Sunday, 8 May 2016

মা দিবসটি কেমন করে মায়েদের হলো

বছর ঘুরে আবার এলো মে মাস। এ মাসের দ্বিতীয় রোবাবারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘটা করে পালিত হবে "মা দিবস' । এ দিবসকে উপলক্ষ্য করে দোকানীরা তাদের পশরা সাজাতে ব্যস্ত এখন, "মা দিবস' এর বিশেষ মগ, চকলেট, লকেট, শোপিস, টিশার্ট আরো কতো কি। তাদের গায়ে লেখা থাকে "মা তুমি কতো মিষ্টি", কিংবা "তুমিই সবচেয়ে লক্ষ্মী মা", "মা তোমাকে অনেক ভালোবাসি" ইত্যাদি নানা রকম মিষ্টি মধুর কথা। ছেলেমেয়েদের মনের কথাই দোকানীরা তুলে রেখেছে তাদের পন্যের গায়ে। যে কথাটা হাজারো কাজের ভীড়ে দিনে হয়তো লক্ষ বার মনে পড়ে কিন্তু বলি বলি করেও মাকে বলা হয়ে উঠে না, সেটিই তখন মগ কিংবা চকলেটের মধ্যে দিয়ে মায়ের কাছে পৌছে দেই আমরা।
ইতিহাস থেকে জানা যায় ‘মা দিবসের’ প্রচলন শুরু হয় প্রথম প্রাচীন গ্রীসে। সেখানে প্রতি বসন্তকালে একটি দিন দেবতাদের মা ‘রিয়া’ যিনি ক্রোনাসের সহধর্মিনী তার উদ্দেশ্য উদযাপন করা হতো। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় ‘মা দিবস’ পালিত হতো বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে। রোমানরা পালন করতেন ১৫ মার্চ থেকে ১৮ মার্চের মধ্যে, তারা দিনটিকে উৎসর্গ করেছিলেন ‘জুনো’র প্রতি। ষোলশ শতাব্দী থেকে এই দিনটি যুক্তরাজ্যেও উদযাপন করা হতো ‘মাদারিং সানডে’ হিসেবে। ইষ্টার সানডের ঠিক তিন সপ্তাহ আগের রোববারে এটি পালন করেন তারা। নরওয়েতে ফেব্রুয়ারীর দ্বিতীয় রোববারে, সৌদি আরব, বাহরাইন, মিশর, লেবাননে বসন্তের প্রথম দিন অর্থ্যাৎ ২১শে মার্চে এই দিনটি উদযাপিত হয়। কিন্তু বিশ্ব জুড়ে এই যে বনার্ঢ্য ‘মা দিবস’ এর উদযাপন, এটি আসে মূলত এ্যামেরিকানদের থেকে। ১৮৭০ সালে সমাজসেবী জুলিয়া ওয়ার্ড হো এ্যামেরিকার নারীদেরকে যুদ্ধের বিরুদ্ধে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান, সাথে এই দিবসটিকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য রাষ্ট্রের কাছে প্রচুর লেখালেখি করেন। তার ঘোষনাপত্রে লেখা ছিল,
As men have often forsaken the plough and the anvil at the summons of war, Let women now leave all that may be left of home For a great and earnest day of counsel. Let them meet first, as women, to bewail and commemorate the dead.
যদিও এটা হো’র মৌলিক পরিকল্পনা ছিল না, তিনি ১৮৫৮ সালে শান্তিকর্মী এ্যান জার্ভিসের শুরু করা প্রচেষ্টাকেই সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। এ্যান জার্ভিস যুদ্ধ বিধ্বস্ত এ্যামেরিকার নারীদের নিয়ে পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যরক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও উপকারীতা নিয়ে প্রচার ও কাজ শুরু করেছিলেন। ১৮৬৮ সালে তিনি নারীদের সংঘবদ্ধ করেন এবং এ্যামেরিকার কিছু কিছু জায়গায় প্রচারনা চালান টম্যেটোর চারা যেনো সবাই ‘মা দিবসে’র পরেই রোপন করেন তার আগে নয়। এ্যান জার্ভিস দিনটির সরকারী অনুমোদন পাওয়ার জন্য বিভিন্নধরনের চেষ্টা চালাতে থাকেন, কিন্তু সফলকাম হতে পারেননি। তার মৃত্যুর পর তার মেয়ে এ্যানা জার্ভিস মায়ের অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরনের কাজে হাত দেয়। তিনি চেষ্টা করতে লাগলেন একটি