Wednesday, 6 September 2017

জার্নাল জুলাই - আগষ্ট

সেই অনেক অনেক কাল আগে বাড়ি’র কাছে আরশী নগর “প্যারিস” বেড়াতে আসতাম। নেদারল্যান্ডস থেকে বের হওয়ার তখন দুটোই সুলভ জায়গা, জার্মানী কিংবা ফ্রান্স। জার্মানী গেলে অনুধাবন করা কষ্ট হত যে নেদারল্যান্ডসের বাইরে এসেছি, ফ্রান্স তথা প্যারিসই ছিলো তখন আমাদের একমাত্র বিদেশ। “দ্যা সিটি অলোয়েজ লিভ”দিনে সুন্দর আর রাতে যাকে বলে তিলোত্তমা। আইফেল টাওয়ার এর পাদদেশে, সিনাইনদীর তীরে বসে, নদীর ওপরের সমস্ত কারুকাজ করা ব্রীজ গুলোতে তখন আলো জ্বলে উঠেছে, আইফেল টাওয়ারকে ঘিরেও রয়েছে হাজার আলোর মালা, সুখ সুখ অসহ্য একটা কষ্টে মনে হত – এ সময় এখানেই শেষ হয়ে যাক। মরন এলেও এখানেই, এই মুহূর্তটাই সত্যি হোক।

হেলেন কেলার’র কে বার বার মনে পড়তো, The best and most beautiful things in the world cannot be seen or even touched. They must be felt with the heart.

নেদারল্যান্ডস থেকে গাড়িতে প্যারিস আসার সময়, ফ্রান্সের জাতীয় বিমান বন্দর “Charles de Gaulle Airport” এর পাশ দিয়ে আসতে হতো। হাইওয়ের ওপর ছিলো রানওয়ে। আমাদের মাথার ওপরে প্লেন নামছে, উড়ছে। মুগ্ধ হয়ে দেখতাম, যদিও গাড়িটা হাইওয়ে তথা রানওয়েটা ক্রস করার সময় মাথাটা একটু শিরশির করত, এই বুঝি পরলো মাথায় একটা অনুভূতি হত বৈকি। যত কটা রানওয়ে, যতক্ষণ দেখা যেতো চেয়ে থাকতাম আদেখেলা মত ভাবতাম যদি এখান থেকে একবার উড়তে পেতাম

কালের বির্বতনে সিনাই, মাস, রাইন, মুজেল সব নদীতে অনেক পানি বয়ে গেছে জায়গার অভাবে নেদারল্যান্ডসের “স্কিপল” বিমানবন্দরও হাইওয়ে’তে রানওয়ে তৈরী করেছে। মাথার ওপর প্লেনের ওড়াওড়ি দেখতে আর প্যারিস না গেলেও চলে। যদিও এখনও একই ভাবে গ্রাম্য লোকের শহর দেখার মতই মুগ্ধ হই মাথাও ওপরে প্লেন ওড়া দেখে।  আজ এতো এতো দিন পর অবশেষে ফ্রান্সের “Charles de Gaulle Airport” থেকে জন এফ কেনেডী’তে উড়ছি .................. কারণ অবশ্য – ডেল্টা এখান থেকেই সবচেয়ে সস্তার ডীলটা দিচ্ছিলো, আর কিছু না J

যদি সুস্থ ভাবে পৌঁছে যাই তবে আবার ফেসবুকে সবার সাথে দেখা হবে ...............

*****




কাছের মানুষ যারা আছে তারা জানেজন্মদিন নিয়ে আমার আদিখ্যেতার শেষ নেই প্রিয়জনদের জন্মদিন নিয়ে আহ্লাদপনা করতে আবার নিজের জন্মদিনে প্রিয়জনদের দ্বারা আহ্লাদিত হতে দুটোতেই আমার আগ্রহের সীমা নেই। অফিসেও সবাইকে পাগল বানিয়ে দেই, ওরা অবাক হয়ে বলেই ফেলে, এই নিয়ে এতো আনন্দের কি আছে? হয়ত মনে মনে বলে, তাও এই বয়সে J
আমি দ্বিগুন উৎসাহে বলি, আরে এটা বছরে একবার ই আসে।
প্রতিদিন কত ঘটনায় – অঘটনায় কতজন আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এই যে রোজ দিন সুস্থ ভাবে বেঁচে আছি, আনন্দ করছি – এসবই তো প্রকৃতির উপহার। দুহাত উজার করে দিয়ে যাচ্ছে। আই কল ইট “সেলিব্রেটিং লাইফ”।

যারা যারা নিজেদের ব্যস্ত রুটিন থেকে সময় বের করে আমাকে বিভিন্ন ভাবে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন – অসীম কৃতজ্ঞতা জানবেন, যারা জানাতে চেয়েছিলেন কিন্তু জানাননি তারাও জানবেন J

আর যারা কষ্ট করে বাড়ি বয়ে এসেছেন, নানা রকম মন ভোলানো উপহার নিয়ে তাদের – লাভিউ – লাভিউ – লাভিউ – সামনের বছর এর চেয়েও আরও ভাল চাই :P আর যারা যারা এখনো পাঠাননি তারা বাল্যকালে “সময়ের মর্যাদা” রচনাটি পড়েননি – কি আর করা

গত পাঁচ বছর  ধরে জুলাই মাস আসলেই, ইনবক্সে একটা ম্যসেজ আসে, আপুজন্মদিন তো এসে গেলো --- আমার মনে আসার আগেই, তার মোবাইলের এলার্মের কোথাও ঘন্টা বাজে তারপর চৌদ্দ দিনে চৌদ্দ বার রিমাইন্ড দেয় J অন লাইন জগত নিয়ে অনেকের অভিযোগ আছে, ফেইক মানুষ, এই কিংবা ঐ। আমি আমার জীবনে সমমনা, সবচেয়ে কেয়ারিং ভাল বন্ধুদের দেখাও অনলাইনেই পেয়েছি।

শান্ত কি আমার বন্ধু? শান্ত আমার বোনদেরও বন্ধু। আব্বু’র সাথেও রাজনীতি নিয়ে আলাপ করে। ভাইয়া’রও ফেসবুক ফ্রেন্ড। কিন্তু জন্মদিনের শুভেচ্ছা সব সময়ই আমি পাই। শান্ত’র লেখা দিয়ে শুরু হয় আমার জন্মতিথি’র পুনরাবর্তন। ড্যাম প্রিভিলেইজড মি – এখন তো রীতিমত অপেক্ষা করি – পরীক্ষার রেজাল্ট পাবার মত - এই বছরের কি রিভিউ আসে দেখি টাইপ অবস্থা আমার............... ধন্যবাদ দিলে শান্ত খুব বিরক্ত হয় তাই ---- টেকিং ইট ফো গ্র্যান্টেড – এজ বিফোর – ইট মিন্স আ লট টু মি শান্ত – শুভেচ্ছা অফুরন্ত  … আপাতত দু হাত পেতে নিয়েই যাচ্ছি ……… সামনেও কোনদিন শোধ দেবো সেই সম্ভাবনা ক্ষীণজানি না ………

বার্থ ডে গার্লের পক্ষ থেকে আবারওকৃতজ্ঞতা সবাইকে

*****

আরভিন আর মেঘলা বহুদিন পর এক সাথে হয়েছে। দু’জনের জন্মের পর এই প্রথম এত দিন পর দেখা। টডলার থেকে টীনে --- দু ভাইবোনের গল্পের, হাসির কোন সীমা পরিসীমা নেই। কতক্ষণ ট্যাব তো কতক্ষণ ফোন, তারপর ধাক্কাধাক্কি আবার খিকখিক ... চলছে তো চলছেই --- স্কুলের গল্প, জোক্স, বন্ধুদের গল্প ...

