Tuesday, 12 May 2020

মা দিবস ২০২০

ছোটবেলায় যে কোন কারণে সবচেয়ে বেশিবার শোনা কথা ছিলো, "এখন বুঝবি না, নিজে যখন মা হবি, তখন বুঝবি"। মা হওয়ার প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিয়ে যখন মেয়ে কোলে করে সারাবেলা বসে থাকি, মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেরই ভয় লাগে, নিজের নজরই না লেগে যায়, তখন নিজ থেকেই ভাবনা আসে, আহা একদিন বুঝি আমার মা ও ঠিক এমনি করে আমাকে কোলে ধরে বসে থাকতো। এমনি আদর আর মায়া নিয়ে। এই যে মেয়ে কোলে করে বসে আছি সেও একদিন আমারই মত বড় হবে, আমার ওপর চেঁচাবে, আমি না খেলে তোমার কি? আমার খাওয়া নিয়ে তুমি ভাববে না ইত্যাদি ইত্যাদি। (ইনফ্যাক্ট ঠিকই ভাবছি, মেয়ে তাইই করে)
জীবনে সেই প্রথমবার মাকে অনেক আদরে জড়িয়ে ধরে মন থেকে, সর‍্যি বলেছি, "সর‍্যি মা, মাফ করো, অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমাকে, বুঝি নাই, বুঝতে পারি নি।"

কিন্তু কথা হলো, এতসব উপলব্ধির পরও শেষ রক্ষা হয় নি, এখনও আম্মির সাথে চিল্লাই, ফোনে চিল্লাই, বাসায় গেলে চিল্লাই, আম্মি এখানে আসলেও চিল্লাই। চিল্লানো থেমে গেলে, মন খারাপ করি, কেন আরও ধৈর্য্য রাখলাম না, কেন আরও নরম হলাম না, কেন সুসন্তান হলাম না, কথায় কথায় কেন এত রিয়াক্ট করি, তারপর আবার ফোন করি, ভদ্র হওয়ার চেষ্টা করি। দুদিন পরে আবার মনে থাকে না, আবার যেইকে সেই হই। "সর‍্যি আর কত বলবো, "সর‍্যি" বলে লাভ নেই, বদলাবো তো আর না, এ চলতেই থাকবে। যদিও এই চিল্লাচিল্লির সব দোষ আমার না। থাক, আজকের দিনে এসব কথা, আজকে কাটাকাটি। আজকে পৃথিবীশুদ্ধ মায়েদের স্পেশাল গিফট পাবার দিন তাই আজ কচলাকচলি বাদ।

জীবনের সব কঠোরতা, পঙ্কিলতার পরও মাতৃত্বই সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য, সন্তানই বেঁচে থাকার কিংবা দিন যাপনের অনুপ্রেরণা।
হ্যাপি মার্দারস ডে টু মাই ডিয়ারেস্ট আম্মি, হ্যাপি মার্দারস ডে টু মি এন্ড টু অল আদার মার্দারস অফ রেস্ট অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড। আর যারা যারা বাবা এবং মা এই দুই রোলই পালন করছো মহাশক্তিশালী সেই মায়েদের শতসহস্র প্রনাম।
It takes a village to raise a child -- তারপরও বাবা মায়েদের ওপর সন্তানরা চেঁচামিচি করবে এটাই এই পৃথিবীর সার সত্য। বাবা-মায়েরা ক্ষমা করে দেন এটা প্রাকৃতিক।
মাদার্স ডে’তে মেঘমালা উপহার হিসেবে নিজের পছন্দের জিনিস কিনে আমাকে গছিয়ে দেয়। একটু পর এসে চোরা হেসে নরম করে বলবে, তুমি কি এটা চাও? আমি জানি, কি সমস্যা। আমি জবাব দেই, না চাই না, তুমি চাও? উনি আকন্ঠ বিস্তৃত হাসি দিয়ে জবাব দেবেন, হ্যাঁ চাই, আমি নিয়ে নেই। বলেই নিয়ে উঠে দৌড় দেয়।
এবার টাইট মেরেছি, এমন জিনিস চুজ করে দিয়েছি যে কুঁড়ের বাদশা মেঘমালা অন্তত আর এটায় হাত দেবে না, এবার আমার জিনিস-আমার জিনিস, কেউ ধরবে না।

