Thursday, 12 March 2015

দীর্ঘ নীরবতা ............ দ্যা লং সাইলেন্স



নীরবতা স্বস্ত্বি আনে তাই নীরব থাকা শ্রেয় ... নিজেকে রক্ষা করো মোর প্রিয়
এর অন্য নাম কী কষ্ট
সমাজের দৃষ্টিতে যখন হতে না চাই নষ্ট
দোষ ত্রুটি এড়িয়ে যেতে চাই
নিজের অনুভূতি লুকিয়ে বেড়াই
নাকি এই নীরবতা নিরর্থক!
যখন মন চায় আলো
তখন লেখালেখিই কী ভাল?
নিঃশ্চুপ থাকলে মেঘ আপনি কেটে যায়
কিন্তু যার কারণে এই দশা সেকী জানতে তা পায়
যা হয় সব ভালোর জন্যে
ভাগ্যের কথা চিরকালই মান্য
আমি বলতে চাই না আমরা কাছাকাছি আসছি
হেরে যেতে চাই না এই খেলায়।
নীরবতার আর এক নাম কিন্তু দ্বন্দ্ব
এই সম্পর্ক কী খুব কিছু মন্দ?
নাকি নীরবে সব সয়ে যাওয়া
কখনো অভিমানের হাওয়া,
নীরবতার এক নাম কখনো হার না মানা
কখনো নিঃশ্চুপ থেকে যুদ্ধে ইতি টানা  


 মূল কবিতাঃ

Silence is golden so is silence, a way to prevent been drained ,
another name of pain,
another way of not being someone to blame,
a way of preventing committing a sin,
a way of signaling your feelings
but then silence is lame,
cause silence doesnt enforce,
better to keep writing another prose,
Silence is the way to keep things smooth,
not to gesture to whatever you choose,
we're going great,
i'll just follow fate,
we're winning, i dont speak much cause
i dont want us to loose.
Silence another name for confusion,
another way of dillusion,
another way for bearing,
sometimes another way of raging,
silence another name for rising,
sometimes another way of compromising.

ভাষান্তর ঃ 

তানবীরা
১১/০৩/২০১৫







Saturday, 7 March 2015

কোমল অনুভূতিসম্পন্ন মানুষদের সমীপে দুটি কথা

বাংলাদেশের মানুষ কোমল অনুভূতিসম্পন্ন। ধর্ম নিয়ে একটি কথাও তারা সইতে পারে না। তাদের অনুভূতি বিপন্ন হয়ে পরে। যারা তাদের অনুভূতিতে আঘাত হানবে তাদের যেকোন ধরনের শাস্তি যথার্থ। রাস্তায় কুপিয়ে কুপিয়ে তারা বিশ্বজিৎ হত্যা দেখতে পারে, মোবাইলে ভিডিও করতে পারে, চোর সন্দেহে বিপুল বিক্রমে পিটিয়ে পিটিয়ে যেকোন মানুষকে রাস্তায় সাপ মারার মতো করে মেরে তার ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করতে পারে, তাতেও কোথাও কারো কোন অনুভূতি বিপন্ন হয় না। শুধু প্লীজ ধর্মে হাত দিও না, নট টু টাচ ......... একজন মানুষও কী দ্বিধাহীন কন্ঠে বলতে পারে না, “আস্তিক-নাস্তিক নির্বিশেষে যেকোন মানুষের এ ধরনের মৃত্যু কোন সভ্য দেশের ভূখন্ডে কাম্য নয়। আমরা এই অন্যায়ের তীব্র নিন্দা জানাই।“  তারা কী তাহলে সৃষ্টিকর্তার ওপর আস্থা রাখতে পারছে না, পরকালের শাস্তি নিয়ে কী নিজেরাই দ্বিধায় আছে?  

ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোত্র, ভাষা নির্বিশেষে যেকোন হত্যা বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করে, যারা কোন সীমার মধ্যে নিজেকে বাঁধে না, তাদের বিরুদ্ধে মানুষের অভিযোগের কিংবা ঘৃণার অন্ত নেই। মুক্তমনা, নাস্তিক প্রতিটি শব্দই অত্যন্ত ঘৃণার সাথে উচ্চারিত হয়। ব্যঙ্গ করে বলা হয়, মুক্তমনা আবার কী জিনিস?

মুক্তমনা হয়তো তারাই যারা হাজার হাজার বছর আগে অন্যে কী বলে গেছে কিংবা কী করেছে সেটাকে গুরুত্ব দেয়ার থেকে বর্তমান সময়ে নিজের শিক্ষা, বিবেক, বুদ্ধি, নৈতিকতার ওপর বেশি আস্থা রাখে। শোনা কথায় অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করার চেয়ে যুক্তিকে বেশি প্রাধান্য দেয়

কোমল অনুভূতিসম্পন্নদের বলছি, মহানবী তাঁর বাবা দাদার ধর্ম প্রচার করেননি। তিনি নতুন চিন্তা ভাবনা প্রচার করেছিলেন, প্রচলিত বিশ্বাসের বাইরে যেয়ে নতুন ভাবনা প্রচার করলেন, সেই অর্থ তিনি মুক্তমনা ছিলেন না? তিনি আক্রান্ত হননি সনাতন বিশ্বাসীদের দ্বারা? তিনি তার সময়ের প্রয়োজন অনুযায়ী তার আশপাশের দেখা অনাচার, অবিচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেননি? পরিবর্তন আনেনি আরব সমাজে?

ছোট বড় অনেক যুদ্ধের পর, হাজার মানুষের কল্লা কেটেই আজকের শান্তির ধর্ম প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। পূর্ব পুরুষদের পূজার মূর্তি ভেঙ্গেই কাবা ঘর প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তখন কোমল অনুভূতি কোথায় ছিলো? গ্যালিলিও, ব্রুনো, সক্রেটিস কেউই কোমল অনুভূতি পায়নি। কোন যুগেই পায়নি। নবী বোধহয় তখনো জানেননি আরবদের পরেই যেই বর্বর জাতি পৃথিবীতে আছে তার নাম বাঙালি। জানলে তার পরবর্তী নবী বাংলাদেশেই আসতো। যুগে যুগে যেখানে হেদায়তের দরকার সেখানেই নবীর আবির্ভাব।

শুভানাধ্যায়ী, বন্ধুরা পরামর্শ দিচ্ছেন, ধর্ম নিয়ে কিছু লিখলে যেনো নিজ নামে আর না লিখি, ছদ্মনামে লিখতে। কোমলপ্রাণের মানুষদের অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার ফল ভাল হবে না। কিছু উদাহরণতো চোখের সামনেই আছে। লিখবো না কিছু তাই আপাতত ভাবছি। আর যদি কিছু কখনো লিখি তাহলে নিজ নামেই লিখবো। আর কতোদিন কোমল অনুভূতিসম্পন্ন মানুষের ভয়ে মুক্তমনারা নিজের নাম পর্যন্ত লুকিয়ে ফেলবে? কবে কাটবে এই অমানিশা ...............


