Friday, 25 September 2020

প্রেম-প্রতিশোধ

প্রস্তর বা সত্য যুগঃ (প্রচুর কান্নাকাটি সহকারে) আমার ভালবাসার যখন তুমি মর্যাদা দিলে না, অন্য কাউকে নিয়ে তুমি সুখী হয়ো (বাঁশ খেও, বলতো না ভদ্রতায়) আমাকে ভুলে যেও, তোমার চলার পথে আমি আর কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো না। তোমাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম। আল্লাহ দেখবেন, আপোষের সুযোগ রেখে লম্বা ডায়লগ। শ্রেষ্ঠাংশেঃ রাজ্জাক-শাবানা। মধ্য বা ত্রেতা যুগঃ (খানিক একশান) আমার না হলে তোমাকে আমি আর কারো হতে দেবো না, আমাকে যে চিঠি লিখেছো বা আমাদের যুগল ছবি আছে, আমি তোমার হবু পার্টনারকে পৌঁছে দেবো। বিয়ের আসর থেকে গুন্ডা দিয়ে তোমাকে আমি তুলে নিয়ে যাবো সুন্দরী, বলো রাজি নাকি এসিড? দুটো চড় চাপরের ব্যাপার থাকতে পারে, নিজেদের মধ্যে বিচার। চরিত্রায়নেঃ ওয়াসিম-অঞ্জু। আধুনিক বা কলি যুগঃ (টাচস্ক্রিন মোবাইলে নিঃশব্দে আঙুল চলছে, নো কথা) আমাকে ডিচ করেছিস? পৃথিবীসুদ্ধ সবার কাছে তোর মুখোশ উন্মোচন করে দেবো শয়তান, এজ ইফ পৃথিবীর সবাই এই নিয়ে কনসার্ন ছিলো, এর জন্যে অপেক্ষা করে বসে ছিলো। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা, টিভি চ্যানেলের টকশোতে ছেলে নিয়ে দরবার, সোশ্যাল মিডিয়ায় সমস্ত অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও, ছবি, টেক্সট, বাজারের রিসিট, হোটেলের বিল, বিমানের টিকিট আপ্লোড। জনতার আদালতে নালিশ। অভিনয়ে: শাকিব-অপু। মাইরি, নিউটনের থার্ড ল বোধহয় একেই বলে!

ডাক নাম

লং ড্রাইভ থাকলে গাড়িতে বসে দার্শনিক প্রশ্ন করা মেঘমালার ছোট বয়সের স্বভাব। তার জগত, তার স্কুল, তার বন্ধু সব মাল্টিকালচারাল। এবারের প্রশ্ন হলো, সব মানুষ একটা নাম পায়, বাংলা মানুষ কেন দুটো নাম পায়? মেঘের বাংলা এই রকমই। আমি কখনো এই দিকটা ভাবিনি, জন্ম থেকেই এতে অভ্যস্ত, তাই হয়ত। যদিও আমার নন-বেংগলি ভারতীয় বন্ধুরা এই নিয়ে প্রায়ই বলতো। ভারতেও শুধু বাঙালিদের দুটো নাম কিন্তু মোর অর লেস বাকি সব জাতিদের একটিই নাম। নাম থেকে পেট নেম অহরহ হয়, বারবারা হয় বার্বি, ক্যাথিলিন – ক্যাথি, জেনিফার – জেন কিংবা রুডলফ – রুডি। বেশ কয়েকটি নামের সংমিশ্রণে হয় আফ্রিকান, এরাবিয়ানদের পুরো নাম যার থেকে একটি নিয়ে সবাই ডাকে। কিন্তু উত্তর মেরু টু দক্ষিন মেরু ডাক নাম আর ভাল নাম কি শুধু বাঙালিদেরই হয়? উদাহরণ, সুজাতার ডাক নাম পলি, রঞ্জনের ডাক নাম হারুন ইত্যাদি। এক নামের সাথে অন্য নাম রিলেট করা যায় না। এজ প্রমিজড টু মেঘ, অন্তর্জালে এই নিয়ে গুতাগুতি করলাম, কাছের জ্ঞানী বন্ধুদের জিজ্ঞেস করলাম, অনেকেরই নিজের ব্যাখ্যা আছে, যুক্তি আছে, কিন্তু আমি যেটা চাইছি, ডাক নাম প্রচলনের ইতিহাস, কোথা থেকে এই প্রচলন এলো, কেন এলো, কিসের প্রয়োজনে এলো? ভারতবর্ষ বারবার তার নিজস্ব সাংস্কৃতি হারিয়েছে দখলদারদের কাছে। মুগল, ইংলিশ সবাই অনেক অনেক দিন শাসন করার ফলে বাইরের অনেক জিনিসই সংস্কৃতিতে স্বতঃসিদ্ধ হয়ে ছড়িয়ে গেছে যা আদৌ ভারতীয় নয়, বিরিয়ানীর মত। কেউ যদি এই নিয়ে কিছু জানেন, আলোকপাত করেন, বাধিত হবো। অগ্রীম ধন্যবাদ।