বিশেষ দিন ঠিক করে ‘মা দিবস’টি উদযাপন করার জন্য। সেই লক্ষ্যেই ১৯০৮ সালের ১০ইমে তিনি পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রাফিটন শহরের সেই চার্চে, যেখানে তার মা এ্যান জার্ভিস রোববারে পড়াতেন সেখানে প্রথমবারের মতো দিনটি উদযাপন করলেন। এরপর থেকেই আস্তে আস্তে সময়ের সাথে সাথে এটি বিস্তার হতে থাকে চারিধারে এবং এক সময় এ্যামেরিকার ৪৫টি অঙ্গরাজ্যে এই দিনটি পালন হতে থাকে। ১৯১২ সালে সর্বপ্রথম এইদিনকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারী ছুটি ঘোষনা করা হয় এ্যামেরিকার কিছু কিছু অঙ্গরাজ্যে। প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন ১৯১৪ সালে দেশব্যাপী সরকারী ছুটি ও জাতীয় উৎসবের মর্যাদা দেন এই দিনটিকে। সে সমস্ত মায়েরদের সম্মানে দেশব্যাপী পতাকা অর্ধনিমিত রাখা হতো যাদের পুত্ররা যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন। এরও নয় বছর পর থেকে আজকের মতো ব্যবসায়িক আঙ্গিকে ‘মা দিবসে’র উদযাপন শুরু হয়েছে। যাতে এ্যানা জার্ভিস স্বয়ং ভীষন আহত ও ক্ষুবধ হয়েছিলেন। ‘মা দিবসে’র গাম্ভীর্য ও মর্যাদা তার মতে এতে ব্যাহত হবে।
কিন্তু তবুও আজ অবধি মা দিবস যথেষ্ঠ ভালোবাসা ও উৎসাহের সাথে বিশ্বব্যাপী উদযাপন হয়ে আসছে। যান্ত্রিক জীবন আর অপরিসীম ব্যস্ততা যা আজকাল মানুষের পারিবারিক জীবনের অনেকটা সময় কেড়ে নেয়, যার কারণে প্রিয়জনদের মধ্যে অনেকটা অকারন দূরত্বও তৈরী হয়, সে সমস্ত দূরত্ব কাটিয়ে নৈকট্য নিয়ে আসতে ‘মা দিবসে’র তুলনা নেই। বিশেষ করে বিভিন্ন কারণে যারা মায়ের কাছ থেকে দূরে অবস্থান করেন পশ্চিমে তাদের কাছে এইদিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। সে জন্যই হয়তো পশ্চিমের দেশ গুলোতে এটি রোববারে উদযাপন করা হয়। বেশীর ভাগ লোকদেরই সেদিন ছুটি থাকে, দেখা যায় তারা মায়ের পছন্দের ফুল, চকলেট, কিংবা পারফিউম উপহার নিয়ে চলে যায় মায়ের কাছে। সারাদিন মায়ের কাছে তারা দিনটি কাটান। বিভিন্ন ভাইবোন বিভিন্ন জায়গায় থাকার কারণে রীতিমতো দেখা - সাক্ষাত যাদের মধ্যে সম্ভব হয় না, সেদিন দেখা যায়, সবাই মাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসে একে অপরকে পেয়ে আহলাদিত হয়ে উঠেন। জমে উঠে পারিবারিক উৎসব। অনেক সময় এ উৎসব আরো বড়ো আকারে নানা বাড়িতেও উদযাপন হয়ে থাকে। মা চলে যান তার নিজের মাকে শুভেচ্ছা জানাতে, সেখানে তখন জড়ো হোন পুরো পরিবার, মামা - খালা, তাদের সন্তানরা। যাদের মধ্যে হয়তো সারা বৎসর কোন যোগাযোগ থাকে না, এই একটি দিনে তারা কাছাকাছি চলে আসেন। সেসব দিক দিয়ে এই দিনটির গুরুত্ব অনেক। তবে যারা মায়ের কাছেই থাকেন, যেমন শিশুরা, তারা সাধারণত সেদিন মাকে বিছানায় ফুল নিয়ে যেয়ে ঘুম ভাঙ্গান, গিফট দেন, ছোট ছোট শিশু হাতে নাস্তা সাজিয়ে দেন, মাকে সেদিনের তার রুটিনের অনেক কাজ থেকে মুক্তি দেয়া হয়। মাকে ঘিরে চলে সারাদিনব্যাপী উৎসব।
পরিবারের সুখ - সুবিধার প্রতি দৃষ্টি রাখতে যেয়ে, প্রতিদিন নিজের আরাম নষ্ট করে, নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে, সন্তানদের পৃথিবীতে চলার যোগ্য তৈরী করে দেন যিনি, তিনি মা। সেই নমস্যা ‘মা’ কে বছরে একটি দিনও যদি আনন্দ দিতে পারি, জানাতে পারি বিশেষভাবে তোমার তুলনা তুমিই ‘মা’, সেটাই কম কিসে?