এর মাঝে আছে সুখ – দুঃখের গল্প। মেঘ খুবই দুঃখী গলায় তার ভাইকে জানাচ্ছে, মামি’র যা পছন্দ তাই কেনে আর কিনছে কিন্তু সে কিছু চাইলেই না করে দেয়। সব টাকা একা খরচ করে, নিজে’রটা বাবা’রটা। আরভিন আরও দুঃখী গলায় জানালো, বেঙ্গলী মম’স আর সো মীন, দুষ্টুমি করলে পিট্টিও দেয় যেটা এমেরিকান ল’তে নিষেধ।

শুধু তারা তখনও জানে না, এই ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমী’র গল্প দুই মা ঠিক শুনে যাবে আর তাদের আরো “খিচাই” হবে। মীন কাহাকে বলে, কত প্রকার আর কি কি, প্রত্যেক প্রকার উদাহরণ সহ জানা যাবে। ছোট খালাম্মা এলে যেমন হত বাসায় সে’রকম একটা অবস্থা, বাসায় এখন দুই পার্টি – দুই বোন ভার্সেস দুই ভাই বোন। ফিসফিস করলেই বলি, বল, কি বললি আমাদের নামে, বল বলছি --- দুটোই কাঁদো কাঁদো বলে, আমরা সারাক্ষণ তোমাদের নামে বলি না, আমাদের কি নিজেদের গল্প নেই ...............।।

প্রতিবার বাড়ি এলেই ক’দিন পরেই মনে হয়, এই হুটোপুটি, মারামারি, খিকখিক, লেগ পুলিং এগুলো ছেড়ে, এই মানুষ গুলোকে ছেড়ে আমি এতো দূরে আসলে বাঁচি কিভাবে?  এই ঝগড়া, এই বকা, এই দুষ্টুমি, সব তো ফুড ফর লাইফ – এই আলো হাওয়া জল ছাড়া এই গাছটা কি আসলে বেঁচে থাকে! যে আমি রোজ দিন বাঁচি বলে ভাবি একা একা – সেই আমি আসলে আমি না – সেটা পুরো অন্য কেউ – বাড়িতে যে আমিটা থাকি, সবার সাথে, সবার মাঝে – সেটাই আসলে আমার আমি।  31-07-2017


*****


একটা কিছু কিনতে হবে নিশুর জন্যে। মহিলা জ্ঞানীদের জন্যে উপহার কেনা সহজ। গিফটের পেছনে একটা গল্প বানিয়ে বলতে হবে। মহিলা জ্ঞানীরা যাবতীয় গল্পগাথা বিশ্বাস করে। মতিন যদি রেললাইন থেকে একটা পাথর কুড়িয়ে নিয়ে বলে পাল আমলের পাথর। পালবংশের রাজা দেবপাল-এর পুত্র শূরপাল মন্দির বানানোর জন্যে পাথর সংগ্রহ করেছিলেন। পাথরগুলিকে শুদ্ধ করার জন্যে তিনি দুধ দিয়ে ধোয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমার হাতের পাথরটা তারই একটা।

এই কথা শুনে নিশু চোখ বড় বড় করে বলবে, বলো কী? পেয়েছ কোথায়?

প্রয়াত ডঃ হুমায়ূন আহমেদের লেখা “কে কথা কয়” উপন্যাসের থেকে উদ্ধৃত করা হলো ওপরের অংশটি।
তিনি আয়েশা ফয়েজের বড় পুত্র।
গুলতেকিন খান এর সাবেক স্বামী।
মেহের আফরোজ শাওন এর স্বামী।
নোভা, শীলা, বিপাশা এর পিতা।

২০০৬ এর বইমেলা এই বইটি’ত প্রথম থেকে তৃতীয় প্রকাশ কাল। আমার জানা মতে, বইটি কিংবা বইয়ের এই অংশটি নিয়ে কোথাও কোন আলোচনা হয় নি।

যাহোক, বইটিতে তাঁর লেখা একটি সুন্দর কবিতাও আছে,

জলে কার ছায়া পড়ে
কার ছায়া জলে
সেই ছায়া ঘুরে ফিরে
কার কথা বলে?
কে ছিল সেই শিশু
কী তাহার নাম?
কেন সে ছায়ারে তার
করিছে প্রণাম।



*****


১৭ কোটি মানুষের ছোট্ট এই ভূখণ্ডবাংলাদেশদুর্ণীতি আর অপরাধের বিভিন্ন র‍্যাঙ্কিয়ে প্রায়শঃই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পরিমাপে শীর্ষে অবস্থান করে। কিন্তু সে সব অপরাধের কারণে আজ পর্যন্ত দেশ থেকে কাউকে নির্বাসনে পাঠানো হয় নি। যুগে যুগে নির্বাসিত হয়েছে “ভিন্ন মতে” চিন্তা করা, লেখালেখি করা লোকেরা। জঘন্য সব অপরাধের ঘৃণ্য অপরাধীদের দেশের মাটিতে জায়গা হয়, রাজনীতি শুধু নয় মন্ত্রী সভায় স্থান হয়, জায়গা পায় না “ভিন্ন মতালম্বীরা”।

এক মাত্র “ছাগু সম্প্রদায়” ছাড়া কখনোই দু’জন স্বতন্ত্র ব্যক্তি সব বিষয়ে একমত হতে পারে না। যুক্তিশীল – চিন্তাশীল মানুষ’রা একই বিষয়ে ভিন্ন মত রাখতে পারেন। নানা বিষয়ে ঘরের মানুষ – বন্ধুদের সাথে মত পার্থক্য থাকেই। তাই বলে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো’র মত সাধারণ একটা সৌজন্যে বোধে মানুষের এতো কার্পণ্য এতো রাজনীতি!

নির্দ্বিধায় বলছি, লেখক তসলিমা নাসরীনের জন্মদিনে একরাশ শুভেচ্ছা। চিরআয়ুষ্মতী হোন, সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন। যে কথা গুলো কেউ কখনো বলতে সাহস করেনি সেগুলো বলার চেষ্টা করার জন্যে আপনি চির স্মরণীয়।

যারা যারা লেখক তসলিমা নাসরীন আর বেগম রোকেয়ার তুলনা করে প্যাঁচ কষাচ্ছেন, বুকে সুখ সুখ বাতাস অনুভব করছেন তাদের বিনীত কন্ঠে জানাচ্ছি, কষ্ট করে ইতিহাসটা একবার ভাল করে পড়ে নেবেন।  যখন বেগম রোকেয়া বেঁচে ছিলেন, তিনি কি “নন্দিত” ছিলেন? আমাদের পূর্ব পুরুষরা কি এতোটাই দূরদর্শী আর প্রগতিশীল ছিলেন? না, ছিলেন না। তাহলে কি ঠাকুরবাড়ির মত কিছু মুসলিম বাড়িও থাকত না? ধনী মুসলমান তো অনেক ছিলেন, কারো নাম করতে পারেন যে রোকেয়া’র সমর্থনে পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন? হ্যাঁ, চিরকালই মুসলমান’রা গোঁড়া, নতুনকে গ্রহন করতে ভয় পায়, প্রথা ভাঙার বিপক্ষে। বেগম রোকেয়া তার বিরুদ্ধে’র আন্দোলন কে থামাতে, মোল্লাদের সাথে আপস করতে “সুলতানার স্বপ্ন“ ও “মতিচূরের” মত বই লিখেছিলেন। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তিনি “মতিচূর” বইয়ের বিভিন্ন প্রবন্ধ বিভিন্নভাবে পরিবর্তন ও অর্ন্তভুক্ত ও বাদ ও দিয়েছেন। আপোষ রফা করার পর ও তার মৃত্যুর পর হুজুররা তাঁর নামাজে জানাজায় অংশ গ্রহণ করেনি।

বেগম রোকেয়া জন্মেছিলেন ১৮৮০ সালে। তাকে “বেগম রোকেয়া” হিসেবে স্বীকৃতি পেতে কম পক্ষে একশ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল।  তসলিমাকে হয়ত তার চেয়ে অনেক বেশী সময়ই অপেক্ষা করতে হবে।  আমরা ফেসবুক ব্যবহার করে ডিজিটাল হলেও চিন্তা ভাবনায় আমাদের পূর্ব পুরুষদের থেকে বহু গুনে পিছিয়ে গেছি। সামনে আগাই নি মোটেও।

তবুও এই আশা বুকে রাখি, সূর্য একদিন উঠবেই – ভোর হবেই। ততদিন তসলিমা বরং পাখি হয়েই ব্রক্ষ্মপুত্রের পাড়ে পাড়ে নিজের শৈশবের গন্ধ খুঁজে ফিরুক