জন্ম হোক যথা তথা #পার্ট ওয়ান

এরকম একটি অবাস্তব ভাবাবেগপূর্ণ কথা বাঙালির কলম থেকেই বেরনো সম্ভব। অনেকবার লিখেছি, জন্মের ওপর মানুষের হাত নেই কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত, কোথায় জন্মাবে সেই ভৌগলিক সীমানা কিংবা জাতীয়তা-পাসপোর্টই মানুষের জীবনযাপন তথা কর্মকে নিয়ন্ত্রণ করে। ছবির এই মুখটি “জিনিয়া”, যদি সুইডেন, নরওয়ে, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া কিংবা জাপানে জন্মাত তাহলে হয়ত তার নাম হতো, জেনিফার, জ্যাকুলিন, জ্যানেট অথবা জেন। ওসব দেশের খুব দরিদ্র পরিবারে যদি তার জীবন হতো, ধরে নেই, বাবা নেই, মা সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারের টাকায় সংসার চালায়, তিন ভাই-বোন, খুব কষ্টের তাদের জীবন। পায়ে জুতো, গায়ে সোয়েটার, ওভারকোট কিংবা নিদেনপক্ষে এইচ এন্ড এম অথবা প্রাইমার্কের জামা থাকতো তার গায়ে। ভেজালবিহীন রুটি, ডিম, দুধ, পনির, বাটার, জ্যাম, ফল, মাংস হতো রোজদিনের খাবার যেহেতু টাকা কম তাই সস্তা সব আইটেম। সরকারের দেয়া বাড়িতে থাকতো, সবার আলাদা ঘর তবে ছোট, হিটিং, পানি সবই আছে। স্কুলে তো যেতেই হবে, আঠারো বছর পর্যন্ত স্কুল বাধ্যতামূলক। অবশ্য জামিলা বা জান্নাত নাম নিয়ে সৌদি কিংবা দুবাইয়ের খাস এরাব পরিবারে জন্মালে, জামা-জুতো, খাবারের অভাব হয়ত হতো না, মুক্ত স্বাধীন জীবন হয়ত পেতো না, নিগৃহীতও হতে পারতো তবে সেটা অন্যভাবে। এখন যেভাবে হচ্ছে সেভাবে কিছুতেই না। শুধু নিয়তির কারণে আজ বাংলাদেশে জন্মেছে বলে, ফুল বিক্রি করছে, অপহৃত হচ্ছে, বারান্দায় ঘুমোচ্ছে, এসি বিস্ফোরিত হয়ে মরে যাচ্ছে, পুলিশের গুলিতে মারা যাচ্ছে, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে, গার্মেন্টস ধসে মারা যাচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে, আগুনে ঝলসে মারা যাচ্ছে। কার কাছে প্রতিবাদ জানাবো? কোথায় জানাবো নালিশ? অথচ পাসপোর্টে রঙটা বদলে দিলে জীবনটাও মুহূর্তে তার বদলে যাবে। আহা পাড়তাম, যদি পাড়তাম. আঙুলগুলো ছুঁয়ে থাকতাম আহারে জীবন, আহা জীবন. জলে ভাসা পদ্ম জীবন

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – ১৮ (সেপ্টেম্বর)

