Thursday, 23 September 2021

মিথ ও বাস্তবতা

মিথ: ----- মেয়েরা সাধারণত: রাতের অন্ধকারে অপরিচিত লোকদের দ্বারা ধর্ষিতা হয়; সুতরাং মেয়েদের রাতের অন্ধকারে একাকী বের হওয়া ঠিক নয়। বাস্তবতা : ---------- মাত্র ১০% ধর্ষণ সম্পাদিত হয় অপিরিচিত লোকের মাধ্যমে। ৯০% ধর্ষণ ঘটে পরিচিত পুরুষের মাধ্যমে। সেই ৯০% পুরুষকে আবার মেয়েরা নিরাপদ মনে করতো, তাদের প্রিয়জন,বন্ধু, সহকর্মী, প্রতিবেশী, গ্রাহক বা তাদের ভুতপূর্ব স্বামী বা প্রেমিক। এই ধর্ষণ ঘটে তার নিজের বাড়িতে, কাজের জায়গায় অথবা এমন কোনো জায়গায় যেখানে মেয়ে নিরাপদ বোধ করে। * মিথ : ------ একমাত্র আকর্ষণীয়া, যুবতী ও যারা খুব ‘খোলামেলা’ পোশাক পরে তারাই শুধুমাত্র ধর্ষিতা হয় বাস্তবতা : --------- যে কোনো বয়সের,যে কোনো ধর্ম বর্ণের, যে কোনো সংস্কৃতির, যে কোনো সময়ে যে কেউ নিগৃহীত হতে পারে। ভিকটিমের পোশাকের সাথে ধর্ষণের কোনো সম্পর্ক নেই। * মিথ: ------- যৌন সংসর্গের সময় মেয়েদের আচরণ থাকে বাধামূলক ও ‘না’ বোধক আর এই ‘আপত্তি’ ও ‘না’-কে পুরুষ ‘হ্যাঁ’ ভাবাই উচিত। বাস্তবতা: ---------- যে কারো যে কোনো সময় ‘না’ বলা তাদের মৌলিক অধিকার। এমনকি যৌন কর্মের যে কোনো পর্যায়ে ‘না’ মানে ‘না’। এই ‘না’ কে অবজ্ঞা মানেই ধর্ষণ। * মিথ : ------- যদি দুজন ব্যাক্তি আগে পরষ্পর সেক্স করে থাকে, মানে হলো এরা দুজন সবসময়ই সেক্স করতে পারবে। বাস্তবতা: ------------ আগে যা-ই হোক না কেনো, প্রতিবারই তাদের উভয়ের সম্মতি আবশ্যক। যে কোনো এক পক্ষের যে কোনো অসম্মতি মানেই ‘না’। * মিথ: --------- অ্যালকোহল, ড্রাগ, মানসিক চাপ বা ডিপ্রেশন মানুষকে ধর্ষকে পরিণত করে। বাস্তবতা: ----------- অ্যালকোহল বা ড্রাগ কখনোই কাউকে ধর্ষক বানায় না। এমনকি ডিপ্রেশন বা মানসিক চাপও ধর্ষণের জন্য ফ্যাক্টর না। ধর্ষণের জন্য কোনো অজুহাত অগ্রহণযোগ্য। * মিথ: --------- কোনো মেয়ে স্বেচ্ছায় প্রচুর অ্যালকোহল বা ড্রাগ সেবন করার পর ধর্ষিতা হলে তার অভিযোগ করা ঠিক না। বাস্তবতা: ---------- যে কোনো পর্যায়ে পার্টনারের সম্মতি আবশ্যক। সঙ্গী অ্যালকোহল বা ড্রাগের কারণে অচৈতন্য হলে তার সাথে সেক্স ধর্ষণ বলে গণ্য হবে। * মিথ: -------- ধর্ষণের সময় কেবল শারীরিক বল প্রয়োগ ও ভিকটিম শারীরিক ক্ষত বিক্ষত থাকবে্। বাস্তবতা: ----------- ধর্ষণে যে শুধুমাত্র বহিরাঙ্গে দৃশ্যমান ইনজুরি থাকবে এমন নয়। অভ্যন্তরীণ ইনজুরি হতে পারে। কখনো ধর্ষক অস্ত্র বা অন্য কিছুর ভয় দেখিয়ে বিনা ইনজুরিতে সেক্স করতে পারে। ধর্ষক যদি ভিকটিমের নড়াচড়া না করার বা ঘুমন্ত থাকার,অচৈতন্য থাকার বা কথা না বলতে পারার সুযোগ নেয়, এ সবই ধর্ষণ। * মিথ: -------- ছেলেরা একবার উত্তেজিত হলো আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না,তাকে সেক্স করতেই হবে। বাস্তবতা: ---------- পুরুষ চাইলে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ধর্ষণ যৌন তৃপ্তি নয়, সহিংস অপরাধ। * মিথ: -------- অনেক নারী পুরুষের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ আনে মিডিয়ার নজর কাড়ার জন্য। বাস্তবতা: ------------- পৃথিবীতে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ বিরল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভিকটিম সামাজিক কারণে পুলিশের কাছে যায় না আবার অনেক ক্ষেত্রেই আদালতে প্রমাণ জটিল হয়ে পড়ে। * মিথ: ------- যে সমস্ত পুরুষ ছোটবেলায় যৌন নির্যাতনের শিকার হয় তারা বড় হয়ে নিজেরাই শিকারী হয়। বাস্তবতা: ---------- এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ধর্ষকদের পক্ষে যে কোনো যুক্তিই অচল। * মিথ: ------- পুরুষ কখনো ধর্ষিত হয় না বা মেয়েরা কখনো যৌন অপরাধ করে না। বাস্তবতা: ---------- যদিও বিশাল সংখ্যক অপরাধ মেয়ে ও শিশুর বিরুদ্ধে করা হয়। সামান্য সংখ্যক পুরুষও নারী কর্তৃক যৌন নির্যাতিত হয়।* ---------------------------------------- *একটি বিদেশি ওয়েবসাইট অবলম্বনে
--

যৌনতা কি শুধুই শারীরিক?