Monday, 2 May 2016

জবাই বৃত্তান্ত

ছোটবেলায় মুরগীর মাংস খুব পছন্দ ছিলো। বিশেষ করে মুরগীর রান, একটু বড় হতে হতে পছন্দ বদলালো, তখন রানের বদলে বুকের জাহাজ টুকরোটা বেশি পছন্দ ছিলো। কিন্তু মুরগী যখন জবাই করা হতো, কাছে পিঠে থাকলে, চোখে পরলে ছোট বেলায় খুব কষ্ট হতো। মুরগীটার  গলা কেটে ছেড়ে দিলে, ছটফট করে লাফাতে লাফাতে এদিক ওদিক পরতো তারপর এক সময় সব শেষ। আমি মনে মনে ভাবতাম, মুরগীটার আম্মু আছে হয়তো, আব্বু আছে, ভাই বোন আছে, তারা নিশ্চয় খুঁজছে, বাবা মায়ের কথা শোনেনি, মুরগী ধরার হাতে ধরা পরেছে, এখন ওকে আমাদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে, আমরা কেটে খেয়ে ফেললাম, ওদের পরিবার ওকে খুঁজছে, কিছুই জানতে পারছে না।

যখন অনেকটা বড় হলাম, দুপুরের ভাত ঘুম থেকে উঠে বিকেলটা তেমন কিছু করার থাকতো না কিংবা করতে ইচ্ছে করতো না। উদাস উদাস মন নিয়ে কখনো ছাঁদে যেয়ে কিংবা বারান্দায় এদিকে ওদিকে হেঁটে বাকি সময়টা পার করে দিতাম। মাঝে মাঝেই সেই সন্ধ্যা লাগো লাগো সময়ে বারান্দায় বসে বই পড়তাম। বাবা অনেক বাজার টাজার নিয়ে বাড়ি ফিরে আসতেন। শুরু হতো নীচে মুরগী জবাইয়ের পালা। গৃহ কর্মে সাহায্য করতে যেসব পুরুষকর্মীরা ছিলেন তারা নীচে মুরগী জবাই করতেন, একটার পর একটা। কিন্তু ততো দিনে চোখ এবং মন দুইই রক্তে এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, কষ্ট লাগতো না। নেহাত আজাইরা বসে থাকতাম বলেই, বারান্দার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে নীচের মুরগী জবাই এর দিকে তাকিয়ে থাকতাম, দেখতাম। হয়তো সাথে ভাবতামও কোনটায় রোস্ট হবে আর কোনটায় কোর্মা।

গ্রামের বাড়িতে সবাই কোরবানীর ঈদ করতে যেতাম। পিকনিক আমেজ পুরো পরিবার জুড়ে। কতোদিন আগে থেকে চাল গুঁড়ো করে, মসলা গুঁড়ো করে দাদু সেই প্রস্তূতি নিতেন, সবাই বাড়ি আসবে। ঈদের ঠিক দু’ তিন দিন আগে হয়তো, মুরুব্বীরা বাড়ি আসতেন তারপর গরু কেনা হতো। বাড়িতে বছর জুড়ে যারা থাকতো, কাজ কর্ম দেখতো তাদের ওপরেই ভার পরতো গরু-ছাগল গুলো দেখাশোনা করার। আমরাও পাশে পাশে থাকতাম, ভাল লাগতো। “আমাদের গরু” কী গর্বই না লাগতো। যদিও ছাগল বেশি কিউট লাগতো, হাতে ধরে ধরে কাঁঠাল পাতা খাওয়াতাম আর গরুকে একটু ভয় পেতাম শিং দিয়ে গুঁতো দেবে, সেই ভয়। গরুর চোখ গুলোর দিকে তাকালে মায়া লাগতো, আহা, কাঁদছে, বুঝতে পারছে যে ওকে আমরা কোরবানী করবো। তুঁতো ভাইবোনেরা সেসব বলাবলিও করতাম।