আঠারোই সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় প্রেসিডেন্ট মিনিস্টার রুতে তার করোনা ভাষণ দেয়ার কারণ হিসেবে বললেন, উইকএন্ড মুড যাতে বেশি দূর না যায় তাই তিনি এটা করেছেন কারণ করোনা ভাইরাস খুব জোরেশোরে আবার ফেরত আসছে।দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা টীম দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন। সামাজিক জীবন আর অর্থনীতিকে যত দূর সম্ভব রক্ষা করতে আঞ্চলিক ও স্থানীয়ভাবে করোনা মোকাবেলা করার কথা ভাবা হয়েছে। কেন আবার কঠোর বিধি -নিষেধের দিকে যাওয়া হচ্ছে? গরমের ছুটির সময় থেকেই দেখা যাচ্ছে, অনেকের কাছে করোনা ভাইরাস শুধু একটি শব্দ হয়ে গেছে। সোশ্যাল ডিসটেন্স, হাত ধোয়া কিংবা সর্দি কাশিতে বাড়ি থাকা কোন কিছুকেই তারা আর গুরুত্ব দিচ্ছে না। বার বার বলা হচ্ছে, ওয়ার্ক ফ্রম হোম, এটি এমনি এমনি বলা হচ্ছে না, কেইস স্টাডি থেকে দেখা যাচ্ছে, শতকরা দশ ভাগ সংক্রমণ কাজের জায়গা থেকে আসছে আর দশ ভাগ কোন ছোট সংখ্যা নয়। মধ্য এপ্রিলে যখন করোনার প্রার্দুভাব সবচেয়ে বেশি ছিলো তখন গড় সংক্রমণ সংখ্যা ছিলো চারশো আর যেটা এখন হাজারের ওপরে। ছাত্রদের জন্যে এটি একটি চরম বাজে সময় যাচ্ছে। হাজার সীমাবদ্ধতার মধ্যেই তারপরও ক্লাশ চলছে, এজন্যে সবাই অভিনন্দন পেতে পারে। যদিও ছাত্রাবাসগুলোতে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। আগে নেদারল্যান্ডস যে সাফল্যের সাথে করোনা মোকাবেলা করেছিলো তার কারণ মোটেও ইন্টিলিজেন্ট লকডাউন ছিলো না, ছিলো সতের মিলিয়ন মানুষের ঐক্যবদ্ধ চেষ্টা আর বিপদকে কাটিয়ে ওঠার অনুভূতি যেটা আবার আমাদের ফেরৎ আনতে হবে। হাসপাতাল কিংবা আইসিইউতে কম ভীড় মানে করোনা কম বিপদজনক তা নয়, ডাক্তাররা এখন করোনার চিকিৎসা সম্বন্ধে ভাল জানেন, কিভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তা বুঝতে পারেন। কিন্তু চারপাশের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। করোনা রোগীদের এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে, কারণ আগে থেকে যাদের গুরুত্বপূর্ন অন্য অপারেশন, চিকিৎসা যেগুলোর পরিকল্পনা করা আছে, সেগুলো যেনো ঠিকমত চলতে পারে। হৃদরোগী, ক্যান্সারের রোগীদের চিকিৎসা ফেলে রাখা যায় না। আমস্টার্ডামে এবং রোটারডামে তাই আলাদা করোনা ডিপার্টমেন্ট চালু করা হয়েছে। যেসকল হোমে খুব সেন্সিটিভ রোগী আছে সেখানে করোনার আক্রমণ বেশি হচ্ছে। একজন মানুষ এক দশমিক চারজন মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে। আর একবার হাসপাতালের কর্মী সংকট, আর একবার মৃত্যুর মিছিল, আর একবার চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রমের মধ্যে দিয়ে আমরা হাঁটতে চাই না। ক্যাফে-রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি সব বন্ধ করে দিলে তার থেকে যাদের কর্ম সংস্থান হয় তাদের কথাও মাথায় রাখা দরকার। যেখানে অনেক বেশি ছাত্র ও তরুণদের বসবাস, দেশের পশ্চিমভাগে, রান্ডস্টাডে ছয়টি কঠোর নিয়মের কথা ভাবা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানালেন আমরা এখন সেকেন্ড ওয়েভে আছি, তবে করোনা সম্বন্ধে আমরা আগের চেয়ে ভাল জানি বলে চিকিৎসাক্ষেত্রে ভাল আছি। ঝুঁকির ভিত্তিতে পুরো দেশকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এক নম্বরঃ যেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে, সেখানে বেসিক নিয়ম থাকবে, দুই নম্বরঃ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, সেখানে আলাদা ব্যবস্থা নিতে হবে, তিন নম্বরঃ সংক্রমনের হার বিপদজনক, যেখানে দুর্বল মানুষরা ঝুঁকিতে আছে তাদের রক্ষা করতে অন্যরকম পদক্ষেপ নিতে হবে। এ সময়ে তরুণদের মধ্যে সংক্রমনের হার অনেক বেশি, আর যারা ভাবছেন, তরুণদের জন্যে করোনা তত ঝুঁকিপূর্ন নয় তাদেরকে বলছি, অনেক তরুনই গুরুতর অসুস্থ হতে পারে। নেদারল্যান্ডসের ছয়টি শহর এখন দুই নম্বর ঝুঁকিতে আছে, আমস্টার্ডামের আমস্টার্লান্ড, রাইমন্ড ইন রটারডাম, হাগেল্যান্ড, উটরেক্ট্র, ক্যানেবারল্যান্ড ও হল্যান্ডসমিডে। হাজার চেষ্টার পরও যেহেতু ক্যাফেগুলো থেকে সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না তাই ঝুঁকি পূর্ণ শহরগুলোর ক্ষেত্রে কিছু আলাদা নিয়ম দেয়া হলো, রাত বারোটার পর কাউকে আর ক্যাফেতে ঢুকতে দেয়া হবে না, বারোটায় মিউজিক অফ করে দেয়া হবে আর একটার মধ্যে অবশ্যই সবাইকে বের হয়ে যেতে হবে। ভেতরে আর বাইরে যেখানেই হোক পঞ্চাশ জনের কোন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হলে আলাদাভাবে সব ব্যবস্থাপত্র খতিয়ে দেখতে হবে। আর পঞ্চাশজনের বেশি মানুষের কোন অনুষ্ঠান আপাতত এরেঞ্জ করা যাবে না। স্কুল, মৃত্যু যাত্রা, ডেমনস্ট্রেশান আর ধর্মীয় অনুষ্ঠান এই নিয়মের আওতায় পরবে না। রোববার মধ্যরাত থেকে এই নিয়মগুলো ওপরের ছয়টি শহরের জন্যে কার্যকর হবে আর পরিস্থিতি বাধ্য করলে অন্য শহরের জন্যেও প্রযোজ্য হতে পারে। এর বাইরেও যারা নিয়ম ভেঙে পার্টির আয়োজন করবে, একসাথে জমায়েত করবে সেসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ল্যাব গুলোতে প্রচন্ড ভীড় তাই টেষ্ট করতে ও রেজাল্ট দিতে দেরী হচ্ছে, নতুন মেশিন কেনা হয়েছে, নতুন ল্যাব বানানো হচ্ছে, দ্রুত পরীক্ষা করার নতুন পদ্ধতি পাওয়া গেছে কিন্তু সেসব কার্যকর হতে আরও কয়েক সপ্তাহ লেগে যাবে। এসব নিয়ে যত অসন্তোষই থাকুক স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে তা নিয়ে দুর্ব্যবহার করা যাবে না। বারো বছরের নীচে বাচ্চাদের দ্বারা সংক্রমনের ঝুঁকি কম তাই তাদের পরীক্ষা করানোর দরকার নেই। তারা সর্দি কাশি নিয়েও স্কুলে যেতে পারবে আর সাত বছরের নীচের বাচ্চারা স্কুল আর ডে কেয়ার সবকিছুতেই যেতে পারবে। আবারও বলছি, নিয়মনীতি দিয়ে সেকেন্ড ওয়েভ অতিক্রম করা যাবে না, আমাদের সদিচ্ছা আর আমাদের চেষ্টাই এই তরঙ্গ পার করবে। মিনিস্টার প্রেসিডেন্ট রুতে বলেছেন, নেদারল্যান্ডসের মানুষরা দায়িত্বশীল তিনি জনেন এবং সেটা আবারও প্রমাণ করতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডি ইয়ঙ্গের ভাষায় পরিস্থিতি ভালো নয়, সংক্রমনের হার উদ্বেগজনক, আমাদের সবাইকে মিলে এটি প্রতিরোধ করতে হবে। প্রতি আড়াইশো জন মানুষের মধ্যে একজন বা তার বেশি সংক্রমিত যাদের সাথে আমাদের পথে ঘাটে দেখা হয়ে যেতে পারে আর তাই নিয়ম নীতি বড় কথা নয়, নিজেদের আচার আচরণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কাজের কারণে দেশের বাইরে যেতে হলে, বিদেশের ওয়েবসাইটগুলো চেক করে খুব সর্তকতার সাথে পরিকল্পনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