*****


“অপরাধী”দের পরিবার’রা ভীষণ অবাক হয়েছে, এত বড় “অপরাধের” পর “অপরাধী”রা বাড়ি ফিরে তাদের পরিজনদের সাথে খুব স্বাভাবিক আচরন করেছে।
এটা জেনে আপনি অবাক হয়েছেন? “অবাক” কান্ড কেনো? রোজ যে বাসে, রাস্তায়, অফিসে, ক্যাফে’তে মেয়েরা হেনস্থা হয়, সেই মানুষ গুলো কারা থাকে? তারা কি আমাদের এই সমাজের কিংবা পরিবারর অংশ নয়? মেয়েদের নিয়ে খিস্তি করা পুরুষ গুলো কি আমাদের খুব অপরিচিত! তারা বাড়ি ফিরে তো খুব স্বাভাবিক আচরন করে! সব্জি-ফলে’র মত ভাল মেয়ে-মন্দ মেয়ে, পাকা মেয়ে-কচি মেয়ে, কালো মেয়ে – সাদা মেয়ে এ ধরনের জাজমেন্টাল মনোবৃত্তি রাখা, কথায় কথায় মেয়েদের “স্লাট” বলা পুরুষ কি আমাদের খুব অপরিচিত নাকি তাদের আমরা আমাদের আশে পাশে “স্বাভাবিক”! ঘুরতে দেখি না!


ক্রিকেট বিজয়ের উৎসব, গাওছিয়া, বইমেলা, বৈশাখী মেলা কিংবা কনসার্ট গুলোতে যে মেয়েরা লাঞ্ছিত হয়, সেসব ঘটনায় আকাশ থেকে কোন এলিয়েন নামে না। এই আমার আপনার পাশে থাকা দারুন সব সুস্থ স্বাভাবিক”! মানুষ’রাই তো এই ঘটনা গুলো ঘটা

বাংলাদেশে বড় হয়েছে এমন কোন মেয়ে আছে যে বাসে, ভীড়ে, হুজুর, মাস্টার, নিকট আত্মীয়, বন্ধু, কারো দ্বারা কখনো নির্যাতিত হয় নি! আর যারা এই নির্যাতন করেছে তারা কি আমাদের চিরচেনা সেই স্বাভাবিক মানুষ গুলো নয়! তাদের তো স্ত্রী, মা, বোন, কন্যা সবই আছে!

যাহোক, “রূপা” গেছে তার পরিবার বুঝবে। রামপুরা’র “বউ” ট্রমা সেন্টারে আছে, তার পরিবার ভুগবে। আমাদের কি? ক্রিকেট আনন্দ তো হলো, এবার ঈদ করি তারপর আবার অন্য কিছু খুঁজে নেবো।







Thursday, 6 July 2017

কিশোরী প্রেম ---- হারিয়ে যাওয়া সোনালী বেলাঃ

ভাল লাগা না লাগা খুবই ব্যক্তিগত অনুভূতি। এর কোন প্যাটার্ন নেই, স্টাইল নেই, যুক্তি নেই। কার কী ভাল লাগে আর না লাগে তাই দিয়ে অনেকসময় অনেকে কারো ব্যক্তিস্বত্তা নির্ধারন করতে চান, আমার নিজের ধারনা একটা পর্যায় পর্যন্ত হয়তো সেটা ঠিক হতে পারে কিন্তু পুরোপুরি সঠিক বোধহয় সেটা হয় না।


ছোট চাচার একটা বইয়ের আলমারী ছিল, সেটা তালা দেয়া থাকতো কারণ ওখানে বড়দের বই থাকতো। ক্লাশ নাইনে ওঠার পর যখন নিজেকে আসলে লায়েক ভাবতে শিখেছি তখন একদিন সেই আলমারী খোলা পেয়ে চটপট কিছু বই বের করে ফেলেছিলাম। এখনো মনে আছে তারমধ্যে ছিল, ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের “চিতা বহ্নিমান” নিমাই ভট্টাচার্যের “মেমসাহেব” আর আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের “রুপের হাটে বিকিকিনি”। 


আশুতোষের প্রথম বইটি পড়ার পর থেকেই আমি মুগ্ধ পাঠিকা আর ভক্ত বনে গেলাম তার। এরপর থেকে যার বাড়ি যাই, যেখানে যাই একটা সময় আঁতিপাঁতি শুধু তারই লেখা প্রেমের উপন্যাস খুঁজতাম, পড়তাম। বুদ্ধদেব গুহ এসে ভর করার আগে পর্যন্ত
 আশুতোষ সেই পুরো বেলা ভর করে রইলেন আমাতে। বলতে দ্বিধা নেই, আমি বোধহয় ওনার প্রেমে পড়ে গেছিলাম। ছোট চাচাকে সাহসে ভর করে জিজ্ঞেস করেছিলাম, উনি কোলকাতায় কোথায় থাকেন, চিঠি লেখার ঠিকানা কি? অকরুণ গলায় চাচা বললেন, তিনি মারা গেছেন কিছুদিন আগে।


আশুতোষের প্রথম ছাপা গল্প ছিল “নার্স মিত্র” যার থেকে সুচিত্রা সেন অভিনীত অসাধারণ বাংলা সিনেমা “দীপ জ্বেলে যাই” তৈরী হয়েছিল, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের “এই রাত তোমার আমার” গানটি এখনো সবার মুখে মুখে ফিরে। এই গল্পটি থেকে হিন্দীতেও সিনেমা তৈরী হয়েছিল “খামোশী” ওয়াহিদা রেহমান আর রাজেশ খান্না অভিনয় করেন তাতে। “ও সাম আজিব থী” কিশোর কুমারের গলায় এই গানটিও অসাধারণ জনপ্রিয়তা পায়। আমি সে ও সখা উপন্যাসটি থেকেও বাংলা এবং হিন্দীতে (বেমিশাল) সিনেমা হয়। সাত পাঁকে বাঁধা উপন্যাসটি থেকেও বাংলা আর হিন্দীতে (কোরা কাগজ) একই সময় সিনেমা তৈরী হয়। এছাড়াও তার বহু উপন্যাস ভারতবর্ষের অন্য অনেক ভাষায় অনুবাদ ও চিত্রিত হয়েছে।


তার উপন্যাসের নায়িকারা বেশীর ভাগই শ্যামবর্ন কিংবা কৃষ্ণবর্নের যাদের খুব সুন্দর কাজল কালো চোখ। নায়করা বেশীর ভাগই নায়িকার চোখের প্রেমে পড়তেন। পড়াশোনায় দূর্দান্ত ভাল হতেন এবং মানবিক গুনাবলীতে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যেতো নায়ককে হারিয়ে দিতেন। বেশীর ভাগ নায়িকা প্রধান উপন্যাস হতো। মেয়েদের অনুভূতি নিয়ে বেশী কাজ করতেন। একমাত্র ছেলের অকাল মৃত্যুর পর তিনি লেখালেখি থেকে ধরতে গেলে নিজেকে সরিয়ে নেন। এক অবধূতের সাক্ষাত পেয়ে সংসারকে প্রায় বিসর্জন দেন সে সময়। অবধূতকে নিয়েও একটি উপন্যাস লিখেছিলেন “অবধূত” নামেই। টীন এজ প্রেমের উপন্যাস লিখতে আজো তার জুড়ি মেলা ভার। 


দুটি প্রতীক্ষার কারণে, নগর পারে রুপনগর, পুরুষোত্তম, শত রুপে দেখা, সোনার হরিণ নেই এই বইয়ের নামগুলো এখনো মনে আছে ......... বাকীগুলো হারানো স্ম্বৃতি।


Saturday, 17 June 2017

আব্বু অ্যান্ড দ্য প্রেসিয়াস ট্রেইন জার্নি টু পুরী

খুব ছোটবেলায় যখন গাড়িতে ঢাকা থেকে কুমিল্লা যেতাম, প্রায় তিন চার ঘণ্টার এই লম্বা বোরিং জার্নিতে একটাই মজার ব্যাপার ছিলো, মাঝে দুটো ফেরি পার হওয়া। মায়েদের মুখে শুনেছিলাম আরো আগে তিনটে ফেরি পার হতে হতো, আর তখন দুটো। 

