চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকেন। কি বললো আমার কথা? কি বললো? পড়াশোনা না জানা বাবা মা, ভাইবোনদের ভাষা নেই আছে বোবা কান্না। আর উচ্চশিক্ষিত এপারে সন্তানটির অনেক ভাষা চাই, জানার আঁকুতি দিনরাত তার সেখানে সে কেমন ছিল? কি খেয়েছিল সে, কি খেলতো? কি তার ভাল লাগতো? কে তাকে বেশি ভালবাসতো? ভাষান্তর তখন অনেক কঠিন। ভেবে ভেবে বের করতে হয় সন্তানকে মা কি বলতে পারেন।


চল্লিশ বছর নীড় খুঁজে ফেরা বৃন্তচ্যুত মানুষেরা এখনো কেঁদে যাচ্ছেন। এরপর যখন কেউ বলেন আপনারা “গনহত্যা” করিয়েছেন, আপনাদের মুক্তিযোদ্ধারা মানুষ মেরেছে তখন তাদেরকে ঘৃনা করার মত ঘৃনাটুকুও আর অবশিষ্ট থাকে না। 

Thursday, 29 August 2013

নৈতিকতা নিয়ে আমার ভাবনা গুলো

মুক্তমনায় এখন লেখালেখি চলছে, সামনের বইমেলাতে প্রকাশিতব্য আমাদের বই “ধর্ম ও বিজ্ঞান, সংঘাত নাকি সমন্বয়”কে কেন্দ্র করে। একটি বিশেষ বিষয়কে ঘিরে সবাই তার পক্ষের - বিপক্ষের যুক্তি তুলে ধরছেন, নানা বড় বড় মনীষী, গবেষকদের উদ্ধৃতি দিচ্ছেন যার যার নিজের লেখাতে। এর মধ্যে অবধারিত ভাবেই হয়তো একটা কথা বার বার চলে আসছে, ধর্ম মানুষের কি কাজে লাগে , ধর্মের প্রয়োজনীয়তা এবং উপকারিতা। এই লেখা গুলো পড়ার পর যখন নিজে নিজে সেগুলোকে নিয়ে ভাবি আর নিজের প্রতিদিনের জীবনের চারপাশটা মিলিয়ে দেখতে যাই, প্রায়শই একটা জিজ্ঞাসা মনে খেলে যায় । কোনটা তাহলে সত্যি? একটা জিনিস একই সাথে কালো এবং সাদা দুটো হতে পারে না, জিনিসটি হয় কালো নয় সাদা। নাকি আমরা চরম স্বাভাবিক সত্যকে মেনে নেয়ার মতো সাহস নিজেদের মধ্যে সঞ্চয় করতে পারি না, নিজেদের মানসিক দুর্বলতাকেই ধর্মের আবরনে মুড়ে নেই? আর বার বার কন্যা দায়গ্রস্ত পিতার মতো কালো মেয়েকে উজ্জল শ্যাম বর্ন বলে চালাতে চাই, ব্যাপার তাই কি ? আমার চিন্তা ভাবনাই কি ধোয়াশা নাকি আমিই ঠিক বিষয়টি বুঝতে পারছি না। আমার এই লেখা অনেকটা আমার আত্ম জিজ্ঞাসা। এতে শুধুই আমার মনের ভাবনা গুলো যেগুলো অনেক সময়ই জট পাকিয়ে যায় তাই লিখছি। এতে কোন মনীষীর কিংবা গবেষকের উদ্বৃতি নেই, আছে সাধারন একজন মানুষের তার চারপাশ অবলোকন করা আর তার দ্বিধাগ্রস্ত মনের এলোমেলো ভাবনা।
অনেকেই তাদের লেখায় ধর্মের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, মানুষের মধ্যে নৈতিকতা সৃষ্টির জন্য ধর্মের প্রয়োজন আছে। সত্যিই কি তাই? কি সেই ধর্ম বিশ্বাস যার থেকে নৈতিকতা উৎপন্ন হয়ে এমন চরমে চলে যায় যে একজন মানুষ অন্য একজন মানুষের গলায় ছুরি চালিয়ে দিতে দ্বিধা বোধ করেন না? কোন সেই নৈতিকতার কারনে প্রত্যেক ধর্মের ধর্মপ্রাণ লোকেরা অন্য আর ধর্মের ধর্মপ্রাণ মানুষের বাসায় জলগ্রহন করতে দ্বিধা বোধ করেন? একজন ধর্মপ্রাণ ব্রাক্ষণ কিছুতেই কোন হাজী মওলানার বাড়ীতে খাদ্য দ্রব্য স্পর্শ করবেন না, যেমন করবেন না একজন মওলানাও একজন ব্রাক্ষণের বাড়ীতে। অথচ দুজনেই যার যার ধর্মের মহারথী, দুজনেই নৈতিকতার ধারক এবং বাহক। এতে নৈতিকতাই বা কোথায় আর ধর্মই বা কোথায়? এটা কি তাদের প্রতি সৃষ্টি কর্তার কিংবা সৃষ্টি কর্তার প্রতি তাদের অনাস্থাই প্রমাণ করে না? মানুষকে ঘৃণা করা, একজন মানুষের প্রতি আর একজন মানুষের অবিশ্বাস ও সন্দেহই কি ধর্ম আর নৈতিকতা?