Thursday, 17 September 2020

শিক্ষায়-শিল্পে নবাব পরিবারের অবদান

 https://www.jugantor.com/todays-paper/literature-magazine/346004/%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%AC-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%AC%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%A8

 

ভোজন রসিক যারা মোগলাই ঘরানার খাবার ভালবাসেন তাদের প্রথম পছন্দের ঠিকানা ছিলো আগে পুরান ঢাকা। হোক সে বাখরখানি, কিংবা হাজি বা নান্নার বিরিয়ানি, পনির সমুচা, সূতা কাবাব আর নইলে আনন্দের কেক-বিস্কিট। বলা হয়ে থাকে, এসবের বেশিটাই এসেছে নবাবদের রসুই ঘর থেকে। সারা ঢাকায় নয়ন জুড়ানো স্থাপত্য, বিদ্যুতায়ন, পানি পরিশোধন, পার্ক, আধুনিক মার্কেট তৈরী সহ নবাবদের বহু অবদান চোখে পড়ে, কিন্তু চোখে পড়ে না, এরকম অজানা অনেক তথ্য ও রয়ে গেছে ইতিহাসের পাতায়। ব্রিটিশ রাজ দ্বারা ভূষিত ঢাকার প্রথম নবাব ছিলেন খাজা আলিমুল্লাহ আর শেষ নবাব খাজা হাবিবুল্লাহ। তবে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, নবাব সলিমুল্লাহই শিল্প, শিক্ষা, নগর উন্নয়নে তার পরিবারের অন্যান্যদের তুলনায় অনেক বেশি অবদান রেখেছেন।

 

নবাব সলিমুল্লাহ ঢাকার আহসান মঞ্জিলে ১৮৭১ সালের ৭ জুন জন্মগ্রহণ করেন। কার্জন হলে পূর্ববঙ্গের ছোটলাট ল্যান্সলট হেয়ারের বিদায় এবং বেইলী-এর স্বাগত অনুষ্ঠানে নবাব সলিমুল্লাহ ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জ ১৯১২ সালে ২৯ জানুয়ারি তিন দিনের সফরে ঢাকা আসেন। এ সময় নবাব স্যার সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকসহ ১৯ জন মুসলিম নেতার একটি প্রতিনিধিদল ৩১ জানুয়ারি গভর্নর জেনারেলের সঙ্গে দেখা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লর্ড হার্ডিঞ্জ ঘোষণা করেন, ‘The Government of India realized that education was the true salvation of the Muslims and that the Government of India, as an earnest of their intentions, would recommend to the Secretary of State for the constitution of University of Dacca.’ ১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। যদিও নবাব সলিমুল্লাহ জীবদ্দশায় এই বিশ্ববিদ্যালয় দেখে যেতে পারেন নি। ১৯১৫ সালের রাত ২-৩০ মিনিটে তার কলকাতার চৌরঙ্গী রোডস্থ ৫৩ নম্বর বাড়িতে মাত্র ৪৪ বছর বয়সে নবাব সলিমুল্লাহ ইন্তেকাল করেন।

 

নবাব সলিমুল্লাহর দান করা জমিতে বুয়েট প্রতিষ্ঠিত। ১৯০২ সালে ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল (বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠায় তিনি তাঁর পিতার দেয়া পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুসারে ১ লক্ষ ১২ হাজার টাকা মঞ্জুর করেন। ১৯০৮ সালে নবাব সলিমুল্লাহ আরো অর্থ দান করে পিতার নামে স্কুলটির নামকরণ করেন ‘আহসানউল্লাহ স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং।’ ১৯৪৭ সালের পর স্কুলটি কলেজে উন্নীত হয়। মুসলিম লীগ সরকার ১৯৬২ সালে কলেজটির উন্নয়ন করে প্রতিষ্ঠা করে পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় যা ছিল তদানীন্তন প্রদেশের প্রথম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীনতার পর এটির নামকরণ করা হয়েছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি (বুয়েট)।

 

এতিম মুসলিম ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য ১৯০৮ সালে আজিমপুরে ২৮ বিঘা জমি দান করে সলিমুল্লাহ প্রতিষ্ঠা করেন এতিমখানা পরবর্তীতে নামকরণ করা হয় নবাব সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা। লেখাপড়ার জন্য এতিমখানায় ছেলেদের জন্য একটি এবং মেয়েদের জন্য একটি করে দুটি স্কুল রয়েছে। শত শত এতিম ছেলেমেয়ের থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা, পোশাক-পরিচ্ছদ ও লেখাপড়ার যাবতীয় ব্যয় নবাব সলিমুল্লাহ মৃত্যু পর্যন্ত নিজের পকেট থেকে ব্যয় করেছেন।