"যৌনতা” মানুষের জীবনের মৌলিক চাহিদা। এই চাহিদা সমাজে অন্যতম একটা ভূমিকা রাখে, জানো কেন? এটা যার তার সাথে হয় না। এর মূল উপাদান হলো প্রেম – ভালবাসা। যে মেয়েটি প্রেমিক পুরুষের সাথে সাত রকম ভাবে খেলে, তার সঙ্গীর সব খেলায় তাল দেয়, অজানা-অচেনা স্পর্শে, কিংবা অনাকাঙ্খিত স্পর্শে সেইই আবার গুটিয়ে যায়, নিজেকে অশুচি অনুভব করে। আচ্ছা, এটা কি শুধু মানুষের বেলায়? না তো, পশু-পাখিরাও তো কাউকে পছন্দ করে, নির্বাচন করে, তার সাথে সময় কাটায়, তারপর খেলায় লিপ্ত হয়। শরীর থেকে শরীরে যা প্রবেশ করে তার নাম অনুভূতি, প্রেম, মায়া। প্রাচীন যুগে আদিম নর-নারীরা কি সবাই সবার সাথে শুয়ে বেড়াতো? ইতিহাস কিন্তু তা বলে না, প্রেম-মায়ার বড় ভূমিকা ছিলো বলেই, বিয়ে এসেছে, সঙ্গী প্রথাটি এসেছে, পরিবার সৃষ্টি হয়েছে, তার থেকে সমাজ, রাষ্ট্র। এখনও যেখানে "সভ্যতা" নামের জীবানু পৌঁছে যায় নি, তারা কি প্রত্যেকে প্রত্যেকের সাথে শোয়? ডকুমেন্টরী, সিনেমা, বই কিন্তু উলটো কথা বলে। টারজানের সাথে তো নোরা ছিলো, তারা শ্রেণীহীন, মুক্ত পৃথিবীর সদস্য। তাদের যার সাথে “মন” মজে তার সাথেই শোয়। প্রেম এই খেলার মূল উপাদান বলে, যেখানে প্রেম আছে সেখানে এর নাম “লাভ মেকিং” আর যেখানে নেই তার নাম “রেপ”। ***** মুসলিম ধর্মে বিয়ের আগে ছেলেমেয়ে মেলামেশা নিষিদ্ধ। কবুল বলার পর তাদেরকে সাধারণতঃ একঘরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। দুটো অচেনা-অজানা ছেলেমেয়ে যারা নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ, স্বপ্ন, লক্ষ্য, গন্তব্য একসাথে বিনিময় করে নাই তারা শরীর বিনিময়ের মধ্যে দিয়ে জীবন শুরু করে। প্রাকৃতিক স্বাভাবিক সংকোচ থেকে সাধারণতঃ মেয়েরা এখানে প্যাসিভ থাকে আর জোর কিংবা এক্টিভ রোলটা পুরুষের থাকে। সামাজিকভাবে ছেলেরা এটা দেখে বড় হয় বলে, “বল” খাটানোকেই পৌরুষত্ব ভাবে। অথচ উলটো ব্যাপারটা স্বাভাবিক ছিলো না? দুটো মানুষের মধ্যে তাদের ভাল লাগা-মন্দ লাগা বিনিময়ের পর সিদ্ধান্ত নেয়া, এই কি সেই, যাকে খুঁজেছিলাম? যে জীবনটা উলটো দিক থেকে শুরু হয় সেটি কি করে স্বাভাবিক চলতে পারে? জোর খাটানো দিয়ে যে জীবনের শুরু, তাতে জোর করাই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়, তাই নয়?

Thursday, 16 September 2021

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – চৌদ্দই সেপ্টেম্বর টুয়েন্টিটুয়েন্টি ওয়ান