" আমি ভেবে পাইনে দিশে

সব জিনিস যে পয়দা করলো
সে পয়দা হইলো কিসে?"
~লালন





Friday, 27 February 2015

অভিজিত ভাইয়ের মৃত্যু আর চারপাশ

অভিজিত ভাইয়ের মৃত্যু আর একবার জানিয়ে দিলো, কতো প্রকারের সুশীল ফেসবুকে পদচারনা করে। তাদের মুক্তিযুদ্ধে আপত্তি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আপত্তি, শাহবাগে আপত্তি, জয় বাংলাতে আপত্তি, বঙ্গবন্ধুতে আপত্তি, মানুষের নামে আপত্তি, পোষাকে আপত্তি, মুক্তচিন্তা ভাবনায় আপত্তি ...... কিন্তু মুক্তচিন্তাকারদের আবিস্কৃত ফেসবুক, ইউটিউব, ভাইবার, বাংলা সফটওয়্যার ইত্যাদি কিছুর উপকারিতা নিতে তাদের বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই

অসির চেয়ে মসি শক্তিশালী, এই ভুল কথাটি স্কুল বয়স থেকে শেখানো হয়। আসলে অসিই দুনিয়ায় প্রথম আর শেষ কথা। মাথায় চারখানা কোপ, কল্লা ফতে, মসি স্তব্ধ। পশুর জয় মানবতার পরাজয় ...... শুধু ইহকালে কুপিয়ে ক্ষান্ত হয় না পরকালে তাকে কীভাবে কীভাবে বারবিকিউ করা হবে তার কল্পনায় নিজে উজ্জীবিত হয়, স্ট্যাটাস লিখে অপরকেও উজ্জীবিত করে ......... তারচেয়ে দুঃখের কথা, এই ইসলামী রাষ্ট্রে অভিজিৎ রায়ের খুনী ধরা পড়বে কীনা সন্দেহ। কাফের এ্যামেরিকার নাগরিকত্ব যদি তিনি নিয়ে থাকেন তাহলে এ্যামেরিকা একটা চেষ্টা দিলেও দিতে পারে।

ধর্মের জন্মের ইতিহাসই কোপাকোপি, যুদ্ধ, রক্তারক্তি, নারীদের লাঞ্ছনার মধ্যে দিয়ে সে ধর্ম নাকি শান্তির ধর্ম। কানা ছেলের নাম সর্বযুগে পদ্মলোচন। নিজের কানারে নিজে পদ্ম ডেকে শান্তি নেই, সবার কানপট্টিতে বন্দুক ধরে কানাকে পদ্ম বলাতে হবে। পৃথিবীর কোন ইতিহাসে এতো রক্তপাত আছে নাকি সন্দেহ। সেই রক্তের গঙ্গা আজো বহমান, ফ্রান্স থেকে টিএসসি। পৃথিবীর যে কোনায় রক্তারক্তি সে কোনাতেই এদের নাম এবং শুধু এদেরই নাম 


অসির কাছে মসী নতি স্বীকার করুক, বেঁচে থাকার তাগিদে করুক। কোন মুক্তমনার লেখালেখির দরকার নেই। বাজার ছেয়ে যাক, ধর্মের যুদ্ধ আর ধার্মিকদের জীবনীতে সাথে লাইলী মজনু আর শিরি ফরহাদের প্রেম কাহিনীতে। তবু মুক্তচিন্তাবিদরা বেঁচে থাকুক পৃথিবীর কোন কোনে। কুপিয়ে না মারলে কেউ অমর হয়ে যাবে না, বৃদ্ধ বয়স, জরা, বিভিন্ন অসুস্থতা মানুষের প্রাণ কেঁড়ে নিবেই তবুও এমন বীভৎস লজ্জা আর ঘৃনার হাত থেকে বাঙালি জাতি মুক্তি পাক।

বইমেলা এখন ঘাতকদের টার্গেট, এর বিকল্প খোঁজার বিকল্প নেই। হুমায়ূন আজাদ, রাজীব হায়দার, অভিজিত রায়, বন্যা আহমেদ ...... লিস্ট বড় হতেই থাকবে …… বাংলাদেশের ইতিহাস বুদ্ধিজীবি হত্যার ইতিহাস


27.02.2015

Monday, 16 February 2015

গ্রন্থালোচনাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি ঃ নীলিমা ইব্রাহিম







বহুদিন ধরে পড়তে চাওয়া নীলিমা ইব্রাহিমের লেখা “আমি বীরাঙ্গনা বলছি” বইটি পড়ে শেষ করলাম। খুব সহজ ভাষায় সাতটি মেয়ের বীরত্বের কাহিনী এতে লেখা আছে। একশো ষাট পৃষ্ঠার এই বইটি পড়তে খুব বেশী সময় লাগার কথা নয়। কিন্তু আমার অনেক সময় লেগেছে। আমি পাঁচ দিনে সাত জনের গল্প পড়লাম কারণ আমি হজম করতে পারতাম না। অনেকক্ষণ ধরে ভাবতে হয়, থমকে থাকতে হয়। কীসের মধ্যে দিয়ে গেছেন তাঁরা। কিছু লিখবো না লিখবো না ভেবেও শেষ পর্যন্ত লিখছি। তাদের নাম-পরিচয়, পুর্নবাসন, তাদের সংগ্রাম নিয়ে, তথ্য উপাত্ত ভিত্তিক পূর্নাঙ্গ কোন বই আছে কীনা, তাও জানা নেই। আমি বাংলাদেশের অনেক মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সিনেমা দেখেছি কিন্তু শুধু তাদের ওপর করা অত্যাচার এবং যুদ্ধ পরবর্তী তাদের মানসিক কষ্টের ওপর কারো কোন কাজ দেখেছি বলে মনে করতে পারছি না। তাদের পুর্নবাসনের কার্যক্রমের ওপরে চমৎকার সব ছবি তৈরী হতে পারতো। তাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাদের আত্মত্যাগ নিয়ে জানতো, তাতে করে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাদের উপলব্ধি ও শ্রদ্ধা বাড়তো। আজকে যুদ্ধ বিরোধী পক্ষ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এতো ধোঁয়াশা তৈরী করে নতুন ছাগু প্রজন্ম তৈরী করতে পারতো না। এই থেকে কিছুটাতো বুঝতে পারি আমাদের সমাজ বীরাঙ্গনাদের মূল্যায়ন কীভাবে করেছে। যুদ্ধের সময় শারীরিক অত্যাচার আর যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে মানসিক অত্যাচার নিয়ে বীরাঙ্গনারা ধরতে গেলে একাই লড়ে গেছেন এবং তাদের অনেকেই এখনো বিভিন্ন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে একাই লড়ে যাচ্ছেন