 

১৮৬৩ খ্রি. নওয়াব আবদুল লতিফ-এর মোহামেডান লিটারারি সোসাইটি প্রতিষ্ঠার সাথে নওয়াব খাজা আবদুল গনি ও খাজা আহসানুল্লাহ প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। ১৮৭৮ খ্রি. সৈয়দ আমীর আলী ‘সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মোহামেডান এ্যাসোসিয়েশন’ প্রতিষ্ঠা করলে ঢাকার নওয়াব তাতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে মুসলমানদের সংখ্যানুপাতে সুযোগ আদায়ের লক্ষ্যে উক্ত এ্যাসোসিয়েশন সরকারকে স্মারকলিপি দেয়ার জন্য ১৮৮৫ খ্রি. এক স্বাক্ষর অভিযান চালায়। নওয়াব আবদুল গনি এ অঞ্চলের ৫ হাজার লোকের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে ১৮৮৫ খ্রি. নভেম্বর মাসে বঙ্গীয় সরকারের নিকট এক স্মারকলিপি পেশ করেন।

 

১৮৭৭ সালে জাহাজে করে জ্ঞানদান্দিনী, তিন সন্তান নিয়ে পুরুষবিহীন একা বিলেতে যান যেটি ভারতবর্ষে সে সময় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। নবাবনন্দিনী পরীবানু ১৯২০ সালে কন্যা জুলেখা বানুকে সঙ্গে নিয়ে একা প্লেনে করে ইংল্যান্ডে বেড়াতে গিয়েছিলেন, সে কথাটি আমরা কয় জন জানি? ঢাকার নবাব পরিবারের বিদুষী সদস্যা পরীবানু নবাব খাজা আহসানউল্লাহর কন্যা। জন্ম ১৮৮৪ সালের ১ জুলাই। তিনি গৃহশিক্ষকের কাছে আরবি, ফারসি এবং ইংরেজি শিক্ষা লাভ করেন। শিখেছিলেন ঘোড়ায় চড়া, জমিদারির কাজকর্মও। ১৯১৯ সালে পরীবানু ৬০ বিঘা জমিসহ শাহবাগ বাগানবাড়ীর দক্ষিণাংশ নবাব হাবিবুল্লার কাছ থেকে নিজ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। এরপর থেকে তিনি ঢাকার সম্ভ্রান্ত মহিলাদের বেড়ানোর জন্য প্রতি শনিবার বাগানটি উন্মুক্ত রাখার ব্যবস্থা রাখেন। সম্ভবত সেই থেকেই লোকমুখে পরীবাগ নামটি বিশেষভাবে পরিচিত হয়ে ওঠে। ঢাকার বিভিন্ন উন্নয়নে তিনি এবং তার বোনেরা মিলে লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করেছেন।

 

নবাব খাজা আলিমুল্লাহের মৃত্যুর পর তার ও জিনাত বেগমের সন্তান খাজা আবদুল গণি নবাব হন। রক্ষণশীল সমাজের বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি মহিলাদের মঞ্চ নাটকে অভিনয়ে সাহায্য করেন। ১৮৪৬ সালে খাজা আবদুল গণি ইসমতুন্নেসার সন্তান আহসানুল্লাহ ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। আহসানুল্লাহ একজন উর্দু কবি ছিলেন।তিনি শাহীন নাম ব্যবহার করতেন। তার কিছু নির্বাচিত কবিতা, কুলিয়াত-ই-শাহীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত আছে। তার বই তাওয়ারিক-ই-খানদান-ই-কাশ্মীরিয়া পাকিস্তানি ইতিহাস ও সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

 

নবাব খাজা আহসানউল্লাহ এবং নবাব খাজা সলিমুল্লাহ ছিলেন শিল্প ও সংস্কৃতির দুর্দান্ত অনুরাগী। দু'জনেই ১৮৮৮-৮৯ এবং ১৮৯০-১৯৬৬-এর কোলকাতা ভিত্তিক ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সদস্য ছিলেন। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ফটোগ্রাফির বিকাশ ঘটে ঢাকায়। ১৮৯৮ সালের এপ্রিলের বসন্তে, নবাব খাজা আহসানউল্লাহ কোলকাতা থেকে “সিনেমাটোগ্রাফ কোম্পানী”কে আহসান মঞ্জিলে আমন্ত্রণ জানান। সে অনুষ্ঠানে পরিবারের সদস্যরা এবং শহরের উচ্চবিত্তরা উপস্থিত ছিলেন। ১৯১১ সালের ১৬ই ও ২২শে মার্চ “রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানী” আহসান মঞ্জিলে শো প্রদর্শন করেছিল। খাজা ইউসুফজান, যাকে এর আগে নবাব উপাধি দেওয়া হয়েছিল, তার সম্মানে নবাব সলিমুল্লাহ, এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন । আবদুল আলীম এবং খাজা আজিজুল্লাহর বাসভবনে আরও দুটি অনুষ্ঠান যথাক্রমে ২৪ ও ২৫ তারিখে আয়োজন করা হয়েছিল। ১৯১৬ সালের ৫ই জুন থেকে দু'দিন ধরে নবাবজাদা খাজা আতিকুল্লাহ তাঁর দিলখুশার বাসায় সিনেমাটির প্রিমিয়ারও করেছিলেন।