ছোট বেলায় ঈদের নামাজ পরে এসে যখন গরু গুলোকে শুইয়ে ফেলার ভীষণ যে প্রচেষ্টা শুরু হতো, কী কান্নাই পেতো, কী মায়াই না লাগতো। প্রাণ ভয়ে গরু গুলো কত ভাবে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করতো, সেগুলোও আমাদের গল্পের খোরাক থাকতো সারাদিন। কিন্তু তারপর বিরিয়ানি, নেহারী, ঝুড়া মাংসের আড়ালে সেই কান্না কান্না গরুর চোখ হারিয়ে যেতো। বড় হয়ে তো গল্প আরো ভিন্ন, কার গরু কত দাম, কোন প্রজাতি মানে কত কুলীন সেটাও একটা ইস্যু ছিলো। গরুর রক্ত আর চোখের জলে তখন আমাদের অনেকেরই শরীর মন, অভ্যস্ত।

এদেশে রাস্তা ঘাটে কোথাও প্রকাশ্যে মুরগী, গরু কিছু কাটা হয় না। সাধারণত হাটে মাছের মাথা কাটা হয় তাও বরফে ডুবানো থাকা মাছ। এদেশের মানুষ তাজা রক্তের উষ্ণতার মধ্যে তার গন্ধের মধ্যে নৃংশসতা খুঁজে পায়। খুব কাতর গলায় জিজ্ঞেস করে, এরকম রক্ত দেখে তোমরা স্বাভাবিক ভাবে খাওয়া দাওয়া করতে পারো? তোমরা ঘুমাও কী করে? ঘুম আসে? একজন মানুষের এতোটা রক্ত তো অন্যদের মানসিক ভারসাম্যহীন করে তোলার কথা ......


আসলে আমরা মুরগী কাটা থেকে গরু কাটা তারপর মানুষ কাটায় এতো নিরিবিলি পৌঁছে যাই যে আমাদের ভেতরের পাকিস্তানি আর্মির নৃংশসতা আমরা নিজেরাও অনুভব করতে পারি না। রক্তের গন্ধে আমাদের দেহ,মন, চোখ এত অভ্যস্ত যে কয় সাগর রক্ত পেরোলে এ আঁধার কাটবে, আমরা নিজেরাও জানি না আজ ...............হয়তো নিজেদের অজান্তেই তালেবানী অভ্যস্ত গলায় জিজ্ঞেস করতে শুরু করে দিবো, আজ কয় জন, কোথায় কিংবা আজ হয় নি! কারণ কী! ...... 

Friday, 22 April 2016

তনু

আঁধারে হারিয়ে গেছে
বোন আমাদের সোহাগী
ভাই কাঁদে বাবা কাঁদে
বুক চাপরায় মা অভাগী

ভাঁজ না খোলা জামা হাতে
কাঁদে মা তোর দিনে রাতে
ঘুম না আসা রাত কাটে
ঘরে বাইরে হেঁটে হেঁটে  

প্রতিবাদে কেঁপেছে আকাশ
স্বজনের কান্নায় ভারী বাতাস
কাঁপেনি শুধু সেনানিবাস
বিচারের বাণী কাঁদে দিন-মাস


ফেসবুক মিডিয়ায় ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে লড়ে, আমাদের সকলের সোহাগী তনুঅবশেষে সত্যিই মারা গেলো। সে আর এখন কোথাও নেই। আমরা ব্যস্ত অন্য ইস্যু নিয়ে। 

Thursday, 14 April 2016

কী করলে আমরা ইলিশ রক্ষা করতে পারবো? আসুন প্রচার করিঃ


ইলিশ খাওয়া হারাম, ইলিশ মাছ হিন্দুদের খাবার। আরবের কোন নদীতে কখনো কোন ইলিশ মাছ জন্মায়নি। একদিন বিবি আয়েশা কাটাওয়ালা ট্যাংরা মাছ ফ্রাই করলেন। মুহাম্মদ (সাঃ) ফ্রিশ ফ্রাই আর ডাল দিয়ে গরম গরম ভাত খাচ্ছিলেন। হঠাৎ ট্যাংরা মাছের কাঁটা গলায় ফুটে গেলো। রাগ করে বিবি আয়েশাকে জিজ্ঞেস করলেন, এই কাফেরি মাছ তুমি কোথায় পেয়েছো? আয়েশা কাঁচুমাচু হয়ে জবাব দিলেন, পাশের বাড়ির আবু লাহাবের স্ত্রী দিয়ে গেছিলো আজ ঘরে কিছু ছিলো না, তাই এগুলোই ভেজে ফেললাম। এরপর থেকে মাছের কাঁটাকে নবী অত্যন্ত ভয় পেতেন। ইলিশে প্রচুর কাঁটা, হাদীসে আছে, কাঁটাওয়ালা মাছ হারাম, এটা কাফেরদের খাবার। প্রকৃত মুসলিমরা কাঁটাওয়ালা-ডিমওয়ালা মাছ খায় না। প্রাচীনকাল থেকে ভারতের হিন্দুরা সর্ষে ইলিশ খেয়ে আসছে, স্বরস্বতী পূজার দিন অনেকেই খিচুড়ি-ইলিশ ভাজা খায়, এটা হিন্দু রীতি।


