Friday, 29 November 2019

তালাক ও নারীর নায্য অধিকার

প্রকৃতির নিয়মে দুজন মানুষ কাছাকাছি আসে, স্বপ্ন দেখে, ঘর বাঁধে। নানা ঘটনায়, ঘাতে প্রতিঘাতে আবার চলার পথ আলাদা হয়ে যায়, সামাজিক ভাবে আলাদা হবার সুন্দর উপায়ও আছে। সাথে আলাদা হয় স্মৃতি, টান, তিক্ততা, অশ্রু সব। এসব অধরা বস্তুর সাথে থাকে জীবন ধারনের কিছু প্রয়োজনীয় বস্তু যা বেঁচে থাকতে প্রয়োজন পরে। যখন দুজন মানুষ একসাথে থাকে, সংসার সাজায় সেসব ব্যবহারের জিনিস দু’জন একসাথে মিলেই জড়ো করে পাখির মত। ঠিক পাখির মত ঠোঁটে করে না আনলেও বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যায়, মেলায় যায়, জড়ো করে বিভিন্ন পন্থায় সংসার সাজায়। দুজনে মিলে ভবিষ্যতের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভেবে সঞ্চয় করে, আর সেজন্যে রোজদিনের কিছু চাওয়া পাওয়া তার জন্যে দুজনেই ত্যাগ করে। হয়ত উবার না ডেকে রিক্সা বা সিএঞ্জি ডাকে, ঈদে-পূজায় পছন্দের শাড়ি না কিনে সস্তায় কিছু কিনে নেয়।

মেনে নিচ্ছি, মেয়েটি অর্থ উপার্জন করেনি, সঙ্গীর উপার্জিত অর্থই যতটা সম্ভব সুচারুভাবে সে পরিচালনা করেছে, সঞ্চয়পত্র কিনেছে, ডিপিএস করেছে, কিন্তু আজ যখন চলার পথ আলাদা, সেসবে আজ তার আর বিন্দুমাত্র অধিকার নেই? সাজানো সংসারের কোন আসবাবে, একসাথে কষ্ট করে কেনা ফ্ল্যাট বা প্লটে? দিনে দিনে নিজের মত করে তৈরী করা এসমস্ত কিছুতেই সে একজন অনাহুত প্রানী মাত্র? তাকে ফিরে যেতে হবে কিংবা চলে যেতে হবে শুধু বিয়ের সময় কাগজে লেখা দেনমোহরানা (শুধু মুসলিম মেয়েদের ক্ষেত্রে) হাতে করে? তাতেও কত চালাকি থাকে, গয়না-জামা’র উসুল। খুব কম মেয়েই মামলা করা ছাড়া এটুকু টাকা তার একসময়ের চিরচেনা মানুষদের থেকে উদ্ধার করতে পারে। যাদের সে দিনে রাতে রেঁধে বেড়ে খাইয়েছে, জ্বর গায়ে জলপট্টি দিয়েছে। অনেক মেয়েই মামলার রায় পেয়েও আজ অব্ধি হাতে টাকা পায় নি, আইন প্রয়োগের শিথিলতার কারণে। ভারতীয় উপমহাদেশে বোধহয় হিন্দু ও খ্রীষ্টান মেয়েরা এটুকুও পায় না। সন্তান থাকলে সন্তানের মাসিক ভরন-পোষন দেয়ার যে চুক্তি হয় তারও একই হাল।

পশ্চিমে এ সমস্যার মোকাবেলায় “প্রিন্যাপ - prenuptial agreement” এর প্রচলন রয়েছে। দুজন আলাদা হয়ে গেলে, জমানো টাকা-পয়সা, আসবাব, গয়না ইত্যাদি কে কতটুকু পাবে, আগে থেকেই তা নিয়ে একটি লিখিত চুক্তি থাকে। বিয়ে বা লিভটুগেদার এর পরের অর্থনৈতিক অবস্থা পুরোপুরি যেহেতু জানা থাকে না, কিছু দিকনির্দেশনা বা মানদন্ড থাকে যা পরবর্তী মনোমালিন্য কিংবা অহেতুক দ্বন্দ্ব এড়াতে সাহায্য করে। বাংলাদেশ সহ ভারতবর্ষে যেহেতু এখন “তালাক” এর হার অনেক বেশি, আমার ধারনা, এ সমস্যাটা গভীরভাবে ভেবে দেখার সময় এসেছে। সময়ের প্রয়োজনে, জীবনের প্রয়োজনে অনেক নিয়ম বদলাতে হয়, শুরু করতে হয় কিংবা শেষ করতে হয়। ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রত্যেকটা মানুষের নায্য অধিকার নিশ্চিত করা সভ্য সমাজের অংশ।