 

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে শিল্পী, প্রযুক্তিবিদ এবং স্টুডিওর পুরো সুযোগ সুবিধাসহ কোলকাতা ছিল চলচ্চিত্র প্রযোজনার দুর্গ। ঢাকায় এই সমস্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব ছিল। নবাব পরিবারের আর্থিক সহায়তায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশে প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ১৯২৭-২৮ সালে নবাব পরিবারের একদল যুবক এগিয়ে এলেন। পরীক্ষার জন্যে তরুণ ছেলেরা 'সুকুমারী' নামে একটি শর্ট ফিল্ম প্রযোজনা করেছিল। “সুকুমারী” পরিচালনা করে ছিলেন নাট্যকার ও জগন্নাথ কলেজের শারীরিক শিক্ষার প্রশিক্ষক অম্বুজ প্রসন্ন গুপ্ত। নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নবাবজাদা নসরুল্লাহ। মজার বিষয়, তখনকার সময় কোনও অভিনেত্রী খুঁজে পাওয়া অসম্ভব ছিল। সৈয়দ আবদুস সোবহান নামে এক যুবককে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল। দিলকুশা বাগানে শুটিং হয়েছিল। আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক খাজা আজাদ এবং ফটোগ্রাফি অধ্যয়নরত বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ খাজা আজমল ক্যামেরাটি রোল করেছিলেন। এই সিনেমাটি তৈরিতে সহায়তা করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আন্দালিব সাদানী, সৈয়দ আবদুস সোবহান, কাজী জালালউদ্দিন প্রমুখ। সিনেমাটি ১৯২৮-২৯ -এর মধ্যে শেষ হয়েছিল, পরীক্ষার সফল সমাপ্তি। এটি ছিল চারটি রিলের সম্পূর্ণ নীরব একটি সিনেমা। দুর্ভাগ্যক্রমে চলচ্চিত্রটি সবাই দেখার জন্যে কখনোই উন্মুক্ত ছিল না। তবে ব্যক্তিগত পরিসরে কয়েকবার দেখানো হয়েছিল। “সুকুমারী' চলচিত্রটির কোন প্রতিলিপি আর নেই, এটি চিরতরে হারিয়ে গেছে। একটি মাত্র অমূল্য স্থির ছবি (নায়ক খাজা নাসারুল্লাহ এবং নায়িকা সৈয়দ আবদুস সোবহানের সাথে) বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের কোষাগারে রয়েছে।

 

“সুকুমারী”র সাফল্যের পরে নবাব পরিবারের যুবকরা আরও বড় উদ্যোগ নেয়। তারা ঢাকায় ইস্ট বেঙ্গল সিনেমাটোগ্রাফ সোসাইটি স্থাপন করে এবং “দ্য লাস্ট কিস” শিরোনামে একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য নীরব চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছিল। অনুপম হায়াতের ভাষ্য অনুযায়ী, খাজা আজমল নায়িকা লোলিতার বিপরীতে অভিনয় করেছেন। ডাঃ এমডি আলমগীরের মতে, খাজা নাসারুল্লাহ প্রথমে নায়ক ছিলেন এবং পরে কাজী জালালউদ্দিন তারও পরে খাজা আজমল স্থান পেয়েছিলেন। গ্যাংয়ের নেতা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, বিখ্যাত শিল্পী শৈলেন রায় (টোনা বাবু)। অন্যান্য চরিত্রে ছিলেন, খাজা আদেল, খাজা আকমল, খাজা শাহেদ, খাজা নাসারুল্লাহ এবং সৈয়দ সাহেব ই আলম। অভিনেত্রীরা হলেন লোলিতা ওরফে বুড়ি (নায়িকা), চারুবালা, দেবাবালা ওরফে দেবী এবং হরিমতি। শিল্পীদের প্রথম তিনজন এসেছিলেন পুরান ঢাকার পতিতালয় থেকে আর হরিমতি ছিলেন সেসময়ের একজন বিখ্যাত বাইজি । ১৯৯৯ সালের অক্টোবর থেকে ছবিটির শুটিং শুরু হয়েছিল, দিলকুশা, মতিঝিল, পরীবাগ এবং আজিমপুরের আশেপাশে শুটিং হয়েছিল। ক্যামেরাটি পরিচালনা করেছিলেন খাজা আজাদ। সহকারী ক্যামেরাম্যান ছিলেন খাজা আজমল ও খাজা জহির। পরিচালক অম্বুজ গুপ্ত নিজেই ছবিটির ইংরেজি ও বাংলা সাবটাইটেল তৈরী করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দালিব শাদানী উর্দু সাবটাইটেল রচনা করেছিলেন। মুদ্রণ ও প্রসেসিংয়ের কাজ কলকাতায় হয়েছিল। মুভিটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল বারো হাজার টাকা। ১৯৩১ সালে, “দ্য লাস্ট কিস” মুকুল সিনেমা হলে (বর্তমানে আজাদ) মুক্তি পেয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রমেশচন্দ্র মজুমদার চলচ্চিত্রটির প্রিমিয়ার শো উদ্বোধন করেন। সিনেমাটি কয়েক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে চলে। তারপর ছবিটি সর্বসাধারণের জন্যে প্রদশর্নের উদ্দেশ্যে কোলকাতায় নেওয়া হয়েছিল। অরোরা ফিল্ম সংস্থা সিনেমাটি নিয়েছিল কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক ভাবে তাদের কাছে সিনেমাটি হারিয়ে যায়।