১০/০৫/২০২০

এ সময়ের কিছু ক্লাসিক সিনেমার গল্প


মহালয়া (২০১৯)
উনিশো একত্রিশ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিওর কলকাতা শাখা আকাশবাণী মহিষাসুরমর্দিনী নিয়ে একটি গীতি স্ত্রোত্র আলেখ্য তৈরি করে। রচনা করেছিলেন বাণীকুমার, গ্রন্থনা ও শ্লোকপাঠে ছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। সঙ্গীত রচনা করেছিলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক। দেড়ঘণ্টার এই চণ্ডীপাঠের অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হওয়ার পরে তা এত খানিই জনপ্রিয় হয় যে দুর্গাপুজোর আগে পিতৃপক্ষের অবসানের শেষ দিনে অর্থাৎ মহালয়ার দিনে এখনও সেই স্ত্রোত্রপাঠ না শুনলে বাঙালির পুজো শুরু হয়না। কিন্তু একবারই উনিশো ছিয়াত্তর সালে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের ওই আলেখ্য না সম্প্রচার করে নতুন একটি আলেক্ষ্য সম্প্রচারিত করে। এই নতুন আলেক্ষ্যয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণের বদলে স্ত্রোত্র পাঠ করেন মহানায়ক উত্তম কুমার। উত্তম কুমার প্রথমে খুবই দ্বিধায় ছিলেন এই নিয়ে, তিনি বীরেন্দ্রকৃষ্ণের বাড়ি যেয়ে অনুমতিও নিয়ে আসেন। কিন্তু তা সম্প্রচারিত হওয়ার পরেই মানুষ মেনে নিতে পারেননি। আকাশবাণীর কাছে অভিযোগ জমা পড়ে। আকাশবাণী বাধ্য হয়ে আবার ষষ্ঠীর দিনে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের মহিষাসুরমর্দিনী সম্প্রচার করে। পঙ্কজ মল্লিকের সঙ্গে কি লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়? এই বিষয়টিই নিজের প্রথম বাংলা সিনেমায় তুলে ধরছেন সৌমিক সেন। উত্তম কুমারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন যীশু সেনগুপ্ত। আরও আছেন, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, কাঞ্চন মল্লিক, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এই সিনেমার প্রযোজক। বেতারের জগতে বোধহয় এমন ঘটনা আজ অব্ধি কখনও ঘটেনি।
জ্যেষ্ঠপুত্র (২০১৯)
এ সময়ের কিছু ধ্রুপদী সিনেমার পরিচালকের নাম করতে গেলে অনিবার্য ভাবে উঠে আসবে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, গার্গী রায়চৌধুরি, দামিনী রায়ের অভিনয়ে দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্ব নিয়ে বলা চলে এই সিনেমা।  বলা হয়ে থাকে প্রসেনজিতের মাতৃবিয়োগের ঘটনা থেকেই ঋতুপর্ণ এই সিনেমার কথা ভেবেছিলেন। জ্যেষ্ঠপুত্র বাংলা চলচিত্রের এক নামকরা নায়ক। যাকে দিদি (মুখ্যমন্ত্রী) ও ভালোমত চেনেন। তার গ্রামের বাড়িতে থাকে ছোটো ভাই আর তার স্ত্রী, ও পাগল বোন। বাবা মারা যাওয়ার খবর পেয়ে নায়ক জ্যেষ্ঠপুত্র শুটিং প্যাক-আপ করে বাড়িতে আসে। কিন্তু রাত কাটায় কাছে ডালমিয়াদের বাংলোয়। হাসিমুখে সামলান সুপারস্টার হওয়ার বিড়ম্বনা। পরিচালক মুল যে ভাবনা ভেবেছেন তা হল দুই ভাইয়ের ব্যক্তিত্বের লড়াই। ছোটো নাটক করে, বড় ভাই সিনেমায় অভিনয়। সিনেমা এবং নাটকের ফারাক দেখিয়ে সাধারণের দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরতে চেয়েছেন কৌশিক। ছোটো মনে করে দাদার চেয়ে সে অনেক বড় অভিনেতা কিন্তু নাম হয় না। দাদাকে হিংসে করে ও শেষ পর্যন্ত দাদাকে হারাতে চায়। সবাই অসাধারণ অভিনয় করেছেন। সাদা কাপড় জড়িয়ে সুদীপ্তার নাচের দৃশ্যে চোখ জল আসবে।
এক যে ছিলো রাজা (২০১৮)
 বাংলাদেশের গাজীপুর জেলায় অবস্থিত ভাওয়াল রাজবাড়ির রাজা রমেন্দ্রনারায়ণ রায়ের জীবন, জীবনাবসান ও তার প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে তৈরী এই সিনেমা। উত্তম কুমার অভিনীত ‘সন্ন্যাসী রাজা’ এবং হাল আমলের জনপ্রিয় টেলিসিরিয়াল হয়ে যাওয়ার পরও এত চেনা গল্পকে যে সৃজিত নিজের মতো করে বলতে চেষ্টা করেছেন, সেটা নিঃসন্দেহে সাধুবাদযোগ্য। সৃজিতের এই সিনেমায় যীশুকে যেভাবে দেখা গিয়েছে, তা এক কথায় অভূতপূর্ব। যীশুর পোশাক, মেক আপ এবং অভিনয় এক কথায় উৎকৃষ্ট। ছবি জুড়ে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতি জয়া আহসানের। মেজ কুমারের বোনের চরিত্রে জয়ার অভিনয় প্রশংসার দাবি রাখে। এছাড়া ছোট চরিত্রে শ্রীনন্দা শঙ্করের অভিনয়ও বেশ ভাল। কোর্টের সওয়াল-জবাব থেকে উঠে আশা অতীত খুঁড়তে খুঁড়তে এগোয় কাহিনি। অঞ্জন দত্ত আর অপর্ণা সেনের চরিত্র দুটো মেলোড্রামাটিক তবে সে কথা পরিচালক স্ক্রিনে লিখে দিয়েছিলেন, কাহিনীর স্বার্থে যদিও আমার মনে হয় না কোন দরকার ছিলো, বরং না থাকলেই আরও ভাল হতো। চলচ্চিত্রটির বেশিরভাগ শুটিং হয় মুর্শিদাবাদের কাঠগোলাতে। ছবিটি ভারতের ৬৬তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারে বাংলা ভাষাতে সেরা কাহিনী-চিত্রের ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার জেতে। নিঃসন্দেহে এটি সৃজিতের জীবনের একটি সেরা কাজ। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘এ প্রিন্সলি ইম্পস্টার”কে ভিত্তি করে যদিও এ কাহিনী এগিয়েছে তবে বলা যায়, চিত্রনাট্য এমনি তৈরী হয় নি, সৃজিত এর জন্যে যথেষ্ঠ তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। 
১২/০৫/২০২০