ধর্ম থেকে আসা নৈতিকতার কিছু উদাহরণঃ আমি এখানে আমার চোখে দেখা ধর্মের নৈতিকতা নিয়ে আমার ভাবনা গুলো লিখবো। বাংলাদেশ অত্যন্ত গরীব দেশ হওয়াতে আমাদের দেশের লোকের সর্বপ্রথম যে চিন্তাটা থাকে তাহলো যেনতেন প্রকারে নিজের এবং ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য যতো দ্রুত এবং যেকোন উপায়ে সম্ভব আখের গুছিয়ে ফেলা। অন্ততঃ জলপাই সরকার এসে অনেক রথী মহিরথীর বাড়ি থেকে যে হারে রিলিফের টিন উদ্ধার করেছেন তাতে এ ব্যাপারে অন্তত কারো দ্বিমত থাকার কথা না। যার যতোই থাকুক না কেন সোনার চামচে যেনো নিজের সন্তান খেতে পায় তার সুবন্দোবস্ত নিশ্চিত করে যেতেই হবে। যার যার সার্মথ্যনুযায়ী সে সে হাত বাড়ায়। মসজিদের শহর ঢাকা, সুমধুর আজানের ধ্বণিতে চারপাশ অনুরণিত সারাবেলা। মুসলমানদের দ্বিতীয় মহামিলন এজতেমা হয় এই দেশে। যে দেশের প্রায় নব্বই ভাগ লোক চূড়ান্ত ধর্মপ্রান সে দেশ দুর্নীতিতে ডাবল হ্যাট্রিক !!! এটাকে কি চোখে দেখবো? এই রঙের নাম কি কালো না সাদা? নাকি ছাই বর্ন এটাকেই বলব?
চরম দারিদ্রতার কারণে বাংলাদেশের একটা বিরাট জনগোষ্ঠী, সে যে উপায়েই হোক বিদেশ পাড়ি জমান। দুর্ভাগা বাংলাদেশের চরম হতভাগা লোকগুলো সোনার হরিণের পিছনে বাবা - মায়ের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে ছুটে আসে নিজের তথা পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায়। বারো থেকে ষোল লক্ষ টাকা ব্যয় করে এসে যখন দেখে হরিণ গলিয়ে সোনা বের করে নেয়া হয়েছে বহু আগেই তখন তারা স্তব্ধ হয়ে যান। পিছনের সব ইতিহাস ভুলে যেয়ে, বাংলাদেশে কি করতেন, কি পড়তেন সেই দিন খাচায় তুলে রেখে, সেই টাকা উদ্ধারের জন্য যে কোন কাজ পান তাতেই ঝাপিয়ে পড়েন। এরমধ্যে সবচেয়ে সহজ লভ্য কাজ হচ্ছে কোন ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্টে ঢুকে পড়া। ধার্মিক দাড়িওয়ালা, ক্ষেত্রবিশেষে টুপিওয়ালা মালিকরা তাদেরকে কখনো কখনো থাকা খাওয়ার জন্য কিছু দেন, অনেক সময় শুধু কাজের সুযোগটাই দেন, টিপসের টাকাই এলাহী ভরসা। আজকাল যেহেতু অবৈধ অভিবাসীদের উপরে বিদেশীরা খুবই ক্ষ্যাপা, অবৈধ কাউকে