কিন্তু এই ফেরি পার হওয়া যতোটা মজাদার হওয়ার কথা ছিলো, ঠিক ততোটা কখনোই হতো না। ফেরীতে সেদ্ধ ডিম, ঝালমুড়ি, চানাচুর, ইত্যাদি অনেক মজাদার লোভনীয় খাবার পাওয়া যেতো। অনেকেই সে সব কিনে খেতো, কিন্তু আমাদের যেহেতু বাইরের জিনিস খাওয়া নিষেধ, আমরা লোভী চোখে সেদিকে তাকিয়ে থেকে, বিরসবদনে বাড়ি থেকে বয়ে নিয়ে আসা তিতাসের কেক, কমলা, আপেল, কলা এইসব খেতাম।

সেই বয়সে এসব নিয়ে কথা বলার সাহসও ছিলো না। ফেরিওয়ালার সব বাজে খাবার খেলে শরীর খারাপ করবে। আর্মি রুল- নিয়মের ব্যত্যয় হওয়ার কোন সুযোগ ছিলো না। বড় বয়সেও আর্মি অফিসারের সাথে থাকার কারণে নিয়মানুবর্তিতার পরাকাষ্ঠায় জীবন-যাপন। ওসব সহসা আর ছোঁয়া হয়ে ওঠে না।

বড় হয়ে আরিচায় ফেরি পারাপারেরও একটা অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সারাজীবন সংবাদপত্রে পড়া আর ছবি দেখা, বিখ্যাত সেই আরিচা ফেরি, তাতে চড়ে ইলিশ মাছ খাওয়া। ইলিশ মাছ থেকে শুরু করে মশলা দিয়ে পান পর্যন্ত খেয়েছি- বাদ ছিল না কিছুই!

দু হাজার পাঁচ সালে আমি তখন গরমের ছুটিতে মেঘ’কে নিয়ে ঢাকাতে। তার কিছুদিন আগেই আব্বু’র ওপেনহার্ট সার্জারি হলো দেবী শেঠী’র তত্ত্বাবধানে, তখন চেকাপের সময়। হঠাৎ প্ল্যান হলো সবাই যাবো। গেলাম কোলকাতা, ছোটবেলার মতো ভিক্টোরিয়া, গঙ্গার পাড়, নিউমার্কেট। আব্বু-আম্মি ধানসিঁড়িতে বসে স্বাস্থ্যকর সব লাঞ্চ - ডিনার করে, আর আমরা বোনেরা নিউ মার্কেটে হেঁটে হেঁটে দই বড়া, আলু টিকিয়া, চিকেন রোল, চাওমিন, জুস ইত্যাদি খেয়ে বেড়াই। এই আমাদের লাঞ্চ - এই আমাদের ডিনার। বোনেরা সব একসাথে ঘুরে বেড়াই, মুক্তির বিশাল আনন্দ!

দেবী শেঠী’র হাসপাতাল থেকে আব্বুকে কিছু টেস্ট করতে দেয়া হলো। বললো তিন-চার দিন পর যেতে। চিরচেনা কোলকাতায় তিন-চার দিন কী করবো! ঝট করে ঠিক করলাম, পুরি-ভূবনেশ্বর ঘুরে আসি।

গেলাম বাবা-মেয়ে ট্রেনের টিকেট করতে, টিকেট পাওয়া যাবে, কিন্তু লোকাল; থেমে থেমে যাবে। আর ডিরেক্ট যেতে হলে সে ট্রেনের জন্যে আমাদের আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। আমাদের তো এক মুহূর্তের জন্যেও তর সইছে না। লোকালের টিকেটই কেনা হলো।

ট্রেনে চড়ে বসার আনন্দই অপার। হোক লোকাল আর হোক আন্তঃনগর। শহুরে কোলাহলকে পেছনে ফেলে সবুজ দিগন্তের বুক চিরে কু ঝিকঝিক ডাকে এঁকেবেঁকে চলছে ছুটে দু’পায়ে ভর দিয়ে। ট্রেন প্রতি স্টেশনে থামছে আর ফেরিওয়ালা উঠছে তাদের পসরা নিয়ে। আমি সেই আবদারের গলায় আব্বুকে বললাম- আব্বু, প্রতি স্টেশনে যা উঠবে, আমি তাই খাবো, তুমি আমাকে খাওয়াবে। না করতে পারবে না। দশ হাজার মাইল দূর থেকে আসা মেয়ের আবদারকে সহসা কী না করা যায়!

যে কথা সেই কাজ। প্রতি স্টেশনে ফেরিওয়ালার কাছ থেকে ডাব, পেয়ারা, আমড়া, বুট ভাজা, সিঙ্গারা থেকে পাঁপড় ভাজা; সব খেতে খেতে যাচ্ছি। দুপুরের দিকে গরমে, দিগন্তজোড়া মাঠ থেকে জানালা দিয়ে বয়ে আসা শীতল বাতাসে, কিংবা হুটোপুটির ক্লান্তিতে দু’চোখের পাতা বন্ধ হয়ে এলো। ঘুমিয়ে পরলাম মায়ের কোলে মাথা দিয়ে। বিকেল বিকেল ঘুম ভেঙে উঠে বসলাম। দেখি আব্বু কয়েকটা প্যাকেট হাতে ধরে বসে আছে।

জিজ্ঞেস করলাম, আব্বু কী এসব?
আব্বু বললো, তুই না বললি, ট্রেনে যা উঠবে সব খাবি? তুই তো ঘুমিয়ে পরলি। তখন যে ফেরিওয়ালারা উঠলো সেসব কিনে রাখলাম। এখন খা।
বললাম, না এখন আর খাবো না।
সেসব বললে তো আর হবে না, আমি কিনে নিয়ে বসে আছি; এখন তোকে খেতে হবে।
সেই ভর সন্ধ্যেয় আবছা আঁধারে গড়িয়ে যাওয়া ট্রেনের কামরায় আবার বাবা মেয়ে’তে এই নিয়ে মধুর কথা’র পিঠে কথা’র খেলা।

জীবনে অনেককিছুই খুব সহজে পেয়ে গেছি বলে অনুভব করতে পারি নি কখনো, আবার অনেক কিছুর বিনিময়েও জীবনে অনেক কিছু মেলে না।

আপনাকে আমাদের ‘তুমি’ করে বলা নিষেধ। আপনার পারিবারিক নিয়ম, বংশের নিয়ম, ‘আপনি’ করে বলতে হবে, কারণ আপনার দাদা’ও আপনাকে আপনি করে বলতেন। যদিও অনেক সময়ই ‘তুমি’ এসে যায়। অন্যান্য অনেক পারিবারিক ঐতিহ্যের মতো ‘আপনি’ করে বলার এই ঐতিহ্যও ধরে রাখতে পারে নি আপনার ছেলে মেয়েরা। মাত্র এক জেনারেশনেই আপনার চোখের সামনে, আপনার নাতি-নাতনীরা তাদের বাবা মা’কে তো তুমি বলেই, আপনাকেও ‘তুমি’ বানিয়ে দেয়।

আব্বু আপনাকে কখনোই বলা হয় নি, আপনার ছেলেমেয়েরা আপনাকে কতোটা ভালো বাসে। যদিও আমরা জানি, আপনি জানেন, আপনি টের পান। আমাদের সংস্কৃতিতে নেই, ‘লাভিউ আব্বু’ বলাটা। হয়তো এখন আছে কিছুটা, কিন্তু আমরা তো পুরনো, তাই বদলাতে পারি না। আম্মি’কে যতোটা দ্রুত বুকে জড়াতে পারি, কাছে টানতে পারি, আপনাকে পারি না; কিন্তু ভালবাসি অনেক-অনেক-অনেক! আপনি আমাদের ‘এক আকাশ ছায়া’। হুমায়ূন আহমেদের ভাষায় বলতে হয়, ‘বটবৃক্ষ’।

মাঝে মাঝে যখন মেঘে’র জন্যে খাবার নিয়ে বসে থাকি, তখন কেবলই সেই ট্রেনের সন্ধ্যার কথা মনে হয়। আর ভাবি, মেয়ে ঘুমিয়ে পরলেও তার আবদার হাতে নিয়ে বাবা জাগে। হ্যাঁ আব্বু, সন্তানস্নেহই জাগিয়ে রাখে।