Tuesday, 5 May 2020

দিনযাপণ ১৬-০৪-২০২০

ফিলিপ্সে কাজ করতাম তখন। বছরে চল্লিশ দিন ছুটি, তার সাথে ওভারটাইম আর সব মিলিয়ে টার্গেট থাকতো দু’মাস দেশে থাকা। কোনরকম দশ মাস এখানে বাকি দু’মাস দেশে। আমার ডাচ কলিগরা বিশ্বাস করতে চাইতো না হল্যান্ডের মত দেশ ফেলে আমি বাংলাদেশের জন্যে পাগল। একবার আমি দেশ থেকে ফিরলে, বললো, তোমার হলিডে’র এলবাম নিয়ে এসো তো, দেখি। এলবাম দেখে এটা ওটা জিজ্ঞেস করে তারপর বলেই ফেললো, তোমরা ইটের বাড়িতে থাকো বুঝতে পারলাম, ঘূর্নিঝড় বা বন্যার পর টিভিতে যেমন দেখি আমরা সেরকম তুমি বা তোমার পরিবার থাকো না। কিন্তু তোমরা এরকম বাড়িতে ঘুমাও আর তোমার নিজের দেশের লোক রাস্তায় ঘুমায়, কি করে পারো তোমরা ঘুমাতে! ওরাতো তোমাদের নিজেদের লোক, এক দেশের মানুষ তোমরা। আমার কোন জবাব ছিলো না। কারণ আমি এর মধ্যেই বড় হয়েছি। একদল রাস্তায় থাকবে আর একদল বাড়িতে থাকবে এটা আমার কাছে খুব স্বাভাবিক। বরং প্রশ্নটাই ছিলো অস্বাভাবিক।

