Sunday 14 March 2021

আমি নারী, আমি মহিয়সী

সবসময় আমরা ভারতবর্ষে মেয়েদের অত্যাচার-অবিচার, সম্পত্তিতে অধিকারহীনতা, রাস্তাঘাটে নির্যাতন ইত্যাদি নিয়ে কথা বলি। আজ দুটো অন্যরকম ঘটনা লিখবো, খানিকটা আশা জাগানিয়া আর অনেকবেশী ভালবাসার একঃ উত্তর-পশ্চিম রাজস্থানের পিপলান্ট্রি গ্রামের মানচিত্র পরিবর্তন হয়েছে মেয়েদের কারণে, হ্যাঁ, ঠিক পড়েছেন, মেয়েদের কারণে। দুই হাজার সাত সালে গ্রামের সারপাঞ্চ শ্যাম সুন্দর পালিওয়ালের কন্যা কিরণ পানিশূন্যতায় মারা যায়। হৃদয়বিদারক এই মৃত্যুতে তার পরিবার মেয়ের স্মৃতি রক্ষার্থে গ্রামের প্রবেশপথের কাছে তার নামে একটি গাছ লাগিয়েছিল। পিপলান্ট্রির নেতা হিসাবে পালিওয়াল ভেবেছিলেন, এই ওয়ান-অফ ইভেন্টটিকে আরও বিস্তৃত প্রোগ্রামে পরিণত করবেন। আর শীঘ্রই, অন্যান্য গ্রামবাসী তাঁর নেতৃত্ব অনুসরণ করতে শুরু করেছিলেন। পিপলান্ট্রিতে প্রতিবারই যখন কোনও মেয়ে জন্মেছে, গ্রামবাসীরা একশো এগারোটি গাছ রোপণ করেছে, স্থানীয় হিন্দুদের জন্য এটি একটি শুভ সংখ্যা। এই অঞ্চলে এখন আমের ও গুড়ের গাছ থেকে শুরু করে চন্দন কাঠ, নিম, পেপাল এবং বাঁশ পর্যন্ত প্রায় একাধিক গাছ রয়েছে যা এককালের অনুর্বর জমিতে চাষ হচ্ছে এবং তা হচ্ছে প্রায় আনুমানিক এক হাজার হেক্টর জুড়ে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, পালিওয়ালের সাধারণ ধারণাটি একটি বিস্তৃত ইকো-নারীবাদী আন্দোলনে প্রসারিত হয়েছে। গাছ লাগানোর পাশাপাশি কন্যার নতুন বাবা-মা একটি হলফনামায় স্বাক্ষর করেন যে তারা আঠারো বছর বয়সের আগে তাদের মেয়েদের বিয়ে দেবে না এবং তাদের স্কুল শেষ করতে দিবে। গ্রামবাসীরা একত্রিশ হাজার রুপি (£ ৩০৫ ডলার) দিয়ে প্রতিটি মেয়ের জন্য একটি স্থায়ী আমানত অ্যাকাউন্ট খুলেন যা তার পড়াশুনার জন্য বা তার বিয়ের জন্য আঠারো বছর বয়সে ব্যবহার করতে পারবেন। আরও বড় কথা, পিপলান্ট্রির ক্রমবর্ধমান অরণ্য এখন জলীয় ব্যবস্থাপনার উন্নতি করতে গিয়ে ভারতীয় গ্রামগুলি কীভাবে আক্ষরিক অর্থে সবুজ হতে পারে তার একটি উদাহরণ হিসাবে কাজ করছে। দুইঃ সম্প্রতি নিকোলাস ক্রিস্টোফ নিউইয়র্ক টাইমসে আর্টিকেল লিখেছেন, “What can Biden’s plan do for poverty? Look to Bangladesh”— উনিশো একানব্বই সালে, বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড় নিয়ে বিস্তাতির রিপোর্ট করতে যেয়ে, ফিরে এসে আমি লিখেছিলাম, “দেশটি দুর্ভাগ্যক্রমে উদ্বিগ্নজনক” শুধু জলবায়ু পরিবর্তন নয় প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশাল পরীক্ষার মুখোমুখি। তবে, আমার হতাশাবাদ ভুল ছিল, কারণ তিন দশক ধরে অর্থনীতিতে অসাধারণ অগ্রগতি বাংলাদেশ করে বাংলাদেশ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মহামারীর আগ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক এর চার্ট অনুসারে, বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রতি বছর সাত% থেকে আট% পর্যন্ত বেড়েছে যা চীনের চেয়েও বেশী ছিল। এই উন্নতির রহস্যা? শিক্ষা আর নারীদের কর্মসংস্থান। বাংলাদেশের হাই স্কুলগুলোতে এখন ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যা বেশী। নোবেল শান্তি পুরষ্কার প্রাপ্ত মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা নারীদের উদ্যোক্তা হিসাবে পরিণত করেছিল - চার বছরে প্রায় একশোহাজার নারী "টেলিফোন লেডি" হয়ে ওঠে যারা মোবাইল ফোন সার্ভিসে কাজ করতো, এবং এটি দেশের অর্থনৈতিক মোড় ঘুরিয়ে দিতে সহায়তা করেছিল। শিক্ষিত মহিলারা গ্রামীণ এবং ব্র্যাকের মতো মর্যাদাপূর্ণ সংস্থায় কাজ করে, বাচ্চাদের টিকা দেয়া, স্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবস্থা প্রচার করা, গ্রামবাসীদের পড়তে শেখানো সহ জন্মনিরোধক ব্যবস্থা ব্যাখ্যা করা, বাল্য বিবাহকে নিরুৎসাহিত করার মত কাজগুলো করে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে দারিদ্র্যতা হ্রাসের একটি অনুপ্রেরণামূলক কাহিনী বলে অভিহিত করেছে, পঁচিশ মিলিয়ন বাংলাদেশি পনেরো বছরে দারিদ্র্যতা কার্ভ থেকে উপরে এসেছে, উনিশো একানব্বই সালের তুলনায় অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের অংশ বাংলাদেশে প্রায় অর্ধেক কমেছে এবং এখন ভারতের চেয়ে কম। আর এই পুরো চিত্রটি পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে নারী শিক্ষা থেকে নারীদের কর্মসংস্থান। এক কথায় বলা যায়, দারিদ্রতাতে বিনিয়োগ করেই বাংলাদেশ দারিদ্রতা মোচন করছে। যদিও পোশাক শিল্পের নারীদের কথা এখানে নিকোলাস আলাদাভেব উল্লেখ করেননি কিন্তু আমরা জানি, অর্থনীতি পরিবর্তনের প্রথম ধাপের সূচনা অনেকটা তাদের মাধ্যমেই শুরু হয়েছিলো। সংগ্রামী নারীরা যারা দেশের অর্থনৈতিক মানচিত্র বদলে দিচ্ছে তাদেরকে আমার লাল স্যালুট। আমি নারী, আমি মহিয়সী আমার সুরে সুর বেধেছে জোৎসাবীণায় শশি। আমি নইলে মিথ্যা হতো সন্ধা তারা উঠা মিথ্যা হতো কাননের ফুল ফোটা (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) http://www.bbc.com/travel/story/20210302-piplantri-the-indian-village-where-girls-rule https://www.nytimes.com/2021/03/10/opinion/biden-child-poverty-bangladesh.html?smid=url-share https://www.mercurynews.com/2021/03/12/kristof-what-can-bidens-plan-do-for-poverty-look-to-bangladesh/amp/

No comments:

Post a Comment