লাইফ উইথাউট সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং প্রিমিয়ে রুতেঃ ১.৫ মিটারের সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং দিয়ে উইকিপেডিয়াতে জায়গা করে নেয়া নেদারল্যান্ডস পঁচিশে সেপ্টেম্বর থেকে এটি তুলে নিচ্ছে। হিপ হিপ হুড়ড়ে। তবে থিয়েটার, কনসার্ট, মুভি, মেলা, স্টেডিয়াম, রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে ইত্যাদিতে ঢুকতে তের বছর থেকে সবাইকে করোনা সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। চৌদ্দ বছরের ওপর থেকে আইডি কার্ড দেখাতে হবে। কোন অনুষ্ঠান যদি একদিনের বেশী হয় তাহলে অনুষ্ঠানের সবাইকে পরদিন থেকে প্রতিদিন সবাইকে করোনা টেস্ট করাতে হবে। আপাতত এগুলোর ব্যয় সরকার বহন করবে। প্রতি মিউনিসিপ্যালটিতে এজন্য বরাদ্দ পাঠানো হয়েছে। রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে ইত্যাদিতে যতজন আর যখন ইচ্ছে যেতে পারে তবে রাত বারোটা থেকে সকাল ছয়টা এগুলো বন্ধ থাকবে। মুভি, মেলা, কনসার্ট, থিয়েটার যেখানে নির্দিষ্ট বসার জায়গা আছে, সেখানে হলের পুরো ধারন ক্ষমতার সমান দর্শক থাকতে পারবে। যেখানে বসার জায়গা নির্দিষ্ট নয় সেখানে মূল ধারন ক্ষমতার পচাত্তর ভাগ মানুষ যেতে পারবে, তারপরও সবাইকে সাবধান থাকতে বলা হচ্ছে। মেলা, খেলাধূলা ইত্যাদি বাইরের সব বিনোদন সম্পূর্ণ বিধিনিষেধ মুক্ত। ট্রেন, ট্রাম, বাস, ট্যাক্সিতে মাস্ক পরতে হবে, সিকিউরিটি পার হওয়ার পর এয়ারপোর্টে মাস্ক বাধ্যতামূলক। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান আর চার্চে করোনা সার্টিফিকেট লাগবে না। এটি সম্পূর্ণ চার্চের ওপর নির্ভর করে, সরকার সেখানে কিছু বাধ্যবাধকতা দেয়ার এখতিয়ার রাখে না। শিক্ষাক্ষেত্রঃ ম্যাক্সিমাম পচাত্তর জনের বাধ্যবাধকতা আর থাকছে না। মাস্ক আর বাধ্যতামূলক নয়, ঐচ্ছিক। প্রাইমারি স্কুলে একজন করোনা পজিটিভ হলে পুরো ক্লাশকে আর কেয়ারন্টিন যেতে হবে না, শুধু যারা পজিটিভ তারা গেলেই চলবে। পয়লা নভেম্বর আবার দেখা হবে প্রেস কনফারেন্সে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হুগো দ্যা ইয়ংঃ ভ্যাক্সিন নেয়া কিংবা না নেয়া ব্যক্তির ইচ্ছের ওপর নির্ভরশীল থাকবে, ভ্যাক্সিন নিতে কাউকে বাধ্য করা হবে না। যারা ভ্যাক্সিন নেয়নি তাদেরকে কোথাও যেতে হলে প্রত্যেক বার করোনা পরীক্ষা করাতে হবে আর এটি তারা বিনামূল্যে করাতে পারবে। তবে ভ্যাক্সিন নেয়ার জন্যে আমি অনুরোধ করবো, শতকরা পচানব্বই জন ভ্যাক্সিন নেয়া মানুষ হাসপাতাল ছাড়া সারভাইভ করতে পারে আর সাতানব্বই জন আইসিইউ ছাড়া সারভাইভ করতে পারে। হাসপাতালে আসা বেশীর ভাগ মানুষই যারা এখনও ভ্যাক্সিন নেয়নি। যত বেশী মানুষ ভ্যাক্সিন নেবে ততো আমরা সব নিয়ম শিথিল করতে পারবো, কারণ ভ্যাক্সিন নেয়া থাকলে অন্যদের সংক্রমণ করার সুযোগ কম থাকে। অফিসে জিজ্ঞেস করতে পারে, তুমি ভ্যাক্সিন নিয়েছো কিনা। তবে জবাব দেয়া না দেয়া কর্মীর ইচ্ছা। কিন্তু নিজেদের অফিস নিরাপদ রাখতে বা সংক্রমণ এড়াতে অফিস বলতে পারে, ভ্যাক্সিন নেয়ার কথা। কিংবা টেস্ট করার কথা। তবে কেউ কাউকে বাধ্য করতে পারবে