রানাপ্লাজা দুর্ঘটনার পর, সারাদিন ডাচ টিভিতে এর আপডেট দেখিয়ে যাচ্ছে। ক্যান্টিনে, করিডোরে, কনফারেন্স রুমে সব জায়গায় দিনভর টিভি চলে আর তারমধ্যে সব টিভি চ্যানেলে এই খবর। আমি অফিসে চোর মুখ করে থাকি, যার সামনেই পরি তারই একই কথা, কি করে সম্ভব! কয়েকটি ডাচ টিভি চ্যানেল গার্মেন্টস মালিকদের ল্যাভিস লাইফ আর শ্রমিকদের দুর্দশার রিপোর্টিং দেখালো, হিডেন ক্যাম নিয়ে ডেস্পারেট সাংবাদিকরা ফ্যাক্টরীর ভেতরে ঢুকে গেছিলো। এখানে মানুষ প্রতিবাদে ফেটে পরলো, প্রাইমার্ক, এইচ এন্ড এম, আইকিয়া, সি এন্ড এ সবাই ক্রেতাদের খাতিরে তাদের “বাংলাদেশ সাহায্য” প্রজেক্ট ভিজিবল করলো। আইকিয়া গার্মেন্টস মালিকদের চাপ দিয়ে সব শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরী নিশ্চিত করতে সব শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক একাউন্টে বেতন দেয়া বাধ্যতামূলক করলো, তারা চেক করবে সেই ট্রান্সপেরেন্সী নিশ্চিত করলো, শুধু গার্মেন্টস মালিকরা একাউন্টে বেতন ট্রান্সফার করার পর, আইকিয়া চেক করার পর যে সেটা আবার তারা তুলে নিয়ে যায় সেটুকু আইকিয়া নিশ্চিত করতে পারলো না। সি এন্ড এ, এইচ এন্ড এম দোকানে প্রতীকী রক্তমাখা ডোনেশান বক্স রেখে দিলো “ হেল্প বাংলাদেশ গার্মেন্টস ওয়ার্কাস” নাম দিয়ে। কাপড়ের দাম একটাকা কম রাখতো সেই টাকাটা সেই বক্সে দিতো সবাই। এই ছিলো এখানের মানুষের প্রতিবাদ। বাংলাদেশের মানুষরা ফেসবুকে ঝড় তোলা ছাড়া, সরকার বা গার্মেন্টস মালিকদের চাপ দিয়ে শ্রমিকদের জন্যে কিছু করতে পেরেছিলেন কি না জানা হয় নি কখনো। কারণ কদিন পর পর লঞ্চডুবি, ট্রেন-বাস দুর্ঘটনা, এরকম মৃত্যু এসবে আমরা অভ্যস্ত।

বহুবার লিখেছি, ছোটবেলা থেকে কোরবানিতে জবাই, রক্ত, প্রতিদিন মুরগী জবাই, দুর্ঘটনায় অপমৃত্যু দেখতে দেখতে আমরা রক্তে অভ্যস্ত। অন্যের ন্যায্য অধিকার চুরি, রক্ত, জবাই, মৃত্যু সব আমাদের জন্যে খুব সাধারণ। তারওপর আছে তৌহিদী জনতা, তাদের আছে বদরের যুদ্ধ, উহুদের যুদ্ধ, খন্দকের যুদ্ধ। এরচেয়ে ও খুব নিকটে আছে মুঘল ইতিহাস। বাংলাদেশের ইতিহাস বইতে মুঘলদের খুব মহান আঁকা আছে, মূলত তারাও ব্রিটিশদের মত ভারতীয়দের হাত থেকে তাদের দেশ ছিনিয়ে নিয়েছিলো, সেই কথাটি খুব কম বইতে উল্লেখ আছে। মুঘল ইতিহাস, ভাইয়ের হাতে ভাই খুন, বাবার হাতে ছেলে বন্দী, ছেলের হাতে বাবা বন্দী, এন্তার লুটপাট আর খুনোখুনি। তাই এইযে ফেসবুকে লাইভে এসে বউকে কুপিয়ে খুন করে এটি একটি অতি সাধারণ বিছিন্ন ঘটনা মাত্র। এই যে করোনার মত বৈশ্বিক দুর্দিনে চাল চুরি হয়, তেল পাওয়া যায় খাটের তলে এগুলোই আমাদের পরম্পরা। আর এরকম ঘটনা এমেরিকা-সিঙ্গাপুরে অহরহ ঘটে তার চেয়ে বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভাল। আসেন আমরা, ইউটিউবে রেসিপি দেখি, রান্না করি খাই, উই জাস্ট ক্যারি অন। কারণ আমরা এসবেই অভ্যস্ত।