 

“দ্য লাস্ট কিস” চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে নবাব পরিবারের এক সদস্য সাইদ সাহাবুদ্দিনের মন্তব্য, একটি দৃশ্যে দেখা যায়, ফয়জ আলমের বাবা কালু চাচা (সাহেব-ই-আলম), একটি দুর্দান্ত ঘোড়সওয়ার, শিশু শাহেদকে অপহরণ করে এবং তারপর ঘোড়ায় চড়ে তারা চলে গিয়েছিলেন। আমার মা অনুভব করেছিলেন যে এটি খুব বিপজ্জনক, এবং শাহেদকে তিনি দৌড়ানো ঘোড়ায় উঠতে দেয়নি। অতএব, এই দৃশ্যের জন্য একটি পুতুল বা কিছু ব্যবহার করা হয়েছিল। আমাদের বাল্যকালকে কল্পনা করুন। যখন এই দৃশ্যটি দেখানো হয়েছিল, আমরা প্রত্যেকে ছবিটি দেখছি, একে অপরকে ফিসফিস করে বলছি, “কাউকে বলবেন না, এটি শাহেদ নয়।"

 

"দ্য লাস্ট কিস" এর চিত্রগ্রহণের কথা আমার স্পষ্ট স্মরণ রয়েছে, যেমন কিছু দৃশ্য বায়তুল-আম্নে চিত্রিত হয়েছিল, যেখানে আমরা থাকতাম। চাচা আজাদ ক্যামেরাটি পরিচালনা করছিলেন এবং রৌপ্য কাগজে আচ্ছাদিত বড় স্কোয়ার কার্ডবোর্ডগুলি সূর্যের আলোতে প্রতিচ্ছবি হিসাবে ব্যবহৃত হত। তারপর আমরা ছবিটি দেখেছি। মুকুল সিনেমার পুরো সারিটি আমার, ও আমার ছেলেমেয়েদের দখলে ছিলো। স্মৃতিচারণ - আমার বোন তাহেরা ও বিলকুইস; নাজমা, আনোয়ার ও হামিদ; মাশুক; শাহেনশাহ; ইফাত এবং শফিক, ফায়াজ এবং আমি - যদি কাউকে ভুলে গিয়ে থাকি তবে এটি স্মৃতি বিবর্ণ হওয়ার কারণে। শুধু একজন অনুপস্থিত ছিলেন, আমার তিন বছরের বড় ভাই শাহেদ, যিনি আমাদের সাথে খুব কম বয়সী ছিলেন, কিন্তু সিনেমায় শিশু অভিনেতা হিসাবে অভিনয় করার মত যথেষ্ঠ পরিপক্ক ছিলেন। যদি আমার ভুল না হয়, তিনি এবং রাই বাহাদুর সাতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যা টুনটুনকে ঘিরে চলচ্চিত্রের চরিত্রগুলি নির্মিত হয়েছিল।

 

 

গ্রন্থপঞ্জিড. মোহাম্মদ আলমগীর সম্পাদিত “নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহর জীবন ও কর্ম এবং ঢাকা নওয়াব এস্টেট”,  ড. মো. আলমগীর রচিত ‘মুসলিম বাংলার অপ্রকাশিত ইতিহাস: ঢাকার নওয়াব পরিবারের অবদান’, বাংলাপিডিয়া, অন্তর্জাল
http://www.nawabbari.com/main_arts.html?string=lastKiss.html

 

তানবীরা তালুকদার

০৩/০৯/২০২০

 

Wednesday, 2 September 2020

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – ১১ (সেপ্টেম্বর)

 

 

“পরিস্থিতি এখন উদ্বেগজনক নয়, কিন্তু উত্তেজনাপূর্ণবললেন মিনিস্টার প্রেসিডেন্ট মার্ক রুতে তার পয়লা সেপ্টেম্বরের “করোনা” কনফারেন্সে। কোন বড় কিংবা অপ্রত্যাশিত কারণ ছিলো না তারপরও কনফারেন্সটি রাখা হয়েছিলো, যাতে সচেতনতা বজায় থাকে সেই রুটিন মেইনটেইন করার জন্যে। দুটি ব্যাপার নিয়ে কথা বলবেন তিনি, একঃ প্রায় ছয় মাস ধরে নেদারল্যান্ডস করোনা সারভাইভ করছে, এই মুহূর্তে নেদারল্যান্ডসের অবস্থান কোথায়? আক্রান্তের এই সংখ্যা আমরা কিভাবে দেখছি? আর দ্বিতীয়ঃ সেকেন্ড গলফ এড়ানোর জন্যে আমরা কি ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে প্রস্তূত থাকবো? এই নিয়ে কথা বলবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হুগো ডি ইয়ং। শুরু করার আগেই মার্ক রুতে জানিয়ে দিলেন, প্রত্যেকের অধিকার আছে সংসদরা “করোনা” নিয়ে কি কাজ করছে সে প্রশ্ন করার এবং তাদের কাজের সমালোচনা করার। এটা খুবই স্বাভাবিক ছয় মাস পরে মানুষ এই কারণগুলো অনুসন্ধান করবেই। কেউ যদি কোন ধরনের পরামর্শ দিতে চান চিকিৎসা কিংবা ডিসিপ্লিন নিয়ে সেটা নিয়ে সাংসদরা সংসদে আলোচনা করতে পারেন। এ ব্যাপারে সবাই স্বাগত। আজকেও তিনি চতুর্থবারের মত যুব সমাজের সাথে এই নিয়ে মত বিনিময় করেছেন। ভাইরাস মোকাবেলা করার তো শুধু একটি পন্থা নয়, অন্যান্য পন্থাগুলো নিয়েও আলোচনা আর কাজ করতে চান। আর তাই তিনি আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সামনের সপ্তাহে অনলাইনে দেশের সবার সাথে এই নিয়ে আলোচনা করবেন, ভবিষ্যতের কর্মপন্থা ঠিক করবেন। মার্ক রুতে বললেন, আমরা শতভাগ জ্ঞান নিয়ে শুরু করি নি কিন্তু প্রতিদিনই নতুন নতুন জিনিস শিখছি।   