এই বইটির একটি উল্লেখযোগ্য দিক আমার চোখে পড়েছে, জীবন যুদ্ধে যারা শত কষ্টের মাঝেও হেরে যায় নি শুধু তাদের গল্প দিয়েই বইটি সাজিয়েছেন লেখিকা। আমি সাধারণ বুদ্ধিতে বুঝতে পারি, সবাই এতো মানসিক, শারীরিক যন্ত্রনা পোহানোর মত শক্ত ছিলো না। সবাই সাঁতরে তীরে ভিড়তে পারেনি। অনেকেই হেরে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে বা করতে বাধ্য হয়েছে। লেখিকা হয়তো ইচ্ছে করেই তাদের কথা সযতনে এড়িয়ে গেছেনএই বইটি দিয়ে হয়তো লেখিকা আমাদের একটি বার্তা দিতে চেয়েছেন, আমরা যারা সহজে হতাশ হই, হাল ছেড়ে দেই, নৈরাশ্যের অন্ধকারে হারিয়ে যেয়ে মুক্তি খুঁজি তারা যেনো যুদ্ধ করার, লড়ার মনোবল রাখি। আমাদের ইতিহাস অন্তত তাই বলে। বইটির সাত জন বীরাঙ্গনা ভিন্ন ভিন্ন পারিবারিক অবস্থা থেকে এসেছে। দর্জির মেয়ে আছে, গ্রামের বিত্তশালী কৃষকের মেয়ে আছে আবার শহরের উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা থেকে রাজনীতিবিদের মেয়ে আছে। যাদের অনেকেই আজো ঘুমোতে পারে না, আজো সেই পদশব্দ শুনতে পায়, শরীরে বিভিন্ন রকমের কষ্ট, যন্ত্রনা, ব্যাধি যা মুখ খুলে কাউকে বলতে পারে না। তারা কী আজও অপেক্ষা করে নেই, তাদের পরিবার কী আজও অপেক্ষা করে নেই, এই হায়েনাদের বিচারের জন্যে? রাজনীতিবিদগন কবে তাদের আতর্নাদের দিকে কর্নপাত করবে? আর কত দিন বিচারের বানী নিভৃতে কাঁদবে? এক মহাসাগর দীর্ঘশ্বাসে আজো বাংলা আকাশ ভিজে আছে মা। পয়তাল্লিশ বছর আশায় আছেন তাঁরা .........

মেহেরজান চরিত্রটি বলছে, “জীবনটা তো সরল সমান্তরালরেখায় সাজানো নয়। এর অধিকারী আমি সন্দেহ নেই, কিন্তু গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করেন – কি বললেন আল্লাহ, পাগল হয়েছেন! বাঙালি মেয়ের জীবন পরিচালিত হবে আল্লাহর নির্দেশে! তাহলে এদেশের মৌলবী মওলানারা তো বেকার হয়ে থাকবেন, আর রাজনীতিবিদরাই বা চেঁচাবেন কি উপলক্ষ করে? না এসব আমার নিজস্ব মতামত, অভিযোগের বাঁধা আটি নয়।“

“যে কথা তাহের (ফাতেমার স্বামী) জানে না সেই কথাই চাঁপা ডাক্তারকে বললো। সে নির্মম কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে সে নিজেও কেঁদে উঠলো। ডাক্তার নিচু হয়ে চাঁপাকে প্রণাম করলো। দিদি, আপনারা প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আশ্চর্য এতো ত্যাগ স্বীকার করে দেশ স্বাধীন করলো বাঙালিরা, আর মা বোনদের দেয়া ত্যাগের মূল্য দিতে পারলো না। দূর্ভাগ্য সে দেশের!” 

আমি মাঝে মাঝে ওর ঘরে গিয়ে বসতাম। চোখ নিচু করে মিনা বেরিয়ে যেতো অথবা ঘরে ঢুকতো। কিছু জিজ্ঞেস করলে খুব কুন্ঠিতভাবে জবাব দিতো। বলতাম, জেরিনা এই মেয়েগুলোর বুকে আগুন জ্বেলে দিতে পারিস না, ওরা কেন মাথা নিচু করে চলে? নীলিমাদি তোমাদের এ সমাজ ওদের চারিদিকে যে আগুন জ্বেলে রেখেছে তার উত্তাপেই ওরা মুখ তুলতে পারে না। বেশি বেশি বক্তৃতা দিও না। ওদের সম্পর্কে জেরিনা খুব বেশি স্পর্শকাতর ছিল।“

কয়েকবার একটি লাইন ঘুরেফিরে এসেছে বইটিতে, “পাকিস্তানি সেনারা যখন আমাদের পেয়েছে তখন আমরা রাজাকারদের উচ্ছিষ্ট” --- পুরো বইটির মধ্যে এই একটি লাইন আমার কাছে যথেষ্ঠ পীড়াদায়ক মনে হয়েছে। লেখিকা কেন এই ধরনের শব্দ চয়ন করেছেন, তিনি জানেন। একজন জীবন্ত মানুষ কী করে উচ্ছিষ্ট হতে পারে? যতো শারীরিক লাঞ্ছনাই তিনি ভোগ করে থাকুন। একজন প্রগতিশীল ও মুক্তমনা লেখিকা যিনি হৃদয় দিয়ে বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসনের জন্যে দিন রাত এক করে খেঁটে গেছেন তিনি কী অন্য কোন শব্দ চয়ন করে এই পারিপার্শ্বিকতার ছবিটা আঁকতে পারতেন না? কোন মানুষ সর্ম্পকে এ ধরনের কথা ভাবতে আমার হৃদয় মানে না। শারীরিক কারণে কেউ কী উচ্ছিষ্ট কেউ হতে পারে? পারে ক্ষতিকর স্বভাব চরিত্রের কারণে যেমন রাজাকাররা।

বইটিতে একটি ব্যাপার বার বার এসেছে, ধানমন্ডি নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রে অনেক বীরাঙ্গনার স্বামী, ভাই, পিতা, নিকটাত্মীয় এসে দেখে করে গেছে, শাড়ি, খাবার উপহার এনেছে কিন্তু বাড়ি ফিরিয়ে নিতে পারবে না বলে দিয়েছে। অনেক পরিবার সরকার থেকে যুদ্ধক্ষতিগ্রস্তা এসব বীরাঙ্গনাদের জন্যে পাওয়া অনুদানের টাকা দিয়ে নিজেদের বাড়িঘর মেরামত করিয়েছে, কিংবা ব্যবসায় নিজেদের স্বচ্ছলতা খুঁজেছে। তাদের মধ্যে কোন কোন মুসলমান ধর্মালম্বী পিতামাতা তাদের কন্যাকে গ্রহন করলেও মোটামুটি বলা যায় (বইয়ের তথ্যানুযায়ী) কোন হিন্দু ধর্মালম্বীরা মুসলমান পিশাচ দ্বারা লাঞ্ছিত তাদের মেয়েকে ফিরিয়ে নেয় নি। এমন কী যারা বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে গেছে তারাও তাদের কন্যার সাথে কোন রকম সম্পর্ক রাখতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কুমারী পূজা করা সনাতন ধর্মালম্বীরা কত সহজেই আত্মজাকে পাশ কাটিয়ে যায়। বার বার যুদ্ধের বলি আর ধর্মের বলি কেন মেয়েরাই? প্রসঙ্গতঃ কদিন আগে দেখা সত্যি ঘটনা অবলম্বনে তৈরি “ফিলেমোনা” মুভিটার নাম না উল্লেখ করে পারছি না। “ফিলেমোনা” ক্রিশ্চান ধর্মের বলি। অথচ ধর্মের আচার নিষ্ঠা পালনে মেয়েদেরকেই বেশি উদগ্রীব থাকতে দেখা যায়। কবে কোথায় এর শেষ কে জানে  ..................