অন্যরকম সিনেমার গল্প

“টেক ওয়ান” – সিনেমা না স্বস্তিকা

মুভিসাইটে সিনেমা দেখার বিরাট সুবিধা হলো, একটা সিনেমা দেখতে দেখতে কাছাকাছি গল্পের বা ঘরানার আরও কিছু সাজেশান এসে জমা হতে থাকবে। আমাদেরকে এত আদর করে সাজেশান দিয়ে দিয়ে সিনেমা দেখিয়ে ওদের কি লাভ হয় কে জানে! হয়ত পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়ার মতলব। দু-চারটে লিঙ্কে ক্লিক করলে হাতের ডান পাশে এত এত নতুন লিঙ্ক জমা হবে, মনে হবে, কী আছে জীবনে, শুধু সিনেমাই দেখি। দেখছিলাম ঋত্বিক চক্রবর্তী আর অপরাজিতা ঘোষদাসের “সত্যি হলেও গল্প”। বেশ অন্যরকম আইডিয়ার ওপর, অতিপ্রাকৃত ব্যাপার স্যাপার নিয়ে সিনেমা। তার মাঝেই জমা হওয়া অন্য সাজেশান থেকে বাছলাম স্বস্তিকা মুখার্জীর “টেক ওয়ান” আর হাতে রাখলাম উত্তম সুচিত্রার “হার মানা হার”। ভাবলাম, “টেক ওয়ান” না হজম হলে ওতো রাতে আর এডভেঞ্চারে যাবো না, বাঙালির চির পছন্দের নিশ্চিত বীমাতে পদার্পণ করে নেবো।
“টেক ওয়ান” রিলিজ হয় দু’হাজার চৌদ্দ সালে। সিনেমা শুরু করার ত্রিশ মিনিট পর থেকে স্বস্তিকা যতো কাঁদে তারচেয়ে বেশি কাঁদি আমি। কিছুক্ষণ দেখার পর, সিনেমা পজে দিয়ে গুগল করলাম। গুগল করে খানিকটা হতভম্ব আমি। মৈনাক ভৌমিকের পরিচালনায়, তার সঙ্গে এটি স্বস্তিকার তৃতীয় ছবি৷  এক নায়িকার জীবন অবলম্বনে তৈরি এ সিনেমার গল্পটি নিয়ে আলোচনা খুব কম জায়গায় হয়েছে কিংবা আদৌ হয়নি। হয়নি স্বস্তিকার অভিনয়ের মান নিয়েও কোনো আলোচনা। যদিও এই সিনেমাটি নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়েছে, যেখানে বারবার এসেছে, ভয়ঙ্কর উত্তেজক দৃশ্যে, খোলামেলা অভিনয়, সাহসিকতার চরম নিদর্শন তুলে ধরেছেন এ নায়িকা ইত্যাদি ইত্যাদি। কোলকাতার বাংলা এবং ইংরেজি সব পত্রিকাতেই প্রায় একই ধরনের প্রতিবেদন লেখা হয়েছে। দু’হাজার চৌদ্দ তো অনেক যুগ আগের সময় নয়, সিনেমায় নায়িকাদের খোলামেলা দৃশ্যে অভিনয় করাও নতুন কোনো ব্যাপার নয়, ভারতে তো অবশ্যই নয়। জিনাত আমান অভিনয় করেছিলেন সত্যম শিভম সুন্দরম সিনেমায় উনিশো আটাত্তর সালে, উনিশো পঁচাশি সালে কিমি কাতকার ছিলেন টারজানের নায়িকা, রেখা অভিনয় করেছেন কামসূত্রতে উনিশো ছিয়ানব্বইতে, দু’হাজার তিনে বিপাশা বসু এসেছিলো তার জিসম সিনেমা নিয়ে আর বিদ্যাবালান অভিনয় করেছেন দু’হাজার এগারোতে ডার্টি পিকচারে, এরকম লিস্ট আরও বাড়তেই পারে।
তাহলে কি বাঙালিরা নিজেদের মেয়ের বেলায় অতিরিক্ত রক্ষণশীল মনোভাব পোষণ করে? পরমা’র রাখীর ক্ষেত্রেও কি সেটা ছিলো? অনেক ছোটো ছিলাম তখন, সেসব আলোচনা বোঝার জ্ঞান ছিলো না। অথচ আমার ধারনা ছিলো, ভারতবর্ষের মধ্যে বাঙালিরা চিন্তা ভাবনায় অনেক বেশি আধুনিক আর ওপেন টু এনি চেঞ্জেস। সিনেমায় স্বস্তিকা’র প্রানবন্ত চুমু কি বাঙালি বোদ্ধা আর মধ্যবিত্ত দুই প্রজাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছিলো? হায় খোদা, “টেক ওয়ান” এর মতো একটি অসাধারণ সিনেমার ওপর কী নিদারুণ অবিচার! সিনেমার গল্প, গান, অভিনয় সব চাপা পরে গেছে, নায়িকার চুমু আর খোলামেলা শরীরের নীচে। “জাতিস্মর” থেকেই “খোদার কসম জান, আমি ভালবেসেছি তোমায়” -এর মতো অনুভূতি ধারন করি আমি স্বস্তিকার জন্যে। তাই আমি লিখছি, “টেক ওয়ান” সিনেমায় নায়িকার শরীর বাদে আসলে আর কী কী ছিলো, কিংবা আমি কী দেখেছি?
ক্রাই ওফ আ হেল্পলেস মাদার, হু কান্ট ডিনাই দ্যা ফ্যাক্টস অফ লাইফ এন্ড এট দ্যা সেইম টাইম ফীলিংস ফো হার ডটার। ক্রাই অফ আ গার্ল নেক্সট ডোর, হু ওয়ান্টেড টু বি লাভড, ডিজায়ারড। আ টেল অফ বিয়িং সো রিচ, বিউটিফুল, সাকসেসফুল ইয়েট সো পুওর এন্ড লোনলি। দো দ্যা ওয়ার্ল্ড ইজ ফুল অফ ক্রাউড, শী লিভস ইন দ্যা মোনাস্টিক, সোলিটারি আইল্যান্ড উইথ কিলিং লোনলিনেস, নো ওয়ান টু হাগ, নো ওয়ান টু কিস, নো শোল্ডার টু ক্রাই, নো ওয়ান এরাউন্ট টু টেল আ সিলি স্টোরি। হুমায়ূন আহমেদ বোধহয় এই অনুভূতি থেকেই লিখেছিলেন, “ঘর খুলিয়া বাহির হইয়া জোছনা ধরতে যাই;  হাত ভর্তি চান্দের আলো ধরতে গেলে নাই।“ শেষ দৃশ্যে স্বস্তিকার বা দোয়েল মিত্রের আত্মহত্যা দেখতে দেখতে কদিন আগে মাছরাঙা টিভিতে বিদ্যানন্দের উদ্যোক্তা কিশোর কুমার দাশের ইন্টারভিউ এর কথা মনে পড়লো, তিনি বলছিলেন, দিনের বেলায় তিনি একজন সফল এক্সিকিউটিভ আর রাতে বাড়িতে এতো একা যে, প্রায়ই তিনি লাফ দিয়ে নীচে পরে, আত্মহত্যা করতে চাইতেন। আমি নিজে এক কথায় এর একটি লাইনও এঁকেছি, “বিষন্নতার কাছে আত্মসমর্পণ হলো, আত্মহত্যা।“
“টেক ওয়ান” আমার চোখে কোনো সিনেমায় থাকা আবেদনময়ী নারীর গল্প নয়, এ সময়ে এ সমাজে, ঠিক আমার আশেপাশে থাকা, জীবনযুদ্ধে আপাত সফল, সুন্দরী, মিষ্টি একটি দুঃখিনী নারীর গল্প। ডেইলিমোশানে আছে, খুব ভাল প্রিন্ট, দেখে নিতে পারেন।