২৯/১১/২০১৯

Wednesday, 30 October 2019

পুতুলবাজি ও ঘোর অথবা অনন্ত তৃষার গল্প


পুতুলবাজি ও ঘোর অথবা অনন্ত তৃষার গল্প

সুলেখক ও ভদ্রলোক মাহবুব আজীজ ভাইয়ের সাথে পরিচয় অনেকদিন, টুকটাক লেখার সূত্র ধরে, কিন্তু কখনো দেখা হয় নি। এবার আসা যাওয়ার পথে দশ থেকে হয়ত পনের মিনিটের মত দেখা সমকালের অফিসে। আমাদের তিন বাচ্চা নিয়ে আমি হাজির হলাম, ফোনে ঠিক করা সময়ে, ঈদের ফাঁকা ঢাকাতে। আমাদের বাচ্চাদের মধ্যে সবচেয়ে সেলফ কনফিডেন্ট আর খানিকটা ওভার স্মার্ট আমাদের রাজা বেটা, অবশ্যই আমাদের আদরে কিছুটা বাদর। আমাকে জিজ্ঞেস করলো, আমরা কেন যাচ্ছি ওখানে, আমি ঠিক করে গুছিয়ে বলার আগেই, আমাদের আর এক মেয়ে বললো, জানো না বোকা, মিষ্টি মা এবার বুক ফেয়ারে যে একটা বুক পেয়েছে, তাই যাচ্ছে। এর মধ্যেই আমরা সমকাল অফিসে পৌঁছে মাহবুব আজীজ ভাইয়ের রুমে ঢুকলাম, তখন নাক উঁচিয়ে রাজা বললো, আমিও স্টোরি লিখেছি, পাপা অফিস থেকে প্রিন্ট করে বুক বানিয়ে দিয়েছে, আম্মু আলমারীতে রেখে দিয়েছে। মানে হলো, আমি হেলাফেলার কেউ নই হে। মাহবুব আজীজ ভাই যখন পেপারে লেখা পাব্লিশ হওয়ার গুরুত্ব বোঝালো, তখন সে অতি উৎসাহে সেখানে বসেই, মাহবুব আজীজ ভাইয়ের মেইল এড্রেস, ফোন নম্বর নেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে নি তার প্রোফাইল পিকচার আর ম্যাসেঞ্জার ও চেয়েছে। খুব ভালবেসেই সব তিনি দিয়েছেন আমাদের রাজাকে। বাড়ি এসেই আমাদের রাজা বেটা, নতুন খাতা নিয়ে, নতুন উদ্যেম্‌ নতুন স্টোরি লিখতে বসে গেলো, তারপর এলো আমার কাছে, মিষ্টি মা, আমি তো ইংরেজিতে লিখছি, কিন্তু আঙ্কেলের ওখানে যে বাংলা লাগবে, আমি বললাম, তুমি ইংরেজিই লেখো, আমি বাংলা করে দেবো। এখন অবশ্য লেখালেখি শিকেয় তুলে তিনি “টবলা” বাজাচ্ছেন আর স্মুলেতে গান গাচ্ছেন, তুমি যাকে ভালবাসো   

মনে হচ্ছে, ধান বানতে শিবের গীত? হয়ত খানিকটা হয়ত নয়। যে মানুষটা দশ মিনিটে একটা বাচ্চাকে এতটা প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখেন, তিনি অবশ্যই তার লেখা দ্বারা পাঠকদের বিরাট প্রভাবিত করার ক্ষমত রাখেন বই কি। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কোন বই দেবেন, গল্প না উপন্যাস? আমি বললাম, উপন্যাস দেন, আমি পড়তে ভালবাসি, সংশয়ে ছিলেন যদিও, পড়বো কীনা, তারপর দোনামোনা করে দুটো বইই দিলেন আর আমি প্রায় একটানে দুটো বইই শেষ করলাম। অবশ্য এই প্রথম যে তার লেখা পড়লাম তা নয়, ফেসবুকে আমি অবশ্যই মাঝে মাঝে তার লেখা দারুন দারুন কবিতা ও কাব্যিক স্ট্যাটাস পরে থাকি। লেখার কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ না করলেই নয়, হুমায়ূন আহমেদের মত, ময়মনসিংহ-নেত্রকোনার মানুষ তিনি, অসাধারণ ঝরঝরে সহজ বাংলা ভাষা, অকারণে জটিল করার কিংবা অলংকার দেয়ার কোন চেষ্টাই তিনি করেন নি। লেখাগুলো প্রচন্ডভাবে এই সময়ের, সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে। কোথাও পড়েছিলাম, যে লেখা সময়কে ধারণ করে না সে কোন সাহিত্যই নয়। একশো বছর পর যদি কেউ এই গল্পগুলো পড়ে, জানবে, দু হাজার আঠারো-উনিশে বাংলাদেশে কি হচ্ছিলো কিংবা হয়েছিলো। সাংবাদিকতা যে লেখার কত বস্তুনিষ্ঠ উপকরণ হতে পারে, এই লেখাগুলো তার আকাট্য দলিল। 

প্রথমে, উপন্যাস “পুতুলবাজি”, মূল চরিত্র চারটি, মঞ্জু, মুনা, ফয়সাল আর আইআর খান। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ করা মঞ্জু এ সময়ের একজন তরুণ যার চোখ ভর্তি নানা স্বপ্ন আর এই স্বপ্ন পূরনের জন্যে মরিয়া সে। বেছে নেয় সামনে যা আসে তাই, এর ভাল-মন্দ বিচার করতে সে নারাজ। তার ধারনা তার আপাতত টার্গেট পূরণ হলেই সে অন্যকিছু বেছে নিয়ে থিতু হবে, শুধু সে জানে না টার্গেটের কোন শেষ নেই জীবনে। আর এ সুযোগগুলো কাজে লাগায় আইআর খানের মত ব্যবসায়ীরা, রিয়েল এস্টেট, চোরাবাজারী এ ধরনের ব্যবসার কাজে এসব তরুণদের জীবন উৎসর্গ করে দেন তারা, যখন মঞ্জুরা ফেরত আসতে চায় এই চোরাবালি থেকে তখন বড্ড দেরী হয়ে গেছে। সামাজিক অবস্থানে দুর্বল মঞ্জুর এর পাশে পাত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ফয়সালকে বড্ড নির্দয়ভাবে আঁকা হয়েছে, লেখক একটু দয়ালু হতে পারতেন এই ক্ষেত্রে। সাধারণভাবেই মেয়েরা স্থিতিশীলতা ভালবাসে আর যুগে যুগে বাংলার মেয়েরা দেবদাসকে ভালবেসে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভুবন চৌধুরীর গলায় মালা দেয় বইকি। বইটি পড়তে পড়তে একবারও মনে হবে না কোন বই পড়ছি, ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, অফলাইন, অনলাইন, গুম, খুন, সব এভাবে এখানে আনা হয়েছে, এতটা বাস্তবতার ওপর দাঁড় করানো কাহিনী, মনে হবে সবাই আমাদের চেনা, দেখতে পাচ্ছি এদেরকে আমাদের চোখের ওপরে। আইআর খানের চরিত্রটি খানিকটা বিভ্রান্তকর লেগেছে, এ ধরনের মনোবৃত্তি আর অস্থিরতা নিয়ে আসলেই কি অনেকদূর আসা যায়?