না। যারা স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করছে তাদের ক্ষেত্রে এটি বেশি প্রযোজ্য। দুর্বল স্বাস্থ্যের মানুষজন যাদের ইম্যুয়ন যথেষ্ঠ নয়, তারা নিজেদের ডাক্তারদের থেকে অক্টোবর মাসে তৃতীয় টিকা নেবার চিঠি পাবে। দুইশো থেকে চারশো হাজার মানুষ এর আওতায় পরবে। যেহেতু সাধারণ ভ্যাক্সিনটি বৃদ্ধ, অসুস্থ এমনকি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের জন্যেও অনেক কার্যকর তাই আপাতত বুস্টার ডোজ কাউকে অফার করা হচ্ছে না। কিন্তু প্রয়োজন হলে আমরা তৈরিই আছি। সাংবাদিকঃ একদিকে বলছেন নিয়ম শিথিল করছেন অন্যদিকে বলছেন কফি খেতে গেলেও করোনা সার্টিফিকেট লাগবে। কেন? প্রিমিয়ে রুতেঃ আনফরচুনেটলি ইয়েস, দেড় মিটার দূরত্বের বাধ্যবাধকতা যেহেতু তুলে নিয়েছে, সবাই নিরাপদ আছে এটা নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব। সাংবাদিকঃ কি করে সেসব নিশ্চিত করা হবে? প্রিমিয়ে রুতেঃ প্রতিটি মিউনিসিপ্যালটিকে এজন্য আলাদা টাকা দেয়া হয়েছে, তারা পুলিশ বা চেকার নিয়োগ করবে যারা রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে এসবে যেয়ে চেক করবে এবং যারা নিয়ম মানেনি তাদের জরিমানা করবে। সাংবাদিকঃ ফ্রান্সে পনেরশো টাকা জরিমানা ধরা হয়েছে আমাদের কত টাকা জরিমানা? প্রিমিয়ে রুতেঃ সেটা এখনও ঠিক হয়নি, আমার মনে নেই, তবে আলোচনা চলছে। শুধু জরিমানা নয় দরকার হলে ক্যাফে বন্ধও করে দেয়া হতে পারে। সাংবাদিকঃ নাইট ক্লাবস সব রাত বারোটায় বন্ধ করে দিতে বলেছেন? আপনি কি গত বছর নাইটক্লাবে গেছেন? সেখানে কি হয়? আর যদি রাত বারোটায় বন্ধ করেই দেন তাহলে মানুষ বাসায় যেয়ে পার্টি করবে, তাহলে লাভটা কি হলো? সংক্রমণতো ওখানেও হতে পারে? প্রিমিয়ে রুতেঃ আমাদেরকে প্রতিটি পা খুব গুনে গুনে ফেলতে হবে। ছাব্বিশে জুনের শিক্ষা আমাদের মনে রাখতে হবে। সাংবাদিকঃ আপনি ভাবছেন বারোটায় নাইট ক্লাব থেকে এসে মানুষ সব শুয়ে পরবে? প্রিমিয়ে রুতেঃ আমি কিছুই ভাবছি না, আমি শুধু বলতে চাই, সবাইকেই দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। সাংবাদিকঃ ভাইরাসের কি ঘড়ি আছে? সাংবাদিকঃ বাসায় পার্টি চলতে পারবে, মেলা, কনসার্ট চলতে পারবে শুধু ক্যাফেতে বসে রাত বারোটার পর ড্রিঙ্ক করা যাবে না? আমরা কি তাহলে ড্রাগ প্রমোট করতে চাইছি? প্রিমিয়ে রুতেঃ আমরা শুধু ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে চাইছি। সাংবাদিকঃ ডান্স ফিস্ট কেন বন্ধ করলেন? এত প্রটেস্ট হচ্ছে সেটা দেখেছেন? করোনা নিয়ে আপনাদের ওপর জনগনের আস্থা খুবই কম। হুগো দ্যা ইয়ংঃ ওএমটি’র উপদেশানুসারে বন্ধ করেছি, নাইট লাইফ থেকে যেহেতু সংক্রমণ বেশী হয়, সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে সবাইকে। সাংবাদিকঃ ঠিক কখন এসব থেকে আমরা বের হতে পারবো? সংক্রমণ কোন হারে এলে নিজেদের স্ট্যাবল ভাববো? হুগো দ্যা ইয়ংঃ চল্লিশ জন হাসপাতালে, দশ জন আইসিইউতে সাতদিন কিংবা তারপরেও যদি এটাই কন্টিনিউ করে তাহলে আমরা আরও অনেক শিথিলতার দিকে যাবো বা যেতে পারবো। আমরা কিছুতেই আগের পরিস্থিতি বা লকডাউনে ফিরে যেতে চাই না।

