Wednesday 4 November 2020

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – তিন (নভেম্বর)

যদি আমরা নির্মোহভাবে আরআইভিএমের সংক্রমণের পরিসংখ্যানটি দেখি, বলবো না আমরা ভালোর দিকে যাচ্ছি তবে খারাপের দিকেও যাচ্ছি না। সংক্রমণের হার নীচে নামাতেই হবে, নার্সিং হোম আর হাসপাতালে রোগী বেড়েই চলছে আর কোথাও কোথাও তিল ধারনের ঠাই নেই। অন্য রোগের রোগীরা সেবা পাচ্ছে না আর তাই আমরা আজ আরও কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের আরও সতর্কতা প্রয়োজন। যারা স্বাস্থ্যখাতে কাজ করছে তাদের প্রতি আমাদের আরও সহমর্মিতা প্রয়োজন আর তাই আমাদের আরও কম বের হওয়া উচিত, মানুষের সংস্পর্শে কম আসা উচিত, কম সামাজিকতা করা উচিৎ। নভেম্বরের চার তারিখ রাত দশটা থেকে আংশিক লকডাউনের ওপরে দেয়া এই নিয়মগুলো দু সপ্তাহের জন্যে কার্যকারী থাকবে। এরপর আমরা আবার আংশিক লকডাউনের নিয়মে ফিরে আসবো। আমরা সারাক্ষণ নজর রাখছি কি করে আমরা আবার গরমের সময়ের পরিস্থিতিতে ফিরতে পারি। তবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত আংশিক লকডাউন থাকবেই। রেস্টুরেন্ট, খেলাধূলা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্যে এটি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত কিন্তু উপায় নেই। প্রথম কথাঃ শুধু শুধু শপিং সেন্টারে ঘোরাঘুরি বাদ দিয়ে বাসায় থাকা। দ্বিতীয় কথাঃ বাইরে চারজন মানুষের আড্ডা বন্ধ, দুজন। যদি এর অন্যথা হয়, জরিমানা করা হবে। বাসায় দুজনের বেশি মেহমান ডাকা যাবে না, বারো বছরের নীচে বাচ্চাদের গোনায় ধরা হচ্ছে না। তৃতীয় কথাঃ সামনের দুই সপ্তাহের জন্যে জনগনের জন্যে উন্মুক্ত সব ধরনের ভবন বন্ধ থাকবে। সিনেমা হল, চিড়িয়াখানা, যাদুঘর, লাইব্রেরী ইত্যাদি সব। দোকান, হেয়ারড্রেসার, বিউটি সেলুন, জিম এর আওতায় পরবে না। তবে জিমে কোন গ্রুপ এক্টিভিটি চলবে না। কিছু কিছু শহরে সংক্রমণের মাত্রা মারাত্বক, আশাপ্রদ ফলাফল না এলে সেখানে দোকান আর স্কুল বন্ধ করে দেয়া হবে। কোন কোন শহর সেটা সময়ে জানিয়ে দেয়া হবে। সারা পৃথিবীতেই করোনা এখন ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে তাই সবাইকে বলা হচ্ছে অত্যন্ত প্রয়োজন না হলে মধ্য জানুয়ারী পর্যন্ত পৃথিবীর কোন দেশেই ভ্রমণের দরকার নেই। ক্যারাবিয়ান দ্বীপপুঞ্জকে নেদারল্যান্ডসের বাইরে আলাদা দেশ ধরা হচ্ছে না কিন্তু সেখানেও ভ্রমণ না করারই নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। সমগ্র পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ মানুষ নিয়ম মানছে, অল্প ক’জনের কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। যারা এখনো ভাবছে, শনিবারে সন্ধ্যায় লুকিয়ে একশো লোকের অনুষ্ঠান করবে তাদের সর্তক করে দেয়া হচ্ছে, যেকোন দায়িত্বহীন অসামাজিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা যারা এসময়টাতে বিষন্নতা কিংবা একাকীত্বে ভুগছে, তাদের জন্যে সামনের দু সপ্তাহ আরও কঠিন যাবে, তাদেরকে বলবো, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হও, তোমার সামান্য সহৃদয়তা অন্যের কাছে অনেক বেশি হয়ে আসতে পারে। গত সপ্তাহে চৌষট্টি হাজার মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। বারোটি বিভাগে সংক্রমণ কমতে শুরু করলেও, তেরোটি বিভাগে সংক্রমণের হার অনেক। প্রায় ছাব্বিশো কোভিড রোগী এখন হাসপাতালে আছে যাদের মধ্যে প্রায় ছয়শো আছে আইসিইউতে। স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরলস সেবা দিতে দিতে ক্লান্ত, সীমাহীন ওভারটাইম, তাদের পরিবার, তাদের অনুভূতির প্রতি আবারও আমাদের সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা। এবারের ক্রিসমাস উৎসব অবশ্যই অন্য বছরের চেয়ে আলাদা হবে