ইলিশ সহ অন্যান্য মাছ না খাওয়া সুন্নাত ! নবী (স) কখনো মাছ খাননি ! তাই যারা নবীকে ভালবাসেন,তাদের ঈমানি দায়িত্ব হল ইলিশ সহ সকল মাছ বর্জন করা ! আমিন !!



হে মুসলমান ভাই বোন গন, লাইনে আসুন - ইলিশ বর্জন করুন। মুসলমানের খাবার হলো


খোরমা দিয়ে রুটি – ভাত মাছের ছুটি


বিশেষ করে নববর্ষ উপলক্ষ্যে যারা ইলিশ খাবে তাদের কবিরা গুনাহ হবে। তাদের জন্যে বেহেস্তে ঢোকা কঠিন হয়ে যাবে। সেই ঘরে ফেরেশতা আসবে না যে ঘরে ইলিশ রান্না হয়।  সৈয়দ মুজতবা আলী তার “আড্ডা” গল্পে লিখেছেন, "বেহেশতের খাদ্য তালিকায় ইলিশ মাছ নেই বলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে বেহেশতে যাওয়ার আশা বাদ দিয়েছি।" কত্ত বড় কথা চিন্তা করেন






ভাই বোনেরা, ইলিশ নিয়ে লেখাটির জন্যে কয়টি লাইক আর কয়টি শেয়ার  ----- মূল্যবান লেখাটি শেয়ার করুন ও অন্যকে জানার সুযোগ করে দেন।  আগের খেয়ে ফেলা ইলিশের গুনাহ মাফ করানোর জন্যে কমেন্টে “আমিন” না লিখে যাবেন না। এই লেখাটি দশ জনের সাথে শেয়ার করলে আগামী সাত দিনের মধ্যে একটি সুসংবাদ পাবেন।




 15-04-2016

Monday, 11 April 2016

জার্ণাল এপ্রিল ২০১৬ (২)

ইউরোপে কিংবা এমেরিকাতে যত বাংলাদেশী বসবাস করেন তাদের সত্তর থেকে আশির ভাগই কখনো না কখনো, রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থণা করে সেখানে স্থায়ী হয়েছেন। দেশে কিংবা বিদেশে এই ব্যাপারটি ছিলো “ওপেন সিক্রেট”। বলা বাহুল্য সে সব রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থণার আবেদন গুলোর সিংহ ভাগই মিথ্যে ছিলো। তখন বাংলাদেশের বিদগ্ধ বুদ্ধিজীবিগনের এ নিয়ে কোন সমস্যা বা আপত্তি ছিলো না। সে সকল বাংলাদেশীদের নৈতিকতার ভিত্তি কিংবা কার্য কলাপ নিয়েও তাদের মনে কোন সংশয় বা প্রশ্ন আসে নি। খুব কম গল্প, উপন্যাস কিংবা সাহিত্যে সেসব মানুষেরা নায়কের মর্যাদা পেয়েছেন। জীবিকার টানে বিদেশে আসা মানুষেরা দেশের মানুষের জীবন থেকে হারিয়ে যেতেন, তারা শুধুই প্রবাসী। এ সকল প্রবাসীরা বিদেশে প্রচুর কষ্টকর কাজ করে দিনাতিপাত করেন, সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দিতে দেশ থেকে বুদ্ধিজীবি লেখকগন বিদেশে এসে প্রবাসী শ্রমিকদের খরচায় তাদের আতিথ্য নিয়ে নিজের সাথে আনা পয়সাটুকু বাঁচিয়ে নিয়ে যেতে কোন কুন্ঠাও বোধ করতেন না। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের উপঢৌকন নিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসেন।