Sunday, 12 September 2021

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – তেরই আগষ্ট টুয়েন্টিটুয়েন্টি ওয়ান

প্রিমিয়ে রুতেঃ ছাব্বিশে জুন অনেক নিয়মনীতি শিথিল করার পর গ্রীস্মের শুরুতে সংক্রমণের যেরকম উর্ধ্বগতি ছিলো তা ছিলো বিস্ময়কর। তারপরও আমরা সবাই নিয়মনীতির বাইরে খানিকটা করোনাবিহীন একটি সুন্দর গ্রীস্ম উপভোগ করতে পেরেছি। এই পুরোটা সময় আমাদের জন্যে ছিলো শিক্ষনীয়। এখন সবার মনে একটাই প্রশ্ন, হেমন্ত কেমন যাবে আমাদের? দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির উপদেশ অনুযায়ী আমরা আস্তে আস্তে একটি একটি করে নিয়ম শিথিল করবো। যদিও আমরা জানি প্রতিটি পদক্ষেপই ঝুঁকিপূর্ণ, আর বিশেষ করে সেটি শিক্ষার্থী ও ক্যাটারিং ব্যবসায়ীদের জন্যে খুবই বেদনাদায়ক। প্রায় এক মিলিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দেড় বছর ধরে অনলাইন ক্লাশ করছে তাতে অনেকেই পড়ায় পিছিয়ে গেছে, রেজাল্ট খারাপ করছে ইত্যাদি। এছাড়াও নিঃসঙ্গতা থেকে অনেক বেশী মানসিক সমস্যায় ভুগছে তারা। তাই শিক্ষাঙ্গনে ত্রিশে আগষ্ট থেকে সামাজিক দূরত্বের বিধিনিষেধ থাকছে না। তবে পচাত্তর জনের বেশী একসাথে হতে পারবে না। সবাই সপ্তাহে দুবার নিজেরা করোনা পরীক্ষা করবে, মাস্ক পরবে এবং রুমে প্রচুর বাতাস খেলা করার সুযোগ থাকতে হবে, হাইজিন মেইনটেইন করতে হবে। তবে বিশে সেপ্টেম্বর থেকে সমস্ত নেদারল্যান্ডস থেকে দেড় মিটার সামাজিক দূরত্বের বাধ্যবাধকতা উঠে যাচ্ছে, পাব্লিক ট্রান্সপোর্টে আর মাস্ক পরতে হবে না, ওয়ার্ক ফ্রম হোমও আর দরকার নেই। ইউনিভার্সিটিগুলোয় শিথিলতা দেয়ার প্রতিক্রিয়া কি হয়, সংক্রমণের হার কতটুকু বাড়ে সেটা দেখে শুক্রবার সতেরই সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হবে। তবে যেখানে সবচেয়ে বেশী সংক্রমণ হয়, ডিস্কোথেক আর নাইট ক্লাবস তখনও বন্ধই থাকবে। উৎসব, সিনেমা, থিয়েটার, কনসার্ট, কংগ্রেস, স্টেডিয়াম ইত্যাদিতে পচাত্তর জনের ওপরে হলে ভ্যাক্সিন/অনুমতিপত্র বাধ্যতামূলক। ক্যাটারিং সার্ভিস সহ অন্যান্য যেসব ব্যবসায়ীরা করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত তারা পয়লা অক্টোবর পর্যন্ত সরকারী অনুদান পাবে। আর উৎসব আয়োজনকারীদের জন্যে বিশে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আপাতত অনুদান বরাদ্দ আছে। আর ডিস্কোথেক আর নাইট ক্লাবসের অনুদান চলমান থাকবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হুগো দ্যা ইয়ংঃ সমস্ত জনসংখ্যা থেকে এক দশমিক আট মিলিয়ন মানুষের এখনো কোন ইম্যুনিটি তৈরি হয়নি। তারা করোনাক্রান্ত ও হয়নি তারা ভ্যাক্সিন ও নেয়নি। আমরা ভয় পাচ্ছি হেমন্তে তাদের থেকে হাজার হাজার মানুষ অসুস্থ হতে পারে এবং খুব বাজে ভাবে অসুস্থ হতে পারে। হয়ত তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে আর যদি হাজার হাজার মানুষ একই সময় অসুস্থ হয় তাহলে আবার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, হাসপাতালের সাধারণ রুটিন, ডিসিপ্লিন ভেঙে পড়বে। তাই যারা যারা এখনো ভ্যাক্সিন নেয়নি তাদের বলছি, দ্রুত ভ্যাক্সিন নিয়ে নিতে। আর জিজিডিতে ভ্যাক্সিন নিতে গিয়ে যারা ঝগড়া ও মারামারি করেছে, আমি স্বাস্থ্যকর্মীদের পক্ষ হয়ে তাদের আন্তরিক নিন্দা জানাচ্ছি। সাংবাদিকঃ যদি কোন রেস্টুরেন্ট মালিক বলে, ভ্যাক্সিন না থাকলে আমি রিজার্ভেশান নেবো না, তাহলে কি হবে? প্রিমিয়ে রুতেঃ নেদারল্যান্ডসের আইন অনুযায়ী এরকম একজন একজনকে বলতে পারে না, সেটা বেআইনী হবে তারপরও আমি বলবো, যারা যারা এখনো ভ্যাক্সিন নেয়নি তারা যেনো দ্রুত ভ্যাক্সিন নিয়ে নেয়, অনেক জায়গায় প্রবেশ করতেই ভ্যাক্সিনেশান সার্টিফিকেটের দরকার হবে। সাংবাদিকঃ বিশে সেপ্টেম্বর থেকে ঠিক কোথায় কোথায় প্রবেশ করতে করোনা চেক বাধ্যতামূলক? প্রিমিয়ে রুতেঃ রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে, উৎসব, স্টেডিয়াম, মেলা, সিনেমা ও থিয়েটার, ভেতরে এবং বাইরে। সাংবাদিকঃ পয়লা সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মত নেদারল্যান্ডসে উৎসব পালিত হচ্ছে যেখানে প্রায় একশো হাজারেরও বেশী মানুষের পদচারণা হবে সেটি কি নিয়মের সাথে সাংঘর্ষিক নয়? প্রিমিয়ে রুতেঃ নিয়ম মানলে সাংঘর্ষিক কেন হবে? ওখানে সবাই বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করবে। ভ্যাক্সিন সার্টিফিকেট দেখালে ধারন ক্ষমতার দুই তৃতীয়াংশ মানুষ আসতে পারবে আর সার্টিফিকেটের বাধ্যবাধকতা না থাকলে এক তৃতীয়াংশ। সাংবাদিকঃ অনেক শিক্ষকই ভয় পাচ্ছেন ক্লাশে ভ্যাক্সিন নেয়নি এমন ছাত্র ছাত্রীও থাকবে, সেক্ষেত্রে সংক্রমণ অনেক তাড়াতাড়ি ছড়াবে হুগো দ্যা ইয়ংঃ সুখবর হলো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে কথা বলে চুক্তি করে নিয়েছে, যারা যারা এখনো ভ্যাক্সিন নেয়নি তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বসেই ভ্যাক্সিন নিতে পারবে। ভ্যাক্সিন নিতে তাকে কোথাও যেতে হবে না, স্বাস্থ্যকর্মী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে ভ্যাক্সিন দিয়ে যাবে। সাংবাদিকঃ কিছু কিছু মানুষের ভ্যাক্সিন নেয়ার থেকে সমস্যা হচ্ছে, বা নেয়াতে সমস্যা আছে, ইম্যুইন সিস্টেমও ভাল না তাদের সম্পর্কে কি ভেবেছেন? হুগো দ্যা ইয়ংঃ তাদের জন্য বুস্টার ডোজের কথা ভাবা হচ্ছে যদিও সেটি ডাক্তারের প্রেসক্রিপশানুযায়ী হবে তাতে হয়ত তাদের ইম্যুইন সিস্টেম খানিকটা ডেভেলাপ করবে। তাছাড়া সবসময় কিছু মানুষ থাকবেই বিভিন্ন কারণে যাদের ভ্যাক্সিন দেয়া যাবে না, দুর্বল, অন্য কিছু সমস্যা, তাদের ব্যাপারে কি করা যায় সেটি নিয়ে আলোচনা চলছে। তানবীরা হোসেন ১১/০৯/২০২১