তবে সামনের দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে সেটি কিরকম হতে পারে সে সম্বন্ধে ধারনা দিয়ে দেয়া হবে। প্রিমিয়ে রুতে আপনি বলছেন, সংক্রমণের হার স্থির আছে কিংবা বাড়ছে না তারপরও আরো কঠিন নিয়ম দিচ্ছেন, কেন? তার কারণ, হিসেব করে দেখা যাচ্ছে, এখন যত রোগী আছে হাসপাতালে সামনের দুই সপ্তাহে সেটি আরও দেড় গুন বেড়ে যাবে আরও চাপ পরবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর, সেটিকে সামলাতে আরও কঠিন নিয়ম দেয়া ছাড়া উপায় নেই। নইলে, হার্ট, ক্যান্সার কিংবা হাঁটুর অপারেশানের মত সমস্ত অপারেশান আবার রিশিডিউল করতে হবে যা রোগীদের ভীত করে তাদের মনোবল ভেঙে দেবে। প্রিমিয়ে রুতে, খুব অল্প সময়ের জন্যে হলেও কেন আপনি পুরোপুরি লকডাউনে গেলেন না? সামনের দুই সপ্তাহ তো সম্পূর্ন লকডাউন হতে পারতো? বিভিন্ন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখছি, দরকার হলে যেতেই হতো কিংবা কোন কোন শহরের অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে হয়ত যেতেই হবে। স্কুল খোলা থাকা অত্যাবশকীয়, শুধু একটা কিছু খোলা রাখার সম্ভাবনা থাকলেও স্কুল খোলা রাখতে চাই। মানুষ মানুষের সংস্পর্শে কম আসছে, সেটাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। সংক্রমণের সংখ্যা আপাতত স্থির আছে, তাই অর্থনীতিসহ বাকি দিকে দেখেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু সবকিছু অল্প কিছুদিনের জন্যে পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েও তো আপনি জনগনকে একটি বার্তা দিতে পারেন? সেটার দরকার থাকলে দিতাম। সবকিছু পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে শুধু অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না সাথে মানুষ শারীরিক ও মানসিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাহলে এই এক্সর্ট্রা প্যাকেট কতদূর কাজ করবে বলে আশা করছেন? সামনের সপ্তাহ থেকে অন্তত হাসপাতালে বারোশো কম রোগী আর আইসিইউতে দুইশ কম রোগী আশা করছি। বাচ্চাদের পার্টি নিয়ে আপনার কি মতামত? বরাবরই বলে এসেছি, বারো বছরের নীচের বাচ্চারা করোনার নিয়মের আওতাও পরে না, কিন্তু বাচ্চাদের সাথে বাচ্চাদের বাবা-মায়েদের আসা যাওয়া চলবে না। বিদেশ ভ্রমনের ব্যাপারে আইনি নিষেধাজ্ঞা নেই কিন্তু সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতিবাচক উপদেশ আছে। আমাদের ম্যাক্সিমাম ক্যাপাসিটি একশো হাজারে প্রতিদিন সাত হাজার সংক্রমণ, সর্বোচ্চ তিনজন আইসিইউ পেশেন্ট পার ডে, এই টার্গেটে আমরা এ বছরও পৌঁছতে পারবো না, সামনের বছর হয়ে যাবে। পহেলা ডিসেম্বর থেকে মাস্ক পরা নেদারল্যান্ডসে বাধ্যতামূলক। যদি পুরোপুরি লকডাউন হয়, তাহলে কি দক্ষিন ইউরোপের দেশগুলোর মত রাস্তায় বের হতে চিঠি দরকার হবে? না, সেরকম কোন কিছু নয়, ওষুধের আর খাবারের দোকান ছাড়া বাকি সব বন্ধ থাকবে আর রাত দশটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত সবাইকে বাড়ির মধ্যে থাকতে হবে। বাচ্চাদের স্কুল খোলা থাকবে, কলেজ-ইউনিভার্সিটি অনলাইনে যাবে। শবযাত্রার ব্যাপারে কোন নিয়ম চলবে? নভেম্বরের নয় তারিখ থেকে শবযাত্রায় ও ম্যাক্সিমাম ত্রিশ জনের বেশি যেতে পারবে না। শুধু বিদেশ ভ্রমণ কেন নিষেধ করছেন? দেশের মধ্যে ভ্রমণও তো বিপদজনক। সেটা ঠিক কিন্তু মানুষকে বন্দী করতে চাইছি না তবে বারবার বলছি, ছুটিতে গিয়েও অনেক ঘোরাঘুরি না করে হোটেল কিংবা ভ্যাকেশান হাউজের ভেতরে থেকে ছুটি উপভোগ করতে হবে। হুগো দ্যা ইয়ং আপনি বলেছেন, ক্রিসমাস সবাই একসাথে উদযাপন করবে? হ্যাঁ কিন্তু কতটুকু একসাথে সেটা এখনো বিবেচনাধীন আছে। প্রতিবছরের মত এতটা একসাথে হয়ত এবার হবে না কিন্তু জানাবো। তানবীরা ০৪/১১/২০২০

No comments:

Post a Comment