কিন্তু এখন সেই “তেনারা”ই দিনরাত বিদেশে “রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থণার” ইস্যু নিয়ে বিভিন্ন বিদ্বেষমূলক স্ট্যাটাস প্রসব করে যাচ্ছেন, যেনো ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা! এই বিদ্বেষের কারণ কি? কারণ আছেরে ভাই, আছে তো বটে। তারা বছরের পর বছর দিস্তা দিস্তা কাগজ খরচ করে ইয়া মোটা মোটা বই লিখে গেছেন, সে সব বই নিয়ে কখনো কোথাও কোন আলোচনা হয় নি। সমাজের কোন স্তরে তাদের লেখা শত শত পাতা কোন প্রভাব ফেলেনি। ইতিহাসে তো দূরের কথা বর্তমানেও তারা নেই। স্কুল – কলেজে পড়ুয়া তরুণ তরুণীদের প্রথম বয়োঃসন্ধি কালে এই সাহিত্যিকদের অবস্থান, মানুষ যত পরিনত হয়, তারাও ততো দূরে ছিটকে পরেন। নিজেরাই দলাদলির মাধ্যমে নিজেদের পুরস্কার দেয়া নেয়া করে কালাতিপাত করছিলেন। আর এদিকে, সেদিনের ছেলে ছোকরা গুলো এখন “ব্লগ” এর মত জিনিস লিখে আলোচনায় আসছে, মানুষকে প্রভাবিত করছে, দেশ তো বটেই বিদেশের সংবাদ মাধ্যমের নজরে আসছে, ববস এর মত প্রতিযোগিতায় অন্যান্য ভাষাভাষী ব্লগারদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে পুরস্কার জিতে নিচ্ছে। বুকে পাশটাতে খোঁচা লাগে বই কি, আত্মভিমানেও লেগে যায়। তারা বড় জোর নিজেদের বই ফেরি করে কোলকাতা অব্ধি যেতে পারতেন, আর পুরস্কার বিজয়ী ব্লগাররা ইউরোপ হয়ে এমেরিকা চলে যাচ্ছে, সহ্য করা যায়?

নিজেরা বছর জুড়ে বই মেলার অপেক্ষায় বসে থাকে, সারা বছরের আমদানীর জন্যে। তার জন্যও কত কষ্ট করতে হয়, গোটা মাস প্রকাশনীর স্টলে গিয়ে বসে থেকে ডিউটি দিতে হয়, পাঠকদের সাথে ভেটকি ভেটকি মুখ করে সেলফি তুলতে হয়, অটোগ্রাফ দিতে হয় তাদের নানারকম প্রশ্নের জবাব দিয়ে তাদের কত আব্দার মেটাতে হয়। আধুনিক যুগের সেলস ম্যানদের মত, “ক্লায়েন্ট ইজ কিং” মেনে নিয়ে নিজেদের বই পাঠককে গছাতে কি ঝক্কিই না সামলান তারা। আর ব্লগাররা বিদেশে বসে থেকে পান্ডুলিপি প্রকাশককে মেইল করে পাঠিয়ে দেয়। সেই বই প্রকাশ হয়ে বইমেলাতে চলে আসে আর বহু সময় তাদের বইয়ের থেকে অনেক বেশি সংখ্যায় বিক্রিও হয়। সহ্য করা যায় এসব প্রাণে ধরে?

নিজেদের বইয়ের রিভিউ করার জন্যে, আলোচনায় থাকার জন্যে, সারাক্ষণ পত্রিকার সম্পাদকদের তেল মারে আর চামচামি করে আর সেখানে ব্লগাররা নিজের তুচ্ছ প্রাণ খানা দান করে আলোচনায় এসে যায় বার বার, মেনে নেয়া যায় এসব অভদ্রতা? তাদের সিনিয়ার রাইটারদের বহু চামচামি আর রাজনীতি সহ্য করে তারা আজকের এই অবস্থানে এসে পৌঁছেছেন, সুতরাং মিডিয়ার সব এটেনশান এখন শুধু তাদের প্রাপ্য। যে সব ব্লগারদের তারা ঠিক করে নামও জানে না তারা এসে তাদের রাজ্যে ঢুকে ছিনিমিনি খেলবে,  না না এ কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না গোলাপী।