Sunday, 22 August 2021

Skater Girl

ছবিটির ট্রেলার প্রকাশ হওয়ার পর, উল্রিক রাইনহার্ড এবং ভারতের শীর্ষ স্কেটবোর্ডার আশা গন্ডের উত্থানের গল্পের সাথে নেটিজেনরা ছবিটির মিল খুঁজে পান। জার্মান নাগরিক উল্রিক রাইনহার্ড নিজেও বলেছেন এই সিনেমা তার জীবনকে ভিত্তি করে বানানো হয়েছে এবং স্কাইপ কলে এবং সামনাসামনি মাকিজানি বোনদের সাথে তার আলোচনাও হয়েছে। তাদের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের অঙ্গীকারও হয়েছিলো। মধ্য প্রদেশের জানবার প্রদেশের আশা গন্ড বলছেন এই ছবি বানানোর জন্যে তার কোন অনুমতি নেয়া হয়নি যদিও তারা তার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। পরিচালক মাকিজানি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, "চলচ্চিত্রটি কারো বায়োপিক বা প্রামাণ্যচিত্র নয়। এটি গন্ড বা রাইনহার্ডের গল্প নয়, এটি আমাদের গবেষণার সময় ভারত জুড়ে শত শত মেয়ে এবং স্কেটারের গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে। স্কেটবোর্ডারদের সাথে প্রযোজকদের এই নিয়ে এখনো বিতর্ক চলছে। দুই হাজার বিশ সালের প্রথমদিকে শুটিং শেষ হলেও মানজারি মাকিজানির পরিচালনায় এগারোই জুন দুই হাজার একুশে মুক্তি পেয়েছে “Skater Girl”, এর চিত্রনাট্য লিখেছেন ভিনাতি আর মানজারি মাকিজানি দুইবোন। সারা ভারতে স্কেটবোর্ডিংয়ের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির গল্পটি তারা সামনে আনতে চেয়েছেন এবং তার সাথে খেলাধুলায় অংশগ্রহণকারী মেয়েদেরকে পারিবারিকভাবে প্রতিরোধের বিষয়টি, সংস্কৃতির সংঘাত ইত্যাদি খুব নির্দিষ্ট বিষয়গুলিও স্পর্শ করেছেন। প্রতিরোধ, পরিবর্তন এবং সম্ভাবনা, তিনটি বিষয়ই সিনেমাটি উঠে আসলেও মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, মেয়েদের ওপর সামাজিক চাপটিকে, বিশেষ করে সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র প্রেরনার মতো দরিদ্র মেয়েদের পরিস্থিতিকে। সিনেমায় দেখা স্কেটপার্কটি "স্কেটার গার্ল" সিনেমার জন্য নির্মিত হয়েছে। প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়ে পাঁচ মাসে চৌদ্দ হাজার পাঁচশো স্কয়ার ফুটের এই পার্কটি নির্মাণ করা হয় এবং এটি এখনও আছে, এটি ভারতের অন্যতম বড় স্কেট পার্ক, ক্ষেমপুর, রাজস্থানের প্রথম স্কেটপার্ক। এলাকার শিশুরা, পেশাদার স্কেটাররা অনুশীলন এবং প্রতিযোগিতার জন্য এটি ব্যবহার করে। "স্কেটার গার্ল" শুধু স্কেটবোর্ডিংয়ের জন্য একটি আবেগীয় গল্প নয়, স্কেটবোর্ডিংকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাস্তবেও এটি সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেছে। দেশ, কাল, স্থান, পাত্র ভেদ করলেও কিভাবে যেনো মায়েদের যুদ্ধগুলো খানিকটা একই হয়। কোন কোন সৌভাগ্যবতী মা সেই যুদ্ধে জয়ী হয় আর বাকিরা জীবনভর যুদ্ধ করেই চলে। মেয়ে স্কেটিং করলে পরিবারের অসম্মান হবে তাই বাবা স্কুলে পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেবে। পড়াশোনার দরকার নেই, মেয়ের চাওয়া-পাওয়ার কোন মূল্য নেই, যারা একবেলা খেতে দেবে না, সেই মানুষদের কাছে তার ঠুনকো পাগড়ীর মূল্য মেয়ের আনন্দের চেয়ে বেশী। মেয়ের চাওয়ার কাছে মা হার মানেন, বারবার। সিনেমা দেখতে দেখতে বারবার ভাবছিলাম, তালিবান কি শুধু আফগানিস্তানেই থাকে? মুখে দাঁড়ি আর মাথায় পাগড়ি থাকলেই কি তালিবান? এই সমাজে হাজার হাজার তালিবান আছে যারা ভাবে, মেয়েরা বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে যাওয়া মানে উচ্ছৃঙ্খলতা, স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্বাবলম্বী মেয়ের তার স্বোপার্জিত আয় খরচ করা অনুচিৎ। স্বামী বেকার হোক কিংবা জুয়ারী, সংসারের সমস্ত অশান্তিতে স্ত্রীকেই স্বামীর মন বুঝে চলতে হয়। স্ত্রী-সন্তানের ওপর স্বামী যত অত্যাচারই করুক, তারপরও পরিবারই বলবে, একহাতে তালি বাজে না। সিনেমায় দেখতে পাই, “মেয়ের সাফল্যে আনন্দে হাততালি দিতে গিয়ে মা, বাবার দিকে চোখ পড়তেই থেমে যায়”। আসলে তালিবান ভারতবর্ষের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে আছে, চিন্তায়, চেতনায় আর মননে। চলচ্চিত্র নির্মাতারা গবেষণা, লেখালেখি এবং রাজস্থানের কিশোর -কিশোরীদের সাক্ষাৎ করে প্রেরণা এবং অঙ্কুশের চরিত্রগুলি যথাসম্ভব বাস্তবভাবে লেখার জন্য এক বছরেরও বেশি সময় ব্যয় করেছেন। ক্ষেমপুরের চৌত্রিশজন স্কেটারসহ পুরো ভারতের পঞ্চান্নজন স্কেটার এই চলচিত্রটিতে অভিনয় করেছেন যদিও তিন হাজারের বেশি বাচ্চার অডিশন নেয়া হয়েছিলো। স্কেট পার্কটি নির্মাণের সময় উৎসুক স্থানীয় বাচ্চারা ভীড় জমাতো সেটি দেখতে তাদেরকে তখনই স্কেটবোর্ডের ট্রেনিং দেয়া শুরু হয় এবং পরবর্তীতে অভিনয়েরও সুযোগ দেয়া হয়। র‍্যাচেল সঞ্চিতা গুপ্ত প্রেরণার চরিত্রে আর সাফিন প্যাটেল অঙ্কুশের চরিত্রে অভিনয় করেছে, পনের বছর বয়সী র‍্যাচেল এর আগে আঘাতিত নামে একটি শর্ট ফিল্মে অভিনয় করেছে কিন্তু সাফিনের এটিই প্রথম ছবি। রজার এবার্ট, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ফার্স্ট পোস্ট, মেটাক্রিটিক, গার্ডিয়ানসহ বহু নামী মিডিয়া এই সিনেমার পজিটিভ রিভিউ প্রকাশ করেছে। অর্ধেক পৃথিবী জুড়ে গরমের ছুটি চলছে, খুব আহামরি না হলেও সুন্দর, পরিচ্ছন্ন, টাইম আউট মুভি হিসেবে এটি দেখে নেয়া যেতেই পারে। সময় নষ্ট মনে হবে না তার নিশ্চয়তা দিতেই পারি। তানবীরা হোসেন ২২/০৮/২০২১