বিদ্যানন্দ

মাছরাঙা টিভিতে “বিদ্যানন্দে”র অন্যতম পৃষ্ঠপোষক কিশোর কুমার দাসের ইন্টারভিউ দেখলাম।
ছোটবেলায় অনেকসময় ঠিক করে মনের মত খেতে পেতেন না। ভাল খাওয়ার দিকে প্রচন্ড লোভ ছিলো। মা’কে বলতেন, বড় হয়ে যখন তার টাকা হবে, তিনি মানুষকে পেট পুড়ে ভালমন্দ খাওয়াবেন। তার মা বলেছিলেন, এরকম সবাই ভাবে, বলে কিন্তু বড় হলে কারো মনে থাকে না। তিনি নিজেও স্বীকার করলেন, বড় চাকুরী, অনেক রোজগার, নিজের জীবন গোছাতেই ব্যস্ত ছিলেন, মানুষকে খাওয়ানোর কথা আর সবার মত তিনিও ভুলেই গেছিলেন।
“বিদ্যানন্দ” সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বললেন, প্রচন্ড মানসিক চাপে ছিলেন, নিজের ব্যক্তিগত বিষন্নতা, হতাশা থেকে বের হওয়ার জন্যে কিছু খুঁজছিলেন। কোথাও নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চাইতেন, বারবার আত্মহত্যার কথা ভাবছিলেন। সেসময় বন্ধুর সাথে পরামর্শ করে এটি শুরু করেন। কোন সো কলড মহত উদ্দেশ্য বা ব্রত থেকে নয়, স্রেফ নিজেকে রক্ষা করতে, বাঁচাতে। “বিদ্যানন্দ” যেহেতু কোন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়, এটিকে নিয়ে তার সেরকম কোন টার্গেট বা পরিকল্পনাও নেই। এটি ট্রাস্ট বোর্ড আর সাধারণ মানুষের সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল, যেরকম পাওয়া যাবে সেরকমই চলবে।
এই ভাবমূর্তির দুনিয়ায় এরকম নির্ভেজাল অকপট সত্যি কথা কি করে বললেন এই ভদ্রলোক! নিজের কোয়ালিটিজ আর লিমিটেশানস নিয়েও তার কোন লুকোচুরি নেই। বিদ্যানন্দের এখন যেরকম ধন্য ধন্য অবস্থা, অন্য মানুষ কেন, আমিও যদি যেতাম টিভিতে, বানিয়ে বানিয়ে বলে আসতাম, আর্ত মানবতার সেবায় জীবন উৎসর্গ করে দেবো, ছোটবেলা থেকেই এই ভেবে বড় হয়েছি, আমি জন্ম থেকেই এরকম ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা
ইউটিউবে (কমেন্ট লিঙ্কেও) আছে এই সাক্ষাতকারটি, নমস্য একজন মানুষকে জানার জন্যে দেখে নেয়া যেতেই পারে।
*****
“মাহাব্বাত হ্যায় ইসি লিয়ে জানে দিয়া
জিদ হোতি তোহ বাহোন ম্যায় হোতি”
ইয়ে আপকে ওয়ার্ডস হ্যায় খান সাহাব। আপসে হাম ভি বেপানাহ মাহাব্বাত কারতে হ্যায়, আগার ইয়ে হাম পে হোতি তো হাম জিদ কারতে, আপকো জানে না দেতে। উইশ ইউ আ প্লেজেন্ট জার্নি এহেড, ইফ দেয়ার ইজ এনি।
******
ঋষি কাপুর, আজ আর একটি নক্ষত্রের পতন। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যু মিছিল।