হ্যাপি ফাদার্স ডে আব্বু- আপনার চেয়ে ‘মায়া-ধরা’ কাউকে এ জীবনে দেখি নি, আর দেখা হবেও না- আর কেউ নেই। শত অপরাধ আপনার কাছে জমা আছে, জানি না চেয়েই ক্ষমা পেয়ে যাবো, আপনার মনের মতো না হয়েও জানি; ভালোবাসা কমে নি একটুকুও। চিরজীবন আপনাকে ঠিক এইভাবেই পাশে চাই। লাভিউ আব্বু, লাভিউ আ লট।

একটুপরেই আপনাকে ফোন করবো, বলবো-‘হ্যাপি ফাদার্স ডে’ আব্বু। আপনি লজ্জা লজ্জা গলায় ‘থ্যাঙ্কু’ বলে চট করে অন্যকথায় চলে যেতে চাইবেন জানি। আমি আবারও জিজ্ঞেস করবো, আজকে কে কী করলো আপনার জন্যে? আপনি খুব লজ্জিত গলায় জানাবেন, বৌমা এইকরেছে, রাজা ওই করেছে, আবার অন্যদিকে কথা ঘোরাতে চাইবেন। জানতে চাইবেন- ‘মেঘ কেমন আছে’। আমিও সবিস্তারে বলবো, মেঘ কী কী করেছে।

সবার জন্যে আপনি দু’হাত উজার করে দেবেন, কিন্তু আপনাকে কেউ কিছু দিতে গেলেই কুণ্ঠিত হয়ে যাবেন। আমাদের সবার অসুখে আপনি রাত জেগেছেন, কিন্তু আপনার অসুখে রাত জাগতে গেলেই বাধা দেন। বলেন, ‘আমি ভাল আছি’, ‘যা গিয়ে ঘুমা, কষ্ট হচ্ছে তোর’। কারো কাছ থেকে কিছু নিতে আপনি খুবই কুণ্ঠিত।

তারপরও ‘হ্যাপি ফাদার্স ডে আব্বু’। আমার ছোট আব্বুদেরকেও ফাদার্স ডে’র শুভেচ্ছা। তোমরা আমাদের জীবনে এসেছিলে বলেই না আমরা আজ কাণায় কাণায় পূর্ণ হয়েছি। মেঘের আব্বুকেও অনেক অনেক শুভেচ্ছা - পৃথিবীর সব বাবাদেরকে অভিনন্দন।

যথারীতি আমাদের ছোট্ট মেঘ, তার বাবাকে "হাউজ এরেস্ট" করে রেখে টুকটুক অনেক আয়োজন করে যাচ্ছে - আমি তাকে সাহায্য করছি আর ঠিক করে কিচ্ছু পারি না কেন, তার জন্যে বকা খাচ্ছি .........

Wednesday, 17 May 2017

মার্দাস ডে ২০১৭

খাবার টেবিলে ক’দিন আগে মেঘ হঠাৎ করে বলে উঠল, মাদার্স ডে কবে মা?

মেঘের মা বললো, সে তো তোমার জানার কথা মেঘ।

বললো, দাঁড়াও গুগুল করি।

মেঘের মা আশ্বানিত গলায় বললো, কি কি করবে এবার।

মেঘ আরও উৎসাহিত গলায় বললো, আমি প্রণ ককটেল আর সুশি খাবো মা, মাদার্স ডে তে।

এতক্ষণে বোঝা গেলো পেটের কথা – ভাত মাছে পোষাচ্ছে না, বাইরে খাওয়ার উপলক্ষ্য চাই
মেঘের মা বললো, আমি তো সুশি ভালবাসি না।

মেঘ বেশ দৃঢ় গলায় জবাব দিলো, ইট’স মাই মাদার্স ডে – আমি খাবো।

বরাবরের মতই এ বছরও মাদার্স ডে উপলক্ষ্যে আমাদের বাড়িতে বিশাল পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পড়াশোনার চাপে মেয়ে’কে শেষ মুহূর্তে পরিকল্পনা অনেক ছোট করে আনতে হয়েছেমেয়ে অনেক বার এপোলজি দিলো, মা আরো অনেক কিছু ভেবেছিলাম, হোম ওয়ার্ক এর জন্যে বাইরে যেতে পারলাম না, কেনাকাটা করতে পারলাম না। যদিও মেয়ে যা করে তাই আমার কাছে “অনেক কিছু – অনেক বেশি কিছু মনে হয়”, এটা বলার পরও মেঘের একটু মুখ ভার, মা’য়ের জন্যে অনেক বেশি করতে চায় সে। তার পরিকল্পনা খুবই গোপনীয় – মা কিছুই যেনো জানতে না পারে, মা’কে চমকে দিতে হবে, হ্যাপি করতে হবে। এ পরিকল্পনার মাস্টার হলো মেঘ, আইডিয়া’র আধার হলো ইউটিউব আর এসিস্ট করবে পাপা। কাল দুপুর থেকে বাড়িতে “আমার চলাফেরা’র” ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। উপহার, খাবার কিছুই যেনো মা আগে থেকে জেনে যেতে না পারে।

রান্নাঘরে হাঁড়ি খন্তা টুং টাং ছাপিয়ে সারাক্ষণ যে শব্দ গুলো আসছে, পাপা তুমি এভাবে করবে না, দেখো দেখো, ভিডিওতে দেখো ওরা কিভাবে করেছে
মেঘ তুমি বেশ জানো, এভাবে করলে বেশি ভাল হবে - এটার সায়েন্টিফিক কজ ----- আমার থেকে শেখো
উফফ পাপা, তুমি ধরবে না বলছি, ধরবে নানষ্ট করছো সব, এভবে সুন্দর হচ্ছে না

আমার অখন্ড অবসর, আমি সোফায় পা মুড়ে বসে চা খাচ্ছি আর ভাবছি, বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশ তথা সারা পৃথিবীতে মেয়েদের কে শ্বশুর বাড়িতে যেতে হয়েছে বলে, বিভিন্ন টার্ম পয়দা হয়েছে, বউ-শাশুড়ি, শাস ভি কাভি বহু থি ইত্যাদি প্রভৃতি ছেলেদের কে শ্বশুর বাড়ি যেতে হলে কি কি যুদ্ধ ঘটতো রান্নাঘরে আর বাড়িতে সেটা কল্পনা করার সময় এখন এসেছে তাদের উদারমনা, সহ্য ক্ষমতা, মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতার পরীক্ষা দেয়া এখন যুগের দাবী ……
ক্ষণে ক্ষণে আবার বলা’ও হচ্ছে, মায়ের মত কথা’টা শোনার ধৈর্য্যও নেই। রাবা খানের ভিডিও’র মত “অল দ্যা আব্বু’স” এখন সময়ের দাবী।

বাই দ্যা ওয়ে, হ্যাপি মাদার্স ডে টু অল মাদার্স

১৪/০৫/২০১৭


Wednesday, 10 May 2017

জার্নাল মে 2017

“পিঙ্ক” মুভিটার সাথে “আপন ঘর” মুভিটার পার্থক্য হবে এটুকুই – হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল জেনে এখানে এডভোকেট হিসেবে কোন অমিতাভ বচ্চন জান দিয়ে লড়বে না (হয়তো) আর কেইসে অনেক ভুল ভ্রান্তি আছে জেনেও “সারকামসিয়াল এভিডেন্টস” মাথায় রেখে কোন জাজ হয়ত এসটাব্লিশমেন্টের বিপক্ষে গিয়ে রায় দিয়ে এই ঘুনে ধরা রক্ষনশীল সমাজে কোন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবে না। যারা সারাক্ষণ মেয়েদের দায়ী করে যায় তাদের চৈতন্য উদয় হয়, এমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা হয়ত খুব কম। দিনের শেষে সিনেমা সিনেমাই আর বাস্তবতা বাস্তবতা।

সুযোগ আর কিছুটা সাহসের অভাবে যেসব সম্ভাব্য ধর্ষকরা ফেসবুকে বসে বিপুল জোশে মেয়েদের শালীনতা নিয়ে টানাটানি করছে, আর বলছে, “মেয়েরা ওখানে গিয়েছিলো কেন?” কেন ভাই? গেলে কি সমস্যা? আপনারা গেলে তো মেয়েদের সমস্যা হয় না, মেয়েরা গেলে আপনাদের সমস্যা কি? গেলেই ঝাপিঁয়ে পরতে হবে কেন? আপনারা কি হায়েনা? সমস্যা কি আপনাদের? ধর্ষককে ঘৃণা না করে, ধর্ষিতা কেন গেছে তা নিয়ে তোলপাড়? বাইরে যাওয়ার ইউনিভার্সেল অধিকার নিয়ে শুধু আপনারাই জন্মেছেন, সেটা ভাবার কারণ কি? মেয়েরা মহাকাশে অভিযান করতে পারলে, দেশের নেতৃত্ব দিতে পারলে, যুদ্ধ পরিচালনা করতে পারলে, বন্ধুর সাথে বাইরে যেতে পারবে না কেন?