তাই তাদের এবারের সংগ্রাম, নিজেদের অস্তিত্বের মানে টিকে থাকার সংগ্রাম। 

তসলিমা এ চেহারা আগেই জেনেছিলেন বলে সমানে ক, খ, গ লিখে যাচ্ছেন, আজও।

Saturday, 9 April 2016

জার্ণাল এপ্রিল ২০১৬



তৃতীয় বিশ্বের মানুষের ফ্যান্টাসী নাম্বার একঃ

বেহেস্তে সারা বেলা শুয়ে থাকা যাবে, কোন পরিশ্রম বা কাজ করতে হবে না, পুরো বেহেস্ত শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত হবে।  উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়বেটিস থাকবে না, ইচ্ছে মত শামি কাবাব, কাচ্চি বিরিয়ানী, চিকেন টিক্কা সব বেলায় বেলায় খাওয়া যাবে, সাথে থাকবে, আপেল, কমলা, বেদানা, নাসপাতি, আঙ্গুর। পরীরা-হুরেরা তাদের পা টিপে দিবে, আর যখন তখন ইচ্ছে করলেই, দীপিকা পাড়ুকোন, ক্যাট কাইফ, প্রিয়াঙ্কা চোপড়াদের কাছে পাওয়া যাবে।  সাথে থাকবে উত্তম সূরা যার স্বাদ গ্রীন লেবেল, জ্যাক ডানিয়েল বা সিভ্যাস রিগ্যাল থেকেও উন্নত। সারা বেলা শুধু মৌজ মাস্তি আর মৌজ মাস্তি, অন্তত কাল ধরে।

তৃতীয় বিশ্বের মানুষের ফ্যান্টাসী নাম্বার দুইঃ

ইউরোপ এমেরিকাতে সব মানুষ নামধারী পশু বাস করে, নাস্তিক সব এরা দিন রাত মদ খায়, গাজা খায় আর শুয়োর খায়, এদের কাজ সব মেশিন করে। এদের বাবা মায়ের প্রতি ভালবাসা কর্তব্য বলতে কিছু নেই, বাবা মাকে বুড়া বয়সে ওল্ড হোমে ফেলে দেয় আর বাবা মা বাচ্চা জন্মানোর পরদিন থেকেই বাচ্চাকে আলাদা রুমে ফেলে দেয়, আঠারো বছর হলেই বাচ্চাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়, ব্যস বাবা মায়ের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। এগুলো দোজখে যাবে, আর সারাবেলা মুমিনদের এঁটো বাসন কোসন ধোবে, রান্না খাওয়া সার্ভ করবে, বড় চুল্লিতে কাপড় সিদ্ধ করে করে পরিস্কার করবে। এদের কোন নৈতিকতা মূল্যবোধ বলে কিছু নেই, পারিবারিক বন্ধন নেই, দিন রাত যখন তখন যার সাথে ইচ্ছে শুয়ে পরে।

পাদটীকাঃ  কিছু কিছু মুক্তিযোদ্ধা মৌলবাদীকে দেখা যায় আজকাল, সারাক্ষণ ফেবুতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ছবি এগুলো প্রচার করে কিন্তু চেতনায় পাকিস্তান। দেশের কোন ধরনের সামাজিক পরিবর্তনে তারা আগ্রহী নয়, হাহা রেরে করে উঠে। তাদের ভাষ্য মতে, স্বাধীন বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মতই কট্টরপন্থী জীবন যাপন করবে, দেশ স্বাধীন হয়েছে ভাল কথা, শাসক গোষ্ঠীর প্রতিনিধি পরিবর্তন হয়েছে, পাকিস্তানের বদলে এখন বাঙালিরা শাসক থাকবে কিন্তু সমাজ এগোতে পারবে না যেখানে ছিলো সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। এক চুল নড়লেই সেটা নাস্তিকদের দোষ। কারণ তাদের ধারনায়, নাস্তিকরা ইহকালে এগিয়ে আছে অনেক দিক থেকে, যা যা তারা পরকালে পাবে বলে আনন্দে আছে, নাস্তিকরা সে সুবিধাগুলো ইহকালেই নিয়ে নিচ্ছে।




Thursday, 7 April 2016

স্বপ্নিল বর্ণিল - ১





ছবিঃ রাকসিন্দা আফরিন
লেখাঃ তানবীরা তালুকদার...