এই বাংলায় একজন মুক্তিযোদ্ধা গর্ব ভরে পরিচয় দিতে পারেন তিনি মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু একজন বীরাঙ্গনাকে লুকিয়ে যেতে হয় তার চরম দুঃখের আর নির্যাতনের কাহিনী। আমরা নিজেরা গর্ব ভরে বলি আমার চাচা, মামা, খালু মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কিন্তু চাতুরতার সাথে লুকিয়ে যাই আমার যেই আত্মীয়া ধর্ষিতা হয়েছিলেন তার কথা। এই পতাকায় কী তাদের আত্মত্যাগের রক্ত লেগে নেই? অনেক মহীয়সী বীরাঙ্গনা অনেক মনোঃকষ্টে আছেন, তারা দাবী করতে পারেন না যুদ্ধে তাদের অবদানের কথা। পরিবার-পরিজনদের কথা ভেবে পিছিয়ে আসেন। কিন্তু এই লজ্জা কেন তাদের হবে? এই লজ্জাতো স্বাধীন বাংলাদেশের, বাঙালি জাতির। মানুষ হিসেবে আমাদের লজ্জা হওয়ার কথা। যে দেশ, জাতি তাদের মেয়েদের সম্ভ্রম রক্ষা করতে পারেনি দায় তাদের .....সে দায় তোমাদের নয় মা।

https://www.youtube.com/watch?v=qfryIrKdXGU



(লেখাটা হয়তো বেশী আবেগতাড়িত, ক্ষমাপ্রার্থী সেজন্যে, এরকম একটা বই পড়ে মেয়ে হিসেবে নিজেকে সামলে রাখা কঠিন)


তানবীরা
১৬/০২/২০১৫



Wednesday, 21 January 2015

রাত ভ’রে বৃষ্টি

অনেক দেরিতে হলেও পড়লাম বুদ্ধদেব বসুর বহুলালোচিত আর প্রকাশের আগে কিছুটা সময়ের জন্যে নিষিদ্ধ উপন্যাস ‘রাত ভ’রে বৃষ্টি’নিজের বাড়ির বুক শেলফের কোনায় কোনায় কতো না-পড়া বই পড়ে আছে দেখে নিজেই অবাক হই। খুব ছোট বই, খুব অল্প সময়ে পড়া হয়ে গেলো।

পড়তে পড়তে ভাবছিলাম, সেই সময়ে তিনি বিভিন্ন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন মানসিকতা, অনুভূতি কী অন্য চোখেই না দেখতেন! নিঃসন্দেহে তিনি গতানুগতিকতার থেকে আলাদা ভাবনা ধারণ করতেনসে-সময়ের প্রেক্ষাপটে তাঁর এই লেখাটি আলোচনায় আসার মতো ছিলো বই কিতখন নারীরা নিজেরাই তাঁদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে কথা বলতে ভয় পেতেন, লজ্জা পেতেন, দ্বিধা করতেন। সে-জায়গায় তিনি পুরুষ হয়ে তাদের না-বলা কিংবা চেপে-যাওয়া অনুভূতিগুলো নিয়ে অনেক কথা লিখেছেন। সেই অনুভূতিগুলো ন্যায় কী অন্যায় সেটার বিচার করবে সময়।

এই উপন্যাসের যথার্থতা বিচার করার মতো বোদ্ধা আমি হই নি হয়তো এখনো, তবু নারী হিসেবে উত্তম পুরুষে কথা বলে-যাওয়া এর মূল নারী চরিত্র মালতীর সাথে আমিও একাত্ম হয়েছি অবচেতনায়। ভালো-লাগা শব্দটা বেশ হালকা মনে হয়, আমি মনে-দাগকাটা কিছু কথা অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে চাই।

উপন্যাসের নায়িকা মালতীর আত্মোপলব্ধি,

“আমার ছোট্ট শরীরটার তলায় অমন প্রকাণ্ড একটা কালো মেঘ কোথায় লুকিয়ে ছিলো এতদিন? তবে কি নয়নাংশুকে আমি কখনোই ভালবাসিনি? বাসিনি তা নয়, কিন্তু ওকে আমি পুরোপুরি কখনো দিইনি নিজেকে–এতোদিনে সেটা বুঝতে পারছি–একটা অংশ সরিয়ে রেখেছি না জেনে– সেই গোপন গভীর চরম অংশ তোমারই জন্যে আমি জমিয়ে রেখেছিলাম, জয়ন্ত। সে আমার স্বামী, রাতের পর রাত বছরের পর বছর আমি শুয়েছি তার পাশে, তার আর আমারই সন্তান বুন্নি–কিন্তু ও সবে কিছু এসে যায় না। কয়েক মিনিট সময়ের মধ্যে, বিনা চিন্তায়, বিনা ইচ্ছায় বিনা ভালোবাসায় কি স্ত্রীলোকের গর্ভে সন্তান আসে না? আমি এখন বুঝতে পারছি যে সাত সন্তানের মা হ’য়েও কোনো মহিলা কুমারী থেকে যেতে পারেন–হয়তো ঘরে ঘরে এমন গৃহিণী অনেক আছেন যাঁরা একটা বোবা শরীর নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন তিরিশ বছরের বিবাহিত জীবন। আর তা তাঁরা জানেন না পর্যন্ত। আমিও কি জানতাম আমার গোপন রহস্য, জয়ন্তর সঙ্গে দেখা না হ’লে? অংশু পারেনি–নতুন বিয়ের পরেও কখনো পারেনি আমাকে নিজের মধ্য থেকে এমনি ক’রে টেনে বের ক’রে আনতে, ভাসিয়ে নিয়ে ডুবিয়ে দিতে যেন অঝোর মেঘ ঝ’রে ঝ’রে পড়লো–নিঃশেষে নিঃশেষে।”

অভিমানী স্ত্রী মালতী বলেছে,

“নয়নাংশু আমাকে সভ্যভব্য মালতী ব’লেই ডাকে, আদরের সময় নিজে অনেক কিছু বানিয়ে নেয় কিন্তু লোটন বলে ডাকে না, তার মতে ওটা নাকি মানায় না আমাকে, ওটা ‘ন্যাকা’ নাম, অর্থাৎ আমার বিয়ের আগেকার কুড়ি বছরের জীবনটাকে সে উড়িয়ে দিতে চায়। কিন্তু তুমি নিলে আমার জীবনের অংশ, আমার অতীতের আর বর্তমানের, আমার কথা শুনে-শুনে ক্লান্তি নেই তোমার; আমি বুঝতে পারলুম তোমার জীবন এখন আমাকে ঘিরে–ঘিরে ঘুরছে। সেটা তুমি খুব সরলভাবে সহজভাবে মেনে নিয়েছো, তা নিয়ে কোনো ভয় নেই তোমার, লজ্জা নেই- কত সহজে আমার হাত ধরেছিলে তুমি, কানে কানে ‘লোটন’ বলে ডেকেছিলে, আড়ালে যখন ‘তুমি’ বলো মনে হয় যেন চিরকাল আমি তা-ই শুনেছি, আর তাই তো যেদিন প্রথম আমাকে জাপটে ধরে চুমু খেলে আমি অবাক হলাম না, ভাবলাম না এটা ভালো হলো না মন্দ হলো, শুরু সারা শরীরে থরথর করে কেঁপে উঠলাম যেন আমি ষোলো বছরের কুমারী।”