এবার, ছোট গল্পের বই, “ঘোর অথবা অনন্ত তৃষার গল্প”, এগারোটি ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের আকর্ষনীয় গল্প দিয়ে সাজানো হয়েছে এই বইটি, একবার শুরু করলে হাত থেকে রাখা দুস্কর। আবারও বলছি সাহিত্যের ক্ষেত্রে সাংবাদিকতা পেশাটা অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যায়। মার মার কাট কাট গল্প চারপাশে ঘোরে, শুধু লেখনীর দক্ষতায় গেঁথে ফেলতে হবে। বইয়ের দ্বিতীয় গল্প “নদীর পাড়ে বসে থাকি শুধু”, মনিকা বেড়াতে যায় অফিসের কলিগ কাম প্রেমিকের সাথে। তারপর সেখানকার স্থানীয় নেতাদের হাতে পরে, প্রেমিককে আটকে রেখে, মনিকাকে নির্যাতন করতে করতে তার মৃত্যু। এরপর স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সব ম্যানেজ করার, প্রেমিককে ফাসিয়ে দেয়ার সেই চিরপরিচিত গল্প যা বাংলাদেশে আজকাল হয়েই থাকে। কিংবা তৃতীয় গল্প “নিশি”, হিন্দু পরিবার, মফস্বলে থাকে, প্রথমে স্থানীয় মাস্তানদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয় মেয়েটি তথা পরিবার আর তারপর যাদের সাহায্যের জন্যে বিশ্বাস করে ডাকা হয়েছিলো তাদের কুৎসিত কদাকার লোভী চেহারার দর্শন, এ গল্পটাও খুব পরিচিত আমাদের তাই না? এরপর নয় নম্বর গল্পটি ধরি, “কাল ভোরে যখন কলিংবেল বেজে উঠবে” দরিদ্র নিম্ন মধ্যবিত্ত তার ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যে হিমশিম খাচ্ছে। গ্রাম থেকে শেষ সম্বল বিধবা মায়ের বেঁচে থাকার আশাটুকু বিক্রি করে, এ পৃথিবীতে যাকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে তার হাতে তুলে দিয়েছে। এবং সে সবকিছু হাতিয়ে নিয়ে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে। তাই হয়ে আসছে চিরদিন আর তাই হয়। বিশ্বাসঘাতকতা সেই করতে পারে যাকে কেউ বিশ্বাস করেছিলো। এরকম সব হৃদয় নিংড়ানো কাহিনী নিয়ে “ঘোর অথবা অনন্ত তৃষার গল্প”।

সবচেয়ে বেশি টেনেছে আমাকে বইয়ের উৎসর্গ পর্বটি। মা’কে নিয়ে আমরা অনেকেই লেখি কিন্তু এ ধরনের মন জুড়ানো কাঁচামিঠা সত্যির স্বাদ একেবারেই আলাদা। কেউ পড়তে চাইলে জানাবেন, আমি ছবি তুলে এই লেখার সাথে যোগ করে দেবো।

যারা চিন্তাশীল পাঠক, যারা নিজের চিন্তা বই পড়ে শান দিয়ে নিতে চান ; এ বই দুটো তাদের জন্য অবশ্যপাঠ্য। সত্যের ভেতর যে নির্মমতা লুকিয়ে আছে, এই লেখক হাসতে হাসতে তা আমাদের জানিয়ে দেন। আমরা চমকে উঠি! সত্য এত কঠিন! "। 


পার্ফেক্ট জেন্টেলম্যান মাহবুব আজিজ ভাই তার মেহমানদের শুধু উবার ডেকে দিয়ে ক্ষান্ত হন নি, নীচে নেমে এসে গাড়িতে বসিয়ে মেহমান বিদায় করেছেন।

২৯/১০/২০১৯



Saturday, 26 October 2019

নুসরাত হত্যার বিচার ও আমার কথা


আমার ছোট চাচা, বিধবা মায়ের খুব আদরের ধন ছিলো। সব কিছু নিয়ে খুব পিটপিটানি ছিলো। একবার এক ঝুম বৃষ্টির দিনে, বাড়িতে খিচুড়ী আর গরুর মাংস রান্না হলো। আমার চাচী রান্নার সময় মাংসে কাঁচা মরিচ দিয়েছিলো। ব্যস শুরু হলো ছোট চাচার টিপটিপানি, মাংসে কেন কাঁচামরিচ দেয়া হলো। চাচার টিপটিপানিতে অস্থির হয়ে চাচি বলেই ফেললো, দিয়েছিলাম, একটু রেজালা রেজালা গন্ধ হবে তাই।
চাচা মহা বিরক্ত গলায় বলেছিলো, রেজালা কি খিচুড়ি দিয়ে খায়?  

নানা ইস্যুতেই শুনতে হয়, সভ্য দেশে এই হয়, সভ্য দেশে ঐ হয় না – এই সভ্য দেশে যখন ডাইনী অপবাদ দিয়ে মেয়েদের পুড়িয়ে মারার প্রচলন ছিলো তখন শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড ও ছিলো এমনকি কিছুদিন আগে পর্যন্ত চেয়ারে বসিয়ে ইলেকট্রিক শক দিয়ে পুড়িয়ে মারার রীতি ছিলো।

এই সভ্য দেশ গুলোতে যেখানে খাওয়ার জন্যে মুরগী, গরু কিংবা খাসী বর্বর প্রথায় জবাই না করে, এদের সবচেয়ে ব্যথাহীন মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় সেখানেই বিশেষ কারণে এবং বিশেষ দিনে বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্যে বলির ব্যবস্থা উন্মুক্ত ও করে দেয়া হয়।

তাই বলছি, রেজালা কি দিয়ে খাবেন?

সভ্য দেশে কি শিক্ষক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি করে?
উনিশজন মিলে পুড়িয়ে মারার ষড়যন্ত্র স্কুলে করে?
স্কুলে পুড়িয়ে মারে?
পুলিশ অভিযোগকারীকে হেনস্থা করে?
পুলিশ কেস নেয় না?
রাজনৈতিক নেতারা শুদ্ধ সবাই আসামীকে বাঁচাতে তৎপর থাকে?
সাক্ষী কেনা যায়?
মামলার মোটিভ বদলে দেয়া যায়?
নিম্ন আদালতের আসামীরা সব উচ্চ আদালতে খালাস পেয়ে যায়?
রায় হওয়ার পর আসামীরা বাদি পক্ষকে “দেখে নেবো” বলে শাসায়?