সারা সপ্তাহ টি-টুয়েন্টির ক্রিকেট খেলোয়ারদের মত দারুন খাটুনিতে গেলো। শনিবারে সকালে ঘুম থেকে উঠে জানালার পর্দা সরিয়েই আভা দেখলো আকাশটা অনেক দিন বাবার বাড়ি যেতে না পারা নতুন বউয়ের মত মুখ গোমড়া করে যেনো তার পানে তাকিয়ে আছে, প্রকৃতি বক সাদা চাদরে আপাদমস্তক ঢেকে নিজেকে সবার কাছ থেকে লুকিয়ে ফেলেছে। এই প্রেম হারিয়ে ফেলা বিষাদগ্রস্ত আবহাওয়া যেনো তাকে গ্রাস করে ফেলতে না পারে সেজন্য চট করে উঠে, মেয়েকে নিয়ে তৈরী হয়ে চলে গেলো মিউজিয়ামে, রাইক্স মিউজিয়ামে https://www.rijksmuseum.nl/nl/


রাইক্স মিউজিয়ামে এতো এতো দুর্লভ জিনিসের সংগ্রহ, ইমেলদা মার্কোসের জুয়েলারী সংগ্রহের কাছাকাছি হয়তো, কোনটা রেখে কোনটা দেখবে। আভার ছোট্ট পরী কিছুক্ষণ দেখে তো কিছুক্ষণ হরিণ ছানার মত ছুটে খেলে বেড়ায় মিউজিয়ামের বড় হলে। আভার শখ ফটোগ্রাফি। আর তার শখ পূরণ করার এতো উপাদান চারধারে ছড়িয়ে আছে যে সে ক্লিক করে করে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। যেনো আলীবাবার সেই লুটেরা খাজানার সন্ধান পেয়েছে সে। পুরো পরিবার তারা চৌধুরী বাড়ির পূত্রবধূর রুপের সৌন্দর্‍্যে যেনো মুগ্ধ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে তারা মুগল দরবারের মত বিরাট একটি হলঘরে এসে উপস্থিত হলো যেখানে আভার ছোট্ট পরী অবাক বিস্ময়ে রেলিঙ ধরে সামনে তাকিয়ে আছে ... সেই দৃষ্টিতে ঝরে পড়ছে একরাশ নির্বাক মুগ্ধতা ...


নতুন বর্ষার ডাকে নেচে ওঠা সদা চঞ্চল ময়ূরীর মত পরীকে হঠাৎ এভাবে প্রতিমা নিশ্চল দাড়িয়ে থাকতে দেখে আভার মধ্যেও সে ঘোরের হাওয়া এসে ঢেউ দিয়ে গেলো, প্রায় ক্লিক ক্লিক খেলার সময় অনেক কম্পোজিশানকে নিয়েই আভার মাথায় বারাক হোসেন ওবামার মত নানারকম ভাবনা খেলা করে, ঘোর লাগে। সেসব লজ্জা পাওয়া কিশোরী প্রথম প্রেম ভাবনা গুলো কাউকে সে বলে উঠতে পারে না, নিজেকেই প্রবোধ দেয় এই বলে, কী অদ্ভুত সব কথা ভাবি আমি ...


পরীকে গোলগাল ঠাণ্ডা চাঁদের মতো থমকে থাকা বিস্ময় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মনে হচ্ছিল, হয়ত আঠারশো শতাব্দীতে এখানে এভাবেই এই বয়সী কোন মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো ঠিক একই ভঙ্গিতে। সমুদ্রের নুড়ির মত এত্তো এত্তো বই দেখে সেও হঠাৎ ফ্রান্সে বোমা পড়া মানুষের মত অবাক হয়েছিল বই কী। হয়তো সেই মেয়েটি পড়তেই জানতো না। বইগুলো দেখে দেখে ভাবতো, আহা আমি যদি পড়তে জানতাম, কত্তো কী জানতে পেতাম, সারা পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াতাম, কতো বড়ও হয়ে যেতাম। বইগুলো মেয়েটিক খুব টানতো। রোজ খেলার ফাঁকে ফাঁকে ছুটে এসে বই আর বই পড়ুয়াদের দেখে যেতো ...তারপর চোখের কোণে জমে যাওয়া অশ্রু টুকু হাতের চেটোতে আলগোছে মুছে নিয়ে আবার ফিরে ছুটে যেতো তার নিজের জগতে। যে জগতে হয়তো অনেক কিছু ছিলো শুধু কোন বই ছিলো না

পরীর দাপাদাপিতে আভার ধ্যান ভাঙলো। নিজের মনেই হাসলো কোথা থেকে কোথায় চলে গিয়েছিলো সে তারপর মনে সেই চির পরিচিত সুর আবার গুনগুনিয়ে এলো,


কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা মনে মনে।
মেলে দিলেম গানের সুরের এই ডানা মনে মনে।
তেপান্তরের পাথার পেরোই রূপকথার,
পথ ভুলে যাই দূর পারে সেই চুপকথার,
পারুলবনের চম্পারে মোর হয় জানা মনে মনে