আত্মগ্লানিতে ভোগা মালতী বলছে,

“কেউ যেন না ভাবে আমি নয়নাংশুর দুঃখ দেখতে পাইনি বা চেষ্টা করিনি তাকে সান্ত্বনা দিতে। তখন পর্যন্ত জয়ন্তর সঙ্গে কিছুই হয়নি আমার, কিন্তু আমি দেখছি নয়নাংশু কেমন অদ্ভুত বদলে যাচ্ছে, হাসি কমে গেছে মুখের–আমি কিছু জিজ্ঞেস করলে ভালো করে জবাব দেয় না–অন্তত একজন মানুষের কাছে আমি যে তাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছি এইটেই ভালো লাগছে না তার। আমি কি তখন কম চেষ্টা করেছি নয়নাংশুকে খোশমেজাজে রাখতে? রাঁধতে আমি ভালোবাসি না, উনুনের আঁচে আমার মাথা ধরে, কিন্তু এই সময়ে আমি নিজের হাতে রান্না করেছি যা-যা তার বিশেষ পছন্দ, ঝি-চাকর থাকা সত্বেও তার শার্ট-প্যান্ট ইস্ত্রি ক’রে দিয়েছি নিজের হাতে, জুতো পালিশ ক’রে দিতেও পরোয়া করিনি। সে আরামপ্রিয় মানুষ, তার উপর একটু পরিচ্ছন্নতার বাতিক আছে–আমি অনেক খেটে অনেক যত্নে ঝকঝকে রেখেছি ফ্ল্যাটটিকে, আলোয় নতুন শেড আর সোফায় নতুন ঢাকনা পরিয়ে উজ্জল রেখেছি বসার ঘর–কিন্তু সে-সব যেন চোখেই পড়েনি তার। অথচ আমার হাতের কোনো একটি ছোটো কাজও জয়ন্তর চোখ এড়ায় না, যদি কোনদিন কানের দুল বদল করি তা পর্যন্ত লক্ষ করে সে, আমি যখন টিপট থেকে চা ঢালি তখন টের পাই তার দৃষ্টি আমার হাতের উপর।”

নিজের পক্ষে যুক্তি সাজাতে গিয়ে মালতী ভেবেছে,

“ও-সব ভালোবাসাবাসি অংশুর মতো লোকদের বানানো ব্যাপার-একটা ধারণা, কল্পনা, হয়তো একটা আদর্শ যার কাছাকাছি পৌঁছতে পারে না কেউ, আর সেই আপসোসে তা নিয়ে শুধু কথা বলে। এমন মানুষ কে আছে যে অন্য একজনের সব ইচ্ছে মেটাতে পারে? অল্প বয়সে এক ধরনের মন থাকে, চনচনে চাঙ্গা থাকে অব্যবহৃত শরীর, হঠাৎ কোনো একজনের সব-কিছুই ভালো লেগে যায়। অন্য সব মানুষ থেকে আলাদা ক’রে নিই তাকে, মনে হয় তাকে পেলে আর-কিছু চাই না-কিন্তু তখন তাকে পাওয়া গেলো, ধরা যাক তারই সঙ্গে বিয়ে হ’লো যখন, তখন মোহাচ্ছন্ন ভাবটা এক গ্রীষ্মেই ঝ’রে পড়ে, এক বর্ষার জলেই ধুয়ে যায়। তারপর থাকে স্বার্থ, থাকে একত্র বসবাসের ফলে মমতা, থাকে অভ্যাস, পুরানো চটিজুতোর আরাম-আর থাকে শরীর। কিন্তু শরীরও কত সহজে ক্লান্ত হয় বিমুখ হয়, কত সহজে অন্য সুখের স্বপ্ন দ্যাখে-যদি না কারো বোকা হ’য়ে জন্মাবার মতো সৌভাগ্য হয়, কিংবা চোখে থাকে এমন ঠুলি যাতে সামনের মানুষটিকে ছাড়া আর-কিছুই সে দেখতে পায় না, জয়ন্ত আমাকে যত কথা বলেছে, তারমধ্যে ‘ভালোবাসা’ কথাটা একবারও উচ্চারণ করেনি-আমি সেজন্য কৃতজ্ঞ তার কাছে...”

স্বামী নয়নাংশুর অভিমানও কাচের বাসনের মতো ঝনঝন শব্দে ভেঙ্গেছে,

“হায় ভালোবাসাযেন তা মুখের কথার উপর নির্ভর করে-যেন তা চোখে ভেসে ওঠে না, ধরা পড়ে না গালের রঙে, হাতের নড়াচড়ায়, এমন কি পর্দা ঠেলে ঘরে ঢোকার ধরনে, নিচু হ’য়ে চা ঢেলে দেবার ভঙ্গিটুকুতে পর্যন্ত। তা আলোর মতো সহজ, রোদের মতো নির্ভুল-সেখানে কোনো তর্ক নেই, তা চিনে নিতে এক মুহূর্ত দেরি হয় না। এই কথাটাই আমি বলার চেষ্টা করেছিলাম মালতীকে অনেক কষ্টে, ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে–তুমি যদি সত্যি আমাকে ভালবাসো আমি কেন তা অনুভব করি না? কেন করো না তা আমি কী ক’রে বলবো! ব্যস, এর উপর আর কথা নেই। একটা দেয়াল, বোবা দেয়াল, মাথা ঠুকলে শুধু মাথা ঠোকার প্রতিধ্বনি বেরোবে।”

প্রতি দিনের জীবন পরিক্রমায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কতো অনুভূতির মধ্যে দিয়ে যায়। এই ক্লান্তিকর নাগরিক ব্যস্ততায় নর-নারীর একান্ত চাওয়া-পাওয়ার দ্বন্দ্ব এখন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গব্যক্তিত্বের সংঘর্ষ, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, ব্যক্তিগত হতাশা কতকিছুই আসলে তার কারণ হতে পারে। কোনো জয়ন্ত এখানে একটি উপলক্ষ্য মাত্র তাই বারে বারে মালতী আর নয়নাংশুর অংশ আমরা জানতে পাই, জয়ন্তের অনুভূতি নিয়ে কিন্তু একটি কথাও লিখেন নি লেখক। আমার চোখে দাম্পত্য জীবন নিয়ে মালতীর হতাশা বের করে আনতে জয়ন্তকে সামনে এনেছেন মাত্র লেখক। পতি পত্মী অউর বোহ বা থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বারেরা কারোর কাছে নিমিত্ত মাত্র, কারোর কাছে নিয়তিরাত্রি