যে দেশে আকছার সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েও মানুষ পোড়ানো, হত্যা বন্ধ করা যায় না, সে দেশে মৃত্যুদন্ড বন্ধ করে দিলে কোন পর্যায়ে ভাবে আমি ভাবতেও পারি না
২৬/১০/২০১৯




Thursday, 10 October 2019

আসুন, আজকে শিখি কি করে একজন “সাহী” আওয়ামী লীগার চেনা যাবেঃ

দেশের চলমান কোন জাতীয় ইস্যুতে হয়ত আপনি আপনার ক্ষোভ বা বেদনা বলেছেন, সাথে সাথে শুরু হবে, বিএনপি’র আমলে কি হয়েছিলো। এখন তো আসামী অন্তত ধরা পড়ছে, তখন কি দলের কাউকে ধরা হইছিলো, হ্যাঁ হইছিলো? আপনি যদি মিনমিন করে বলার চেষ্টা করেন, অভি-নীরুকে তো খালেদা জিয়াও বহিস্কার করেছিলো, বাংলা ভাইকে মারা হয়েছিলো, তখন শুরু হবে আরও শাণিত আক্রমন, কারণ তাদের সব কম্পিটিশান বিএনপির সাথে! কথায় কথায় বিএনপি টেনে আনবে, জনগন ভুলে গেলেও তারা ভুলবে না। সেদিন হয়ত আপনি বেশিই দুঃখী, আর একটু ঘাড়াইলেন তারপর যাবে, এরশাদ, এরশাদ থেকে আইয়ুব খান, আইয়ুব থেকে ইয়াহিয়া, এভাবে অতীতের পথে হাঁটতে হাঁটতে আমরা ব্রিটিশ, মোগল, তুর্কি, কারবালা হয়ে ওহুদের যুদ্ধ, বদরের যুদ্ধে পৌঁছে যাবো। এবং এক বাক্যে স্বীকার করে নেবো আমরা আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ থেকে নিশ্চয়ই ভাল আছি।
এই যে কোন চিপায় দাঁড়াইয়া, নিজস্ব কল্লা কাঁধে নিয়া, আপনার চির পরিচিত বাংলাদেশের নাগরিক মানুষ ভাইটি যে হঠাৎ লীগার হয়ে গেলো তার সাথে আপনি আপনার মনের দুঃখ কওয়ার সুযোগ পাইছেন এটাই বড় গনতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা, এর চেয়ে বেশি আপনি আপনার এই মানব জীবনে কি আশা করতে পারেন?
আমাদের কোন ভবিষ্যত নেই, আমাদের আছে পরস্পরকে দোষারোপ করার গৌরবময় অতীত। শুধুই আঙুল তুলবো অপরের দিকে আর বেহায়ার মত নিজের দিকে তাকিয়ে হায়েনার হাসি হেসে যাবো।
তারপর তারা শুরু করবে নানা উন্নয়নের ফিরিস্তি, যার কিছুই আপনি আপনার ব্যক্তি জীবনে খুঁজে পাবেন না। কারণ আপনি আপনার জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত, যেই বাড়িতে যেই হালতে ছিলেন আজও তাই আছেন। পড়াশোনা করেছেন আর সব সাধারণ নাগরিকরা যেমন করে, বাহাত্তরটা ইন্টারভিউ দিয়ে একটা চাকুরী পেয়ে জীবন ধারণের মত বেতন পেয়ে জীবন ধারন করছেন আর সবার মত। হ্যাঁ এর মধ্যে প্রয়োজনে হয়ত আপনার বাসার সোফা পরিবর্তন হয়েছে, ঘরে এসি এসেছে কিন্তু এর মধ্যে বাত্তি দিয়ে খুঁজলেও আপনি এরশাদ, হাসিনা কিংবা খালেদার অবদান বের করতে পারবেন না। কিন্তু আপনি চুপ থাকবেন, কারণ আপনি জানেন, এই উন্নয়ন কার কার বাড়িতে, ঘরে হচ্ছে এবং হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে উন্নয়ন তো প্রতি সরকারের আমলেই কিছু জনগোষ্ঠীর বাড়িতে হয়েই যাচ্ছিলো! সরকার বদলায়, গোষ্ঠী বদলায় আর উন্নয়ন বদলায় কিন্তু সাধারণ মানুষের কিছু কি বদলায়?
এদের অন্যান্য প্রধাণ বৈশিষ্ট্যের মাঝে আছে, এরা প্যারানয়া’তে ভোগে, এরা দেশ ও দেশের মানুষের ওপরে “দল”কে রাখে এবং গনতন্ত্র বলতে এরা একনায়কতন্ত্র আর দেশ চালনা বলতে জমিদারী বোঝে। এরা জনগনের যেকোন দুঃখ কষ্টকে প্রজাদ্রোহিতার শামিল ভেবে নিয়ে দমন-পীড়নে নামে। এরা নিজেরা সারাবেলা খাইয়ালামু, মাইরালামু, ফাইরালামু করতে পারবে কিন্তু সে একই কাজ যখন বিএনপি কিংবা অন্য কেউ করবে তখন তারা সরকার পতনের গভীর ষড়যন্ত্র খুঁজে পাবে। কারণ তাদের দৃষ্টিতে, গনতান্ত্রিক দেশে কখনও সরকার পরিবর্তন হয় না, হতে পারে না, সেসব হলো ষড়যন্ত্র। একজন সাধারনস্য সাধারণ মানুষ হিসেবেও যদি আপনি ফেসবুকে দু-লাইন লিখে ফেলেন, কিংবা হয়ত দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে ফেলেন, এর চেয়ে আগের দিন গুলাই ভাল ছিলো। সাথে সাথে প্যারানয়িক লীগের সৈন্যরা এরমধ্যে “সরকার পতন আন্দোলনের” তীব্র গন্ধ পেয়ে যাবে। ফেসবুকে আপনাকে হুঁশিয়ারি দেবে, বড্ড বেশি স্বপ্ন দেখা হয়ে যাচ্ছে।
এই যে আপনি দু’বেলা দু মুঠো খেয়ে, বাংলাদেশের তেষট্টি জেলার কোথাও মাথা গুঁজে মোবাইলে থ্রি জি, ফোর জি ইউজ করে ফেসবুক গুতান, এ সবই তাদের অবদান, বলেন, কল্লা কাঁধে নিয়ে বেঁচে আছি, আলহামদুল্লিলাহ। বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় হচ্ছে, ফেসবুকে শুধু ছবি পোষ্ট করবেন আর দোয়া শেয়ার করবেন, নিজে কখনো কিছু লিখবেন না, অন্য কারো লেখায়ও কোন লাইক বা কমেন্ট করবেন না, নিশ্বাস নেয়ার জন্যে নাক ব্যবহার করবেন আর খাওয়ার জন্যে মুখ, বলেন, সুবানাল্লাহ।

০৯/১০/২০১৯

Friday, 4 October 2019

স্বপ্নজাল


আমারে উড়াইয়া দিও , পালের বাতাসে,
আমারে ভাসতে দিও , একলা আকাশে।


রাইখো বন্ধু আমায় , তোমার বুকেরও পাশে,
সুখের আগুন নিভা গেলে , দুঃখের হুতাশে।


মেয়ে বড় হয়ে গেছে, অখন্ড অবসর আমার। “রয়্যাল ডিষ্টিক নোয়াখালী” নাটকের বড় জামাইর মত সিনেমা দেখায় গিনিস বুকে নাম তুলবো বলে পণ করেছি।  বহুদিন ধরেই “স্বপ্নজাল” নিয়ে মিডিয়াতে আলোচনা পড়ে যাচ্ছিলাম। প্রবাসী হওয়ার নানাবিধ অসুবিধার মধ্যে এটি একটি অন্যতম অসুবিধা যে সিনেমা মুক্তি পেলে সাথে সাথে দেখে ফেলার সুযোগ খুব সীমাবদ্ধ। হিন্দী সিনেমার বেলায় এই অসাধ্য সাধন হয়ে যায়, শুক্রবার সকালে মুক্তি পেতেই ইউরোপে রাত হতে হতে মোবাইল ক্যামেরায় তুলে সিনেমা সাইটে আপ্লোড হয়ে যায়, অন্য ভাষার সিনেমাতেই এই ব্যাপারটা অসাধ্য, সিনেমা চুরিটি ঠিক করে রপ্ত হয় নি তাদের। গিয়াসউদ্দিন সেলিমের লেখা ও পরিচালনায় দ্বিতীয় ছবি “স্বপ্নজাল”। প্রায় সবাই লিখছিলেন “মনপুরা” থেকে ভাল হয়েছে। “মনপুরা” আমার কাছে ঠিক ক্লাসিক কিছু মনে হয় নি, তবে ভাল লেগেছিল, গতানুগতিক ধারার বাইরে ছিলো আর হ্যাঁ গান গুলো তো সবই অসাধারণ। নয় বছর সময় নিয়ে “স্বপ্নজাল” তৈরী করছেন তিনি।

অপু কোলকাতা যেয়ে শুভ্রার সাথে দেখা করা পর্যন্ত গল্পটা প্রচণ্ডভাবে মাটিতে ছিলো। সিনেমা মনে হয় নি। মনে হচ্ছিলো যেনো কোন ডকুমেন্টরী দেখছি। প্রভাবশালী মুসলমানদের হাতে, ধনী হিন্দু ব্যবসায়ী হীরন সাহা’র অপহরণ তারপর খুন যেনো পত্রিকায় পড়া সেসব না দেখা লোমহর্ষক ঘটনার জলজ্যান্ত প্রতিনিধিত্ব করছে। তারপর তার পরিবারকে কোলকাতায় পাঠানো, সম্পত্তি দখল যেমন হরহামেশা বাংলাদেশে হয়েই থাকে, শুধু সমতলে নয় পাহাড়েও ঘটছে।  সিনেমার দ্বিতীয় বা শেষ পর্ব থেকে শুরু হয় গল্পের গরুর গাছে ওঠা।

চাঁদপুরে জন্ম হওয়া, বড় হওয়া মেয়ে, সে যতই গান, নাচ শিখুক না কেন কোলকাতায় যেয়ে একটি চালু থিয়েটারে “রক্তকরবী” নাটকে “নন্দিনী”র চরিত্রে নির্বাচিত হওয়া! আঞ্চলিকতা, স্মার্টনেস এগুলো সব বাদ? কোলকাতা থেকে ফিরে এসে প্রতিবেশী একটি বাচ্চা ছেলের সহায়তায় হীরন সাহার বিধবা স্ত্রী, নাবালক ছেলে আর অনুঢ়া সুন্দরী কন্যা তাদের সব সম্পত্তি উদ্ধার করে ফেললো? বাংলাদেশের ইতিহাসে এরকম ঘটেছে বলে জানি না। যা যায় তা যায় বলেই জানি, আদালতের রায় নিয়েও তো সম্পত্তি উদ্ধার করতে পারে না। তাছাড়া, হীরন সাহাকে খুন করার আত্মগ্লানি থেকে আয়নাল গাজী অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে গেলো এটাও রূপকথার মতই লেগেছে খানিকটা। বাংলাদেশে যে হারে খুনোখুনি হয় তার প্রেক্ষাপট ধরলে এই ব্যাপারটা খানিকটা হাস্যকরও বটে। আমার ধারনা এই ব্যাপার গুলোতে আর একটু যত্নবান হলে, “মেঘের অনেক রঙ” কিংবা “সীমানা পেরিয়ে” এর মত ক্ল্যাসিকে “স্বপ্নজাল” এর নাম যোগ হতে পারতো।   


শেষ পরিনতির দিকে যাওয়ার তাড়াহুড়ো থেকে এই জিনিসগুলো এসেছে বলে ধারনা করি। আমার দৃষ্টিতে শুভ্রাকে কোলকাতায় রেখেও অপুকে চাঁদপুরের পদ্মায় ফেলে মারা যেতো। ঘটনা সেদিকেই যাচ্ছিলো আর সেটাই হয়ত বাস্তবসম্মত হতো। গিয়াসউদ্দিন সেলিমের আগের সিনেমায় ও বিয়োগান্তক সমাপ্তি ছিলো, এটাতেও তাই। তাহলে কি ধরে নিতে হবে, তার সিনেমা মানেই মারাত্বক সুন্দর একটা গল্প থাকবে যার পরিনতি বিয়োগান্তক হবে, সেলিম সিগনেচার মার্ক? বুদ্ধদেব গুহের উপন্যাসের মত, কখনোই মিলন নেই? সেট নির্বাচন, জামাকাপড়, দৃশ্য গ্রহন এক কথায়, অপূর্ব। সিনেমাটোগ্রাফার কামরুল হাসান খসরু  ‘ভিউ কার্ড’ এর মতো একটি একটি করে ছবি দেখিয়ে যাচ্ছেন। এটাও তার সিগনেচার মার্ক হতে পারে, মনপুরার ও প্রাকৃতিক দৃশ্য সব অসাধারণ ছিলো। একটা চরম বাস্তব হলো, অতো অল্পবয়সেই প্রেমের কারণে ছেলেমেয়েরা এভাবে প্রাণ দিতে পারে, বড় হয়ে গেলে, প্রেম হয় হিসাব-নিকাশ।   


ফজলুর রহমান বাবু জাত অভিনেতা কিন্তু স্বপ্নজালে তিনি যা অভিনয় করেছেন তা তাকে চিরস্মরনীয় করে রাখবে। নিসন্দেহে তার জীবনের অন্যতম মাস্টারপিস এটি। পরীমনি নামটি অনেক শুনেছিলাম কিন্তু কোন সিনেমা দেখা হয়ে ওঠে নি এর আগে। তিনি তার নাম সার্থক করার মতই সুন্দরী, অভিনয়ও দূর্দান্ত করেছেন। নায়ক হিসেবে যশ/ইয়াশ রোহান ঠিকঠাক ছিলেন। অভিনয় স্বতঃর্স্ফূত ছিলো। তবে এত সুন্দরী নায়িকার জন্যে আর একটু হ্যান্ডশাম ছেলে খোঁজাই যেতো। বাস্তব তো না সিনেমাই তো, সুন্দর নায়িকারা সুন্দর নায়ক পেতেই পারেন। মেসো-মাসী, বিসম্বর বাবু সবাই ঠিকঠাক ছিলেন, অভিনয়ও সাবলীল ছিলো সবার।

পরিবারের সবার দেখার মত পরিচ্ছন্ন কিন্তু প্রেমের ছবি। নির্দ্বিধায় বলা যায়, “মনপুরা” থেকে অনেক গুন এগিয়ে “স্বপ্নজাল”।

গানগুলো অসাধারণ। ক’দিন ধরে দুই বাংলার বেশ কয়েকটা মুভি দেখলাম, গান গুলো খুব যত্ন নিয়ে করছে আজকাল। সিনেমা শেষ হয়ে যায় কিন্তু মনে গানের রেশ রয়ে যায়, দিনভর মাথায় ঘুরতে থাকে। 

ধন্যবাদ
তানবীরা
০৩/১০/২০১৯


Tuesday, 17 September 2019

আজ রবিবার


আজ রবিবার

রোববার দিনটা নীপা’র খুব পছন্দ। তেমন কোন কাজ রাখে না সে, বেলা করে ঘুমিয়ে, আলসেমী করে, গড়িয়ে কাটায়। চারপাশ  নিস্তব্ধ থাকে,  বাতাসের প্রেম স্পর্শে কাতর হওয়া পাতার কাঁপুনি শুনে, কিংবা বিরহ কাতর নাম না জানা কোন পাখির অভিমানী কন্ঠের গান শুনে দিন কাটিয়ে দেয়া যায়। আকাশ কুসুম সব ভাবতে ভাবতে বিছানায় এপাশ ওপাশ গড়াতে গড়াতে প্রায় প্রতি রোববারের সকাল তার দুপুরে মিলায়। ক’দিন একটানা বৃষ্টির পর আজ সূর্য উঠেছে, পর্দা সরাতেই, ছ’তলার ওপরের এই ফ্ল্যাটটা, একরাশ আলোয় উজ্জল হয়ে উঠলো। সাথে সাথে নীপাও চনমন করে উঠলো, রনি বাথরুমে ঢুকেছে, একটা কিছু ভাল নাস্তা বানিয়ে, দিনটা দুজনের ভাল করে শুরু করা যাক। ছেলেটা এমনিতে খেতে এত ভালবাসে কিন্তু সারা সপ্তাহ দু’জনকেই অফিসে দৌড়াতে হয় বলে, সকালে ঠিক করে একসাথে বসে আয়েশ করে নাস্তা খাওয়া হয় না। সেই পাউরুটি, মাখন, জ্যাম কিংবা দুধ সিরিয়াল, ঝটপট কিছু। ফ্রিজ খুলে নীপা, মাশরুম, ডিম, ধনেপাতা আর কাচামরিচ বের করলো, হাত বাড়িয়ে ঐদিক থেকে পেয়াজ তুলে নিলো, স্প্যানিশ ওমলেটের মত খানিকটা পুরু করে মাশরুম ওমলেট বানাবে, ফ্রোজেন পরোটা আছে তা ভাজবে আর কড়া করে চা। রনি’র কড়া চা, খুব পছন্দ। কাজ করতে করতে জানালা খুলে দিলো, খুলে দিতেই পাগলা হাওয়া সুযোগ পেয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে নীপাকে জড়িয়ে ধরলো। ভাল লাগায় বুঁদ হয়ে নীপা মোবাইলটা হাতে নিলো, খুব আস্তে করে গান প্লে করলো, লতা গাইছে, আমার মালতীলতা কি আবেশে দোলেএএএ  


রোববার অনেক সময় নিয়ে রনি গোসল সারে। ডিয়ার মিস্টার হ্যান্ডসামের সমস্ত রূপচর্চা সারার আজকেই সময় কি না। তিনি তাই এখনও বের হন নি। কড়া করার জন্যে, চা’টাকে জ্বালে বসিয়ে রাখলো নীপা, গানের সাথে সে নিজেও গুন গুন করছে, হঠাৎ ফেসবুকের নোটিফিকেশান এলো, রাসেল, রনির ছবিতে কমেন্ট করেছে। কাজ নেই, বসে আছে, ঢুকলো ফেসবুকে, ওহ, কাল রাতের পার্টির ছবি নিশো আপ্লোড করে রনিকে ট্যাগ করেছে, তাতে অন্যেরা মন্তব্য করছে। ছবিগুলো দেখতে দেখতে নীপার মাথায় আগুন জ্বলতে লাগলো, দুটো ছবিতে হাঁদা রনিটা একেবারে আদনানের গা ঘেঁষে বসে ছবি তুলেছে, কোন আক্কেল যদি থাকে গাঁধাটার। এইটা কিছু হলো? বিরক্তি যখন চরমে তখন মাথা মুছতে মুছতে টাওয়াল নিয়ে রনি হাজির।


গরম গরম নাস্তা দেখে আনন্দের গলায় বললো, ওয়াও সুইটহার্ট, সকালে উঠেই এত কিছু?
নীপা সেসবের ধার ধারলো না, পুরোদস্তুর খ্যাঁক করে উঠলো, কি ছবি তুলেছিস তুই? আক্কেল কি বালতিতে রেখে গেছিলি?
নীপার মেজাজের কোন হেতু রনি ধরতে পারলো না। এই সাত সকালে, কিসের ছবি, কেন ছবি, কোথায় ছবি। শান্ত গলায় বললো, ছবি মানে?
ঝাঁঝিয়ে উঠে নীপা মোবাইল এগিয়ে দিয়ে বললো, এই দ্যাখ মানে
টেবলের এই পাশ থেকে রনি উঁকি দিয়ে ছবি দেখে অবাক গলায় বললো, কি হয়েছে এই ছবিতে? এর মধ্যে আবার কি পেলি তুই!  
কি পেলাম মানে? উত্তেজিত গলায় নীতু, তুই সরে বসতে পারিস না, যার তার সাথে ওতো ঘেঁষাঘেষি কি তোর?
নীপার উত্তেজনা দেখে হেসে ফেললো রনি। এই নীপা রেগে কাই, পর মুহূর্তেই ঠান্ডা পানি। পুরো উত্তর থেকে দক্ষিণ হতে সময় নেবে না। কি থেকে যে রাগবে, কি নিয়ে হাসবে, বলা মুশকিল। তবে একটা ট্রিক সে জেনে নিয়েছে, রাগ যতই হোক, পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে, ঘাড়ে আলতো চুমু খেয়ে, ভালবাসি বললেই, বউ ঠান্ডা।  
হাসতে হাসতে বললো, ছেলের পাশে বসাতেই তুই এত পজেসিভ আর মেয়ের পাশে বসলে তো তুই আমাকে আস্ত রাখতি না রে।
মুখ ভেংচে নীপা বললো, আহা, সেই আনন্দে তুই আর কূল পাচ্ছিস না, না? ছেলে তো কি হয়েছে, মানুষ না?
আচ্ছা আচ্ছা, ঠিকাছে, চল, এবার নাস্তা খাই, তোকে বাদ দিয়ে আর কারো এত কাছে বসবো না, ঠিকাছে, পাগল একটা তুই। 
নীপা যতই রাগছে, রনি ততই হাসছে, কিছুতেই ওর রাগকে গুরুত্ব দিচ্ছে না, সেটা আর নীপার সহ্য হলো না। দাঁড়া, খাওয়াচ্ছি নাস্তা বলে, হাতের কাছে আর কিছু না পেয়ে, ওমলেট ভাজার পর যে চারটা ডিম ছিলো তার দুটো প্রথমে ছুঁড়ে মারলো
এই দাঁড়া, এই দাঁড়া, বলতে না বলতেই ডিম মাথায় লেগে, ভেঙে, কুসুমে চুলে মাখামাখি হয়ে, কান বেয়ে বেয়ে নিচে পরে রনি একদম একশা। এবার নীপা বেশ মজা পেয়ে, খিলখিল হাসতে হাসতে বাকি দুটো ডিমও ছুড়ে মারলো। নীপার পাগলামিতে রনি কাহিল কিন্তু ছেড়ে দিলে চলবে না, এই কুসুম মাখা মাথা, শরীর সে নীপার গালে, মুখে, বুকে সব জায়গায় ডলে দিলো। ডিমে মাখামাখি হয়ে, জড়াজড়ি করে দুজনেই হাসতে লাগলো।
গাঢ় গলায় রনি বললো, মাথা ঠান্ডা হয়েছে এবার সোনাবৌ?
আদর গলায় বললো নীপা, হু।


সূর্য কখন আবার ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে, কেউ টের পায় নি। আকাশ আদরের চাদরে এদের ঢেকে রাখবে বলে, কালো পর্দা দিয়ে চারপাশ ঢেকে ফেলেছে। ঠান্ডা বৃষ্টির ছাঁট জানালার গ্রীল ভেদ করে যখন ওদের স্পর্শ করলো, ওদের মনে হলো, রোববার হলেও আজ আরও কিছু কাজ বাকি আছে। বৃষ্টিতে ঘর, বিছানা সব ভিজে যাওয়ার আগেই জানালা বন্ধ করতে হবে, বারান্দা থেকে কাপড় তুলতে হবে, আরও কত কি।

তানবীরা
১৬/০৯/২০১৯

Sunday, 15 September 2019

অসহনীয় যানজটের নগর – ঢাকা


অসহনীয় যানজটের নগর – ঢাকা


পিচ ঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি
তারসাথে এই মনটারে বেঁধে নিয়েছি
রঙ ভরা এই শহরে যতই দেখেছি
আরে গোলক ধাঁধার চক্করে ততই পড়েছি


ঢাকা নগরীর প্রধান কিংবা আপাতত একমাত্র সমস্যা কি কাউকে জিজ্ঞেস করলে, এক কথায় যার উত্তর মিলবে, “যানজট”।

বাংলাদেশের মানুষের স্বভাব হলো, চিপায় পরলে চিপার মধ্যে নিজেকে এডজাস্ট করে ফেলা, কেন চিপা হলো, কোথা থেকে চিপা এলো, কিভাবে চিপাকে ফিক্স করা যায়, তা না ভেবে, শুধু নিজেকে কিভাবে চিপার মধ্যে ভাল রাখা যায়, এই আমাদের ভাবনা।  