“পিঙ্ক” এর সূত্রানুযায়ী যদি ধরি, তাহলে মেয়ে দুটো যদি কলগার্লও হয়, সেদিন তারা স্বেচ্ছায় সেখানে সম্মত ছিলো না, কি অধিকার ছিলো কারো তাদের জোর করার?

দিলদার সাহেব তো আরো জোশ, তিনি বলে যাচ্ছেন, তার দামড়া ছেলে কে ফাঁসানো হয়েছে। ফাঁসলো কেন আপনার বাবু সোনা? কোন ইন্টারেস্টে ফেঁসে গেলো, সেটা বলছেন না যে? এতো টাকা, বডিগার্ড, পুলিশ আপনার আয়ত্ত্বে থাকা সত্বেও ফেঁসে গেলো এই ডাব্বা গোল? আপনাদের বেতনভুক্ত পালিত দেহরক্ষী, এই ঘটনার ভিডিও করেছে, ভিডিও পুলিশের কাছে জমা দেন, দেখি, কি করে আপনার ছেলে ফাঁসলো? আপনার ছেলে ফেঁসে গেলো বলে, পিস্তল দিয়ে ভয় দেখালো? আবার এক মাস ধরে বিভিন্ন ভাবে হুমকিও দিয়ে গেলো? ফেঁসে যাওয়া লোকেরা বুঝি এই করে?

পুলিশের ভূমিকা এখানে সবচেয়ে আনন্দজনক। আসামীরা পুলিশের সাথে কোলাকুলি করার ছবি টুইট করছে আর পুলিশ তাদের খুঁজে পায় না। এই ছোট্ট দেশে, যেখানে মানুষের মাথার সাথে মানুষের মাথা ঠোকর খায়, পুলিশ আসামী প্রায়ই খুঁজে পায় না । ভাই, দায়িত্ব ঠিক মতো যখন পালন করতে পারেন না, তখন বেতন নিয়েন না। বেতন নিতে আপনাদের লজ্জা হয় না। ফেসবুকে তো আসামীদের ছবি দিয়ে সয়লাব, অপেক্ষা করেন, জনগন এনে আপনাদের হাতে দিয়ে যাবে, তাতেও লাভ হবে না অবশ্য আপনারা আবার নানা উছিলা দিয়ে তাদের ছেড়ে দিবেন।

যে সিনেমার শেষটা জানা থাকে সেটা দেখে যাওয়া ক্লিশে, ক্লান্তিকরও বটে। তবুও প্রতিবাদ করে সামনে আসার জন্যে মেয়ে দু’টোকে অভিবাদন।

https://www.instagram.com/nayem.ashraf/

11-05-2017 


Wednesday, 12 April 2017

জার্নাল এপ্রিল 2017

“অপু বিশ্বাস” বাংলাদেশ চলচিত্রের একজন স্বনামধন্য নায়িকা। বাংলাদেশের সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে তিনি খুব সাহসী একটি “পেশা”কে নির্বাচন করেছন এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অর্থনৈতিক ভাবে, সামাজিক ভাবে, পারিবারিক ভাবে যথেষ্ঠ প্রিভিলেজড। প্রকৃতির রীতি মেনে জীবনে প্রেম আসে আর নানা কারণে সে প্রেম শেষ পর্যন্ত অনেকেরই তিক্ততায় গড়ায়। মানুষের জীবনে এটা এমন কিছু অভিনব ঘটনা ও নয়। তার সাথে তার স্বামীর মনোমালিন্য হতে পারে, বিবাহ বিচ্ছেদ ও সন্তানের অধিকারের দাবী নিয়ে মত পার্থক্য হওয়াটা ও খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। সে সব মত পার্থক্য কে মেটানোর জন্যে, “আইন” আছে, “আদালত” আছে, “সালিশ” আছে। টিভি চ্যানেল কবে থেকে স্বামী – স্ত্রী’র মনোমালিন্য মধ্যস্থতা করার ভূমিকায় অবতীর্ণ হলো?
                       
যে কীটস্য কীট তার ভালবাসার দাবী, সন্তানের কথা অস্বীকার করে, পাশে থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, কোন আত্ম মর্যাদা জ্ঞান থাকা মেয়ে কি করে তার পরিচয়ে তার আত্মজ কে বড় করতে পারে? ভুল করে যদি ভুল হয়েও যায়, ভুল তো ভুলই, প্রেমে মানুষের ভুল হয়ই। সেই ভুলের পরিচয় কে সারা জীবন টেনে বেড়ানোর জন্যে যে মেয়ে পাবলিকলি টিভিতে কান্নাকাটি করতে পারে তার জন্যে কোন প্রকার সমবেদনা বোধ করছি না। কোন কারণেই নয়। আইনের দরজায় না গিয়ে, টিভির দরজায় কেনো গেলেন অপু বিশ্বাস? আপনাকে যে অপমান করা হলো তার প্রতিকার না চেয়ে করুণা কেনো চাইলেন?  এ ধরনের নিম্ন শ্রেণী’র পশু যদি তার সন্তানের পরিচয় নিজেও দাবী করে, যে কোন আত্ম মর্যাদা সম্পন্ন মেয়ে তা সমযার্দায় অস্বীকার করত। অপু বিশ্বাস, আপনার সন্তানকে বড় করতে, মানুষ করতে – প্রতারক শাকিবের কি ভূমিকা থাকতে পারে? হাজার হাজার সিঙ্গেল মা তার সন্তানকে সফলতার সাথে পরম মমতায় যত্নে বড় করে যাচ্ছেন দেশে ও বিদেশে। আপনি তাদের গল্প জানেন?

আজ যদি বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে, সামাজিক ভাবে অত্যাচারিত, অর্থনৈতিক ভাবে অপ্রতিষ্ঠিত, পারিবারিক সমর্থন ছাড়া   কোন মেয়ে মানসিক ভাবে ভেঙে পরে কান্নাকাটি করতো তাও এক ধরনের মমতা অনুভব করতাম কিন্তু “নো মের্সি” ফর “অপু বিশ্বাস”। প্রতিষ্ঠিত নারী’র নামের কলঙ্ক আপনি।

নূরা পাগলা পরছে “মঙ্গল শোভাযাত্রা” নিয়ে আর প্রধানমন্ত্রী “ভাস্কর্য” নিয়ে। পাতানো খেলা আবার জমে উঠেছে। বঙ্গবন্ধু’র অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনা প্রধানমন্ত্রী’র হাতে পরে এতো দূর পিছিয়েছে যে, সেখান থেকে বাংলাদেশ আবার কবে সামনে হাঁটবে, আদৌ কি হাটঁতে পারবে কি, তা আজ অনিশ্চিত। ঐশ্বরিক কোন শক্তিতে আস্থা থাকলে, আপনার সুস্বাস্থ্যের জন্যে প্রার্থণা করতাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। যে বিষ কাঁটা আপনি নিজ হাতে বোপন করে দিলেন, তার ফলাফল যেনো নিজে দেখে যেতে পারেন, সেই কামনা করি।

জোক অফ দ্যা ডে “খালেদা জিয়া বলেছেন, হাসিনা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করছে” – বেচারী, সোল এজেন্সী হাত ছাড়া হয়ে গেলো। ব্যবসায় ভাগীদার কার ভাল লাগে।


 12-04-2017

Sunday, 9 April 2017

বিশ্বের সবচেয়ে সুখী হলো ওলন্দাজ বাচ্চারা – তাদের সুখের আটটি গোপন কারণ

দু’হাজার তের সালে ইউনিসেফ উন্নত বিশ্বের বাচ্চাদের ওপর “Child Well Being in Rich Country Survey” নামে একটি সমীক্ষা চালায়। এই সমীক্ষায় ডাচ বাচ্চারা পৃথিবীর সুখী বাচ্চা দের তালিকায় এক নম্বরে উঠে আসে। সমীক্ষার পাঁচটি বিভাগের মধ্যে যে তিনটিতে তারা সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়ে এগিয়ে থাকে সেগুলো হলো - জীবনধারণে বস্তুগত সুযোগ-সুবিধা, পড়াশোনার সুযোগ-সুবিধা এবং আচার-ব্যবহার ও জীবন যাত্রার ঝুঁকি। এরকম সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র জার্মান ইউনিসেফ-এরই নয়। ব্রিটেন চাইল্ড প্রোভার্টি একশন গ্রুপ, দি ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশান এবং ইউনিসেফ ইন্টারন্যাশনাল সবাই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, ডাচ শিশুরাই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী শিশু।
প্রশ্ন আসতে পারে, কেন ডাচ বাচ্চারা এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী বাচ্চা? আমি একজন প্রবাসী মা, এবং দীর্ঘদিন ধরে একটি ডাচ শহরতলীতে বাস করি। আমার পক্ষে ডাচ বাচ্চাদের সুখের পিছনে অন্তত: আটটি গোপন কারণ খুঁজে পাওয়াটা খুব কঠিন কিছু নয়।
১. ডাচ পিতা-মাতারা পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষদের অন্তর্ভুক্ত :
পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী বাচ্চাদের বাবা মায়েরা যে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষদের মধ্যে পড়বে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ কারা, এ নিয়ে জাতিসংঘের প্রথম প্রতিবেদনে “ডাচ’রা (১২ই সেপ্টেম্বর ২০১৩) পৃথিবীর চার নম্বর সুখী মানুষদের তালিকায় ছিলো। এই ‘সুখ সূচক’ নির্ধারণে সামাজিক অগ্রগ্রতিকে খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। এটা বুঝতে কারোই কষ্ট হবার কথা নয় যে, আসলে সুখী বাবা-মা মানেই সুখী বাচ্চাকাচ্চা।
২. ডাচ মায়েরা প্রকৃত সুখী মা :
ডাচ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সাংবাদিক এলেন ডা ব্রুন (Ellen de Bruin) এ বিষয়ের ওপর “ডাচ মহিলারা কখনোই বিষন্নতায় ভোগেন না,” নামে একটি বই লিখেছেন যেখানে তিনি বিষয়টি ব্যাখা করেছেন। তাঁর ভাষায়, “ব্যক্তিগত পছন্দের স্বাধিনতাই হলো মূল চাবিকাঠি। ডাচেরা তাদের পছন্দের জীবনসঙ্গী, ধর্ম এবং লিঙ্গ-বৈশিষ্ট্য বেছে নিতে পারে। আমরা সাধারণ ড্রাগস গুলি নিজেরাই বেছে নিয়ে ব্যবহার করতে পারি। এবং, বলার স্বাধীনতা আছে আমাদের। নেদারল্যান্ডস একটা খুবই মুক্তমনা দেশ।”
আমেরিকা এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নারীদের মত রুপ, আতিথিয়তা এবং চটকদারিতা ডাচ নারীদের অগ্রাধিকারের তালিকায় তেমন উপরের দিকে স্থান পায় না। তবে, সাধারণ ভাবে বললে বলতে হয়, ব্রাউন ডাচ নারীদের সম্বন্ধে কিছু অবিবেচনাপ্রসুত মন্তব্যও করেছেন। যেমন, তিনি বলেছেন, ডাচ নারীরা ফ্যাশনেবাল জামা কাপড় পরতে জানে না (বিশেষ করে যখন তারা সাইকেল চালিয়ে সব জায়গায় যায়), রাতের খাবারের সময় কেউ যদি তাদের বাড়িতে অপ্রত্যাশিত ভাবে উপস্থিত হয় তাহলে তাকে না খাইয়ে বিদায় করে দেয়, এবং তারা তাদের পুরুষদের ওপর বেশ কর্তৃত্বপরায়ণ।
ডাচ নারীরা চাকরী আর সংসারের কাজের মধ্যে একটি সুন্দর ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে বলে হয়ত তারা এতো সুখী। পৃথিবীর আর সব OECD দেশের বেশীর ভাগ নারীদের মত ডাচ নারীরাও তাদের কর্ম জীবন উপভোগ করে। ডাচ নারীদের আটশট্টি ভাগ পার্ট টাইম চাকুরী করে। মোটামুটি ভাবে বলতে গেলে, তাঁরা সপ্তাহে পঁচিশ ঘন্টা কাজ করেন।
লিসা ব্যালকিনস হুফফিংগন (Lisa Belkin’S Huffington) এর What Mothers Really Want: To Opt In Between (INFOGRAPHIC)” প্রতিবেদনে দেখা যায় একটি বিরাট সংখ্যক মা তাঁদের সংসার আর চাকুরীর মাঝে আদর্শ ভারসাম্য রেখে পার্ট টাইম কাজ করতে চান। আমেরিকাতে ২১২৭ জন মায়ের ওপর সমীক্ষা চালানো লিসা ব্যালকিনস হুফফিংগন এর মতে, যাদের বাড়িতে আঠারো বছরের নীচে সন্তান আছে তাদের শতকরা পয়ষট্টি ভাগ পার্ট টাইম চাকুরী করতে চায়, শতকরা নয় ভাগ ফুল টাইম চাকুরী করতে চায় আর শতকরা ছাব্বিশ ভাগ কাজ না করে ঘরে বসে থাকতে চায়।
৩. ডাচ বাবাদের পার্ট টাইম চাকুরীর মাধ্যমে সংসারে সাহায্য করা ও বাচ্চা প্রতিপালনে সমান সমান দায়িত্ব পালন করা :
“একুশ শতাব্দী’তে পার্ট টাইম চাকুরী” করা নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস একটি প্রতিবেদন ছেপেছিলো যেখানে ডাচ জনগোষ্ঠী’র পার্ট টাইম চাকুরী প্রীতি ব্যাপারটিকে উল্লেখযোগ্য ভাবে তুলে ধরা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে ডাচ সরকার এ দেশের নাগরিক পার্ট টাইম চাকুরীজীবীদেরকে ফুল টাইম চাকুরীজীবিদের সমান সুযোগ ও মর্যাদা দিয়ে কর্ম জীবন ও ব্যক্তি জীবনের মধ্যে সামঞ্জস্য আনার রাস্তা পাকা করে দিয়েছে। প্রতি তিন জনে একজন বাবা এখন এই সুযোগটি নিচ্ছেন। তাঁদের নারী সহযোগীদের মত দিন দিন অনেক বাবা’ই সপ্তাহের তিন দিন বা চার দিন কাজ করে বাকি একদিন সন্তানদের সাথে কাটান। “বাবা দিবস (Papa day)” এখন শুধু মুখের কথা নয় বরং ডাচ জীবনের একটি অংশ। ডাচ বাবারা সন্তান লালন পালনে নিজের দায়িত্ব গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেন এবং নিজের ভূমিকাটি সযতনে পালন করেন।