কাজে রাখা যে কারো জন্যই দশ নম্বর মহা বিপদ সঙ্কেত। তাই অবৈধ অভিবাসীদের কাজের ক্ষেত্র সীমিত হওয়ায় মাঝে মাঝে অনেক মালিক কৈফিয়ত দেন যে, এতো রিস্ক নিয়ে যেহেতু রেখেছি, পয়সা বেশি দিতে পারব না। অসহায় ছেলে গুলো কাগজ হলে একটা হিল্লা হবে এই আশায় বুক বেধে সেটাই নীরবে মেনে নেয়।
একশ্রেণীর ধর্ম পেশা লোকজন যে থালায় খাচ্ছে, সেই থালাকেই ফুটো করে যাচ্ছেন অবিরত। প্রথমতঃ অবৈধ একজনকে আশ্রয় দিচ্ছে, সরকারের বিরুদ্ধে যেয়ে। অবৈধভাবে তার শ্রমকে অপব্যবহার করছে এবং সরকারকে প্রতিনিয়ত শুল্ক ফাকি দিচ্ছে। যে শুল্ক দ্বারা সবার সন্তানদের স্কুল - কলেজের খরচা আসবে, অসুস্থদের ভাতা আসবে, গৃহহীন কারো গৃহের ব্যবস্থা হবে, কর্মহীন কারো মাসিক ভাতা আসবে, সব কিছুর উৎস এই শুল্ক। একসাথে কতোজনকে ফাকি দিচ্ছে তারা? সৃষ্টিকর্তা, সরকার, বিবেক ???
কিন্তু এই তারাই আবার সরকারের কাছে আবেদন - নিবেদন করে রবিবারে বাচ্চাদের ধর্ম শিক্ষার জন্য সরকারের কাছ থেকে বিনা মূল্যে মিলনায়তন সহ ইমামের বেতন আদায় করছেন। এর মধ্যে ধর্ম কোথায় আর নৈতিকতা কোথায় ? কিসের মূল্যবোধ তারা তাদের সন্তানদেরকে তথা সমাজকে উপহার দিচ্ছেন? ঠিক আছে কাফের সরকারকে ঠকাচ্ছে, কাফেরদের প্রতি কোন মূল্যবোধের বা বিবেকের দরকার নেই, কিন্তু দেশী ভাইদেরকে ঠকানোর পেছনে কি যুক্তি? এদের অনেকেই প্রায় প্রতি বছর পরিবার নিয়ে হজ্বব্রত পালন করে আসেন, তারপর আবার অনেক সময়ই শোনা যায় এই রেস্টুরেন্ট মারামারি হয়েছে কারণ পাচ বছরের দিন রাত খাটা পয়সা না দিয়ে বরং সেই শ্রমিককে পাওনা টাকা দেয়ার ভয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে, শ্রমিককে পুলিশে দিয়ে, মালিক হজ্বে !!!! জামিনে বেরিয়ে এসে তখন দেখা যায় সেই শ্রমিক মালিককে মারতে গিয়েছে, এদের সবাই কিন্তু ধার্মিক। এই রেষ্টুরেন্ট মালিকরা প্রায় প্রত্যেকেই প্রাথমিক অবস্থায় একদা শ্রমিক ছিলেন যারা পরবর্তী জীবনে মালিক হয়েছেন। শ্রমিক অবস্থায় তারা যে যন্ত্রণা ভোগ করেছেন, মালিক হয়ে তারা অন্যদেরকে সেই একই জিনিস ফিরিয়ে দিচ্ছেন, জীবন থেকে কি শিখেছেন তবে তারা কিংবা ধর্ম থেকে?