৩০/০৪/২০২০

দর্শকের চোখে ‘একজন ঋষি কাপুর’

“ঋষি রাজ কাপুর” যিনি “ঋষি কাপুর” নামেই পরিচিত, নামটি শুনলেই প্রথমে যে সিনেমাটি চোখে ভাসে সেটি “চাঁদনী” (১৯৮৯)। তার কারণ সম্ভবতঃ দুটো, আমার বয়স আর শ্রীদেবী। তখন আমি কিশোরী, রোমান্টিক মুভির প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ আর শ্রীদেবী আমার যারপর নাই পছন্দের নায়িকা।  যতদিন গেছে, বড় হয়েছি, চিন্তা-ভাবনা পরিবর্তন হয়েছে, অনেক পছন্দ-অপছন্দও পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু কেমন করে যেনো ছোটবেলার ভালোলাগা গুলো চিরস্থায়ী রয়ে গেছে, বদলায়নি।
সিনেমা হিসেবে “চাঁদনী” কেমন তার চেয়ে অনেক বেশি টেনেছে সুইজারল্যান্ডে ঋষি আর শ্রীদেবীর শ্যুট করা গান, “তেরে মেরে হোটো পে”। 
যখন সিনেমা বলতে জানি নাচ, গান, মারামারি, চকচকে ঝকঝকে পোষাক, তখন ভিসিআরে আসতো, জিতেন্দ্র-শ্রীদেবী (আশা-কিশোর) তাদের “পম পম মামা মিয়া” (জাস্টিস চৌধুরি), কিংবা (কিশোরের গলায়) “রামা রামা রামা রে” (মাওয়ালি) নিয়ে, আর (সাব্বির কুমার আর শৈলেন্দ্র সিং) অভিতাভ-ঋষি কাপুর, লাম্বুজি লাম্বুজি, বলো টিংগুজি (কুলি ১৯৮৩) নিয়ে। হিন্দি ভাষা তখন ঠিক করে না বুঝলেও সিনেমা দেখে, লাম্বুজি আর টিংগুজি শিখছি। তখন চলছিলো এরকম জুটি বেঁধে সিনেমা করার ফ্রেমড গল্প, নাসীব, কুলি, অমর আকবর এন্থনি ইত্যাদি ইত্যাদি। আশির দশক মানেই, ঋষি, অভিতাভ, বিনোদ আর তাদের পর্দা কাঁপানো মারামারি, ছদ্মবেশ দিয়ে শত্রুকে ঠকানো আর নায়িকাদের সাথে গানে গানে রোমান্স। অমর আকবর এন্থনি ছবিতে নিতু সিং এর সাথে অভিনয় করা কাওয়ালি, পর্দা হি পর্দা এখনো সকলের মুখে মুখে ফেরে। তিনি আর নিতু সিং সম্ভবত একমাত্র সফল দম্পত্তি যারা একটার পর একটা জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন। “স্বামী-স্ত্রী” নায়ক-নায়িকা হলে সেই সিনেমায় দর্শকদের আগ্রহ নেই বা কম এই বাক্যটি তাদের বেলায় অন্তত ভুল প্রমাণ হয়েছে। তাদের একসঙ্গে বারোটি পর্দা সফল সিনেমা আছে। 
দুনিয়া (১৯৮৪) সিনেমাতে ঋষি কাপুরের “তু চান্দ নাগার কি শেহজাদি” হাম কিসিসে কাম নেহি (১৯৭৭) ক্যায় হুয়া তেরা ওয়াদা, কাভি কাভি (১৯৭৬) সিনেমায়, তেরা ফুলো জ্যায়সা রাঙ, এক ম্যায় আওর এক তু ছিলো খেল খেল ম্যায় (১৯৭৫) সিনেমা থেকে। আশির দশকে ডিস্কো ড্যান্সার (১৯৮২) সিনেমা দিয়ে মিঠুন চক্রবর্তী নায়কদের এক্টিভ ডান্স নিয়ে আসেন পর্দায়। সেই ধারাবাহিকতায় ঋষিও নাচেন কিশোর কুমারের প্লে ব্যাকে, বাঁচনা ইয়ে হাসিনো, হাম কিসি সে কাম নেহি সিনেমায় এবং গান, নাচ ও ঋষি সবই ছিলো ব্লক বাস্টার হিট।
