Friday 19 February 2021

নৌকা ছাড়া অন্য কোন যান নেই যে শহরে

https://bangla.bdnews24.com/kidz/article1860906.bdnews?fbclid=IwAR1P4hSksnJUyYTbjq0LGpHY08YpOEidWTTB602Kx2aE0yits5thTU3yxu0 নেদারল্যান্ডসের ভেনিস বলে বিখ্যাত “খিটহর্ণ” আসলে একটা সাধারণ ছোট গ্রাম ছিলো। ছাব্বিশো ত্রিশ জন বসবাসকারী নিয়ে ওভারাইজেল প্রভিন্সের এই শহরটির কথা অনেকেই আগে জানতো না। উনিশো আটান্ন সালে বের্ট হান্সট্রা “ফানফেয়ার” সিনেমার শুটিং করেন এখানে। সিনেমাটি খুবই জনপ্রিয় হয়, প্রায় দুই দশমিক ছয় মিলিয়ন মানুষ এই সিনেমাটি হলে গিয়ে দেখেন। সাথে সাথে “খিটহর্ণ” এর নাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায়। পর্যটন হয়ে যায় আয়ের প্রধান উৎস। বিদেশ থেকেও পর্যটক আসা শুরু হয়, বিশেষ করে প্রতিবেশি জার্মানী আর বেলজিয়াম। এটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি গ্রাম ছিলো। বারোশো ত্রিশ সালে ভূমধ্যসাগর থেকে আগত শরনার্থী আর ফ্ল্যাজলেট্যান্টদের (নেদারল্যান্ডসের ছোট একটি গ্রামের অধিবাসী যাদের পেশা ছিলো মাছ ধরা আর কাঁদামাটি দিয়ে রাস্তা বানানো) দ্বারা এই গ্রামটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে তারা বুনো ছাগলের অনেক শিং পেয়েছিল এবং তাদের বন্দোবস্তের নাম হয় খেয়েনহর্ন। পরে এটি খেইথর্ন নামকরণ করা হয়, যা শেষ পর্যন্ত আবার খিটহর্ণ হয়ে যায়। গ্রামে রাখা অস্ত্রের ভান্ডারে এখনো ছাগলের শিংগুলো দেখা যায়। খিটহর্নের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় এর খনন কাজের মধ্যে। এগারশো সত্তর সালে নেদারল্যান্ডসে প্রচন্ড বন্যা হয়েছিলো, তাতে প্রায় সমস্ত নেদারল্যান্ডস তলিয়ে যায়। তার প্রায় একশো বছর পর একশোজন মানুষ এই অঞ্চলে বাস করতে শুরু করে। এই জায়গাটিকে বসবাসের উপযোগী করার জন্যে মাটি খননকারীরা তাদের পছন্দের জায়গার একদম তলদেশ থেকে ঘাসের চাপড়া তুলে তুলে ঘাস সরিয়ে মাটিগুলোকে আলাদা পাত্রে নিয়ে মাখতেন তারপর গর্তে ফেলে দিতেন শুকানোর জন্যে। পরে সেখান থেকে টুকরো টুকরো চাপড়া কেটে নেয়া হতো। ঘাসের চাপড়া খননের ফলে পুকুর এবং হ্রদ তৈরি হয়েছে। চাপড়াগুলো পরিবহনের জন্য খালের পর খাল খনন করা হয়েছিল। তাতে গ্রাম জুড়ে খন্ড খন্ড দ্বীপ তৈরি হয়। দ্বীপগুলিতে অনেক বাড়ি নির্মিত হয়েছিল। সেই দ্বীপগুলোতে কেবলমাত্র সেতুর মাধ্যমে পৌঁছানো যায়। যদিও এরমধ্যে একশো ছিয়াত্তরটির বেশি সেতু ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। যদিও শুরুর দিকে এটি ক্যাথলিক প্রধান গ্রাম ছিলো কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বিংশ শতাব্দী থেকে প্রথাগত ধর্মে অবিশ্বাসীদের সংখ্যাই এখানে এখন বেশি। খিটহর্নে ব্যবহৃত বৃহত্তম জাহাজটি ছিল খিটারসে বক যা প্রায় বারো মিটারের বেশি লম্বা আর এর মধ্যে কেবিনও ছিলো। প্রচুর পরিমানে খড়, গবাদিপশু ইত্যাদি পরিবহনের জন্যে এটি ব্যবহৃত হতো। কৃষকরা এগুলো ভাড়া নিতো, অনেকসময় পুরো বছর জুড়ে বিভিন্ন কাজের জন্যে ভাড়া হিসেবে বক ব্যবহার করা হতো। খিটহর্ণের সৌর্ন্দয বেশ কয়েকজন চিত্রশিল্পীকে আকৃষ্ট করেছে। দ্যা হাগেস বা লারেন্সে স্কুল, কর্নেলিস ফ্রেডেনবার্গ, ডব্লিউ.বি. থোলেন এবং জি.এফ ফান স্কাগেনের ছাত্র ছিলেন তারা। ছবি আঁকার জন্যে বেশ কয়েক সপ্তাহ তারা গ্রামে অবস্থান করেছিলেন। চিত্রশিল্পী পিট জুইয়ার্স খিটহর্নে স্থায়ী হয়েছিলেন। চিত্রশিল্পী হেন্দ্রিক ব্রোয়ার খিটহর্নে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আজকাল খিটহর্ন নেদারল্যান্ডসের জনপ্রিয় অবকাশ ও পর্যটন কেন্দ্রের একটি। বিদেশিরা ছাড়াও প্রচুর ডাচবাসীই নিরিবিলি ছুটি কাটাতে চলে যান। সেজন্যে গড়ে উঠেছে, হোটেল, ভ্যাকেশান ভিলা, ক্যাফে অনেক কিছু। পায়ে হেঁটেই গ্রামটা পুরো দেখা যায়। মনোরোম প্রাকৃতিক দৃশ্যকে আরো মনোরোম করেছে বিভিন্ন আকারের সুদৃশ্য সব উইন্ডমিল আর সেতুর উপস্থিতি। বিভিন্ন রকমের বোট ট্রিপের ব্যবস্থা আছে যা পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। আর আছে ভাজা মাছ খাবার জন্যে হরেক রকম মাছ ভাজার দোকান। ফিশ এন্ড চিপ্স না খেলে খিটহর্ণ ট্রিপটাইতো মিছে। সব যে খিটহর্নের খালেরই মাছ, তা নয়, বাইরে থেকেও আসে। এর বাইরেও ন্যাশনাল পার্ক, যাদুঘর আরও কত কি আছে এখানে। গ্রামের মধ্যে গাড়ি, বাস, ট্রেন কিছুই চলে না তাই সবাইকে গ্রামের বাইরে গাড়ি রেখে পায়ে হেঁটে গ্রামে ঢুকতে হয়। কিছু কিছু জায়গায় সাইকেল চলতে পারে নইলে সবাই পায়ে হেঁটে কিংবা নৌকায় করে চলাচল করে। তানবীরা হোসেন ১৬/০২/২০২১

No comments:

Post a Comment