Friday, 20 August 2021

বিপ্লবের একাল – সেকাল

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায়, কেশবচন্দ্র সেন, বেগম রোকেয়া যারই জীবনী পড়ি না কেন, দেখা যায় তারা নিজ থেকে সমাজের কোন একটি সংস্কার বা কুসংস্কারের সাথে একাত্ম হতে পারেননি, মেনে নিতে পারেননি প্রচলিত রীতিনীতি। সেই নির্দিষ্ট প্রথাটি ভাঙার, নিয়ম বদলানোর জন্যে চেষ্টা করে গেছেন। পাশে কাউকে পেয়েছেন কি পাননি তা নিয়েও ভাবেননি। নিবিষ্ট মনে নিজের বিবেকের দায় থেকে নিজের অবস্থান থেকে লড়ে গেছেন। জনমত তৈরীর চেষ্টা করেছেন, নিজেরা উদাহরণ তৈরীর চেষ্টা করেছেন, আইনের শরনাপন্ন হয়েছেন, কত কিছু। তাদের বিদ্যা, টাকা-পয়সা, শ্রম, ধ্যান একটি জায়গায় নিবিষ্ট ছিলো। শুধু কি ভারতবর্ষে? নিজের আগ্রহ থেকে মার্দারসে, উইমেন্স ডে, ওল্ডহোম ইত্যাদি নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে জেনেছি গোটা একটা জীবন তারা তাদের একটি ভাবনা, আদর্শের জন্যে উৎসর্গ করে গেছেন। আজকাল বিপ্লবীরা সবাই অপেক্ষা করে বসে থাকেন, কোথায় কখন কি অঘটন ঘটবে, তারা কী-বোর্ডে বিপ্লবের ঝড় তুলে ফেলবেন। নিত্য নতুন অঘটন আর নিত্য নতুন বিপ্লব। তবে এরমধ্যে ভিক্টিমের সাথে যোগাযোগ, তাকে সাহায্য, ঘটনার ফলোআপ, আইনের দরজায় যাওয়া কিছুই অন্তর্ভুক্ত নয়। সাংবাদিকরাই কোন ঘটনার ফলোআপ করেন না তো আর ডিজিট্যাল বিপ্লবীরা। নতুন সামাজিক স্ট্যাটাস হয়েছে, আমি “এক্টিভিস্ট”, “এক্টিভিজম” করি। অবশ্য এন-জি-ও’র থেকে পাওয়া গুড়ো দুধ, ঔষধপত্র, স্যালাইন, স্যানিটারি প্যাড মানুষের মাঝে বিলানোর মধ্য দিয়ে যদি “এক্টিভিজম” করা যায় তাহলে, হোয়াই নট! খুব জানতে ইচ্ছে করে, কোন ইস্যু নিয়ে এক্টিভিজম করছেন, কি কি গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করেছেন, দেশে বিদেশে এর ওপরে আর কেউ কোন কাজ করেছে কিনা, করছে কিনা তার খোঁজ খবর নিয়েছেন? যোগাযোগ করেছেন? এক্টিভিজমের লক্ষ্য কি? কি পরিবর্তন আনতে চান? কি অর্জন করতে চান? এজন্যে কি কি ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি আপনি? নানাকিছু ভেবে পরে আর জিজ্ঞেস করি না, যাক টিকটক না করে কিছুতো তবুও করছে।