৪. ডাচ বাচ্চাদের স্কুলে প্রতিযোগিতা করার চাপ না থাকার কারণে তাদের মানসিক পীড়ন খুব কম, এবং তাদের কোন বাড়ির কাজ থাকলেও খুব সামান্য থাকে তাই তাদের স্কুলের পরে খেলার সুযোগও পর্যাপ্ত :
ডাচ প্রাইমারি স্কুলে দশ বছরের নীচে বাচ্চাদের কোন বাড়ির কাজ থাকে না। তাদেরকে শুধু লিখতে ও পড়তে শেখাটাকে উপভোগ করতে উৎসাহিত করা হয়। বারো বছর বয়সে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির সময় একটি বিশেষ পরীক্ষা নেয়া হয় বাচ্চাদের। এটাকে “CITO” পরীক্ষা বলা হয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে বাচ্চাদের মেধা আর বুদ্ধিবৃত্তির একটা ধারনা নেয়া হয় । এটি দিয়ে আসলে নির্ধারন করা হয় ব্যক্তিগত পর্যায়ে কোন ধরণের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষায় তারা ভাল করতে পারবে।
এই কারনে, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরাও “SATs কিংবা “ACTs” পড়ার অমানুষিক মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়না কিংবা কেতাবী বিদ্যায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের প্রতিযোগিতা’র মুখোমুখি হয় না। বেশীর ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্যে কোন আনুষ্ঠানিক প্রতিযোগিতার মুখোমুখিও তাদের হতে হয় না।
স্কুল নিয়ে ডাচ বাচ্চাদের এই আয়েশী আর সুখী মনোভাব আমাকে আমার বাড়ির কথা মনে করিয়ে দেয়। আমি এখনও স্পষ্ট মনে করতে পারি যেদিন আমি আমার হাই স্কুলের প্রথম ক্লাশ শুরু করি সেদিন থেকেই একটা “ভাল” কলেজ বাছাই করা নিয়ে বাড়ির ভেতর আর বাইরে থেকে ভীষণ চাপ শুরু হয়ে ছিলো আমার ওপর। যখন যদি ভাবি আমার ছেলেটা পড়াশোনার আনন্দের জন্য স্কুলে যেতে পারছে না, তাকে সারাক্ষণ প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে কৃতকার্য হওয়ার জন্যে চেষ্টা করতে হচ্ছে, তো তাহলে ভয়ে আমার ভেতরটা শুকিয়ে আসে।
৫. তারা সকালের নাস্তায় সাদা রুটির ওপর মাখন বা চকলেটের টুকরো এসব খেতে পায় প্রত্যেকদিন, যেটা কোনও সহজ কথা নয়ঃ
যখন জাতিসংঘ বললো ডাচ বাচ্চারা স্বাস্থ্যকর নাস্তা খায়, আমি খুব মজা পেয়েছিলাম। ডাচদের একটি গতানুগতিক সকালের নাস্তা মানে প্রায়শই সাদা পাউরুটি আর তার ওপর মাখন এবং চকলেট - তা আপনি বড় বা ছোট যে বয়সেরই হন না কেন। এক টুকরো রুটির সাথে কখনো পনির কিংবা চিকন বা এক টুকরো হ্যামই হলো ডাচদের দুপুরের খাবার, এবং সেটাকে আমার কাছে তেমন ভাল খাবার বলে মনে হয়নি।
জাতিসংঘের সমীক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার উঠে এসেছে - ডাচ শিশু আর কিশোর-কিশোরীরা নিয়মিত পরিবারের সাথে সকালে নাস্তা করে। পৃথিবীর অন্য কোন দেশে শিশু কিশোররা এত নিয়মিত ভাবে পরিবারের সাথে নাস্তা করে না। সকালের এই নাস্তা খাওয়ার সাথে যে শুধু স্কুলে ভাল করা আর আচরনের সমস্যা কমিয়ে আনার যোগ আছে তাই নয়, রোজ এভাবে একসাথে নাস্তা খাওয়ার কারণে পরিবারের সবার একসাথে অনেকটা সময় কাটানো হয়, ফলে পারিবারিক বন্ধন মজবুত হয় আর স্বতন্ত্র পরিচয়ে বেড়ে ওঠাটাও সহজ হয়।
৬. তাদের নিজেদের মতামত ব্যক্ত করার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে :
ডাচ বাচ্চাদের প্রতি মনযোগ দিয়ে নজর দেওয়া হয় এবং তাদের কথা সেভাবে শোনাও হয়। যে মুহূর্ত থেকে তারা নিজেদের বাক্য গুছিয়ে বলতে শেখে, সে মুহূর্ত থেকে তারা তাদের মতামত দিতে পারে আর তাদের বাবা মায়েরা সেটা মনোযোগ দিয়ে শোনেন।
৭. তাদের একটা দাদু-নানু দিবস থাকে :
সপ্তাহের কর্মব্যস্ত কোন দিনে আপনি যদি ডাচ বাচ্চাদের খেলার জায়গায় যান তাহলে আপনি সেখানে একজন নানু বা দাদুর দেখা পাবেন যিনি তাঁর নাতি নাতনীদের নিয়ে পার্কে গেছেন। অনেক ডাচ দিদু’রাই তাঁদের নাতি নাতনীদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে তাঁদের সন্তানদেরকে গর্বের সাথে সাহায্য করে থাকেন। দাদী-নানীদের থেকে সপ্তাহে একদিন সন্তানদের প্রতি যত্ন পাওয়াতে ডাচ বাবা মায়েরা তাদের কর্মজীবন আর ব্যক্তিজীবনের মাঝে সুন্দর একটা সমন্বয় ঘটাতে পারেন। দিদু’র সাহচর্য্য শিশুর নিজের আত্ম সম্মান গড়ে তুলতেও সাহায্য করে।
৮. ডাচ পরিবারদেরকে সংসার খরচের জন্যে ডাচ সরকার প্রতি মাসে টাকা দিয়ে থাকেঃ আমরা সবাই জানি বাচ্চা বড় করা খুবই খরচান্ত ব্যাপার হতে পারে। USDA এর মতে, ২০১২ সালে জন্ম নেয়া কোন বাচ্চা আঠারো হতে হতে, ২৪১.০৮০ ডলার খরচ হবে। কি বিশাল একটা অঙ্ক।
অর্থনৈতিক মন্দা বেড়ে যাওয়ার এই সময়ে যেখানে নানা রকম সরকারী সুবিধে কেটে দেয়া হচ্ছে তখনও ডাচ পরিবারগুলো ডাচ সরকার থেকে টাকা পাচ্ছে। বিশেষ করে বলতে হয়, ডাচ পরিবারগুলো বাচ্চাদের ভাতা (allouance), বাচ্চাদের জন্য সুবিধা বৃত্তি বা বেনিফিট স্টাইপেন্ড (যেটা বাবা মায়ের আয়ের ওপর নির্ভর করে), সম্মিলিত ছাড় বা কম্বিনেশান ডিসকাউন্ট (বাচ্চাদের ডে-কেয়ার ও অন্যান্য খরচ সামলানোর জন্যে করের একটা অংশ ফেরত পাওয়া) আর বাচ্চাদের যত্ন নেয়ার জন্য নিয়মিত ভাতা এসব পেতেই থাকবে। আপনাদের কথা জানি না কিন্তু আমি যদি আমার বাচ্চা বড় করার জন্যে টাকা পাই সেটা নিয়ে আমার কোন আপত্তি থাকবে না।
আমাদের বাস্তবতা অবশ্যই এরকম না যে আমরা একটি আদর্শ ডাচ পরিবারকে অনুসরন করবো। আমার স্বামী একজন উদ্যোক্তা, এবং তাঁর খন্ড কালীন চাকুরীর কোনও সুযোগ নেই। আর আমিও একজন বাড়িতে থাকা মা। যাইহোক, আমরা সুখী কারণ আমরা সেভাবেই জীবন যাপন করছি যেভাবে আমরা তা করতে চেয়েছিলাম। নেদারল্যান্ডসে বাস করার সুযোগ আমাদেরকে চিরায়ত ঐতিহ্যমন্ডিত পারিবারিক পরিবেশ উপভোগ করতে সাহায্য করেছে। আমার কোলের দুরন্ত দামাল ছেলেটার পেছনে সারাদিন দৌড়াতে থাকাটা যদিও আমার জন্যে অত্যন্ত ক্লান্তিকর, আমি সৃষ্টিকর্তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দেই সে সুযোগ তিনি আমাকে দিয়েছেন। এটাই ডাচ দেশে বসবাস করার প্রশান্তি।
রিনা মায়া কস্টা
ভাষান্তর
তানবীরা তালুকদার
৩০/০৩/২০১৭