Tuesday 13 October 2020

করোনাকালে শিক্ষা

বাংলাদেশে এইচ-এস-সি পরীক্ষা বাতিল ঘোষনা করা হয়েছে, আগের ফলাফলের ভিত্তিতে এইচ-এস-সি মূল্যায়ন করা হবে, এই ঘোষনায় নানা মহলে নানা বির্তক এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ আর ট্রল চলছে। অন্যান্য কিছুর মত এবারও রাখাল ভাই এসাইনমেন্ট দিলো, করোনাকালে ইউরোপের প্রাথমিক-মাধ্যমিক- উচ্চশিক্ষা কিভাবে চলছে সে সম্পর্কে জানাও। এবারের এসাইনমেন্ট শুধু নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক নয়। তবে আমি শুধু মেইনস্ট্রিম নিয়ে ঘাটাঘাটি করেছি। ইংরেজি-আরবি বা অন্যান্য মিডিয়ামের বিস্তারিত খুঁজিনি। ইন্টিলিজেন্ট লকডাউন শিথিলের প্রথম ধাপ হিসেবে প্রাথমিক স্কুলই প্রথম দফায় খুলে দেয়া হয়েছিলো। বাচ্চাদের সংক্রমনের আশঙ্কা কম এবং বাচ্চাদের থেকে বড়দের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে অর্ধেক বাচ্চা একদিন অপর অর্ধেক বাচ্চা অন্যদিন এই ব্যবস্থা প্রথম দিকে ছিলো। পরে সব বাচ্চাই প্রতিদিন স্কুলে গিয়েছে। এটা অবশ্য নেদারল্যান্ডসের নিজস্ব উদ্ভাবন ছিলো না। করোনা নিয়ন্ত্রণে স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশগুলোর পদক্ষেপগুলো সুফল দিচ্ছিলো তাই নেদারল্যান্ডস তাদের অনুসরণ করেছে। আইসল্যান্ড ও ডেনমার্কের প্রচুর নিয়ম নেদারল্যান্ডস অনুসরণ করেছে। বাংলাদেশেও আমি এ ধরনের সিদ্ধান্তের কথা আমি পত্রিকায় পড়েছিলাম, প্রয়োগ করা হয়েছিলো কি না জানা হয়নি। প্রাথমিক শিক্ষা গতানুগতিক চলেছে। তবে সমাপনী পরীক্ষা হয়নি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, "শিক্ষক, স্কুল নেতৃবৃন্দ এবং অন্যান্য শিক্ষা কর্মীরা বর্তমানে বাচ্চাদের যত্ন নেওয়া এবং বাড়িতে থাকা শিশুদের জন্য শিক্ষার আয়োজনে খুব ব্যস্ত। এজন্য বিদ্যালয়গুলোর শক্তি প্রয়োজন। সে কারণে শিক্ষামন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, এই বছর শিক্ষার্থীদের সমাপনী পরীক্ষা দিতে হবে না।" এছাড়া নেদারল্যান্ডসে প্রতিটি বাচ্চার দুই বছর থেকেই মানসিক-সামাজিক-প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা'র ফলাফল আলাদা করে রেকর্ডে থাকে বলে, প্রাথমিক শিক্ষার শেষ ধাপে, স্কুলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত থাকে বিধায়, সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল আলাদা তেমন কোন প্রভাব রাখে না। স্কুলের রেজাল্টের সাথে সাধারণতঃ সমাপনী পরীক্ষার রেজাল্টের বিরাট কিছু পার্থক্যও থাকে না। অন্যান্য বছরের মত এ বছরও, স্কুলের গ্রেডিংই চূড়ান্ত ছিলো। https://www.rijksoverheid.nl/actueel/nieuws/2020/03/18/geen-eindtoets-in-groep-8-dit-jaar নেদারল্যান্ডসে মাধ্যমিক আর উচ্চ মাধ্যমিক একই সাথে চলে। মার্চের তেরো তারিখ থেকে স্কুল বন্ধ দেয়ার পর আঠারো তারিখ থেকে অনলাইনে ক্লাশ শুরু হয়। ক্লাশ, ক্লাশটেস্ট অনলাইনেই চলে। জুনের দুই তারিখ থেকে স্কুল আবার শুরু করে, যারা খুব ভাল ছাত্র-ছাত্রী তারা চাইলে স্কুলে আসতে পারে নইলে অনলাইনে ক্লাশ করবে আর যারা মাঝারি তারা ক্লাশে আসবে এই নিয়মে। তারপর যথানিয়মে কিছু স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা হয় কিন্তু বেশির ভাগ স্কুলই পুরো স্কুল ইয়ারের সাবমিশান আর ক্লাশ টেস্টের ভিত্তিতে গ্রেডিং দিয়েছে। খুব কম স্কুলে এবার বার্ষিক পরীক্ষা হয়েছে। সরকারী পরীক্ষা হয়নি। মে মাসে সাধারণতঃ সরকারী পরীক্ষা হয়, সে সময়ে করোনার বাড়াবাড়িতে আগের ফলাফলের ভিত্তিতে গ্রেডিং দেয়া হয়েছে আর অনলাইন টেস্ট ও গ্রেডিং এর ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি চলেছে। এক বন্ধু কন্যা, মেডিকেলে ভর্তি হয়ে বলেছে, আমাদের সবাই বলবে, "দ্যা করোনা ব্যাচ"। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাশ এবং পরীক্ষা চলেছে। বরাবরের মত, পরীক্ষার সময়সীমা নির্ধারন করে দেয়া ছিলো, আর স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন টেষ্টের মত নির্ধারিত কিছু নিয়ম ছিলো, এক পেইজ শেষ করে অন্য পেইজে যাবে আর তারপর ফেরত আর আগের পেইজে যেতে পারবে না। তারওপর প্রত্যেক স্টুডেন্ট পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে মোবাইল অন করে পাশে রাখতে বাধ্য ছিলো, পরীক্ষকরা র্যান্ডম ফোন করে, তাদের চেক করেছে। ইংল্যান্ডে জুন থেকে জুলাই স্কুলগুলো খোলা ছিল। কেয়ার ওয়ার্কারদের কাজের সুবিধার জন্য, তাদের বাচ্চারা স্কুলে যেতে পেরেছে। বাকিরা হোমস্কুলিং করেছে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর স্কুল বন্ধ ছিল তারপর সেপ্টেম্বরে যথারীতি স্কুল খুলেছে। করোনার জন্য এ বছর কোন পাবলিক পরীক্ষা হয়নি। এ লেভেল, এএস লেভেল, এবং জি সি এসি পরীক্ষার্থীদেরকে একটা হিসাব কষে গ্রেড দিয়ে দেয়া হয়েছে। অফিস অফ কোয়ালিফিকেশনের কষা হিসেব ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিবাদ করায় স্কুল প্রথমে যে হিসেব করেছিল সেই হিসাবকে গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে প্রায় সব ছাত্র-ছাত্রী ফলাফলে খুশি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ দায়িত্বে অনলাইনে ক্লাশ এবং পরীক্ষা চালু রেখেছে। সুইডেনে ষোল বছর বয়স পর্যন্ত স্কুল খোলা ছিলো। ষোলোর ওপরে অনলাইন ক্লাশ ছিলো। সুইডেন লকডাউনে না গেলেও সরকারী পরীক্ষা হয়নি। সাবমিশান, আগের বছরগুলোর পরীক্ষার ফলাফল এবং এ বছরের ক্লাশ পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতেই তাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যথারীতি অনলাইন ক্লাশ এবং পরীক্ষা চলেছে। নরওয়েতে করোনার প্রকোপ কমে এলে স্কুল খুলে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সরকারী পরীক্ষা হয়নি। শিক্ষামন্ত্রী গুড়ি মেলবি বলেছেন, সময় এবং শক্তি পরীক্ষার পেছনে ব্যয় করার চেয়ে স্কুলের ভাল শিক্ষা প্রদান আর সঠিক মূল্যায়নে মনোনিবেশ করা বেশি জরুরী। লিখিত, ব্যবহারিক বা মৌখিক পরীক্ষা না হলেও ছাত্র-ছাত্রীরা যথাসময়ে ডিপ্লোমা পাবে।" বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাশ এবং পরীক্ষা চালু রেখেছে। https://www.regjeringen.no/no/aktuelt/alle-eksamener-for-10.-trinn-og-alle-skriftlige-eksamener-for-videregaende-skole-er-avlyst/id2694883/?fbclid=IwAR1G5ZOBzqCqPJnbvoQ-YbzcLVrVVfWZCTPyVpoPIL51XebwZEATS37m2HI এখানে নতুন শিক্ষা বছর শুরু হয় সাধারণতঃ সেপ্টেম্বর থেকে। দুই হাজার বিশ-একুশ সেশনে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে ক্লাশ আর পরীক্ষা স্বাভাবিক গতিতে চলছে আপাতত। এখনও সরকারি পরীক্ষার সময় আসেনি, সেটা দুই হাজার একুশের মে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অন লাইন আর অফ লাইন মিলিয়ে ক্লাশ আর পরীক্ষা চলছে। রাখাল ভাইয়ের সৌজন্যে তাতা ফ্র্যাঙ্কের করোনা ডায়রীতে আর একটি সংযোজন। কৃতজ্ঞতাঃ আশেকা শীতু, শ্রীপর্না রায়, রতন সমাদ্দার, তানিশা তালুকদার আর শোহেইল মতাহির চৌধুরী। ১১/১০/২০২০

No comments:

Post a Comment