আজকাল আবার আর একটা ব্যাপার থাকে। মদ বিক্রি না করলে রেষ্টুরেন্ট চালানো যাবে না, আবার হাজী সাহবে মানুষরা মদ বিক্রি করতে পারবেন না। সামাজিক একটা ইয়ে ইয়ে ব্যাপার এসে যায়। তাই মালিকরা প্রত্যেকেই বয়ান করে থাকেন মদ বিক্রির পয়সা তারা খাবার বিক্রির পয়সা থেকে আলাদা রাখেন। কারন এটা হালাল না। এটা দিয়ে তারা কর্মচারীদের বেতন দেন। এখন, প্রথমতঃ যখন কেঊ বিল দেন, তখন তারা নিশ্চয়ই মদের টাকা আর হালাল খাবারের টাকা আলাদা করে দেন না। তারা তাদের কষ্ট করে উপার্জন করা হালাল টাকাতেই পাওনা পরিশোধ করেন। আর দ্বিতীয়তঃ যে ছেলে গুলো হাত পুড়িয়ে রেধে খাওয়াচ্ছে তারা হালাল পরিশ্রম করে তাহলে হারামের টাকায় বেতন নিচ্ছে!!!! যিনি কর্মচারীদেরকে হারাম বেতন দিচ্ছেন, তার বিবেক কিসের উপর ভর করেছে? এট কি ধর্ম না তার থেকে উৎপন্ন হওয়া নৈতিকতা?
পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে মানবিক অধিকার যাতে খর্ব না হয় এবং মানুষের জীবন যাত্রার মানের সমতা রাখতে বিভিন্ন ধরনের ভাতার প্রচলন আছে। এই ভাতার মূল উদ্দেশ্য থাকে দুর্বলদেরকে রক্ষা করা, তাদের নূন্যতম মানবিক প্রয়োজনগুলো মেটানো। প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাদের প্রত্যুৎপন্নমতি বুদ্ধির দ্বারা সরকারের সাথে টম এন্ড জেরীর হাইড এন্ড সিক গেম খেলে সারা বেলা। এমন কোন ভাতা নেই যা সরকারের কাছ থেকে তারা আদায় করেন না। এমনকি তালাকপ্রাপ্তা ভাতাও। আইনতঃ তারা বিবাহ বিচ্ছেদ করেন এবং ধার্মিক মতে বিবাহিত থাকেন। এই ভাতা কিন্তু খুব একটা সামান্য নয়। অনেকে এই টাকায় ঢাকায় গুলশানে, বারিধারায় তিন হাজার স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট পর্যন্ত কিনে নেন দু’বছরে। যদিও কাফের সরকারের এই পয়সাযে তাদের জন্য হালাল সেটা তারা কোরানের আয়াত, সুন্নাহ, ফিকাহকে ডলে পিষে বুঝিয়ে দিয়ে ছাড়বেন। ধর্মের মাধ্যমে নৈতিকতা শিক্ষার কি চরম উদাহরণ!!! তদুপরি বলব, যখন একজন অধার্মিক লোক চুরি করেন, তাকে নিয়ে উচ্চ বাচ্য করার হয়তো তেমন কিছুই নেই, তার জন্য হয়তো অন্যদের দৃষ্টিকোন থেকে সেটাই স্বাভাবিক। সে কোন কিছুর আড়ালে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করে না। কিন্তু একজন ধর্মপ্রান সমাজ স্বীকৃত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী ব্যাক্তি যখন চুরি করে তখনতো ধর্মের দিকে অঙ্গুলী উঠবেই, ধর্ম আধারিত নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হবেই স্বাভাবিক নিয়মে। প্রার্থনার ব্যাপারটি নিয়ে ধার্মিকরা সারাক্ষন মাতামাতি করেন। তারমানে কি এই ধরে নেয়া যায় না, অন্যায় করেন বলেই বারবার কারো কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন আসে? যদিই অন্যায়ই না করেন, দুর্বলতাই না থাকে, তবে কিসের ক্ষমা চাওয়া? নিজেরা দুর্বল বলেই সারাক্ষন কারো আজ্ঞাবহ হওয়া কিংবা কারো উপড় নির্ভর করার ব্যাপারটা আসে।