 

দুই সপ্তাহ আগের স্পীচের পর মানুষজন আবার সচেতন হয়েছে। সংক্রমণের হার শুধু স্থিতিশীল নয়, কমছে। এই মুহূর্তে প্রতিদিন প্রায় পাঁচশো লোক আক্রান্ত হচ্ছে, আই-সি-ইউ আর হাসপাতালের ওপর চাপ পরছে না কারণ প্রস্তূতি রয়েছে। পয়লা জুলাইয়ের তুলনায় সংক্রমনের হার অনেক বেড়েছে কিন্তু পরিস্থিতি এখনো স্থিতিশীল। আর এটা শুধু নেদারল্যান্ডসেই হচ্ছে তা নয়, অন্যান্য দেশে যেখানে ‘করোনা” স্থিতিশীল ছিলো সেখানেও একই রকমই চিত্র। আজকেও বিশেষজ্ঞ দল বলেছেন, সংক্রমনের আশঙ্কা বেশি থাকায় নাইট ক্লাব আর ডিস্কোথেক আপাতত বন্ধ থাকবে। আর সংক্রমনের আশঙ্কা কম থাকায়, শূন্য থেকে বারো বছর পর্যন্ত বাচ্চারা ডে কেয়ারে যেতে পারে, তাদের কেয়ারন্টিনের দরকার নেই।   

 

কিছু মানুষ সারাক্ষণ শুধু দুঃখ করছে, কি কি করতে পারছে না তাই নিয়ে। কিন্তু আজকে আমি সেই কথাগুলো উল্লেখ করবো, অন্যদেশের তুলনায় নেদারল্যান্ডসে সবসময় মানুষ অনেক বেশি কিছু করতে পেরেছে। এখানে কখনো বলা হয় নি, বাসা থেকে এক কিলোমিটারের বেশি দূরে যাওয়া নিষেধ কিংবা বাজার করতে যাওয়ার জন্যে সিটি করপোরেশানের সীল লাগবে হাতে। তারওপর এখন স্কুল খোলা, রেস্টুরেন্ট খোলা, সিনেমা-থিয়েটার খুলে দেয়া হয়েছে, শুধুমাত্র সামান্য কিছু প্রাথমিক নিয়ম-নীতি পালন করতে হবে।


স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানালেন, সচেতনতা বেড়েছে তাই পরীক্ষার সংখ্যাও বেড়েছে। শুধুমাত্র গত দুই সপ্তাহে পরীক্ষার হার একশো হাজার থেকে একশো ষাট হাজারে পৌঁছেছে। ল্যাবের ওপর চাপ পরেছে তাই টেষ্ট করতে আর রেজাল্ট জানতে মানুষকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে সামনের সময়টাতেও পরিস্থিতি এরকমই থাকবে। তাই আবারও বলা হচ্ছে, উপসর্গ না থাকলে পরীক্ষার জন্যে ভীড় করতে না, আর এই অবস্থা সাময়িক, পরীক্ষার হার বাড়ানোর জন্যে চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন যেহেতু সীজন চেঞ্জ হচ্ছে, সর্দি-কাশি এ সময়টাতে এমনিতেই হয়ে থাকে। পরীক্ষার সুযোগ বাড়াতে, জার্মানের দুটো ল্যাবের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। জিজিডি মানুষকে দ্রুত ট্রেইন করছে, যাতে তাড়াতাড়ি পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো যায়। যেহেতু করোনার লক্ষন সব সময় একই রকম নয়, তাই স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে প্রতি সপ্তাহে টেষ্ট করতে হবে।  

 

এখন থেকে করোনা ড্যাশবোর্ড ওয়েবসাইটে এলাকা ভিত্তিক বিধি-নিষেধ দেয়া থাকবে। প্রত্যেক এলাকার পরিস্থিতি আলাদা হতে পারে বিধায় নিয়ম নীতিও আলাদা থাকতে পারে। পাঁচটি কোম্পানীর সাথে ভ্যাক্সিন নিয়ে কথা হয়েছে আর আশা করা হচ্ছে সব ঠিক থাকলে দুই হাজার একুশের প্রথম দিকে ভ্যাক্সিন পাওয়া যাবে। প্রথম সেপ্টেম্বর থেকে “করোনা এপ” চালু হওয়ার কথা থাকলেও সেটি সম্ভব হয় নি এখনও ট্রায়াল ফেজে আছে, চেষ্টা করা হচ্ছে দ্রুত চালু করার।

Tuesday, 1 September 2020

নেদারল্যান্ডসবাসীকে কেন ডাচ বলা হয়?

 https://bangla.bdnews24.com/kidz/article1796718.bdnews?fbclid=IwAR1I3OMW4KDU3SOPPMOrZHOaZVcKAMRPYBKnihM3OC69_RSb089WdWzQXX8