প্রসঙ্গত, কদিন আগে রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘কাদম্বরীদেবীর সুইসাইড নোট’ পড়লাম। প্রথম অর্ধেকটা বেশ টেনে রেখেছিলো, শেষের দিকটা বিরক্তিকর ছিল। একই কথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এতো বার লেখা। অনেকটা জনপ্রিয় সিনেমা বানানোর জন্যে চিত্রনাট্যকাররা যেমন ‘স্পাইসি মশলা’ ঢোকান সেইরকম। আর এতো চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যে নোট লিখবে সে কখনো আত্মহত্যা করতে পারবে না। আত্মহত্যা করে মানুষ ঝোঁকের মাথায়, চিন্তা ভাবনা করে আত্মহত্যা করা আমার দৃষ্টিতে প্রায় অসম্ভব। কিন্তু তারপরও একটা জিনিস আমার মনে হয়েছে, একজন স্বামীর কাছে উপেক্ষিত স্ত্রী, প্রেমিক বা বন্ধুর কাছে অবহেলিত হলে কী ধরনের অনুভূতির মধ্যে দিয়ে যেতে পারে সেধরনের মানসিক অবস্থা চিত্রণে তিনি বেশ অনেকটাই সফল হয়েছেন। যেমন বুদ্ধদেব সফল হয়েছেন, উপেক্ষিত স্ত্রী মনের গুঞ্জরিত গোপন ভাবনাগুলো সামনে বের করে আনতে।

যাঁরা সবকিছু শুধু ন্যায়-অন্যায়ের পাল্লায় বিচার করেন না, যাঁরা জীবনের সাদা-কালোর বাইরের গ্রে পার্টটা অনুভব করেন তারা বইটা পড়তে পারেন। মানুষ যে শুধু আদর্শ বা শুধু অপরাধের রূপকথার চরিত্র নয়, রাক্ষসও হতে পারে শ্রেক আর রাজকুমারও হতে পারে ময়ূরবাহন, সেই বাস্তবতার ঘরোয়া স্বরূপ জানতে কিংবা হৃদয়ের পতনঅভ্যুদয়বন্ধুর পন্থার যুগযুগ সঞ্চিত যাত্রীদল যে-সামাজিক মানুষ, তার অন্তরের অন্দরমহলের ওঠাপড়ার কাহিনি জানতে চাইলেও এই বইটা একটা আবশ্যিক পাঠ্য হতে পারে। প্যাস্কেলের সেই কথাটাও বলে নিতে পারি, হৃদয়ের আছে যুক্তি, যা কেবল হৃদয়ই জানে।

তানবীরা

১৮/০১/২০১৫

Friday, 16 January 2015

শীত আসে বাবার গন্ধ নিয়ে


শীতকাল মানেই দেশে অন্যরকম একটা উৎসব উৎসব ভাব।

দেরি করে সকাল হয়, সূর্যের তাপ তখন আর খরখরে দজ্জাল রমণী নয় বরং মিষ্টি লাজুক কিশোরী। গায়ে এলিয়ে পড়লে কী ভালোটাই না লাগে! বিকেলে আকাশটা লাল হতে না-হতেই টুপ করে সন্ধ্যায় মিলিয়ে যাবেসকালে ভাপ-ওঠা ভাপাপিঠে কিংবা চিতই, পুলি নইলে ছিটারুটি, মানে ঘুরেফিরে এমন কিছু যা সচরাচর হয় না। খেজুরের রস আর গুড়তো আছেই।

গ্রামে বেড়াতে গেলে দেখা যেতো প্রায় বাড়িতে মাচা আর তাতে উঁকি দিচ্ছে বেগুনি কিংবা সাদা সিমের ফুল, কোথাও কোথাও আবার ফুলের পাশে পাশে সিমও ঝুলে আছে। চারপাশের সবুজ মাঠে আগুন লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সর্ষে গাছগুলো, হলুদে আর সবুজে মিশে একাকার, ব্রাজিলের জার্সি হয়ে কিংবা কাঁচা আর পাকার প্রতিচ্ছবি হয়েপ্রকৃতিতেও নিত্যনতুন ফুল যেগুলো সারা বৎসর চোখে পড়ে না। নতুন আলু দিয়ে মুরগি, টমেটো ধনেপাতা মাখিয়ে ছোট মাছের চচ্চড়ি, নতুন-ওঠা সিমের ভাজি, বরই-এর ডাল, শিকার করে-আনা পাখির মাংস, কী নয়!

স্যুটকেসে বা আলমারিতে আলাদা কিছু দিয়ে পেঁচিয়ে যে-কাপড়গুলো সযতনে মোড়া থাকতো সেগুলো তখন নামতো। সোয়েটার, জ্যাকেট, আলোয়ান, লেপ, কম্বল। অনেক বাড়িতেই বিয়ের উৎসব। স্কুলে পিকনিক, পাড়ায় পিকনিক, ছাদে পিকনিক, পাড়ার উঠোনে উঠোনে কোট কেটে ব্যাডমিন্টন খেলা, রাতে লাইট ফ্লাড লাইট জ্বালিয়ে। শুক্রবার মানেই রাস্তা দিয়ে হইহই করে পিকনিকের বাস যাবে, নতুন রিলিজের আপাত হিট হওয়া কোন হিন্দি গান বাজিয়ে। স্কুলে স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়ে দিলে নতুন ক্লাশে-ওঠা ছেলেমেয়েদের হাসি মুখ আর নতুন বই পুরনো ক্যালেন্ডারের সুন্দর ছবিটি দিয়ে মুড়িয়ে নেয়ার ধুম আর আনন্দ।

শীতের রাতে বাবা বাড়ি ফিরতেন সাধারণ সময়ের থেকে কিছুটা আগে। ঢাকায় শীতের রাতে দ্রুত রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। বাবা বাড়ি এলে আমাদের কী আনন্দ আর স্বস্তি! ঘরে ঢুকেই হাত মুখ ধুয়ে আমাদেরকে নিজের আলোয়ান দিয়ে মুড়ে দিতেন। আমরা তখন রাত নটার টিভিতে ব্যস্ত। একদিন ম্যাকগাইভার তো অন্যদিন সাপ্তাহিক নাটক নইলে সিরিজ নাটক। আমাদের নড়াচড়ার সময়তো নেইই আর সে সময় নড়া প্রায় অসম্ভব। কোন কিছু মিস করা যাবে না।

কোনদিন যদি বাবা সন্ধ্যে থেকে বাসায় থাকতেন, রাত নটার দিকে তাঁর আলোয়ান যখন আমাদের গায়ে, সেটা থেকে বাবার গায়ের বাবা বাবা গন্ধের সাথে মিষ্টি একটা বাবা বাবা ওম মিশে থাকতো। বাবার সেই চিকন বর্ডার দেয়া খয়েরি, বাদামি উলের আলোয়ানগুলো সাধারণ আলোয়ানের থেকে লম্বায় আর চওড়ায় অনেক বড় হতো। কত পুরনো ছিলো সেগুলো কে জানে। সেগুলোর কিছু বোধহয় তিনিও উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন।

ছোটবেলায় একটা আলোয়ান দিয়ে দুজনকে পেঁচিয়ে ফেলতে পারতেন, বড় হওয়ার পর অবশ্য আলাদা আলাদা দিতে হতো। কিন্তু পেঁচিয়ে দিতেন সবাইকে, নিজের গুলোর সাথে দাদুর আলোয়ানও নিয়ে আসতেন। আলোয়ান পেঁচিয়ে প্যাকেট করে তারওপর কম্বল এনে দিতেন যেনো ঠান্ডা তার আগ্রাসী আঙুলে তাঁর সন্তানদের স্পর্শ করতে না পারে।  

কী অকিঞ্চিৎকর সেই সময়, সাধারণ মধ্যবিত্ত সংসার আমাদের। গিজার নেই, হিটার নেই, এয়ারকন্ডিশনার নেই। গরম কাপড়, সুন্দরবন থেকে বিশ্বাসী কাউকে দিয়ে আনানো মধু, গ্রামের বাড়ি থেকে বানিয়ে-আনা খাঁটি ঘি, বেসিনে, বাথরুমে গরম পানি বালতিতে করে এই আমাদের ভরসা।

খাবার সময় মানে আনন্দবাজার। বড় একটা বোলে বাবা ভাত, তরকারি, মাছ, মাংস, ডাল, গরম ঘি, সালাদ, লেবু, আচার সব একসাথে মেখে নিতেন। মেখে নিতেন বললে আসলে ভুল বলা হয়, ছোট বাচ্চাদের যেমন খিচুড়ি খাওয়ানো হয় সেরকম ক্বাথ বানিয়ে ফেলতেন। আমরা চারধারে কার্পেটের ওপর গোল হয়ে বসতাম, হাত আলোয়ানের ভিতর আর পা কম্বলের নিচে, চোখ টিভির ওপর আর সন্তানদের প্রতি একাগ্র আমার বাবা ঘুরে ঘুরে সবার মুখে লোকমা তুলে তুলে দিতেন।

অনেকসময় মুখে নিয়ে বসে থাকতাম ঠিক বাচ্চাদের মতো, তখন বাবা বকা দিতেন, চিবানোর তো কিছু নেই তাহলে মুখে নিয়ে চিন্তা করিস কী? মুখে যাবে গিলে ফেলবি, বাকি যা করার তো আমিই করে দিয়েছি।

রান্নাঘরে গরম পানি ফুটছে, আমাদের মুখ মুছিয়ে দেবেন বাবা নিজের হাতে আর একটু গরম পানি জগে মিশানো হবে, সবাই খাবে। ইউনিভার্সিটি পড়া অব্ধি কটা শীতের সন্ধ্যে নিজের হাতে খেয়েছি আঙ্গুলের কড়ে গুনে বলে দিতে পারবো। শীত বাদেও বহু সন্ধ্যে বাবা খাইয়ে দিতেন, তবে শীতের দিনে সেটা পাকাপাকি বন্দোবস্ত ছিলো।
খাবার প্লেটে নিয়ে আমরা এতো দেরি করতাম যে খাবার প্লেটে ঠান্ডা হয়ে যেতো। অনেকসময় দেখা গেছে, গরুর মাংস প্লেটে ঠান্ডা হয়ে জমে গেছে। মা চ্যাঁচামেচি করতেন ছেলে মেয়েগুলোকে নষ্ট করছেন আহ্লাদ দিয়ে দিয়ে এই বলেবাবা শুনতেন কিনা জানি না, মুখ টিপে হাসতেও পারেন

সকালে সোয়েটার, মোজা লেপের ভেতর দিয়ে যেতেন বাবা সোয়েটার গরম হবে তবে সেটা পরে বিছানা থেকে নিচে মেঝেয় পা দেবো। কিছুতেই ঠান্ডা লাগা যাবে না তাঁর সন্তানদের গায়ে। আহ্লাদী মেঘ আমার কাছে বায়না করে আমি যেমনটা করতাম, মা, আমি উঠতে পারবো না, আমার ঠান্ডা লাগে আমাকে পানি এনে দেবে, জুস এনে দেবে, মুড়ি মেখে দেবে আরো কত কীখুব মায়ায় মনটা ভরে যায়। নিজেকে দেখি মেঘের মাঝে, নিজের শৈশবকৈশোরবেলা

গ্রীষ্মের দুপুরে গল্পের বই নিয়ে শুয়ে পড়েছি, ফুল স্পিডে ফ্যান চলছে। কিছুক্ষণ পরেই আবার একটু ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। উঠে আবার চাদরখানা গায়ে টানতে কতো রাজ্যের যে আলস্য! অপেক্ষা করে থাকতাম কখন বাবা এইদিকে আসবেন। আমাকে কিংবা দাদুকে কাউকে না কাউকে দেখতে, কথা বলতে। দেখামাত্রই বলতাম, একটু চাদরটা দিয়ে দিবেন। কতো রাগতো বাবা, তুই এতো বড় হয়েছিস, তুই সবারটা দেখবি, না তোর চাদর আমাকে দিয়ে দিতে হয়!

আমি সেসব থোড়াই শুনেছি! গল্পের বইয়ে ডুবে নিদারুণ আরামে আলস্যে ঘুমিয়ে পড়েছি, কখন হাত থেকে বই পড়ে গেছে খসে, টেরই পাই নি।

শীতের দিনে কিংবা ঠান্ডার দিনে খিচুড়ি বাবার খুব পছন্দ তারমধ্যে সব্জি খিচুড়ি আরো বেশি পছন্দ। খিচুড়ি রান্না করার জন্যে সব্জি ধুতে ধুতে ভাবছিলাম বাবা কি কখনো ভেবেছিলেন তাঁর কন্যারা কোন সুদূরে সাত সমুদ্দুর সতের নদী পাড়ি দেবে? বরফ শীতল ঠান্ডা পানি ঘেঁটে ঘেঁটে সাংসারিক কাজ করবে?

ঠান্ডা আমার সহ্য হয় না, কিন্তু নিয়তির কারসাজিতে শীতের দেশে বসবাস। সারা শীত ধরতে গেলে সর্দি, কাশি, জ্বরে ভুগি। প্রায় দিন সূর্য দেখা যায় না, অন্ধকার চারদিক, টিপটিপ বৃষ্টি নয়তো বরফ আর সাথে উত্তরের হাওয়াতো আছেই। ঘুরেফিরে সংসারের কাজ করি আর পুরনো স্মৃতি কারণে অকারণে জাবর কাটি। বয়স হচ্ছে তারই লক্ষণ হয়তো।

ভেবেছিলেন কখনো বাবা আপনি, আমরা বরফের মধ্যে জুতো পরে অফিসে যাবো, বাজার করবো, মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাবো? মোটা জ্যাকেট আর মাফলার ভেদ করে কনকনে শীতের হাওয়া আমাদের হাড়ে ঢুকে যাবে আর চকিতে সেই ঠান্ডার আড়াল এড়িয়ে মনে পড়বে, আপনি কতো যত্নই যে করেছেন আমাদের প্রত্যেককে একটু ঠান্ডা যেনো আপনার বাচ্চাদের ছুঁতে না পারে, সেজন্যে আপনার নির্দেশে সকালে পানি গরম করে মগে দিয়ে যেতো, মুখ ধোওয়া থেকে শুরু করে সমস্ত কাজ গরম পানিতে হবে।

ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগলেই আপনাকে মনে পড়ে বাবা, আপনার ওম, আপনার গন্ধ, আপনার যত্ন আর ভাবি আপনি এখানে থাকলে আপনার আত্মজাদের রক্ষা করতে কী করতেন! আরো ভাবি আপনার সাধ্যের মধ্যে থাকলে কী না করতেন! শঙ্করের একটা লাইন আছে, কোথায় জানি না। সেটা এরকম, পৃথিবীর সব ভালোবাসাতেই স্বার্থ থাকে। এমনকি ছেলের জন্যে মায়ের ভালোবাসাতেও কিছুটা স্বার্থ মিশে থাকতে পারে। একমাত্র যে ভালোবাসাটা নিঃস্বার্থ, সেটা হলো মেয়ের জন্যে বাবার ভালোবাসা।

এই লেখাটি তাঁদের জন্যে যারা বলে যাচ্ছেন অনেকদিন কিছু লিখছি না কেনো কোথায় ডুব মেরেছি। মনখারাপের পেন্সিল হাতে নিয়ে বোবা বরফ ভেঙে কিছু স্মৃতিকাচের টুকরো রেখে গেলাম এখানে, অনেকটুক ভালোবাসা আর অনেকটা অসহায়ত্ব সঙ্গী করে।


১৬/০১/২০১৫

Tuesday, 6 January 2015

গ্রন্থালোচনাঃ "নিন্দিত নন্দন”

প্রায় একটানে পড়ে শেষ করলাম ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর আত্মজৈবনিক উপন্যাস “নিন্দিত নন্দন”। শব্দশৈলী থেকে ২০১৪ সালের বইমেলায় প্রকাশিত ১৯১ পৃষ্ঠার এই বইটি পড়তে পড়তে চোখের পানি আটকে রাখা মুশকিল। একটি “নারী” তার সামাজিক অবস্থান যে পর্যায়েরই হোক না কেন, ভুল-ভ্রান্তি, আবেগ-অনুভূতির কী মূল্যই না তাকে জীবনভর পরিশোধ করে যেতে হয়। তবুও তিনি কিছু জায়গায় সৌভাগ্যবতী, ছেলেমেয়েদের ভালবাসা পেয়েছেন, বিয়ার ভাইয়ের মতো স্বামীকে পাশে পেয়েছেন, নিজের যোগ্যতায় ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছেন, বহুজন কোন অন্ধকারে হারিয়ে গেছেন তার মত পরিস্থিতিতে।

“আমাদের খন্ডকালীন সঙ্গীত শিক্ষক কিউ।এস।ইসলাম বেশ আন্তরিক ছিলেন। তাঁর শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ আমাকে মুগ্ধ করেছিল। তিনি খুব ভালো গাইতেন। দেখতে ভালো ছিলেন না, তবে বয়সে তরুণ, বাচনে চৌকষ। এক পর্যায়ে খালাদের কারণে-অকারণে শাসন আমার শৈশবকে ঝালাপালা করে ছাড়ল – উপায়ন্তর না দেখে গানের শিক্ষক কিউ।এস।ইসলামকে বিয়ে করলাম মাত্র এক বছর প্রণয় শেষে। খুবই ভালোবাসলাম ওকে। প্রথম প্রেম একটি কিশোর জীবনে! সত্যি ভালোলাগার ব্যাপার। ভুল খুঁজে বের করার মন ছিল না। কিন্তু কুমারী জীবনের মুহূর্তগুলো যেন দ্রুতই সরে সরে যাচ্ছিল।“

“সন্ধ্যার পরে সিরাজ (আমার স্বামী) আমাকে ছাদে ডেকে নিলেন। সেদিন আকাশে পূর্ণ চাঁদ। জ্যোৎস্নার রুপোলি আলোতে সারা প্রকৃতি স্নাত। আমি যেন সেই আলোর সমুদ্রে স্নিগ্ধ সাগরিকা। প্রাণে গভীর স্পন্দন। মনে হলো এমন রুচিবান সংস্কৃতিমনা স্বামী, তিনি চাঁদের আলোয় গান গেয়ে আমাকে বরণ করে নেবেনযেন শকুন্তলার রাজা দুস্মন্ত আজ আমার এতদিনের শৈশব-কৈশোরের যত কষ্ট যত ক্ষোভ সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে আমার জীবন পূর্ণতা দেবেন।

উনি সতীনাথ মূখার্জির গান শোনালেন। ও আকাশ প্রদীপ জ্বেলো না .........অপূর্ব দরদ দিয়ে গানটি গাইলেন। আমি মগ্ন হয়ে শুনতে শুনতে হঠাৎ দেখি ঝলমলে রুপোলি কাগজে মোড়ানো প্যাকেট থেকে একটি কাপড়ের তৈরী জিনিস বার করলেন মুহুর্তেই বুঝতে পারলাম এটি একটি বোরকা, যে বসন সমগ্র নারী সমাজকে অবনত করেছে। এ বসন জীবনকে কিছুই দেয় না শুধুমাত্র কুসংস্কার ছাড়া, ফতোয়ার সবক ব্যতীত অন্য কিছু নয়। বোরকা ফ্যাশনের পোষাক হতে পারে কিন্তু ধর্মের পোষাক নয়। ধর্ম অন্তরে।“

“সিরাজ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হলেন, আমি স্কুলে চাকরী করতে শুরু করি। সামান্য বেতনে চাকরী করে, স্বামীকে পড়াশোনার সম্পূর্ন দায়ভার নিয়ে বিশাল সংগ্রামের পদক্ষেপ নিলাম। ৬০ টাকা বেতনে দুই শিফটে ১২০ টাকা এর ফাঁকে দুটি টিউশনি শেষ করতাম। জীবন ঘন্টা মাপের যন্ত্র, যে সংগ্রামে শুধু শ্রমই ছিল না কেবল কলঙ্ক, দুর্নাম, দারিদ্র্যের, স্বামীর অকারণ শাসন, সন্দেহ, দুর্ব্যবহার কোনকিছুরই কমতি ছিল না। সিরাজ যেহেতু আমার উপরে নির্ভরশীল সে কারণে তাঁর অন্যায়, হীনমন্য ব্যবহারগুলো আমি দাঁত চেপে সহ্য করে নিয়েছিলাম। কারণ মানবিক বিষয়টি বড় করে দেখতাম। তাঁর কাছে বিবাহিত জীবনের কোনো দাবিই যেন রাখতাম না।“

এরপর তার জীবনে “বিয়ার ভাই” এর আবির্ভাব। নানা ঘাত প্রতিঘাত। বিয়ার ভাইয়ের সাথে প্রেমের আমেজ পুরো বইটিকে তরতর করে পড়তে অনেক পাঠককে নিশ্চয় টেনে রেখেছে। সেই কিশোরী বয়স থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন শুধু সংসার টেনে রাখতে। পড়ছি আর ভাবছি, কতো যুদ্ধ করলে তবে এমন একজন মহীয়সী হওয়া যায়। যুদ্ধদিনের কথা আমি আর নাই লিখলাম, পড়ে নিবেন তার নিজের কথায়। স্যালুট ম্যাম, জীবন্ত কিংবদন্তী আপনি।


বইটি আমাকে উপহার দিয়েছিলেন, মহামান্যা অদিতি