আমার বিশ্লেষণে দুই ধরনের ধার্মিক আছে। এক ধরন হলো সাদা মাটা ধার্মিক। তারা কিছু না জেনে না বুঝেই ধার্মিক কিংবা বাবারেও করতে দেখছি তাই আমিও করি টাইপ। এই শ্রেণীর এমন অবস্থা বাবারও দশ খানা ছেলে পুলে ছিল তাই নিজেরাও সেই খাতায় নাম দিতে থাকে। যতক্ষণ না ডাক্তার এসে থামান স্বাস্থ্যগত কোন কারণ দেখিয়ে। এদেরকে আমি ঠিক ধার্মিক বলি না, বলি প্রথা পালনকারী, জিজ্ঞাসাহীন এক ধরনের আজ্ঞাপালনকারী বাহন। দ্বিতীয় দল হলেন আসল দল, মুখে দুনিয়া কয় দিনের কিন্তু কাজে সেই দুনিয়ার জন্য এমন কোন কর্ম নাই যা তারা করবেন না। সব জিনিসের একটা ধর্মভিত্তিক ব্যাখা তাদের কাছে পাওয়া যাবে। যেকোন জিনিসকে ধর্মের আলোকে তারা আলোকিত করে ফেলেন। নিজেদের মতো নৈতিকতার একটা ব্যাখা নিশ্চয়ই তাদের মন তৈরী করে রাখেন, যার খোজ খবর আমরা রাখি না। কবির কথানুযায়ী হয়তো দারিদ্রতা মানুষকে মহান করে কিন্তু টি। আই। বি’র রিপোর্টনুযায়ী মানুষকে চোর করে, অনন্ত বাংলাদেশের চৌদ্দকোটি মানুষ তাই প্রমান করেছে।
শুধু কি দারিদ্রতাই নৈতিকতাকে ক্ষয় করেঃ উপরের আলোচনা থেকে মনে হতে পারে শুধু দরিদ্র লোকেরাই ধর্মকে ব্যবহার করে কিংবা ধর্মের আড়াল বা আশ্রয় নিয়ে অন্যায় করে থাকেন। আসলে কি তাই? আমার সীমিত দৃষ্টিতে দেখা, অনুভব করা ও জ্ঞানের আলোক বলব না। তাহলে ধনী আরব রাষ্ট্রগুলো কিংবা কম্যুনিষ্টরা মানুষের উপর এতো অন্যায় করছেন, কেনো? বরং ধর্মের আবরনই অনৈতিক স্খলনের জন্য দায়ী। ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষ নিজেকে আড়াল করে এবং সকল ধরনের অনৈতিক অপরাধ করে থাকে। দুবাই বা অন্য যেকোন মুসলমান রাষ্ট্রে গেলেই এটা দেখা যায়। আরবরা দরিদ্র না কিন্তু তারা দরিদ্র দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সাথে টাকা - পয়সা, ওয়ার্ক পারমিট ইত্যাদি বহু ব্যাপার নিয়ে দিন রাত মিথ্যে কথা বলছে, প্রতারণা করছে। সেই মিথ্যে কথা শুরুর আগে একবার ইয়াল্লাহ বলছে, শেষে একবার বলছে। দরিদ্র দেশের মানব সন্তানদের ব্যবহার করে উটের দৌড় করাচ্ছে, কিংবা যৌন হয়রানী করছে। কিন্তু আবার আজান দেয়ার সাথে নামাজ পড়ে চিত্ত শুদ্ধও করছে। বেশীর ভাগ আরবদের বেশ কয়েকটি করে বাড়ি থাকে, যার অনেক গুলোই ফাকা ও তালাবন্ধ থাকে বছরের পর বছর, সেই জায়গায়ই হয়তো পাচশ গজ দূরে একটি কুড়ের মধ্যে বারোজন মানুষ গাদাগাদি করে থাকেন। ধর্ম কি সেই শিক্ষায় দেন মানুষকে ? ধর্মের দ্বারা নৈতিকতা কতো জায়গায় ধর্ষিত এবং পদদলিত। তবে শক্ত আইনের বাধনে যেসব জায়গায় পড়তে হয় সেসব জায়গায় অনৈতিক কাজ অনেক কম হয়। উদাহরনস্বরূপ বলা যায়, যেলোক দেদারসে ট্যাক্স ফাকি দিচ্ছে কিংবা ভীড়ের বাসে টিকেট ফাকি দিচ্ছে অথবা কর্মচারীর বেতন মেরে দিচ্ছেন, সেই তিনিই কিন্তু কখনও ভুল জায়গায় পার্কিং করার চিন্তা মাথায় আনবেন না, কিংবা মেয়েকে কাফের বিদেশী ছেলেদের সাথে কোএডুকেশনে পড়তে দিবো না কিংবা আঠারোর আগে আইনতঃ বিয়ে দিবেন, এই ধরনের চিন্তা মাথায় আনবেন না। যে আরবরা নিজের দেশে অ - আরবীয় সমাজের মানুষের সাথে গরু ছাগলের মতো ব্যবহার করেন, তারাই যখন ইউরোপে গরমের ছুটি কাটাতে আসেন, পরিবার পরিজন নিয়ে, অ - আরবীয় সমাজের সাথে তখন শিষ্ট ও চরম ভদ্র আচরন করে থাকেন। তাহলে কি শক্ত, কঠোর, অলংঘনীয় সব আইনগুলো অনেক সময় ধর্মের সমান্তরাল হিসেবে কাজ করে স্থান - কাল - পাত্র ভেদে নৈতিকতা শিক্ষা দেয় মানুষকে?
ধার্মিকরা হয়তো গুনাহ হবে সেইজন্য অনেক সময় অনেক অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন কিন্তু ভয় দেখিয়ে কি সব সময় নিজেকে বিরত রাখা যায় যদি অন্তর থেকে কেউ তাগিদ অনুভব না করেন? বিবেক থেকে অন্যায়কে অন্যায় ভাবেন না বলেই হয়তো সাধারনতঃ দেখা যায় যেকোন অন্যায় করার পর ক্ষমা চেয়ে নিজেকে শুদ্ধ করে নেয়ার একটা ভরসা ওদের মধ্যে কাজ করে। যখন কেউ ভাবেন আমি অন্যায় করে উপাসনার দ্বারা তার থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিতে পারবো, সেই ভাবনার প্রেষনাই তাকে অন্যায়ের প্রতি জোর ধাবিত করে। ধার্মিকরা প্রায়ই তাদের ধর্মের প্রতি অত্যন্ত ভালোবাসা থেকেই হয়তো বলে বসেন, ধর্মের কোন দোষ নেই এর অপব্যাখা দেয়া হচ্ছে। তাই যদি সত্যি হয়, ধর্ম যদি এতোই নাজুক ব্যাপার হয়ে থাকে যে, যে খুশী সেই তার অপব্যাখা কিংবা ভুল ব্যবহার করতে পারে, তাহলে সেই দুর্বল জিনিসটা “নৈতিকতার” মতো একটা শক্ত জিনিসের ভার কিভাবে নিতে পারে? অজ্ঞতা থেকেই ভয়ের আর ভয়ের থেকে নানারকম কল্পনার সৃষ্টি হয়। রাক্ষস, খোক্কস, পরী, পংক্ষীরাজ ঘোড়া কিংবা এমন কোন অবয়বের যাকে সর্ব শক্তিমান মনে করার আপ্রান চেষ্টা চলে। যার উৎস হলো অজ্ঞতা কিংবা ভয় তা কি করে নৈতিকতা ধারন করতে পারে?
এই লেখাটা পড়ে আপাত মনে হতে পারে যে, ধর্ম সব অনৈতিকতার কারন বা ধার্মিক লোকেরাই অনৈতিক কাজ করে। কিন্তু আমার মতে ধর্মহীনতা মানেই যেমন নীতিহীনতা নয় তেমনি ধার্মিক মানেই নীতিবান, সচ্চরিত্রের লোক সবাই নন। শুধু ধর্ম মানুষকে নৈতিকতা শিক্ষা দেয়, এই ধারনাটা সাধারনের মাঝে বদ্ধমূল হওয়াটা বিপদজনক। এতে করে ধর্মের ঢাল ব্যবহার করে অনৈতিক কাজ গুলো হরদম করে যাওয়ার একটা একটা সুযোগ সে পাচ্ছে এবং আমাদের চারপাশের বাস্তব বলে দেয়, সেই সুযোগের সদ্বব্যহার সে করছে। ন্যায় ও অন্যায়ের পার্থক্য অনুধাবন করতে পারা আর সেই অনুভূতিকে বিবেকের কষ্টি পাথরে ঘষে নিজের জীবনে প্রতিফলন ঘটানোই আমার মতে নৈতিকতা, যা ধার্মিক অধার্মিক সকলের মধ্যেই থাকতে পারে কিংবা থাকেও। পরিশেষে নিজের একটা উপলব্ধি যেটা থেকে মুক্ত হওয়া এ জীবনে আর সম্ভব হবে না জানি, সেটা লিখছি। ধর্মের ব্যাখা বলি আর গল্পই বলি, যেখানে ধর্ম নিজেই বলেছে, প্রথমে মানুষে এসেছে এবং পরে তার কল্যানের জন্য ধর্ম এসেছে। প্রত্যেক ধর্মের এই একই গল্প, শুধু গল্পের চরিত্রের নাম আর প্লট আলাদা। সেজন্য যা মানুষের প্রয়োজনে সৃষ্টি হয়েছে এবং মানুষের পরে এসেছে তা যেনো কখনই মানুষের থেকে বড় না হয়ে উঠে। প্রয়োজনের বস্তু যখন যাদের প্রয়োজন হবে তারা ব্যবহার করবেন নিশ্চয়ই , কিন্তু তাকে সবার জন্য অনিবার্য করে তোলার কোন কারন নেই। আজকের এই সামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয়ের যুগে এটুকু উপলব্ধি করতে পারি, এই পৃথিবীর এখন ধার্মিক মানুষের চেয়ে নীতিবান মানুষের প্রয়োজন অনেক অনেক অনেক বেশী।
তানবীরা তালুকদার
২৫.০৬.০৮

Tuesday, 13 August 2013

আমার যতো সিনেমা - ৩



“নহন্যতে” সিনেমার নামটা শুনছিলাম কদিন ধরেই। ছোটবেলায় পড়া মৈত্রীয় দেবী আর মির্চা এলিয়াদকে মাথায় রেখে সিনেমাটা দেখতে বসে প্রথমে একটু আশাহত হয়েছিলাম। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সিনেমায় ডুবে গেলাম। কাহিনীটাই এমন টানের। পুরো সিনেমাটাই টান টানের। জীবন মানুষকে কখনো কখনো এমন জায়গায় এনে দাড় করিয়ে দেয় মাকে বেছে নিতে হয়, এক সন্তানকে বাঁচাতে পারবো, কাকে চাও, ছেলেকে না মেয়েকে? সিনেমার শুধু শেষটা ভাল লাগেনি বড্ড সিনেমাটিক লেগেছে। বাচ্চা এডাপ্ট করা আর পরে বাচ্চার তার বায়োলজিক্যাল পেরেন্টসদের সাথে যোগাযোগ করা একটা সাধারণ ঘটনা। পরিচালক এটাকে এতো নাটকীয়রুপ না দিলেও পারতেন। হয়তো বাচ্চা মেয়েটার অভিমানের পাল্লাটা অনুধাবন করানোর জন্যে এই নাটকটার অবতারনা কিন্তু কোন বাচ্চাটা অভিমান করে না যখন জানতে পারে তার বায়োলজিক্যাল পেরেন্টস তাকে দিয়ে দিয়েছে? নো ম্যাটার কারণ যাই থাকুক? আমি হলে হয়তো শেষটুকু অন্যভাবে লিখতাম। ব্যাক্তিগত অনুভব, ক্ষমা এই জিনিসগুলোকে প্রাধাণ্য দিতাম। তবুও বলবো অসাধারণ একটা মুভি, সিনেমাপ্রেমীদের জন্যে।

“নহন্যতে” ধরে ধরে ইউটিউব ঘাটাঘাটি করে যেয়ে পেয়ে গেলাম সেই বিখ্যাত “লা নুইট বেংগলী” সিনেমাটি। এটা মির্চা এলিয়াদের বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে বানানো। মৈত্রীয় দেবী আর মির্চা এলিয়াদ দুজন দুজনের মতো করে তাদের প্রেম কাহিনী লিখেছেন। একজন লিখেছেন স্বাভাবিকভাবে কূল বাঁচিয়ে আর একজন কি কিছুটা প্রতিশোধমূলকভাবে? বরাবরের মতো বই আমার যতোটা ভাল লেগেছিলো সিনেমা ততোটা ভাল লাগেনি। বইয়ে জমজমাট প্রেম ছিলো, সামহাউ আমার মনে হলো সিনেমায় প্রেম সেভাবে দানা বাঁধেনি কিংবা ফুটেনি। মাথায় বই কিংবা কিশোরীবেলা বেশি কাজ করছিলো কিনা জানি না। কিংবা ওয়েস্টার্ণ মেকিং এর কারণেও হতে পারে। ইষ্টার্ন মেকিং হলে হয়তো বানিয়ে দিতো, হাম দিল দে চুকে সানাম। তারপরো কোন এক সময় যারা বই দুটো পড়েছেন বলবো, দেখতে পারেন, খারাপ লাগবে না।

“শব্দ” খুব ব্যাতিক্রমধর্মী গল্প নিয়ে করা এই সিনেমাটি। একজন মানুষ যিনি সিনেমায় শব্দ নিয়ে কাজ করেন তাকে ঘিরে এই কাহিনী যদিও কিন্তু আলাদা আলাদাভাবে নানা শব্দের উৎপত্তি ব্যাঞ্জনা সিনেমায় যে শব্দগুলো আমরা শুনি সেগুলো কিভাবে তৈরী হয়, তার বেশ মজাদার উপস্থাপনা। যারা সিনেমায় এই কাজটি করেন তাদেরকেই সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার বলা হয়ে থাকে? অনেকে বললেন বেশ স্লো সিনেমা কিন্তু আমার গতিনুযায়ী ঠিকাছে।

কিছুটা এধরনেরই কাহিনী নিয়ে একটা মুভি দেখেছিলাম বছর কয়েক আগে ২০০৬ এর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে শাহবাগ জাদুঘর মিলনাতয়নে। যতোদূর মনে পড়ে সিনেমাটার নাম ছিলো “নিঃশব্দ”। নেটে কোন ইনফরমেশান খুঁজে পেলাম না এই মুভিটার ওপর। সেই মুভিটার অবশ্য থীম ছিলো সারাদিন আমরা অকারণে কতো শব্দ করি তা নিয়ে। কিছুটা সাউন্ড পলিউশনের ব্যাপারে মানুষকে কনশাস করা টাইপ। ডিটেইলসে দেখিয়েছিলেন সারাদিন আমাদের চারপাশে অকারণে কতো শব্দ হয়। যার অনেককিছু হয়তো আমরা চাইলে ওভারকাম করতে পারি।

“গয়নার বাক্স” অপর্না কঙ্কনার সর্বশেষ কাজ। এই একটা সিনেমা প্রথম বারের মতো আমার বইপড়া ভালো লাগাকে কিছুটা ছাপিয়ে ওপরে উঠেছে। পিসিমাকে কিংবা রাসমনিকে আমার বইতে ঠিক এতোটা মজাদার লাগেনি যতোটা সিনেমাতে লেগেছে। আমার কল্পনা রাসমনিকে অপর্নার মতো এতোটা মজাদার ভাবেনি। মৌসুমী আমার অলটাইম ফেভরিট তার উচ্ছল স্বভাবের জন্যে, ভাল লাগার সেটাও একটা কারণ হতে পারে। সিনেমাটা দারুন মজাদার, বইটা পড়া না থাকলেও দারুন এঞ্জয় করা যাবে। শুধু কঙ্কনার প্রেমটাকে সিনেমায় গলা টিপে না মেরে দিলেই পারতেন। এখানে পরিচালকের সময়ের দাবীনুযায়ী কল্পনার অবকাশ ছিলো। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্পটি অপর্নার হাতে পড়ে একটি অন্যরকম ব্যাঞ্জনা পেয়েছে।

হঠাৎ করে কোলকাতার সিনেমায় পড়াশোনা জানা ছেলেমেয়ে ঢুকে সিনেমার বৈশিষ্ট্য পালটে ফেলেছে। আবার “হোয়াট বেংগল থিংক্স টুডে ইন্ডিয়া উইল থিঙ্ক টুমরো” তে নিয়ে যাচ্ছে মুভির কাহিনী। আই উইশ তার ছিটেফোঁটা যদি আমাদের সিনেমার দিকেও আসতো। আমাদের সিনেমায় ঢুকে যায় গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। তবুও আশা রাখি ফারুকী গ্যাং যদি সিরিয়াসলি সিনেমা নিয়ে ভাবেন তাহলে হয়তো হেমলক সোসাইটির মতো আমাদেরও অনেক কিছু দেয়ার আর পাবার থাকবে।

১২/০৮/২০১৩