Tuesday, 17 August 2021

আফগান প্রসঙ্গ

পনেরই আগষ্ট আগে শুধু বাঙালি জাতির জন্যে কলঙ্কজনক দিন ছিলো, এবার ইতিহাসে যোগ হলো আরও একটি নাম "আফগান"। সোশ্যাল মিডিয়ায় আফগান বিমানবন্দরের ছবি ও ভিডিও যখন প্রথম দেখলাম, বিশ্বাস করিনি, ভেবেছি, একদলতো ফেক ম্যাটেরিয়াল নিয়ে থাকেই রেডি, যেকোন কিছু নিয়ে মজা করার জন্যে। বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের সীমারেখা ভেঙে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় দেখলাম, যারা প্লেনে জায়গা পায়নি তারা প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে প্লেনের ডানা আর পাখায় চড়ে সেই প্রাণখানা বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ছুটছে। এবং কেউ কেউ নিহত হয়েছে। এরপর আছে আমাদের সভ্য মানবিক বিশ্ব। কাবুলের মানুষের বিমানের চাকা ধরে পালানোর চেষ্টার ভিডিওতে আটচল্লিশ হাজার রিএকশনের মধ্যে তিন দশমিক আট হাজার “হাহাহা” রিয়েকশন পরেছে। একটা মানুষ কতটা ডেসপারেট হলে এমন ঝুঁকি নিতে পারে আর বিমান থেকে টপাটপ মানুষ পরছে সেটা দেখে লোকজন “হাহাহা” দিচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশী আইডিও কম না… এই স্যাডিস্ট জনগোষ্ঠী কিসে না আনন্দিত হয়। মানুষের অস্বাভাবিক মৃত্যু, কি পাশবিক আনন্দের বিষয়! অনেকেই একে ইসলামের বিজয় আর কাফেরের পতন হিসেবে দেখছে, ফেয়ার ইনাফ, যে মানুষগুলো মারা যাচ্ছে, প্রাণ ভয়ে ভীত, দেশ ছেড়ে পালাতে চাচ্ছে তারা কারা? এমেরিকান, খ্রিষ্টান? একদল আবার তারচেয়ে এক কদম এগিয়ে, যারা পালিয়ে যাচ্ছে কিংবা প্রাণ ভয়ে ভীত তাদের বলছে, রাজাকার আর তালিবানরা মুক্তিযোদ্ধা!!! বাড়িতে ঢুকে বারো বছরের মেয়েদের জোর করে বিয়ে করে ফেলা কিংবা বিয়ে দিয়ে দেয়ার নাম স্বাধীনতা? পোষাক পরতে হবে তাদের ইচ্ছায়, স্কুলে যাওয়া- আসা হবে তাদের মর্জিতে, এই হলো স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিকের জীবন? বাচ্চা ছেলেরা স্কুলে না যেয়ে যাবে বোমা বানানো শিখতে? "তালিবান" যদি স্বাধীনতার নাম হয় তাহলে "স্বাধীনতা"র সংজ্ঞা নিয়ে পৃথিবীকে আবার নতুন করে ভাবতে হবে। নির্ভয়ে যারা নি:শ্বাস নিতে চান, পালানো ছাড়া আর কি উপায় আছে? অন্যদের মতো, আমি আর বললাম না, পরাধীন এমেরিকা আর স্বাধীন আফগানিস্তান দুটোতেই বসবাস করার সুযোগ পেলে কোনটায় যাবেন? কারণ উত্তরটা আমাদের সবার জানা। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, তালেবানের আহ্বানে আফগানিস্তান যাওয়া কেউ ফিরলেই সাথে সাথে গ্রেফতার। নির্দ্বিধায় বলতে পারি, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সরকারের সবচেয়ে সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত এটি। আফগানিস্তানের জন্য নিরন্তর ভালবাসা ও সহানুভূতি। আশা রাখছি জীবদ্দশায় অন্তত দেশটির স্থিরতা দেখে যেতে পারবো। হাসিখুশী আফগান মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার যে সাদাকালো ছবিটি মিডিয়ায় প্রায়ই দেখা যায়, কোন প্রভাতে আফগানিস্তানে আবার সেদিনের সূচনা হবে।