ধানমন্ডি থেকে লেক সাকার্স, শুক্রাবাদ থেকে আগারগাও, মোহাম্মদপুর থেকে হাতিরপুল, উত্তরা থেকে টঙ্গী, গুলশান টু বাড্ডা যেদিকেই যাবেন, দেখা যাবে, ঠ্যালায় করে রাস্তায় রাস্তায় সব্জি, মাছ বিক্রি হচ্ছে। বাজার করতে বাজারে যাওয়ার দরকার নেই, রাস্তায় আপনি এই অতি প্রয়োজনীয় কাজটি সেরে ফেলতে পারছেন। স্কুলের সামনে ভীড়ের কারণে দাঁড়ানোর উপায় না থাকলেও, থ্রী পিস থেকে পর্দা, চুড়ি থেকে ভুনা খিচুড়ীর ঠ্যালা আছে এবং তাতে প্রচুর কাস্টমারও আছে। অনেক রাস্তায়, রাস্তার দুপাশেই ঠ্যালা আছে।

একেতো গাড়ি চলারই রাস্তা নেই, তারমধ্যেই ঠ্যালা আর গ্রাহকের ভীড়, প্রতিদিন, প্রতিবেলা। ঠ্যালা ঘিরে মানুষের ভীড়, দামাদামি, বাছাবাছি সব চলছে হরদম, ওদিকে রিকশা, গাড়ি সব আটকে আছে, কখনও কখনও ধাক্কা লাগছে, মোটর সাইকেলের সাথে রিকশার, কিংবা রিকশা-গাড়ির সাথে মানুষের তবুও সবাই কি আশ্চর্য নির্বিকার। ইঞ্চি ইঞ্চি প্রেম থুক্কু ইঞ্চি ইঞ্চি জায়গার কি অপটিমাম ব্যবহার, ঢাকা শহরের ড্রাইভাররা ছাড়া আর কেউ এ ব্যাপারে এত দক্ষ কিনা আমার দারুন সন্দেহ আছে। একেতো এত মানুষের ভার বহনের জন্যে রিসোর্স/ইনফ্রাসট্রাকচার নিয়ে এই শহর তৈরী হয় নি তারপরও যা আছে তার কি অপরিনামদর্শী যথেচ্ছ ব্যবহার। জন্মের পর থেকেই ফুটপাত হকারদের দখলে দেখে আসছি তা নিয়ে আর বলার কিছু নেই, সেটা স্বতঃসিদ্ধ ধরেই নিলাম না হয়।    

রাস্তার পাশে যাদের দোকান আছে, তারা দোকানের সামনে রাস্তার মিনিমাম চার হাত জায়গা দখল করে রাখেন, কোকের কেইস সাজান, চিপসের প্যাকেট টানান, কলা ঝোলান, নইলে বেঞ্চ আছে বসে কিছু খান, মোদ্দা কথা, দোকানের বাইরের রাস্তার চার হাতও তারই দখলে থাকতে হবে। আমি দেখেছি, গাড়ি/মোটর সাইকেলের ধাক্কায় কিছু সরে টরে গেলে আবার এনে ঝেড়ে বিছিয়ে দেয়া হচ্ছে, কিন্তু দমবে না, যতই ভয়ের হোক না কেন। একেই সব অপ্রশস্ত রাস্তা ঢাকায়, তার প্রায় অর্ধেক আবার ব্যবহার হয় অন্য কাজে। প্রত্যেকে যানজটের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ কিন্তু প্রতিকারের চেষ্টায় কেউ নেই।


প্রতিদিন এত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে, মর্মান্তিক সব কান্ড ঘটছে, সাধারণ মানুষ লিস্ট বদারড। ফুটওভার ব্রীজ ব্যবহারে শহর জুড়ে মানুষের কি প্রচন্ড অনীহা। “পথচারী”কে জরিমানা করার নিয়ম কেন আসে না, বুঝতে পারি না। এত ভীড়ের মাঝে মানুষ বাচ্চার হাত ধরে নির্দ্বিধায় রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছে, সারাটা সময় চোখ মোবাইল স্ক্রীনে। পেছন থেকে গাড়ি হর্ণ দিয়েই যাচ্ছে, একবারও মোবাইল থেকে চোখ সরায় না, মধ্য রাস্তা ছেড়ে এক পাশে হাঁটে না। দুর্ঘটনা ঘটলে অবশ্যই ড্রাইভার দায়ী, দেখে চলার দায়িত্ব শুধুমাত্র ড্রাইভারদের ওপর।


এক সময় ঢাকাকে বলা হতো মসজিদের নগরী এখন অনায়াসে বলা যায়, “মার্কেটের নগরী”। জায়গায় জায়গায় অপরিকল্পিত ভাবে মার্কেট, রেস্টুরেন্ট, ক্লিনিক, স্কুল অফিস যার যার ইচ্ছে মতো। না সিটি করপোরেশান থেকে অনুমতি নেয়ার তোয়াক্কা বা রেওয়াজ আছে, না আছে কোন আরবান প্ল্যানিং। না আছে নিয়ম নীতির কোন বালাই। একটা ক্লিনিক করতে হলে মিনিমাম কয়টা গাড়ির পার্কিং থাকা উচিত, এম্বুলেন্স কোন রাস্তা দিয়ে আসবে ইত্যাদির কোন বালাই দূর দূরতক নেই। এন্ডহোভেন শহরটি আটাশি দশমিক সাতাশি স্কোয়ার কিলোমিটার, জনবসতি দুই লক্ষ একত্রিশ হাজার চারশো ছয় জন, পুরো শহরটিতে দুটো বিরাট শপিং মল আর নেইবারহুডে ছোট ছোট কিছু শপিং এরিয়া নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্যে। ঢাকা হলো তিনশো ছয় দশমিক চার স্কোয়ার কিলোমিটার, জনসংখ্যা বাদ দেই, কতগুলো মার্কেট/শপিং সেন্টার/শপিং মল আছে ঢাকাতে কেউ বলতে পারবে? কোন হিসেব আছে কারো? 



শুধু রিকশাই যানজটের কারণ, এসবই কি যানজটের কারণ নয়? কয়দিন আগেই বাচ্চারা “নিরাপদ সড়ক চাই” নিয়ে এত হাঙ্গামা করার পর যদি এই পরিনতি থাকে তাহলে প্রভুই এই জাতির একমাত্র ভরসা।


বিঃদ্রঃ রাস্তা/ যানজট সংক্রান্ত কোন গান/কবিতা কেউ কি জানেন, তাহলে মন্তব্যের ঘরে একটু জানাবেন প্লিজ।  


তানবীরা
১১.০৯.২০১৯