যখন ঋষি কাপুর এসব ফ্রেমড সিনেমায় অভিনয় করছিলেন, তখনই তার বাবা রাজ কাপুরের পরিচালনায় অভিনয় করেন, “প্রেমরোগ” (১৯৮২) সিনেমায়, নায়িকা পদ্মিনী কোলাপুরে। কসমোপোলিটান ম্যাগাজিনের টপ টেন “মোস্ট রোমান্টিক ফিল্মস এভার” এ “প্রেমরোগ” এনলিস্টেড। অনেকের মতে সামাজিক বিষয় নিয়ে রাজ কাপুরের প্রত্যাবর্তন ও ছিলো এই সিনেমাটি। উঁচু ঘরের বিধবা মনোরোমার সাথে গরীব অনাথ দেবধরের প্রেম নিয়ে এই সিনেমা। রাজ কাপুর (শ্রেষ্ঠ পরিচালক)  ঋষি কাপুর (শ্রেষ্ঠ অভিনেতা) আর পদ্মিনী কোলাপুরে সতের বছর বয়সে (শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী) হিসেবে সে বছরের ফিল্ম ফেয়ার এওয়ার্ড জিতেছিলেন।।
ফ্রেমড সিনেমার বাইরে ছিলো “সারগাম” (১৯৭৯) জয়াপ্রদার দক্ষিনী সিনেমা “শ্রী শ্রী মুভা”র হিন্দী ভার্সন। এই সিনেমার গানগুলো সুপার-ডুপার হিট ছিলো এবং আছে। “ডাফলিওয়ালে ডাফলি বাজা” কাশ্মীরে শ্যুটিং করা হয়, গোদাভারী নদীর কাছে “কোয়েল বলি দুনিয়া দোলি” শুট হয়। লোকেশান, কাহিনী, নায়ক-নায়িকা সবাই মিলে উপহার দেয় আরও একটি স্মরণীয় সিনেমা।
আশির দশকের হার্ট থ্রব এই নায়ক, যেমন রোমান্টিক চরিত্র, তেমনি কমেডি কিংবা এংরি ইয়াং ম্যানের চরিত্রেও মানিয়ে যেতেন। দো দোনি চার, ইনা মিনা ডিকা আর হালের কমেডি ছিলো অমিতাভ বচ্চনের সাথে একশো দুই নট আউট। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এরকম ভালমানুষী চেহারার নায়ক, খল চরিত্রে অভিনয় করে পুরস্কার জিতেছেন। আগ্নিপথ (২০১২) সিনেমায় আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন রউফ লালা’র চরিত্রে অভিনয় করে ঋষি কাপুর আইফা এওয়ার্ড জেতেন। তিনি তার প্রথম সিনেমা (মেরা নাম জোকার) (১৯৭০) এ শিশু শিল্পী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। প্রথম নায়কের চরিত্র করেন, ডিম্পল কাপাডিয়ার সাথে “ববি” (১৯৭৩) সিনেমায়, এর জন্যে জেতেন ফিল্ম ফেয়ার এওয়ার্ড। এই সিনেমাটি এতই জনপ্রিয় হয় যে এর ধারায় রামেশ সিপ্পি বানান ত্রিভুজ প্রেমের গল্প “সাগর” (১৯৮৫)। কমল হাসান, ডিম্পল কাপাডিয়া আর ঋষি কাপুর। “ববি” সিনেমার গানগুলোর মত “সাগর” সিনেমার গানগুলো ও খুব জনপ্রিয় হয়, আজও অনেক এওয়ার্ড অনুষ্ঠান আর গানের অনুষ্ঠানে গানগুলো গাওয়া হয়।
২০০০ সাল অব্ধি শুধু নায়কের চরিত্রেই অভিনয় করতেন, এরপর থেকে চরিত্রাভিনয় শুরু করেন।
বহু মাত্রিক অভিনয়ের সার্থক নাম ঋষি কাপুর। ১৯৫২ সালের ৪ মে তারিখে জন্ম নেওয়া বলিউডের এই রাজকুমার মৃত্যু বরণ করেন ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল।